30-01-2023, 08:08 AM
(This post was last modified: 30-01-2023, 08:14 AM by কাদের. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
আপডেট ৭
প্ল্যান করা আর প্ল্যান এক্সিকিউশন করা ভিন্ন জিনিস। কর্পোরেট ডিনারের পর ভেবেছিলাম দুই একদিনের মধ্যে সাবরিনার ফোন পাব, যদি নাও পাই তাহলেও অন্তত ওদের অফিস থেকে কোন কাজে ফোন পাব। দুই সাপ্তাহ চলে গেল এখন পর্যন্ত কোন খোজ নেই। খালেদ চাচার ওখানে একদিন হাসনাত ভাই কে জিজ্ঞেস করলাম আমাকে তো লিয়াজো বানালেন ওরা তো কিছু বলল না। হাসনাত ভাই বলল চিল, কর্পোরেট হাউজ গুলো বেশির ভাগ সমস্যা নিজেরাই সলভ করে যদি একান্তই না পারে তাহলে আমাদের খোজ দেয় অথবা যদি কোন তথ্যের দরকার হয় যেটা আমরা দিতে পারব তাহলে যোগাযোগ করে। অনেক সময় দুই তিন মাসেও কোন ফোন আসে না। আবার অনেক সময় এক দিনেই কয়েকবার। শুনে মনে হল এভাবে বসে থাকলে কাজ আর পিছাবে। তাই নিজেকেই কোন উদ্যোগ নিতে হবে। আমি সাবরিনাদের কর্পোরেশনের আমিনুল সাহেব কে ফোন দিলাম। উনি আমাদের মাঝে লিয়াজো হিসেবে কাজ করার কথা। বললাম কি খবর আমিনুল ভাই। কেমন আছেন? কোন কিছুর দরকার থাকলে বলবেন। খালেদ চাচা বলে দিয়েছে আপনারা কিছু চাইলে যেন মনোযোগ দিয়ে করে দেই। শুনে উনি বললেন আমাদের এখানে চা খেয়ে যান। বাকি অনেকের সাথেও পরিচিত হয়ে যান। যেন পরে অন্যরা দরকার হলে সরাসরি আপনাকে নক দিতে পারে। আমি সুযোগ লুফে নিলাম। পরের দিন বিকাল তিনটার দিকে যাব বলে কথা দিলাম।
মানুষ পটানোর একটা প্রথম উপায় হল যাকে পটাতে চান তা সে যে উদ্দ্যেশেই হোক না কেন তার সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব জানা। সিনথি জানে আমি সাবরিনাদের সাথে লিয়াজো হিসেবে কাজ করছি। তাই ওর থেকে অনেক কিছু জানলাম ওর আপু সম্পর্কে। কি খেতে পছন্দ করে, কেমন মুভি দেখে, কেমন সিরিয়াল দেখে, কি নিয়ে গল্প করতে পছন্দ করে এইসব। এখন এই তথ্যগুলো সময় মত কাজে লাগাতে হবে। জিন্স, কেডস আর হাতা গোটানো ফুল শার্ট পড়ে গেলাম অফিসে। বেশ খাতির করল। আমিনুল ভাই আমাকে ঘুরে ঘুরে বেশ কয়েকটা অফিসে নিয়ে গেল। মার্কেটিং এন্ড ডিস্ট্রিবিউশনের লোকদের সাথে কথা হল বেশি। উনাদের সাথেই ডিল হবে বেশি আমার। সবশেষে নিয়ে গেল স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং এন্ড ফোরসাইট ডিপার্টমেন্টে। বলল উনারা বেশ বড় একটা কাজে হাত দিয়েছেন। সারাদেশ জুড়ে ডিস্ট্রিবিউশন লাইন টা কে আর কস্ট এফেক্টিভ করা আর আর বেশি গ্রাহকের কাছে ডিস্ট্রিবিউশন লাইন দিয়ে কিভাবে পৌছানো যায় সেইসব নিয়ে। ওখানে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হল। তবে তখনো পর্যন্ত সাবরিনার সাথে দেখা হয় নি। নিজে থেকে কিছু জিজ্ঞেস করব কিনা সেটা নিয়ে দোমনা করছি এমন সময় সাবরিনার সাথে দেখা হয়ে গেল। আমাকে দেখেই বলল আরে মাহফুজ সাহেব আপনি এখানে। আমি বললাম ম্যাডাম আপনাদের খোজ নিতে এলাম। সাবরিনা বলল আসুন কফি খান। আমি উত্তর দিলাম আজকে কয়েক কাপ খাওয়া হয়ে গেছে অলরেডি তবে গল্প করতে পারি কফি ছাড়া। একটা হাসি দিয়ে সাবরিনা বলল ওকে, এই বলে ওদের লাউঞ্জে নিয়ে গেল। সাবরিনা অল্প কথার পরেই কাজের কথায় চলে গেল। দারুণ ফোকাসড। আমাকে নানা প্রশ্ন করছে। আমি বললাম ম্যাডাম আপনি তো আপনাদের ভাষায় টেকনিক্যাল প্রশ্ন করছেন তার থেকে আর ভেংগে বলুন কি জানতে চান। আমি দেখি হেল্প করতে পারি কিনা। সাবরিনার কথা শুনে মনে হল ওর আসলে দক্ষিণ ঢাকার মধ্যবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্ত আর নিন্মবিত্ত জীবনের সম্পর্কে ধারণা খুব কম। এইখানে লাক্সারি থেকে নিড অনেক সময় বড় প্রশ্ন যখন সে তার অর্থ খরচ করে। লাক্সারি পণ্যের ধারণা এখানে ভিন্ন। রুচি ভিন্ন। এই ব্যাপারটা সম্পর্কে সাবরিনার ধারণা কম। ওরা একটা মার্কেট রিসার্চ ফার্ম কে মার্কেট স্টাডি করতে দিয়েছিল। ঐ ফার্মের স্টাডিতে সংখ্যা, চার্ট, গ্রাফ দিয়ে মানুষের রুচি, ক্রয়ক্ষমতা এইসব নিয়ে মতামত দিয়েছে। আসলে কাগজের এইসব সংখ্যা, চার্ট, গ্রাফ দিয়ে সত্যিকারের কাজ করা কঠিন যদি না মাঠের রিয়েলিটি সম্পর্কে ভাল ধারণা না থাকে। সাবরিনার সমস্যা সেইখানে। আইবিএর ডিগ্রি দিয়ে কিভাবে এইসব সংখ্যা কে প্ল্যান বানানো যায় সেটা শিখে এসেছে কিন্তু এই সংখ্যা গুলো ঐ মানুষের জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলে সেই ধারণা নেই। আমি ওর দৃষ্টিভংগীর এই ফাকফোকর গুলো দেখানো শুরু করলাম বিভিন্ন উদাহারণ দিয়ে। সাবরিনা দেখি মনযোগ দিয়ে শুনছে। শুনতে শুনতে দেখি মোবাইলে নোট নিচ্ছে। আমার কথা শেষ করার পর সাবরিনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সাবরিনা বলল, এইবার মাহফুজ সাহেব বলেন কীভাবে এই ফাকফোকর দূর করা যায়?
সাবরিনার ভাষ্যঃ অফিসে চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে আমি আমার প্রজেক্টের দ্বায়িত্ব পেয়েছি। আস্তে আস্তে কোন রেজাল্ট দেখানোর প্রশ্ন উঠছে। অফিস পলিটিক্স তো আছেই সাথে আছে লুইচ্চা খাইরুল। অফিসের মেয়েরা আড়ালে এই নামেই ডাকে খায়রুল ভাই কে। চোখ দিয়ে পারলে খেয়ে ফেলে। কিছু করার উপায় নাই বর্তমান ম্যানেজমেন্টের প্রিয়পাত্র। উনাকে বেশি পাত্তা দিই না দেখে লেগে আছে খুত বের করার জন্য আর অফিস পলিটিক্সে অনেকে আমার নিয়োগে সন্তুষ্ট না, তারাও ওতপেতে বসে আছে। এইসব কারণে আর হাসফাস লাগছে আজকাল। এইসময় মাহফুজ সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেল। যথারীতি সামিরা গিয়ে কথা বলছে। একটু গুড লুকিং ছেলে দেখলেই যেভাবে হামলে পড়ে। তার উপর মাহফুস সাহেব রাফ, ম্যানলি এন্ড হ্যান্ডসাম। সামিরা হাজার টোপ ফেলবে সিউওর। সামিরা মেয়েটা খারাপ না। অফিস পলিটিক্সে বহু হেল্প করছে বাট ওর একটাই বদ অভ্যাস। সুন্দর ছেলে দেখলে গলে যায়। অবশ্য বলতে হবে মাহফুজ সাহেব বেশ হ্যান্ডসাম। কর্পোরেট ওয়েল ড্রেসড হ্যান্ডসাম না ঠিক, একটা রাফ বাট হ্যান্ডসাম লুক। আজকে জিন্স আর হাটা গোটানো শার্ট পড়া। বেশ লাগছে। তবে সামিরার হাত থেকে বের না করলে আমার কাজ হবে না।
সামিরার সামনে গিয়ে মাহফুজ সাহেবের সাথে কথা শুরু করলাম। জানি পরে এটা নিয়ে সামিরার ভাল টিজ শুনতে হবে। তবে সামিরা কে সুযোগ দিলে আজকে আর মাহফুজ সাহেব কে ছাড়বে না। তাই আমি আমার প্রজেক্টের নানা কথা বর্ণনা করে আমার প্রশ্ন শুরু করলাম। সামিরা বোরড হয়ে চোখ উলটে চলে গেল যাবার সময় অবশ্য আমার কানে কানে বলে গেল ওয়েল ডান বেবি। আজকে সামিরা ভাল টিজ করবে বোঝা যাচ্ছে। আমার কথা অনেক কিছু মাহফুজ সাহেবের কাছে কোন সেন্স মেক করছে না বোঝা গেল, টেকনিক্যাল কথা। আমার মেইন উদ্দ্যেশ অবশ্য ছিল সামিরা কে বোর করা। সেটা সফল। তাই এবার পয়েন্ট ধরে ধরে নানা প্রশ্ন করলাম। উনার কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে আমার প্রজেক্ট এলাকার কালচার ইকোনমি নিয়ে উনার ভাল ধারণা আছে। কথাও ভাল বলেন। আমার কাছে লাগবে। আমার থট প্রসেসের কিছু ভুল ধরিয়ে দিল, সব ভ্যালিড পয়েন্ট। আমি এবার জানতে চাইলাম কিভাবে এই সব নিয়ে আর ভাল ধারণা পাওয়া যায়। উনার উত্তর হল আপনাকে এইসব এলাকায় সরাসরি যেতে হবে। মানুষের সাথে কথা বলতে হবে। হেটে হেটে দেখতে হবে। আপনাদের বর্তমান ডিস্ট্রিবিউশন লাইন কীভাবে কতটুকু কাজ করে সেটা এক্সেল শিটে না দেখে সরাসরি মাঠে নেমে আড়াল থেকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মোদ্দা কথা মাঠে নেমে দেখতে হবে। আমি রাজি হয়ে গেলাম।
তখন মনে হল একা একা বা আমাদের কোম্পানির লোক নিয়ে ফিল্ডে যাবার থেকে মাহফুজ সাহেব কে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়। পলিটিক্স করেন, অনেক পরিচিত থাকার কথা। তেমন কাউকে যদি আমার সাথে ট্যাগ করে দেন তাহলে আমার পুরান ঢাকায় চলাচল আর কথা বলতে সুবিধা হবে। অবাক ব্যাপার উনি নিজেই যাবেন বলে প্রস্তাব দিলেন। গুড। আমি বললাম না না আপনার কষ্ট করা লাগবে না। আপনার পরিচিত পলিটিক্যাল বা অন্য কাউ কে যদি বলেন তাতেই হবে। উনাদের খরচ আমরা বহন করব। মাহফুজ সাহেব বললেন ম্যাডাম এতে আমারো লাভ আছে। আমি আপনাদের সাথে থেকে যদি বুঝি আপনারা কিভাবে কাজ করেন তাহলে পরে অন্য কোন কোম্পানির সাথে আমার কাজ করতে সুবিধা হবে। বাহ, ফোকাসড লোক দেখা যায় মাহফুজ সাহেব। সাধারণত হ্যান্ডসাম ছেলেরা তেমন কাজেকর্মে ফোকাসড হয় না ভাবে চেহারা দিয়ে সব জয় করবে। গুড পয়েন্ট মাহফুজ সাহেব খালি রাফ টাফ হ্যান্ডসাম না, সাথে ফোকাসড। আই লাইক ইট। ঠিক হলে আগামী সাপ্তাহে উইকএন্ডে আমরা প্রথম আমাদের দক্ষিণ ঢাকা প্রজেক্টের ফিল্ড ভ্রমণ শুরু করব।
কথা বার্তা শেষ করে নিজের কিউবিকলে এসে বসেছি। একটু পর ম্যাসেঞ্জারে সামিরার নক। কফি লাউঞ্জে আসার জন্য। সাড়ে তিনটা চারটার দিকে এমনি একটা ব্রেক নেই তাই গেলাম কফি লাউঞ্জে। গিয়ে দেখি সামিরা বসে আছে আর মিটি মিটি হাসছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম কি ব্যাপার। সামিরা বলল একই প্রশ্ন তো আমার? এতদিন জানতাম ছেলে দেখলে আমি হামলে পড়ি, স্লাট। কত কিছু বললি আজকে আমাকে ভাগিয়ে দিয়ে একদম মাহফুজের দখল নিয়ে নিলি। আমি হাসতে হাসতে বললাম একদম নাম ধরে ডাকছিস। সামিরা বলল এমন হ্যান্ডসাম হাংক কে সাহেব বলে পোষাবে না। রাতে যখন চিন্তা করে খেলা করব না তখন কি আর মাহফুজ সাহেব বলব, তখন বলব প্লিজ মাহফুজ কিস মি। আমি বললাম আস্তে বল। আশেপাশে কেউ শুনবে। সামিরা বলল শুনলে শুনবে এমন হাংকের সাথে হাংকি পাংকি লুকিয়ে করে মজা কি। উফ কি শোল্ডার দেখছিস। ওর কোলে উঠতে যা আরাম লাগবে। আমি হাসছি। সামিরা ডার্টি কথার ওস্তাদ। আর হাতের পাঞ্জাটা দেখছিস? কি বড়। এমন হাতে আমার সোনামনি দুইটা গেলে কেমন আদর পাবে বল, এই বলে টপসের উপর দিয়ে নিজের বুবসে নিজেই চাপ দিল সামিরা।
প্ল্যান করা আর প্ল্যান এক্সিকিউশন করা ভিন্ন জিনিস। কর্পোরেট ডিনারের পর ভেবেছিলাম দুই একদিনের মধ্যে সাবরিনার ফোন পাব, যদি নাও পাই তাহলেও অন্তত ওদের অফিস থেকে কোন কাজে ফোন পাব। দুই সাপ্তাহ চলে গেল এখন পর্যন্ত কোন খোজ নেই। খালেদ চাচার ওখানে একদিন হাসনাত ভাই কে জিজ্ঞেস করলাম আমাকে তো লিয়াজো বানালেন ওরা তো কিছু বলল না। হাসনাত ভাই বলল চিল, কর্পোরেট হাউজ গুলো বেশির ভাগ সমস্যা নিজেরাই সলভ করে যদি একান্তই না পারে তাহলে আমাদের খোজ দেয় অথবা যদি কোন তথ্যের দরকার হয় যেটা আমরা দিতে পারব তাহলে যোগাযোগ করে। অনেক সময় দুই তিন মাসেও কোন ফোন আসে না। আবার অনেক সময় এক দিনেই কয়েকবার। শুনে মনে হল এভাবে বসে থাকলে কাজ আর পিছাবে। তাই নিজেকেই কোন উদ্যোগ নিতে হবে। আমি সাবরিনাদের কর্পোরেশনের আমিনুল সাহেব কে ফোন দিলাম। উনি আমাদের মাঝে লিয়াজো হিসেবে কাজ করার কথা। বললাম কি খবর আমিনুল ভাই। কেমন আছেন? কোন কিছুর দরকার থাকলে বলবেন। খালেদ চাচা বলে দিয়েছে আপনারা কিছু চাইলে যেন মনোযোগ দিয়ে করে দেই। শুনে উনি বললেন আমাদের এখানে চা খেয়ে যান। বাকি অনেকের সাথেও পরিচিত হয়ে যান। যেন পরে অন্যরা দরকার হলে সরাসরি আপনাকে নক দিতে পারে। আমি সুযোগ লুফে নিলাম। পরের দিন বিকাল তিনটার দিকে যাব বলে কথা দিলাম।
মানুষ পটানোর একটা প্রথম উপায় হল যাকে পটাতে চান তা সে যে উদ্দ্যেশেই হোক না কেন তার সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব জানা। সিনথি জানে আমি সাবরিনাদের সাথে লিয়াজো হিসেবে কাজ করছি। তাই ওর থেকে অনেক কিছু জানলাম ওর আপু সম্পর্কে। কি খেতে পছন্দ করে, কেমন মুভি দেখে, কেমন সিরিয়াল দেখে, কি নিয়ে গল্প করতে পছন্দ করে এইসব। এখন এই তথ্যগুলো সময় মত কাজে লাগাতে হবে। জিন্স, কেডস আর হাতা গোটানো ফুল শার্ট পড়ে গেলাম অফিসে। বেশ খাতির করল। আমিনুল ভাই আমাকে ঘুরে ঘুরে বেশ কয়েকটা অফিসে নিয়ে গেল। মার্কেটিং এন্ড ডিস্ট্রিবিউশনের লোকদের সাথে কথা হল বেশি। উনাদের সাথেই ডিল হবে বেশি আমার। সবশেষে নিয়ে গেল স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং এন্ড ফোরসাইট ডিপার্টমেন্টে। বলল উনারা বেশ বড় একটা কাজে হাত দিয়েছেন। সারাদেশ জুড়ে ডিস্ট্রিবিউশন লাইন টা কে আর কস্ট এফেক্টিভ করা আর আর বেশি গ্রাহকের কাছে ডিস্ট্রিবিউশন লাইন দিয়ে কিভাবে পৌছানো যায় সেইসব নিয়ে। ওখানে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হল। তবে তখনো পর্যন্ত সাবরিনার সাথে দেখা হয় নি। নিজে থেকে কিছু জিজ্ঞেস করব কিনা সেটা নিয়ে দোমনা করছি এমন সময় সাবরিনার সাথে দেখা হয়ে গেল। আমাকে দেখেই বলল আরে মাহফুজ সাহেব আপনি এখানে। আমি বললাম ম্যাডাম আপনাদের খোজ নিতে এলাম। সাবরিনা বলল আসুন কফি খান। আমি উত্তর দিলাম আজকে কয়েক কাপ খাওয়া হয়ে গেছে অলরেডি তবে গল্প করতে পারি কফি ছাড়া। একটা হাসি দিয়ে সাবরিনা বলল ওকে, এই বলে ওদের লাউঞ্জে নিয়ে গেল। সাবরিনা অল্প কথার পরেই কাজের কথায় চলে গেল। দারুণ ফোকাসড। আমাকে নানা প্রশ্ন করছে। আমি বললাম ম্যাডাম আপনি তো আপনাদের ভাষায় টেকনিক্যাল প্রশ্ন করছেন তার থেকে আর ভেংগে বলুন কি জানতে চান। আমি দেখি হেল্প করতে পারি কিনা। সাবরিনার কথা শুনে মনে হল ওর আসলে দক্ষিণ ঢাকার মধ্যবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্ত আর নিন্মবিত্ত জীবনের সম্পর্কে ধারণা খুব কম। এইখানে লাক্সারি থেকে নিড অনেক সময় বড় প্রশ্ন যখন সে তার অর্থ খরচ করে। লাক্সারি পণ্যের ধারণা এখানে ভিন্ন। রুচি ভিন্ন। এই ব্যাপারটা সম্পর্কে সাবরিনার ধারণা কম। ওরা একটা মার্কেট রিসার্চ ফার্ম কে মার্কেট স্টাডি করতে দিয়েছিল। ঐ ফার্মের স্টাডিতে সংখ্যা, চার্ট, গ্রাফ দিয়ে মানুষের রুচি, ক্রয়ক্ষমতা এইসব নিয়ে মতামত দিয়েছে। আসলে কাগজের এইসব সংখ্যা, চার্ট, গ্রাফ দিয়ে সত্যিকারের কাজ করা কঠিন যদি না মাঠের রিয়েলিটি সম্পর্কে ভাল ধারণা না থাকে। সাবরিনার সমস্যা সেইখানে। আইবিএর ডিগ্রি দিয়ে কিভাবে এইসব সংখ্যা কে প্ল্যান বানানো যায় সেটা শিখে এসেছে কিন্তু এই সংখ্যা গুলো ঐ মানুষের জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলে সেই ধারণা নেই। আমি ওর দৃষ্টিভংগীর এই ফাকফোকর গুলো দেখানো শুরু করলাম বিভিন্ন উদাহারণ দিয়ে। সাবরিনা দেখি মনযোগ দিয়ে শুনছে। শুনতে শুনতে দেখি মোবাইলে নোট নিচ্ছে। আমার কথা শেষ করার পর সাবরিনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সাবরিনা বলল, এইবার মাহফুজ সাহেব বলেন কীভাবে এই ফাকফোকর দূর করা যায়?
সাবরিনার ভাষ্যঃ অফিসে চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে আমি আমার প্রজেক্টের দ্বায়িত্ব পেয়েছি। আস্তে আস্তে কোন রেজাল্ট দেখানোর প্রশ্ন উঠছে। অফিস পলিটিক্স তো আছেই সাথে আছে লুইচ্চা খাইরুল। অফিসের মেয়েরা আড়ালে এই নামেই ডাকে খায়রুল ভাই কে। চোখ দিয়ে পারলে খেয়ে ফেলে। কিছু করার উপায় নাই বর্তমান ম্যানেজমেন্টের প্রিয়পাত্র। উনাকে বেশি পাত্তা দিই না দেখে লেগে আছে খুত বের করার জন্য আর অফিস পলিটিক্সে অনেকে আমার নিয়োগে সন্তুষ্ট না, তারাও ওতপেতে বসে আছে। এইসব কারণে আর হাসফাস লাগছে আজকাল। এইসময় মাহফুজ সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেল। যথারীতি সামিরা গিয়ে কথা বলছে। একটু গুড লুকিং ছেলে দেখলেই যেভাবে হামলে পড়ে। তার উপর মাহফুস সাহেব রাফ, ম্যানলি এন্ড হ্যান্ডসাম। সামিরা হাজার টোপ ফেলবে সিউওর। সামিরা মেয়েটা খারাপ না। অফিস পলিটিক্সে বহু হেল্প করছে বাট ওর একটাই বদ অভ্যাস। সুন্দর ছেলে দেখলে গলে যায়। অবশ্য বলতে হবে মাহফুজ সাহেব বেশ হ্যান্ডসাম। কর্পোরেট ওয়েল ড্রেসড হ্যান্ডসাম না ঠিক, একটা রাফ বাট হ্যান্ডসাম লুক। আজকে জিন্স আর হাটা গোটানো শার্ট পড়া। বেশ লাগছে। তবে সামিরার হাত থেকে বের না করলে আমার কাজ হবে না।
সামিরার সামনে গিয়ে মাহফুজ সাহেবের সাথে কথা শুরু করলাম। জানি পরে এটা নিয়ে সামিরার ভাল টিজ শুনতে হবে। তবে সামিরা কে সুযোগ দিলে আজকে আর মাহফুজ সাহেব কে ছাড়বে না। তাই আমি আমার প্রজেক্টের নানা কথা বর্ণনা করে আমার প্রশ্ন শুরু করলাম। সামিরা বোরড হয়ে চোখ উলটে চলে গেল যাবার সময় অবশ্য আমার কানে কানে বলে গেল ওয়েল ডান বেবি। আজকে সামিরা ভাল টিজ করবে বোঝা যাচ্ছে। আমার কথা অনেক কিছু মাহফুজ সাহেবের কাছে কোন সেন্স মেক করছে না বোঝা গেল, টেকনিক্যাল কথা। আমার মেইন উদ্দ্যেশ অবশ্য ছিল সামিরা কে বোর করা। সেটা সফল। তাই এবার পয়েন্ট ধরে ধরে নানা প্রশ্ন করলাম। উনার কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে আমার প্রজেক্ট এলাকার কালচার ইকোনমি নিয়ে উনার ভাল ধারণা আছে। কথাও ভাল বলেন। আমার কাছে লাগবে। আমার থট প্রসেসের কিছু ভুল ধরিয়ে দিল, সব ভ্যালিড পয়েন্ট। আমি এবার জানতে চাইলাম কিভাবে এই সব নিয়ে আর ভাল ধারণা পাওয়া যায়। উনার উত্তর হল আপনাকে এইসব এলাকায় সরাসরি যেতে হবে। মানুষের সাথে কথা বলতে হবে। হেটে হেটে দেখতে হবে। আপনাদের বর্তমান ডিস্ট্রিবিউশন লাইন কীভাবে কতটুকু কাজ করে সেটা এক্সেল শিটে না দেখে সরাসরি মাঠে নেমে আড়াল থেকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মোদ্দা কথা মাঠে নেমে দেখতে হবে। আমি রাজি হয়ে গেলাম।
তখন মনে হল একা একা বা আমাদের কোম্পানির লোক নিয়ে ফিল্ডে যাবার থেকে মাহফুজ সাহেব কে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়। পলিটিক্স করেন, অনেক পরিচিত থাকার কথা। তেমন কাউকে যদি আমার সাথে ট্যাগ করে দেন তাহলে আমার পুরান ঢাকায় চলাচল আর কথা বলতে সুবিধা হবে। অবাক ব্যাপার উনি নিজেই যাবেন বলে প্রস্তাব দিলেন। গুড। আমি বললাম না না আপনার কষ্ট করা লাগবে না। আপনার পরিচিত পলিটিক্যাল বা অন্য কাউ কে যদি বলেন তাতেই হবে। উনাদের খরচ আমরা বহন করব। মাহফুজ সাহেব বললেন ম্যাডাম এতে আমারো লাভ আছে। আমি আপনাদের সাথে থেকে যদি বুঝি আপনারা কিভাবে কাজ করেন তাহলে পরে অন্য কোন কোম্পানির সাথে আমার কাজ করতে সুবিধা হবে। বাহ, ফোকাসড লোক দেখা যায় মাহফুজ সাহেব। সাধারণত হ্যান্ডসাম ছেলেরা তেমন কাজেকর্মে ফোকাসড হয় না ভাবে চেহারা দিয়ে সব জয় করবে। গুড পয়েন্ট মাহফুজ সাহেব খালি রাফ টাফ হ্যান্ডসাম না, সাথে ফোকাসড। আই লাইক ইট। ঠিক হলে আগামী সাপ্তাহে উইকএন্ডে আমরা প্রথম আমাদের দক্ষিণ ঢাকা প্রজেক্টের ফিল্ড ভ্রমণ শুরু করব।
কথা বার্তা শেষ করে নিজের কিউবিকলে এসে বসেছি। একটু পর ম্যাসেঞ্জারে সামিরার নক। কফি লাউঞ্জে আসার জন্য। সাড়ে তিনটা চারটার দিকে এমনি একটা ব্রেক নেই তাই গেলাম কফি লাউঞ্জে। গিয়ে দেখি সামিরা বসে আছে আর মিটি মিটি হাসছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম কি ব্যাপার। সামিরা বলল একই প্রশ্ন তো আমার? এতদিন জানতাম ছেলে দেখলে আমি হামলে পড়ি, স্লাট। কত কিছু বললি আজকে আমাকে ভাগিয়ে দিয়ে একদম মাহফুজের দখল নিয়ে নিলি। আমি হাসতে হাসতে বললাম একদম নাম ধরে ডাকছিস। সামিরা বলল এমন হ্যান্ডসাম হাংক কে সাহেব বলে পোষাবে না। রাতে যখন চিন্তা করে খেলা করব না তখন কি আর মাহফুজ সাহেব বলব, তখন বলব প্লিজ মাহফুজ কিস মি। আমি বললাম আস্তে বল। আশেপাশে কেউ শুনবে। সামিরা বলল শুনলে শুনবে এমন হাংকের সাথে হাংকি পাংকি লুকিয়ে করে মজা কি। উফ কি শোল্ডার দেখছিস। ওর কোলে উঠতে যা আরাম লাগবে। আমি হাসছি। সামিরা ডার্টি কথার ওস্তাদ। আর হাতের পাঞ্জাটা দেখছিস? কি বড়। এমন হাতে আমার সোনামনি দুইটা গেলে কেমন আদর পাবে বল, এই বলে টপসের উপর দিয়ে নিজের বুবসে নিজেই চাপ দিল সামিরা।