25-04-2023, 11:50 AM
(This post was last modified: 25-04-2023, 11:50 AM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
খ
মাহফুজ টের পেলে ওর প্রতি সাবরিনার আচরণ অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আগের সেই শীতল ভাবটা নেই বরং যে কোন সময়ের তুলনায় সাবরিনা ওর সাথে আর বেশি বন্ধুসুলভ আচরণ করছে। আগে যেখানে ফোন দিয়ে দরকারের কথা বলেই সাবরিনা ফোন রেখে দিত এখন সেখানে অদরকারী দুই একটা কথা বলে। দেখা হলে কাজের বাইরেও এটা সেটা নানা বিষয়ে কথা বলে। মাহফুজ প্রচুর মুভি দেখে এবং সিনথিয়া মারফত মাহফুজ জানে সাবরিনা মুভি আর বইয়ের ভক্ত। তাই আজকাল এমন কি দেখা হলে কাজের বাইরে সিনেমা নিয়ে কথা হয়। একটা সহজাত বন্ধুত্ব যেন গড়ে উঠছে দুই জনের মাঝে। মাহফুজ বুঝতে পারে এটা সেই রাতে ওর ভূমিকার ফসল। এটা মনে আসতেই মাহফুজের মনে একটা গিল্ট ফিলিংস কাজ করে। সাবরিনা একে তো সিনথিয়ার বড় বোন, হবু বউয়ের বড় বোন। তার উপর সেই দিন সাবরিনা খুব অসহায় একটা অবস্থায় ছিল কিন্তু এইসব অগ্রাহ্য করে আজকাল প্রতিরাতে সাবরিনা কে ভেবে ও মাস্টারবেশন করছে। আর যেটা ওর পাপবোধ বাড়িয়ে তুলছে সেটা হল প্রতি রাতেই ও সাবরিনার প্যান্টির গন্ধ শুকে, মোবাইলে সাবরিনার সেই উলংগ ছবি দেখে এই মাস্টারবেশন করছে। প্রতিবার মাস্টারবেশনের পর মনে হয় আর না, এটাই শেষবার। কালকেই প্যান্টিটা ফেলে দিব, মোবাইল গুলোর মেমরি ইরেজ করে দিব। কিন্তু সকাল হলে সাবরিনা কে বাহুডোরে ধরে পিষে ফেলার ইচ্ছা আবার প্রবল হয়। আর ওর সমস্যা আর বেড়ে যায় যখন মাঝে মাঝে সিনথিয়া ওর সাথে কথা বলার সময় সাবরিনা কে নিয়ে মজা করে, উত্তেজক কথাবার্তা বলে। একদিন ওদের ফোন সেক্সের সময় সাবরিনার রোলপ্লে করল সিনথিয়া নিজে থেকে, তবে ওর জানার কথা না যখন সিনথিয়া সাবরিনা সেজে রোলপ্লে করছে মাহফুজ তখন আসল সাবরিনার প্যান্টি থেকে ঘ্রাণ নিচ্ছে। পরের দিন বিকালবেলা যখন সাবরিনার সাথে ওর দেখা হল তখন একসাথে পাপবোধ আর যৌন আকর্ষণের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ ওকে আক্রমণ করল। একদিনে গিল্ট ফিলিংস আর অন্যদিকে সাবরিনা। সাবরিনা একটা সালোয়ার কামিজ পড়া ছিল, নীল রঙের। মাহফুজের মনে হচ্ছিল এখনি বুঝি ও সাবরিনার কামিজ উঠিয়ে ওর বুকে ঝাপিয়ে পড়বে। ওর চোখে বুঝি সেই কামের চিহ্ন ভেসে উঠবে এই ভয়ে ছিল মাহফুজ। মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অনেক তীব্র তাই মাহফুজে নিজের ভিতরে সেই কামাগ্নি দাবিয়ে রাখতে চায়। ভাগ্যিস সেই সময় সামিরা আসল। সামিরা হাসিঠাট্টা করে বিভিন্ন কথা বলতে থাকল। পরে সবাই মিলে নিচের এক দোকানে আইসক্রীম খাবার পর সাবরিনা যখন হেটে ফিরে যাচ্ছিল। পিছন থেকে মাহফুজের চোখ যেন ওর সব কাপড় খুলে নিচ্ছিল আর মনের ভিতর সেই কাপড়হীন উলংগ সাবরিনা কে নিয়ে অসভ্য খেলা খেলছিল মাহফুজ।
দুনিয়াজোড়া পুরুষদের একটা সমালোচনা আছে, এরা অনেক সময় মাথা দিয়ে না ভেবে গোপনাংগ দিয়ে ভাবে। আর সেই সিদ্ধান্তের সাথে নারী জড়িয়ে থাকলে গোপনাংগ দিয়ে ভাবনার পরিমাণ যেন বেড়ে যায়। এই সময় ছেলেরা অনেক বেশি সাহসী, বেপরোয়া হয়ে উঠে। অন্য সময় যে কাজ করতে দশবার ভাববে সেই কাজ ঐ সময় ভাবতে এক মূহুর্ত সময় নিবে না। সেই দিন মাহফুজ যা করল সেটা কে ইংরেজিতে বলে Dick thinking, বাংলায় বললে গোপানাংগ দিয়ে ভাবা। সাবরিনাদের অফিসে একটা কাজে এসে আবার সাবরিনা কে মেসজ দিয়েছিল অফিসে আছে কিনা। সাবরিনা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর পাঠাল একটা ব্রেক নিয়েছে আধা ঘন্টার আর নিচের ক্যাফেতে আছে। ক্যাফেতে ঢুকে মাহফুজ দেখে এক কোণার একটা টেবিলে একটা কফি নিয়ে বসে আছে সাবরিনা আর মোবাইলে স্ক্রল করছে সোশ্যাল মিডিয়া। মাহফুজ কে দেখেই সাবরিনার চোখ দুইটা যে হেসে উঠল এটা মাহফুজের চোখা এড়াল না। দুই জনের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে কথা হতে থাকল। মাহফুজ খেয়াল করল সাবরিনা এখন অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দে কথা বলছে ওর সাথে, আগের সেই জড়তা নেই, মাঝখানের শীতলটা নেই। এইসব যেন মাহফুজ কে অদৃশ্য ইংগিত দিতে থাকল। এরপর সেদিন সাবরিনা পড়েছিল জিন্সের সাথে ফতুয়া। চুল খোলা কাধ পর্যন্ত। একসাইড দিয়ে চুল কানের সাইড দিয়ে মুখে এসে পড়ছে আর সাবরিনা একটু পর পর আংগুল দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। স্বভাবসুল্ভ একটা মৃদু কিন্তু মনহরণকারী পারফিউমের গন্ধে সাবরিনার পাশটা মৌ মৌ করছে। নিজেকে এই গন্ধে ফুলের ভ্রমর মনে হল মাহফুজের, যেন সাবরিনার সব মধু শুষে নেবার জন্য আশে পাশে উড়ে বেড়াচ্ছে সে। এই সময় সাবরিনার একটা ফোন আসল। কথা বলতে বলতে সাবরিনা কপালের চুল আংগুল দিয়ে প্যাচাচ্ছে। মাহফুজের জন্য তখন সময় যেন স্থির, ওর শরীরের নিচে আরেকটা অস্বিত্ব যেন জেগে উঠতে থাকল। আন্ডারওয়ারের ভিতর বাড়তে থাকা চাপ মাহফুজের যেন হার্টবিট বাড়িয়ে দিল। ফোনে সাবরিনা কে কেউ একটা কিছুতে যাওয়ার জন্য বলছে আর সাবরিনা গাইগুই করছে, এরপর আসতে পারি কিনা দেখি বলে সাবরিনা ফোন টা রেখে দিল। মাহফুজ যেন আশাহত হল, আরকেটু সময় ফোনে কথা বললে আর কিছুটা সময় সাবরিনার মুখটা মস্তিষ্কে ধরে রাখা যেত কোন বাধা ছাড়াই। মাহফুজ জিজ্ঞেস করল কিসের ফোন। সাবরিনা উত্তর দিল ওর এক কলেজ জীবনের বন্ধু, যে এখন ফটোগ্রাফার, তার দৃক গ্যালারিতে একটা প্রদর্শনী হচ্ছে। অন্য অনেকের সাথে ওর ছবিও থাকবে প্রদর্শনীতে তাই সাবরিনা কে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়েছে, শুক্রবার ছুটির দিন প্রদর্শনী। মাহফুজ জানে সাবরিনা ফটোগ্রাফি পছন্দ করে তাই জিজ্ঞেস করল যাবে না কেন? কোন আগের থেকে শিডিউল আছে নাকি। সাবরিনা বলল আসলে একা একা এইসব জায়গায় যেতে ইচ্ছা করে না। বন্ধুর যেহেতু প্রদর্শনী তাই বন্ধু ঠিক সময় দিতে পারবে না। একা একা ছবি দেখে পরে বাসায় ফিরে যেতে তেমন একটা ভাল লাগে না। মাহফুজ সাদমানের কথা জিজ্ঞেস করল। সাবরিনা বলল সাদমান এইসব শিল্প সাহিত্য বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী না, আর শুক্রবার বিকালের দিকে সাধারণত সাদমান বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হয়। সাপ্তাহের এই একটা সময় সাদমান নিজের মত করে কাটায় তাই সাদমান কে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা নেই সাবরিনার। ঠিক এইসময় কিছু না ভেবেই মাহফুজ একটা Dick tinking দিয়ে সিদ্ধান্ত নিল। বলল আপনি ফটোগ্রাফী এত পছন্দ করেন তাহলে একা যাবেন কেন, আমিও নাহয় যাব। আপনাকে সংগ দিলাম, এরপর নাহয় ধানমন্ডিতে আমরা একটু ঘোরাঘুরি করব। আপনার তাহলে আর একা লাগবে না। মাহফুজের প্রস্তাবের আকস্মিকতায় সাবরিনা অবাক হয়ে গেল। মাহফুজ হঠাত করে এমন কিছু বলবে এটা সাবরিনা ভেবে উঠতে পারে নি। এটা ঠিক আগের তুলনায় সাবরিনা মাহফুজ এখন অনেক বেশি ফ্রেন্ডলি কিন্তু এই সংগ দেবার প্রস্তাব টা যাকে বলে একদম বিনা মেঘে বজ্রপাত, আউট অফ blue। সাবরিনার কাছে ব্যাপারটা বেশ কিউট লাগল। বন্ধুর ফটোগ্রাফী শো যাতে মিস না করে এবং একাকী বোধ না করে সেই জন্য এরকম সংগ অফার করার ব্যাপারটা সাবরিনা কে বেশ মজা দিল। এমনিতেই মেয়েরা মনযোগ পছন্দ করে, সেটা যে কোন বয়সের,যে কোন ব্যাকগ্রাউন্ডের মেয়ে হতে পারে। সাবরিনা এর ব্যতিক্রম না। বিয়ের আগে বিভিন্ন আর্ট গ্যালারির শো, সাহিত্য আলোচনার অনুষ্ঠান এগুলা ছিল শুক্রবার ছুটির দিনের বিকালবেলার সাবরিনার নিয়মিত গন্তব্যস্থল। ওদের তিন চার জনের একটা দল ছিল সমমনাদের। এদের মধ্যে দুই জন এখন দেশের বাইরে, এক জন চাকরি সূত্রে ঢাকার বাইরে আর সাবরিনা আর আরেকজন বিয়ের কারণে আর সময় করে উঠতে পারে না। সাবরিনার এই বন্ধু মহলের শূণ্যতা আর ওর এই শুক্রবার বিকালবেলা আর্ট কালচার করে বেড়ানো আড্ডা গুলো মিস করে। সাদমান ভাল ছেলে হলেও এইসব আর্টের ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই। শুক্রবার তাই আজকাল ওদের দাওয়াত খাওয়া বা নেটওয়ার্কিং এর জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া বা সাদমানের বন্ধুদের আড্ডায় যাওয়ার জন্য বরাদ্দ। সাবরিনা ভাল মেয়ের মত সব মেনে নিয়ে, মানিয়ে নিচ্ছিল। তাই আজকে যখন ফোন আসল তখন মনের ভিতর ইচ্ছা থাকলেও একা একা এইসব জায়গায় একটু পর বোরড লাগে তাই এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছিল সেখানে মাহফুজের প্রস্তাব যেন ওর পুরান দিনের শুক্রবারের ছুটির দিনের বিকালবেলার স্মৃতি ফিরিয়ে আনল। আর তার উপর মাহফুজ আজকে পাঞ্জাবী পড়ে এসেছে, সাথে চাপদাড়ি। একদম রঙ দে বাসন্তীর আসলাম যেন। সাবরিনা তাই না করতে পারে না। ঠিক হয় সাবরিনা শুক্রবার দুপুরের দিকে টেক্সট দিয়ে কয়টার সময় ওরা দৃক গ্যালারিতে যাবে সেটা জানিয়ে দিবে।
শুক্রবার যত এগিয়ে আসতে থাকল সাবরিনা আর মাহফুজ দুই জনে যেন ঠিক দুইটা ভিন্ন অনুভূতির ভিতর দিয়ে যেতে থাকল। সাবরিনার জন্য এটা একটা সংশয় মিশ্রিত চাপা উত্তেজনাকর অপেক্ষা। বিয়ের পর এই প্রথম সাদমান ছাড়া আর কোন ছেলের সাথে সময় কাটাবে যেখানে কোন অফিসিয়াল বিজনেসের ব্যাপার নেই। ওর ভার্সিটির ছেলে বন্ধুদের সাথে সাদমান ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েছে কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে ওরা গিয়েছে গ্রুপে। আর অনেকে ছিল তাই সেটা কখনো ওয়ান টু ওয়ান ছিল না, আর হলেও তারা সবাই বহু আগেই ফ্রেন্ড জোনড। তাদের কার প্রতি মনের গহীন কোণায় কোন অনুভূতি লুকানো ছিল না। সাবরিনা সাদমান কে বলল এই শুক্রবার দৃকে একটা ফটোগ্রাফীর প্রদর্শনী আছে ও যাবে কীনা। সাদমান বলল তুমি তো জান সাপ্তাহের এই একটা বেলা আমি একটু বন্ধুদের সাথে কাটাই। সাবরিনার মনে হল সাদমান কখনো ভাবেই না সাপ্তাহের এই একটা বেলা সাবরিনা দিনের পর দিন কীভাবে ওর নিজের ইচ্ছা গুলো বিসর্জন দিয়ে সাদমানের আড্ডার সংগী হয়। সাবরিনার মুখ কাল হতে দেখে সাদমান বলল তুমিই যাও না। ঘুরে আস, তোমার বন্ধুদের সাথে দেখা হবে। একটা আড্ডাও দিয়ে আস তাহলে ফ্রেশ লাগবে। সাবরিনা বলল ঠিকাছে কিন্তু এটা আর বলল না সাবরিনার সাথে সেদিন ওর কোন বন্ধু নয় বরং মাহফুজ যাবে। মাহফুজ কে ঠিক কোন ক্যাটেগরিতে ফেলবে সাবরিনা জানে না। ওরা ফ্রেণ্ডলি কিন্তু বন্ধু নয় নিশ্চিত। সেই রাতের ঘটনার পর একটা অদৃশ্য বন্ধন গড়ে উঠেছে যেন দুই জনের মধ্যে। সাবরিনার জীবনের একটা গোপন অংশ এই পৃথিবীতে জানে শুধু মাহফুজ এবং এরপর মাহফুজের আচরণ যেন সাবরিনার কাছে মাহফুজ কে আর বিশ্বস্ত করে তুলেছে। আবার সাদমান কে না জানিয়ে এই যাওয়াটা এক ধরনের সংশয় তৈরি করছে ওর মনে। সাবরিনা নিজের মন কে প্রবোধ দিল আরে আমি তো আর কোন গোপন অভিসারে যাচ্ছি না। জাস্ট একটা ফটোগ্রাফি শো দেখতে যাচ্ছি পরিচিত এক জনের সাথে। মনের ভিতর আবার প্রশ্ন উঠল মাহফুজ কি খালি পরিচিত একজন নাকি আর বেশি কিছু। এইসব প্রশ্ন উত্তরে সাবরিনার মনে হল যেন ও একটা গোপন অভিযানে যাচ্ছে। নিজের ভিতর কলেজ গার্ল সুলভ টিনএইজের একটা এডভেঞ্জারের উত্তেজনা তৈরি হল। অন্যদিকে মাহফুজের ভিতর যেন একটা উচ্ছাস তৈরি হল। পুরো সাপ্তাহ ও একটা ফুরফুরে মেজাজে শুক্রবারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকল। মাহফুজ জানে সাবরিনা সিনথিয়ার বোন। কিন্তু ওর মনের মাঝে নিজেই নিজেকে বলছে এইটা একটা ইনসেন্ট ঘোরাঘুরি মাত্র। তবে মনের ভিতর আর দুষ্ট অংশটা যেন হাসতে হাসতেই বলল দিস ইজ এ ডেট মাহফুজ, দিজ ইজ এ ফার্স্ট ডেট। তবে মাহফুজ এইসব ভাবনা কে উড়িয়ে দিল। ওর মনে হতে থাকল সাবরিনার সাথে অফিসিয়াল সেটিং এর বাইরে এই প্রথম ওর সাক্ষাত হবে। কি নিয়ে কথা বলবে ওরা? কথা বলার প্রসংগ থাকবে তো নাকি দেখা যাবে অনেক ফার্স্ট ডেটের মত একটা অকয়ার্ড সাইলেন্স ভর করবে ওদের মাঝে। সাবরিনা সম্পর্কে সিনথিয়া থেকে জানা সব তথ্য মাথার ভিতর ঝালাই করতে থাকল মাহফুজ। মাহফুজের মনে হল ওর সারা জীবনে মেয়েদের পটানোর জন্য কখনো খুব বেশি ইফোর্ট দিতে হয় নি। একমাত্র সিনথিয়ার ক্ষেত্রে ও একটু নার্ভাস ছিল আর তার পর এই সাবরিনা। সিনথিয়ার ক্ষেত্রে ওর প্রায় কিছুই জানা ছিল না কিন্তু সিনথিয়া কে ও পটাতে পেরেছিল আর সাবরিনার অনেক কিছুই ওর জানা। তাই নিজেই নিজেকে শান্তনা দিল, উই উইল হ্যাভ এ গুড টাইম।
শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাবরিনার মনে হল দিন টা বুঝি অন্য রকম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খাবার পর যত বেলা গড়াতে থাকল তত মনের ভিতর উত্তেজনা বাড়তে থাকল। সাবরিনা জীবনে একবার প্রেম করেছে তাও ছয় মাস। প্রথমবার ডেটে যাবার সময় যে উত্তেজনা ফিল করেছিল আজকে যেন এত বছর পর সেই পুরান উত্তেজনা ওর ভিতর। যেন বাসায় লুকিয়ে কাউকে না জানিয়ে ডেটে যাচ্ছে, সেই একরকম বুকের ভিতর হৃদস্পন্দনের বেড়ে যাওয়া, পেটের কাছে একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি। ভয়, উত্তেজনা, নিষিদ্ধ কিছুর আকর্ষণ। সাবরিনা নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে, এইসব কিছুই না আসলে, এটা তো একটা জাস্ট মিটিং বিটিইউন টু ফ্রেন্ডলি পার্সন। আজকে দুপুরে সাদমানের এক কলিগের বিয়ের দাওয়াত আছে এরপর সেখান থেকে দৃক গ্যালারিতে যাবে সাবরিনা। তাই এমন কিছু পড়তে হবে যেটা বিয়ে বাড়ির সাথে মানানসই আবার আর্ট এক্সিবিশনে গেলেও কেউ ভ্রু কুচকে তাকাবে না। সাদা কাপড়ের উপর নীল কাজ করা একটা সুতির শাড়ি বের করে সাবরিনা ওর বিশাল শাড়ির কালেকশন থেকে। ডিজাইনার শাড়ি। ঈহার শাড়ি নামে একটা ডিজাইনার হাউজের নিজস্ব শাড়ি। সুতির শাড়ির একটা অন্যরকম আভিজাত্য এনেছে আজকাল ঢাকার কিছু ডিজাইনার হাউজ। ঈহার শাড়ি এর অন্যতম। সুতির শাড়ির উপর হাতের কাজ আর পাড়ে এমব্রেয়ডরি। প্রায় ছয় হাজার দাম। সাথে নীল ব্লাউজ। দশ বছর আগেও সুতির শাড়ি সস্তা শাড়ি হিসেবে বিবেচিত হত আর এখন এই ডিজাইনার হাউজ গুলো এই ধারণা পালেটে দারুণ সব সুতির শাড়ি আনছে। এক সাথে এই শাড়িটা বিয়ে বাড়ির জন্য উপযুক্ত আর আর্ট এক্সিবিশনের ক্রাউডের সাথেও দারুণ মানানসই। শাড়িটা সাদমান কে দেখাল কেমন হবে জানার জন্য, ফোন থেকে মুখে তুলে শাড়িটা দেখল সাদমান, বলল পারফেক্ট হবে এটা। তোমাকে খুব সুন্দর লাগে এই শাড়িটা। সাদমান অবশ্য জানে না ওর স্ত্রী কে যে শাড়ি বাছাই করতে সাহায্য করছে শাড়িটা ওর জন্য নয়, বিয়ে বাড়ির লোকদের জন্য নয়, আর্ট এক্সিবিশনের লোকদের জন্য নয় বরং অন্য একজন কে মুগ্ধ করতে পড়ছে সাবরিনা। সাদমানের কাছে শাড়ির প্রশংসা শুনে মনে হল এটাই বুঝি পারফেক্ট। মাহফুজও এটা পছন্দ করবে। সাবরিনা জানে হঠাত কেন ওর মনে এই কথা টা আসল। এই কথা মাথায় আসতেই আবার বুকের ভিতর ধুকপুক আর পেটের কাছে একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি। এই অনুভূতি নিয়ে গয়না বাছাই করতে বসল। অনেক বেছে একটা গয়নার সেট বের করল। সিক্স ইয়ারস স্টোরি বলে একটা গয়নার দোকান আছে ওদের রুপার কাজ করা একটা গয়ানা কিনেছিল দুই বছর আগে। খুব একটা পড়া হয় নি। আজকের জন্য পারফেক্ট। একদম এই শাড়ির সাথে মানিয়ে যাবে। খুব বেশি কাজ না গয়নাতে তবে একটা স্নিগ্ধ ভাব আনবে ওর গেটাপে। সাজতে সাজতে আয়নার দিকে যখন তাকিয়ে ছিল তখন পিছন থেকে সাদমান বলল কিলার গেটাপ। সাবরিনা হাসি দিল। খুব অল্প সময় সাদমান ওর গুরুগম্ভীর চেহারার আড়াল থেকে অফিসের হিসাব নিকাশের বাইরে কথা বলে। তাই আজকে এই প্রশংসা হেসে গ্রহণ করল সাবরিনা। আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখতে মনের ভিতর একটু কনফিউশন হল সাথে যেন। এই যে ওকে কম্পিমেন্ট দিচ্ছে সাদমান কিন্তু বেচারার জানা নাই এই সাজ টা ওর জন্য না, এই কিলার লুকের লক্ষ্য অন্য কেউ। আয়নায় সাবরিনা নিজে কে দেখে সাদমানের হঠাত এই প্রশংসার কারণ বুঝতে পারে। রক্ষণশীল বাংগালী . পরিবারে জন্ম নেওয়ায় ছোটবেলা থেকে কতগুলো স্পেসিফিক সংস্কার মাথার ভিতর গেথে দেওয়া হয়েছিল। এর একটা ছিল শরীর দেখিও না। বাড়ির বড় মেয়ে এবং নিয়ম মানা মেয়ে হিসেবে সব সময় এটা মেনে এসেছে। কাউকে শরীর দেখিয়ে মুগ্ধ করবে এই চিন্তায় কখনো কাপড় পড়ে নি সাবরিনা। সেটা ওয়েস্টার্ন বা দেশি যেই ড্রেস হোক না কেন। এত রেখেঢেকে কাপড় পড়ার পরেও ওর শরীরের প্রেমে যে লোকে পড়ে সেটা সাবরিনা জানে, সেটা নিয়ে মনে গোপন অহংকার থাকলেও নিজ থেকে কখনো শরীরের প্রদর্শনীতে সাবরিনা কখনো যোগ দেয় নি। আজকে আয়নায় সাবরিনা শাড়িতে নিজেকে দেখে অবাক হয়ে যায়। সাদা কাপড়ে নীল নকশা করা শাড়িটা যেন ওর কথা মাথায় রেখে তৈরি করা। এক বছর আগের ব্লাউজটা যেন এখন শুরুর থেকে আর বেশি টাইট। এক সাইডে দিয়ে রাখা আচল। সাইড ভিউ থেকে আয়নায় দেখে। বুবস গুলো উদ্ধত হয়ে আছে। সবসময় নাভীর বরাবর শাড়ি পড়লেও আজকে সেটা নাভী থেকে দুই আংগুল নিচে। সাইড ভিউ থেকে আবার নিজের পিছন দিকটা দেখে। মাড় দিয়ে আয়রন করা শাড়িটা একদম ভালভাবে শরীরে জড়িয়ে আছে। সাবরিনা জানে ওর পাছা বেশ ভাল দেখতে। এই শাড়ি যেন সেটার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এছাড়া সাধারণত মেকাপ ইউজ করে না তবে আজকে হালকা মেকাপ দিয়েছে। একটা গোলাপী জেল্লা বের হচ্ছে যেন চেহারা থেকে। ঘাড়ের কাছে এক গোছা চুল খোপার অবাধ্য হয়ে যেন গলার অলংকার হয়ে রয়েছে। অন্য সময় হলে এই শাড়িটাই সাবরিনা অন্য রকম করে পড়ত। ওর সৌন্দর্য কে আড়াল করে রাখত। আজকে এই সাজ দেখে সাবরিনার অবচেতন মনের ইচ্ছা কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহে পড়ে যায় সাবরিনা নিজেই।
মাহফুজ টের পেলে ওর প্রতি সাবরিনার আচরণ অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আগের সেই শীতল ভাবটা নেই বরং যে কোন সময়ের তুলনায় সাবরিনা ওর সাথে আর বেশি বন্ধুসুলভ আচরণ করছে। আগে যেখানে ফোন দিয়ে দরকারের কথা বলেই সাবরিনা ফোন রেখে দিত এখন সেখানে অদরকারী দুই একটা কথা বলে। দেখা হলে কাজের বাইরেও এটা সেটা নানা বিষয়ে কথা বলে। মাহফুজ প্রচুর মুভি দেখে এবং সিনথিয়া মারফত মাহফুজ জানে সাবরিনা মুভি আর বইয়ের ভক্ত। তাই আজকাল এমন কি দেখা হলে কাজের বাইরে সিনেমা নিয়ে কথা হয়। একটা সহজাত বন্ধুত্ব যেন গড়ে উঠছে দুই জনের মাঝে। মাহফুজ বুঝতে পারে এটা সেই রাতে ওর ভূমিকার ফসল। এটা মনে আসতেই মাহফুজের মনে একটা গিল্ট ফিলিংস কাজ করে। সাবরিনা একে তো সিনথিয়ার বড় বোন, হবু বউয়ের বড় বোন। তার উপর সেই দিন সাবরিনা খুব অসহায় একটা অবস্থায় ছিল কিন্তু এইসব অগ্রাহ্য করে আজকাল প্রতিরাতে সাবরিনা কে ভেবে ও মাস্টারবেশন করছে। আর যেটা ওর পাপবোধ বাড়িয়ে তুলছে সেটা হল প্রতি রাতেই ও সাবরিনার প্যান্টির গন্ধ শুকে, মোবাইলে সাবরিনার সেই উলংগ ছবি দেখে এই মাস্টারবেশন করছে। প্রতিবার মাস্টারবেশনের পর মনে হয় আর না, এটাই শেষবার। কালকেই প্যান্টিটা ফেলে দিব, মোবাইল গুলোর মেমরি ইরেজ করে দিব। কিন্তু সকাল হলে সাবরিনা কে বাহুডোরে ধরে পিষে ফেলার ইচ্ছা আবার প্রবল হয়। আর ওর সমস্যা আর বেড়ে যায় যখন মাঝে মাঝে সিনথিয়া ওর সাথে কথা বলার সময় সাবরিনা কে নিয়ে মজা করে, উত্তেজক কথাবার্তা বলে। একদিন ওদের ফোন সেক্সের সময় সাবরিনার রোলপ্লে করল সিনথিয়া নিজে থেকে, তবে ওর জানার কথা না যখন সিনথিয়া সাবরিনা সেজে রোলপ্লে করছে মাহফুজ তখন আসল সাবরিনার প্যান্টি থেকে ঘ্রাণ নিচ্ছে। পরের দিন বিকালবেলা যখন সাবরিনার সাথে ওর দেখা হল তখন একসাথে পাপবোধ আর যৌন আকর্ষণের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ ওকে আক্রমণ করল। একদিনে গিল্ট ফিলিংস আর অন্যদিকে সাবরিনা। সাবরিনা একটা সালোয়ার কামিজ পড়া ছিল, নীল রঙের। মাহফুজের মনে হচ্ছিল এখনি বুঝি ও সাবরিনার কামিজ উঠিয়ে ওর বুকে ঝাপিয়ে পড়বে। ওর চোখে বুঝি সেই কামের চিহ্ন ভেসে উঠবে এই ভয়ে ছিল মাহফুজ। মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অনেক তীব্র তাই মাহফুজে নিজের ভিতরে সেই কামাগ্নি দাবিয়ে রাখতে চায়। ভাগ্যিস সেই সময় সামিরা আসল। সামিরা হাসিঠাট্টা করে বিভিন্ন কথা বলতে থাকল। পরে সবাই মিলে নিচের এক দোকানে আইসক্রীম খাবার পর সাবরিনা যখন হেটে ফিরে যাচ্ছিল। পিছন থেকে মাহফুজের চোখ যেন ওর সব কাপড় খুলে নিচ্ছিল আর মনের ভিতর সেই কাপড়হীন উলংগ সাবরিনা কে নিয়ে অসভ্য খেলা খেলছিল মাহফুজ।
দুনিয়াজোড়া পুরুষদের একটা সমালোচনা আছে, এরা অনেক সময় মাথা দিয়ে না ভেবে গোপনাংগ দিয়ে ভাবে। আর সেই সিদ্ধান্তের সাথে নারী জড়িয়ে থাকলে গোপনাংগ দিয়ে ভাবনার পরিমাণ যেন বেড়ে যায়। এই সময় ছেলেরা অনেক বেশি সাহসী, বেপরোয়া হয়ে উঠে। অন্য সময় যে কাজ করতে দশবার ভাববে সেই কাজ ঐ সময় ভাবতে এক মূহুর্ত সময় নিবে না। সেই দিন মাহফুজ যা করল সেটা কে ইংরেজিতে বলে Dick thinking, বাংলায় বললে গোপানাংগ দিয়ে ভাবা। সাবরিনাদের অফিসে একটা কাজে এসে আবার সাবরিনা কে মেসজ দিয়েছিল অফিসে আছে কিনা। সাবরিনা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর পাঠাল একটা ব্রেক নিয়েছে আধা ঘন্টার আর নিচের ক্যাফেতে আছে। ক্যাফেতে ঢুকে মাহফুজ দেখে এক কোণার একটা টেবিলে একটা কফি নিয়ে বসে আছে সাবরিনা আর মোবাইলে স্ক্রল করছে সোশ্যাল মিডিয়া। মাহফুজ কে দেখেই সাবরিনার চোখ দুইটা যে হেসে উঠল এটা মাহফুজের চোখা এড়াল না। দুই জনের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে কথা হতে থাকল। মাহফুজ খেয়াল করল সাবরিনা এখন অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দে কথা বলছে ওর সাথে, আগের সেই জড়তা নেই, মাঝখানের শীতলটা নেই। এইসব যেন মাহফুজ কে অদৃশ্য ইংগিত দিতে থাকল। এরপর সেদিন সাবরিনা পড়েছিল জিন্সের সাথে ফতুয়া। চুল খোলা কাধ পর্যন্ত। একসাইড দিয়ে চুল কানের সাইড দিয়ে মুখে এসে পড়ছে আর সাবরিনা একটু পর পর আংগুল দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। স্বভাবসুল্ভ একটা মৃদু কিন্তু মনহরণকারী পারফিউমের গন্ধে সাবরিনার পাশটা মৌ মৌ করছে। নিজেকে এই গন্ধে ফুলের ভ্রমর মনে হল মাহফুজের, যেন সাবরিনার সব মধু শুষে নেবার জন্য আশে পাশে উড়ে বেড়াচ্ছে সে। এই সময় সাবরিনার একটা ফোন আসল। কথা বলতে বলতে সাবরিনা কপালের চুল আংগুল দিয়ে প্যাচাচ্ছে। মাহফুজের জন্য তখন সময় যেন স্থির, ওর শরীরের নিচে আরেকটা অস্বিত্ব যেন জেগে উঠতে থাকল। আন্ডারওয়ারের ভিতর বাড়তে থাকা চাপ মাহফুজের যেন হার্টবিট বাড়িয়ে দিল। ফোনে সাবরিনা কে কেউ একটা কিছুতে যাওয়ার জন্য বলছে আর সাবরিনা গাইগুই করছে, এরপর আসতে পারি কিনা দেখি বলে সাবরিনা ফোন টা রেখে দিল। মাহফুজ যেন আশাহত হল, আরকেটু সময় ফোনে কথা বললে আর কিছুটা সময় সাবরিনার মুখটা মস্তিষ্কে ধরে রাখা যেত কোন বাধা ছাড়াই। মাহফুজ জিজ্ঞেস করল কিসের ফোন। সাবরিনা উত্তর দিল ওর এক কলেজ জীবনের বন্ধু, যে এখন ফটোগ্রাফার, তার দৃক গ্যালারিতে একটা প্রদর্শনী হচ্ছে। অন্য অনেকের সাথে ওর ছবিও থাকবে প্রদর্শনীতে তাই সাবরিনা কে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়েছে, শুক্রবার ছুটির দিন প্রদর্শনী। মাহফুজ জানে সাবরিনা ফটোগ্রাফি পছন্দ করে তাই জিজ্ঞেস করল যাবে না কেন? কোন আগের থেকে শিডিউল আছে নাকি। সাবরিনা বলল আসলে একা একা এইসব জায়গায় যেতে ইচ্ছা করে না। বন্ধুর যেহেতু প্রদর্শনী তাই বন্ধু ঠিক সময় দিতে পারবে না। একা একা ছবি দেখে পরে বাসায় ফিরে যেতে তেমন একটা ভাল লাগে না। মাহফুজ সাদমানের কথা জিজ্ঞেস করল। সাবরিনা বলল সাদমান এইসব শিল্প সাহিত্য বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী না, আর শুক্রবার বিকালের দিকে সাধারণত সাদমান বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হয়। সাপ্তাহের এই একটা সময় সাদমান নিজের মত করে কাটায় তাই সাদমান কে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা নেই সাবরিনার। ঠিক এইসময় কিছু না ভেবেই মাহফুজ একটা Dick tinking দিয়ে সিদ্ধান্ত নিল। বলল আপনি ফটোগ্রাফী এত পছন্দ করেন তাহলে একা যাবেন কেন, আমিও নাহয় যাব। আপনাকে সংগ দিলাম, এরপর নাহয় ধানমন্ডিতে আমরা একটু ঘোরাঘুরি করব। আপনার তাহলে আর একা লাগবে না। মাহফুজের প্রস্তাবের আকস্মিকতায় সাবরিনা অবাক হয়ে গেল। মাহফুজ হঠাত করে এমন কিছু বলবে এটা সাবরিনা ভেবে উঠতে পারে নি। এটা ঠিক আগের তুলনায় সাবরিনা মাহফুজ এখন অনেক বেশি ফ্রেন্ডলি কিন্তু এই সংগ দেবার প্রস্তাব টা যাকে বলে একদম বিনা মেঘে বজ্রপাত, আউট অফ blue। সাবরিনার কাছে ব্যাপারটা বেশ কিউট লাগল। বন্ধুর ফটোগ্রাফী শো যাতে মিস না করে এবং একাকী বোধ না করে সেই জন্য এরকম সংগ অফার করার ব্যাপারটা সাবরিনা কে বেশ মজা দিল। এমনিতেই মেয়েরা মনযোগ পছন্দ করে, সেটা যে কোন বয়সের,যে কোন ব্যাকগ্রাউন্ডের মেয়ে হতে পারে। সাবরিনা এর ব্যতিক্রম না। বিয়ের আগে বিভিন্ন আর্ট গ্যালারির শো, সাহিত্য আলোচনার অনুষ্ঠান এগুলা ছিল শুক্রবার ছুটির দিনের বিকালবেলার সাবরিনার নিয়মিত গন্তব্যস্থল। ওদের তিন চার জনের একটা দল ছিল সমমনাদের। এদের মধ্যে দুই জন এখন দেশের বাইরে, এক জন চাকরি সূত্রে ঢাকার বাইরে আর সাবরিনা আর আরেকজন বিয়ের কারণে আর সময় করে উঠতে পারে না। সাবরিনার এই বন্ধু মহলের শূণ্যতা আর ওর এই শুক্রবার বিকালবেলা আর্ট কালচার করে বেড়ানো আড্ডা গুলো মিস করে। সাদমান ভাল ছেলে হলেও এইসব আর্টের ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই। শুক্রবার তাই আজকাল ওদের দাওয়াত খাওয়া বা নেটওয়ার্কিং এর জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া বা সাদমানের বন্ধুদের আড্ডায় যাওয়ার জন্য বরাদ্দ। সাবরিনা ভাল মেয়ের মত সব মেনে নিয়ে, মানিয়ে নিচ্ছিল। তাই আজকে যখন ফোন আসল তখন মনের ভিতর ইচ্ছা থাকলেও একা একা এইসব জায়গায় একটু পর বোরড লাগে তাই এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছিল সেখানে মাহফুজের প্রস্তাব যেন ওর পুরান দিনের শুক্রবারের ছুটির দিনের বিকালবেলার স্মৃতি ফিরিয়ে আনল। আর তার উপর মাহফুজ আজকে পাঞ্জাবী পড়ে এসেছে, সাথে চাপদাড়ি। একদম রঙ দে বাসন্তীর আসলাম যেন। সাবরিনা তাই না করতে পারে না। ঠিক হয় সাবরিনা শুক্রবার দুপুরের দিকে টেক্সট দিয়ে কয়টার সময় ওরা দৃক গ্যালারিতে যাবে সেটা জানিয়ে দিবে।
শুক্রবার যত এগিয়ে আসতে থাকল সাবরিনা আর মাহফুজ দুই জনে যেন ঠিক দুইটা ভিন্ন অনুভূতির ভিতর দিয়ে যেতে থাকল। সাবরিনার জন্য এটা একটা সংশয় মিশ্রিত চাপা উত্তেজনাকর অপেক্ষা। বিয়ের পর এই প্রথম সাদমান ছাড়া আর কোন ছেলের সাথে সময় কাটাবে যেখানে কোন অফিসিয়াল বিজনেসের ব্যাপার নেই। ওর ভার্সিটির ছেলে বন্ধুদের সাথে সাদমান ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েছে কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে ওরা গিয়েছে গ্রুপে। আর অনেকে ছিল তাই সেটা কখনো ওয়ান টু ওয়ান ছিল না, আর হলেও তারা সবাই বহু আগেই ফ্রেন্ড জোনড। তাদের কার প্রতি মনের গহীন কোণায় কোন অনুভূতি লুকানো ছিল না। সাবরিনা সাদমান কে বলল এই শুক্রবার দৃকে একটা ফটোগ্রাফীর প্রদর্শনী আছে ও যাবে কীনা। সাদমান বলল তুমি তো জান সাপ্তাহের এই একটা বেলা আমি একটু বন্ধুদের সাথে কাটাই। সাবরিনার মনে হল সাদমান কখনো ভাবেই না সাপ্তাহের এই একটা বেলা সাবরিনা দিনের পর দিন কীভাবে ওর নিজের ইচ্ছা গুলো বিসর্জন দিয়ে সাদমানের আড্ডার সংগী হয়। সাবরিনার মুখ কাল হতে দেখে সাদমান বলল তুমিই যাও না। ঘুরে আস, তোমার বন্ধুদের সাথে দেখা হবে। একটা আড্ডাও দিয়ে আস তাহলে ফ্রেশ লাগবে। সাবরিনা বলল ঠিকাছে কিন্তু এটা আর বলল না সাবরিনার সাথে সেদিন ওর কোন বন্ধু নয় বরং মাহফুজ যাবে। মাহফুজ কে ঠিক কোন ক্যাটেগরিতে ফেলবে সাবরিনা জানে না। ওরা ফ্রেণ্ডলি কিন্তু বন্ধু নয় নিশ্চিত। সেই রাতের ঘটনার পর একটা অদৃশ্য বন্ধন গড়ে উঠেছে যেন দুই জনের মধ্যে। সাবরিনার জীবনের একটা গোপন অংশ এই পৃথিবীতে জানে শুধু মাহফুজ এবং এরপর মাহফুজের আচরণ যেন সাবরিনার কাছে মাহফুজ কে আর বিশ্বস্ত করে তুলেছে। আবার সাদমান কে না জানিয়ে এই যাওয়াটা এক ধরনের সংশয় তৈরি করছে ওর মনে। সাবরিনা নিজের মন কে প্রবোধ দিল আরে আমি তো আর কোন গোপন অভিসারে যাচ্ছি না। জাস্ট একটা ফটোগ্রাফি শো দেখতে যাচ্ছি পরিচিত এক জনের সাথে। মনের ভিতর আবার প্রশ্ন উঠল মাহফুজ কি খালি পরিচিত একজন নাকি আর বেশি কিছু। এইসব প্রশ্ন উত্তরে সাবরিনার মনে হল যেন ও একটা গোপন অভিযানে যাচ্ছে। নিজের ভিতর কলেজ গার্ল সুলভ টিনএইজের একটা এডভেঞ্জারের উত্তেজনা তৈরি হল। অন্যদিকে মাহফুজের ভিতর যেন একটা উচ্ছাস তৈরি হল। পুরো সাপ্তাহ ও একটা ফুরফুরে মেজাজে শুক্রবারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকল। মাহফুজ জানে সাবরিনা সিনথিয়ার বোন। কিন্তু ওর মনের মাঝে নিজেই নিজেকে বলছে এইটা একটা ইনসেন্ট ঘোরাঘুরি মাত্র। তবে মনের ভিতর আর দুষ্ট অংশটা যেন হাসতে হাসতেই বলল দিস ইজ এ ডেট মাহফুজ, দিজ ইজ এ ফার্স্ট ডেট। তবে মাহফুজ এইসব ভাবনা কে উড়িয়ে দিল। ওর মনে হতে থাকল সাবরিনার সাথে অফিসিয়াল সেটিং এর বাইরে এই প্রথম ওর সাক্ষাত হবে। কি নিয়ে কথা বলবে ওরা? কথা বলার প্রসংগ থাকবে তো নাকি দেখা যাবে অনেক ফার্স্ট ডেটের মত একটা অকয়ার্ড সাইলেন্স ভর করবে ওদের মাঝে। সাবরিনা সম্পর্কে সিনথিয়া থেকে জানা সব তথ্য মাথার ভিতর ঝালাই করতে থাকল মাহফুজ। মাহফুজের মনে হল ওর সারা জীবনে মেয়েদের পটানোর জন্য কখনো খুব বেশি ইফোর্ট দিতে হয় নি। একমাত্র সিনথিয়ার ক্ষেত্রে ও একটু নার্ভাস ছিল আর তার পর এই সাবরিনা। সিনথিয়ার ক্ষেত্রে ওর প্রায় কিছুই জানা ছিল না কিন্তু সিনথিয়া কে ও পটাতে পেরেছিল আর সাবরিনার অনেক কিছুই ওর জানা। তাই নিজেই নিজেকে শান্তনা দিল, উই উইল হ্যাভ এ গুড টাইম।
শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাবরিনার মনে হল দিন টা বুঝি অন্য রকম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খাবার পর যত বেলা গড়াতে থাকল তত মনের ভিতর উত্তেজনা বাড়তে থাকল। সাবরিনা জীবনে একবার প্রেম করেছে তাও ছয় মাস। প্রথমবার ডেটে যাবার সময় যে উত্তেজনা ফিল করেছিল আজকে যেন এত বছর পর সেই পুরান উত্তেজনা ওর ভিতর। যেন বাসায় লুকিয়ে কাউকে না জানিয়ে ডেটে যাচ্ছে, সেই একরকম বুকের ভিতর হৃদস্পন্দনের বেড়ে যাওয়া, পেটের কাছে একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি। ভয়, উত্তেজনা, নিষিদ্ধ কিছুর আকর্ষণ। সাবরিনা নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে, এইসব কিছুই না আসলে, এটা তো একটা জাস্ট মিটিং বিটিইউন টু ফ্রেন্ডলি পার্সন। আজকে দুপুরে সাদমানের এক কলিগের বিয়ের দাওয়াত আছে এরপর সেখান থেকে দৃক গ্যালারিতে যাবে সাবরিনা। তাই এমন কিছু পড়তে হবে যেটা বিয়ে বাড়ির সাথে মানানসই আবার আর্ট এক্সিবিশনে গেলেও কেউ ভ্রু কুচকে তাকাবে না। সাদা কাপড়ের উপর নীল কাজ করা একটা সুতির শাড়ি বের করে সাবরিনা ওর বিশাল শাড়ির কালেকশন থেকে। ডিজাইনার শাড়ি। ঈহার শাড়ি নামে একটা ডিজাইনার হাউজের নিজস্ব শাড়ি। সুতির শাড়ির একটা অন্যরকম আভিজাত্য এনেছে আজকাল ঢাকার কিছু ডিজাইনার হাউজ। ঈহার শাড়ি এর অন্যতম। সুতির শাড়ির উপর হাতের কাজ আর পাড়ে এমব্রেয়ডরি। প্রায় ছয় হাজার দাম। সাথে নীল ব্লাউজ। দশ বছর আগেও সুতির শাড়ি সস্তা শাড়ি হিসেবে বিবেচিত হত আর এখন এই ডিজাইনার হাউজ গুলো এই ধারণা পালেটে দারুণ সব সুতির শাড়ি আনছে। এক সাথে এই শাড়িটা বিয়ে বাড়ির জন্য উপযুক্ত আর আর্ট এক্সিবিশনের ক্রাউডের সাথেও দারুণ মানানসই। শাড়িটা সাদমান কে দেখাল কেমন হবে জানার জন্য, ফোন থেকে মুখে তুলে শাড়িটা দেখল সাদমান, বলল পারফেক্ট হবে এটা। তোমাকে খুব সুন্দর লাগে এই শাড়িটা। সাদমান অবশ্য জানে না ওর স্ত্রী কে যে শাড়ি বাছাই করতে সাহায্য করছে শাড়িটা ওর জন্য নয়, বিয়ে বাড়ির লোকদের জন্য নয়, আর্ট এক্সিবিশনের লোকদের জন্য নয় বরং অন্য একজন কে মুগ্ধ করতে পড়ছে সাবরিনা। সাদমানের কাছে শাড়ির প্রশংসা শুনে মনে হল এটাই বুঝি পারফেক্ট। মাহফুজও এটা পছন্দ করবে। সাবরিনা জানে হঠাত কেন ওর মনে এই কথা টা আসল। এই কথা মাথায় আসতেই আবার বুকের ভিতর ধুকপুক আর পেটের কাছে একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি। এই অনুভূতি নিয়ে গয়না বাছাই করতে বসল। অনেক বেছে একটা গয়নার সেট বের করল। সিক্স ইয়ারস স্টোরি বলে একটা গয়নার দোকান আছে ওদের রুপার কাজ করা একটা গয়ানা কিনেছিল দুই বছর আগে। খুব একটা পড়া হয় নি। আজকের জন্য পারফেক্ট। একদম এই শাড়ির সাথে মানিয়ে যাবে। খুব বেশি কাজ না গয়নাতে তবে একটা স্নিগ্ধ ভাব আনবে ওর গেটাপে। সাজতে সাজতে আয়নার দিকে যখন তাকিয়ে ছিল তখন পিছন থেকে সাদমান বলল কিলার গেটাপ। সাবরিনা হাসি দিল। খুব অল্প সময় সাদমান ওর গুরুগম্ভীর চেহারার আড়াল থেকে অফিসের হিসাব নিকাশের বাইরে কথা বলে। তাই আজকে এই প্রশংসা হেসে গ্রহণ করল সাবরিনা। আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখতে মনের ভিতর একটু কনফিউশন হল সাথে যেন। এই যে ওকে কম্পিমেন্ট দিচ্ছে সাদমান কিন্তু বেচারার জানা নাই এই সাজ টা ওর জন্য না, এই কিলার লুকের লক্ষ্য অন্য কেউ। আয়নায় সাবরিনা নিজে কে দেখে সাদমানের হঠাত এই প্রশংসার কারণ বুঝতে পারে। রক্ষণশীল বাংগালী . পরিবারে জন্ম নেওয়ায় ছোটবেলা থেকে কতগুলো স্পেসিফিক সংস্কার মাথার ভিতর গেথে দেওয়া হয়েছিল। এর একটা ছিল শরীর দেখিও না। বাড়ির বড় মেয়ে এবং নিয়ম মানা মেয়ে হিসেবে সব সময় এটা মেনে এসেছে। কাউকে শরীর দেখিয়ে মুগ্ধ করবে এই চিন্তায় কখনো কাপড় পড়ে নি সাবরিনা। সেটা ওয়েস্টার্ন বা দেশি যেই ড্রেস হোক না কেন। এত রেখেঢেকে কাপড় পড়ার পরেও ওর শরীরের প্রেমে যে লোকে পড়ে সেটা সাবরিনা জানে, সেটা নিয়ে মনে গোপন অহংকার থাকলেও নিজ থেকে কখনো শরীরের প্রদর্শনীতে সাবরিনা কখনো যোগ দেয় নি। আজকে আয়নায় সাবরিনা শাড়িতে নিজেকে দেখে অবাক হয়ে যায়। সাদা কাপড়ে নীল নকশা করা শাড়িটা যেন ওর কথা মাথায় রেখে তৈরি করা। এক বছর আগের ব্লাউজটা যেন এখন শুরুর থেকে আর বেশি টাইট। এক সাইডে দিয়ে রাখা আচল। সাইড ভিউ থেকে আয়নায় দেখে। বুবস গুলো উদ্ধত হয়ে আছে। সবসময় নাভীর বরাবর শাড়ি পড়লেও আজকে সেটা নাভী থেকে দুই আংগুল নিচে। সাইড ভিউ থেকে আবার নিজের পিছন দিকটা দেখে। মাড় দিয়ে আয়রন করা শাড়িটা একদম ভালভাবে শরীরে জড়িয়ে আছে। সাবরিনা জানে ওর পাছা বেশ ভাল দেখতে। এই শাড়ি যেন সেটার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এছাড়া সাধারণত মেকাপ ইউজ করে না তবে আজকে হালকা মেকাপ দিয়েছে। একটা গোলাপী জেল্লা বের হচ্ছে যেন চেহারা থেকে। ঘাড়ের কাছে এক গোছা চুল খোপার অবাধ্য হয়ে যেন গলার অলংকার হয়ে রয়েছে। অন্য সময় হলে এই শাড়িটাই সাবরিনা অন্য রকম করে পড়ত। ওর সৌন্দর্য কে আড়াল করে রাখত। আজকে এই সাজ দেখে সাবরিনার অবচেতন মনের ইচ্ছা কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহে পড়ে যায় সাবরিনা নিজেই।