19-07-2023, 01:55 PM
(This post was last modified: 19-07-2023, 01:55 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ঙ
নুসাইবাদের খাবার টেবিলে চারজন বসে আছে। খাওয়ার মাঝে মাঝে কথা হচ্ছে অল্প অল্প। আয়তাকার কাচের ডাইনিং টেবিলে ছয়জন বসতে পারে। টেবিলে একদম মাথায় বসে আছে আরশাদ। আরশাদের হাত ডান পাশে বসেছে আফসানা আর বামপাশে নুসাইবা। আর আফসানার ঠিক পাশেই বসেছে মাহফুজ। নুসাইবা ইচ্ছা করেই এমন ভাবে বসিয়েছে সবাই কে যাতে আফসানা আর মাহফুজ একসাথে বসতে পারে। নুসাইবা চেষ্টা করছে এমন এমন প্রশ্ন করতে যাতে মাহফুজ আর আফসানার মাঝে বেশ কথাবার্তা হয়। যেমন আফসানা ঘুরতে পছন্দ করে, এটা নুসাইবা জানে। তাই খাবার টেবিলে নুসাইবা প্রশ্ন করে, মাহফুজ তুমি ঘোরাঘুরি করতে কেমন পছন্দ কর? মাহফুজ ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করে। আসলে এই বয়সের বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ করে। মাহফুজ বলে, জ্বী আমি ঘোরাঘুরি পছন্দ করি। আফসান বলে উঠে আমিও। কেমন জায়গা ঘুরতে আপনি পছন্দ করেন? নুসাইবা মনে মনে খুশি হয় আফসানা আর মাহফুজের কথা জমে উঠেছে। প্ল্যান সামনে এগুচ্ছে।
মাহফুজ দাওয়াতে এসে আফসানা দেখে একটু অবাক হয়েছিল। মাহফুজের ধারণা ছিল দাওয়াত খালি ওর একার। তাই আফসানা দেখে ভেবেছিল বুঝি সিনথিয়াদের কোন আত্মীয় হবে। কথায় কথায় বুঝল আফসানা সিনথিয়া বা নুসাইবা কার কোন ভাবে আত্মীয় নয়। তাই আফসানা আর ওকে এক সাথে দাওয়াত দেওয়ার মানে মাহফুজ বুঝছিল না। তবে এটা নিয়ে মাহফুজ বেশি মাথা ঘামাচ্ছিল না। হয়ত দুইজন লোক কে আলাদা আলাদা ভাবে দাওয়াত দিতে চেয়েছিল নুসাইবা পরে ঝামেলা এড়ানোর জন্য এক সাথে দাওয়াত দিয়েছে। কিন্তু এরপর যত সময় গড়াচ্ছে মাহফুজ ভিতরে ভিতরে বেশ সন্দেহ করছে দাওয়াতের উদ্দ্যেশ কি আসলেই ঐদিনের লেমনেডের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা নাকি এই দাওয়াতের আসলে ভিতরে অন্য উদ্দ্যেশ আছে। যেভাবে আফসানা আর ওকে প্রশ্ন করা হচ্ছে যাতে মনে হচ্ছে ওকে আর আফসানা কে একে অন্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওরা কে কি করে, কি কি ওদের পছন্দ। কোন দাওয়াতে গিয়ে এই ধরনের প্রশ্ন শুনে নি আগে। একমাত্র পাত্রপাত্রী দেখার ক্ষেত্রে মুরব্বিরা এই ধরনের প্রশ্ন করে। মাহফুজের মনে হয় ওর সন্দেহ ঠিক। এটা আসলে পাত্রপাত্রী দেখার মহড়া হচ্ছে। মাহফুজ বুঝে আফসানাও হয়ত ব্যাপারটা কিছু জানে না। দুইজনের কাউকে না দেখিয়ে এভাবে একটা ব্যবস্থা করার জন্য মাহফুজের আবার রাগ উঠতে থাকে। একে তো সেদিনের লেমনেডের কাহিনী আর সেই লেমনেডের কাহিনীর জন্য ক্ষমা চাইতে গিয়ে আবার এই নতুন করে পাত্রী দেখার কাহিনী। ম্যানিপুলেটিভ ডমিনেটিং বিচ। নুসাইবার উপর রাগ উঠতে থাকে, সাথে আরশাদের উপর। লোকটা মেরুদন্ডহীন একটা প্রাণী। বউ এমন একটা জিনিস করছে বাধা না দিয়ে বরং সাথে সাথে সেই কাজ করছে। সিনথিয়া যেমন বলেছিল ওর ফুফা ফুফু দুইজনের ট্রিকি। নুসাইবা বেশি ট্রিকি। ম্যানিপুলেটিভ বিচ। কি ভাবছে উনি, এভাবে একজন সুন্দরী সামনে এনে ফেললেই লেজ নাড়াতে নাড়াতে সেই মেয়ের পিছনে ঘুরতে শুরু করবে মাহফুজ? কি ভাবে উনি আমাকে? মাহফুজের আর খেতে ইচ্ছা করে না। তবে এই মূহুর্তে এখানে কিছু বলে সিনক্রিয়েট করতে চায় না। সব কুছ ইয়াদ রাখখা যায়েগা।
খাওয়া শেষ করে চারজন তখন ড্রইং রুমে বসে আছে। নুসাইবার বুদ্ধি টের পাওয়ার পর থেকে মাহফুজ মেজাজ খিচড়ে আছে। আজকে এই দাওয়াতের পর সাবরিনার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা। একটা আর্ট প্রদর্শনী চলছে চারুকলার গ্যালারিতে। ভাবছিল আজকে একটা ভাল দিন যাবে। সেই দিনের লেমনেডের ঘটনার পর আজকে হয়ত নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এই দাওয়াত দিয়েছে। এছাড়া এই কয় সাপ্তাহ সাবরিনার সাথে দেখা হয় নি ব্যস্ততার জন্য। আজকে দাওয়াত শেষে সেটাও হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে একটা ভাল দিন যাবে ভেবেছিল। এখন নুসাইবার এই চালবাজিতে মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেছে। ড্রইংরুমে আফসানা আর নুসাইবা পাশাপাশি একটা ডাবল সোফায় বসেছে। কোণাকুণি একটা সিংগেল সোফায় বসে আছে মাহফুজ। আর ওদের পাশে আরেকটা ডাবল সোফায় একা বসে আছে আরশাদ। নানা রকম হালকা কথাবার্তা চলছে। মাহফুজ নুসাইবার নানা কথায় খুব একটা সাড়া দিচ্ছে না। জানে সব কথাই শেষ পর্যন্ত আফসানা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে। আফসানা মেয়েটার জন্য খারাপ লাগে মাহফুজের একটু। হয়ত মেয়েটা কিছু না জেনেই এসেছে। অথবা হয়ত বলেছিল একটা ছেলে দেখতে তাই এখানে নিয়ে এসেছে ওকে। মাহফুজ নিশ্চিত আফসানা কে নুসাইবা বলে নি ঠিক কি কারণে মাহফুজ কে পাত্র হিসেবে দেখাচ্ছে। নিশ্চয় অনেক ভাল ভাল কথা বলেছে ওর নামে। অন্তত আজকে আফসানা ওর সামনে তাই বলছে। তবে মাহফুজ জানে এইসব ভাল ভাল কথা বলা হচ্ছে ওকে সিনথিয়ার কাছ থেকে সরানোর জন্য। মাহফুজ যদি এই মূহুর্তে বলে সে সিনথিয়া কে ভালবাসে এবং বিয়ে করতে চায় তাহলে দেখা যাবে এই ভাল ভাল কথার কতগুলো নুসাইবার মনে থাকে। আর কি কি খারাপ গুণ মাহফুজের আবিষ্কার করে নুসাইবা।
এর মধ্যে কথায় কথায় আরশাদ জিজ্ঞেস করে আফসানা কে বিয়ে করছে কবে। আফসানা বলে পাত্র তো খুজছি, ঠিক ভাবে মিলে গেলে করে ফেলব। এই বলে মাহফুজের দিকে আড় চোখে তাকায়। মাহফুজ পাত্তা দেয় না। নুসাইবা মাহফুজের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে আমার কাছে একটা পাত্র আছে। ব্যবসা করে, ভাল সম্ভাবনা আছে। তুমি বললে আমি দেখতে পারি। আফসানা একটা মিষ্টি হাসি দেয়। আফসানা বলে বিয়ে তো করতে চাই আবার ভয় ভয় লাগে। আজকাল আশেপাশে কত দেখি অনেক বছরের প্রেম বিয়ের পর খালি অশান্তি। আবার কত বিয়ে অল্প কিছুদিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। নুসাইবা ভাবে এইবার আফসানা ঠিক কোশ্চেন করেছে। নুসাইবা বলে তোমার অবজারভেশন ঠিক আছে তবে এই ব্যাপারে আমার মত হচ্ছে বিয়ে গুলোতে অশান্তি হচ্ছে বা টিকছে না কারণ বিয়ের একটা বেসিক রুল ওরা মানছে না। আফসানা জিজ্ঞেস করল, কী? নুসাইবা বলল দেখ বিয়ে মানে কিন্তু খালি দুইটা মানুষের সম্পর্ক না। বিয়ে মানে দুইটা পরিবারের সম্পর্ক স্থাপন। তাই দুই পরিবার যদি এক মন মানসিকতার না হয় তবে সেখানে অশান্তি হবেই। কারণ আলাদা আলাদা মন মানসিকতার কারণে তাদের চাহিদা ভিন্ন হবে সেই কারণে তারা ভিন্ন ভাবে আচরণ করবে এক রকম ঘটনায়। আবার দুই পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড এক রকম হলে সেই পরিবারে বড় হওয়া হবু জামাই বউয়ের মন মানসিকতা অনেকটা কাছাকাছি হবে। সংসার করা এমনিতে অনেক কঠিন কাজ। প্রচুর মানিয়ে চলতে হয়। সেখানে কাছাকাছি মন মানুষিকতার হলে জামাই বউ দুই জনের পক্ষেই সেক্রিফাইস করা সহজ হয়। নাহলে খালি একজন কে স্যাক্রিফাইস করতে হয়, আর পরে যে বেশি স্যাক্রিফাইস করে সে বিরক্ত হয়ে যায় সম্পর্কের উপর। মোদ্দা কথা হল বিয়ে যত সমমনা পরিবার আর মানুষের ভিতর হবে ঠিক ততটা শক্ত আর মজবুত হবে। আজকাল মানুষ তা না ভেবেই বিয়ের পিড়িতে বসে যাচ্ছে তাই এত অশান্তি আর ভাংগন। তাই বলে আমি প্রেমের বিপক্ষে না। আমাদের দেখ না। আমরা তো প্রেম করে বিয়ে করেছি। প্রায় পনের বছর হয়ে গেল। আমাদের এই সংসারের মূল রহস্য হল আমাদের দুই জনের ব্যাকগ্রাউন্ড প্রায় এক রকম। আমাদের দুই পরিবারের শিক্ষা, রুচি প্রায় কাছাকাছি। ফলে আমাদের দুইজনের নিজেদের সাথে আর অন্যের পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়েছে। এই বলে মাহফুজের দিকে একবার তাকায় নুসাইবা। মাহফুজ বুঝে ওকে লক্ষ্য করে এতক্ষণের কথা গুলো বলা হল।
আফসানা এবার কথা প্রসংগে বলে, হ্যা আপনি যা বলেছে তা মোটামুটি ঠিক আছে। তবে আপনার কি মনে হয় একজন ভাল পাত্রের কি গুণ থাকা উচিত? নুসাইবা বলে দেখ আমার বয়স প্রায় চল্লিশ। আমি ভাল পাত্র কেমন এটা তোমাদের মত করে ভাবব না। তবে যদি বল আমার বিয়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি কি ভাবি একজন ভাল পাত্র কেমন হওয়া উচিত। তাহলে আমি বলব প্রথমেই পাত্রের ট্রাস্টওয়ার্দি হতে হবে, বিশ্বস্ত। এমন একজন ছেলে কে তোমার বিয়ে করা উচতি যাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারছ যে সে তোমাকে ঠকাবে না। এই বলে আরশাদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। আরশাদ পালটা একটা হাসি দেয়। মাহফুজ পুরো ব্যাপারটা খেয়াল করে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে নুসাইবা আসলেই আরশাদের উপর এখনো প্রেমে পড়ে আছে। বিয়ের পনের বছর পরেও স্বামীর দিকে এমন প্রেমময় দৃষ্টিতে আর কাউকে তাকাতে দেখে নি মাহফুজ। নুসাইসাবা আফসানার দিকে ফিরে এবার বলে, খালি বিশ্বস্ত হলেই হবে না। এমন কাউকে তোমার বিয়ে করা উচিত যে যোগ্য, দক্ষ। এই সমাজ বড় কঠিন। যোগ্য আর দক্ষ না হলে পদে পদে হোচট খেয়ে পড়তে হবে। বার বার হোচট খেয়ে পড়া যে কার ব্যক্তিগত জীবনে এর প্রভাব ফেলবে ফলে এই কারণেও সংসারে অশান্তি হতে পারে। তুমি এমন কাউকে বিয়ে করবে যে দক্ষ এবং যোগ। আর সবশেষ এবং আমি মনে করি এই পয়েন্টটা খুব গূরুত্বপূর্ন। আমাকে অবশ্য এর জন্য একটু ওল্ড ফ্যাশনিস্ট বলতে পার। আমি মনে করি একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রী কে সব রকম বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করা, সকল আপস এন্ড ডাউনসে পাশে দাঁড়িয়ে হেল্প করা। আফসানা বলে কিন্তু ম্যাডাম এই যুগে কি একজন মেয়ের তার হাজবেন্ডের কাছ থেকে রক্ষাকবচ পাওয়ার দরকার আছে। নুসাইবা বলে আমি বুঝেছি তোমার কথা। তবে আমি আসলে এখনো ওল্ড ফ্যাশনড জ্যান্টলম্যান শিভারলির ভক্ত। স্বামীদের দ্বায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীদের যে কোন বিপদ আপদ থেকে দূরে রাখা। যে কোন বিপদে সামনে দাঁড়িয়ে রক্ষা করা। আমি ওমেন এমপাওয়ারম্যান্টের সাপোর্টার কিন্তু সাথে সাথে এই পুরাতন ভ্যালুস গুলোও ফেলে দিতে ইচ্ছুক নই। আফসানা মাথা নাড়ে। বলে হ্যা, এমন কাউকে জীবন সংগী হিসেবে পেলে তো খুব ভাল হয়। নুসাইবা হাত বাড়িয়ে আরশাদের হাতটা ধরে। বলে, আমি লাকি। আই গট মাই পারফেক্ট মেট।
মাহফুজ আরশাদ নুসাইবার দিকে তাকিয়ে ভাবে নুসাইবার কথা ঠিক। অন্তত নুসাইবা বিশ্বাস করে আরশাদ তার পারফেক্ট মেট। অন্য সময় হলে এই জুটির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকত। তবে আজকে তা পারছে না। ভিতরে ভিতরে একটা বিরক্তি মুগ্ধ হতে দিচ্ছে না। একটু আগে খাওয়ার সময় আরশাদ বুঝাচ্ছিল সৎ ভাবে সরকারি চাকরি করা কতটা কঠিন। পদে পদে ঝামেলা। এত বছর সৎ ভাবে চাকরি করতে গিয়ে কতবার কঠিন বিপদে পড়তে হয়েছে, কত বড় বড় রাঘব বোয়ালের হুমকি অগাহ্য করে বিপদের চোখ রাংগানি উপেক্ষা করে নিজের দ্বায়িত্ব পালন করে গেছে। এইসব শুনতে শুনতে মাহফুজের ভিতরে একটা বিরক্তি জেগে উঠেছিল। সোলায়মান শেখের রিপোর্টের পর থেকে যে সন্দেহ দানা বাধতে শুরু করেছিল জেবা সেটার সত্যতার সূত্র দিয়েছে। আর ভালভাবে কিছু খোজ করতে আর বেশ চমকদার তথ্য পেয়েছে মাহফুজ। এই টেবিলি বসা বাকিরা না জানলেও মাহফুজ জানে এই কতটা গাল গল্প। আবার এইদিকে নুসাইবা কিভাবে সব কিছু ম্যানিপুলেট করতে চায়। নিজের হোলিয়ার দ্যান দাও এটিচুড। মনে করে সে আর তার ফ্যামিলি সবার থেকে উচুতে। মাহফুজের ফ্যামিলি বুঝি অনেক নিচুতে। খালি কলেজ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট যে শিক্ষা নয় সেটা বুঝি জানে না এরা। মাহফুজের নানা বা মা কেউ হাইকলেজের গন্ডি পার হয় নি। ওর বাবা ইন্টারমিডিয়েট এর পর আর পড়াশুনা করেন নি। কিন্তু তাদের কাউকে কখনো অন্যের টাকা মেরে খেতে দেখে নি মাহফুজ। রাজনীতির সাথে জড়িত উনারা সবাই। পুরান ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব আছে মাহফুজের পরিবারের। কিন্তু জোর করে কার কাছে থেকে কিছু ছিনিয়ে নেওয়া, চাদাবাজি করা এইসব অনৈতিক কাজে জড়িত ছিল না তার পরিবারের কেউ। যেটা অনান্য প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার খুব কমন ঘটনা। এখানে আরশাদ খাবার টেবিলে বসে নৈতিকতার শিক্ষা দিচ্ছে কিন্তু মাহফুজ জানে ভিতরে ভিতরে কি ঘটছে। এটা ঠিক আরশাদ খুব সাবধানে তার ভিতরের এই দিকট গোপন করে রেখেছে। মাহফুজ নুসাইবার দিকে তাকিয়ে ভাবে নুসাইবাও কি জানেনা আরশাদের ভিতরের এই ব্যাপারটা। একটু আগে নুসাইবার বলা দুই সংগীর মধ্যে ট্রাস্ট থাকা উচিত, সেই ট্রাস্ট কতটা আছে এই কাপলের মাঝে। নুসাইবা কি জানে আরশাদের জুয়ার অভ্যাসের কথা? নুসাইবা কি অনুমান করতে পারে আরশাদের সাথে বড় কোম্পানি গুলোর গোপন লেনদেন। এই দুই কাপল কি একে অন্যের কাছে পুরোপুরি সৎ?
নুসাইবাদের খাবার টেবিলে চারজন বসে আছে। খাওয়ার মাঝে মাঝে কথা হচ্ছে অল্প অল্প। আয়তাকার কাচের ডাইনিং টেবিলে ছয়জন বসতে পারে। টেবিলে একদম মাথায় বসে আছে আরশাদ। আরশাদের হাত ডান পাশে বসেছে আফসানা আর বামপাশে নুসাইবা। আর আফসানার ঠিক পাশেই বসেছে মাহফুজ। নুসাইবা ইচ্ছা করেই এমন ভাবে বসিয়েছে সবাই কে যাতে আফসানা আর মাহফুজ একসাথে বসতে পারে। নুসাইবা চেষ্টা করছে এমন এমন প্রশ্ন করতে যাতে মাহফুজ আর আফসানার মাঝে বেশ কথাবার্তা হয়। যেমন আফসানা ঘুরতে পছন্দ করে, এটা নুসাইবা জানে। তাই খাবার টেবিলে নুসাইবা প্রশ্ন করে, মাহফুজ তুমি ঘোরাঘুরি করতে কেমন পছন্দ কর? মাহফুজ ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করে। আসলে এই বয়সের বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ করে। মাহফুজ বলে, জ্বী আমি ঘোরাঘুরি পছন্দ করি। আফসান বলে উঠে আমিও। কেমন জায়গা ঘুরতে আপনি পছন্দ করেন? নুসাইবা মনে মনে খুশি হয় আফসানা আর মাহফুজের কথা জমে উঠেছে। প্ল্যান সামনে এগুচ্ছে।
মাহফুজ দাওয়াতে এসে আফসানা দেখে একটু অবাক হয়েছিল। মাহফুজের ধারণা ছিল দাওয়াত খালি ওর একার। তাই আফসানা দেখে ভেবেছিল বুঝি সিনথিয়াদের কোন আত্মীয় হবে। কথায় কথায় বুঝল আফসানা সিনথিয়া বা নুসাইবা কার কোন ভাবে আত্মীয় নয়। তাই আফসানা আর ওকে এক সাথে দাওয়াত দেওয়ার মানে মাহফুজ বুঝছিল না। তবে এটা নিয়ে মাহফুজ বেশি মাথা ঘামাচ্ছিল না। হয়ত দুইজন লোক কে আলাদা আলাদা ভাবে দাওয়াত দিতে চেয়েছিল নুসাইবা পরে ঝামেলা এড়ানোর জন্য এক সাথে দাওয়াত দিয়েছে। কিন্তু এরপর যত সময় গড়াচ্ছে মাহফুজ ভিতরে ভিতরে বেশ সন্দেহ করছে দাওয়াতের উদ্দ্যেশ কি আসলেই ঐদিনের লেমনেডের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা নাকি এই দাওয়াতের আসলে ভিতরে অন্য উদ্দ্যেশ আছে। যেভাবে আফসানা আর ওকে প্রশ্ন করা হচ্ছে যাতে মনে হচ্ছে ওকে আর আফসানা কে একে অন্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওরা কে কি করে, কি কি ওদের পছন্দ। কোন দাওয়াতে গিয়ে এই ধরনের প্রশ্ন শুনে নি আগে। একমাত্র পাত্রপাত্রী দেখার ক্ষেত্রে মুরব্বিরা এই ধরনের প্রশ্ন করে। মাহফুজের মনে হয় ওর সন্দেহ ঠিক। এটা আসলে পাত্রপাত্রী দেখার মহড়া হচ্ছে। মাহফুজ বুঝে আফসানাও হয়ত ব্যাপারটা কিছু জানে না। দুইজনের কাউকে না দেখিয়ে এভাবে একটা ব্যবস্থা করার জন্য মাহফুজের আবার রাগ উঠতে থাকে। একে তো সেদিনের লেমনেডের কাহিনী আর সেই লেমনেডের কাহিনীর জন্য ক্ষমা চাইতে গিয়ে আবার এই নতুন করে পাত্রী দেখার কাহিনী। ম্যানিপুলেটিভ ডমিনেটিং বিচ। নুসাইবার উপর রাগ উঠতে থাকে, সাথে আরশাদের উপর। লোকটা মেরুদন্ডহীন একটা প্রাণী। বউ এমন একটা জিনিস করছে বাধা না দিয়ে বরং সাথে সাথে সেই কাজ করছে। সিনথিয়া যেমন বলেছিল ওর ফুফা ফুফু দুইজনের ট্রিকি। নুসাইবা বেশি ট্রিকি। ম্যানিপুলেটিভ বিচ। কি ভাবছে উনি, এভাবে একজন সুন্দরী সামনে এনে ফেললেই লেজ নাড়াতে নাড়াতে সেই মেয়ের পিছনে ঘুরতে শুরু করবে মাহফুজ? কি ভাবে উনি আমাকে? মাহফুজের আর খেতে ইচ্ছা করে না। তবে এই মূহুর্তে এখানে কিছু বলে সিনক্রিয়েট করতে চায় না। সব কুছ ইয়াদ রাখখা যায়েগা।
খাওয়া শেষ করে চারজন তখন ড্রইং রুমে বসে আছে। নুসাইবার বুদ্ধি টের পাওয়ার পর থেকে মাহফুজ মেজাজ খিচড়ে আছে। আজকে এই দাওয়াতের পর সাবরিনার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা। একটা আর্ট প্রদর্শনী চলছে চারুকলার গ্যালারিতে। ভাবছিল আজকে একটা ভাল দিন যাবে। সেই দিনের লেমনেডের ঘটনার পর আজকে হয়ত নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এই দাওয়াত দিয়েছে। এছাড়া এই কয় সাপ্তাহ সাবরিনার সাথে দেখা হয় নি ব্যস্ততার জন্য। আজকে দাওয়াত শেষে সেটাও হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে একটা ভাল দিন যাবে ভেবেছিল। এখন নুসাইবার এই চালবাজিতে মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেছে। ড্রইংরুমে আফসানা আর নুসাইবা পাশাপাশি একটা ডাবল সোফায় বসেছে। কোণাকুণি একটা সিংগেল সোফায় বসে আছে মাহফুজ। আর ওদের পাশে আরেকটা ডাবল সোফায় একা বসে আছে আরশাদ। নানা রকম হালকা কথাবার্তা চলছে। মাহফুজ নুসাইবার নানা কথায় খুব একটা সাড়া দিচ্ছে না। জানে সব কথাই শেষ পর্যন্ত আফসানা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে। আফসানা মেয়েটার জন্য খারাপ লাগে মাহফুজের একটু। হয়ত মেয়েটা কিছু না জেনেই এসেছে। অথবা হয়ত বলেছিল একটা ছেলে দেখতে তাই এখানে নিয়ে এসেছে ওকে। মাহফুজ নিশ্চিত আফসানা কে নুসাইবা বলে নি ঠিক কি কারণে মাহফুজ কে পাত্র হিসেবে দেখাচ্ছে। নিশ্চয় অনেক ভাল ভাল কথা বলেছে ওর নামে। অন্তত আজকে আফসানা ওর সামনে তাই বলছে। তবে মাহফুজ জানে এইসব ভাল ভাল কথা বলা হচ্ছে ওকে সিনথিয়ার কাছ থেকে সরানোর জন্য। মাহফুজ যদি এই মূহুর্তে বলে সে সিনথিয়া কে ভালবাসে এবং বিয়ে করতে চায় তাহলে দেখা যাবে এই ভাল ভাল কথার কতগুলো নুসাইবার মনে থাকে। আর কি কি খারাপ গুণ মাহফুজের আবিষ্কার করে নুসাইবা।
এর মধ্যে কথায় কথায় আরশাদ জিজ্ঞেস করে আফসানা কে বিয়ে করছে কবে। আফসানা বলে পাত্র তো খুজছি, ঠিক ভাবে মিলে গেলে করে ফেলব। এই বলে মাহফুজের দিকে আড় চোখে তাকায়। মাহফুজ পাত্তা দেয় না। নুসাইবা মাহফুজের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে আমার কাছে একটা পাত্র আছে। ব্যবসা করে, ভাল সম্ভাবনা আছে। তুমি বললে আমি দেখতে পারি। আফসানা একটা মিষ্টি হাসি দেয়। আফসানা বলে বিয়ে তো করতে চাই আবার ভয় ভয় লাগে। আজকাল আশেপাশে কত দেখি অনেক বছরের প্রেম বিয়ের পর খালি অশান্তি। আবার কত বিয়ে অল্প কিছুদিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। নুসাইবা ভাবে এইবার আফসানা ঠিক কোশ্চেন করেছে। নুসাইবা বলে তোমার অবজারভেশন ঠিক আছে তবে এই ব্যাপারে আমার মত হচ্ছে বিয়ে গুলোতে অশান্তি হচ্ছে বা টিকছে না কারণ বিয়ের একটা বেসিক রুল ওরা মানছে না। আফসানা জিজ্ঞেস করল, কী? নুসাইবা বলল দেখ বিয়ে মানে কিন্তু খালি দুইটা মানুষের সম্পর্ক না। বিয়ে মানে দুইটা পরিবারের সম্পর্ক স্থাপন। তাই দুই পরিবার যদি এক মন মানসিকতার না হয় তবে সেখানে অশান্তি হবেই। কারণ আলাদা আলাদা মন মানসিকতার কারণে তাদের চাহিদা ভিন্ন হবে সেই কারণে তারা ভিন্ন ভাবে আচরণ করবে এক রকম ঘটনায়। আবার দুই পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড এক রকম হলে সেই পরিবারে বড় হওয়া হবু জামাই বউয়ের মন মানসিকতা অনেকটা কাছাকাছি হবে। সংসার করা এমনিতে অনেক কঠিন কাজ। প্রচুর মানিয়ে চলতে হয়। সেখানে কাছাকাছি মন মানুষিকতার হলে জামাই বউ দুই জনের পক্ষেই সেক্রিফাইস করা সহজ হয়। নাহলে খালি একজন কে স্যাক্রিফাইস করতে হয়, আর পরে যে বেশি স্যাক্রিফাইস করে সে বিরক্ত হয়ে যায় সম্পর্কের উপর। মোদ্দা কথা হল বিয়ে যত সমমনা পরিবার আর মানুষের ভিতর হবে ঠিক ততটা শক্ত আর মজবুত হবে। আজকাল মানুষ তা না ভেবেই বিয়ের পিড়িতে বসে যাচ্ছে তাই এত অশান্তি আর ভাংগন। তাই বলে আমি প্রেমের বিপক্ষে না। আমাদের দেখ না। আমরা তো প্রেম করে বিয়ে করেছি। প্রায় পনের বছর হয়ে গেল। আমাদের এই সংসারের মূল রহস্য হল আমাদের দুই জনের ব্যাকগ্রাউন্ড প্রায় এক রকম। আমাদের দুই পরিবারের শিক্ষা, রুচি প্রায় কাছাকাছি। ফলে আমাদের দুইজনের নিজেদের সাথে আর অন্যের পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়েছে। এই বলে মাহফুজের দিকে একবার তাকায় নুসাইবা। মাহফুজ বুঝে ওকে লক্ষ্য করে এতক্ষণের কথা গুলো বলা হল।
আফসানা এবার কথা প্রসংগে বলে, হ্যা আপনি যা বলেছে তা মোটামুটি ঠিক আছে। তবে আপনার কি মনে হয় একজন ভাল পাত্রের কি গুণ থাকা উচিত? নুসাইবা বলে দেখ আমার বয়স প্রায় চল্লিশ। আমি ভাল পাত্র কেমন এটা তোমাদের মত করে ভাবব না। তবে যদি বল আমার বিয়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি কি ভাবি একজন ভাল পাত্র কেমন হওয়া উচিত। তাহলে আমি বলব প্রথমেই পাত্রের ট্রাস্টওয়ার্দি হতে হবে, বিশ্বস্ত। এমন একজন ছেলে কে তোমার বিয়ে করা উচতি যাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারছ যে সে তোমাকে ঠকাবে না। এই বলে আরশাদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। আরশাদ পালটা একটা হাসি দেয়। মাহফুজ পুরো ব্যাপারটা খেয়াল করে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে নুসাইবা আসলেই আরশাদের উপর এখনো প্রেমে পড়ে আছে। বিয়ের পনের বছর পরেও স্বামীর দিকে এমন প্রেমময় দৃষ্টিতে আর কাউকে তাকাতে দেখে নি মাহফুজ। নুসাইসাবা আফসানার দিকে ফিরে এবার বলে, খালি বিশ্বস্ত হলেই হবে না। এমন কাউকে তোমার বিয়ে করা উচিত যে যোগ্য, দক্ষ। এই সমাজ বড় কঠিন। যোগ্য আর দক্ষ না হলে পদে পদে হোচট খেয়ে পড়তে হবে। বার বার হোচট খেয়ে পড়া যে কার ব্যক্তিগত জীবনে এর প্রভাব ফেলবে ফলে এই কারণেও সংসারে অশান্তি হতে পারে। তুমি এমন কাউকে বিয়ে করবে যে দক্ষ এবং যোগ। আর সবশেষ এবং আমি মনে করি এই পয়েন্টটা খুব গূরুত্বপূর্ন। আমাকে অবশ্য এর জন্য একটু ওল্ড ফ্যাশনিস্ট বলতে পার। আমি মনে করি একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রী কে সব রকম বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করা, সকল আপস এন্ড ডাউনসে পাশে দাঁড়িয়ে হেল্প করা। আফসানা বলে কিন্তু ম্যাডাম এই যুগে কি একজন মেয়ের তার হাজবেন্ডের কাছ থেকে রক্ষাকবচ পাওয়ার দরকার আছে। নুসাইবা বলে আমি বুঝেছি তোমার কথা। তবে আমি আসলে এখনো ওল্ড ফ্যাশনড জ্যান্টলম্যান শিভারলির ভক্ত। স্বামীদের দ্বায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীদের যে কোন বিপদ আপদ থেকে দূরে রাখা। যে কোন বিপদে সামনে দাঁড়িয়ে রক্ষা করা। আমি ওমেন এমপাওয়ারম্যান্টের সাপোর্টার কিন্তু সাথে সাথে এই পুরাতন ভ্যালুস গুলোও ফেলে দিতে ইচ্ছুক নই। আফসানা মাথা নাড়ে। বলে হ্যা, এমন কাউকে জীবন সংগী হিসেবে পেলে তো খুব ভাল হয়। নুসাইবা হাত বাড়িয়ে আরশাদের হাতটা ধরে। বলে, আমি লাকি। আই গট মাই পারফেক্ট মেট।
মাহফুজ আরশাদ নুসাইবার দিকে তাকিয়ে ভাবে নুসাইবার কথা ঠিক। অন্তত নুসাইবা বিশ্বাস করে আরশাদ তার পারফেক্ট মেট। অন্য সময় হলে এই জুটির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকত। তবে আজকে তা পারছে না। ভিতরে ভিতরে একটা বিরক্তি মুগ্ধ হতে দিচ্ছে না। একটু আগে খাওয়ার সময় আরশাদ বুঝাচ্ছিল সৎ ভাবে সরকারি চাকরি করা কতটা কঠিন। পদে পদে ঝামেলা। এত বছর সৎ ভাবে চাকরি করতে গিয়ে কতবার কঠিন বিপদে পড়তে হয়েছে, কত বড় বড় রাঘব বোয়ালের হুমকি অগাহ্য করে বিপদের চোখ রাংগানি উপেক্ষা করে নিজের দ্বায়িত্ব পালন করে গেছে। এইসব শুনতে শুনতে মাহফুজের ভিতরে একটা বিরক্তি জেগে উঠেছিল। সোলায়মান শেখের রিপোর্টের পর থেকে যে সন্দেহ দানা বাধতে শুরু করেছিল জেবা সেটার সত্যতার সূত্র দিয়েছে। আর ভালভাবে কিছু খোজ করতে আর বেশ চমকদার তথ্য পেয়েছে মাহফুজ। এই টেবিলি বসা বাকিরা না জানলেও মাহফুজ জানে এই কতটা গাল গল্প। আবার এইদিকে নুসাইবা কিভাবে সব কিছু ম্যানিপুলেট করতে চায়। নিজের হোলিয়ার দ্যান দাও এটিচুড। মনে করে সে আর তার ফ্যামিলি সবার থেকে উচুতে। মাহফুজের ফ্যামিলি বুঝি অনেক নিচুতে। খালি কলেজ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট যে শিক্ষা নয় সেটা বুঝি জানে না এরা। মাহফুজের নানা বা মা কেউ হাইকলেজের গন্ডি পার হয় নি। ওর বাবা ইন্টারমিডিয়েট এর পর আর পড়াশুনা করেন নি। কিন্তু তাদের কাউকে কখনো অন্যের টাকা মেরে খেতে দেখে নি মাহফুজ। রাজনীতির সাথে জড়িত উনারা সবাই। পুরান ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব আছে মাহফুজের পরিবারের। কিন্তু জোর করে কার কাছে থেকে কিছু ছিনিয়ে নেওয়া, চাদাবাজি করা এইসব অনৈতিক কাজে জড়িত ছিল না তার পরিবারের কেউ। যেটা অনান্য প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার খুব কমন ঘটনা। এখানে আরশাদ খাবার টেবিলে বসে নৈতিকতার শিক্ষা দিচ্ছে কিন্তু মাহফুজ জানে ভিতরে ভিতরে কি ঘটছে। এটা ঠিক আরশাদ খুব সাবধানে তার ভিতরের এই দিকট গোপন করে রেখেছে। মাহফুজ নুসাইবার দিকে তাকিয়ে ভাবে নুসাইবাও কি জানেনা আরশাদের ভিতরের এই ব্যাপারটা। একটু আগে নুসাইবার বলা দুই সংগীর মধ্যে ট্রাস্ট থাকা উচিত, সেই ট্রাস্ট কতটা আছে এই কাপলের মাঝে। নুসাইবা কি জানে আরশাদের জুয়ার অভ্যাসের কথা? নুসাইবা কি অনুমান করতে পারে আরশাদের সাথে বড় কোম্পানি গুলোর গোপন লেনদেন। এই দুই কাপল কি একে অন্যের কাছে পুরোপুরি সৎ?