25-05-2023, 12:01 AM
(This post was last modified: 25-05-2023, 12:02 AM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আপডেট ১৬
ক
সোলায়মান শেখ ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চে আছেন বহু বছর। আর এই চাকরি জীবনের বড় একটা অংশ কাটিয়েছেন ডিবিতে। শুরুতে ডিবিতে পোস্টিং নিয়েছিলেন রাস্তায় রাস্তায় পেট্রোল ডিউটি দিতে হবে না এই ভেবে। তবে একবার ডিবিতে কাজ শুরু করার পর টের পেলেন তার এই কাজে ভাল দক্ষতা আছে। এলোমেলো কতগুলো তথ্য কে সাজিয়ে একটা উপসংহারে পৌছানোর ব্যাপারে তার দক্ষতা ভাল। এমন কি তার বসেরাও টের পেল সোলায়মান শেখের এই প্রতিভা। তাই বছরের পর বছর ধরে এই ডিবিতে। এত বছরের চাকরি জীবনে একদম ধোয়া তুলসি পাতা নন সোলায়মান শেখ। অনেক সময় অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করেন, বসেরা বললে অনেক জায়গায় তদন্ত থামিয়ে দেন। তবে তার একটা ব্যাপার হল সরাসরি অফিসের কাজে কোন ঘুষ খান না। তাই বলে তার ইনকাম খারাপ না। সোলায়মান শেখ তার পুলিশ জীবনে শেখা দক্ষতা গুলোর জন্য আলাদা একটা মার্কেট খুজে পেয়েছেন। ক্ষমতাশালী এবং টাকাওয়ালা লোকদের মাঝে মাঝে অনেক তথ্য দরকার হয় যেটা তারা সরাসরি যোগাড় করতে পারেন না, সেখানে ডাক পড়ে সোলায়মান শেখের। আপনার প্রতিপক্ষের গতিবিধি নজরদারি করে বলতে হবে কার কাছ থেকে আসলে ব্যাকিং পাচ্ছে সে? অথবা আপনার স্ত্রীর কোন গোপন প্রণয় আছে কীনা? আপনার বিজনেস পার্টনার হিসেবে নতুন যাকে নিতে চাচ্ছেন তার কোন খারাপ অভ্যাস আছে কিনা? উপযুক্ত মূল্যের বিনিময়ে এইসব খবর যোগাড় করে দেওয়া সোলায়মান শেখের কাজ। একদিকে অনেক টাকা ইনকাম হয় অন্যদিকে সত্যিকারের ডিটেকটিভ কাজের মজা পাওয়া যায়। ডিবিতে বেশির ভাগ কেস তদন্ত করতে গেলে নানামুখী প্রেশারে সেটা আর সত্যিকারের ডিটেক্টিভ কেস থাকে না, হয়ে যায় বড় সাহেবদের পলিটিক্যাল লক্ষ্য অর্জনের ঘুটি। মাহফুজের কাজটা সোলায়মান শেখ নিয়েছিলেন জাস্ট মাহফুজের পরিবারের প্রতি একটা কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে, এছাড়া মাহফুজের সাথে কথা বলে মনে হয়েছিল এই ছেলে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে যাচ্ছে। তাই একটা হালকা পাতলা কাজে হেল্প করলে এটা দিয়ে ভবিষ্যতের একটা ভাল রিলেশন হবার সম্ভাবনা থাকবে। তবে আরশাদ সাহেবের পিছনে গত কয়েকদিন ধরে ছুটতে গিয়ে সোলায়মান শেখ একটা উত্তেজনা বোধ করছেন। যেসব কেসে আসল রহস্য থাকে সেখানে কাজ করেও মজা। খালি টাকা দিয়ে কি আর জীবনে মজা হয়।
আরশাদ সাহেবের কেসটা ইন্টারেস্টিং। প্রথম যখন হাতে নিল তখন প্রথম দুই দিন তথ্য নেবার সময় সবার কথায় মনে হল আরশাদ সাহেব নিরিহ নির্বিরোধী প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা। তাও মনের ভিতর মনে হচ্ছিল আরেকটু খতিয়ে দেখা দরকার। তবে যেই মাত্র আরশাদ সাহেব কে উত্তরা রেস্ট হাউজে ঢুকতে দেখলেন সেই মূহুর্তে সোলায়মান শেখ বুঝতে পারল আরশাদ সাহেব একদম সহজ কোন মাল না। আর কয়েকদিন টানা ফলো করার পর সোলায়মান শেখ একটা প্যাটার্ন পেল আরশাদ সাহেবের। অফিস ছুটির পর নিয়মিত উত্তরা রেস্টহাউজে যান না আরশাদ সাহেব। প্রতি দুই বা তিনদিন পর হঠাত হঠাত যান এবং ভিতরে কতক্ষণ থাকেন তার কোন নিয়ম নেই। কোন দিন এক ঘন্টার মধ্যে বের হয়ে আসছেন আবার কোন দিন চার ঘন্টা ভিতরে কাটিয়ে দিচ্ছেন। যেহেতু ভিতরে ঢোকা সোলায়মান শেখের জন্য সম্ভব না তাই পুরাতন এক সোর্সের সহায়তা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই তার। আকবর ছেলেটা এই রেস্ট হাউজের কার্ড সার্ভারের কাজ করে। এক সময় একটা মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে হেল্প করেছিলেন। তখন থেকে এই ছেলেটার কে মাঝে মধ্যে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন। আকবর কে হাতে পেতে সোলায়মান শেখের কয়েকদিন লাগল। আকবর কে আরশাদ সাহেবের ছবি দেখাতেই বলল স্যার কে চেহারায় চিনি। খেলা শেষে ভাল টিপস দেয় তবে নাম জানি না। এর বেশি কিছু আপাতত জানাতে ব্যর্থ হল আকবর। তবে কথা দিল আগামী কিছুদিন আরশাদ সাহেবের উপর ভাল করে নজর রাখবে। কি খেলে, কতটাকা বাজি ধরে, কার সাথে কথা বলে এইসব।
আরশাদ সাহেব কে উত্তরা রেস্টহাউজে ঢুকতে দেখে সোলায়মান শেখ একটা কথা বুঝে গেছে লোকে যত সৎ বলুক না কেন আরশাদ সাহেব ঘুষ খান। শুধুমাত্র সরকারি চাকরির বেতনের টাকায় এখানে একরাতেও টিকতে পারবে না কেউ, তা সে যত বড় সরকারি অফিসার হোক না কেন। এখন তাই সোলায়মান শেখের কাজটা হবে কীভাবে এই টাকার আদান প্রদান হয় সে খোজ বের করা। আরশাদ সাহেব ঘুষ খাওয়ার পরেও এতদিন যে ক্লিন ইমেজ ধরে রেখেছে তাই ঘুষের খবর সহজে বের করা যাবে না এটা সোলায়মান শেখ নিশ্চিত। তবে এত সহজে যদি সব জানা হয়ে যায় তাহলে এইসব গোয়ান্দিগিরির কাজে মজাটা আর কই?
খ
সাবরিনার মনের ভিতর কি চলছে সাবরিনা নিজেই নিশ্চিত না। গত পরশু রাতে বৃষ্টির মাঝে লালবাগ কেল্লার মাঝে যা ঘটে গেল সেটা কি আসলেই ঘটল নাকি ওর স্বপ্ন? এত বড় একটা ঘটনার পর মনের ভিতর যে গিল্ট ফিলিংস আসার কথা সেটা কেন জানি আসছে না। মনের ভিতর বরং প্রথম প্রেমে পড়ার মত উড়ু উড়ু ভাব। সেই রাতে দশটার দিকে যখন বাসায় ফিরে আসে তখন ভিজে একবারে চুপচুপে হয়ে আছে ও। সাদমান কে এর মাঝে মেসেজ পাঠিয়ে রেখেছিল বাসায় আসতে একটু লেট হবে। ভিজে একদম চুপচুপে হয়ে যাওয়া সাবরিনা কে বাসায় ঢুকতে দেখে সাদমান যখন জিজ্ঞেস করল এই অবস্থা কিভাবে হল সাবরিনা উত্তর দিল ফিল্ডওয়ার্ক করতে গিয়ে বৃষ্টির পাল্লায় পড়েছিল। আশেপাশে আশ্রয় নেওয়ার মত তেমন কিছু না থাকায় এই অবস্থা। সাদমান বলল তাড়াতাড়ি কাপড় পালটে নাও নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে। সাবরিনা কোন ভাবে দ্রুত সাদমানের সামনে থেকে সরে পড়ল।। সাবরিনার বুক তখন ঢিপ ঢিপ করছে। এইভাবে তেমন কোন পালটা প্রশ্ন ছাড়া সাদমানের সামনে থেকে সরে আসতে পারায় সাবরিনা একটু হাফ ছেড়ে বাচল। ওর মনে হল এ যেন একদম কলেজ গার্লদের প্রেমের মত অবস্থা। বয়ফ্রেন্ডের সাথে সময় কাটিয়ে বাসায় আসার পর বাবা-মা কে একটা ভুজুং ভাজুং উত্তর দিয়ে দ্রুত সরে পড়া আর বাবা-মা ভাবছে মেয়ে বুঝি বড় সমজদার। সাদমানের কাছে এই প্রথম কিছু লুকাচ্ছে এমন না। তবে অন্যবার লুকানোর সময় যে গিল্ট ফিলিংস কাজ করেছে এইবার যেন সেখানে একরকম ছেলেমানুষী উত্তেজনা। এক রাতের মাঝে কি মাহফুজ অনেক কিছু পালটে দিল?
অন্যদিকে মাহফুজের সেই রাতে মনে একটা প্রশান্তি কাজ করল। অনেক দিন ধরে চেষ্টার পর কোন লক্ষ্য অর্জন করলে মনে যেমন একটা ফুরফুরে ভাব আসে অনেকটা সেরকম। মাহফুজ নিজেও ভাবতে পারে নি আজকে কিছু হবে, আসলে কিছু করবার মত প্ল্যান ছিল না ওর মনে। ওর লক্ষ্য ছিল খালি সাবরিনা কে আজকে কনফ্রন্ট করা আর দেখা ওর প্রতিক্রিয়া কি হয়। তবে লালবাগ কেল্লার ভিতর সাবরিনার ঐরকম মন খুলে অনেক কিছু স্বীকার করা, বৃষ্টি আর আজিমের কাছ থেকে রুমের চাবি পাওয়া সব মিলে অপ্রত্যাশিত একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল মাহফুজের জন্য। আর রাজনীতির মাঠে অনেকদিন থাকার কারণে মাহফুজ জানে একবার সুযোগ পেলে সে সুযোগ সংগে সংগে কাজে লাগাতে হয় কারণ পরের সুযোগ কবে আসে বা আদৌ আসে কিনা সেটা কখনো নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। মাহফুজ তাই অনেকটাই হঠাত পাওয়া সুযোগ কে কাজে লাগাতে ভুল করে নি।। আর একবার শুরু করার পর মাহফুজ যেন অটো-পাইলট মোডে চলে গিয়েছিল। সাবরিনার ভিতর একটা নেশাময় ব্যাপার আছে। বৃষ্টিতে ভেজা সাবরিনার মাথা মুছতে মুছতে যখন ওর কপালে চুমু দিল ঠিক তারপর যেন একটা গোপন সুইচে চাপ পড়ে গিয়েছিল। মাহফুজ অটো পাইলট মুডে একের পর এক করে গেছে। মাহফুজ চিন্তা করে দেখে সাবরিনাও যেন অনেকটা ঘোরে ছিল। হালকা প্রতিবাদ করলেও মাহফুজের সামনে টিকতে পারে নি। সিনথিয়ার সাথেও সাবরিনার যেন অনেক মিল কিছু ব্যাপারে এই জায়গায়। সিনথিয়া দারুণ প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা কনফিডেন্ট একটা মেয়ে কিন্তু মাহফুজ আদর করা শুরু করলেই যেন একদম মাহফুজের হাতের পুতুল হয়ে যায়। মাহফুজ কে সন্তুষ্ট করা আর ওর কথা শোনাই যেন তখন সাবরিনার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে যায়। মাহফুজ সাবরিনার ভেতর ঠিক সেই জিনিসটা টের পেয়েছে। বাঘেদের কখনো শিকার চিনতে ভুল হয় না। মাহফুজ যেন সেই অটো-পাইলট মুডেই টের পেয়ে গিয়েছিল সাবরিনার ভিতরেও সিনথিয়ার মত একটা স্বত্তা আছে। তবে সেই স্বত্তা কখনো বের হবার সুযোগ না পেয়ে সাবরিনার মনের অনেক গভীরে আটকা পড়ে আছে। মাহফুজ বুঝি হালকা করে সেই স্বত্তা কে কিছুটা জাগিয়ে দিয়েছে। সিনথিয়া সাবরিনার তুলনায় যৌনতার ব্যাপারে অনেক অগ্রসর। সিনথিয়ার মাহফুজের সাথে পরিচয় হবার আগে অভিজ্ঞতা ছিল। সাবরিনারও অভিজ্ঞতা ছিল কিন্তু সেটা খালি ওর জামাই সাদমানের সাথে এবং সাবরিনার নিজের ভাষ্যমতে সেই অভিজ্ঞতা বড় বেশি রুটিনমাফিক। অন্যদিকে সিনথিয়া পরিবারের রেবেল কিড আর সাবরিনা পরিবারের গুড গার্ল। সিনথিয়া ওর মনের ইচ্ছা, যৌনতা সম্পর্কে আগ্রহ এইসব যত সহজে প্রকাশ করতে পেরেছিল সেখানে সাবরিনা অনেক পিছিয়ে। সাবরিনার চাপা স্বভাব, নিয়ম মেনে চলার প্রবণতা সব মিলিয়ে সাবরিনার জন্য নিজের মনের ইচ্ছা টা সহজে প্রকাশ করা কঠিন। মাহফুজের সন্দেহ সাবরিনা আসলে নিজে জানে কিনা নিজেই কি চায়।
মাহফুজের অনুমান যদি সত্যি হয় তাহলে সাবরিনার ভিতর সিনথিয়ার মত একটা অনুগত বালিকা লুকিয়ে আছে। এখন খালি দরকার সেই অনুগত বালিকা কে ঘুম থেকে জাগানো। সিনথিয়ার ক্ষেত্রে সেই ব্যাপারটা যত সহজ হয়েছিল সাবরিনার ব্যাপারে সেটা এত সহজ হবে না মাহফুজ জানে। তবে লক্ষ্য যত কঠিন সেই লক্ষ্য অর্জনের মজা তত আলাদা। মাহফুজ ভাবে সাবরিনার সাথে প্রথম পরিচয় হবার সময় ওর মাথাতেই ছিল না সাবরিনার সাথে ওর এমন কিছু সম্ভব। সিনথিয়ার কাছে শুনে শুনে একটা সাবরিনা সম্পর্কে ওর ধারণা ছিল এক গুরু গম্ভীর মেয়ের। কিন্তু কাজ করতে করতে টের পেয়েছে এর নিচেও আর অনেক স্তর আছে সাবরিনার। এখন মাহফুজের লক্ষ্য আস্তে আস্তে এইসব স্তর গুলোর উন্মোচন করা। তবে এটাও মাহফুজ ভাবছে কিভাবে সাবরিনার এই মানসিক স্তর গুলো উন্মোচনের সাথে সাথে ওর মূল লক্ষ্য অর্জন করা যায়। সিনথিয়ার আর ওর ব্যাপারে সাবরিনার সম্মতি। মাহফুজ ভাবে আসলে সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্কের ব্যাপারটা সাবরিনার সামনে আনার আগে ওর সাবরিনা কে আর ভালভাবে জানা বোঝা দরকার। সাবরিনার মানসিক স্তর গুলো উন্মোচন করে যদি সাবরিনার ভিতরের অনুগত বালিকা কে বের করে আনা যায়। তাহলে হয়ত তখন সাবরিনা কে ওদের সম্পর্কের ব্যাপারে রাজি করানো এত কঠিন হবে না। তবে এর জন্য সাবরিনার মনের ভিতর থাকা পাপ পূণ্য, ন্যায় অন্যায়, ভাল-মন্দের পুরাতন সংজ্ঞা গুলো কে পরিবর্তন করতে হবে। মাহফুজের খালি মনে হয়, আই হ্যাভ টু নো সাবরিনা ভেরি ওয়েল।
ক
সোলায়মান শেখ ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চে আছেন বহু বছর। আর এই চাকরি জীবনের বড় একটা অংশ কাটিয়েছেন ডিবিতে। শুরুতে ডিবিতে পোস্টিং নিয়েছিলেন রাস্তায় রাস্তায় পেট্রোল ডিউটি দিতে হবে না এই ভেবে। তবে একবার ডিবিতে কাজ শুরু করার পর টের পেলেন তার এই কাজে ভাল দক্ষতা আছে। এলোমেলো কতগুলো তথ্য কে সাজিয়ে একটা উপসংহারে পৌছানোর ব্যাপারে তার দক্ষতা ভাল। এমন কি তার বসেরাও টের পেল সোলায়মান শেখের এই প্রতিভা। তাই বছরের পর বছর ধরে এই ডিবিতে। এত বছরের চাকরি জীবনে একদম ধোয়া তুলসি পাতা নন সোলায়মান শেখ। অনেক সময় অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করেন, বসেরা বললে অনেক জায়গায় তদন্ত থামিয়ে দেন। তবে তার একটা ব্যাপার হল সরাসরি অফিসের কাজে কোন ঘুষ খান না। তাই বলে তার ইনকাম খারাপ না। সোলায়মান শেখ তার পুলিশ জীবনে শেখা দক্ষতা গুলোর জন্য আলাদা একটা মার্কেট খুজে পেয়েছেন। ক্ষমতাশালী এবং টাকাওয়ালা লোকদের মাঝে মাঝে অনেক তথ্য দরকার হয় যেটা তারা সরাসরি যোগাড় করতে পারেন না, সেখানে ডাক পড়ে সোলায়মান শেখের। আপনার প্রতিপক্ষের গতিবিধি নজরদারি করে বলতে হবে কার কাছ থেকে আসলে ব্যাকিং পাচ্ছে সে? অথবা আপনার স্ত্রীর কোন গোপন প্রণয় আছে কীনা? আপনার বিজনেস পার্টনার হিসেবে নতুন যাকে নিতে চাচ্ছেন তার কোন খারাপ অভ্যাস আছে কিনা? উপযুক্ত মূল্যের বিনিময়ে এইসব খবর যোগাড় করে দেওয়া সোলায়মান শেখের কাজ। একদিকে অনেক টাকা ইনকাম হয় অন্যদিকে সত্যিকারের ডিটেকটিভ কাজের মজা পাওয়া যায়। ডিবিতে বেশির ভাগ কেস তদন্ত করতে গেলে নানামুখী প্রেশারে সেটা আর সত্যিকারের ডিটেক্টিভ কেস থাকে না, হয়ে যায় বড় সাহেবদের পলিটিক্যাল লক্ষ্য অর্জনের ঘুটি। মাহফুজের কাজটা সোলায়মান শেখ নিয়েছিলেন জাস্ট মাহফুজের পরিবারের প্রতি একটা কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে, এছাড়া মাহফুজের সাথে কথা বলে মনে হয়েছিল এই ছেলে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে যাচ্ছে। তাই একটা হালকা পাতলা কাজে হেল্প করলে এটা দিয়ে ভবিষ্যতের একটা ভাল রিলেশন হবার সম্ভাবনা থাকবে। তবে আরশাদ সাহেবের পিছনে গত কয়েকদিন ধরে ছুটতে গিয়ে সোলায়মান শেখ একটা উত্তেজনা বোধ করছেন। যেসব কেসে আসল রহস্য থাকে সেখানে কাজ করেও মজা। খালি টাকা দিয়ে কি আর জীবনে মজা হয়।
আরশাদ সাহেবের কেসটা ইন্টারেস্টিং। প্রথম যখন হাতে নিল তখন প্রথম দুই দিন তথ্য নেবার সময় সবার কথায় মনে হল আরশাদ সাহেব নিরিহ নির্বিরোধী প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা। তাও মনের ভিতর মনে হচ্ছিল আরেকটু খতিয়ে দেখা দরকার। তবে যেই মাত্র আরশাদ সাহেব কে উত্তরা রেস্ট হাউজে ঢুকতে দেখলেন সেই মূহুর্তে সোলায়মান শেখ বুঝতে পারল আরশাদ সাহেব একদম সহজ কোন মাল না। আর কয়েকদিন টানা ফলো করার পর সোলায়মান শেখ একটা প্যাটার্ন পেল আরশাদ সাহেবের। অফিস ছুটির পর নিয়মিত উত্তরা রেস্টহাউজে যান না আরশাদ সাহেব। প্রতি দুই বা তিনদিন পর হঠাত হঠাত যান এবং ভিতরে কতক্ষণ থাকেন তার কোন নিয়ম নেই। কোন দিন এক ঘন্টার মধ্যে বের হয়ে আসছেন আবার কোন দিন চার ঘন্টা ভিতরে কাটিয়ে দিচ্ছেন। যেহেতু ভিতরে ঢোকা সোলায়মান শেখের জন্য সম্ভব না তাই পুরাতন এক সোর্সের সহায়তা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই তার। আকবর ছেলেটা এই রেস্ট হাউজের কার্ড সার্ভারের কাজ করে। এক সময় একটা মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে হেল্প করেছিলেন। তখন থেকে এই ছেলেটার কে মাঝে মধ্যে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন। আকবর কে হাতে পেতে সোলায়মান শেখের কয়েকদিন লাগল। আকবর কে আরশাদ সাহেবের ছবি দেখাতেই বলল স্যার কে চেহারায় চিনি। খেলা শেষে ভাল টিপস দেয় তবে নাম জানি না। এর বেশি কিছু আপাতত জানাতে ব্যর্থ হল আকবর। তবে কথা দিল আগামী কিছুদিন আরশাদ সাহেবের উপর ভাল করে নজর রাখবে। কি খেলে, কতটাকা বাজি ধরে, কার সাথে কথা বলে এইসব।
আরশাদ সাহেব কে উত্তরা রেস্টহাউজে ঢুকতে দেখে সোলায়মান শেখ একটা কথা বুঝে গেছে লোকে যত সৎ বলুক না কেন আরশাদ সাহেব ঘুষ খান। শুধুমাত্র সরকারি চাকরির বেতনের টাকায় এখানে একরাতেও টিকতে পারবে না কেউ, তা সে যত বড় সরকারি অফিসার হোক না কেন। এখন তাই সোলায়মান শেখের কাজটা হবে কীভাবে এই টাকার আদান প্রদান হয় সে খোজ বের করা। আরশাদ সাহেব ঘুষ খাওয়ার পরেও এতদিন যে ক্লিন ইমেজ ধরে রেখেছে তাই ঘুষের খবর সহজে বের করা যাবে না এটা সোলায়মান শেখ নিশ্চিত। তবে এত সহজে যদি সব জানা হয়ে যায় তাহলে এইসব গোয়ান্দিগিরির কাজে মজাটা আর কই?
খ
সাবরিনার মনের ভিতর কি চলছে সাবরিনা নিজেই নিশ্চিত না। গত পরশু রাতে বৃষ্টির মাঝে লালবাগ কেল্লার মাঝে যা ঘটে গেল সেটা কি আসলেই ঘটল নাকি ওর স্বপ্ন? এত বড় একটা ঘটনার পর মনের ভিতর যে গিল্ট ফিলিংস আসার কথা সেটা কেন জানি আসছে না। মনের ভিতর বরং প্রথম প্রেমে পড়ার মত উড়ু উড়ু ভাব। সেই রাতে দশটার দিকে যখন বাসায় ফিরে আসে তখন ভিজে একবারে চুপচুপে হয়ে আছে ও। সাদমান কে এর মাঝে মেসেজ পাঠিয়ে রেখেছিল বাসায় আসতে একটু লেট হবে। ভিজে একদম চুপচুপে হয়ে যাওয়া সাবরিনা কে বাসায় ঢুকতে দেখে সাদমান যখন জিজ্ঞেস করল এই অবস্থা কিভাবে হল সাবরিনা উত্তর দিল ফিল্ডওয়ার্ক করতে গিয়ে বৃষ্টির পাল্লায় পড়েছিল। আশেপাশে আশ্রয় নেওয়ার মত তেমন কিছু না থাকায় এই অবস্থা। সাদমান বলল তাড়াতাড়ি কাপড় পালটে নাও নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে। সাবরিনা কোন ভাবে দ্রুত সাদমানের সামনে থেকে সরে পড়ল।। সাবরিনার বুক তখন ঢিপ ঢিপ করছে। এইভাবে তেমন কোন পালটা প্রশ্ন ছাড়া সাদমানের সামনে থেকে সরে আসতে পারায় সাবরিনা একটু হাফ ছেড়ে বাচল। ওর মনে হল এ যেন একদম কলেজ গার্লদের প্রেমের মত অবস্থা। বয়ফ্রেন্ডের সাথে সময় কাটিয়ে বাসায় আসার পর বাবা-মা কে একটা ভুজুং ভাজুং উত্তর দিয়ে দ্রুত সরে পড়া আর বাবা-মা ভাবছে মেয়ে বুঝি বড় সমজদার। সাদমানের কাছে এই প্রথম কিছু লুকাচ্ছে এমন না। তবে অন্যবার লুকানোর সময় যে গিল্ট ফিলিংস কাজ করেছে এইবার যেন সেখানে একরকম ছেলেমানুষী উত্তেজনা। এক রাতের মাঝে কি মাহফুজ অনেক কিছু পালটে দিল?
অন্যদিকে মাহফুজের সেই রাতে মনে একটা প্রশান্তি কাজ করল। অনেক দিন ধরে চেষ্টার পর কোন লক্ষ্য অর্জন করলে মনে যেমন একটা ফুরফুরে ভাব আসে অনেকটা সেরকম। মাহফুজ নিজেও ভাবতে পারে নি আজকে কিছু হবে, আসলে কিছু করবার মত প্ল্যান ছিল না ওর মনে। ওর লক্ষ্য ছিল খালি সাবরিনা কে আজকে কনফ্রন্ট করা আর দেখা ওর প্রতিক্রিয়া কি হয়। তবে লালবাগ কেল্লার ভিতর সাবরিনার ঐরকম মন খুলে অনেক কিছু স্বীকার করা, বৃষ্টি আর আজিমের কাছ থেকে রুমের চাবি পাওয়া সব মিলে অপ্রত্যাশিত একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল মাহফুজের জন্য। আর রাজনীতির মাঠে অনেকদিন থাকার কারণে মাহফুজ জানে একবার সুযোগ পেলে সে সুযোগ সংগে সংগে কাজে লাগাতে হয় কারণ পরের সুযোগ কবে আসে বা আদৌ আসে কিনা সেটা কখনো নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। মাহফুজ তাই অনেকটাই হঠাত পাওয়া সুযোগ কে কাজে লাগাতে ভুল করে নি।। আর একবার শুরু করার পর মাহফুজ যেন অটো-পাইলট মোডে চলে গিয়েছিল। সাবরিনার ভিতর একটা নেশাময় ব্যাপার আছে। বৃষ্টিতে ভেজা সাবরিনার মাথা মুছতে মুছতে যখন ওর কপালে চুমু দিল ঠিক তারপর যেন একটা গোপন সুইচে চাপ পড়ে গিয়েছিল। মাহফুজ অটো পাইলট মুডে একের পর এক করে গেছে। মাহফুজ চিন্তা করে দেখে সাবরিনাও যেন অনেকটা ঘোরে ছিল। হালকা প্রতিবাদ করলেও মাহফুজের সামনে টিকতে পারে নি। সিনথিয়ার সাথেও সাবরিনার যেন অনেক মিল কিছু ব্যাপারে এই জায়গায়। সিনথিয়া দারুণ প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা কনফিডেন্ট একটা মেয়ে কিন্তু মাহফুজ আদর করা শুরু করলেই যেন একদম মাহফুজের হাতের পুতুল হয়ে যায়। মাহফুজ কে সন্তুষ্ট করা আর ওর কথা শোনাই যেন তখন সাবরিনার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে যায়। মাহফুজ সাবরিনার ভেতর ঠিক সেই জিনিসটা টের পেয়েছে। বাঘেদের কখনো শিকার চিনতে ভুল হয় না। মাহফুজ যেন সেই অটো-পাইলট মুডেই টের পেয়ে গিয়েছিল সাবরিনার ভিতরেও সিনথিয়ার মত একটা স্বত্তা আছে। তবে সেই স্বত্তা কখনো বের হবার সুযোগ না পেয়ে সাবরিনার মনের অনেক গভীরে আটকা পড়ে আছে। মাহফুজ বুঝি হালকা করে সেই স্বত্তা কে কিছুটা জাগিয়ে দিয়েছে। সিনথিয়া সাবরিনার তুলনায় যৌনতার ব্যাপারে অনেক অগ্রসর। সিনথিয়ার মাহফুজের সাথে পরিচয় হবার আগে অভিজ্ঞতা ছিল। সাবরিনারও অভিজ্ঞতা ছিল কিন্তু সেটা খালি ওর জামাই সাদমানের সাথে এবং সাবরিনার নিজের ভাষ্যমতে সেই অভিজ্ঞতা বড় বেশি রুটিনমাফিক। অন্যদিকে সিনথিয়া পরিবারের রেবেল কিড আর সাবরিনা পরিবারের গুড গার্ল। সিনথিয়া ওর মনের ইচ্ছা, যৌনতা সম্পর্কে আগ্রহ এইসব যত সহজে প্রকাশ করতে পেরেছিল সেখানে সাবরিনা অনেক পিছিয়ে। সাবরিনার চাপা স্বভাব, নিয়ম মেনে চলার প্রবণতা সব মিলিয়ে সাবরিনার জন্য নিজের মনের ইচ্ছা টা সহজে প্রকাশ করা কঠিন। মাহফুজের সন্দেহ সাবরিনা আসলে নিজে জানে কিনা নিজেই কি চায়।
মাহফুজের অনুমান যদি সত্যি হয় তাহলে সাবরিনার ভিতর সিনথিয়ার মত একটা অনুগত বালিকা লুকিয়ে আছে। এখন খালি দরকার সেই অনুগত বালিকা কে ঘুম থেকে জাগানো। সিনথিয়ার ক্ষেত্রে সেই ব্যাপারটা যত সহজ হয়েছিল সাবরিনার ব্যাপারে সেটা এত সহজ হবে না মাহফুজ জানে। তবে লক্ষ্য যত কঠিন সেই লক্ষ্য অর্জনের মজা তত আলাদা। মাহফুজ ভাবে সাবরিনার সাথে প্রথম পরিচয় হবার সময় ওর মাথাতেই ছিল না সাবরিনার সাথে ওর এমন কিছু সম্ভব। সিনথিয়ার কাছে শুনে শুনে একটা সাবরিনা সম্পর্কে ওর ধারণা ছিল এক গুরু গম্ভীর মেয়ের। কিন্তু কাজ করতে করতে টের পেয়েছে এর নিচেও আর অনেক স্তর আছে সাবরিনার। এখন মাহফুজের লক্ষ্য আস্তে আস্তে এইসব স্তর গুলোর উন্মোচন করা। তবে এটাও মাহফুজ ভাবছে কিভাবে সাবরিনার এই মানসিক স্তর গুলো উন্মোচনের সাথে সাথে ওর মূল লক্ষ্য অর্জন করা যায়। সিনথিয়ার আর ওর ব্যাপারে সাবরিনার সম্মতি। মাহফুজ ভাবে আসলে সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্কের ব্যাপারটা সাবরিনার সামনে আনার আগে ওর সাবরিনা কে আর ভালভাবে জানা বোঝা দরকার। সাবরিনার মানসিক স্তর গুলো উন্মোচন করে যদি সাবরিনার ভিতরের অনুগত বালিকা কে বের করে আনা যায়। তাহলে হয়ত তখন সাবরিনা কে ওদের সম্পর্কের ব্যাপারে রাজি করানো এত কঠিন হবে না। তবে এর জন্য সাবরিনার মনের ভিতর থাকা পাপ পূণ্য, ন্যায় অন্যায়, ভাল-মন্দের পুরাতন সংজ্ঞা গুলো কে পরিবর্তন করতে হবে। মাহফুজের খালি মনে হয়, আই হ্যাভ টু নো সাবরিনা ভেরি ওয়েল।