Thread Rating:
  • 187 Vote(s) - 3.32 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩২ )


সাবরিনার কে আর ভালভাবে জানার জন্য মাহফুজের খুব বেশি দেরি করতে হল না। দুই দিন পরেই মাহফুজ একটা কাজে আবার সাবরিনাদের অফিসে যাওয়া লাগল। অফিসে কাজ শেষ হতেই সাবরিনার ফ্লোরে হাজির হল মাহফুজ। সব সময়ের মত সামিরা এসে ফ্ল্যার্টিং এ যোগ দিল। মাহফুজ জানে এইসব জায়গায় কি করতে হয় তাই পালটা ফ্লার্টিং এ কথা চালিয়ে গেল। অফিসের কাজ থাকায় সামিরা নিজে থেকেই একটু পর চলে গেল। আজকে মাহফুজ কে আসার সময় খেয়াল করে নি সাবরিনা। তাই যখন হঠাত করে মাহফুজ সাবরিনার টেবিলের সামনে এসে দাড়াল তখন চমকে গেল সাবরিনা। মাহফুজ কে একবার দেখেই আশেপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিল সাবরিনা। সাবরিনার মনের মাঝে তখন কাপুনি, ওর মনে হচ্ছে মাহফুজ কে ওর টেবিলের সামনে দেখলেই বুঝি অন্যরা জেনে যাবে ওদের মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনা। মাহফুজ দেখে ওকে দেখেই লাল হয়ে উঠেছে সাবরিনার গাল আর কপাল। মাহফুজ বুঝে ওকে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে গেছে সাবরিনা। এদিকে সাবরিনা ইতিউতি করে খালি চারপাশে তাকায় তবে কেউ ওদের দিকে তাকিয়ে নেই সবাই যার যার টেবিলে কাজে ব্যস্ত। দূরে দুইজন দাঁড়িয়ে কিছু নিয়ে কথা বলছে। অফিসের এসির ভিতর আর কোন তেমন শব্দ নেই। তবু সাবরিনার মনে হয় ওর হৃদকম্পন বুঝি অফিসের সবাই শুনতে পাচ্ছে আর সেই শব্দে বুঝি ফাস হয়ে যাচ্ছে মাহফুজ আর ওর সব গোমর। মাহফুজ কে এভাবে সামনে দেখে সাবরিনার মনে হয় খালি অফিস না মাহফুজ নিজেও বুঝি শুনছে ওর হৃদকম্পন। সাবরিনা ভেবে পায় না কি বলবে ঠিক এই মূহুর্তে। যে কাজের জন্য নিজের উপর, মাহফুজের উপর ঘৃণায় ভরে যাওয়ার কথা মন সেখানে ঠিক ঘৃণা নেই। সেই জায়গায় একটা কৌতুহল, উত্তেজনা যেন ভর করে আছে। ঐ রাতটা কি আসলেই ঘটেছে নাকি স্বপ্ন? মাহফুজ বলে, হ্যালো। সাবরিনা কোন রকমে চোখের দিকে না তাকিয়ে উত্তর দেয়, হাই। মাহফুজ আর দুই একটা কথা বলে কিন্তু সাবরিনা ওর চোখের দিকে না তাকিয়ে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।

মাহফুজের তখন সিনথিয়া আর সাবরিনার মাঝে মিল অমিল গুলো মনে পড়ে। সাবরিনার দূর্গে ফাটল মাহফুজ আবিষ্কার করেছে কিন্তু সেই ফাটল ধরে দূর্গ সম্পূর্ণ জয় করতে হলে আরেকটু পুশ করতে হবে। সিনথিয়া যেখানে অনেকখানে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছে সাবরিনা কে সেখানে ধরে আনতে হবে। তাই মাহফুজ ঠিক করে ওদের মাঝে থাকা সম্পর্কের সীমারেখাগুলো দুই দিন আগে এমনিতেই অনেক ভাংগনের মধ্য দিয়ে গেছে, তাই নতুন করে সেই সম্পর্কের সীমারেখা এখন ওকেই টানতে হবে। মাহফুজ তাই প্রশ্ন করে, খুব ব্যস্ত নাকি? সাবরিনা উত্তর দেয়, হ্যা একটু পর একটা মিটিং আছে। মিটিং এর আগে একটু ফাইল গুলো চেক করে নিতে হবে। মাহফুজ  বলে ওকে তাহলে আর ডিস্টার্ব করব না। মিটিং এর কাজ কর, পরে কথা হবে। সাবরিনা একটু হাফ ছাড়ে, আজকের মত তাহলে মাহফুজের সাথে মোলাকাত টা থামানো গেল। মাহফুজের সাবরিনার হাফ ছাড়াটা চোখে পড়ে। দক্ষ দাবাড়ুর মত তাই পর মূহুর্তেই চাল দেয়। জিজ্ঞেস করে কতক্ষণ চলবে মিটিং? সাবরিনা বলে ঠিক নেই। এইসব মিটিং কখনো কখনো তিন চার ঘন্টাও চলে। আর মিটিং শেষে সব কিছু আপডেট করতে করতে সময় লেগে যায়। আজকে পাচটায় অফিস ছুটির সময় মনে হয় বের হতে পারব না। দেরি হবে। মাহফুজ বলে ঠিকাছে তাহলে এখন মিটিং কর, বিকাল বেলা অফিস ছুটির পর কথা হবে। আমি নিচে অপেক্ষা করব। নিচে নেমে আমাকে একটা কল দিও।  সাবরিনা যেন এবার নিজের কথার ফাদে  নিজেই আটকা পড়ে যায়। বলে, আরে না না অনেক দেরি হতে পারে, রাত নয়টা দশটা বাজতে পারে। মাহফুজ বলে আমার প্রব্লেম নেই, আমি অপেক্ষা করব। নাহয় রাত দশটায় অফিস শেষ হলে গল্প করতে করতে তোমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসলাম। সাবরিনা আতকে উঠে মাহফুজের বাসায় পৌছে দেবার প্রস্তাবে। কি বলবে ভেবে পায় না। মাহফুজ নীরবতার সুযোগ নেয়, বলে তাহলে সে কথাই রইলো। যখন কাজ শেষ হবে তখন আমরা নিচে মিট করব। আমি নিচে অপেক্ষা করব। আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উলটা ঘুরে মাহফুজ চলে যায়।


মাহফুজ চলে যেতেই সাবরিনা টের পায় ও একটা ফাদে আটকা পড়েছে। মাহফুজ কে সরাসরি না করতে পারে নি আবার মানা করতে গিয়ে যে অযুহাত গুলো দিয়েছে মাহফুজ সব উড়িয়ে দিয়েছে এক কথায়, আমি অপেক্ষা করব। সাবরিনা বুঝতে পারে না ও কি করবে। একটু পর সত্যি সত্যি মিটিং আছে তবে এই মিটিং এক ঘন্টার বেশি হবে না সাবরিনা জানে। আর মিটিং এর পর অফিসের কাজ আপডেট করার পুরো ব্যাপারটা ছিল মাহফুজ কে এড়ানোর একটা অযুহাত। তাই ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারে না সাবরিনা। এইসব ভাবতে ভাবতে মিটিং এর সময় হয়ে যায়। মিটিং এ বসেও ঠিক মত মনযোগ দিতে পারে না। মিটিং এর মাঝেই সাবরিনার মনে হতে থাকে বৃষ্টির মাঝে কিভাবে মাহফুজের আদরের মুখে কোন বাধা দিতে পারে নি। কিভাবে মাহফুজ দক্ষ বাদকের মত বাজিয়েছে ওর শরীর বীণার মত। মিটিং এর মাঝেই এইসব ভেবে বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যেতে থাকে, লাল হয়ে যেতে থাকে মুখ। সাবরিনার মনে হয় সবাই বুঝি ওর মনের কথা পড়ে ফেলছে। চারিদিকে তাকায় সাবরিনা, কেউ মিটিং এ মনযোগ দিয়ে কথা শুনছে, কেউ মোবাইলে ব্যস্ত ওর দিকে নজর নেই কার। তবু ওর অস্থিরতা কমে না। মিটিং শেষে বুকের ধুকপুকানিতে দুপুরের খাবার টা ঠিক ভাবে খেতে পারে না। মনে হয় খাবার গলার কাছে বুঝি আটকে যাচ্ছে। বেশি টেনশনে থাকলে সাবরিনার এমন হয়। কাজে ঠিকমত মনযোগ দিতে পারে না। ফোনে ফেসবুক খুলে স্ক্রল করার চেষ্টা করে কিন্তু মাথার ভিতর কিছু ঢুকে না। অফিসের এসির ভিতর বসেও হাসফাস লাগে সাবরিনার।


এদিকে মাহফুজ নিজের পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভাবতে থাকে। মাহফুজ জানে সাবরিনা ওকে এড়ানোর জন্য মিটিং, অফিসের কাজ এইসব নিয়ে অযুহাত দিয়েছিল।তাই মাহফুজ ইচ্ছা করেই বলেছে যত দেরিই হোক অপেক্ষা করবে। সাবরিনার ভিতরের চাপা পড়া স্বত্তা টা  বের করে আনতে হলে মাহফুজ জানে আর বেশি করে সাবরিনা কে সত্যের মুখোমুখি করতে হবে। সাবরিনা যত বেশি নিজের ভিতরের অনুভূতির সাথে মুখোমুখি হবে তত বেশি ও  বুঝতে পারবে ওর মন কি চায়, ও নিজে কি চায়। একমাত্র তখন সাবরিনা কে নিয়ে মাহফুজের সন্দেহটা পরীক্ষা করা সহজ হবে। মাহফুজের গত দুই দিন ধরে মনে হচ্ছে সাবরিনার স্টোন কোল্ড বিচ ফেসের আড়ালে আর অনেক কিছু আড়াল হয়ে আছে। সাবরিনা হাসতে জানে, গল্প করতে জানে। আর মাহফুজের সন্দেহ ঠিক হলে সাবরিনা সেক্সের সময় পার্টনারের লিড নেওয়া পছন্দ করে।  তবে সাবরিনার ভিতর থাকা অনুগত বালিকা টা বের করে আনতে হলে সাবরিনা কে ওর নিজের ফিলিংস এর সামনে মুখোমুখি করতে হবে। আজকে তাই ইচ্ছা করেই সাবরিনার সাথে দেখা করার কথা বলেছে। তবে মাহফুজ জানে সাবরিনা নিশ্চিত ওর সাথে যাতে দেখা না করা লাগে তার জন্য একটা অযুহাত বের করবে। অযুহাতটা কী এটা জানা থাকলে পরের ধাপে কি করতে হবে সেটা প্ল্যান করতে সুবিধা হত। মাহফুজ তাই একটা বুদ্ধি বের করে। সিনথিয়া কে ফোন দেয়।

ঢাকার সাথে ইংল্যান্ডের সময়ের পার্থক্য পাচ ঘন্টা। ইংল্যান্ডের সময় ঢাকা থেকে পাচ ঘন্টা পিছনে। আড়াইটার দিকে তাই সিনথিয়া কে একটা কল দিল, ইংল্যান্ডের সময় এখন সকাল সাড়ে দশটা। এই সময় সিনথিয়া ক্যাম্পাসে থাকে। সাধারণত এই সময় মাহফুজ ফোন দেয় না তাই সিনথিয়া জরুরি কিছু ভেবে তাড়াহুড়া করে ফোন ধরল। সিনথিয়া জানতে চাইলে কি হল, কিছু ঘটেছে নাকি? মাহফুজ বলল নাহ তেমন কিছু না। একটু আগে তোমার আপুর সাথে ওর অফিসে দেখা হল তাই ফোন দিলাম। এমন কোন জরুরী খবর না শুনে সিনথিয়া একটু হাফ ছেড়ে ছিল, এখন মাহফুজের মুখে ওর আপুর কথা শুনে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসল। বলল, কি ব্যাপার আজকে শুনি। অন্যদিন আমি আপুর প্রসংগ তুললেই তুমি এড়িয়ে যাও আজকে নিজে থেকেই বলছ। অবশেষে কি আপুর প্রেমে পড়ে গেলে নাকি? মাহফুজ হেসে বলে তোমার দুষ্টমি করার স্বভাব আর গেল না। সিনথিয়া বলল কেন আমার আপু কি দেখতে খারাপ নাকি? মাহফুজ বলল নাহ, তবে তুমি বেশি সুন্দরী। সিনথিয়ার বলে তুমি আসলেই মেয়ে পটাতে ওস্তাদ। আপু যে এখনো তোমার কথায় পটে যায় নি এটাই বেশি। মাহফুজ একটু চমকে উঠে আবার পর মূহুর্তে সামলে নেয়। বল, তোমার মত হট পটাকা থাকলে আর কোথাও কি মন যায়। সিনথিয়া বলে আরে আমাদের করিম ফ্যামিলির সবাই পটাকা। আপু হল ঘুমন্ত বোম। ভাল করে আপু কে না বুঝলে তুমি বুঝবে না। মাহফুজ প্রশ্ন করে ঘুমন্ত বোমা মানে আবার কি? সিনথিয়া বলে আরে ঘুমন্ত বোমা মানে হল যে নিজেই জানে না সে বোমা। মাহফুজ মনে মনে সিনথিয়ার সাথে একমত হয়। সিনথিয়া বলে তা আপুর কি কথা বলার জন্য ফোন দিলে? আপু কে আজকে খুব হট লাগছিল? আপুকে দেখে কি একদম হট হয়ে গেছ? বড় বোন কে না পেয়ে ছোট বোন কে ফোন দিয়েছ? তুমি একটা ডার্টি ডগ। মাহফুজ বলে তোমার কথা ঠিক আছে তবে একটু ছাড়া। সিনথিয়া বলে কোন জায়গা ছাড়া শুনি? মাহফুজ বলে আমি ফোন দিয়েছি কারণ আজকে তোমার আপুর সাথে কথা বলে মনে হল একটু আপসেট, কেমন অন্যমনষ্ক মনে হল। কিছু হয়েছে নাকি জান তুমি? সিনথিয়া বলে নাহ বাসায় কিছু হলে আমি জানতাম। অফিসের কিছু হয়ত। মাঝখানে একদিন বলছিল অফিসের পলিটিক্সে ও দারুণ বিরক্ত। অবশ্য তুমি আপু কে খুব হেল্প করেছ নাহলে অফিসের পলিটিক্সে আর নাজেহাল হতে হত। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আমার কথা কি বলেছে? সিনথিয়া বলে ওরে নিজের কথা জানার কি শখ। তেমন কিছু না আসলে, বলেছে একটা ছেলে কে অফিসের কনসালটেন্ট হিসেবে আমাকে হেল্প করছে, ওর জন্য অনেক কিছু খুব সহজ হয়ে গেছে। জান আপুর এই কথা শুনে আমার না খুব ভাল লেগেছিল। যেই ছেলে কে একদম উড়িয়ে দিয়েছিল কিছু না শুনেই সেই ছেলের কাছ থেকেই হেল্প নিচ্ছে আর প্রশংসা করছে। আর ছেলেটা যে আমার জান এইটা তো আপু এখনো বুঝতে পারে নি। যেদিন বুঝতে পারবে সেদিন আপুর মুখের কি অবস্থা হবে ভাবতেই আমার মজা লাগছে। মাহফুজ মনে মনে সায় দেয়, সেদিন আসলেই কি হবে কে জানে। তবে কথা এবার আসল প্রসংগে নিয়ে যায়। তোমার আপু কে একটা ফোন দিয়ে দেখ, মনে হল ভাল টেনশনে আছে, খানিকটা ডিপ্রেসড। সিনথিয়া বলে তুমি সিরিয়াস? মাহফুজ বলে আরে সিরিয়াস না হলে কি তোমাকে বলি। হাজার হলেও বউ এর বড় বোন। মুখে যাই বলুক বোনের উপর দরদ আছে সিনথিয়ার। তাই বলে আচ্ছা দাড়াও আপু কে একটা ফোন দিয়ে দেখি।

হঠাত করে এই দুপুর বেলা সিনথিয়ার ফোন দেখে অবাক হল সাবরিনা। সাধারণত এই সময় ফোন দেয় না সিনথিয়া। ইংল্যান্ডে এখন সকাল, সিনথিয়ার ক্লাস বা লাইব্রেরিতে থাকার কথা। ফোন ধরেই তাই সাবরিনা বলল কিরে সব ঠিক তো? সিনথিয়া বলল হ্যা সব ঠিক, সব ঠিক না থাকলে কি আর বড় বোন কে ফোন দেওয়া যাবে না? সাবরিনা হাসল। সিনথিয়ার কথায় সব সময় একটু ঝাজ থাকে, বলল, হ্যা ফোন দিবি না কেন অবশ্যই দিবি। তা কি করছিস এখন? এইভাবে সাবরিনা আর সিনথিয়ার কথা চলতে থাকল নিজেদের নিয়ে, বাবা-মা আর পরিচিত জনদের নিয়ে। বিলাতে সিনথিয়া সাবরিনার দুই চাচা থাকে। ছুটির দিনগুলোতে সিনথিয়া চাচাদের বাসায় যায়। টিএনএজার কাজিনদের কাছে সিনথিয়া রীতিমত হিরো। কাজিন, চাচা-চাচীদের প্রসংগে কথা হল। সিনথিয়া আসলে বোনের মেজাজ মর্জি বুঝার চেষ্টা করছে তাই বিভিন্ন প্রসংগ তুলে দেখছে সাবরিনা কিভাবে রিএক্ট করে। সিনথিয়ার মনে হল সাবরিনা বুঝি একটু অন্যমনস্ক। বেশির ভাগ কথায় অন্যমনস্ক ভাবে হু, হা করছে। আসলে সাবরিনা তখন মাহফুজের ব্যাপারে ভাবনায় ব্যস্ত। মাহফুজ কে নিয়ে নিজের ভিতর দ্বন্দ্ব যেন আর ঘোলা করে ফেলেছে পরিস্থিতি। সাবরিনা জানে মাহফুজ কে একদম দূরে সরিয়ে দেওয়া দরকার কিন্তু পারছে না। ওর মনে হচ্ছে মাহফুজ যেন অজানা এক স্বপ্ন রাজ্যের চাবিকাঠি নিয়ে হাজির হয়েছে, সেই রাজ্য না দেখে যেন কোন ভাবেই মাহফুজ কে অগ্রাহ্য করতে পারছে না। এইসব ভাবনা নিয়ে থাকায় সিনথিয়ার সব কথায় মনযোগ দিতে পারছে না। প্রয়োজন মত তাই হু, হা করছে। সিনথিয়া প্রশ্ন করে, তুই কি কিছু নিয়ে চিন্তিত? সাবরিনা বলে এই কিছু না, অফিসের কিছু ঝামেলা। সিনথিয়া জিজ্ঞস করে, আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস। সাবরিনা বলে আসলে শেয়ার করার মত তেমন কিছু না, অফিসের একটা ব্যাপার নিয়ে একজনের সাথে কিভাবে রেন্সপন্স করব সেটা বুঝতে পারছি না। সিনথিয়া বলে যদি তোর সমস্যা না থাকে তাহলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস। আমাদের দুই জনের মধ্যে আমি বেশি পিপলস পার্সন, লোকদের হাবভাব, মতিগতি আমি ভাল বুঝি। সাবরিনা হেসে বলে সেটা তো জানি। সিনথিয়া বলে তাহলে আমাকে বলে ফেল সমস্যা টা কি, দেখি আমি তোকে কোন বুদ্ধি দিতে পারি কিনা।

সবারিনা মনে মনে ভাবে আসলে কতটুকু বলা সম্ভব সিনথিয়া কে। সোয়ারিঘাটের ঘটনা, কনসার্টের তাবু, লালবাগ কেল্লার সেই ঝড়ের সন্ধ্যা রাত। কোন কিছুই বলা সম্ভব না। আবার ওর স্বপ্নে মাহফুজের আনাগোনা সেটাও কি বলা যায়? এতদিন ধরে বড় বোন হিসেবে সিনথিয়া কে এত উপদেশ দেওয়ার পর এখন বলা সম্ভব না প্রায় রাতে ওর স্বপ্নে একজন এসে হাজির হয় যে ওর হাজব্যান্ড না, স্বপ্নে যেভাবে ওর শরীর নিয়ে মাহফুজ খেলে সেটা কি বলা সম্ভব? একদম না। খালি কি স্বপ্নে, কনসার্টের রাতে বা লালবাগ কেল্লায় যেভাবে সাবরিনা মাহফুজের কাছে আত্মসমপর্ন করেছে সেটার ব্যাখ্যা কি সাবরিনা নিজেও জানে না। আর এই কথা কি ছোট বোনের সাথে শেয়ার করা যায় নাকি শেয়ার করা উচতি? সাবরিনার মনের ভিতর সাবধানী অংশ বলে অবশ্যই না। আবার এই কিছুদিন ধরে মাহফুজের প্রতি ওর ক্রমাগত দূর্বল হওয়া, একের পর এক ঘটনায় মাহফুজের ওর শরীরের উপর একটু একটু করে দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এইসব কাউকে বলতে না পেরে মনে হচ্ছে বুক ফেটে যাচ্ছে প্রেসারে। কোন বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে পারছে না, বাবা-মায়ের সাথে এইসব ব্যাপারে কথা বলা সম্ভব না। সাদমান ওর হাজব্যান্ড, কাগজে কলমে রক্তের সম্পর্কের পর ওর সাথেই সাবরিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথা কিন্তু সাবরিনা জানে এমন কথা কোন ভাবেই নিজের বরের সাথে শেয়ার করা যায় না। বরং সাদমান কে আজকাল দেখলেই মনের ভিতর পাপবোধ, ধরা পড়ার ভয় বা লুকিয়ে কিছু করে পার পেয়ে যাবার উত্তেজনা সব একসাথে হতে থাকে। অসহ্য একটা পরিস্থিতি। আজকে তাই সিনথিয়া যখন বলছে শেয়ার করতে তখন সাবরিনার মনে হয় কিছুটা হলেও ওর হালকা হওয়া দরকার, মনের ভিতরের কথা গুলো শেয়ার করা দরকার। নাহলে এই কথা লুকিয়ে রাখার দুশ্চিন্তায় আস্তে আস্তে যেভাবে ওর উপর পড়ছে তাতে ও আর খিটখিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় সাদমান কে অহেতুক একবার বকা দিয়েছে আবার পরের মূহুর্তে গিল্ট ফিলিংসে সাদমানের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করেছে। সাদমান একদম পাজলড হয়ে গেছে। একবার রণমূর্তি আরেকবার একদম মাতা মেরির মত শান্ত রূপে সাবরিনা কে দেখে। সাবরিনার ভয় কার কাছে কিছু অল্প হলেও যদি শেয়ার না করতে পারে তাহলে হয়ত নিজেই একদিন চিতকার করে সারা পৃথিবী কে মাহফুজের কথা বলে দিবে ও। তবে আসল সত্য টা বলা যাবে না বরং রূপক আকারে বলতে হবে, এতেও যদি বুকের ভার কিছুটা কমে।

সাবরিনা বলে আসলে ব্যাপারটা অফিসের একটা প্রজেক্ট নিয়ে। তুই তো জানিস আমি কাজের ব্যাপারে কত সিরিয়াস, সব সময় নিয়ম মেনে সময় মত কাজ করার আমার অভ্যাস। এইবার অফিসে একটা নতুন প্রজেক্টে একজন নতুন লোক কে নেওয়া হল আমাকে হেল্প করার জন্য। সিনথিয়া মাঝখানে জিজ্ঞেস করে, লোকটার নাম কি? সাবরিনা বলে নাম জেনে কি আর করবি, চিনবি তো না। সিনথিয়া বলে তাও ঠিক, যাই হোক তোর ঘটনা টা বল আগে। সাবরিনা বলে লোকটা কে আমি প্রথমে একটু আন্ডারএস্টিমেট করেছিলাম ভেবেছিলাম কাজে তেমন দক্ষ হবে না কিন্তু লোকটা একের পর এক আমাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। আমি যেভাবে কাজ করি বা বিভিন্ন জিনিস কে যে দৃষ্টিতে দেখি এই লোকের দেখার ভংগী সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি যেখানে নিয়ম মেনে কাজ করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী সেখানে এই লোক কিভাবে রেজাল্ট পাওয়া যাবে সেই ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। আমি যেখানে সতর্ক হয়ে সব কিছু নিশ্চিত হয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে চাই সেখানে এই লোক অনেক বেশি রিস্ক নিতে আগ্রহী। আমি লোকটার সাথে পরে কোন প্রজেক্টে কাজ করব কিনা সেটা নিয়েই আসলে ভাবছিলাম। সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলল তুই যদি বিবাহিত না হতিস অথবা যদি তোকে আমি আগে থেকে না চিনতাম তাহলে ভাবতাম তুই এই লোকের প্রেমে পড়ছিস। যেভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে চরিত্র বর্ণনা করলি। সাবরিনা একদম চমকে যায়, কিভাবে ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে বলা অল্প কিছু কথা থেকে সিনথিয়া এত বড় একটা সিদ্ধান্তে পৌছে যাচ্ছে। নিজেকে নিয়েই নিজে আর সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়ে সাবরিনা, আসলেই কি মাহফুজের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে ও। সিনথিয়া বলে তুই যা বললি তাতে মনে হচ্ছে তোর এই কলিগ তোর বিপরীত রাস্তায় হাটতে পছন্দ করে। তবে হাইলি ইফিসিয়েন্ট লোক। এখন তোর মূল অভিযোগ টা আসলে কি? সাবরিনা বলে আসলে লোকটা কাজে দক্ষ, আমার বিপরীতি পন্থায় কাজ করলেও রেজাল্ট বের করতে পারে কিন্তু আমি কি পরে এই লোকের সাথে নতুন করে কাজ করব কিনা সেটা ভাবছি। এই লোকের কাজের পন্থার অনেক কিছু আমার সাথে ঠিক যায় না। সিনথিয়া বলে তুই সব সময়ের মত বড় বেশি রিজিড হয়ে আছিস। একটা কাজ করার হাজারটা রাস্তা আছে, সবাই কে যে তোর রাস্তা ধরে চলতে হবে তা তো ঠিক না। তুই যে রেজাল্ট চাস লোকটা সে রেজাল্ট আনতে পারলে সাথে কাজ করতে আমি কোন সমস্যা দেখি না। সাবরিনা ভাবে আসলে ও কি রেজাল্ট চায়? সবসময় সাবরিনা একজন এমন পার্টনার চেয়েছে যে স্বতস্ফূর্ত ভাবে সব কাজ করবে, ওর নিজের মাঝে যে স্বতস্ফূর্ততার ঘাটতি আছে সেটা পূরণ করবে। সাবরিনার কাছে আদর্শ জুটির সংজ্ঞা হচ্ছে যখন দুই পার্টনার পরষ্পরের ঘাটতিটুকু পুষিয়ে দিতে পারে। সে হিসাব করলে মাহফুজ আদর্শ। সাবরিনা যেখানে বড় বেশি চিন্তা করে, সতর্ক প্রতিটা কাজে মাহফুজ সেখানে অনেক বেশি মনের কথায় চলে। সিনথিয়া অন্যদিকে বলে চলছে, আপু শোন কিছুটা সময় একটু রাশ ছেড়ে দিতে হয় জীবনে। তাহলে দেখবি অনেক ভাল থাকতে পারবি। সব সময় কি হবে আর কি হবে না এই নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে সারাজীবন দুশ্চিন্তার এক চক্করে পড়ে যাবি। ভেবে দেখ তুই আসলে কি চাস কাজের ক্ষেত্রে? রেজাল্ট নাকি নিয়ম মেনে চলা? তবে আমার পরামর্শ চাইলে আমি বলব এইবার তোর সব সময়ের মত নিয়ম মেনে চলা পথ ছেড়ে একটু অন্য পথে হাট। আর তুই কিছুদিন আগে বলছিলি তোর অফিসের পলিটিক্সে তুই পিছিয়ে আছিস। তোর এই নতুন কলিগের সাথে কাজ করে যদি তুই ফটাফট কিছু ভাল রেজাল্ট পাস তাহলে সেটা তোকে অফিসের পলিটিক্সে  হেল্প করবে। সাবরিনা গভীর ভাবে সিনথিয়ার কথা গুলো ভাবে। আসলেই কি নিজের রাশ ছেড়ে হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেখা উচিত মাহফুজ ওকে কোথায় নিয়ে যায়? সিনথিয়া তখন বলে, তুই একটা কাজ করতে পারিস, আমি মাঝে মাঝে করি যদি কোন কিছু নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পড়ি। সাবরিনা বলে সেটা কি শুনি। সিনথিয়া বলে তুই অফিস থেকে আগে আগে বের হয়ে যা, নিজের মত করে কিছু সময় কাটা। পার্কে গিয়ে হাট। প্রিয় কোন দোকানে গিয়ে নিজের পছন্দের খাবার খা অথবা সিনেমা হলে গিয়ে কোন একটা মুভি দেখ। আসল কথা মনের ইচ্ছা মত যা খুশি কর। এরপর দিন শেষে ভাব তুই কি চাস। খুব বেশি ভাববি না, প্রথমেই মনে যা আসবে আসলে সেটাই তোর মন সেটা চায়। সেটাই কর, দেখবি অনেক শান্তি লাগবে। সাবরিনা ভাবে সিনথিয়ার বুদ্ধি টা খারাপ না। একদিকে নিজের সাথে নিজের এক রকম একটা ডেটিং হবে আবার অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলে মাহফুজের সাথে এই মূহুর্তে দেখা হবার চান্স থাকবে না। এক ঢিলে দুই পাখি। এই একা একা ঘোরাঘুরিতে যদি মনের ভিতর সব দ্বিধা গুলোর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসা যায়। সাবরিনা তাই বলে তোর কথা শুনব আজকে। অফিস থেকে আগে আগে চারটার দিকে বের হয়ে যাব, এরপর ইচ্ছামত ঘোরাঘুরি করে ঠিক করব কি করতে চাই আমি। সিনথিয়া বলে দ্যাটস গুড গার্ল। সাবরিনার গুড গার্ল শব্দটা শুনে মাহফুজের কথা মনে পড়ে আবার। মাহফুজ এই শব্দটা বিশেষ বিশেষ সময়ে ব্যবহার করে। ভাবতেই গা শিরশির করে উঠে সাবরিনার। আসলেই ওর মাথাটা ক্লিয়ার করা দরকার।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ১৫) - by কাদের - 25-05-2023, 12:04 AM



Users browsing this thread: Chengiskhan100, 18 Guest(s)