24-01-2023, 11:08 PM
(This post was last modified: 24-01-2023, 11:09 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আপডেট ৬
পলিটিক্স কে আপনি যত দূরে রাখার চেষ্টা করেন না কেন সেটা কাছে আসবেই। আধুনিক রাষ্ট্রে রাজনীতি কে উপেক্ষা করে বেচে থাকা যায় এই ধারনা একমাত্র বোকাদের থাকে। এইরকম হাজার হাজার মূর্খ সমাজের নিচ থেকে এলিটস্তর পর্যন্ত ছড়ানো। আই হেট পলিটিক্স বললেও পলিটিক্স কে এড়ানো এত সহজ নয়। বাজারে পণ্যের দাম থেকে, বাড়ি বানানোর পারমিট, জন্ম সনদ থেকে মৃত্যু সনদ সবখানে রাষ্ট্র। আর রাষ্ট্র মানেই পলিটিক্স। প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করা একটা বড় অংশ মনে করে তারা রাজনীতি থেকে বাইরে আছে এবং এদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের এলিট ভেবে দেশের এই নোংরা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না। এরাও হয়ত ঠিক করে জানে না কর্পোরেট সেক্টর আর পলিটিক্যাল সেক্টরের যে গোপন ও গভীর যোগসাজোস সেখানে এরা পরষ্পরের উপর নির্ভরশীল। নিজের পছন্দ মত পলিসি পেতে এবং বিভিন্ন সরকারী ছাড় পেতে প্রাইভেট সেক্টরের দরকার পলিটিক্যাল ব্যাকিং। আর প্রাইভেট সেক্টরের গ্লামার প্লাস অর্থের ব্যাকিং দরকার রাজনীতিবিদদের। তাই কর্পোরেটে যারা বলেন আই হেট পলিটিক্স তারা আসলে একটা কর্পোরেশনের জীবনচক্র ভালভাবে না বুঝেই বলেন।
এর আগে একদিন ভার্সিটির জুনিয়র শফিকের কাছ থেকে সাবরিনার অফিসের খোজ নিয়েছিলাম। সাবরিনা ওদের অফিসের স্ট্রাটেজিক প্লানিং এন্ড ফোরসাইট ডিপার্টমেন্টে আছে। এরা হচ্ছে কর্পোরেটের ইন্টালেকচুয়াল ডিভিশন। এরা যেকোন সমস্যার কি সমাধান হতে পারে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে কাজ করে। তো সাবরিনা আর শফিকের প্রতিষ্ঠান তাদের দেশ জুড়ে পুরো ডিস্ট্রিবিউশন লাইনটা ঢেলে সাজাতে কাজ করছে গত প্রায় এক বছর। এই ঢেলে সাজানোর কাজে সবচেয়ে ঝামেলা নাকি পোহাতে হচ্ছে ঢাকা শহরের ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ। ঢাকা দক্ষিণে ধানমন্ডির মত পশ এলাকা, শাহাজানপুর মালীবাগের মত মধ্যবিত্ত এলাকা, কেরানীগঞ্জের মত নিন্মবিত্ত এলাকা আর পুরান ঢাকার মত জগাখিচুড়ি আছে। এইখানে ওয়ান সাইজ ফিট ফর অল হবে না। প্রত্যেক এলাকার নিড অনুযায়ী আলাদা স্ট্রাটেজি। আর এই ঢাকা দক্ষিণের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবরিনা কে। দেশের সেরা ম্যানেজমেন্ট কলেজ গ্রাজুয়েট তাই ওর উপর দ্বায়িত্ব এটা ঠিক করার। তবে শফিকের তথ্য অনুযায়ী আগের দুই দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত লোকের মত সাবরিনাও ঠিক কাজটা গুছিয়ে উঠতে পারে নি এখনো। অফিসে এই ঢাকা দক্ষিণের এই প্রজেক্টের নিক নেইম ডেড জোন। এইটার দ্বায়িত্ব পাওয়া মানে ইউ আর ডেড। এইসব শুনে মাথায় একটা বুদ্ধি আসল।
ধানমন্ডির পার্টি অফিসে একদিন সন্ধ্যায় দুই সিনিয়র পলিটিশিয়ান অফিসের বাইরে সিগারেট খেতে খেতে কথা বলছিল। আব্বা আর নানা ঢাকা মহানগরের রাজনীতেতে বহু বছর ধরে সক্রিয় হওয়ায় অনেক বড় বড় পলিটিশিয়ান আগে থেকে পরিচিত। আমাদের ফ্যামিলি এই দলের ডাই হার্ড সাপোর্টার সাথে দলের দূর্দিনেও মাঠে থাকায় অনেক রাজনীতিবিদ একদম বাবার পরিচিত। তাই অনেক বড় নেতা কে সেই সূত্রে মামা, চাচা, কাকা ডাকি। এইরকম দুই রাজনীতিবিদ নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল আর আমি সাথে দাঁড়ানো। তখন যুব সংগঠনের নতুন পদ পাইছি। অর্গানাইজিং সেক্রেটারি। সেটা পাওয়ার পিছনে এই দুইজনের আশীর্বাদ আছে। তাই পার্টি অফিসে উনারা আসলে আমি আর আমার ছেলেপেলেরা উনাদের প্রোটোকল দেই। তা ঐসময় উনারা যা কথা বলতেছিলেন তা শুনলেও মাথায় ঢুকে নায়। এখন এতদিন পর শফিকের কাছে সাবরিনার এসাইনমেন্ট শুনে বুঝলাম আমার জন্য একটা ওপেনিং আছে। এইটা ব্যবহার করে সাবরিনার কাছে পৌছানো যায়। প্রত্যেকটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যাদের পন্য বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য পৌছাতে হয় সেটা সাবান থেকে গুড়ো দুধ বা চাল থেকে কলম যে কোন কিছু হতে পারে তাদের এলাকা ভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশন এজেন্ট থাকে। কার সরাসরি নিজের বেতনভুক্ত আর কার থার্ড পার্টি। এই এজেন্টরা যেন যেকোন চাদাবাজি, গুন্ডাদের খবরদারি এড়িয়ে মাল পৌছাতে পারে, প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য কর্পোরেশন যেন তাদের মালামাল এলাকার মুদি দোকান, অন্য স্টেশনারি দোকানে পৌছাতে বাধা দিতে না পারে তাই তাদের সাথে ক্ষমতাশীল পলিটিক্যাল পার্টির নেতাদের একটা আন্ডারস্টান্ডিং থাকে। কখনো টাকা, কখনো বিদেশ ট্যুর, কখনো নারী বা অন্য কোন ফেভার দিয়ে এইসব নেতাদের ব্যাকিং নেওয়া হয়। আর এইসব কাজ এই বড় নেতারা সরাসরি ডিল করে না। তারা তাদের কোন চামচা বা আর ছোট নেতা কে দিয়ে মাঠের কাজ ডিল করায়। এই চামচা বা ছোট নেতারা কর্পোরেশনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখে। ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে কোন অহেতুক ঝামেলা হলে এরা প্রথম ফোন পায় কর্পোরেশন থেকে। এরা সমাধান করতে না পারলে পরে বড় নেতা। একটু খোজ নিতেই জানলাম সাবরিনাদের কর্পোরেট হাউজের মেইন ডিল খালেদ চাচার সাথে। খালেদ চাচা ঢাকার একটা আসনের এমপি আর সাথে ঢাকা মহানগরের বড় পদে আছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও কোন একটা উপ-কমিটির সম্পাদক। ভাল প্রভাব রাখেন। উনার নির্বাচনী এলাকায় আমাদের ওয়ার্ড আর উনি যখন জুনিয়র কর্মী তখন নানার সাথে ভাল খাতির ছিল। এইজন্য আমাদের পরিবারের সাথে ভাল সম্পর্ক। মা কে বোন বলে ডাকেন আর বাবা যেহেতু তার নির্বাচনী এলাকার একটা ওয়ার্ডের পার্টি সেক্রেটারি তাই বাবার সাথেও ভাল খাতির। ছোটবেলা থেকেই চিনি উনাকে।
খালেদ চাচার সাথে দেখা করলাম। উনার হয়ে কাজ করলেও সরাসরি উনার আন্ডারে কাজ করা হয় নায়। আমি চাচা কে বললাম চাচা আপনি তো বাবাকে বলছিলেন আমাকে আপনার সাথে কিছু কাজ করতে , তাই আসলাম। চাচা বললেন ভাতিজা এতদিন পর আসলা। উত্তর দিলাম চাচা আপনার মত মুরব্বীর কাছ থেকে কাজ শিখতে হইলে সাথে থেকেই শিখতে হবে। উনি খুশি। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় পড়া লোকজন উনার আন্ডারে খুব একটা রাজনীতি করে না কারণ উনি যে এলাকার এমপি সেখানে ক্যাডার পলিটিক্স বেশি আর ভার্সিটির ছেলেরা এখানে সহজে টিকবে না। আমি ব্যতিক্রম। ভার্সিটিতে পড়ছি, এলাকার লোকাল, উনার লয়াল ফ্যামিলির লোক। তাই মনের মত লোক পাওয়ার আনন্দে খুশি উনি। বললেন ঠিকাছে কি ধরনের কাজ দেখতে চাস তুই। আমি বললাম চাচা আপনি তো মনে হয় বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজ গুলার সাথে ডিল করেন, যদি আমারে সেই কাজে লাগায়ে দেন। আমি খোজ নিয়েই গেছি। আগে চাচার হয়ে যে কাজ দেখত হাসিব ভাই, সে এখন জেলে। অন্তত বছর দুয়েকের জন্য মাঠে থাকবে না। চাচা তাই আমাকে লাগায়ে দিল। চাচার সেক্রেটারি হাসনাত ভাই। বলল হাসনাত ভাই থেকে সব বুঝে নিতে। লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রথম চাল ঠিকমত পড়ল। হাসনাত ভাই কাজকর্ম বুঝায়ে দিল। আমাকে মেইনলি রিপোর্ট করা লাগবে হাসনাত ভাইয়ের কাছে। সেখানে সমাধান না হলে খালেদ চাচা দেখবে। সাবরিনাদের এনুয়াল কর্পোরেট ডিনার পরের সাপ্তাহে। বলল ভাল ভাবে সেজেগুজে যেতে। ঠিক পলিটিক্যাল লোকদের মত না, পারলে একটু ফিটফাট। সুটেড হলে ভাল হয়। চাচাও যাবে, সেখানে যাদের সাথে মেইনলি যোগাযোগ করতে হবে তাদের সাথে কথা বলায়ে দিবে।
কর্পোরেট ডিনারের দিন হাসনাত ভাইয়ের কথা অনুযায়ী ভালভাবে রেডি হয়ে গেলাম। স্যুট, টাই। সাধারণত কোন কোন বিয়ের দাওয়াতে যাই এভাবে আজকে গেলাম। নিজের কাছে নিজেকেই একটু অচেনা লাগছে। পলিটিক্স করি, নিজের ব্যবসা আছে। জিন্স, শার্ট/গেঞ্জি, কেডস অথবা পাজামা পাঞ্জাবী পড়া হয় বছরের ৩৬৩ দিন। তাই নিজের কাছে একটু অস্বস্তি লাগছে। তবে প্রোগ্রামের ভিতরে ঢুকতে অস্বস্তি একটু কমল কারণ বাকি সবাই প্রায় এক ড্রেস কোডের। চাচার সাথে গেছি। খালেদ চাচা, হাসনাত ভাই আর আমি। আর হাই পলিটিক্যাল লিডাররা আসছে। চাচা ঘুরে ঘুরে সবার সাথে কথা বলছেন। হাসনাত ভাই আমাকে নিয়ে এক কোনায় এক টেবিলে নিয়ে গেলেন। একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে বললেন এইযে এটা হল আমিনুল ভাই। উনি আমাদের সাথে লিয়াজো মেইনটেইন করেন। উনার সাথে পরিচয় হতে হতেই উনি আমাকে নিয়ে একটা গ্রুপের সামনে গেলেন। বললেন এরা আমাদের স্ট্রাটেজি গ্রুপ, আপাতত এনাদের কে কিছুদিন আপনার হেল্প করতে হবে। তিন জন ছেলে আর একজন মেয়ে। সাবরিনা। সবাই খুব ওয়েল ড্রেসড। আমি বললাম হাই।
পলিটিক্স কে আপনি যত দূরে রাখার চেষ্টা করেন না কেন সেটা কাছে আসবেই। আধুনিক রাষ্ট্রে রাজনীতি কে উপেক্ষা করে বেচে থাকা যায় এই ধারনা একমাত্র বোকাদের থাকে। এইরকম হাজার হাজার মূর্খ সমাজের নিচ থেকে এলিটস্তর পর্যন্ত ছড়ানো। আই হেট পলিটিক্স বললেও পলিটিক্স কে এড়ানো এত সহজ নয়। বাজারে পণ্যের দাম থেকে, বাড়ি বানানোর পারমিট, জন্ম সনদ থেকে মৃত্যু সনদ সবখানে রাষ্ট্র। আর রাষ্ট্র মানেই পলিটিক্স। প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করা একটা বড় অংশ মনে করে তারা রাজনীতি থেকে বাইরে আছে এবং এদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের এলিট ভেবে দেশের এই নোংরা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না। এরাও হয়ত ঠিক করে জানে না কর্পোরেট সেক্টর আর পলিটিক্যাল সেক্টরের যে গোপন ও গভীর যোগসাজোস সেখানে এরা পরষ্পরের উপর নির্ভরশীল। নিজের পছন্দ মত পলিসি পেতে এবং বিভিন্ন সরকারী ছাড় পেতে প্রাইভেট সেক্টরের দরকার পলিটিক্যাল ব্যাকিং। আর প্রাইভেট সেক্টরের গ্লামার প্লাস অর্থের ব্যাকিং দরকার রাজনীতিবিদদের। তাই কর্পোরেটে যারা বলেন আই হেট পলিটিক্স তারা আসলে একটা কর্পোরেশনের জীবনচক্র ভালভাবে না বুঝেই বলেন।
এর আগে একদিন ভার্সিটির জুনিয়র শফিকের কাছ থেকে সাবরিনার অফিসের খোজ নিয়েছিলাম। সাবরিনা ওদের অফিসের স্ট্রাটেজিক প্লানিং এন্ড ফোরসাইট ডিপার্টমেন্টে আছে। এরা হচ্ছে কর্পোরেটের ইন্টালেকচুয়াল ডিভিশন। এরা যেকোন সমস্যার কি সমাধান হতে পারে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে কাজ করে। তো সাবরিনা আর শফিকের প্রতিষ্ঠান তাদের দেশ জুড়ে পুরো ডিস্ট্রিবিউশন লাইনটা ঢেলে সাজাতে কাজ করছে গত প্রায় এক বছর। এই ঢেলে সাজানোর কাজে সবচেয়ে ঝামেলা নাকি পোহাতে হচ্ছে ঢাকা শহরের ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ। ঢাকা দক্ষিণে ধানমন্ডির মত পশ এলাকা, শাহাজানপুর মালীবাগের মত মধ্যবিত্ত এলাকা, কেরানীগঞ্জের মত নিন্মবিত্ত এলাকা আর পুরান ঢাকার মত জগাখিচুড়ি আছে। এইখানে ওয়ান সাইজ ফিট ফর অল হবে না। প্রত্যেক এলাকার নিড অনুযায়ী আলাদা স্ট্রাটেজি। আর এই ঢাকা দক্ষিণের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবরিনা কে। দেশের সেরা ম্যানেজমেন্ট কলেজ গ্রাজুয়েট তাই ওর উপর দ্বায়িত্ব এটা ঠিক করার। তবে শফিকের তথ্য অনুযায়ী আগের দুই দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত লোকের মত সাবরিনাও ঠিক কাজটা গুছিয়ে উঠতে পারে নি এখনো। অফিসে এই ঢাকা দক্ষিণের এই প্রজেক্টের নিক নেইম ডেড জোন। এইটার দ্বায়িত্ব পাওয়া মানে ইউ আর ডেড। এইসব শুনে মাথায় একটা বুদ্ধি আসল।
ধানমন্ডির পার্টি অফিসে একদিন সন্ধ্যায় দুই সিনিয়র পলিটিশিয়ান অফিসের বাইরে সিগারেট খেতে খেতে কথা বলছিল। আব্বা আর নানা ঢাকা মহানগরের রাজনীতেতে বহু বছর ধরে সক্রিয় হওয়ায় অনেক বড় বড় পলিটিশিয়ান আগে থেকে পরিচিত। আমাদের ফ্যামিলি এই দলের ডাই হার্ড সাপোর্টার সাথে দলের দূর্দিনেও মাঠে থাকায় অনেক রাজনীতিবিদ একদম বাবার পরিচিত। তাই অনেক বড় নেতা কে সেই সূত্রে মামা, চাচা, কাকা ডাকি। এইরকম দুই রাজনীতিবিদ নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল আর আমি সাথে দাঁড়ানো। তখন যুব সংগঠনের নতুন পদ পাইছি। অর্গানাইজিং সেক্রেটারি। সেটা পাওয়ার পিছনে এই দুইজনের আশীর্বাদ আছে। তাই পার্টি অফিসে উনারা আসলে আমি আর আমার ছেলেপেলেরা উনাদের প্রোটোকল দেই। তা ঐসময় উনারা যা কথা বলতেছিলেন তা শুনলেও মাথায় ঢুকে নায়। এখন এতদিন পর শফিকের কাছে সাবরিনার এসাইনমেন্ট শুনে বুঝলাম আমার জন্য একটা ওপেনিং আছে। এইটা ব্যবহার করে সাবরিনার কাছে পৌছানো যায়। প্রত্যেকটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যাদের পন্য বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য পৌছাতে হয় সেটা সাবান থেকে গুড়ো দুধ বা চাল থেকে কলম যে কোন কিছু হতে পারে তাদের এলাকা ভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশন এজেন্ট থাকে। কার সরাসরি নিজের বেতনভুক্ত আর কার থার্ড পার্টি। এই এজেন্টরা যেন যেকোন চাদাবাজি, গুন্ডাদের খবরদারি এড়িয়ে মাল পৌছাতে পারে, প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য কর্পোরেশন যেন তাদের মালামাল এলাকার মুদি দোকান, অন্য স্টেশনারি দোকানে পৌছাতে বাধা দিতে না পারে তাই তাদের সাথে ক্ষমতাশীল পলিটিক্যাল পার্টির নেতাদের একটা আন্ডারস্টান্ডিং থাকে। কখনো টাকা, কখনো বিদেশ ট্যুর, কখনো নারী বা অন্য কোন ফেভার দিয়ে এইসব নেতাদের ব্যাকিং নেওয়া হয়। আর এইসব কাজ এই বড় নেতারা সরাসরি ডিল করে না। তারা তাদের কোন চামচা বা আর ছোট নেতা কে দিয়ে মাঠের কাজ ডিল করায়। এই চামচা বা ছোট নেতারা কর্পোরেশনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখে। ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে কোন অহেতুক ঝামেলা হলে এরা প্রথম ফোন পায় কর্পোরেশন থেকে। এরা সমাধান করতে না পারলে পরে বড় নেতা। একটু খোজ নিতেই জানলাম সাবরিনাদের কর্পোরেট হাউজের মেইন ডিল খালেদ চাচার সাথে। খালেদ চাচা ঢাকার একটা আসনের এমপি আর সাথে ঢাকা মহানগরের বড় পদে আছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও কোন একটা উপ-কমিটির সম্পাদক। ভাল প্রভাব রাখেন। উনার নির্বাচনী এলাকায় আমাদের ওয়ার্ড আর উনি যখন জুনিয়র কর্মী তখন নানার সাথে ভাল খাতির ছিল। এইজন্য আমাদের পরিবারের সাথে ভাল সম্পর্ক। মা কে বোন বলে ডাকেন আর বাবা যেহেতু তার নির্বাচনী এলাকার একটা ওয়ার্ডের পার্টি সেক্রেটারি তাই বাবার সাথেও ভাল খাতির। ছোটবেলা থেকেই চিনি উনাকে।
খালেদ চাচার সাথে দেখা করলাম। উনার হয়ে কাজ করলেও সরাসরি উনার আন্ডারে কাজ করা হয় নায়। আমি চাচা কে বললাম চাচা আপনি তো বাবাকে বলছিলেন আমাকে আপনার সাথে কিছু কাজ করতে , তাই আসলাম। চাচা বললেন ভাতিজা এতদিন পর আসলা। উত্তর দিলাম চাচা আপনার মত মুরব্বীর কাছ থেকে কাজ শিখতে হইলে সাথে থেকেই শিখতে হবে। উনি খুশি। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় পড়া লোকজন উনার আন্ডারে খুব একটা রাজনীতি করে না কারণ উনি যে এলাকার এমপি সেখানে ক্যাডার পলিটিক্স বেশি আর ভার্সিটির ছেলেরা এখানে সহজে টিকবে না। আমি ব্যতিক্রম। ভার্সিটিতে পড়ছি, এলাকার লোকাল, উনার লয়াল ফ্যামিলির লোক। তাই মনের মত লোক পাওয়ার আনন্দে খুশি উনি। বললেন ঠিকাছে কি ধরনের কাজ দেখতে চাস তুই। আমি বললাম চাচা আপনি তো মনে হয় বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজ গুলার সাথে ডিল করেন, যদি আমারে সেই কাজে লাগায়ে দেন। আমি খোজ নিয়েই গেছি। আগে চাচার হয়ে যে কাজ দেখত হাসিব ভাই, সে এখন জেলে। অন্তত বছর দুয়েকের জন্য মাঠে থাকবে না। চাচা তাই আমাকে লাগায়ে দিল। চাচার সেক্রেটারি হাসনাত ভাই। বলল হাসনাত ভাই থেকে সব বুঝে নিতে। লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রথম চাল ঠিকমত পড়ল। হাসনাত ভাই কাজকর্ম বুঝায়ে দিল। আমাকে মেইনলি রিপোর্ট করা লাগবে হাসনাত ভাইয়ের কাছে। সেখানে সমাধান না হলে খালেদ চাচা দেখবে। সাবরিনাদের এনুয়াল কর্পোরেট ডিনার পরের সাপ্তাহে। বলল ভাল ভাবে সেজেগুজে যেতে। ঠিক পলিটিক্যাল লোকদের মত না, পারলে একটু ফিটফাট। সুটেড হলে ভাল হয়। চাচাও যাবে, সেখানে যাদের সাথে মেইনলি যোগাযোগ করতে হবে তাদের সাথে কথা বলায়ে দিবে।
কর্পোরেট ডিনারের দিন হাসনাত ভাইয়ের কথা অনুযায়ী ভালভাবে রেডি হয়ে গেলাম। স্যুট, টাই। সাধারণত কোন কোন বিয়ের দাওয়াতে যাই এভাবে আজকে গেলাম। নিজের কাছে নিজেকেই একটু অচেনা লাগছে। পলিটিক্স করি, নিজের ব্যবসা আছে। জিন্স, শার্ট/গেঞ্জি, কেডস অথবা পাজামা পাঞ্জাবী পড়া হয় বছরের ৩৬৩ দিন। তাই নিজের কাছে একটু অস্বস্তি লাগছে। তবে প্রোগ্রামের ভিতরে ঢুকতে অস্বস্তি একটু কমল কারণ বাকি সবাই প্রায় এক ড্রেস কোডের। চাচার সাথে গেছি। খালেদ চাচা, হাসনাত ভাই আর আমি। আর হাই পলিটিক্যাল লিডাররা আসছে। চাচা ঘুরে ঘুরে সবার সাথে কথা বলছেন। হাসনাত ভাই আমাকে নিয়ে এক কোনায় এক টেবিলে নিয়ে গেলেন। একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে বললেন এইযে এটা হল আমিনুল ভাই। উনি আমাদের সাথে লিয়াজো মেইনটেইন করেন। উনার সাথে পরিচয় হতে হতেই উনি আমাকে নিয়ে একটা গ্রুপের সামনে গেলেন। বললেন এরা আমাদের স্ট্রাটেজি গ্রুপ, আপাতত এনাদের কে কিছুদিন আপনার হেল্প করতে হবে। তিন জন ছেলে আর একজন মেয়ে। সাবরিনা। সবাই খুব ওয়েল ড্রেসড। আমি বললাম হাই।