03-08-2023, 10:54 PM
(This post was last modified: 03-08-2023, 11:05 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ঙ
পত্রিকার রিপোর্ট বের হবার পর অবস্থা যতটা গুরুতর ভেবেছিলেন আরশাদ ঘটনা তার থেকে বেশি গুরুতর হয়ে দাড়াচ্ছে। তাকে সরকারের যে উচ্চ পদস্থ আমলা আর রাজস্ব বোর্ডের যে মেম্বার ব্যাকিং দেয় দুইজনের সাথেই কথা বলেছে রিপোর্ট বের হবার পর। তাদের দুই জনের উপদেশ হচ্ছে একদম চুপ করে থাকতে। কেউ জিজ্ঞেস করলে প্রথমেই বলতে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াতে যে এটা মিথ্যা নিউজ। মানহানিকর। তবে আসল ব্যাপার হল পরের রিপোর্টে কি আসবে সেটা। উনারাও এই বিষয়ে চিন্তিত। আর যেহেতু উনাদের কথা ইংগিত করা হয়েছে তাই উনারাও একটু সংকিত। কারণ কেউ শুধু শুধু এমন একটা জিনিসের সাথে নিজের নাম জড়াতে চাইবে না। তবে তাদের আচরণে আরশাদ টের পেয়েছে উনারা একটু গা বাচিয়ে চলতে চাইছেন। যদি সত্যি সত্যি কিছু ঘটে এই রিপোর্টের কারণে তাহলে যেন তাদের নিজেদের ডুবতে না হয় আরশাদের সাথে। আকার ইংগিতে এটা বুঝিয়েছেন উনারা দুইজনেই পরের রিপোর্টের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। উনাদের থেকে তেমন একটা সাড়া না পেয়ে ভাল খাতির আছে এমন দুই একজন রাজনৈতিক নেতার সাথে কথা বলেছেন কিন্তু দূর্নীতির রিপোর্টের সাথে কেউ এমনি এমনি নাম জড়াতে চায় না। তাই তারাও এড়িয়ে গেছেন। সানরাইজ গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করতেই গ্রুপের মালিক বলেছেন সাবধান হতে। যাতে কোন ভাবেই তার বা তার ছেলেদের বা তার গ্রুপের কথা সামনে না আসে। সামনে তার ছেলে নির্বাচনে দাঁড়াবে এমন সময় এই রকম একটা রিপোর্ট বের হলে পরে নমিনেশন পাওয়া কঠিন হবে। আরশাদ কে সরাসরিই বললেন যেভাবেই হোক তার গ্রুপের নাম যেন না আসে সামনে। আর যদি আসে তাহলে সানরাইজ গ্রুপ তার কোন দ্বায়িত্ব নিবে না। সানরাইজ গ্রুপ এতদিন তাকে যেভাবে হেল্প করেছে সেই হেল্প বজায় থাকবে যদি আরশাদ মুখ বন্ধ রাখে এবং সানরাইজ গ্রুপের নাম রিপোর্টে না আসে সেটা ব্যবস্থা করে। আরশাদ বলে আপনাদের অর্থ আর ক্ষমতার জোর অনেক আপনারা চেষ্টা করলে আর দ্রুত কাজটা হবে। সানরাইজ গ্রুপের মালিক বলেন দৈনিক আজকের সময় আমাদের বিরোধী পক্ষের পত্রিকা। এই পত্রিকার উপর আমাদের কোন ক্ষমতা নেই। বরং আমরা যদি কিছু করার চেষ্টা করি তারা টের পেয়ে যাবে আমরা জড়িত আপনার সাথে। তখন আর বেশি করে রিপোর্ট করবে। বলা যায় না প্রথম পাতায় লিড নিউজ করে দিতে পারে। তাই আরশাদ কে বলে সে যেন ব্যাপারটা সামলায়। টাকা যা লাগে সেই ব্যবস্থা করবে সানরাইজ গ্রুপ। কিন্তু তাদের নাম আসা যাবে না। আর যদি এসেই যায় তাহলে সেটার পরিণতি ভোগ করতে হবে। আরশাদ কথার মাঝে সুক্ষ থ্রেটের ইংগিত পায়। সানরাইজ গ্রুপের মালিকের উত্থানের পিছনে নানা রকম ভয়ংকর গল্প বাজারে আছে। ঠান্ডা মাথায় যেভাবে উনি এই কথা গুলো বললেন তাতে আরশাদের শিরদাড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে যায়। আরশাদের মনে হয় বাজারে প্রচলিত গল্প গুলো হয়ত আসলে সত্য। তাই আরশাদ আর বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ে।
আরশাদ তখন চিন্তায় দিশেহারা। রোববার রিপোর্ট বের হয়েছে আজকে সোমবার দুপুর। কি করা যায় কোন কুল কিনারা করতে পারছে না। আরশাদের সব সময়ের কাছের বন্ধু রিয়াদ। ওর সাথে কথা বলে এই বিষয়ে। রিয়াদ নিজেও চিন্তিত। রিয়াদ কে অফিসে ডেকে বলে দেওয়া হয়েছে যেন বন্ধু কে বুঝিয়ে বলে এই ব্যাপারটা এমন ভাবে সামাল দিতে যাতে সানরাইজ গ্রুপের কার নাম না আসে। নিজের চাকরির ব্যাপারটাও জড়িত এতে। কারণ রিয়াদ আরশাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড এটা ওর কোম্পানি জানে। তাই আরশাদ যদি সানরাইজ গ্রুপের নাম বাইরে রাখতে না পারে তাহলে সেটার ইফেক্ট ওর উপর এসে পড়বে। দুই জন মিলে অনেক চিন্তা করেও কিছু বের করতে পারে না। এদিকে শুরুতে জেবা অনেক খুশি হলেও এখন খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছে রিয়াদের কাছে ওর কোম্পানির প্রতিক্রিয়া শুনে। তার মানে আরশাদের কিছু হলে রিয়াদও বাচতে পারবে না। চাকরির উপর দিয়ে যাবে। জেবার মনে হয় এটা অন্যায়। বারবার আরশাদরা সম্মান পায়। আর যেবার নিজেদের দোষের কারণে ধরা পড়তে গেল তখন নির্দোষ ওদের এর সাজা পেতে হবে ওদের জন্য। নুসাইবার উপর রাগটা এবার আর বাড়ে। ওর হাজবেন্ড কে বলবে কি বলবে না এইটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে জেবা রিয়াদ কে বলার সিদ্ধান্ত নিল। কারণ মাহফুজ যদি সত্যি সত্যি পত্রিকার সাথে সেটিং করতে পারে তাহলে রিয়াদ বেচে যাবে আবার নুসাইবা মাহফুজের কাছে ছোট হয়ে যাবে। জেবার মনে হয় সারা বছর যেভাবে আমার উপর দিয়ে ছড়ি ঘুরায় এইবার এইটা করতে পারবে না। স্বামীর চাকরি বাচানোর থেকে নুসাইবা যে মাহফুজের কাছে ছোট হয়ে যাবে এটাই যেন বেশি আনন্দের মনে হয় জেবার। তাই রিয়াদ কে ফোন দিয়ে বলে, মাহফুজের সাথে ওর দেখা হয়েছিল আজকে অফিসে। সেখানে আরশাদের কথা উঠেছিল কথা প্রসংগে। মাহফুজ বলেছে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক হাবিব সাদরুল্লাহ নাকি মাহফুজের পরিচিত। উনি নাকি এইসব ব্যপার ডিল করার ব্যাপারে ওস্তাদ। ফোন কাটতেই আরশাদ জিজ্ঞেস করে জেবা কি বলছিল ফোনে। রিয়াদ সাধারণত জেবার কথায় খুব একটা ভরসা করে না। কিন্তু শেষবার মাহফুজ ছেলেটা যেভাবে অসাধ্য সাধন করে ওর ছেলেকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিল তাতে এইবার আর জেবা কে অগ্রাহ্য করার সাহস হয় না। আসল ব্যাপার গতকাল থেকেই আরশাদের সাথে ফোনে অনেকবার কথা হয়েছে কি করা যায় তা নিয়ে। আজকে তাই সরাসরি আরশাদের সাথে দেখা করতে এসেছে। তবে অফিসে দেখা করে নি। সেগুনবাগিচার ভিতরে সুন্দর একটা ভাতের রেস্তোরা হয়েছে সচিবালয়ের দিকে যাবার রাস্তায়। আশেপাশের সরকারি অফিসের লোকেরা এখানে প্রায় খেতে আসে। সেখানেই বসেছে লাঞ্চের জন্য আজকে দুইজন। এখানে ঘন্টা দুয়েক বসেও কোন উপায় বের করতে পারছে না। দুই জনেই মোটামুটি নিরুপায়। একদিকে রিপোর্টের কারণে চাকরিতে সাসপেন্ড হবার ভয় অন্যদিকে সানরাইজ গ্রুপের নাম যাতে কোন ভাবেই প্রকাশ্য না আসে সেটার চাপ। দুইয়ে মিলে আরশাদ একদম দিশেহারা। কেউ সাহায্য করছে না। যাকে ফোন দিচ্ছে সেই নানা অযুহাত দেখাচ্ছে। কয়েকজন তো ফোন ধরাই বন্ধ করে দিয়েছে। রিয়াদও চাকরির ভয়ে দিশেহারা। এই সময় মানুষ যে কোন সম্ভাব্য উপায় ট্রাই করে দেখতে রাজি হয়। তার উপর মাহফুজ কয়েক দিন আগেই একটা অসাধ্য সাধন করেছে। তাই রিয়াদ মাহফুজের সাথে সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহর যোগাযোগের কথা জানাল আরশাদ কে। জেবা এই বুদ্ধি দিয়েছে শুনলে অন্য সময় আরশাদ হেসে উড়িয়ে দিত। জেবা ওদের কাছে এখনো ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট ইয়ারের লজ্জায় নত ছিপছিপে তরুণী। যার কথা এত গুরুত্ব দিয়ে নেবার কিছু নেই। কিন্তু এই মূহুর্তে আরশাদ জেবার কথা অগাহ্য করতে পারে না। একে তো পরামর্শটা খারাপ না। আর আরশাদ জানে মাহফুজ ক্যাপাবল ছেলে। অনেক কিছুই করতে পারে এই ছেলে। আরশাদ তাই রিয়াদ কে বলে তুই খোজ নে কেমন পাওয়ারফুল এই সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহ। আমিও খোজ নিচ্ছি। প্রায় এক ঘন্টা অনেক খানে ফোন দিয়ে দুইজনেই শিওর হয় হাবিব সাদরুল্লাহ পাওয়ারফুল লোক সাংবাদিক মহলে। গোপন সেটেলমেন্টের জন্য উনি বিখ্যাত। সবাই এটা জানলেও কেউ কিছু করতে পারে না তার বিরুদ্ধে কারণ সরকারি এবং বিরোধী দুই দলের সাথেই তার ভাল খাতির। এমন লোক খুব কম। যদি কেউ এই সেটেলমেন্ট করতে পারে তাহলে হাবিব সাদরুল্লাই পারবে। আর হাবিব সাদরুল্লার কাছে পৌছানোর একমাত্র উপায় তাদের এখন মাহফুজ। আরশাদ তাই ফোনে মাহফুজের নাম্বারটা ডায়াল করে।
চ
নুসাইবা রান্না বান্না করছে। আরশাদ জরুরী ফোন দেবার কারণে অফিস থেকে এক ঘন্টা আগেই বের হয়ে গিয়েছে। বাসায় এসে দেখে আরশাদ বেশ কিছু বাজার করে নিয়ে এসেছে এবং কাজের বুয়াকেও ফোন দিয়ে আনিয়ে রেখেছে। নুসাইবা কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে আরশাদ বলল তুমি তো জান পত্রিকার রিপোর্টটার কারণে অফিসে আমি চাপে আছি। এইটা একটা মিথ্যা রিপোর্ট কিন্তু মানুষ তো আর তা বিশ্বাস করবে না। সবাই খালি খারাপটা বিশ্বাস করতে চায়। তা যাদের সাথে কথা বললাম তারা সবাই বুদ্ধি দিল যদি পত্রিকার সাংবাদিকে বুঝিয়ে বলতে পারি তাহলে ভাল হয়। আর আমি খবর নিয়ে দেখলাম এই ব্যাপারে মাহফুজ সবচেয়ে ভাল হয়। ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিয়ের যুগ্ম সম্পাদক খুব প্রভাবশালী। উনার সাথে মাহফুজের নাকি পরিচয় আছে। মাহফুজ পারবে আমাদের হেল্প করতে ব্যাপারটা একটা সুরাহা করতে। তাই এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য মাহফুজ কে রাতের খাবারের জন্য ডেকেছি। মাহফুজ আসবে রাত নয়টার দিকে। তার আগে প্লিজ তুমি কিছু ভালমন্দ রান্না কর। নুসাইবা আরশাদের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। এই কিছুদিন আগেই মাহফুজ কে দাওয়াত দিয়েছিল ওরা একটা ফাদে ফেলার জন্য আর আজকে সেই মাহফুজ কে দাওয়াত দিতে হল নিজেদের ফাদ থেকে উদ্ধারের সাহায্য চাওয়ার জন্য। পাশার দান যেন উলটে গেছে। আর আরশাদের এই সিদ্ধান্তও নুসাইবার মনে খচ খচ করতে থাকল। সাধরণত যে কোন বড় সিদ্ধান্ত নেবার আগে আরশাদ ওর সাথে কথা বলে কিন্তু এই মাহফুজ কে দাওয়াত দেওয়া বা সাংবাদিকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা কিছুই আরশাদ তাকে বলে নি। এই দুই দিনে আরশাদ তেমন কিছুই শেয়ার করছে না ওর সাথে এই ব্যাপারে। এযেন অন্য এক আরশাদ কে দেখছে নুসাইবা। তবে এই মূহুর্তে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া প্রথম কাজ। তাই নুসাইবা আর তর্ক করল না। তবে পরে এই ব্যাপারে আরশাদ কে জিজ্ঞেস করতে হবে সেটা মাথায় রাখল।
আরশাদের কাছ থেকে ফোন পাবার পর মাহফুজ আর নিজের হাসি থামাতে পারছে না। আরশাদ ফোন দিয়ে নানা কথা বলার পর আসল কথায় আসল। বলল তুমি তো আমার বন্ধুর বউ জেবা কে চিন, তুমি নাকি ওকে বলেছে সাংবাদিক হাবীব সাদরুল্লাহ কে তুমি চিন। মাহফুজ বলে হ্যা। আরশাদ বলে তুমি তো তাহলে আমার রিপোর্টের কথা শুনেছ। মাহফুজ একটু মজা নেবার কথা ভাবে, বলে কোন রিপোর্ট আংকেল। আরশাদ বলে ঐযে দৈনিক আজকের সময় পত্রিকায় আমার নামে একটা ভুলভাল রিপোর্ট করেছে সেটার ব্যাপারে আরকি। তুমি যদি একটু হেল্প করতে সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহর সাথে একটু যোগাযোগ করিয়ে দিতে। মাহফুজ বুঝে মাছ বড়িশি গিলেছে। মাহফুজ চিন্তা করেছিল সরাসরি যদি অমিত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করায় তাহলে সন্দেহ হবে। কারণ যে রিপোর্টার রিপোর্ট করেছে তাকেই মাহফুজ একদম ভালভাবে চিনে এটা বেশি কাকতলীয় শোনায়। তার থেকে অন্য ভায়া একটা মাধ্যমে আসতে হবে। হাবিব ভাইয়ের এইসব সেটেলমেন্টের হাত ভাল। তার কাছে প্রথমে নিতে হবে। উনি তখন অমিত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবেন। ফলে আরশাদ বা অন্য কার সন্দেহ হবে না এইখানে মাহফুজের কোন ভূমিকা আছে বরং আরশাদ মাহফুজের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। মাহফুজ তাই বলে আংকেল তাহলে আমি হাবিব ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে দেখি। উনি কি বলে। আরশাদ বলে তাহলে আজকে রাতে আমাদের বাসায় তুমি খাও। তোমার দাওয়াত। তখন বিস্তারিত এই বিষয়ে আর কথা হবে। মাহফুজ বলে অবশ্যই আংকেল। মনে মনে ভাবে দুই দিন আগে আমাকে ফাদে ফেলার জন্য ডাকছিল আজকে নিজেরা ফাদ থেকে বের হবার জন্য ডাকছে। এবার আরশাদ বলে শোন বাসায় আসলে নুসাইবার সামনে এই সেটেলমেন্টের ব্যাপার গুলো একটু কম করে বলো। বিশেষ করে যদি সাংবাদিক সাহেব কিছু চান সেটা আমি দিতে রাজি কিন্তু সেটা নুসাইবার সামনে বল না। তাহলে ও ঝামেলা করবে। মাহফুজ টের পায় আর অস্ত্র ওর হাতে আপনা আপনি আসছে। মাহফুজ বলে আংকেল চিন্তা করবেন না। ফুফুর সামনে আমি কিছুই বলব না।
মাহফুজ আজকে একটু দেরি করেই নুসাইবাদের বাসায় যায়। জানে ওরা খুব সময় মানে কিন্তু আজকে ক্ষমতা ওর হাতে। তাই ইচ্ছা করেই নয়টার দাওয়াতে সাড়ে নয়টার সময় যায়। দরজা খুলে আরশাদ। একটা পাঞ্জাবী পড়ে আছে, ভিতরে নুসাইবা দাঁড়িয়ে আছে একটা মেরুন কালারের সালোয়ার কামিজ পড়ে। নুসাইবা দেখতেই মাহফুজ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। গতকাল সিনথিয়ার সাথে সেক্স টকের কথা মনে পড়ে যায়। সিনথিয়া যেভাবে ওর ফুফু কে বর্ণনা করছিল সব মনে পড়ে যায়। একটু আগে গোসল করেছে নুসাইবা রান্না শেষে। চুল এখনো হালকা ভেজা। গোসলের পরের স্নিগ্ধতা এখনো চেহারা জুড়ে। গায়ের কাপড় ভেজা শরীরে সেটে আছে। মাহফুজের মনে পড়ে প্রথম যেদিন এই বাসায় এসেছিল সেদিন কিভাবে নুসাইবার পাজামা তার পাছার খাজে আটকে ছিল বসা থেকে দাড়ানোর পর। মাহফুজ টের পায় ওর শরীরের উত্তেজনা বাড়ছে। আরশাদ আর নুসাইবা দুইজন একসাথে মাহফুজের উলটো দিকের সোফায় বসেছে। আরশাদ পত্রিকার রিপোর্টিটা কতটা মিথ্যা এইসব বলছে। মাহফুজ হ্যা হ্যা করে উত্তর দিচ্ছে। আরশাদের পাশে বসে নুসাইবা মনযোগ দিয়ে কথা শুনছে। নুসাইবা এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে পা ক্রস করে বসেছে। মাহফুজ মনে মনে হাসে। মেয়েরা যখন সামনে আড়াল থাকে না তখন এভাবে পা ক্রস করে বসে। যাতে পায়ের ফাক দিয়ে কিছু দেখা না যায় উলটো দিকের লোকের জন্য। মাহফুজ ভাবে সিনথিয়ার কথা ঠিক। নুসাইবা সব সময় প্রিম এন্ড প্রপার। এইযে আরশাদ ওর বিপদের কথা বলছে এর মাঝেও নুসাইবা ঠিক পা ক্রস করে বসেছে যেন মাহফুজের চোখে হঠাত করে কিছু না পড়ে। তবে এভাবে বসলে কামিজ খানিকটা উপরে উঠে আসে। আর ফ্যানের বাতাসে সেটা আর উপরে উঠে এসেছে সেটা আর নুসাইবা খেয়াল করে নি। মাহফুজ দেখে নুসাইবার থাইয়ের শেপ বোঝা যাচ্ছে এখন। মাহফুজ চোখ সরাতে পারে না। জোর করে চোখ কে টেনে উপরে তুলে। আবার সমস্যা। এইভাবে ক্রস করে পা ভাজ করে সাথে একটু ঝুকে বসলে বুবসের সাইজ আর বড় মনে হয়। ফ্যানের বাতাসে ওড়ান একপাশে সরে গেছে। তাই নুসাইবার বড় দুধ আর বড় মনে হয়। মাহফুজ নিজের চিন্তা কে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। তবে ওর মনে হয় সিনথিয়া ওর পাশে বসে আছে আর কানে কানে বলছে টিচ হার এ লেসন মাহফুজ। টিচ হার। মাহফুজের মনে হতে থাকে এই জামার নিচে উদ্ধত দুধ গুলো কি নুসাইবার মত দেমাগী। কি রঙ ওদের? বোটার কালার কি? এরিওলা টা কেমন? সবারিনা যেমন নাভিতে হাত দিলে পাগল হয়, সিনথিয়ার যেমন ঘাড়ের পিছনে একটা সেনসেটিভ স্পট আছে, নুসাইবার কি তেমন কিছু আছে। মাহফুজ যত নিজের চিন্তা কে কন্ট্রোল করতে চেষ্টা করে ততই যেন সেই চিন্তা আর বেশি করে বেপরোয়া হয়ে উঠে।
খাবার টেবিলে বসে মাহফুজ অতিরিক্ত খাতির যত্ন টের পায়। এমনকি তিন চারদিন আগে দাওয়াতে যখন এসেছিল তার থেকেও বেশি। নুসাইবা বার বার উলটো দিকের চেয়ার থেকে উঠে ওর পাতে বিভিন্ন আইটেম তুলে দিতে থাকে। প্রতিবার আইটেম তুলে দেবার জন্য ঝুকলেই মাহফুজের দৃষ্টি নুসাইবার দুধের দিকে চলে যেতে থাকে। মাহফুজের মনে হয় আজকে যেন ও এক টিএনজার যে কোন এক কামদেবীর সামনে এসে পড়েছে হঠাত করে। তাই টিএনজারদের মত তার চোখ অবাধ্য হয়ে ছুটছে সেই কামদেবীর শরীরের প্রতিটা ভাজের আবিষ্কারের নেশায়। খেতে খেতে এবার আরশাদ বলে আমার পুরো ব্যাপারটা তো শুনলে। এবার তুমি বল সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লার সাথে তোমার কি কথা হল। মাহফুজ এবার বলতে থাকে পুরো প্ল্যানটা কিভাবে আরশাদে কে নিয়ে রিপোর্টটা ডিল করা হবে। আসলে পুরো ব্যাপারটা তো আগে থেকেই সাজানো। হাবিব সাদুল্লাহ অবশ্য সেটা জানে না। তাই তাকে ফোন দিয়ে মাহফুজ যখন আরশাদের ব্যাপারটা বলল তখন হাবিব বলল কে রিপোর্ট করছে বললা? অমিত আজাদ। তাইলে তো ব্যাপারটা কঠিন হয়ে গেল। ও সহজে এইসব ডিলে রাজি হয় না। ওরে রাজি করাতে গেলে অনেক সময় লাগে। বড় বেশি নখরাবাজি করে ছেলেটা। টাকা ঠিক খায় তবে বহুত বাহানা করে দাম বাড়ায়। মাহফুজ বলে আপনি একটু ট্রাই করেন। পরের রিপোর্ট বের হবে এক দিন পর। আপনি যদি আজকে কালকের মধ্যে ম্যানেজ না করতে পারেন তাহলে পরে লাভ নাই। আর যার কেস সে সুবিধামত খরচ করতে রাজি আছে। চাকরির ব্যাপার। আর আমার আত্মীয় মানুষ। হাবিব বলেন ঠিকাছে তোমার আত্মীয় বললা এই জন্য ট্রাই করে দেখতে পারি। তবে কথা দিতে পারছি না। হাবিবের সাথে কথা হতেই মাহফুজ অমিত কে মেসেজ পাঠায় মিশন ইজ অন। এর দুই ঘন্টা পর সাংবাদিক হাবিব ফোন দেয় মাহফুজ কে। বলে, বড় আশ্চর্য ঘটনা। আজকে আধা ঘন্টার মধ্যে দেখি অমিত রাজি হয়ে গেল। আমিও বুঝলাম না। জিজ্ঞেস করতে বলল, ওর নাকি কি একটা কারণে কিছু টাকার দরকার। এই রিপোর্ট থেকে টাকা আসবে সেটা বুঝেই নাই তাই অন্য অনেকের কাছে টাকা ধার চাইছিল। এখন এই সুযোগ পাওয়ায় রাজি হয়ে গেছে একদম। তোমার আত্মীয় লাকি। মাহফুজ মনে মনে হাসে। এই বাহানাটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল অমিত ভাইয়ের, সেটা মাহফুজ জানে। তাই মাহফুজ বলে ব্যাপারটা মোটামুটি ম্যানেজ হইছে। কালকে একটা মিটিং হবে হাবিব ভাইয়ের একটা অফিস আছে পুরান পল্টনে। সেখানে দুপুর এগারটার দিকে। সেখানেই মিটিং করে কনভিন্স করতে হবে আপনার রিপোর্টার অমিত আজাদ কে। এই রিপোর্টার মেইনলি পলিটিক্যাল নিউজ করে। আমার সাথে বেশ কয়েকবার কথা হইছে মাসুদ চাচার ঐখানে। খুব শার্প এই জার্নালিস্ট। তাই আপনি খুব বেশি দরাদরি না করে রাজি হয়ে যাইয়েন। নুসাইবা মাহফুজের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। কি বলছে এই ছেলে? দরাদরি না করে রাজি হয়ে যাইয়েন? নুসাইবা কে আরশাদ বলেছে সে নাকি এই সাংবাদিকের সাথে মিটিং করে তাকে বুঝাবে কেন এই রিপোর্টে ওর সম্পর্কে যা আছে তা ভুল, কেন অফিসের অন্য অনেকের দুর্নীতির দায়ভার ওর না। কিন্তু মাহফুজের কথা শুনে মনে হচ্ছে কিছু একটা লেনদেনের ব্যাপার আছে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে কি দরাদরির কথা হচ্ছে? আরশাদ আতকে উঠে। মাহফুজ বুঝে সামলে নিতে হবে ব্যাপারটা। বলে ফুফু আসলে আংকেল যেন ঐখানে এই ভুল রিপোর্টিং এর জন্য রাগারাগি না করে সেটা বললাম আরকি। তার উপর যদি আংকেল সেখানে তাকে ক্ষমা চাইতে বলে তাহলে হয়ত রাজি হবে না। খালি খালি তাই এইসব দাবি যাতে না করে সেটা বললাম আরকি। নুসাইবা ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। ওর মনে হয় আরশাদ আর মাহফুজের ভিতর বুঝি চোরা চাহনির আদান প্রদান হল।
রাতে খাওয়া শেষে মাহফুজ যখন বিদায় নিতে চায় তখন আরশাদ বলে ওকে আমি নিচে নামিয়ে দিয়ে আসি। লিফট দিয়ে নিচে নামতেই আরশাদ বলে শোন টাকার আদান প্রদানের ব্যাপারটা একদম গোপন রাখতে হবে নুসাইবার কাছ থেকে। মাহফুজ বলে চিন্তা করবেন না আংকেল। আরশাদ একদম ছলছল চোখে মাহফুজের হাত জড়ায়ে ধরে বলে আমি তোমার কাছে একদম ঋনী হয়ে থাকব এই ব্যাপারটার জন্য। মাহফুজ বুঝে এটাই উপযুক্ত সময় কথাটা তোলার জন্য। বলে আংকেল আমার একটা অনুরোধ ছিল। আরশাদ কিছু না ভেবেই বলে, বলে ফেল। আমি করে দিব এখনি। মাহফুজ বলে আংকেল আপনি হয়ত আন্দাজ করছেন আমি সিনিথিয়া কে পছন্দ করি। সিনথিয়াও আমাকে পছন্দ করে। আপনি আমাদের হেল্প করেন একটু। ওর বাসার সবাই কে রাজি করাতে। আরশাদ একটু থমকে যায়। জানে ও হ্যা বললে সবার প্রথম বাধা হবে নুসাইবা। তবে ভাবে হয়ত এই উপকারের পর নুসাইবা রাজি হতেও পারে। আরশাদ বলে আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট। আমি কখনো প্রেমের বাধা না। তবে নুসাইবা যাতে বাধা না দেয় সেই জন্য ওকে আমি রাজি করাবো। আরশাদ কি তখনো জানে এই কথা দেওয়ার পরিণতি কি হবে?
পত্রিকার রিপোর্ট বের হবার পর অবস্থা যতটা গুরুতর ভেবেছিলেন আরশাদ ঘটনা তার থেকে বেশি গুরুতর হয়ে দাড়াচ্ছে। তাকে সরকারের যে উচ্চ পদস্থ আমলা আর রাজস্ব বোর্ডের যে মেম্বার ব্যাকিং দেয় দুইজনের সাথেই কথা বলেছে রিপোর্ট বের হবার পর। তাদের দুই জনের উপদেশ হচ্ছে একদম চুপ করে থাকতে। কেউ জিজ্ঞেস করলে প্রথমেই বলতে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াতে যে এটা মিথ্যা নিউজ। মানহানিকর। তবে আসল ব্যাপার হল পরের রিপোর্টে কি আসবে সেটা। উনারাও এই বিষয়ে চিন্তিত। আর যেহেতু উনাদের কথা ইংগিত করা হয়েছে তাই উনারাও একটু সংকিত। কারণ কেউ শুধু শুধু এমন একটা জিনিসের সাথে নিজের নাম জড়াতে চাইবে না। তবে তাদের আচরণে আরশাদ টের পেয়েছে উনারা একটু গা বাচিয়ে চলতে চাইছেন। যদি সত্যি সত্যি কিছু ঘটে এই রিপোর্টের কারণে তাহলে যেন তাদের নিজেদের ডুবতে না হয় আরশাদের সাথে। আকার ইংগিতে এটা বুঝিয়েছেন উনারা দুইজনেই পরের রিপোর্টের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। উনাদের থেকে তেমন একটা সাড়া না পেয়ে ভাল খাতির আছে এমন দুই একজন রাজনৈতিক নেতার সাথে কথা বলেছেন কিন্তু দূর্নীতির রিপোর্টের সাথে কেউ এমনি এমনি নাম জড়াতে চায় না। তাই তারাও এড়িয়ে গেছেন। সানরাইজ গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করতেই গ্রুপের মালিক বলেছেন সাবধান হতে। যাতে কোন ভাবেই তার বা তার ছেলেদের বা তার গ্রুপের কথা সামনে না আসে। সামনে তার ছেলে নির্বাচনে দাঁড়াবে এমন সময় এই রকম একটা রিপোর্ট বের হলে পরে নমিনেশন পাওয়া কঠিন হবে। আরশাদ কে সরাসরিই বললেন যেভাবেই হোক তার গ্রুপের নাম যেন না আসে সামনে। আর যদি আসে তাহলে সানরাইজ গ্রুপ তার কোন দ্বায়িত্ব নিবে না। সানরাইজ গ্রুপ এতদিন তাকে যেভাবে হেল্প করেছে সেই হেল্প বজায় থাকবে যদি আরশাদ মুখ বন্ধ রাখে এবং সানরাইজ গ্রুপের নাম রিপোর্টে না আসে সেটা ব্যবস্থা করে। আরশাদ বলে আপনাদের অর্থ আর ক্ষমতার জোর অনেক আপনারা চেষ্টা করলে আর দ্রুত কাজটা হবে। সানরাইজ গ্রুপের মালিক বলেন দৈনিক আজকের সময় আমাদের বিরোধী পক্ষের পত্রিকা। এই পত্রিকার উপর আমাদের কোন ক্ষমতা নেই। বরং আমরা যদি কিছু করার চেষ্টা করি তারা টের পেয়ে যাবে আমরা জড়িত আপনার সাথে। তখন আর বেশি করে রিপোর্ট করবে। বলা যায় না প্রথম পাতায় লিড নিউজ করে দিতে পারে। তাই আরশাদ কে বলে সে যেন ব্যাপারটা সামলায়। টাকা যা লাগে সেই ব্যবস্থা করবে সানরাইজ গ্রুপ। কিন্তু তাদের নাম আসা যাবে না। আর যদি এসেই যায় তাহলে সেটার পরিণতি ভোগ করতে হবে। আরশাদ কথার মাঝে সুক্ষ থ্রেটের ইংগিত পায়। সানরাইজ গ্রুপের মালিকের উত্থানের পিছনে নানা রকম ভয়ংকর গল্প বাজারে আছে। ঠান্ডা মাথায় যেভাবে উনি এই কথা গুলো বললেন তাতে আরশাদের শিরদাড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে যায়। আরশাদের মনে হয় বাজারে প্রচলিত গল্প গুলো হয়ত আসলে সত্য। তাই আরশাদ আর বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ে।
আরশাদ তখন চিন্তায় দিশেহারা। রোববার রিপোর্ট বের হয়েছে আজকে সোমবার দুপুর। কি করা যায় কোন কুল কিনারা করতে পারছে না। আরশাদের সব সময়ের কাছের বন্ধু রিয়াদ। ওর সাথে কথা বলে এই বিষয়ে। রিয়াদ নিজেও চিন্তিত। রিয়াদ কে অফিসে ডেকে বলে দেওয়া হয়েছে যেন বন্ধু কে বুঝিয়ে বলে এই ব্যাপারটা এমন ভাবে সামাল দিতে যাতে সানরাইজ গ্রুপের কার নাম না আসে। নিজের চাকরির ব্যাপারটাও জড়িত এতে। কারণ রিয়াদ আরশাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড এটা ওর কোম্পানি জানে। তাই আরশাদ যদি সানরাইজ গ্রুপের নাম বাইরে রাখতে না পারে তাহলে সেটার ইফেক্ট ওর উপর এসে পড়বে। দুই জন মিলে অনেক চিন্তা করেও কিছু বের করতে পারে না। এদিকে শুরুতে জেবা অনেক খুশি হলেও এখন খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছে রিয়াদের কাছে ওর কোম্পানির প্রতিক্রিয়া শুনে। তার মানে আরশাদের কিছু হলে রিয়াদও বাচতে পারবে না। চাকরির উপর দিয়ে যাবে। জেবার মনে হয় এটা অন্যায়। বারবার আরশাদরা সম্মান পায়। আর যেবার নিজেদের দোষের কারণে ধরা পড়তে গেল তখন নির্দোষ ওদের এর সাজা পেতে হবে ওদের জন্য। নুসাইবার উপর রাগটা এবার আর বাড়ে। ওর হাজবেন্ড কে বলবে কি বলবে না এইটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে জেবা রিয়াদ কে বলার সিদ্ধান্ত নিল। কারণ মাহফুজ যদি সত্যি সত্যি পত্রিকার সাথে সেটিং করতে পারে তাহলে রিয়াদ বেচে যাবে আবার নুসাইবা মাহফুজের কাছে ছোট হয়ে যাবে। জেবার মনে হয় সারা বছর যেভাবে আমার উপর দিয়ে ছড়ি ঘুরায় এইবার এইটা করতে পারবে না। স্বামীর চাকরি বাচানোর থেকে নুসাইবা যে মাহফুজের কাছে ছোট হয়ে যাবে এটাই যেন বেশি আনন্দের মনে হয় জেবার। তাই রিয়াদ কে ফোন দিয়ে বলে, মাহফুজের সাথে ওর দেখা হয়েছিল আজকে অফিসে। সেখানে আরশাদের কথা উঠেছিল কথা প্রসংগে। মাহফুজ বলেছে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক হাবিব সাদরুল্লাহ নাকি মাহফুজের পরিচিত। উনি নাকি এইসব ব্যপার ডিল করার ব্যাপারে ওস্তাদ। ফোন কাটতেই আরশাদ জিজ্ঞেস করে জেবা কি বলছিল ফোনে। রিয়াদ সাধারণত জেবার কথায় খুব একটা ভরসা করে না। কিন্তু শেষবার মাহফুজ ছেলেটা যেভাবে অসাধ্য সাধন করে ওর ছেলেকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিল তাতে এইবার আর জেবা কে অগ্রাহ্য করার সাহস হয় না। আসল ব্যাপার গতকাল থেকেই আরশাদের সাথে ফোনে অনেকবার কথা হয়েছে কি করা যায় তা নিয়ে। আজকে তাই সরাসরি আরশাদের সাথে দেখা করতে এসেছে। তবে অফিসে দেখা করে নি। সেগুনবাগিচার ভিতরে সুন্দর একটা ভাতের রেস্তোরা হয়েছে সচিবালয়ের দিকে যাবার রাস্তায়। আশেপাশের সরকারি অফিসের লোকেরা এখানে প্রায় খেতে আসে। সেখানেই বসেছে লাঞ্চের জন্য আজকে দুইজন। এখানে ঘন্টা দুয়েক বসেও কোন উপায় বের করতে পারছে না। দুই জনেই মোটামুটি নিরুপায়। একদিকে রিপোর্টের কারণে চাকরিতে সাসপেন্ড হবার ভয় অন্যদিকে সানরাইজ গ্রুপের নাম যাতে কোন ভাবেই প্রকাশ্য না আসে সেটার চাপ। দুইয়ে মিলে আরশাদ একদম দিশেহারা। কেউ সাহায্য করছে না। যাকে ফোন দিচ্ছে সেই নানা অযুহাত দেখাচ্ছে। কয়েকজন তো ফোন ধরাই বন্ধ করে দিয়েছে। রিয়াদও চাকরির ভয়ে দিশেহারা। এই সময় মানুষ যে কোন সম্ভাব্য উপায় ট্রাই করে দেখতে রাজি হয়। তার উপর মাহফুজ কয়েক দিন আগেই একটা অসাধ্য সাধন করেছে। তাই রিয়াদ মাহফুজের সাথে সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহর যোগাযোগের কথা জানাল আরশাদ কে। জেবা এই বুদ্ধি দিয়েছে শুনলে অন্য সময় আরশাদ হেসে উড়িয়ে দিত। জেবা ওদের কাছে এখনো ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট ইয়ারের লজ্জায় নত ছিপছিপে তরুণী। যার কথা এত গুরুত্ব দিয়ে নেবার কিছু নেই। কিন্তু এই মূহুর্তে আরশাদ জেবার কথা অগাহ্য করতে পারে না। একে তো পরামর্শটা খারাপ না। আর আরশাদ জানে মাহফুজ ক্যাপাবল ছেলে। অনেক কিছুই করতে পারে এই ছেলে। আরশাদ তাই রিয়াদ কে বলে তুই খোজ নে কেমন পাওয়ারফুল এই সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহ। আমিও খোজ নিচ্ছি। প্রায় এক ঘন্টা অনেক খানে ফোন দিয়ে দুইজনেই শিওর হয় হাবিব সাদরুল্লাহ পাওয়ারফুল লোক সাংবাদিক মহলে। গোপন সেটেলমেন্টের জন্য উনি বিখ্যাত। সবাই এটা জানলেও কেউ কিছু করতে পারে না তার বিরুদ্ধে কারণ সরকারি এবং বিরোধী দুই দলের সাথেই তার ভাল খাতির। এমন লোক খুব কম। যদি কেউ এই সেটেলমেন্ট করতে পারে তাহলে হাবিব সাদরুল্লাই পারবে। আর হাবিব সাদরুল্লার কাছে পৌছানোর একমাত্র উপায় তাদের এখন মাহফুজ। আরশাদ তাই ফোনে মাহফুজের নাম্বারটা ডায়াল করে।
চ
নুসাইবা রান্না বান্না করছে। আরশাদ জরুরী ফোন দেবার কারণে অফিস থেকে এক ঘন্টা আগেই বের হয়ে গিয়েছে। বাসায় এসে দেখে আরশাদ বেশ কিছু বাজার করে নিয়ে এসেছে এবং কাজের বুয়াকেও ফোন দিয়ে আনিয়ে রেখেছে। নুসাইবা কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে আরশাদ বলল তুমি তো জান পত্রিকার রিপোর্টটার কারণে অফিসে আমি চাপে আছি। এইটা একটা মিথ্যা রিপোর্ট কিন্তু মানুষ তো আর তা বিশ্বাস করবে না। সবাই খালি খারাপটা বিশ্বাস করতে চায়। তা যাদের সাথে কথা বললাম তারা সবাই বুদ্ধি দিল যদি পত্রিকার সাংবাদিকে বুঝিয়ে বলতে পারি তাহলে ভাল হয়। আর আমি খবর নিয়ে দেখলাম এই ব্যাপারে মাহফুজ সবচেয়ে ভাল হয়। ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিয়ের যুগ্ম সম্পাদক খুব প্রভাবশালী। উনার সাথে মাহফুজের নাকি পরিচয় আছে। মাহফুজ পারবে আমাদের হেল্প করতে ব্যাপারটা একটা সুরাহা করতে। তাই এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য মাহফুজ কে রাতের খাবারের জন্য ডেকেছি। মাহফুজ আসবে রাত নয়টার দিকে। তার আগে প্লিজ তুমি কিছু ভালমন্দ রান্না কর। নুসাইবা আরশাদের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। এই কিছুদিন আগেই মাহফুজ কে দাওয়াত দিয়েছিল ওরা একটা ফাদে ফেলার জন্য আর আজকে সেই মাহফুজ কে দাওয়াত দিতে হল নিজেদের ফাদ থেকে উদ্ধারের সাহায্য চাওয়ার জন্য। পাশার দান যেন উলটে গেছে। আর আরশাদের এই সিদ্ধান্তও নুসাইবার মনে খচ খচ করতে থাকল। সাধরণত যে কোন বড় সিদ্ধান্ত নেবার আগে আরশাদ ওর সাথে কথা বলে কিন্তু এই মাহফুজ কে দাওয়াত দেওয়া বা সাংবাদিকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা কিছুই আরশাদ তাকে বলে নি। এই দুই দিনে আরশাদ তেমন কিছুই শেয়ার করছে না ওর সাথে এই ব্যাপারে। এযেন অন্য এক আরশাদ কে দেখছে নুসাইবা। তবে এই মূহুর্তে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া প্রথম কাজ। তাই নুসাইবা আর তর্ক করল না। তবে পরে এই ব্যাপারে আরশাদ কে জিজ্ঞেস করতে হবে সেটা মাথায় রাখল।
আরশাদের কাছ থেকে ফোন পাবার পর মাহফুজ আর নিজের হাসি থামাতে পারছে না। আরশাদ ফোন দিয়ে নানা কথা বলার পর আসল কথায় আসল। বলল তুমি তো আমার বন্ধুর বউ জেবা কে চিন, তুমি নাকি ওকে বলেছে সাংবাদিক হাবীব সাদরুল্লাহ কে তুমি চিন। মাহফুজ বলে হ্যা। আরশাদ বলে তুমি তো তাহলে আমার রিপোর্টের কথা শুনেছ। মাহফুজ একটু মজা নেবার কথা ভাবে, বলে কোন রিপোর্ট আংকেল। আরশাদ বলে ঐযে দৈনিক আজকের সময় পত্রিকায় আমার নামে একটা ভুলভাল রিপোর্ট করেছে সেটার ব্যাপারে আরকি। তুমি যদি একটু হেল্প করতে সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহর সাথে একটু যোগাযোগ করিয়ে দিতে। মাহফুজ বুঝে মাছ বড়িশি গিলেছে। মাহফুজ চিন্তা করেছিল সরাসরি যদি অমিত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করায় তাহলে সন্দেহ হবে। কারণ যে রিপোর্টার রিপোর্ট করেছে তাকেই মাহফুজ একদম ভালভাবে চিনে এটা বেশি কাকতলীয় শোনায়। তার থেকে অন্য ভায়া একটা মাধ্যমে আসতে হবে। হাবিব ভাইয়ের এইসব সেটেলমেন্টের হাত ভাল। তার কাছে প্রথমে নিতে হবে। উনি তখন অমিত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবেন। ফলে আরশাদ বা অন্য কার সন্দেহ হবে না এইখানে মাহফুজের কোন ভূমিকা আছে বরং আরশাদ মাহফুজের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। মাহফুজ তাই বলে আংকেল তাহলে আমি হাবিব ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে দেখি। উনি কি বলে। আরশাদ বলে তাহলে আজকে রাতে আমাদের বাসায় তুমি খাও। তোমার দাওয়াত। তখন বিস্তারিত এই বিষয়ে আর কথা হবে। মাহফুজ বলে অবশ্যই আংকেল। মনে মনে ভাবে দুই দিন আগে আমাকে ফাদে ফেলার জন্য ডাকছিল আজকে নিজেরা ফাদ থেকে বের হবার জন্য ডাকছে। এবার আরশাদ বলে শোন বাসায় আসলে নুসাইবার সামনে এই সেটেলমেন্টের ব্যাপার গুলো একটু কম করে বলো। বিশেষ করে যদি সাংবাদিক সাহেব কিছু চান সেটা আমি দিতে রাজি কিন্তু সেটা নুসাইবার সামনে বল না। তাহলে ও ঝামেলা করবে। মাহফুজ টের পায় আর অস্ত্র ওর হাতে আপনা আপনি আসছে। মাহফুজ বলে আংকেল চিন্তা করবেন না। ফুফুর সামনে আমি কিছুই বলব না।
মাহফুজ আজকে একটু দেরি করেই নুসাইবাদের বাসায় যায়। জানে ওরা খুব সময় মানে কিন্তু আজকে ক্ষমতা ওর হাতে। তাই ইচ্ছা করেই নয়টার দাওয়াতে সাড়ে নয়টার সময় যায়। দরজা খুলে আরশাদ। একটা পাঞ্জাবী পড়ে আছে, ভিতরে নুসাইবা দাঁড়িয়ে আছে একটা মেরুন কালারের সালোয়ার কামিজ পড়ে। নুসাইবা দেখতেই মাহফুজ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। গতকাল সিনথিয়ার সাথে সেক্স টকের কথা মনে পড়ে যায়। সিনথিয়া যেভাবে ওর ফুফু কে বর্ণনা করছিল সব মনে পড়ে যায়। একটু আগে গোসল করেছে নুসাইবা রান্না শেষে। চুল এখনো হালকা ভেজা। গোসলের পরের স্নিগ্ধতা এখনো চেহারা জুড়ে। গায়ের কাপড় ভেজা শরীরে সেটে আছে। মাহফুজের মনে পড়ে প্রথম যেদিন এই বাসায় এসেছিল সেদিন কিভাবে নুসাইবার পাজামা তার পাছার খাজে আটকে ছিল বসা থেকে দাড়ানোর পর। মাহফুজ টের পায় ওর শরীরের উত্তেজনা বাড়ছে। আরশাদ আর নুসাইবা দুইজন একসাথে মাহফুজের উলটো দিকের সোফায় বসেছে। আরশাদ পত্রিকার রিপোর্টিটা কতটা মিথ্যা এইসব বলছে। মাহফুজ হ্যা হ্যা করে উত্তর দিচ্ছে। আরশাদের পাশে বসে নুসাইবা মনযোগ দিয়ে কথা শুনছে। নুসাইবা এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে পা ক্রস করে বসেছে। মাহফুজ মনে মনে হাসে। মেয়েরা যখন সামনে আড়াল থাকে না তখন এভাবে পা ক্রস করে বসে। যাতে পায়ের ফাক দিয়ে কিছু দেখা না যায় উলটো দিকের লোকের জন্য। মাহফুজ ভাবে সিনথিয়ার কথা ঠিক। নুসাইবা সব সময় প্রিম এন্ড প্রপার। এইযে আরশাদ ওর বিপদের কথা বলছে এর মাঝেও নুসাইবা ঠিক পা ক্রস করে বসেছে যেন মাহফুজের চোখে হঠাত করে কিছু না পড়ে। তবে এভাবে বসলে কামিজ খানিকটা উপরে উঠে আসে। আর ফ্যানের বাতাসে সেটা আর উপরে উঠে এসেছে সেটা আর নুসাইবা খেয়াল করে নি। মাহফুজ দেখে নুসাইবার থাইয়ের শেপ বোঝা যাচ্ছে এখন। মাহফুজ চোখ সরাতে পারে না। জোর করে চোখ কে টেনে উপরে তুলে। আবার সমস্যা। এইভাবে ক্রস করে পা ভাজ করে সাথে একটু ঝুকে বসলে বুবসের সাইজ আর বড় মনে হয়। ফ্যানের বাতাসে ওড়ান একপাশে সরে গেছে। তাই নুসাইবার বড় দুধ আর বড় মনে হয়। মাহফুজ নিজের চিন্তা কে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। তবে ওর মনে হয় সিনথিয়া ওর পাশে বসে আছে আর কানে কানে বলছে টিচ হার এ লেসন মাহফুজ। টিচ হার। মাহফুজের মনে হতে থাকে এই জামার নিচে উদ্ধত দুধ গুলো কি নুসাইবার মত দেমাগী। কি রঙ ওদের? বোটার কালার কি? এরিওলা টা কেমন? সবারিনা যেমন নাভিতে হাত দিলে পাগল হয়, সিনথিয়ার যেমন ঘাড়ের পিছনে একটা সেনসেটিভ স্পট আছে, নুসাইবার কি তেমন কিছু আছে। মাহফুজ যত নিজের চিন্তা কে কন্ট্রোল করতে চেষ্টা করে ততই যেন সেই চিন্তা আর বেশি করে বেপরোয়া হয়ে উঠে।
খাবার টেবিলে বসে মাহফুজ অতিরিক্ত খাতির যত্ন টের পায়। এমনকি তিন চারদিন আগে দাওয়াতে যখন এসেছিল তার থেকেও বেশি। নুসাইবা বার বার উলটো দিকের চেয়ার থেকে উঠে ওর পাতে বিভিন্ন আইটেম তুলে দিতে থাকে। প্রতিবার আইটেম তুলে দেবার জন্য ঝুকলেই মাহফুজের দৃষ্টি নুসাইবার দুধের দিকে চলে যেতে থাকে। মাহফুজের মনে হয় আজকে যেন ও এক টিএনজার যে কোন এক কামদেবীর সামনে এসে পড়েছে হঠাত করে। তাই টিএনজারদের মত তার চোখ অবাধ্য হয়ে ছুটছে সেই কামদেবীর শরীরের প্রতিটা ভাজের আবিষ্কারের নেশায়। খেতে খেতে এবার আরশাদ বলে আমার পুরো ব্যাপারটা তো শুনলে। এবার তুমি বল সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লার সাথে তোমার কি কথা হল। মাহফুজ এবার বলতে থাকে পুরো প্ল্যানটা কিভাবে আরশাদে কে নিয়ে রিপোর্টটা ডিল করা হবে। আসলে পুরো ব্যাপারটা তো আগে থেকেই সাজানো। হাবিব সাদুল্লাহ অবশ্য সেটা জানে না। তাই তাকে ফোন দিয়ে মাহফুজ যখন আরশাদের ব্যাপারটা বলল তখন হাবিব বলল কে রিপোর্ট করছে বললা? অমিত আজাদ। তাইলে তো ব্যাপারটা কঠিন হয়ে গেল। ও সহজে এইসব ডিলে রাজি হয় না। ওরে রাজি করাতে গেলে অনেক সময় লাগে। বড় বেশি নখরাবাজি করে ছেলেটা। টাকা ঠিক খায় তবে বহুত বাহানা করে দাম বাড়ায়। মাহফুজ বলে আপনি একটু ট্রাই করেন। পরের রিপোর্ট বের হবে এক দিন পর। আপনি যদি আজকে কালকের মধ্যে ম্যানেজ না করতে পারেন তাহলে পরে লাভ নাই। আর যার কেস সে সুবিধামত খরচ করতে রাজি আছে। চাকরির ব্যাপার। আর আমার আত্মীয় মানুষ। হাবিব বলেন ঠিকাছে তোমার আত্মীয় বললা এই জন্য ট্রাই করে দেখতে পারি। তবে কথা দিতে পারছি না। হাবিবের সাথে কথা হতেই মাহফুজ অমিত কে মেসেজ পাঠায় মিশন ইজ অন। এর দুই ঘন্টা পর সাংবাদিক হাবিব ফোন দেয় মাহফুজ কে। বলে, বড় আশ্চর্য ঘটনা। আজকে আধা ঘন্টার মধ্যে দেখি অমিত রাজি হয়ে গেল। আমিও বুঝলাম না। জিজ্ঞেস করতে বলল, ওর নাকি কি একটা কারণে কিছু টাকার দরকার। এই রিপোর্ট থেকে টাকা আসবে সেটা বুঝেই নাই তাই অন্য অনেকের কাছে টাকা ধার চাইছিল। এখন এই সুযোগ পাওয়ায় রাজি হয়ে গেছে একদম। তোমার আত্মীয় লাকি। মাহফুজ মনে মনে হাসে। এই বাহানাটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল অমিত ভাইয়ের, সেটা মাহফুজ জানে। তাই মাহফুজ বলে ব্যাপারটা মোটামুটি ম্যানেজ হইছে। কালকে একটা মিটিং হবে হাবিব ভাইয়ের একটা অফিস আছে পুরান পল্টনে। সেখানে দুপুর এগারটার দিকে। সেখানেই মিটিং করে কনভিন্স করতে হবে আপনার রিপোর্টার অমিত আজাদ কে। এই রিপোর্টার মেইনলি পলিটিক্যাল নিউজ করে। আমার সাথে বেশ কয়েকবার কথা হইছে মাসুদ চাচার ঐখানে। খুব শার্প এই জার্নালিস্ট। তাই আপনি খুব বেশি দরাদরি না করে রাজি হয়ে যাইয়েন। নুসাইবা মাহফুজের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। কি বলছে এই ছেলে? দরাদরি না করে রাজি হয়ে যাইয়েন? নুসাইবা কে আরশাদ বলেছে সে নাকি এই সাংবাদিকের সাথে মিটিং করে তাকে বুঝাবে কেন এই রিপোর্টে ওর সম্পর্কে যা আছে তা ভুল, কেন অফিসের অন্য অনেকের দুর্নীতির দায়ভার ওর না। কিন্তু মাহফুজের কথা শুনে মনে হচ্ছে কিছু একটা লেনদেনের ব্যাপার আছে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে কি দরাদরির কথা হচ্ছে? আরশাদ আতকে উঠে। মাহফুজ বুঝে সামলে নিতে হবে ব্যাপারটা। বলে ফুফু আসলে আংকেল যেন ঐখানে এই ভুল রিপোর্টিং এর জন্য রাগারাগি না করে সেটা বললাম আরকি। তার উপর যদি আংকেল সেখানে তাকে ক্ষমা চাইতে বলে তাহলে হয়ত রাজি হবে না। খালি খালি তাই এইসব দাবি যাতে না করে সেটা বললাম আরকি। নুসাইবা ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। ওর মনে হয় আরশাদ আর মাহফুজের ভিতর বুঝি চোরা চাহনির আদান প্রদান হল।
রাতে খাওয়া শেষে মাহফুজ যখন বিদায় নিতে চায় তখন আরশাদ বলে ওকে আমি নিচে নামিয়ে দিয়ে আসি। লিফট দিয়ে নিচে নামতেই আরশাদ বলে শোন টাকার আদান প্রদানের ব্যাপারটা একদম গোপন রাখতে হবে নুসাইবার কাছ থেকে। মাহফুজ বলে চিন্তা করবেন না আংকেল। আরশাদ একদম ছলছল চোখে মাহফুজের হাত জড়ায়ে ধরে বলে আমি তোমার কাছে একদম ঋনী হয়ে থাকব এই ব্যাপারটার জন্য। মাহফুজ বুঝে এটাই উপযুক্ত সময় কথাটা তোলার জন্য। বলে আংকেল আমার একটা অনুরোধ ছিল। আরশাদ কিছু না ভেবেই বলে, বলে ফেল। আমি করে দিব এখনি। মাহফুজ বলে আংকেল আপনি হয়ত আন্দাজ করছেন আমি সিনিথিয়া কে পছন্দ করি। সিনথিয়াও আমাকে পছন্দ করে। আপনি আমাদের হেল্প করেন একটু। ওর বাসার সবাই কে রাজি করাতে। আরশাদ একটু থমকে যায়। জানে ও হ্যা বললে সবার প্রথম বাধা হবে নুসাইবা। তবে ভাবে হয়ত এই উপকারের পর নুসাইবা রাজি হতেও পারে। আরশাদ বলে আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট। আমি কখনো প্রেমের বাধা না। তবে নুসাইবা যাতে বাধা না দেয় সেই জন্য ওকে আমি রাজি করাবো। আরশাদ কি তখনো জানে এই কথা দেওয়ার পরিণতি কি হবে?