30-08-2023, 02:54 PM
(This post was last modified: 30-08-2023, 02:55 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আপডেট ২৪
ক
ঘটনা ঘটবার সময় আমরা অনেক সময় একটা ঘটনার তাতপর্য টের পাই না। ধীরে ধীরে যত সময় যায় ঘটনাটার গুরূত্ব আমাদের কাছে তত স্পষ্ট হয়। মাহফুজের বাসায় সেদিনের ঘটনা যখন ঘটছিল তখন নুসাইবা বা মাহফুজ কেউ ঠিক স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। নুসাইবার এলকোহলে অভ্যাস নেই। এর আগে যে দুই তিনবার খেয়েছে কোন বার সহ্য করতে পারে নি। সেদিন বমি না করলেও ওর মাথায় চড়ে গিয়েছিল এলকোহল। বাস্তব আর কল্পনার মাঝে যে পার্থক্য আছে সেটার সীমা রেখা সেদিন ওর কাছে ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। তাই মাহফুজের সাথে ছবি তোলার সময় মাহফুজ কি ওদের ইমাজেনরি মাহমুদ নাকি আরশাদ সব গুলিয়ে গিয়েছিল। আর মাহফুজ এলকোহলিক না হলেও কালেভদ্রে খায়। আর ওর উপর এলকোহল সহজে প্রভাব ফেলে না। তবে এলকোহলের আরেকটা খারাপ দিক আছে। সেটা সেদিন ওর উপর প্রভাব ফেলেছিল। এলকোহল মানুষের জাজমেন্ট ক্যাপাসিটি কমিয়ে দেয়। ভাল মন্দের তফাত করার ক্ষমতা কমায়। অকারণে সাহসী করে বিপদজনক ঝুকি নিতে উৎসাহী করে। মাহফুজের সেদিন সেটাই হয়েছিল। নুসাইবার সৌন্দর্য, একের পর এক অপমান, প্রত্যাখ্যান ওর ভিতর নুসাইবার প্রতি একটা লাভ এন্ড হেট রিলেশন গড়ে তুলছিল ভিতরে ভিতরে। নুসাইবার ব্যবহার সহ্য করতে পারছিল না আবার সৌন্দর্য কে অগ্রাহ্য করতে পারছিল না। মানুষ যখন কোন কিছু কে ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে না পারে তখন সেটা কে অনেক সময় আর বেশি করে চায়। সেই জায়গাটা ডমিনেট করতে চায়। মাহফুজের মনের ভিতর ধীরে ধীরে নুসাইবার প্রতি এই আবেগ গুলো তাই বাড়ছিল। এলকোহল তাই সেদিন মাহফুজের ভিতর থাকা এই আবেগ গুলো কে উস্কে দিয়েছিল। সাথে ভাল মন্দ জাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে নুসাইবার এই টাল অবস্থার সুযোগ নেবার জন্য ওকে ভিতরে ভিতরে উৎসাহী করেছিল। তবে মাহফুজ একবারো ভাবে নি এটার পরিণতি কি হবে? যখন নুসাইবা স্বাভাবিক হবে তখন সে কি ভাববে?
নুসাইবার যখন ঘোর কাটতে থাকল তখন বাস্তবতা যেন বিশাল এক ধাক্কা দিল ওকে। নুসাইবা চারপাশে দেখে। মাহফুজ আর নুসাইবা দুই জনেই ড্রেসিং টেবিলের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে। মাহফুজের চোখ বন্ধ। নিজের দিকে তাকায় নুসাইবা। শাড়ি খুলে পড়ে আছে মাটিতে। গায়ে খালি ব্রা আর পেটিকোট। টের পায় দুই পায়ের মাঝখানে প্যান্টি ভিজে গেছে। অনেক দিন পর এমন জোরালো অর্গাজম হল ওর। ভাবতে ভাবতে যেন শিউরে উঠল। ওর পাশে আরশাদ নয় মাহফুজ। এইবার যেন পুরো ব্যাপারটার গূরুত্ব ওর মাথায় পরিষ্কার হয়ে গেল। কি করল এইটা ও? কিভাবে পারল? আরশাদ ছাড়া দ্বিতীয় কোন পুরুষ কোন দিন ওকে এইভাবে ছুতে পারে নি। আজকে দ্বিতীয় পুরুষ হয়ে মাহফুজ যেন প্রবেশ করল ওর জীবনে ওর অজান্তে। নুসাইবা কিছু ঠিক করে মনে করতে পারে না। কিভাবে হল এইসব। সব কিছু যেন কেমন ঘোলাটে। আরশাদ কে জেলাস করার জন্য কিছু ছবি তুলতে এখানে এসছিল মনে আছে। খাবার পর বাথরুমে ঢুকে বেশ কিছুটা কনিয়াক খেয়েছিল। এরপর ড্রইংরুমে ছবি তুলার পর আবার কেমন টেনশন লাগায় বাথরুমে ঢুকে আবার কয়েক ঢোক। এরপর থেকে সব যেন ঝাপসা। কি হয়েছে ঠিক মনে করতে পারছে না। নুসাইবার কান্না আসতে থাকে। কি করল এটা। যে মদ কে এত ঘৃণা করে আজকে সেটার কেন সাহায্য নিতে গেল। ওর মনে হতে থাকে নিজের দোষে হয়েছে এইসব। এখন আরশাদ আর ওর মাঝে তফাত রইল কোথায়। আরশাদ যে রাস্তায় হাটছে সে রাস্তায় তো ও নিজেই হাটল আজকে। তাহলে আরশাদ কে কোন মুখে চার্জ করবে? চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। মাহফুজ একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। হঠাত করে পাশে হালকা ফোপানির শব্দ পেয়ে চোখ খুলে তাকাল। নুসাইবার গাল বেয়ে পানি পড়ছে। হাতুর তালুর উলটো দিক দিয়ে চোখ মুচছে। মাহফুজ যেন এইবার স্বর্গ থেকে মাটিতে নেমে আসল। নুসাইবার চুল এলোমেলো। শাড়ি মাটিতে, পেটিকোট দুমড়ে আছে, গায়ের ব্লাউজও একরকম দুমড়ে মুচড়ে আছে। গলার কাছে, ঘাড়ে যেখানে যেখানে মাহফুজ চুমু খেয়েছে হালকা কামড় দিয়েছে সেই জায়গা গুলো হালকা লাল হয়ে আছে। মাহফুজ কি করবে বা কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। মাহফুজ কিছু না বলে নুসাইবার কাধে হাত দেয়।
নুসাইবা টের পায় ওর কাধে হাত দিয়েছে মাহফুজ। নুসাইবার ভিতরে হঠাত যেন কি একটা হয়। জ্বলে উঠে একদম। ওর মনে হয় আজকে সব কিছুর জন্য মাহফুজ দায়ী। নুসাইবা ঝটকা মেরে মাহফুজের হাত সরিয়ে দেয় কাধ থেকে। বলে তোমার লজ্জা করে না ছি। আমার গায়ে হাত দিতে তোমার লজ্জা করছে না। কিভাবে পারলে তুমি এটা? আমি সিনথিয়ার ফুফু। তোমার ফুফুর বয়সী। তোমার মত পার্ভার্ট আমি কখনো দেখি নি। বয়সে বড় একজন মহিলার সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তুমি জান না? মাহফুজ সিনথিয়ার জ্বলে উঠা দেখে থমকে যায়। মাহফুজ জানে ও যা করেছে সেটা ঠিক করে নি কিন্তু মাহফুজ তো একা কিছু করে নি। নুসাইবাও তো তখন উপভোগ করছিল। আর মাহফুজের মাথায় এলকোহল এভাবে চড়ে না বসলে হয়ত এই কাজ করত না। মনে মনে মাহফুজ স্যরি কিন্তু নুসাইবা এইভাবে জ্বলে উঠবে ভাবে নি ও। মাহফুজ বলে, ফুফু আমি আসলে বুঝতে পারি নি। কি থেকে কি হল আমি আসলে বুঝে উঠার আগেই হয়ে গেছে। আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি। নুসাইবা এই স্যরি শুনে যেন আর জ্বলে উঠে। বসা থেকে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ায়। নুসাইবার চুল এলোমেলো। কিছু চুল কপালের উপর বাকি চুল পিঠে কাধে ছড়িয়ে আছে। কোমড়ে হাত দিয়ে জ্বলন্ত চোখে মাটিতে বসে থাকা মাহফুজের দিকে তাকিয়ে থাকে। যেন পারলে চোখের দৃষ্টি দিয়ে পুড়িয়ে মারবে মাহফুজ কে। নুসাইবার এই রণমূর্তি মাহফুজ কে অবাক করে দেয়। মাহফুজ রিয়েলি স্যরি। ওর ভিতরে নুসাইবার জন্য কিছুটা এট্রাকশন আছে কিন্তু সেটা এভাবে প্রকাশ পাবে সেটা মাহফুজ বুজে নি। এখনো ওর মনে হচ্ছে এটা এলকোহলের দোষ। ও তো আসলে হেল্প করতে চাইছিল। এরকম কিছু না। তবে নুসাইবার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভিতরে থাকা এট্রাকশনটা আবার টের পায় মাহফুজ। পাচ ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার নুসাইবা যেই মেজাজে আর দেমাগে দাঁড়িয়ে আছে তাতে নুসাইবা কে যেন মনে হচ্ছে ছয় ফুট। একটু আগেও চোখের পানি গড়িয়ে পরছিল চোখ থেকে, কাদছিল। এখন তার চিহ্ন নেই চোখে। এখন সেই চোখে যেন আগুন জ্বলছে। খালি চোখের নিচে গালের উপর শুকিয়ে আসা চোখের পানির দাগ। লাল ব্লাউজ আর সবুজ পেটিকোটে নুসাইবা কে দেখে যেন মনে হচ্ছে এই ড্রেস পড়ার জন্য ওর জন্ম। এখনি যেন ফ্যাশন মডেল হিসেবে ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে র্যাম্পে হাটবে নুসাইবা। একদম ন্যাচারাল। কোমড়ে হাত দিয়ে অগ্নিচোখে দাঁড়িয়ে আছে। ব্লাউজের নিচে পেটটা যেন মাহফুজের চোখ কে টানছে। বিশেষ করে নাভিটা। মাহফুজ বুঝে মাথার ভিতর থেকে এলকোহলের প্রভাব একদম যায়নি এখনো। মাহফুজ নুসাইবা কে শান্ত করতে চায়। তাই বলে ফুফু আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি। নুসাইবা প্রায় চিৎকার করে উঠে, বলে স্যরি??? তুমি কি করেছ জান? খালি স্যরি। তুমি সব নষ্ট করে দিয়েছ। আমি ভেবেছিলাম তুমি আর অন্য সবার মত না। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড যে একটা ব্যাপার সেটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম তোমার ব্যাকগ্রাউন্ড এর বাইরে তুমি উঠে আসতে পেরেছ। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। তুমি ঠিক তোমার রঙ চিনিয়েছ। নিচু জায়গা থেকে উঠে আসা কার পক্ষে এর থেকে ভাল আর কি আশা করা যায়। তোমরা খালি চিন মেয়ে আর টাকা। সুযোগ পেয়ে আমার গায়েই হাত দিয়ে দিলে। মাহফুজ এই ঘটনার জন্য স্যরি কিন্তু যেই মূহুর্তে নুসাইবা মাহফুজের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে টান দিল তখন থেকে যেন মাহফুজের ভিতরে অন্য একটা আগুন জ্বলতে থাকে। ওকে কেউ অপমান করলে সহজে সহ্য করতে পারে না মাহফুজ। এর আগের বার অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছে। তবে এইবার ওর ফ্যামিলি, ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কথা বলে একটা লাইন ক্রস করেছে নুসাইবা। ঠিক করে নি। মাহফুজ উঠে দাঁড়ায়। মাহফুজের পাচ ফুট এগার ইঞ্চি শরীরটা নুসাইবার শরীর ছাপিয়ে যায়। নুসাইবার মাথা মাহফুজের বুক বরাবর পড়ে কিন্তু নুসাইবার এটিচুড যেন মাহফুজ কে ছাড়িয়ে যায়। দুই জনে অগ্নিচোখে একে অন্য কে দেখতে থাকে। কার মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। মাহফুজ ভাবে কিভাবে সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারল উনি? আর উনার মনের ভিতরে থাকা কথা গুলো ঠিক বের হয়ে এসেছে। আমার ফ্যামিলি নিয়ে কিভাবে কথা বলতে পারল? নুসাইবা ভাবে যা ভেবেছিলাম ঠিক ছিল। মাহফুজের কে এইভাবে বিশ্বাস করা ঠিক হয় নি। অবশ্য না করেও বা কি করার ছিল। কার কাছে যেত। আরশাদ যে আর কোন রাস্তা খোলা রাখে নি। আরশাদের নাম মাথায় আসতেই মেজাজ আর খারাপ হতে থাকে। সন অফ এ বিচ। ওর জন্য আজকে এই পরিণতি। তবে আরশাদ সামনে নেই সামনে আছে মাহফুজ। তাই সব রাগ গিয়ে পড়ে মাহফুজের উপর।
নুসাইবা ভিতরের সব ক্ষোভ হতাশা লজ্জা অপমান মাহফুজের উপর ঝাড়ে। একের পর এক তীব্র বাক্যবাণ ছুড়ে। মাহফুজ তখনো কিছু বলে না। নুসাইবার প্রতিটা কথার সাথে সাথে মাহফুজের চোখের দৃষ্টি যেন আর আগুন ঝড়া হয়ে উঠে। নুসাইবা বলে তোমাদের মত ছেলে কে আমার চিনা আছে। মেয়ে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছা করে। অসভ্য ইতর ছেলে। লুচ্চা বদমাশ। মাহফুজ এইবার যেন বিস্ফোরণ ঘটায়। মাহফুজ বলে, অসভ্য? ইতর? ছোটলোক? এইসব কথা মনে ছিল না আমার থেকে সাহায্য নেবার সময়। কোথায় ছিল আপনার সভ্য ভদ্রলোক জামাই। কার কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিল? যে আমার কাছে আপনাকে আসতে হল। কার জন্য এই আজকে আমাদের এই ছবি তুলতে হচ্ছে? সেটা কি ভুলে গেছেন? আমি মেয়ে দেখলে হাত বাড়াই? নাকি আপনার জামাই হাত বাড়ায় মেয়ে দেখলে? আপনি আমাকে দেখান নি আপনার জামাই এর সাথে একটা মেয়ের কথোপকথন? কি লেখা ছিল সেখানে? কি মনে হয় আমি ইতর নাকি আপনার জামাই ইতর? আপনার সাথে এতদিন ঘুরেছি কোনদিন কি আপনার গায়ে হাত দিয়েছি? মাহফুজের এই আক্রমণে একটু থমকে যায় নুসাইবা। নুসাইবা ভেবেছিল অন্যদিনের মত আজকেও ওর আক্রমণে চুপ করে থাকবে মাহফুজ। মাহফুজ বলতে থাকে ছোটলোক? আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কথা বলছেন? মনে আছে আফসানার কথা? আমার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন? নিজের ভাতিজির প্রেম ভেংগে দেবার জন্য সুন্দরী মেয়ে কে ডেকে এনেছেন? কি বলবেন এটাকে? কার বুদ্ধি এটা? আপনার? কোন ভদ্রলোক এই কাজ করে বলেন? বিয়ে ভাংগার জন্য অন্য মেয়ে কে ছেলের দিকে প্রলুব্ধ করে? তাও নিজের ভাতিজির পছন্দের ছেলে কে? এইটা হাই ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডের পরিচয়? ঘুষ খাওয়া? জুয়া খেলা? বউয়ের অগোচরে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করা? মাহফুজ ইচ্ছা করেই নুসাইবা কে আঘাত করার জন্য কথার ছুরি চালাচ্ছে। এত দিন সব অপমান যেন ফিরিয়ে দিবে আজকে মাহফুজ। মাহফুজ জানে নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড, শিক্ষা এইসব নিয়ে কত অহংকার নুসাইবার। আরশাদ কে নিয়ে কত টা গর্ব করে। তাই নুসাইবার প্রিয় সব জিনিস যেন আজকে কথার গুলিতে ঝাঝরা করে দিবে। আফসানা কে কি বলেছিলেন? ভাল স্বামীর কি গুণ থাকা উচিত? নুসাইবা নিশ্চুপ। মাহফুজ বলে কি ভুলে গেলেন। এতক্ষন তো অনেক কথা বলছিলেন এখন সব ভুলে গেছেন। আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আপনি বলেছিলেন পাত্র পাত্রীর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কাছাকাছি হলে মনের মিল ভাল হয়। কি মনে হয় আরশাদ আংকেল আর আপনার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড তো কাছাকাছি। আপনাদের তো অনেক মনের মিল। কই উনি ঘুষ খাওয়ার সময় আপনাকে জিজ্ঞেস করে যায় নি? আর কি বলেছিলেন মনে আছে? যাকে ভালবাসবে সে যেন ট্রাসওয়ার্দি হয়। আরশাদ আংকেল যখন সেই মেয়ের সাথে দেখা করতে যায় তখন নিশ্চয় আপনার বিশ্বাস পকেটে করে নিয়ে যায়। এত দামী ট্রাস্ট তো আর আংকেল ফেলে যেতে পারে না। মাহফুজের গলার ঝাঝালো বিদ্রুপের গন্ধ। নুসাইবা কোন উত্তর না খুজে পেয়ে বলে তুমি এভাবে বলতে পার না। মাহফুজ এবার একটা বিদ্রুপের হাসি হাসে। বল, কেন আপনি বলেছিলেন না একজন আদর্শ স্বামী সব সময় স্ত্রী কে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আপনার স্বামী কি সেটা করেছে? এই এত টাকা ঘুষ খেয়েছে সেগুলার কতটাকা দিয়ে আপনার নামে জমি ফ্ল্যাট কিনেছে? ভুলে গেছেন আজকাল দূর্নীতি দমন কমিশন খালি যে ঘুষ খায় তাকে ধরে না, ঘুষের টাকায় যার নামে সম্পত্তি হয় তাকেও ধরে। আপনাকে যে জেলের ভাত খাওয়ানোর এই সুযোগ করে দিয়েছে সেটা কে? আমি? নাকি আপনার স্বামী? আমার কাছে কেন এসেছেন সেটা কি ভুলে গেছেম? এইসব ঝামেলা থেকে বাচতে? আজকে এই যে আমাকে এত কথা বলছেন, আমি কি আপনাকে জোর করে এইখানে ছবি তোলার জন্য এনেছি নাকি আপনি নিজে স্বেচ্ছায় এসেছেন? কারণ কি? আপনার স্বামী কে জেলাস করবার জন্য। এই বলে একটা জোরে হাসি দেয় মাহফুজ। নুসাইবা এই আক্রমণে খানিকটা দিশেহারা হয়। কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। কারণ মাহফুজের কথা গুলো সত্য। নুসাইবার মত পালটা উত্তর দিতে ওস্তাদ কেউ এইবার যেন কোন যুতসই উত্তর খুজে পায় না। তাই অন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। বলে, তুমি আমার গায়ে হাত দিয়েছ কেন?
ক
ঘটনা ঘটবার সময় আমরা অনেক সময় একটা ঘটনার তাতপর্য টের পাই না। ধীরে ধীরে যত সময় যায় ঘটনাটার গুরূত্ব আমাদের কাছে তত স্পষ্ট হয়। মাহফুজের বাসায় সেদিনের ঘটনা যখন ঘটছিল তখন নুসাইবা বা মাহফুজ কেউ ঠিক স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। নুসাইবার এলকোহলে অভ্যাস নেই। এর আগে যে দুই তিনবার খেয়েছে কোন বার সহ্য করতে পারে নি। সেদিন বমি না করলেও ওর মাথায় চড়ে গিয়েছিল এলকোহল। বাস্তব আর কল্পনার মাঝে যে পার্থক্য আছে সেটার সীমা রেখা সেদিন ওর কাছে ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। তাই মাহফুজের সাথে ছবি তোলার সময় মাহফুজ কি ওদের ইমাজেনরি মাহমুদ নাকি আরশাদ সব গুলিয়ে গিয়েছিল। আর মাহফুজ এলকোহলিক না হলেও কালেভদ্রে খায়। আর ওর উপর এলকোহল সহজে প্রভাব ফেলে না। তবে এলকোহলের আরেকটা খারাপ দিক আছে। সেটা সেদিন ওর উপর প্রভাব ফেলেছিল। এলকোহল মানুষের জাজমেন্ট ক্যাপাসিটি কমিয়ে দেয়। ভাল মন্দের তফাত করার ক্ষমতা কমায়। অকারণে সাহসী করে বিপদজনক ঝুকি নিতে উৎসাহী করে। মাহফুজের সেদিন সেটাই হয়েছিল। নুসাইবার সৌন্দর্য, একের পর এক অপমান, প্রত্যাখ্যান ওর ভিতর নুসাইবার প্রতি একটা লাভ এন্ড হেট রিলেশন গড়ে তুলছিল ভিতরে ভিতরে। নুসাইবার ব্যবহার সহ্য করতে পারছিল না আবার সৌন্দর্য কে অগ্রাহ্য করতে পারছিল না। মানুষ যখন কোন কিছু কে ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে না পারে তখন সেটা কে অনেক সময় আর বেশি করে চায়। সেই জায়গাটা ডমিনেট করতে চায়। মাহফুজের মনের ভিতর ধীরে ধীরে নুসাইবার প্রতি এই আবেগ গুলো তাই বাড়ছিল। এলকোহল তাই সেদিন মাহফুজের ভিতর থাকা এই আবেগ গুলো কে উস্কে দিয়েছিল। সাথে ভাল মন্দ জাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে নুসাইবার এই টাল অবস্থার সুযোগ নেবার জন্য ওকে ভিতরে ভিতরে উৎসাহী করেছিল। তবে মাহফুজ একবারো ভাবে নি এটার পরিণতি কি হবে? যখন নুসাইবা স্বাভাবিক হবে তখন সে কি ভাববে?
নুসাইবার যখন ঘোর কাটতে থাকল তখন বাস্তবতা যেন বিশাল এক ধাক্কা দিল ওকে। নুসাইবা চারপাশে দেখে। মাহফুজ আর নুসাইবা দুই জনেই ড্রেসিং টেবিলের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে। মাহফুজের চোখ বন্ধ। নিজের দিকে তাকায় নুসাইবা। শাড়ি খুলে পড়ে আছে মাটিতে। গায়ে খালি ব্রা আর পেটিকোট। টের পায় দুই পায়ের মাঝখানে প্যান্টি ভিজে গেছে। অনেক দিন পর এমন জোরালো অর্গাজম হল ওর। ভাবতে ভাবতে যেন শিউরে উঠল। ওর পাশে আরশাদ নয় মাহফুজ। এইবার যেন পুরো ব্যাপারটার গূরুত্ব ওর মাথায় পরিষ্কার হয়ে গেল। কি করল এইটা ও? কিভাবে পারল? আরশাদ ছাড়া দ্বিতীয় কোন পুরুষ কোন দিন ওকে এইভাবে ছুতে পারে নি। আজকে দ্বিতীয় পুরুষ হয়ে মাহফুজ যেন প্রবেশ করল ওর জীবনে ওর অজান্তে। নুসাইবা কিছু ঠিক করে মনে করতে পারে না। কিভাবে হল এইসব। সব কিছু যেন কেমন ঘোলাটে। আরশাদ কে জেলাস করার জন্য কিছু ছবি তুলতে এখানে এসছিল মনে আছে। খাবার পর বাথরুমে ঢুকে বেশ কিছুটা কনিয়াক খেয়েছিল। এরপর ড্রইংরুমে ছবি তুলার পর আবার কেমন টেনশন লাগায় বাথরুমে ঢুকে আবার কয়েক ঢোক। এরপর থেকে সব যেন ঝাপসা। কি হয়েছে ঠিক মনে করতে পারছে না। নুসাইবার কান্না আসতে থাকে। কি করল এটা। যে মদ কে এত ঘৃণা করে আজকে সেটার কেন সাহায্য নিতে গেল। ওর মনে হতে থাকে নিজের দোষে হয়েছে এইসব। এখন আরশাদ আর ওর মাঝে তফাত রইল কোথায়। আরশাদ যে রাস্তায় হাটছে সে রাস্তায় তো ও নিজেই হাটল আজকে। তাহলে আরশাদ কে কোন মুখে চার্জ করবে? চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। মাহফুজ একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। হঠাত করে পাশে হালকা ফোপানির শব্দ পেয়ে চোখ খুলে তাকাল। নুসাইবার গাল বেয়ে পানি পড়ছে। হাতুর তালুর উলটো দিক দিয়ে চোখ মুচছে। মাহফুজ যেন এইবার স্বর্গ থেকে মাটিতে নেমে আসল। নুসাইবার চুল এলোমেলো। শাড়ি মাটিতে, পেটিকোট দুমড়ে আছে, গায়ের ব্লাউজও একরকম দুমড়ে মুচড়ে আছে। গলার কাছে, ঘাড়ে যেখানে যেখানে মাহফুজ চুমু খেয়েছে হালকা কামড় দিয়েছে সেই জায়গা গুলো হালকা লাল হয়ে আছে। মাহফুজ কি করবে বা কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। মাহফুজ কিছু না বলে নুসাইবার কাধে হাত দেয়।
নুসাইবা টের পায় ওর কাধে হাত দিয়েছে মাহফুজ। নুসাইবার ভিতরে হঠাত যেন কি একটা হয়। জ্বলে উঠে একদম। ওর মনে হয় আজকে সব কিছুর জন্য মাহফুজ দায়ী। নুসাইবা ঝটকা মেরে মাহফুজের হাত সরিয়ে দেয় কাধ থেকে। বলে তোমার লজ্জা করে না ছি। আমার গায়ে হাত দিতে তোমার লজ্জা করছে না। কিভাবে পারলে তুমি এটা? আমি সিনথিয়ার ফুফু। তোমার ফুফুর বয়সী। তোমার মত পার্ভার্ট আমি কখনো দেখি নি। বয়সে বড় একজন মহিলার সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তুমি জান না? মাহফুজ সিনথিয়ার জ্বলে উঠা দেখে থমকে যায়। মাহফুজ জানে ও যা করেছে সেটা ঠিক করে নি কিন্তু মাহফুজ তো একা কিছু করে নি। নুসাইবাও তো তখন উপভোগ করছিল। আর মাহফুজের মাথায় এলকোহল এভাবে চড়ে না বসলে হয়ত এই কাজ করত না। মনে মনে মাহফুজ স্যরি কিন্তু নুসাইবা এইভাবে জ্বলে উঠবে ভাবে নি ও। মাহফুজ বলে, ফুফু আমি আসলে বুঝতে পারি নি। কি থেকে কি হল আমি আসলে বুঝে উঠার আগেই হয়ে গেছে। আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি। নুসাইবা এই স্যরি শুনে যেন আর জ্বলে উঠে। বসা থেকে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ায়। নুসাইবার চুল এলোমেলো। কিছু চুল কপালের উপর বাকি চুল পিঠে কাধে ছড়িয়ে আছে। কোমড়ে হাত দিয়ে জ্বলন্ত চোখে মাটিতে বসে থাকা মাহফুজের দিকে তাকিয়ে থাকে। যেন পারলে চোখের দৃষ্টি দিয়ে পুড়িয়ে মারবে মাহফুজ কে। নুসাইবার এই রণমূর্তি মাহফুজ কে অবাক করে দেয়। মাহফুজ রিয়েলি স্যরি। ওর ভিতরে নুসাইবার জন্য কিছুটা এট্রাকশন আছে কিন্তু সেটা এভাবে প্রকাশ পাবে সেটা মাহফুজ বুজে নি। এখনো ওর মনে হচ্ছে এটা এলকোহলের দোষ। ও তো আসলে হেল্প করতে চাইছিল। এরকম কিছু না। তবে নুসাইবার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভিতরে থাকা এট্রাকশনটা আবার টের পায় মাহফুজ। পাচ ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার নুসাইবা যেই মেজাজে আর দেমাগে দাঁড়িয়ে আছে তাতে নুসাইবা কে যেন মনে হচ্ছে ছয় ফুট। একটু আগেও চোখের পানি গড়িয়ে পরছিল চোখ থেকে, কাদছিল। এখন তার চিহ্ন নেই চোখে। এখন সেই চোখে যেন আগুন জ্বলছে। খালি চোখের নিচে গালের উপর শুকিয়ে আসা চোখের পানির দাগ। লাল ব্লাউজ আর সবুজ পেটিকোটে নুসাইবা কে দেখে যেন মনে হচ্ছে এই ড্রেস পড়ার জন্য ওর জন্ম। এখনি যেন ফ্যাশন মডেল হিসেবে ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে র্যাম্পে হাটবে নুসাইবা। একদম ন্যাচারাল। কোমড়ে হাত দিয়ে অগ্নিচোখে দাঁড়িয়ে আছে। ব্লাউজের নিচে পেটটা যেন মাহফুজের চোখ কে টানছে। বিশেষ করে নাভিটা। মাহফুজ বুঝে মাথার ভিতর থেকে এলকোহলের প্রভাব একদম যায়নি এখনো। মাহফুজ নুসাইবা কে শান্ত করতে চায়। তাই বলে ফুফু আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি। নুসাইবা প্রায় চিৎকার করে উঠে, বলে স্যরি??? তুমি কি করেছ জান? খালি স্যরি। তুমি সব নষ্ট করে দিয়েছ। আমি ভেবেছিলাম তুমি আর অন্য সবার মত না। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড যে একটা ব্যাপার সেটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম তোমার ব্যাকগ্রাউন্ড এর বাইরে তুমি উঠে আসতে পেরেছ। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। তুমি ঠিক তোমার রঙ চিনিয়েছ। নিচু জায়গা থেকে উঠে আসা কার পক্ষে এর থেকে ভাল আর কি আশা করা যায়। তোমরা খালি চিন মেয়ে আর টাকা। সুযোগ পেয়ে আমার গায়েই হাত দিয়ে দিলে। মাহফুজ এই ঘটনার জন্য স্যরি কিন্তু যেই মূহুর্তে নুসাইবা মাহফুজের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে টান দিল তখন থেকে যেন মাহফুজের ভিতরে অন্য একটা আগুন জ্বলতে থাকে। ওকে কেউ অপমান করলে সহজে সহ্য করতে পারে না মাহফুজ। এর আগের বার অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছে। তবে এইবার ওর ফ্যামিলি, ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কথা বলে একটা লাইন ক্রস করেছে নুসাইবা। ঠিক করে নি। মাহফুজ উঠে দাঁড়ায়। মাহফুজের পাচ ফুট এগার ইঞ্চি শরীরটা নুসাইবার শরীর ছাপিয়ে যায়। নুসাইবার মাথা মাহফুজের বুক বরাবর পড়ে কিন্তু নুসাইবার এটিচুড যেন মাহফুজ কে ছাড়িয়ে যায়। দুই জনে অগ্নিচোখে একে অন্য কে দেখতে থাকে। কার মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। মাহফুজ ভাবে কিভাবে সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারল উনি? আর উনার মনের ভিতরে থাকা কথা গুলো ঠিক বের হয়ে এসেছে। আমার ফ্যামিলি নিয়ে কিভাবে কথা বলতে পারল? নুসাইবা ভাবে যা ভেবেছিলাম ঠিক ছিল। মাহফুজের কে এইভাবে বিশ্বাস করা ঠিক হয় নি। অবশ্য না করেও বা কি করার ছিল। কার কাছে যেত। আরশাদ যে আর কোন রাস্তা খোলা রাখে নি। আরশাদের নাম মাথায় আসতেই মেজাজ আর খারাপ হতে থাকে। সন অফ এ বিচ। ওর জন্য আজকে এই পরিণতি। তবে আরশাদ সামনে নেই সামনে আছে মাহফুজ। তাই সব রাগ গিয়ে পড়ে মাহফুজের উপর।
নুসাইবা ভিতরের সব ক্ষোভ হতাশা লজ্জা অপমান মাহফুজের উপর ঝাড়ে। একের পর এক তীব্র বাক্যবাণ ছুড়ে। মাহফুজ তখনো কিছু বলে না। নুসাইবার প্রতিটা কথার সাথে সাথে মাহফুজের চোখের দৃষ্টি যেন আর আগুন ঝড়া হয়ে উঠে। নুসাইবা বলে তোমাদের মত ছেলে কে আমার চিনা আছে। মেয়ে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছা করে। অসভ্য ইতর ছেলে। লুচ্চা বদমাশ। মাহফুজ এইবার যেন বিস্ফোরণ ঘটায়। মাহফুজ বলে, অসভ্য? ইতর? ছোটলোক? এইসব কথা মনে ছিল না আমার থেকে সাহায্য নেবার সময়। কোথায় ছিল আপনার সভ্য ভদ্রলোক জামাই। কার কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিল? যে আমার কাছে আপনাকে আসতে হল। কার জন্য এই আজকে আমাদের এই ছবি তুলতে হচ্ছে? সেটা কি ভুলে গেছেন? আমি মেয়ে দেখলে হাত বাড়াই? নাকি আপনার জামাই হাত বাড়ায় মেয়ে দেখলে? আপনি আমাকে দেখান নি আপনার জামাই এর সাথে একটা মেয়ের কথোপকথন? কি লেখা ছিল সেখানে? কি মনে হয় আমি ইতর নাকি আপনার জামাই ইতর? আপনার সাথে এতদিন ঘুরেছি কোনদিন কি আপনার গায়ে হাত দিয়েছি? মাহফুজের এই আক্রমণে একটু থমকে যায় নুসাইবা। নুসাইবা ভেবেছিল অন্যদিনের মত আজকেও ওর আক্রমণে চুপ করে থাকবে মাহফুজ। মাহফুজ বলতে থাকে ছোটলোক? আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কথা বলছেন? মনে আছে আফসানার কথা? আমার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন? নিজের ভাতিজির প্রেম ভেংগে দেবার জন্য সুন্দরী মেয়ে কে ডেকে এনেছেন? কি বলবেন এটাকে? কার বুদ্ধি এটা? আপনার? কোন ভদ্রলোক এই কাজ করে বলেন? বিয়ে ভাংগার জন্য অন্য মেয়ে কে ছেলের দিকে প্রলুব্ধ করে? তাও নিজের ভাতিজির পছন্দের ছেলে কে? এইটা হাই ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডের পরিচয়? ঘুষ খাওয়া? জুয়া খেলা? বউয়ের অগোচরে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করা? মাহফুজ ইচ্ছা করেই নুসাইবা কে আঘাত করার জন্য কথার ছুরি চালাচ্ছে। এত দিন সব অপমান যেন ফিরিয়ে দিবে আজকে মাহফুজ। মাহফুজ জানে নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড, শিক্ষা এইসব নিয়ে কত অহংকার নুসাইবার। আরশাদ কে নিয়ে কত টা গর্ব করে। তাই নুসাইবার প্রিয় সব জিনিস যেন আজকে কথার গুলিতে ঝাঝরা করে দিবে। আফসানা কে কি বলেছিলেন? ভাল স্বামীর কি গুণ থাকা উচিত? নুসাইবা নিশ্চুপ। মাহফুজ বলে কি ভুলে গেলেন। এতক্ষন তো অনেক কথা বলছিলেন এখন সব ভুলে গেছেন। আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আপনি বলেছিলেন পাত্র পাত্রীর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কাছাকাছি হলে মনের মিল ভাল হয়। কি মনে হয় আরশাদ আংকেল আর আপনার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড তো কাছাকাছি। আপনাদের তো অনেক মনের মিল। কই উনি ঘুষ খাওয়ার সময় আপনাকে জিজ্ঞেস করে যায় নি? আর কি বলেছিলেন মনে আছে? যাকে ভালবাসবে সে যেন ট্রাসওয়ার্দি হয়। আরশাদ আংকেল যখন সেই মেয়ের সাথে দেখা করতে যায় তখন নিশ্চয় আপনার বিশ্বাস পকেটে করে নিয়ে যায়। এত দামী ট্রাস্ট তো আর আংকেল ফেলে যেতে পারে না। মাহফুজের গলার ঝাঝালো বিদ্রুপের গন্ধ। নুসাইবা কোন উত্তর না খুজে পেয়ে বলে তুমি এভাবে বলতে পার না। মাহফুজ এবার একটা বিদ্রুপের হাসি হাসে। বল, কেন আপনি বলেছিলেন না একজন আদর্শ স্বামী সব সময় স্ত্রী কে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আপনার স্বামী কি সেটা করেছে? এই এত টাকা ঘুষ খেয়েছে সেগুলার কতটাকা দিয়ে আপনার নামে জমি ফ্ল্যাট কিনেছে? ভুলে গেছেন আজকাল দূর্নীতি দমন কমিশন খালি যে ঘুষ খায় তাকে ধরে না, ঘুষের টাকায় যার নামে সম্পত্তি হয় তাকেও ধরে। আপনাকে যে জেলের ভাত খাওয়ানোর এই সুযোগ করে দিয়েছে সেটা কে? আমি? নাকি আপনার স্বামী? আমার কাছে কেন এসেছেন সেটা কি ভুলে গেছেম? এইসব ঝামেলা থেকে বাচতে? আজকে এই যে আমাকে এত কথা বলছেন, আমি কি আপনাকে জোর করে এইখানে ছবি তোলার জন্য এনেছি নাকি আপনি নিজে স্বেচ্ছায় এসেছেন? কারণ কি? আপনার স্বামী কে জেলাস করবার জন্য। এই বলে একটা জোরে হাসি দেয় মাহফুজ। নুসাইবা এই আক্রমণে খানিকটা দিশেহারা হয়। কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। কারণ মাহফুজের কথা গুলো সত্য। নুসাইবার মত পালটা উত্তর দিতে ওস্তাদ কেউ এইবার যেন কোন যুতসই উত্তর খুজে পায় না। তাই অন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। বলে, তুমি আমার গায়ে হাত দিয়েছ কেন?