24-12-2022, 10:50 AM
পর্ব ৯
অরুণের শর্ত শুনে মনীষা থ হয়েগেছিলো। সে অরুণের ঘর থেকে বেরিয়ে ফের ব্যালকনিতে এসে ভেজা কাপড় গুলো মেলতে শুরু করেছিল। কিন্তু তার মন একেবারে অন্যমনস্ক ছিল। রবি পরীকে পড়তে বসিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়েছিল। সে আন্দাজ করতে পেরেছিলো যে কিছু একটা হয়েছে মনীষা ও অরুণের মধ্যে। সে তখন মনীষাকে খুঁজতে লাগলো। দেখলো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মনীষা। পিছন থেকে এসে রবি জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।
রবির আওয়াজ শুনে মনীষা পিছন ফিরে তাকালো। সে তখন এতোটাই দূর্বল হয়ে পড়েছিল যে রবিকে দেখা মাত্রই তাকে জড়িয়ে ধরলো। তার চোখ দিয়ে বিনা মেঘে অঝোরে বৃষ্টি নামছিলো। সেই বৃষ্টিতে তার দেহ মন সব ভিজে যাচ্ছিলো। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো , বড়ো একা হয়ে পড়ছিলো। তাই সে একটি ছায়া খুঁজছিলো , যা সে পেলো রবিকে আলিঙ্গন করে , ওকে জড়িয়ে ধরে।
"কি হয়েছে মনীষা , তুমি কাঁদছো কেন ?" , রবিও মনীষাকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় আদর করে হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করলো।
"আমি আর বাঁচতে চাইনা রবি , আমি এই দ্বন্দ্ব নিয়ে আর পারছিনা থাকতে। হাঁফিয়ে উঠেছি জীবনের পরীক্ষা দিতে দিতে ", কাঁদতে কাঁদতে মনীষা বললো।
রবি ওকে বোঝানোর মতো করে নরম গলায় বললো , "এরকম বললে চলে মনীষা ? আমি যে মনীষাকে চিনি সে তো এতো সহজে হেরে যায়না। সি ইস এ ফাইটার। তুমি কতো ঝড় ঝাপটা সামলেছো। বাড়ির অমতে গিয়ে পালিয়ে অরুণকে বিয়ে করেছো , ওর সাথে গুছিয়ে সংসার করেছো। পরীকে জন্ম দিয়ে মা হয়েছো। অরুণের এই কঠিন সময়ে আদর্শ স্ত্রী হয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়েছো , এখনো রয়েছো। তাছাড়া তোমার সব লড়াইয়ে আমি তো আছি তোমার পাশে , তুমি ভয় পাচ্ছ কেন ?"
- "সত্যি ! সত্যিই তুমি পাশে আছো আমার ? যেকোনো পরিস্থিতিতেই তুমি আমার পাশে থাকবে ?"
- "তোমাকে আগেও এই কথা দিয়েছি , এখনো দিচ্ছি। দরকার পড়লে আমার কাছ থেকে লিখিয়ে নাও তুমি , আমার এই কথার কোনোদিনও কোনো পরিস্থিতিতেই নড়চড় হবে না। "
- "কিন্তু অরুণ যে আবার আমাকে আরেকটা অগ্নিপরীক্ষার দিকে ঠেলে দিচ্ছে , এখন আমি কি করি ?"
- "ও আবার কি কোনো নতুন শর্ত দিয়েছে তোমাকে ?"
- "হ্যাঁ। ....."
- "আমি ঠিক আন্দাজ করেছিলাম যখন অরুণের ঘর থেকে তোমাদের আওয়াজ ভেসে আসছিলো আমার কানে , তখুনি বুঝেছি কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। তাই তো পরীকে পড়তে বসিয়ে তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে ব্যালকনিতে এলাম। বলো , ওই পাগলটা নতুন কি বায়না ধরেছে ?"
মনীষা চুপ করে রইলো। কিছু বলতে পারছিলো না লজ্জায়। ফের রবি জিজ্ঞেস করলো মনীষা কে। এভাবে দু-তিনবার জোর করায় মনীষা অবশেষে নিজের মুখ খুললো।
"অরুণ চায়। .......", মনীষা হেসিটেট করছিলো বলতে। তাই রবি ফের জিজ্ঞেস করলো , "হ্যাঁ , কি চায় বলো। ....."
- "ও চায় আমি তোমার সন্তানের মা হই ", এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলেই মনীষা তৎক্ষণাৎ হাত দিয়ে লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে নিলো।
রবির কাছে কিন্তু এই কথাটা খুব একটা আনএক্সপেক্টেড ছিলোনা। কারণ যে অরুণ তাকে মনীষার দিকে ঠেলে দ্যায় যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতে , তার কাছ থেকে এরকম আবদার আশা করাটাই যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। কিন্তু রবি তখন মনীষাকে এর জবাবে কি বলবে সেটা ভেবে পাচ্ছিলো না। সে তো মনীষার প্রতি আকৃষ্টই , কিন্তু মনীষা ? সে তো এখনো অন্ধকারেই রয়েছে, জানেই না সে নিজে কি চায় ? ক্রমাগত নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে চলেছে মেয়েটা।
অনেক ভেবে চিনতে রবি বললো , "হুমমঃ ,, বুঝলাম। .."
"কি বুঝলে ?", মনীষা জিজ্ঞেস করলো।
- "এই যে, অরুণ ডেসপারেট হয়ে উঠেছে আমাকে আর তোমাকে এক করতে। তাই আমাদের এক হওয়ার প্রমাণ সে দেখে যেতে চায় , তোমাকে আমার দ্বারা গর্ভবতী করে। কারণ যতই আমি বলিনা কেন তোমার আর পরীর সব দায়িত্ব আমি সারাজীবন নেবো , ওর মনে একটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। ও ভাবছে যে তোমার কাছ থেকে স্বামী হিসেবে আমি কোনো সাড়া না পেয়ে যদি আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাই। তাই ও চাইছে আমাকে তোমার সন্তানের বাবা করে সারাজীবনের মতো তোমার আর আমার একটা যোগসূত্র বেঁধে দিতে। "
"আচ্ছা , অরুণের এই আশংকার মধ্যে কি খানিকটা হলেও সত্যতার ছোঁয়া লুকিয়ে রয়েছে ? আমি যদি কোনোদিন তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ না করি তাহলে তুমি কি ...... ????", বলেই মনীষা থেমে গেলো।
- "তুমি কি আমায় এই চিনলে মনীষা ? আই এম ম্যান অফ মাই ওয়ার্ডস। অরুণ যখন আমাদের বিয়ে দিলো তখুনি আমি অরুণকে কথা দিয়েছিলাম যে তার স্ত্রী ও কন্যা কে আমি সবসময়ে নিজের জান দিয়ে আগলে রাখবো। তখন কিন্তু আমি তোমার কাছ থেকে স্বামী হিসেবে কোনো আশা রেখে এই কথা দিইনি। হ্যাঁ , পুরুষ হিসেবে আমার কখনো কখনো তোমায় দেখে সাময়িক উত্তেজনা হতে পারে , কারণ তুমি অত্যন্ত লাস্যময়ী সুন্দরী একটি মেয়ে। কিন্তু তাও দেখো , আমি ঠিক সামলে নেবো নিজেকে। কখনোই নিজের সীমা লঙ্ঘন করবো না। "
"এসব কি তুমি শুধুই বন্ধুত্বের খাতিরে করছো ? নাকি ......?" , আবার মাঝপথে মনীষা থেমে গেলো। আসলে খুব হেসিটেট ফীল করছিলো এসব ইন ডেপ্থ প্রশ্ন রবিকে করতে। কিন্তু মনীষার এই অসম্পূর্ণ প্রশ্ন গুলো ক্র্যাক করতে রবির বেশি সময় লাগছিলো না। কারণ সে খুব বুদ্ধিমান ছেলে।
কিন্তু রবি এর কোনো উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বললো , "তোমার কি মনে হয় মনীষা ?"
"জানিনা ", মনীষা গলার স্বর নিচু করে বললো।
তখন রবি বললো , "আমিও ঠিক জানিনা। তবে হ্যাঁ সত্যি বলতে তোমার প্রতি আমার এক্সপেকটেশন অল্প হলেও জন্মেছে। আমি তোমার কাছে কিছু লুকোতে চাইনা মনীষা , সবসময়ে চেষ্টা করবো তোমার কাছে জলের মতো ট্রান্সপারেন্ট থাকার। তাই বলছি , আমি তোমাকে কোনো জোর করছি না , আমি শুধু এইটুকু বলছি যে, হ্যাঁ সত্যিই আমার মনে এখন তোমাকে নিয়ে কিছুটা হলেও এক্সপেকটেশনের উদয় ঘটেছে । "
- "কি ধরণের এক্সপেকটেশন ?"
রবি মাথা নিচু করে চুপ করেছিল। মনীষা আবার জিজ্ঞেস করলো , "কি হলো রবি , বলো, কি ধরণের এক্সপেকটেশন জন্মেছে তোমার মনে আমার প্রতি ?"
- "যে ধরণের এক্সপেকটেশন একজন স্বামীর জন্মায় তার স্ত্রীয়ের প্রতি ! বেশ কিছুদিন একসাথে এক ঘরে থাকতে থাকতে সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি ? .... প্লিস রাগ করোনা মনীষা, আমি তোমাকে কোনো কিছু করার জন্য না এখন জোর করছি না ভবিষ্যতে করবো , তোমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে স্পর্শ পর্যন্ত করবো না আমি। আজকে যখন এই নিয়ে কথা উঠলো , অরুণ আবার এধরণের ইচ্ছা প্রকাশ করলো , তখন আমার মনে হলো আমার পজিশন টা তোমাকে স্পষ্ট করে দেওয়াটাই শ্রেয়। বাকি এখন যা কিছু সব তোমার উপর নির্ভর করছে। তুমি যা বলবে সেটাই শেষ কথা, তোমার সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নেবো। "
মনীষা গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়েগেলো। তার আগে সে রবিকে সেখান থেকে যেতে বললো , কারণ সে একটু একা থাকতে চাইছিলো, একান্তে ভাবতে চাইছিলো সবকিছু নিয়ে। মনীষার কথা মতো রবি নিজের ঘরে ফিরে গেলো যেখানে পরী পড়াশুনো করছিলো। এখন মনীষা একা ব্যালকনিতে ভিজে জামাকাপড় গুলো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবে লিপ্ত হয়ে পড়া দুই পুরুষের বলা কথা গুলো সে মস্তিষ্কে রিওয়াইন্ড করে করে বিশ্লেষণ করছিলো মনে মনে।
এই ভিজে কাপড়গুলো হয়তো আজকে আর শুকোবে না। মেঘ ঘনিয়ে এসছে , আকাশ কালো , ঢাক ঢাক গুড় গুড় আওয়াজ হচ্ছে , বজ্রপাতের আগে যেরকম হয়। আমি কি পরিবেশের আবহাওয়ার কথা বলছি নাকি মনীষার মনের আবহাওয়ার কথা ??
অরুণের শর্ত শুনে মনীষা থ হয়েগেছিলো। সে অরুণের ঘর থেকে বেরিয়ে ফের ব্যালকনিতে এসে ভেজা কাপড় গুলো মেলতে শুরু করেছিল। কিন্তু তার মন একেবারে অন্যমনস্ক ছিল। রবি পরীকে পড়তে বসিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়েছিল। সে আন্দাজ করতে পেরেছিলো যে কিছু একটা হয়েছে মনীষা ও অরুণের মধ্যে। সে তখন মনীষাকে খুঁজতে লাগলো। দেখলো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মনীষা। পিছন থেকে এসে রবি জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।
রবির আওয়াজ শুনে মনীষা পিছন ফিরে তাকালো। সে তখন এতোটাই দূর্বল হয়ে পড়েছিল যে রবিকে দেখা মাত্রই তাকে জড়িয়ে ধরলো। তার চোখ দিয়ে বিনা মেঘে অঝোরে বৃষ্টি নামছিলো। সেই বৃষ্টিতে তার দেহ মন সব ভিজে যাচ্ছিলো। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো , বড়ো একা হয়ে পড়ছিলো। তাই সে একটি ছায়া খুঁজছিলো , যা সে পেলো রবিকে আলিঙ্গন করে , ওকে জড়িয়ে ধরে।
"কি হয়েছে মনীষা , তুমি কাঁদছো কেন ?" , রবিও মনীষাকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় আদর করে হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করলো।
"আমি আর বাঁচতে চাইনা রবি , আমি এই দ্বন্দ্ব নিয়ে আর পারছিনা থাকতে। হাঁফিয়ে উঠেছি জীবনের পরীক্ষা দিতে দিতে ", কাঁদতে কাঁদতে মনীষা বললো।
রবি ওকে বোঝানোর মতো করে নরম গলায় বললো , "এরকম বললে চলে মনীষা ? আমি যে মনীষাকে চিনি সে তো এতো সহজে হেরে যায়না। সি ইস এ ফাইটার। তুমি কতো ঝড় ঝাপটা সামলেছো। বাড়ির অমতে গিয়ে পালিয়ে অরুণকে বিয়ে করেছো , ওর সাথে গুছিয়ে সংসার করেছো। পরীকে জন্ম দিয়ে মা হয়েছো। অরুণের এই কঠিন সময়ে আদর্শ স্ত্রী হয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়েছো , এখনো রয়েছো। তাছাড়া তোমার সব লড়াইয়ে আমি তো আছি তোমার পাশে , তুমি ভয় পাচ্ছ কেন ?"
- "সত্যি ! সত্যিই তুমি পাশে আছো আমার ? যেকোনো পরিস্থিতিতেই তুমি আমার পাশে থাকবে ?"
- "তোমাকে আগেও এই কথা দিয়েছি , এখনো দিচ্ছি। দরকার পড়লে আমার কাছ থেকে লিখিয়ে নাও তুমি , আমার এই কথার কোনোদিনও কোনো পরিস্থিতিতেই নড়চড় হবে না। "
- "কিন্তু অরুণ যে আবার আমাকে আরেকটা অগ্নিপরীক্ষার দিকে ঠেলে দিচ্ছে , এখন আমি কি করি ?"
- "ও আবার কি কোনো নতুন শর্ত দিয়েছে তোমাকে ?"
- "হ্যাঁ। ....."
- "আমি ঠিক আন্দাজ করেছিলাম যখন অরুণের ঘর থেকে তোমাদের আওয়াজ ভেসে আসছিলো আমার কানে , তখুনি বুঝেছি কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। তাই তো পরীকে পড়তে বসিয়ে তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে ব্যালকনিতে এলাম। বলো , ওই পাগলটা নতুন কি বায়না ধরেছে ?"
মনীষা চুপ করে রইলো। কিছু বলতে পারছিলো না লজ্জায়। ফের রবি জিজ্ঞেস করলো মনীষা কে। এভাবে দু-তিনবার জোর করায় মনীষা অবশেষে নিজের মুখ খুললো।
"অরুণ চায়। .......", মনীষা হেসিটেট করছিলো বলতে। তাই রবি ফের জিজ্ঞেস করলো , "হ্যাঁ , কি চায় বলো। ....."
- "ও চায় আমি তোমার সন্তানের মা হই ", এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলেই মনীষা তৎক্ষণাৎ হাত দিয়ে লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে নিলো।
রবির কাছে কিন্তু এই কথাটা খুব একটা আনএক্সপেক্টেড ছিলোনা। কারণ যে অরুণ তাকে মনীষার দিকে ঠেলে দ্যায় যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতে , তার কাছ থেকে এরকম আবদার আশা করাটাই যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। কিন্তু রবি তখন মনীষাকে এর জবাবে কি বলবে সেটা ভেবে পাচ্ছিলো না। সে তো মনীষার প্রতি আকৃষ্টই , কিন্তু মনীষা ? সে তো এখনো অন্ধকারেই রয়েছে, জানেই না সে নিজে কি চায় ? ক্রমাগত নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে চলেছে মেয়েটা।
অনেক ভেবে চিনতে রবি বললো , "হুমমঃ ,, বুঝলাম। .."
"কি বুঝলে ?", মনীষা জিজ্ঞেস করলো।
- "এই যে, অরুণ ডেসপারেট হয়ে উঠেছে আমাকে আর তোমাকে এক করতে। তাই আমাদের এক হওয়ার প্রমাণ সে দেখে যেতে চায় , তোমাকে আমার দ্বারা গর্ভবতী করে। কারণ যতই আমি বলিনা কেন তোমার আর পরীর সব দায়িত্ব আমি সারাজীবন নেবো , ওর মনে একটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। ও ভাবছে যে তোমার কাছ থেকে স্বামী হিসেবে আমি কোনো সাড়া না পেয়ে যদি আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাই। তাই ও চাইছে আমাকে তোমার সন্তানের বাবা করে সারাজীবনের মতো তোমার আর আমার একটা যোগসূত্র বেঁধে দিতে। "
"আচ্ছা , অরুণের এই আশংকার মধ্যে কি খানিকটা হলেও সত্যতার ছোঁয়া লুকিয়ে রয়েছে ? আমি যদি কোনোদিন তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ না করি তাহলে তুমি কি ...... ????", বলেই মনীষা থেমে গেলো।
- "তুমি কি আমায় এই চিনলে মনীষা ? আই এম ম্যান অফ মাই ওয়ার্ডস। অরুণ যখন আমাদের বিয়ে দিলো তখুনি আমি অরুণকে কথা দিয়েছিলাম যে তার স্ত্রী ও কন্যা কে আমি সবসময়ে নিজের জান দিয়ে আগলে রাখবো। তখন কিন্তু আমি তোমার কাছ থেকে স্বামী হিসেবে কোনো আশা রেখে এই কথা দিইনি। হ্যাঁ , পুরুষ হিসেবে আমার কখনো কখনো তোমায় দেখে সাময়িক উত্তেজনা হতে পারে , কারণ তুমি অত্যন্ত লাস্যময়ী সুন্দরী একটি মেয়ে। কিন্তু তাও দেখো , আমি ঠিক সামলে নেবো নিজেকে। কখনোই নিজের সীমা লঙ্ঘন করবো না। "
"এসব কি তুমি শুধুই বন্ধুত্বের খাতিরে করছো ? নাকি ......?" , আবার মাঝপথে মনীষা থেমে গেলো। আসলে খুব হেসিটেট ফীল করছিলো এসব ইন ডেপ্থ প্রশ্ন রবিকে করতে। কিন্তু মনীষার এই অসম্পূর্ণ প্রশ্ন গুলো ক্র্যাক করতে রবির বেশি সময় লাগছিলো না। কারণ সে খুব বুদ্ধিমান ছেলে।
কিন্তু রবি এর কোনো উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বললো , "তোমার কি মনে হয় মনীষা ?"
"জানিনা ", মনীষা গলার স্বর নিচু করে বললো।
তখন রবি বললো , "আমিও ঠিক জানিনা। তবে হ্যাঁ সত্যি বলতে তোমার প্রতি আমার এক্সপেকটেশন অল্প হলেও জন্মেছে। আমি তোমার কাছে কিছু লুকোতে চাইনা মনীষা , সবসময়ে চেষ্টা করবো তোমার কাছে জলের মতো ট্রান্সপারেন্ট থাকার। তাই বলছি , আমি তোমাকে কোনো জোর করছি না , আমি শুধু এইটুকু বলছি যে, হ্যাঁ সত্যিই আমার মনে এখন তোমাকে নিয়ে কিছুটা হলেও এক্সপেকটেশনের উদয় ঘটেছে । "
- "কি ধরণের এক্সপেকটেশন ?"
রবি মাথা নিচু করে চুপ করেছিল। মনীষা আবার জিজ্ঞেস করলো , "কি হলো রবি , বলো, কি ধরণের এক্সপেকটেশন জন্মেছে তোমার মনে আমার প্রতি ?"
- "যে ধরণের এক্সপেকটেশন একজন স্বামীর জন্মায় তার স্ত্রীয়ের প্রতি ! বেশ কিছুদিন একসাথে এক ঘরে থাকতে থাকতে সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি ? .... প্লিস রাগ করোনা মনীষা, আমি তোমাকে কোনো কিছু করার জন্য না এখন জোর করছি না ভবিষ্যতে করবো , তোমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে স্পর্শ পর্যন্ত করবো না আমি। আজকে যখন এই নিয়ে কথা উঠলো , অরুণ আবার এধরণের ইচ্ছা প্রকাশ করলো , তখন আমার মনে হলো আমার পজিশন টা তোমাকে স্পষ্ট করে দেওয়াটাই শ্রেয়। বাকি এখন যা কিছু সব তোমার উপর নির্ভর করছে। তুমি যা বলবে সেটাই শেষ কথা, তোমার সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নেবো। "
মনীষা গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়েগেলো। তার আগে সে রবিকে সেখান থেকে যেতে বললো , কারণ সে একটু একা থাকতে চাইছিলো, একান্তে ভাবতে চাইছিলো সবকিছু নিয়ে। মনীষার কথা মতো রবি নিজের ঘরে ফিরে গেলো যেখানে পরী পড়াশুনো করছিলো। এখন মনীষা একা ব্যালকনিতে ভিজে জামাকাপড় গুলো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবে লিপ্ত হয়ে পড়া দুই পুরুষের বলা কথা গুলো সে মস্তিষ্কে রিওয়াইন্ড করে করে বিশ্লেষণ করছিলো মনে মনে।
এই ভিজে কাপড়গুলো হয়তো আজকে আর শুকোবে না। মেঘ ঘনিয়ে এসছে , আকাশ কালো , ঢাক ঢাক গুড় গুড় আওয়াজ হচ্ছে , বজ্রপাতের আগে যেরকম হয়। আমি কি পরিবেশের আবহাওয়ার কথা বলছি নাকি মনীষার মনের আবহাওয়ার কথা ??