04-06-2023, 12:29 PM
(This post was last modified: 04-06-2023, 12:30 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আপডেট ১৭
ক
মাহফুজের এই কয় দিন মন বেশ ফুরফুরে। কয়দিন আগে আশুলিয়ার এমভি রুস্তমে সাবরিনার সাথে ওর কাটানো সময় যেন ওর মনে প্রভাব ফেলেছে। মন টা এই কয়দিন তাই উরু উরু। সাবরিনার সাথে সরাসরি দেখা হবার সময় কখনো ভাবে নি সাবরিনা কে এমন করে কাছে পাবে। নিজের উপর নিজের আত্মবিশ্বাস তাই একন তুংগে। সাবরিনার মত সুন্দরী কঠোর মেয়ে কে এমন করে কাছে পাওয়া কঠিন ব্যাপার তাই এমন সফলতার পর এতটুকু আত্মবিশ্বাস যথাযোগ্য বলে মাহফুজের মনে হচ্ছে। শুধু ওর মনের ভিতর একটা খচখচানি রয়ে গেছে। সেটার কারণে ঠিক আকাশে উড়তে পারছে না। সাবরিনার কাছে কীভাবে এখন সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্কের কথা বলবে? বললে সাবরিনা কীভাবে সেটা গ্রহণ করবে? আবার সিনথিয়া ওর সাথে ফোন সেক্স বা ওদের সেক্স সেশনে ওর বোন কে নিয়ে কথা বলে কিন্তু সেগুলো তো ফ্যান্টাসি, ডার্টি টক। তাই সিনথিয়া কে যদি বলে ওর ফ্যান্টাসি সত্যি হয়ে গেছে, ওর কোল্ড বিচ আপু কে মাহফুজ নিজের খেলার সংগী করেছে তাহলে সিনথিয়া কতটুকু ইজি হয়ে ব্যাপারটা গ্রহণ করতে পারবে?
তবে এই মূহুর্তে মাহফুজ ঠিক এগুলা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে চাচ্ছে না। আজকে একটু পরে নুসাইবা আর আরশাদ সাহেব আসবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাবে সরকারি চাকরি বিষয়ে কথা বলতে। মাহফুজ ব্যবস্থা করেছে এই আয়োজনের ক্যারিয়ার ক্লাব কে বলে। মাহফুজ জানে নুসাইবার সুনজরে থাকতে হলে এই আয়োজনের গুরুত্ব কতটুকু। মাহফুজ আগে থেকেই হাজির হয়ে গেছে। সব কিছু চেক করে দেখছে ঠিকঠাক আছে কিনা। ক্যারিয়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আরিফ আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। ভার্সিটির হলরুম টা ভাড়া নিয়েছে ওরা। প্রায় পাচশ লোক ধারণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ। দোতলায় আর একশ লোক বসতে পারে। তবে আজকে দোতলা খোলার পারমিশন পায় নি, তবে মনে হয় দরকার হবে না। অনুষ্ঠান শুরু হতে এখনো আধা ঘন্টা বাকি এর মাঝে প্রায় তিনশ সিটে লোক বসে গেছে। আজকাল সরকারি চাকরির প্রচুর দাম বিশেষ করে সরকারী বেতন স্কেল বাড়ার পর। তার উপর সেটা যদি বিসিএস বা বাংলাদেশ ব্যাংকের মত কিছু হয় তাহলে তো আর আকর্ষণ। তাই ভার্সিটির ছেলে মেয়েরা আসছে প্রচুর। আজকে শুক্রবার না হলে এত লোক হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। আর আরিফ বলল, ভাই আমরা ডিপার্টমেন্টে ডিপার্টমেন্টে পোস্টার লাগিয়েছি। মাহফুজ কিছু খরচ দিতে চেয়েছিল ওদের এই পোস্টারিং এর জন্য, তখন আরিফ বলল ভাই আমাদের ক্লাবের ফান্ডে কিছু টাকা আছে। আর আপনার কথা বলে বাংলাবাজারের বইয়ের দোকানগুলা থেকে কিছু টাকা পেয়েছি। মাহফুজ বুঝে চালু ছেলে। ওর কাছ থেকে টাকা নিলে অন্য খান থেকে টাকা চাওয়ার উপায় থাকবে না। তবে এখন পুরো অনুষ্ঠানের জন্য খবচ দশ হাজার হলে এতক্ষণে পঞ্চাশ হাজার তুলে ফেলেছে এই ছেলে। চল্লিশ হাজার লাভ। মাহফুজ কিছু বলে না। ওর কাজ করে দিচ্ছে সেটাই ওর দরকার। আজকাল সবাই টাকা খায় কিন্তু টাকা খেয়ে ঠিক মত কাজ কে করে দেয় সেটাই আসল ব্যাপার। কথা বলতে বলতে মাহফুজ দেখল ক্লাবের ভলান্টিয়াররা মঞ্চের পিছনে ব্যানার টানাচ্ছে। ইংরেজীতে করা ব্যানার। আজকাল ইংরেজীতে ব্যানার করলে লোকজন বেশি দাম দেয়, ক্যারিয়ার ক্লাবের ছেলেরা সেটা থেকে বের হতে পারে নি। ব্যানারে বড় করে লেখা ক্যারিয়ার ডিসকাশন। আর নিচে আরশাদ এবং নুসাইবার নাম লেখা। প্রত্যেকের নামের পাশে ছোট করে তাদের পদবী এবং চাকরির ক্ষেত্র লেখা। অবাক হল একদম নিচে ওর নিজের নাম দেখে। নিচে ছোট অক্ষরে লেখা স্পেশাল থ্যাংক্স টু সৈয়দ মাহফুজ। মাহফুজ ক্লাব প্রেসিডেন্ট আরিফ কে জিজ্ঞেস করল আমার নাম দিলে যে? আরিফ বলল ভাই আপনি হেল্প না করলে এই সেশন আয়োজন করা যেত না। একেকবার এক জন স্পীকার আনতে আমাদের যে পরিমাণ কাঠখড় পোড়াতে হয় সেখানে আজকে একসাথে দুইজন তাও প্রায় কোন পরিশ্রম না করে। তাই সামান্য এই ধন্যবাদটুকু না দিতে পারলে কেমন হয়। মনে মনে খুশি হয় মাহফুজ। ছেলে কীভাবে তেল দিতে হয় জানে। মাহফুজেও আজকে এই জিনিসটা খেয়াল রাখতে হবে। কিভাবে নুসাইবা আর আরশাদ কে তেল দেওয়া যায় তবে সুক্ষ ভাবে হতে হবে ব্যাপারটা।
অনুষ্ঠান শুরু হবে চারটায়। আর পনের মিনিট বাকি আছে। অডেটরিয়ামে আর লোক আসছে। আজকে বেশ অনেক লোক হবে। নুসাইবা আর আরশাদ টাইমের ব্যাপারে সচেতন। আরিফ তাই যখন জিজ্ঞেস করে গেস্টরা কি সময় মত আসতে পারবে? মাহফুজ তখন উত্তর দেয় উনারা দেরি করার মানুষ না। আরিফ বলে হ্যা আপনি অবশ্য ভাল বলতে পারবেন। মাহফুজ মনে মনে ভাবে নুসাইবা আর আরশাদের সাথে বাস্তবে মাত্র একবার দেখা হলেও ওদের অনেক কিছুই মাহফুজের জানা। সিনথিয়া ওর ফুফু সম্পর্কে এতবার এতকিছু বলেছে যেন নুসাইবার নাম শুনলেই সেই সব গল্প মনে পড়ে যায়। আর নুসাইবা যা বলেছে তাতে এটা স্পষ্ট নুসাইবা আর আরশাদ দুইজনেই খুব সময়নিষ্ঠ। এইসব ভাবতে ভাবতেই মাহফুজের মোবাইলে নুসাইবার কল। মাহফুজ কল রিসিভ করে সালাম দিতেই নুসাইবা জানতে চাইল কই আসতে হবে, ওদের গাড়ি জগন্নাথ ভার্সিটির মেইন গেইট দিয়ে ঢুকে ভিসি অফিসের সামনে অপেক্ষা করছে। মাহফুজ বলল আসছি একটু অপেক্ষা করুন। মাহফুজ আর ক্যারিয়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আরিফ দুইজন মিলে দৌড় দিল। গাড়ির কাছ থেকে রিসিভ করে দুইজনকে অডিটরিয়ামের দিকে নিয়ে যেতে থাকল।
নুসাইবা আর আরশাদ দুই জন অডেটরিয়ামে ঢুকেই একটু হতচকিত হয়ে গেল। পুরো অডিটরিয়াম ভর্তি মানুষ। নুসাইবা আর আরশাদ এত ভীড় আশা করে নি। ওদের ধারণা ছিল বড়জোর পঞ্চাশ ষাট জনের একটা গ্যাদারিং হবে। নিজেদের ভার্সিটি জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছে সাধারণত এইসব ক্লাবটাবে খুব একটা মেম্বার থাকে না। বড়জোর পঞ্চাশের কাছাকাছি কিছু হবে। তবে আরশাদ আর নুসাইবার ভার্সিটি জীবন শেষ হয়েছে প্রায় অনেক বছর, এতদিনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চাকরির জন্য ছেলে মেয়েরা আর সিরিয়াস ভার্সিটির সেকেন্ড থার্ড ইয়ার থেকেই। তার উপর বিসিএস আর বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে কথা বলবে দুই জন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাই শুনতে সবাই আগ্রহী। অডিটরিয়ামে ঢুকে প্রথমে নুসাইবা আর আরশাদ কে প্রথম সারিতে বসানো হল। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সবাই ধন্যবাদ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করল। নুসাইবা আর আরশাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে মঞ্চে আসার জন্য আহবান জানাল নুসাইবা আর আরশাদ কে। সাথে সাথে মঞ্চে আসার জন্য অনুরোধ করল ক্লাব প্রেসিডেন্ট আরিফ আর স্পেশাল গেস্ট মাহফুজ কে। মঞ্চে মাঝখানের দুই চেয়ারে বসল নুসাইবা আর আরশাদ। আর দুই পাশে বসল মাহফুজ আর আরিফ। মাহফুজ নুসাইবার পাশে আর আরিফ আরশাদের পাশে। মঞ্চে এসে বসার পর অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ঘোষণা করল ক্লাবের পক্ষ থেকে ক্লাবের দুইজন সদস্য গেস্ট স্পীকার দুইজনকে উত্তরীয় পরিয়ে দিবে। আয়োজকদের দক্ষতা আর প্রফেশনালিজম দেখে নুসাইবা আরশাদ দুইজনেই মুগ্ধ হল। নুসাইবা আরশাদ ছাত্র থাকাকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হয় নি, তখনো এটি একটি কলেজ। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ঢাকা বা জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হয়। এইসব কারণে নুসাইবা আর আরশাদের ধারণা খুব উচু ছিল না এই ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের নিয়ে। তাই অনুষ্ঠানের প্রফেশনালিজমে দুইজনেই খুব খুশি হল।
অনুষ্ঠানের ফরম্যাট উপস্থাপক সবার সুবিধার জন্য জানিয়ে দিল। দুই বক্তার প্রত্যকে আধা ঘন্টা করে করে স্পিচ দিবে। এরপর বাকি আধা ঘন্টা হবে প্রশ্ন উত্তর পর্ব। প্রথমেই উপস্থাপন আরশাদ সাহেব কে অনুরোধ করল ডায়াসে এসে বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস, ট্যাক্স ক্যাডার ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু বলার জন্য। আরশাদ ডায়াসে এসে ধন্যবাদ দিয়ে বক্তব্য শুরু করল। আরশাদ বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে চাকরির সুবিধা অসুবিধা নিয়ে কথা বলছে। মাহফুজ মঞ্চে বসে দর্শক সারিতে তাকাল। সবাই বেশ মনযোগ দিয়ে কথা শুনছে। এমনিতে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বা প্রোগ্রামের মঞ্চে বসে থাকতে হলে মাহফুজ সাধারণত মোবাইল বের করে ফেসবুক চালায় বা পেপার পড়ে। আজকে সে সুযোগ নেই। ওর ঠিক একদম পাশেই বসে আছে নুসাইবা। নুসাইবার কাছে নিজের ইমেজ বাড়ানোর জন্য এই প্রোগ্রাম তাই এখানে একদম অমনোযোগী দেখানোর কোন সুযোগ নেই। তাই মনযোগ দিয়ে আরশাদের কথা শোনার চেষ্টা করে। তবে মনযোগ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। এমনিতেই ছাত্র অবস্থায় সরকারী বেসরকারী কোন চাকরির প্রতি মাহফুজের খুব একটা আগ্রহ ছিল না। মাহফুজের আগ্রহের জায়গা বরাবর রাজনীতি আর ব্যবসা। তাই আরশাদ যখন বিসিএসের প্রস্তুতি, ক্যাডার সার্ভিসে ভাল বেতনের সাথে সাথে অনান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে কথা বলছে তখন মাহফুজের পক্ষে ঘুম আটকানো কঠিন হয়ে পড়ছে। ঘুমানোর উপায় নেই নুসাইবার পাশে বসে। নুসাইবা হালকা একটু বাকা হয়ে আরশাদের দিকে তাকিয়ে কথা শুনছে। মুখে একটা মুগ্ধ ভাব আছে।
নুসাইবাদের বিয়ের প্রায় পনের বছর হয়েছে। বিয়ের এত দিন পরেও স্বামীর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা খুব আনকমন ব্যাপার। সিনথিয়ার কাছে এতদিন শুনেছে নুসাইবার জামাই প্রীতির কথা। আজকে নুসাইবার চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি যেন সিনথিয়ার কথার স্বাক্ষী দিচ্ছে। সিনথিয়াদের বাড়িতে প্রথম প্রেমের বিয়ে হচ্ছে নুসাইবা আরশাদের বিয়ে। এমনকি ওদের এক্সটেনডেট ফ্যামিলিতেও নাকি এর আগে প্রেমের বিয়ের কোন নজির নেই। সেই বিয়ে নিয়েও নাকি কম হুজ্জুত হয় নি। কেউ রাজি ছিল না প্রথমে। এমন না যে আরশাদ খুব খারাপ ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার রেজাল্ট করা। নুসাইবা থেকে বছর তিনেকের বড়। তাই যখন ফ্যামিলিতে নুসাইবা ওর প্রেমের কথা বলেছিল ততদিনে আরশাদ বিসিএস ক্যাডার। এমনকি আরশাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডও ভাল। খালি একটাই অযোগ্যতা ছিল আরশাদের সেটা হল প্রেম করেছে। সেই সময় নাকি সিনথিয়া মা সাফিনা করিম একমাত্র তার ননদের পক্ষে ছিলেন শুরুতে। শ্বশুড় শ্বাশুড়ির কাছে খুব আদরের ছিলেন সাফিনা করিম। উনিই আস্তে আস্তে করে নুসাইবার মা-বাবা মানে সিনথিয়ার দাদা দাদী কে রাজি করান। সিনথিয়ার কাছে শুনে আমার মনে হয়েছে ওদের ফ্যামিলিতে প্রেমের ব্যাপারে সবচেয়ে কম কনজারভেটিভ সাফিনা করিম। মাহফুজের আশা সাবরিনা নুসাইবা রাজি হলে সাফিনা করিম কে রাজি করানো অত কঠিন হবে না।
আরশাদ তার বক্তব্য চালিয়ে যাচ্চেন। ক্যাডার সার্ভিসের চাকরি কতটুকু প্রেস্টিজিয়াস সেটা বর্ণনা করছেন। শুনে মাহফুজের একটু হাসি পেল। যে ছেলে মেয়ে গুলো এখানে কথা শুনতে এসেছে তারা ক্যাডার সার্ভিসের চাকরি কে স্বর্গের চাকরি মনে করে বলেই শুক্রবার ছুটির দিনের বিকাল বেলা প্রেম না করে বা আড্ডা না দিয়ে অডেটরিয়ামের এই আলো আধারিতে বক্তব্য শুনছে। এদের নতুন করে কনভিন্স করার আর কিছু নেই। কনভিন্সের প্রসংগ আসতেই মাহফুজের মনে পড়ল সিনথিয়ার সাথে কথপোকথনে একদিন ও জিজ্ঞেস করেছিল যদি নুসাইবা ফুফু প্রেম করে বিয়ে করে তাহলে তো আমাদের প্রেমের ক্ষেত্রে উনি বড় সাপোর্টার হওয়ার কথা। সিনথিয়া উত্তর দিয়েছিল, না। একদিকে তোমার কথা ঠিক আবার অন্য দিকে না। নুসাইবা ফুফুর প্রেম নিয়ে কোন আপত্তি নেই কিন্তু সেই প্রেম হতে হবে সমানে সমান। মাহফুজ বলেছিল আমার ভাল স্ট্যাবল বিজনেস আছে, ভাল ইনকাম করি। সেই অর্থে খারাপ কোন নেশা নেই। দেখতেও অত খারাপ না। তাহলে আমাকে কি তোমার যোগ্য ভাববে নুসাইবা ফুফু? সিনথিয়া উত্তর দিল, না। সিনথিয়া ফুফু আসলে স্ট্যাটাস ব্লাউন্ড। কালার ব্লাইন্ড যেমন শুনেছ ঠিক তেমন। কালার ব্লাইন্ডরা এক বা একাধিক কালার দেখতে পায় না। আমার ফুফু সেরকম প্রেম বা বিয়ের ক্ষেত্রে। উনি স্ট্যাটাস ব্লাইন্ড। ছেলদের ফ্যামিলি যদি আমাদের ফ্যামিলির সমকক্ষ না হয় তবে ছেলের আর বাদবাকি গুণ উনি চোখে দেখেন না। আপুর এক বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। ছেলে আপুর মত আইবিএ থেকে পাশ করা, কর্পোরেটে খুব ভাল পজিশনে চাকরি করে। দেখতেও হ্যান্ডসাম। কিন্তু ফুফু প্রথমেই না করে দিয়েছিল। উনার কথা ছিল দুই পরিবার সমকক্ষ না হলে সেই বিয়ে সুখের হয় না। ঐ ছেলের বাবা কোন এক সরকারি অফিসের ক্লার্ক ছিল, মা গৃহিনী। ছেলের সব যোগ্যতা ঐ এক জায়গায় এসে মার খেয়ে গেছে। দেখনা উনি আরশাদ ফুফার সাথে প্রেম করেছেন। ফুফার ফ্যামিলি একদম আমাদের সাথে খাপে খাপে মিলে যায়। তাই উনার আপত্তি প্রেমে না উনার আপত্তি ছেলের ফ্যামিলি নিয়ে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে তাহলে কি উনি মনে করেন তোমাদের স্ট্যাটাসের বাইরের সব ছেলে খারাপ, অযোগ্য। সিনথিয়া বলে সেটাও না। আপুর বিয়ের প্রস্তাবের সময় এটা নিয়ে কথা হয়েছিল। তখন উনি একটা কথাই বলেছিলেন। বিয়ে খালি দুইটা মানুষের হয় না সাথে দুইটা পরিবারের মিল হয়। তাই দুই পরিবার যত কাছের হয় ভ্যালুস, স্ট্যাটাসে তত মিল হবার সম্ভাবনা বেশি। আর এক রকম পরিবারে বড় হওয়া দুইটা মানুষের মধ্যে সংসার হলে কম্প্রোমাইজ কম করা লাগবে। এই জন্য উনি ছেলের পার্সনাল যোগ্যতা থেকে পরিবার, স্ট্যাটাস এইসবে গূরুত্ব দেন বেশি। মাহফুজ বলে তোমার ফুফুর কথায় যুক্তি একদম যে নেই তা না, তবে উনি এমন ভাবে সব কিছু যাচাই করছেন যেন এক স্ট্যাটাস, ব্যাকগ্রাউন্ডের হলে সংসার সুখের হবে। সিনথিয়া বলে আমিও তোমার সাথে একমত কিন্তু সমস্যা হল ফুফু কে বুঝানো। উনি রাজি না হলে আম্মু কে রাজি করানো কঠিন হবে। দুই জনের মধ্যে গলায় গলায় ভাব। আর আব্বুরা সব ভাই ফুফু কে খুব আদর করে একমাত্র বোন বলে তাই উনারাও ফুফুর কথা শুনে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে তাহলে আমাদের উপায় কি? হঠাত করে একদিনে তো আর আমার স্ট্যাটাসে উন্নতি ঘটবে না। সিনথিয়া বলে সেটাই সমস্যা। ফুফু এই প্রসংগে কথা উঠলেই নিজেকে দেখায়। বলে উনি দেখেশুনে প্রেম করে বিয়ে করেছিল বলে আজকে সুখে আছে। উনাদের বাচ্চা নেই। সেটা নিয়ে ফুফা কখনোই কোন কথা বলেন না, বরং কেউ কোন কথা বললে এই প্রসংগে উনি রাগ করেন। যদিও কিছু শারীরিক কারণে ফুফুর পক্ষে কনসিভ করা সম্ভব না তাও এইসব নিয়ে আরশাদ ফুফা কখনো একটা বাক্য বলেন না। উনার এই সাপোর্টিভ এটিচুডের কারণে ফুফু আর বেশি করে আরশাদ ফুফার গুণমুগ্ধ হয়ে আছেন। উনার মতে এক মন মানসিকতার হওয়ার কারণে নাকি ফুফা এত বুঝদার। অনেকেই যেখানে এইসব ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ চায় ফুফা সেখানে ফুফু কে আর বেশি করে সান্তনা দেয়। নুসাইবা ফুফু একদিন কাদতে কাদতে বলেছিল মা কে লোকটা কতটা ভাল চিন্তা কর, পরিস্থিতি উলটো হলে হয়ত আমিই ডিভোর্স দিতাম কিন্তু আরশাদ কখনো এই নিয়ে আমাকে একটা শব্দ পর্যন্ত বলে নি। মাহফুজ মেনে নেয় আরশাদ সাহেবের এই মানসিকতা একটা উদার মহান মনের পরিচয়। ভাবতে ভাবতে মাহফুজের মনে নুসাইবা কে ওদের বিয়ের ব্যাপারে রাজি করানোর একটাই উপায়। সেটা হল দেখানো এক ব্যাকগ্রাউন্ডের হলেই সংসারে সব ঠিক থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই আর ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের হলে সংসার অসুখী হবে সেটাও নিশ্চিত না।
ক
মাহফুজের এই কয় দিন মন বেশ ফুরফুরে। কয়দিন আগে আশুলিয়ার এমভি রুস্তমে সাবরিনার সাথে ওর কাটানো সময় যেন ওর মনে প্রভাব ফেলেছে। মন টা এই কয়দিন তাই উরু উরু। সাবরিনার সাথে সরাসরি দেখা হবার সময় কখনো ভাবে নি সাবরিনা কে এমন করে কাছে পাবে। নিজের উপর নিজের আত্মবিশ্বাস তাই একন তুংগে। সাবরিনার মত সুন্দরী কঠোর মেয়ে কে এমন করে কাছে পাওয়া কঠিন ব্যাপার তাই এমন সফলতার পর এতটুকু আত্মবিশ্বাস যথাযোগ্য বলে মাহফুজের মনে হচ্ছে। শুধু ওর মনের ভিতর একটা খচখচানি রয়ে গেছে। সেটার কারণে ঠিক আকাশে উড়তে পারছে না। সাবরিনার কাছে কীভাবে এখন সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্কের কথা বলবে? বললে সাবরিনা কীভাবে সেটা গ্রহণ করবে? আবার সিনথিয়া ওর সাথে ফোন সেক্স বা ওদের সেক্স সেশনে ওর বোন কে নিয়ে কথা বলে কিন্তু সেগুলো তো ফ্যান্টাসি, ডার্টি টক। তাই সিনথিয়া কে যদি বলে ওর ফ্যান্টাসি সত্যি হয়ে গেছে, ওর কোল্ড বিচ আপু কে মাহফুজ নিজের খেলার সংগী করেছে তাহলে সিনথিয়া কতটুকু ইজি হয়ে ব্যাপারটা গ্রহণ করতে পারবে?
তবে এই মূহুর্তে মাহফুজ ঠিক এগুলা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে চাচ্ছে না। আজকে একটু পরে নুসাইবা আর আরশাদ সাহেব আসবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাবে সরকারি চাকরি বিষয়ে কথা বলতে। মাহফুজ ব্যবস্থা করেছে এই আয়োজনের ক্যারিয়ার ক্লাব কে বলে। মাহফুজ জানে নুসাইবার সুনজরে থাকতে হলে এই আয়োজনের গুরুত্ব কতটুকু। মাহফুজ আগে থেকেই হাজির হয়ে গেছে। সব কিছু চেক করে দেখছে ঠিকঠাক আছে কিনা। ক্যারিয়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আরিফ আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। ভার্সিটির হলরুম টা ভাড়া নিয়েছে ওরা। প্রায় পাচশ লোক ধারণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ। দোতলায় আর একশ লোক বসতে পারে। তবে আজকে দোতলা খোলার পারমিশন পায় নি, তবে মনে হয় দরকার হবে না। অনুষ্ঠান শুরু হতে এখনো আধা ঘন্টা বাকি এর মাঝে প্রায় তিনশ সিটে লোক বসে গেছে। আজকাল সরকারি চাকরির প্রচুর দাম বিশেষ করে সরকারী বেতন স্কেল বাড়ার পর। তার উপর সেটা যদি বিসিএস বা বাংলাদেশ ব্যাংকের মত কিছু হয় তাহলে তো আর আকর্ষণ। তাই ভার্সিটির ছেলে মেয়েরা আসছে প্রচুর। আজকে শুক্রবার না হলে এত লোক হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। আর আরিফ বলল, ভাই আমরা ডিপার্টমেন্টে ডিপার্টমেন্টে পোস্টার লাগিয়েছি। মাহফুজ কিছু খরচ দিতে চেয়েছিল ওদের এই পোস্টারিং এর জন্য, তখন আরিফ বলল ভাই আমাদের ক্লাবের ফান্ডে কিছু টাকা আছে। আর আপনার কথা বলে বাংলাবাজারের বইয়ের দোকানগুলা থেকে কিছু টাকা পেয়েছি। মাহফুজ বুঝে চালু ছেলে। ওর কাছ থেকে টাকা নিলে অন্য খান থেকে টাকা চাওয়ার উপায় থাকবে না। তবে এখন পুরো অনুষ্ঠানের জন্য খবচ দশ হাজার হলে এতক্ষণে পঞ্চাশ হাজার তুলে ফেলেছে এই ছেলে। চল্লিশ হাজার লাভ। মাহফুজ কিছু বলে না। ওর কাজ করে দিচ্ছে সেটাই ওর দরকার। আজকাল সবাই টাকা খায় কিন্তু টাকা খেয়ে ঠিক মত কাজ কে করে দেয় সেটাই আসল ব্যাপার। কথা বলতে বলতে মাহফুজ দেখল ক্লাবের ভলান্টিয়াররা মঞ্চের পিছনে ব্যানার টানাচ্ছে। ইংরেজীতে করা ব্যানার। আজকাল ইংরেজীতে ব্যানার করলে লোকজন বেশি দাম দেয়, ক্যারিয়ার ক্লাবের ছেলেরা সেটা থেকে বের হতে পারে নি। ব্যানারে বড় করে লেখা ক্যারিয়ার ডিসকাশন। আর নিচে আরশাদ এবং নুসাইবার নাম লেখা। প্রত্যেকের নামের পাশে ছোট করে তাদের পদবী এবং চাকরির ক্ষেত্র লেখা। অবাক হল একদম নিচে ওর নিজের নাম দেখে। নিচে ছোট অক্ষরে লেখা স্পেশাল থ্যাংক্স টু সৈয়দ মাহফুজ। মাহফুজ ক্লাব প্রেসিডেন্ট আরিফ কে জিজ্ঞেস করল আমার নাম দিলে যে? আরিফ বলল ভাই আপনি হেল্প না করলে এই সেশন আয়োজন করা যেত না। একেকবার এক জন স্পীকার আনতে আমাদের যে পরিমাণ কাঠখড় পোড়াতে হয় সেখানে আজকে একসাথে দুইজন তাও প্রায় কোন পরিশ্রম না করে। তাই সামান্য এই ধন্যবাদটুকু না দিতে পারলে কেমন হয়। মনে মনে খুশি হয় মাহফুজ। ছেলে কীভাবে তেল দিতে হয় জানে। মাহফুজেও আজকে এই জিনিসটা খেয়াল রাখতে হবে। কিভাবে নুসাইবা আর আরশাদ কে তেল দেওয়া যায় তবে সুক্ষ ভাবে হতে হবে ব্যাপারটা।
অনুষ্ঠান শুরু হবে চারটায়। আর পনের মিনিট বাকি আছে। অডেটরিয়ামে আর লোক আসছে। আজকে বেশ অনেক লোক হবে। নুসাইবা আর আরশাদ টাইমের ব্যাপারে সচেতন। আরিফ তাই যখন জিজ্ঞেস করে গেস্টরা কি সময় মত আসতে পারবে? মাহফুজ তখন উত্তর দেয় উনারা দেরি করার মানুষ না। আরিফ বলে হ্যা আপনি অবশ্য ভাল বলতে পারবেন। মাহফুজ মনে মনে ভাবে নুসাইবা আর আরশাদের সাথে বাস্তবে মাত্র একবার দেখা হলেও ওদের অনেক কিছুই মাহফুজের জানা। সিনথিয়া ওর ফুফু সম্পর্কে এতবার এতকিছু বলেছে যেন নুসাইবার নাম শুনলেই সেই সব গল্প মনে পড়ে যায়। আর নুসাইবা যা বলেছে তাতে এটা স্পষ্ট নুসাইবা আর আরশাদ দুইজনেই খুব সময়নিষ্ঠ। এইসব ভাবতে ভাবতেই মাহফুজের মোবাইলে নুসাইবার কল। মাহফুজ কল রিসিভ করে সালাম দিতেই নুসাইবা জানতে চাইল কই আসতে হবে, ওদের গাড়ি জগন্নাথ ভার্সিটির মেইন গেইট দিয়ে ঢুকে ভিসি অফিসের সামনে অপেক্ষা করছে। মাহফুজ বলল আসছি একটু অপেক্ষা করুন। মাহফুজ আর ক্যারিয়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আরিফ দুইজন মিলে দৌড় দিল। গাড়ির কাছ থেকে রিসিভ করে দুইজনকে অডিটরিয়ামের দিকে নিয়ে যেতে থাকল।
নুসাইবা আর আরশাদ দুই জন অডেটরিয়ামে ঢুকেই একটু হতচকিত হয়ে গেল। পুরো অডিটরিয়াম ভর্তি মানুষ। নুসাইবা আর আরশাদ এত ভীড় আশা করে নি। ওদের ধারণা ছিল বড়জোর পঞ্চাশ ষাট জনের একটা গ্যাদারিং হবে। নিজেদের ভার্সিটি জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছে সাধারণত এইসব ক্লাবটাবে খুব একটা মেম্বার থাকে না। বড়জোর পঞ্চাশের কাছাকাছি কিছু হবে। তবে আরশাদ আর নুসাইবার ভার্সিটি জীবন শেষ হয়েছে প্রায় অনেক বছর, এতদিনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চাকরির জন্য ছেলে মেয়েরা আর সিরিয়াস ভার্সিটির সেকেন্ড থার্ড ইয়ার থেকেই। তার উপর বিসিএস আর বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে কথা বলবে দুই জন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাই শুনতে সবাই আগ্রহী। অডিটরিয়ামে ঢুকে প্রথমে নুসাইবা আর আরশাদ কে প্রথম সারিতে বসানো হল। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সবাই ধন্যবাদ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করল। নুসাইবা আর আরশাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে মঞ্চে আসার জন্য আহবান জানাল নুসাইবা আর আরশাদ কে। সাথে সাথে মঞ্চে আসার জন্য অনুরোধ করল ক্লাব প্রেসিডেন্ট আরিফ আর স্পেশাল গেস্ট মাহফুজ কে। মঞ্চে মাঝখানের দুই চেয়ারে বসল নুসাইবা আর আরশাদ। আর দুই পাশে বসল মাহফুজ আর আরিফ। মাহফুজ নুসাইবার পাশে আর আরিফ আরশাদের পাশে। মঞ্চে এসে বসার পর অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ঘোষণা করল ক্লাবের পক্ষ থেকে ক্লাবের দুইজন সদস্য গেস্ট স্পীকার দুইজনকে উত্তরীয় পরিয়ে দিবে। আয়োজকদের দক্ষতা আর প্রফেশনালিজম দেখে নুসাইবা আরশাদ দুইজনেই মুগ্ধ হল। নুসাইবা আরশাদ ছাত্র থাকাকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হয় নি, তখনো এটি একটি কলেজ। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ঢাকা বা জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হয়। এইসব কারণে নুসাইবা আর আরশাদের ধারণা খুব উচু ছিল না এই ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের নিয়ে। তাই অনুষ্ঠানের প্রফেশনালিজমে দুইজনেই খুব খুশি হল।
অনুষ্ঠানের ফরম্যাট উপস্থাপক সবার সুবিধার জন্য জানিয়ে দিল। দুই বক্তার প্রত্যকে আধা ঘন্টা করে করে স্পিচ দিবে। এরপর বাকি আধা ঘন্টা হবে প্রশ্ন উত্তর পর্ব। প্রথমেই উপস্থাপন আরশাদ সাহেব কে অনুরোধ করল ডায়াসে এসে বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস, ট্যাক্স ক্যাডার ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু বলার জন্য। আরশাদ ডায়াসে এসে ধন্যবাদ দিয়ে বক্তব্য শুরু করল। আরশাদ বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে চাকরির সুবিধা অসুবিধা নিয়ে কথা বলছে। মাহফুজ মঞ্চে বসে দর্শক সারিতে তাকাল। সবাই বেশ মনযোগ দিয়ে কথা শুনছে। এমনিতে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বা প্রোগ্রামের মঞ্চে বসে থাকতে হলে মাহফুজ সাধারণত মোবাইল বের করে ফেসবুক চালায় বা পেপার পড়ে। আজকে সে সুযোগ নেই। ওর ঠিক একদম পাশেই বসে আছে নুসাইবা। নুসাইবার কাছে নিজের ইমেজ বাড়ানোর জন্য এই প্রোগ্রাম তাই এখানে একদম অমনোযোগী দেখানোর কোন সুযোগ নেই। তাই মনযোগ দিয়ে আরশাদের কথা শোনার চেষ্টা করে। তবে মনযোগ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। এমনিতেই ছাত্র অবস্থায় সরকারী বেসরকারী কোন চাকরির প্রতি মাহফুজের খুব একটা আগ্রহ ছিল না। মাহফুজের আগ্রহের জায়গা বরাবর রাজনীতি আর ব্যবসা। তাই আরশাদ যখন বিসিএসের প্রস্তুতি, ক্যাডার সার্ভিসে ভাল বেতনের সাথে সাথে অনান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে কথা বলছে তখন মাহফুজের পক্ষে ঘুম আটকানো কঠিন হয়ে পড়ছে। ঘুমানোর উপায় নেই নুসাইবার পাশে বসে। নুসাইবা হালকা একটু বাকা হয়ে আরশাদের দিকে তাকিয়ে কথা শুনছে। মুখে একটা মুগ্ধ ভাব আছে।
নুসাইবাদের বিয়ের প্রায় পনের বছর হয়েছে। বিয়ের এত দিন পরেও স্বামীর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা খুব আনকমন ব্যাপার। সিনথিয়ার কাছে এতদিন শুনেছে নুসাইবার জামাই প্রীতির কথা। আজকে নুসাইবার চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি যেন সিনথিয়ার কথার স্বাক্ষী দিচ্ছে। সিনথিয়াদের বাড়িতে প্রথম প্রেমের বিয়ে হচ্ছে নুসাইবা আরশাদের বিয়ে। এমনকি ওদের এক্সটেনডেট ফ্যামিলিতেও নাকি এর আগে প্রেমের বিয়ের কোন নজির নেই। সেই বিয়ে নিয়েও নাকি কম হুজ্জুত হয় নি। কেউ রাজি ছিল না প্রথমে। এমন না যে আরশাদ খুব খারাপ ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার রেজাল্ট করা। নুসাইবা থেকে বছর তিনেকের বড়। তাই যখন ফ্যামিলিতে নুসাইবা ওর প্রেমের কথা বলেছিল ততদিনে আরশাদ বিসিএস ক্যাডার। এমনকি আরশাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডও ভাল। খালি একটাই অযোগ্যতা ছিল আরশাদের সেটা হল প্রেম করেছে। সেই সময় নাকি সিনথিয়া মা সাফিনা করিম একমাত্র তার ননদের পক্ষে ছিলেন শুরুতে। শ্বশুড় শ্বাশুড়ির কাছে খুব আদরের ছিলেন সাফিনা করিম। উনিই আস্তে আস্তে করে নুসাইবার মা-বাবা মানে সিনথিয়ার দাদা দাদী কে রাজি করান। সিনথিয়ার কাছে শুনে আমার মনে হয়েছে ওদের ফ্যামিলিতে প্রেমের ব্যাপারে সবচেয়ে কম কনজারভেটিভ সাফিনা করিম। মাহফুজের আশা সাবরিনা নুসাইবা রাজি হলে সাফিনা করিম কে রাজি করানো অত কঠিন হবে না।
আরশাদ তার বক্তব্য চালিয়ে যাচ্চেন। ক্যাডার সার্ভিসের চাকরি কতটুকু প্রেস্টিজিয়াস সেটা বর্ণনা করছেন। শুনে মাহফুজের একটু হাসি পেল। যে ছেলে মেয়ে গুলো এখানে কথা শুনতে এসেছে তারা ক্যাডার সার্ভিসের চাকরি কে স্বর্গের চাকরি মনে করে বলেই শুক্রবার ছুটির দিনের বিকাল বেলা প্রেম না করে বা আড্ডা না দিয়ে অডেটরিয়ামের এই আলো আধারিতে বক্তব্য শুনছে। এদের নতুন করে কনভিন্স করার আর কিছু নেই। কনভিন্সের প্রসংগ আসতেই মাহফুজের মনে পড়ল সিনথিয়ার সাথে কথপোকথনে একদিন ও জিজ্ঞেস করেছিল যদি নুসাইবা ফুফু প্রেম করে বিয়ে করে তাহলে তো আমাদের প্রেমের ক্ষেত্রে উনি বড় সাপোর্টার হওয়ার কথা। সিনথিয়া উত্তর দিয়েছিল, না। একদিকে তোমার কথা ঠিক আবার অন্য দিকে না। নুসাইবা ফুফুর প্রেম নিয়ে কোন আপত্তি নেই কিন্তু সেই প্রেম হতে হবে সমানে সমান। মাহফুজ বলেছিল আমার ভাল স্ট্যাবল বিজনেস আছে, ভাল ইনকাম করি। সেই অর্থে খারাপ কোন নেশা নেই। দেখতেও অত খারাপ না। তাহলে আমাকে কি তোমার যোগ্য ভাববে নুসাইবা ফুফু? সিনথিয়া উত্তর দিল, না। সিনথিয়া ফুফু আসলে স্ট্যাটাস ব্লাউন্ড। কালার ব্লাইন্ড যেমন শুনেছ ঠিক তেমন। কালার ব্লাইন্ডরা এক বা একাধিক কালার দেখতে পায় না। আমার ফুফু সেরকম প্রেম বা বিয়ের ক্ষেত্রে। উনি স্ট্যাটাস ব্লাইন্ড। ছেলদের ফ্যামিলি যদি আমাদের ফ্যামিলির সমকক্ষ না হয় তবে ছেলের আর বাদবাকি গুণ উনি চোখে দেখেন না। আপুর এক বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। ছেলে আপুর মত আইবিএ থেকে পাশ করা, কর্পোরেটে খুব ভাল পজিশনে চাকরি করে। দেখতেও হ্যান্ডসাম। কিন্তু ফুফু প্রথমেই না করে দিয়েছিল। উনার কথা ছিল দুই পরিবার সমকক্ষ না হলে সেই বিয়ে সুখের হয় না। ঐ ছেলের বাবা কোন এক সরকারি অফিসের ক্লার্ক ছিল, মা গৃহিনী। ছেলের সব যোগ্যতা ঐ এক জায়গায় এসে মার খেয়ে গেছে। দেখনা উনি আরশাদ ফুফার সাথে প্রেম করেছেন। ফুফার ফ্যামিলি একদম আমাদের সাথে খাপে খাপে মিলে যায়। তাই উনার আপত্তি প্রেমে না উনার আপত্তি ছেলের ফ্যামিলি নিয়ে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে তাহলে কি উনি মনে করেন তোমাদের স্ট্যাটাসের বাইরের সব ছেলে খারাপ, অযোগ্য। সিনথিয়া বলে সেটাও না। আপুর বিয়ের প্রস্তাবের সময় এটা নিয়ে কথা হয়েছিল। তখন উনি একটা কথাই বলেছিলেন। বিয়ে খালি দুইটা মানুষের হয় না সাথে দুইটা পরিবারের মিল হয়। তাই দুই পরিবার যত কাছের হয় ভ্যালুস, স্ট্যাটাসে তত মিল হবার সম্ভাবনা বেশি। আর এক রকম পরিবারে বড় হওয়া দুইটা মানুষের মধ্যে সংসার হলে কম্প্রোমাইজ কম করা লাগবে। এই জন্য উনি ছেলের পার্সনাল যোগ্যতা থেকে পরিবার, স্ট্যাটাস এইসবে গূরুত্ব দেন বেশি। মাহফুজ বলে তোমার ফুফুর কথায় যুক্তি একদম যে নেই তা না, তবে উনি এমন ভাবে সব কিছু যাচাই করছেন যেন এক স্ট্যাটাস, ব্যাকগ্রাউন্ডের হলে সংসার সুখের হবে। সিনথিয়া বলে আমিও তোমার সাথে একমত কিন্তু সমস্যা হল ফুফু কে বুঝানো। উনি রাজি না হলে আম্মু কে রাজি করানো কঠিন হবে। দুই জনের মধ্যে গলায় গলায় ভাব। আর আব্বুরা সব ভাই ফুফু কে খুব আদর করে একমাত্র বোন বলে তাই উনারাও ফুফুর কথা শুনে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে তাহলে আমাদের উপায় কি? হঠাত করে একদিনে তো আর আমার স্ট্যাটাসে উন্নতি ঘটবে না। সিনথিয়া বলে সেটাই সমস্যা। ফুফু এই প্রসংগে কথা উঠলেই নিজেকে দেখায়। বলে উনি দেখেশুনে প্রেম করে বিয়ে করেছিল বলে আজকে সুখে আছে। উনাদের বাচ্চা নেই। সেটা নিয়ে ফুফা কখনোই কোন কথা বলেন না, বরং কেউ কোন কথা বললে এই প্রসংগে উনি রাগ করেন। যদিও কিছু শারীরিক কারণে ফুফুর পক্ষে কনসিভ করা সম্ভব না তাও এইসব নিয়ে আরশাদ ফুফা কখনো একটা বাক্য বলেন না। উনার এই সাপোর্টিভ এটিচুডের কারণে ফুফু আর বেশি করে আরশাদ ফুফার গুণমুগ্ধ হয়ে আছেন। উনার মতে এক মন মানসিকতার হওয়ার কারণে নাকি ফুফা এত বুঝদার। অনেকেই যেখানে এইসব ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ চায় ফুফা সেখানে ফুফু কে আর বেশি করে সান্তনা দেয়। নুসাইবা ফুফু একদিন কাদতে কাদতে বলেছিল মা কে লোকটা কতটা ভাল চিন্তা কর, পরিস্থিতি উলটো হলে হয়ত আমিই ডিভোর্স দিতাম কিন্তু আরশাদ কখনো এই নিয়ে আমাকে একটা শব্দ পর্যন্ত বলে নি। মাহফুজ মেনে নেয় আরশাদ সাহেবের এই মানসিকতা একটা উদার মহান মনের পরিচয়। ভাবতে ভাবতে মাহফুজের মনে নুসাইবা কে ওদের বিয়ের ব্যাপারে রাজি করানোর একটাই উপায়। সেটা হল দেখানো এক ব্যাকগ্রাউন্ডের হলেই সংসারে সব ঠিক থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই আর ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের হলে সংসার অসুখী হবে সেটাও নিশ্চিত না।