14-08-2023, 11:00 AM
(This post was last modified: 14-08-2023, 11:10 AM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
জ
নুসাইবা ভাবতে পারে নি ওর প্ল্যান যে এভাবে ব্যাকফায়ার করবে। প্রতিদিন আরশাদ কে একের পর এক মেইল পাঠাচ্ছে। কিন্তু প্রথমে কয়দিন কোন উত্তর পায় নি। জেনিফার বলেছিল কয়েকদিন সময় লাগবে। মাহফুজেরও তাই মতামত। তাই অপেক্ষা করছিল। এরপর একদিন জিজ্ঞেস করেছে সরাসরি কে আপনি। উত্তর দেয় নি নুসাইবা। ভেবেছে জালে ধরা পড়ছে আরশাদ। ওকে বুঝিয়ে দিতে হবে এ কেমন জ্বালা। অন্য কার সাথে প্রিয়তমা থাকলে কেমন করে জ্বলতে থাকে ভিতরটা। তবে এরপর আবার কয়েকদিন চুপচাপ। গতকাল রাতে ওর মেইলের উত্তরে আরশাদ লিখে পাঠিয়েছে। ইফ ইউ নো মাই ওয়াইফ রিয়েলি ক্লোজলি, দেন শো মি প্রুফ। নুসাইবা উত্তর দিয়েছে এই আমি প্রতিদিন তোমার ওয়াইফের সাথে দেখা হলে কি পড়ে আছে, কি করেছে আজকে সেইসব বলি। আরশাদ আবার উত্তর দেয় এটা যে কেউ ফলো করে করতে পারে। নুসাইবা ভাবে আরশাদের কথায় যুক্তি আছে। এভাবে ভেবে দেখে নি আগে। নুসাইবা র্যান্ডম কিছু ইনফো দেয় মেইলে। এইসব ইনফো বেশিরভাগ সময় কেউ ওকে ভালভাবে ফলো করলে এমনিতেও পাবে। তাই জিজ্ঞেস করে কি প্রুফ। আরশাদ উত্তর দেয়, শো মি ইউ হ্যাভ সাম ক্লোজ এন্ড ইন্টিমেট পিকচার অফ হার। এইবার যেন নিজেই আটকা পড়ে নুসাইবা। ক্লোজ এন্ড ইন্টিমেট ছবি বলতে কি বুঝাচ্ছে আরশাদ। এই প্রুফ না দিলে সম্ভবত ওকে ভুয়া কোন ব্লাকমেইলার বলে উড়িয়ে দিবে। নিজের জামাই কে কি নিজেই নিজের ইরোটিক ছবি দিতে হবে। নাকি আরশাদ চাইছে নুসাইবা কোন ছেলের সাথে ইন্টিমেট ছবি তুলবে। আরশাদের উপর রাগ হয়। কিভাবে আরশাদ ভাবছে সে এরকম ছবি তুলতে পারে। আবার ওর মনে হয় আরশাদ তো জানে না এই মেইলের পিছনে কে লুকিয়ে আছে। যেমন ও জানে না ক্লাউড নাইনের পরিচয়। আরশাদ হয়ত তাই ভেরিফাই করতে চাইছে। এইবার একটু উত্তেজিত হয়। ঠিকভাবে এটা ডিল করতে পারলে হয়ত অবশেষে আরশাদের দেয়াল ভাংগা যাবে। সরাসরি জানা যাবে আরশাদ কতটা ভালবাসে ওকে। এই কাজে ওর হেল্প দরকার। পরামর্শ দরকার। তাই ওর আজকাল সব সিক্রেট কথার সাথী মাহফুজ কে ফোন দেয়।
মাহফুজ নুসাইবা আজকে একটা কফিশপে বসেছে। নুসাইবা মাহফুজ কে আরশাদের উত্তর টা দেখায়। মাহফুজ বলে আংকেল চালাক আছে। ভাল চাল দিছে। নুসাইবা বলে এখন বল কি করতে হবে। ইন্টিমেট ছবি বলতে আরশাদ কি বুঝাচ্ছে। মাহফুজ বলে ফুফু সবাই যা বুঝায় তাই বুঝিয়েছে আংকেল। নুসাইবাও ব্যাপারটা বুঝে। কিন্তু নিজের স্বামী কে নিজেই কি নুড ছবি পাঠাতে হবে। নাকি ওর এক বান্ধবী আছে যে একের পর এক প্রেম করে বেড়ায়। একদিন বলেছিল প্রেমিকদের কে নাকি মাঝে মাঝে সেজুগুজে ছবি পাঠায়। সেখানে এমন ভাব করে যে কিছু দেখা যায় আর কিছু দেখা যায় না। ছেলেরা নাকি এইসব ছবির জন্য পাগল থাকে। মাহফুজ বলে ফুফু, আংকেল আসলে দেখতে চাচ্ছে কে উনাকে এই মেইল গুলা পাঠাচ্ছে। যে পাঠাচ্ছে সে আসলে আপনার কত ক্লোজ। আসলেই কি জানে আপনাকে নাকি বিভিন্ন সোর্স থেকে খবর বের করে সেগুলো ইউজ করছে। তাই যদি আপনি কোন এমন ছবি প্রডিউস করতে না পারেন যেগুলো দেখে মনে হয় যে এই মেইল গুলো করছে তার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক আছে তাহলে এই প্ল্যান খুব একটা কাজ করবে না। নুসাইবাও এটা ভাবছিল। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে এই কাজটা করা যায়? কফি খেতে খেতে অনেক গুলো অপশন নিয়ে কথা হল। আজকে যে কফিশপে আছে এখানে ছবি তুলা যায়। সেগুলো পাঠিয়ে প্রমাণ দেওয়া যায় যে নুসাইবা নিয়মিত এই ইমেলের মালিকের সাথে ডেট করে। কিন্তু সেটাও কি আসল প্রমাণ বলা যায়। মাহফুজ এর মাঝে বলে একটা ফটোশুট করা যায়। ধরেন কোন একটা বাসায় গিয়ে। এমন ভাবে ফটোশুট যাতে মনে হয় আপনি আপনার এই ইমাজেনরি প্রেমিকের জন্যই ছবি তুলছেন বা তার সাথে ছবি তুলছেন। নুসাইবা বলে মানে? মাহফুজ বলে ধরেন আপনি কার সাথে রুম ডেটিং এ গেলেন। সেখানে গিয়ে নিজেদের কিছু অন্তরংগ ছবি তুললেন। বেশির ভাগ জিএফ বিএফ আজকাল এইসব করে। নুসাইবা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা অবাক হয়েছে। একে নুসাইবা বেশ ভদ্র শালীন। তার উপর ওদের থেকে বেশ বড়। সেই সময়ে এরকম রুম ডেটের চল ছিল না। মাহফুজ তাই বলে আমি এইসব করি না, তবে সবাই আশেপাশে করে তাই শুনি আরকি। নুসাইবা কথা বাড়ায় না। কি বলবে বুঝে না। তবে মাহফুজের কথায় যুক্তি আছে। আরশাদের সন্দেহ পুরো দূর করতে গেলে এমন কিছু করা জরুরী। তাই ঠিক হয় প্রথমে কফি হাউসে কিছু ছবি তুলা হবে আজকে। সেগুলো পাঠানো হবে। আরশাদ যদি এতে বিশ্বাস না করে তাহলে পরের স্টেপ হবে। মাহফুজের ফ্ল্যাটে গিয়ে ফটোশুট হবে।
তবে নুসাইবা যেমন আশা করেছিল আরশাদ তাতে পটল না। আরশাদের কাছে কফিশপে তোলা কিছু ছবি পাঠানো হল। এইখানে অবশ্য মাহফুজের একটা কেরামতি ছিল। মাহফুজ এমন ভাবে ছবি গুলো তুলেছে যাতে মনে হচ্ছে দূর থেকে তোলা হয়েছে। নুসাইবা তখন জিজ্ঞেস করায় বলেছিল দূর থেকে তুললে ভাল আসছে ছবি গুলো। আর আপনি তো ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে পোজ দিচ্ছেন তাহলে মনে হবে না যে আড়াল থেকে তোলা ছবি। মাহফুজ আশা করে ছিল আরশাদ দূর থেকে তোলা ব্যাপারটায় আপত্তি দিবে। হল সেটাই। আরশাদ মেইল পাঠাল আপনি যেই হোন আমার মনে হয় আসল কেউ না। আমার সাথে চালবাজি করার চেষ্টা করছেন। আপনি যেমন বলেছিলেন তেমন হলে এর থেকে ভাল কিছু আপনার কাছে থাকার কথা। আসলে আরশাদ এই ছবি গুলো দেখে একটু চমকে গেছে। বুঝাই যাচ্ছে নুসাইবা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মানে লুকিয়ে তুলা ছবি না। আরশাদের তাই মনে হল ব্যাপারটা কত সিরিয়াস সেটা বের করা দরকার। আর একবার যখন বলেছে বিশ্বাস করি না তখন এই ছবি পাঠিয়েছে। তারপর বিশ্বাস করি না বললে হয়ত এই সম্পর্কের গভীরতা পুরো বুঝা যাবে। তবে আরশাদের তখন বুকের ভিতর প্রচন্ড জ্বলন। গত এক মাসের সব ধকলের পর এটাই যেন সবচেয়ে বড় ধাক্কা। নুসাইয়াব কি আসলেই এমন করতে পারে। তাই সেই রাতে রাজশাহী থেকে আরশাদ নুসাইবা কে ফোন দিয়ে অনেক কথা বলে। মিষ্টি ব্যবহার করে। বারবার জানতে চায় আজকে কোথাও ঘুরতে গেছে কিনা। নুসাইবা বুঝে আরশাদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ওর প্ল্যান কাজ করতে শুরু করেছে কিন্তু আবার মেইলে ওকে বলছে বিশ্বাস করি না। তার মানে এখনো কিছু অবিশ্বাস আছে। এটার জন্য তাহলে পরের ধাপে যেতে হবে। মন কে শক্ত করে নুসাইবা। আরশাদ কে জয় করবার জন্য অনেক কিছুই করতে পারে ও।
মাহফুজের সাথে ফোনে কথা হয়। সেদিনের প্ল্যান মত মাহফুজের ফ্ল্যাটে একটা ফটোশুট হবে। এমন ভাবে ছবি শুট করা হবে যাতে মনে হয় এই বাসায় নুসাইবা নিয়মিত যায়। আর এই ইমাজেনেরি প্রেমিকের সাথে বেশ ফ্রি। ছবি গুলো তুলবে মাহফুজ। অর্থাৎ এই ইমাজেনিরি প্রেমিক হয়ে ক্যামেরা চালাবে মাহফুজ। প্ল্যান ঠিক করার সময় উত্তেজনায় খেয়াল না করলেও নুসাইবার মনে হতে থাকে ঠিক করল কি ও এই ব্যাপারটা? যদি কখনো এটা ফাস হয়? আর মাহফুজ সিনথিয়ার প্রেমিক। সেই ছেলে কে কিনা ওর ইমাজেনেরি প্রেমিকের রোলে অভিনয় করতে হবে। অবশ্য আর কার কাছেই বা সাহায্য চাওয়া যেত। কিন্তু এই কম বয়েসি ছেলের সাথে এই অভিনয় অভিনয় খেলতে অস্বস্তি হচ্ছে নুসাইবার। একদিকে মাহফুজ সিনথিয়ার প্রেমিক। আরেকদিকে ওর থেকে প্রায় বছর দশকের ছোট। সারাজীবনে কখনো নুসাইবা ভাবেনি এমন কিছু করতে হবে ওকে। তাই যত সময় ঘনিয়ে আসতে থাকল তত এক ধরনের উত্তেজনা, অস্বস্তি সব মিলিয়ে একটা অজানা অনুভূতি। খানিকটা নার্ভাসনেস। আরশাদ সব সময় ওর যদি কোন বড় প্রেজেন্টেশন বা মিটিং থাকে বা কাজ থাকে যেটা ওকে নার্ভাস করছে সেটাতে যাবার আগে দুই ঢোক ব্রান্ডি খায়। বিদেশ থেকে আনা। আরশাদ সব সময় বলে এগুলো আসলে মদ না। আমার নার্ভাসনেসে ঔষুধ। যদিও মদ কে ঘৃণা করে নুসাইবা কিন্তু ওর মনে হয় এই মূহুর্তে ওর বুঝি এই নার্ভাসনেসের ঔষুধ দরকার। নুসাইবা জানে আরশাদ ওদের স্টাডি রুমের টেবিলের নিচের ড্রয়ারে ব্রান্ডির বোতল রাখে। সেখান থেকে নুসাইবা একটা বের করে। আজকে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। মাহফুজের বাসায় যাবে একটু পর। তাই দুই ঢোক ব্রান্ডি গলায় ঢালে। ব্রান্ডি ওর খাওয়া অন্য মদ গুলোর মত না। এত কড়া না। নিচে যাবার সময় গলা জ্বলার সেই অনুভূতিটা নেই। তবে খুব মিষ্টি কিছুও না। তবে গলা দিয়ে নামার পাচ মিনিট পর শরীরে একটা উষ্ণতা টের পায়। মনে হয় একটু আগে নার্ভাসনেসের কারণে হাত পা কাপাকাপি বন্ধ হয়েছে। তাই ব্যাগের ভিতর ব্রান্ডির বোতলটা ভরে নেয়। যদি ফটোশ্যুটের সময় আজকে লাগে।
মাহফুজ কলিংবেল বাজতেই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আজকে সকাল থেকে বাসাটা একদম গোছগাছ করে রেখেছে। বুয়াকে সকাল সকাল ফোন দিয়ে এনে পুরো বাসা পরিষ্কার করিয়েছে। তার পর ঘর মুছিয়েছে। বুয়া জিজ্ঞেস করেছে সিনথিয়া আপা কি আইব নাকি আজকে? মাহফুজ বলে না। এমনি পার্টির কিছু বড় ভাই আসবে তাই রুম গুছিয়ে রাখছি। শুধু শুধু বুয়া কে বেশি ইনফরমেশন দিতে চায় না। দরজা খুলতেই দেখে নুসাইবা দাঁড়িয়ে আছে। একটা সবুজ কালারের শাড়ি আর লাল ব্লাউজ পড়া। চুল খোলা। একটু আগে গোসল করে এসেছে বুঝা যাচ্ছে। চমৎকার লাগছে। অবশ্য কথা ছিল নুসাইবা যেন সুন্দর লাগে সেভাবেই সেজে আসবে যাতে ছবি গুলো ভাল হয়। ব্রান্ডির বদৌলতে নুসাইবা এখন চাংগা। লিকুইড কারেজ। মাহফুজ কে বলে কি খবর? মাহফুজ বলে আমি রেডি। নুসাইবা মাহফুজের চোখের দিকে তাকায় না, বলে ওকে। আগে থেকে ঠিক করা ছিল প্রথমে লাঞ্চ করা হবে। মাহফুজ তাই বাইরে থেকে আগেই তেহারি আনিয়ে রেখেছিল। স্বাদ তেহারি ঘরের তেহারি দারুণ। নুসাইবা ঘরে ঢুকে হেটে দেখে। ব্যাচেলর ঘর হিসেবে অনেক সাজানো গুছানো। দুইটা বেড, একটা ড্রয়িং আর কিচেন। মেইন বেডরুমে একটা খাট। অন্য রুমে কোন খাট নেই। মাটিতে একটা তোষক পাতা আছে। মাহফুজ বলল মাঝে মধ্যে বন্ধুরা রাতে থাকলে এখানে থাকে। ওদের জন্য এটা। আমি মেইন বেডরুমে থাকি। নুসাইবার মনে হয় মাহফুজ বুঝি একটু নার্ভাস। ওকেও ব্যাগ থেকে বের করে দিয়ে ব্রান্ডি সাধবে কিনা ভাবে। তবে মাহফুজ ওর ব্যাগ থেকে মদের বোতল বের করলে কি ভাববে সেটা ভেবে আর কিছু বলে না। লাঞ্চ খেতে বসে ডাইনিং টেবিলে। দুই জনে তেমন কোন কথা বলে না। চুপচাপ খায়। বাতাসে একটা টেনশনের গন্ধ। মাহফুজ ভাবছে এত কাছে নুসাইবা। ওর ফটোসেশন করবে ও। কি হবে সেখানে। রুম ডেটের আবহাওয়া আনার জন্য কি খোলামেলা হবে নুসাইবা। আর নুসাইবা ভাবছে এই ছেলেটার সামনে একটু পর পোজ দিতে হবে এমন যাতে মনে হয় প্রেমিকের উদ্দ্যেশে পোজ দিচ্ছে। কিভাবে সম্ভব। ছবি শুট করার আগে বাথরুমে ঢুকে আর দুই ঢোক ব্রান্ডি খেতে হবে।
খাওয়া শেষ হয়। দুইজনেই নার্ভাস। কিভাবে শুরু করবে সব। নুসাইবার মনে হয় এভাবে চললে মাহফুজ বুজি লজ্জায় কিছু বলতে পারবে না। আসলে মাহফুজ ভাবছে ও কিছু বললে নুসাইবা না আবার মাইন্ড করে। নুসাইবা তাই আবার একটু লিকুইড কারেজের সাহায্য নেয়। বাথরুমে ঢুকে দুই ঢোক খায় আবার। একটু অপেক্ষা করে। শরীরে আবার নতুন করে উষ্ণ অনুভূতি। আবার যেন সাহস ফিরে পায়। বাথরুম থেকে বের হয়ে মাহফুজ কে বলে কোথায় শুট করব। মাহফুজ দেখে নুসাইবা চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে এসেছে। নার্ভাস বুঝা যাচ্ছে। মাহফুজ বলে আসলে আমাদের এমন ভাবে শুট করতে হবে যাতে মনে হয় আপনি এই ইমাজেনেরি প্রেমিকের বাসায় নিয়মিত আসেন। তাই ড্রয়িংরুম, ডাইনিং রুম, বেডরুম সব জায়গায় ছবি তুলতে হবে। নুসাইবা বলে হ্যা ঠিক। মাহফুজ ওর ডিএসএলার ক্যামেরা বের করে। নুসাইবা বলে তুমি প্রফেশনাল ছবি তুল নাকি। মাহফুজ ঠিক প্রফেশনাল ছবি তুলি না কিন্তু ছবি নিয়ে আগ্রহ আছে। তাই মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে ছবি তুলি আরকি। নুসাইবা ভাবে ছেলেটার অনেক গুণ। অনেক কিছুই জানা বাকি। সিনথিয়া ঠিক বলেছিল, মাহফুজের সাথে ভাল করে মিশলে দেখবে একের পর এক চমক। মাহফুজ ক্যামেরার শাটার স্পিড, লাইট সেগুলো ঠিক করার জন্য কয়েকটা শট তুলে এমনি এমনি। আবার চেক করে কেমন হচ্ছে ছবি গুলো। সেই অনুযায়ী ক্যামেরার সেটিং ঠিক করে। এরপর বলে আমি রেডি। নুসাইবা জোরে নিশ্বাস ফেলে।
প্রথম কয়েকটা শট নেওয়া হয় ড্রইং রুমের সোফায়। নুসাইবা শাড়ি পড়ে বসে আছে। কোনটাতে জানালার দিকে তাকানো। কোনটায় ক্যামেরার দিকে তাকানো। খুব নরমাল ছবি। তবে একটা ছবিতে নুসাইবা পত্রিকা হাতে নিয়ে ক্যামেরার দিকে ফ্রন্ট পেজ ঘুরিয়ে রেখেছে। যাতে ছবি জুম ইন করলে বুঝা যায় পত্রিকার তারিখ। এই বুদ্ধিটা নুসাইবার। সিনেমায় দেখেছে কিডনাপ করলে কিডনাপাররা যাকে কিডনাপ করেছে তার হাতে একটা পত্রিকার রিসেন্ট কপি দিয়ে ছবি তুলায় প্রমাণ করার জন্য যে যাকে কিডনাপ করেছে সে জীবিত। আরশাদ যাতে এই ছবি কখন তুলা এইটা নিয়ে প্রশ্ন করতে না পারে সে জন্য এই ছবি তুলা হল। মাহফুজ মনে মনে বলল গুড আইডিয়া। এরপরের দৃশ্য কি হবে সেটা নিয়ে দুইজন কিছুক্ষণ আলোচনা করল। ঠিক হল নুসাইবা ডাইনিং টেবিলে বসবে। সামনে খাবার থাকবে। এটার কারণ হল নুসাইবা এই বাসায় নিয়মিত আসে, খাওয়া দাওয়া করে সেটা বুঝানো। যদিও লাঞ্চ হয়ে গেছে তাও ছবি তুলার জন্য নুসাইবা খাবার টেবিলে বসল। সামনে বেচে যাওয়া তেহারির প্যাকেট থেকে কিছুটা তেহারি প্লেটে রাখা হল। কয়েকটা ছবি তুলা হল নুসাইবা আর খাওয়ার প্লেটের। কোন ছবিতে নুসাইবা খাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, কোনটায় খাবার মুখে তুলছে। দশ মিনিট সময় লাগিয়ে এই ছবি গুলোও তুলা হল। তবে নুসাইবা নার্ভাস। এই ছবি তুলার সিদ্ধান্ত কি ঠিক হল সেটা নিয়ে ওর মনে ডাউট তৈরি হচ্ছে। এইভাবে মাহফুজের ক্যামেরায় ছবি তুলতে অস্বস্তি হচ্ছে। যদিও খুব নরমাল ছবি, খারাপ কিছু নেই কিন্তু এই ছবি গুলোর ইনার মিনিং টা ওকে অস্বস্তিতে ফেলছে। একজন প্রেমিকের ক্যামেরায় ওর ছবি তোলা হচ্ছে। যদিও সেটা সত্যি না, মাহফুজ ওর ইমাজেনেরি প্রেমিকের ভূমিকা নিয়ে ছবি তুলছে। কিন্তু তারপরেও। এইভাবে দশ বছর ছোট একটা ছেলের ক্যামেরায় যে কিনা আবার ওর ভাতিজির প্রেমিকা কাছে এইভাবে ছবি তুলতে নার্ভাস লাগছে। মাহফুজ টের পাচ্ছে নুসাইবা ইজি হতে পারছে না। নুসাইবা এমনিতে খুব ফটোজেনিক। ছবিতে সব সময় সুন্দর লাগে। প্রথম যখন সিনথিয়ার ফেসবুকে নুসাইবার ছবি দেখেছিল এই কথা টা মাথায় এসেছিল। সিনথিয়ার ফুফু দারুণ ফটোজেনিক। তবে আজকে চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে জোর করে ছবি তুলানো হচ্ছে। এভাবে ছবি তুললে ছবির আসল উদ্দ্যেশ ব্যহত হবে। মাহফুজ তাই নুসাইবা কে বলে ফুফু আপনি কি ইজি ফিল করছেন না? এইভাবে ছবি তুললে আংকেল এইবার মেইলে বলবে আপনাকে জোর করে ছবি তুলানো হয়েছে। আপনি আংকেল কে জেলাস করতে চাচ্ছেন। সেখানে দেখাতে হবে আপনি স্বেচ্ছায় খুশিতে আপনার ইমাজেনরি প্রেমিকের সাথে আছেন। আর সেই প্রেমিক ছবি তুলছে আপনাদের বিভিন্ন মুহূর্তের। আপনি যদি ইজি না হন তাহলে এই ছবি তুলে কোন লাভ হবে না। আপনি যদি ইজি ফিল না করেন তাহলে বাদ দেই আমরা আজকে। পরে আরেকদিন কখনো করব যখন আপনি ইজি ফিল করবেন। নুসাইবা ইজি ফিল করছে না এইটা সত্য তবে আরেকদিন আসলে যে ইজি ফিল করবে সেই গ্যারান্টি নেই। তার উপর আজকে অনেক কষ্ট করে সাহস যোগাড় করে এসেছে। নিজ ইচ্ছায় ব্রান্ডি খেয়ে নার্ভাসনেস কাটিয়েছে। আবার আরেকদিন ব্রান্ডি খাওয়ার বা সাহস যোগাড় করার জন্য মন কে তাড়া দেবার ক্ষমতা আর নেই। তাই নুসাইবা বলে নাহ, আজকেই করি। দেরি হয়ে যাচ্ছে। মাহফুজ বলে দেটস রাইট। বেশি দেরি করলে আংকেল ভাববে মেইল যে করছে সে ভুয়া।
নুসাইবা ভাবতে পারে নি ওর প্ল্যান যে এভাবে ব্যাকফায়ার করবে। প্রতিদিন আরশাদ কে একের পর এক মেইল পাঠাচ্ছে। কিন্তু প্রথমে কয়দিন কোন উত্তর পায় নি। জেনিফার বলেছিল কয়েকদিন সময় লাগবে। মাহফুজেরও তাই মতামত। তাই অপেক্ষা করছিল। এরপর একদিন জিজ্ঞেস করেছে সরাসরি কে আপনি। উত্তর দেয় নি নুসাইবা। ভেবেছে জালে ধরা পড়ছে আরশাদ। ওকে বুঝিয়ে দিতে হবে এ কেমন জ্বালা। অন্য কার সাথে প্রিয়তমা থাকলে কেমন করে জ্বলতে থাকে ভিতরটা। তবে এরপর আবার কয়েকদিন চুপচাপ। গতকাল রাতে ওর মেইলের উত্তরে আরশাদ লিখে পাঠিয়েছে। ইফ ইউ নো মাই ওয়াইফ রিয়েলি ক্লোজলি, দেন শো মি প্রুফ। নুসাইবা উত্তর দিয়েছে এই আমি প্রতিদিন তোমার ওয়াইফের সাথে দেখা হলে কি পড়ে আছে, কি করেছে আজকে সেইসব বলি। আরশাদ আবার উত্তর দেয় এটা যে কেউ ফলো করে করতে পারে। নুসাইবা ভাবে আরশাদের কথায় যুক্তি আছে। এভাবে ভেবে দেখে নি আগে। নুসাইবা র্যান্ডম কিছু ইনফো দেয় মেইলে। এইসব ইনফো বেশিরভাগ সময় কেউ ওকে ভালভাবে ফলো করলে এমনিতেও পাবে। তাই জিজ্ঞেস করে কি প্রুফ। আরশাদ উত্তর দেয়, শো মি ইউ হ্যাভ সাম ক্লোজ এন্ড ইন্টিমেট পিকচার অফ হার। এইবার যেন নিজেই আটকা পড়ে নুসাইবা। ক্লোজ এন্ড ইন্টিমেট ছবি বলতে কি বুঝাচ্ছে আরশাদ। এই প্রুফ না দিলে সম্ভবত ওকে ভুয়া কোন ব্লাকমেইলার বলে উড়িয়ে দিবে। নিজের জামাই কে কি নিজেই নিজের ইরোটিক ছবি দিতে হবে। নাকি আরশাদ চাইছে নুসাইবা কোন ছেলের সাথে ইন্টিমেট ছবি তুলবে। আরশাদের উপর রাগ হয়। কিভাবে আরশাদ ভাবছে সে এরকম ছবি তুলতে পারে। আবার ওর মনে হয় আরশাদ তো জানে না এই মেইলের পিছনে কে লুকিয়ে আছে। যেমন ও জানে না ক্লাউড নাইনের পরিচয়। আরশাদ হয়ত তাই ভেরিফাই করতে চাইছে। এইবার একটু উত্তেজিত হয়। ঠিকভাবে এটা ডিল করতে পারলে হয়ত অবশেষে আরশাদের দেয়াল ভাংগা যাবে। সরাসরি জানা যাবে আরশাদ কতটা ভালবাসে ওকে। এই কাজে ওর হেল্প দরকার। পরামর্শ দরকার। তাই ওর আজকাল সব সিক্রেট কথার সাথী মাহফুজ কে ফোন দেয়।
মাহফুজ নুসাইবা আজকে একটা কফিশপে বসেছে। নুসাইবা মাহফুজ কে আরশাদের উত্তর টা দেখায়। মাহফুজ বলে আংকেল চালাক আছে। ভাল চাল দিছে। নুসাইবা বলে এখন বল কি করতে হবে। ইন্টিমেট ছবি বলতে আরশাদ কি বুঝাচ্ছে। মাহফুজ বলে ফুফু সবাই যা বুঝায় তাই বুঝিয়েছে আংকেল। নুসাইবাও ব্যাপারটা বুঝে। কিন্তু নিজের স্বামী কে নিজেই কি নুড ছবি পাঠাতে হবে। নাকি ওর এক বান্ধবী আছে যে একের পর এক প্রেম করে বেড়ায়। একদিন বলেছিল প্রেমিকদের কে নাকি মাঝে মাঝে সেজুগুজে ছবি পাঠায়। সেখানে এমন ভাব করে যে কিছু দেখা যায় আর কিছু দেখা যায় না। ছেলেরা নাকি এইসব ছবির জন্য পাগল থাকে। মাহফুজ বলে ফুফু, আংকেল আসলে দেখতে চাচ্ছে কে উনাকে এই মেইল গুলা পাঠাচ্ছে। যে পাঠাচ্ছে সে আসলে আপনার কত ক্লোজ। আসলেই কি জানে আপনাকে নাকি বিভিন্ন সোর্স থেকে খবর বের করে সেগুলো ইউজ করছে। তাই যদি আপনি কোন এমন ছবি প্রডিউস করতে না পারেন যেগুলো দেখে মনে হয় যে এই মেইল গুলো করছে তার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক আছে তাহলে এই প্ল্যান খুব একটা কাজ করবে না। নুসাইবাও এটা ভাবছিল। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে এই কাজটা করা যায়? কফি খেতে খেতে অনেক গুলো অপশন নিয়ে কথা হল। আজকে যে কফিশপে আছে এখানে ছবি তুলা যায়। সেগুলো পাঠিয়ে প্রমাণ দেওয়া যায় যে নুসাইবা নিয়মিত এই ইমেলের মালিকের সাথে ডেট করে। কিন্তু সেটাও কি আসল প্রমাণ বলা যায়। মাহফুজ এর মাঝে বলে একটা ফটোশুট করা যায়। ধরেন কোন একটা বাসায় গিয়ে। এমন ভাবে ফটোশুট যাতে মনে হয় আপনি আপনার এই ইমাজেনরি প্রেমিকের জন্যই ছবি তুলছেন বা তার সাথে ছবি তুলছেন। নুসাইবা বলে মানে? মাহফুজ বলে ধরেন আপনি কার সাথে রুম ডেটিং এ গেলেন। সেখানে গিয়ে নিজেদের কিছু অন্তরংগ ছবি তুললেন। বেশির ভাগ জিএফ বিএফ আজকাল এইসব করে। নুসাইবা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা অবাক হয়েছে। একে নুসাইবা বেশ ভদ্র শালীন। তার উপর ওদের থেকে বেশ বড়। সেই সময়ে এরকম রুম ডেটের চল ছিল না। মাহফুজ তাই বলে আমি এইসব করি না, তবে সবাই আশেপাশে করে তাই শুনি আরকি। নুসাইবা কথা বাড়ায় না। কি বলবে বুঝে না। তবে মাহফুজের কথায় যুক্তি আছে। আরশাদের সন্দেহ পুরো দূর করতে গেলে এমন কিছু করা জরুরী। তাই ঠিক হয় প্রথমে কফি হাউসে কিছু ছবি তুলা হবে আজকে। সেগুলো পাঠানো হবে। আরশাদ যদি এতে বিশ্বাস না করে তাহলে পরের স্টেপ হবে। মাহফুজের ফ্ল্যাটে গিয়ে ফটোশুট হবে।
তবে নুসাইবা যেমন আশা করেছিল আরশাদ তাতে পটল না। আরশাদের কাছে কফিশপে তোলা কিছু ছবি পাঠানো হল। এইখানে অবশ্য মাহফুজের একটা কেরামতি ছিল। মাহফুজ এমন ভাবে ছবি গুলো তুলেছে যাতে মনে হচ্ছে দূর থেকে তোলা হয়েছে। নুসাইবা তখন জিজ্ঞেস করায় বলেছিল দূর থেকে তুললে ভাল আসছে ছবি গুলো। আর আপনি তো ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে পোজ দিচ্ছেন তাহলে মনে হবে না যে আড়াল থেকে তোলা ছবি। মাহফুজ আশা করে ছিল আরশাদ দূর থেকে তোলা ব্যাপারটায় আপত্তি দিবে। হল সেটাই। আরশাদ মেইল পাঠাল আপনি যেই হোন আমার মনে হয় আসল কেউ না। আমার সাথে চালবাজি করার চেষ্টা করছেন। আপনি যেমন বলেছিলেন তেমন হলে এর থেকে ভাল কিছু আপনার কাছে থাকার কথা। আসলে আরশাদ এই ছবি গুলো দেখে একটু চমকে গেছে। বুঝাই যাচ্ছে নুসাইবা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মানে লুকিয়ে তুলা ছবি না। আরশাদের তাই মনে হল ব্যাপারটা কত সিরিয়াস সেটা বের করা দরকার। আর একবার যখন বলেছে বিশ্বাস করি না তখন এই ছবি পাঠিয়েছে। তারপর বিশ্বাস করি না বললে হয়ত এই সম্পর্কের গভীরতা পুরো বুঝা যাবে। তবে আরশাদের তখন বুকের ভিতর প্রচন্ড জ্বলন। গত এক মাসের সব ধকলের পর এটাই যেন সবচেয়ে বড় ধাক্কা। নুসাইয়াব কি আসলেই এমন করতে পারে। তাই সেই রাতে রাজশাহী থেকে আরশাদ নুসাইবা কে ফোন দিয়ে অনেক কথা বলে। মিষ্টি ব্যবহার করে। বারবার জানতে চায় আজকে কোথাও ঘুরতে গেছে কিনা। নুসাইবা বুঝে আরশাদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ওর প্ল্যান কাজ করতে শুরু করেছে কিন্তু আবার মেইলে ওকে বলছে বিশ্বাস করি না। তার মানে এখনো কিছু অবিশ্বাস আছে। এটার জন্য তাহলে পরের ধাপে যেতে হবে। মন কে শক্ত করে নুসাইবা। আরশাদ কে জয় করবার জন্য অনেক কিছুই করতে পারে ও।
মাহফুজের সাথে ফোনে কথা হয়। সেদিনের প্ল্যান মত মাহফুজের ফ্ল্যাটে একটা ফটোশুট হবে। এমন ভাবে ছবি শুট করা হবে যাতে মনে হয় এই বাসায় নুসাইবা নিয়মিত যায়। আর এই ইমাজেনেরি প্রেমিকের সাথে বেশ ফ্রি। ছবি গুলো তুলবে মাহফুজ। অর্থাৎ এই ইমাজেনিরি প্রেমিক হয়ে ক্যামেরা চালাবে মাহফুজ। প্ল্যান ঠিক করার সময় উত্তেজনায় খেয়াল না করলেও নুসাইবার মনে হতে থাকে ঠিক করল কি ও এই ব্যাপারটা? যদি কখনো এটা ফাস হয়? আর মাহফুজ সিনথিয়ার প্রেমিক। সেই ছেলে কে কিনা ওর ইমাজেনেরি প্রেমিকের রোলে অভিনয় করতে হবে। অবশ্য আর কার কাছেই বা সাহায্য চাওয়া যেত। কিন্তু এই কম বয়েসি ছেলের সাথে এই অভিনয় অভিনয় খেলতে অস্বস্তি হচ্ছে নুসাইবার। একদিকে মাহফুজ সিনথিয়ার প্রেমিক। আরেকদিকে ওর থেকে প্রায় বছর দশকের ছোট। সারাজীবনে কখনো নুসাইবা ভাবেনি এমন কিছু করতে হবে ওকে। তাই যত সময় ঘনিয়ে আসতে থাকল তত এক ধরনের উত্তেজনা, অস্বস্তি সব মিলিয়ে একটা অজানা অনুভূতি। খানিকটা নার্ভাসনেস। আরশাদ সব সময় ওর যদি কোন বড় প্রেজেন্টেশন বা মিটিং থাকে বা কাজ থাকে যেটা ওকে নার্ভাস করছে সেটাতে যাবার আগে দুই ঢোক ব্রান্ডি খায়। বিদেশ থেকে আনা। আরশাদ সব সময় বলে এগুলো আসলে মদ না। আমার নার্ভাসনেসে ঔষুধ। যদিও মদ কে ঘৃণা করে নুসাইবা কিন্তু ওর মনে হয় এই মূহুর্তে ওর বুঝি এই নার্ভাসনেসের ঔষুধ দরকার। নুসাইবা জানে আরশাদ ওদের স্টাডি রুমের টেবিলের নিচের ড্রয়ারে ব্রান্ডির বোতল রাখে। সেখান থেকে নুসাইবা একটা বের করে। আজকে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। মাহফুজের বাসায় যাবে একটু পর। তাই দুই ঢোক ব্রান্ডি গলায় ঢালে। ব্রান্ডি ওর খাওয়া অন্য মদ গুলোর মত না। এত কড়া না। নিচে যাবার সময় গলা জ্বলার সেই অনুভূতিটা নেই। তবে খুব মিষ্টি কিছুও না। তবে গলা দিয়ে নামার পাচ মিনিট পর শরীরে একটা উষ্ণতা টের পায়। মনে হয় একটু আগে নার্ভাসনেসের কারণে হাত পা কাপাকাপি বন্ধ হয়েছে। তাই ব্যাগের ভিতর ব্রান্ডির বোতলটা ভরে নেয়। যদি ফটোশ্যুটের সময় আজকে লাগে।
মাহফুজ কলিংবেল বাজতেই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আজকে সকাল থেকে বাসাটা একদম গোছগাছ করে রেখেছে। বুয়াকে সকাল সকাল ফোন দিয়ে এনে পুরো বাসা পরিষ্কার করিয়েছে। তার পর ঘর মুছিয়েছে। বুয়া জিজ্ঞেস করেছে সিনথিয়া আপা কি আইব নাকি আজকে? মাহফুজ বলে না। এমনি পার্টির কিছু বড় ভাই আসবে তাই রুম গুছিয়ে রাখছি। শুধু শুধু বুয়া কে বেশি ইনফরমেশন দিতে চায় না। দরজা খুলতেই দেখে নুসাইবা দাঁড়িয়ে আছে। একটা সবুজ কালারের শাড়ি আর লাল ব্লাউজ পড়া। চুল খোলা। একটু আগে গোসল করে এসেছে বুঝা যাচ্ছে। চমৎকার লাগছে। অবশ্য কথা ছিল নুসাইবা যেন সুন্দর লাগে সেভাবেই সেজে আসবে যাতে ছবি গুলো ভাল হয়। ব্রান্ডির বদৌলতে নুসাইবা এখন চাংগা। লিকুইড কারেজ। মাহফুজ কে বলে কি খবর? মাহফুজ বলে আমি রেডি। নুসাইবা মাহফুজের চোখের দিকে তাকায় না, বলে ওকে। আগে থেকে ঠিক করা ছিল প্রথমে লাঞ্চ করা হবে। মাহফুজ তাই বাইরে থেকে আগেই তেহারি আনিয়ে রেখেছিল। স্বাদ তেহারি ঘরের তেহারি দারুণ। নুসাইবা ঘরে ঢুকে হেটে দেখে। ব্যাচেলর ঘর হিসেবে অনেক সাজানো গুছানো। দুইটা বেড, একটা ড্রয়িং আর কিচেন। মেইন বেডরুমে একটা খাট। অন্য রুমে কোন খাট নেই। মাটিতে একটা তোষক পাতা আছে। মাহফুজ বলল মাঝে মধ্যে বন্ধুরা রাতে থাকলে এখানে থাকে। ওদের জন্য এটা। আমি মেইন বেডরুমে থাকি। নুসাইবার মনে হয় মাহফুজ বুঝি একটু নার্ভাস। ওকেও ব্যাগ থেকে বের করে দিয়ে ব্রান্ডি সাধবে কিনা ভাবে। তবে মাহফুজ ওর ব্যাগ থেকে মদের বোতল বের করলে কি ভাববে সেটা ভেবে আর কিছু বলে না। লাঞ্চ খেতে বসে ডাইনিং টেবিলে। দুই জনে তেমন কোন কথা বলে না। চুপচাপ খায়। বাতাসে একটা টেনশনের গন্ধ। মাহফুজ ভাবছে এত কাছে নুসাইবা। ওর ফটোসেশন করবে ও। কি হবে সেখানে। রুম ডেটের আবহাওয়া আনার জন্য কি খোলামেলা হবে নুসাইবা। আর নুসাইবা ভাবছে এই ছেলেটার সামনে একটু পর পোজ দিতে হবে এমন যাতে মনে হয় প্রেমিকের উদ্দ্যেশে পোজ দিচ্ছে। কিভাবে সম্ভব। ছবি শুট করার আগে বাথরুমে ঢুকে আর দুই ঢোক ব্রান্ডি খেতে হবে।
খাওয়া শেষ হয়। দুইজনেই নার্ভাস। কিভাবে শুরু করবে সব। নুসাইবার মনে হয় এভাবে চললে মাহফুজ বুজি লজ্জায় কিছু বলতে পারবে না। আসলে মাহফুজ ভাবছে ও কিছু বললে নুসাইবা না আবার মাইন্ড করে। নুসাইবা তাই আবার একটু লিকুইড কারেজের সাহায্য নেয়। বাথরুমে ঢুকে দুই ঢোক খায় আবার। একটু অপেক্ষা করে। শরীরে আবার নতুন করে উষ্ণ অনুভূতি। আবার যেন সাহস ফিরে পায়। বাথরুম থেকে বের হয়ে মাহফুজ কে বলে কোথায় শুট করব। মাহফুজ দেখে নুসাইবা চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে এসেছে। নার্ভাস বুঝা যাচ্ছে। মাহফুজ বলে আসলে আমাদের এমন ভাবে শুট করতে হবে যাতে মনে হয় আপনি এই ইমাজেনেরি প্রেমিকের বাসায় নিয়মিত আসেন। তাই ড্রয়িংরুম, ডাইনিং রুম, বেডরুম সব জায়গায় ছবি তুলতে হবে। নুসাইবা বলে হ্যা ঠিক। মাহফুজ ওর ডিএসএলার ক্যামেরা বের করে। নুসাইবা বলে তুমি প্রফেশনাল ছবি তুল নাকি। মাহফুজ ঠিক প্রফেশনাল ছবি তুলি না কিন্তু ছবি নিয়ে আগ্রহ আছে। তাই মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে ছবি তুলি আরকি। নুসাইবা ভাবে ছেলেটার অনেক গুণ। অনেক কিছুই জানা বাকি। সিনথিয়া ঠিক বলেছিল, মাহফুজের সাথে ভাল করে মিশলে দেখবে একের পর এক চমক। মাহফুজ ক্যামেরার শাটার স্পিড, লাইট সেগুলো ঠিক করার জন্য কয়েকটা শট তুলে এমনি এমনি। আবার চেক করে কেমন হচ্ছে ছবি গুলো। সেই অনুযায়ী ক্যামেরার সেটিং ঠিক করে। এরপর বলে আমি রেডি। নুসাইবা জোরে নিশ্বাস ফেলে।
প্রথম কয়েকটা শট নেওয়া হয় ড্রইং রুমের সোফায়। নুসাইবা শাড়ি পড়ে বসে আছে। কোনটাতে জানালার দিকে তাকানো। কোনটায় ক্যামেরার দিকে তাকানো। খুব নরমাল ছবি। তবে একটা ছবিতে নুসাইবা পত্রিকা হাতে নিয়ে ক্যামেরার দিকে ফ্রন্ট পেজ ঘুরিয়ে রেখেছে। যাতে ছবি জুম ইন করলে বুঝা যায় পত্রিকার তারিখ। এই বুদ্ধিটা নুসাইবার। সিনেমায় দেখেছে কিডনাপ করলে কিডনাপাররা যাকে কিডনাপ করেছে তার হাতে একটা পত্রিকার রিসেন্ট কপি দিয়ে ছবি তুলায় প্রমাণ করার জন্য যে যাকে কিডনাপ করেছে সে জীবিত। আরশাদ যাতে এই ছবি কখন তুলা এইটা নিয়ে প্রশ্ন করতে না পারে সে জন্য এই ছবি তুলা হল। মাহফুজ মনে মনে বলল গুড আইডিয়া। এরপরের দৃশ্য কি হবে সেটা নিয়ে দুইজন কিছুক্ষণ আলোচনা করল। ঠিক হল নুসাইবা ডাইনিং টেবিলে বসবে। সামনে খাবার থাকবে। এটার কারণ হল নুসাইবা এই বাসায় নিয়মিত আসে, খাওয়া দাওয়া করে সেটা বুঝানো। যদিও লাঞ্চ হয়ে গেছে তাও ছবি তুলার জন্য নুসাইবা খাবার টেবিলে বসল। সামনে বেচে যাওয়া তেহারির প্যাকেট থেকে কিছুটা তেহারি প্লেটে রাখা হল। কয়েকটা ছবি তুলা হল নুসাইবা আর খাওয়ার প্লেটের। কোন ছবিতে নুসাইবা খাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, কোনটায় খাবার মুখে তুলছে। দশ মিনিট সময় লাগিয়ে এই ছবি গুলোও তুলা হল। তবে নুসাইবা নার্ভাস। এই ছবি তুলার সিদ্ধান্ত কি ঠিক হল সেটা নিয়ে ওর মনে ডাউট তৈরি হচ্ছে। এইভাবে মাহফুজের ক্যামেরায় ছবি তুলতে অস্বস্তি হচ্ছে। যদিও খুব নরমাল ছবি, খারাপ কিছু নেই কিন্তু এই ছবি গুলোর ইনার মিনিং টা ওকে অস্বস্তিতে ফেলছে। একজন প্রেমিকের ক্যামেরায় ওর ছবি তোলা হচ্ছে। যদিও সেটা সত্যি না, মাহফুজ ওর ইমাজেনেরি প্রেমিকের ভূমিকা নিয়ে ছবি তুলছে। কিন্তু তারপরেও। এইভাবে দশ বছর ছোট একটা ছেলের ক্যামেরায় যে কিনা আবার ওর ভাতিজির প্রেমিকা কাছে এইভাবে ছবি তুলতে নার্ভাস লাগছে। মাহফুজ টের পাচ্ছে নুসাইবা ইজি হতে পারছে না। নুসাইবা এমনিতে খুব ফটোজেনিক। ছবিতে সব সময় সুন্দর লাগে। প্রথম যখন সিনথিয়ার ফেসবুকে নুসাইবার ছবি দেখেছিল এই কথা টা মাথায় এসেছিল। সিনথিয়ার ফুফু দারুণ ফটোজেনিক। তবে আজকে চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে জোর করে ছবি তুলানো হচ্ছে। এভাবে ছবি তুললে ছবির আসল উদ্দ্যেশ ব্যহত হবে। মাহফুজ তাই নুসাইবা কে বলে ফুফু আপনি কি ইজি ফিল করছেন না? এইভাবে ছবি তুললে আংকেল এইবার মেইলে বলবে আপনাকে জোর করে ছবি তুলানো হয়েছে। আপনি আংকেল কে জেলাস করতে চাচ্ছেন। সেখানে দেখাতে হবে আপনি স্বেচ্ছায় খুশিতে আপনার ইমাজেনরি প্রেমিকের সাথে আছেন। আর সেই প্রেমিক ছবি তুলছে আপনাদের বিভিন্ন মুহূর্তের। আপনি যদি ইজি না হন তাহলে এই ছবি তুলে কোন লাভ হবে না। আপনি যদি ইজি ফিল না করেন তাহলে বাদ দেই আমরা আজকে। পরে আরেকদিন কখনো করব যখন আপনি ইজি ফিল করবেন। নুসাইবা ইজি ফিল করছে না এইটা সত্য তবে আরেকদিন আসলে যে ইজি ফিল করবে সেই গ্যারান্টি নেই। তার উপর আজকে অনেক কষ্ট করে সাহস যোগাড় করে এসেছে। নিজ ইচ্ছায় ব্রান্ডি খেয়ে নার্ভাসনেস কাটিয়েছে। আবার আরেকদিন ব্রান্ডি খাওয়ার বা সাহস যোগাড় করার জন্য মন কে তাড়া দেবার ক্ষমতা আর নেই। তাই নুসাইবা বলে নাহ, আজকেই করি। দেরি হয়ে যাচ্ছে। মাহফুজ বলে দেটস রাইট। বেশি দেরি করলে আংকেল ভাববে মেইল যে করছে সে ভুয়া।