Thread Rating:
  • 120 Vote(s) - 2.98 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর স্ত্রীয়ের পরকীয়া
#78
পর্ব ৭

অরুণ আজকেও পরীকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের বালিশে হেলান দিয়ে বই পড়ছিলো। আজকেও সে ঘুমের ওষুধ খাইনি। কারণ এখন অরুণ আর বিশেষ স্ট্রেস নেয় না। তাই সে রোজ ঘুমের ওষুধ খাওয়াটাও ত্যাগ করেছে। বই পড়তে পড়তে সে মনীষার কথা ভাবছিলো। চোখ ছিল বইয়ের পাতায় কিন্তু মন ছিল মনীষার দিকে।

অরুণ ভাবছিলো কি করে মনীষাকে এই মিথ্যে বিয়ে থেকে বের করে আনবে। মনীষা কবে এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে। অরুণ এবার চাইছিলো জীবনের শেষ কয়েকটা দিন সে মনীষাকে নিয়ে ভালোভাবে স্বামী স্ত্রীর মতো আবার কাটাবে। কিন্তু সেটা যে এতো সহজ ছিলোনা। মনীষা তার বিয়ে করা একমাত্র বউ হতে পারে, কিন্তু সে তার হাতের পুতুল নয়, যে যখন চাইলো ডিভোর্স দিয়ে অন্য কারোর সাথে বিয়ে করতে বাধ্য করলো , আবার যখন চাইলো সেই বিয়ে ভাঙিয়ে পুনরায় তাকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনলো। এইভাবে সবকিছু হয়না। অরুণ ক্যান্সার আক্রান্ত একজন রোগী হতে পারে কিন্তু তাই বলে তার সব আবদার কে শেষ ইচ্ছে বলে মেনে নেওয়া যায়না।

ওদিকে মনীষা ও রবি যথা নিয়মে একে অপরের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো। গতরাতে রবির সোফায় ঠিকমতো ঘুম হয়নি , তার উপর সারাটা দিন তার কেটেছে দ্বন্দ্বে , নিজের মনের সাথে। অরুণের কথা মেনে তার মনীষার কাছে যাওয়া উচিত ছিল কিনা। সে তো মনীষার চোখে সেই জন্য ছোটও হয়েগেছিলো। সারাটা দিন তাই তার চিন্তায় চিন্তায় কেটে ছিল , কিভাবে সে মনীষাকে রাতে ফেস করবে এটা ভেবে।

এইসবের জন্যে রবির শরীর ও মনের উপর দিয়ে অনেক ধকল গ্যাছে। তাই সে বিছানায় শুতেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো। কিন্তু অরুণের মতো মনীষারও আজকে ঘুম আসছিলো না। পার্থক্য ছিল শুধু এটাই যে অরুণ ভাবছিলো মনীষার কথা আর মনীষা ভাবছিলো রবির কথা। কি কথা ?

রবি কিছুক্ষণ আগে যে কথা গুলো প্রতিশ্রুতির আকারে মনীষা কে বললো, সেই কথা। রবি কখনো মনীষা ও পরীকে ছেড়ে যাবে না। সবসময়ে তাদের পাশে থাকবে , তা মনীষা রবিকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করুক বা না করুক। এইসব কথা শুনলে কোন মেয়েরই না মন গলে , যদি সে দেখে কেউ নিঃস্বার্থ ভাবে তার পাশে রয়েছে , তাও আবার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে। বদলে কি মনীষার সত্যি কিছু দেওয়ার নেই ? মনীষা সেটা নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করলো মনে মনে। 

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সে অনুভব করলো রবির হাতটা তার পেটের উপর এসে পড়েছে। আসলে রবি আজ অকাতরে ঘুমোচ্ছিলো। তাই সে তাদের মাঝখানের সেই ডিসটেন্সটা মেইনটেইন করতে পারেনি। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে ছড়িয়ে শুতে গিয়ে সে অজান্তেই মনীষার খুব কাছাকাছি চলে এসছিল।

রবি ঘুমের মধ্যে মনীষাকে পাশবালিশ ভেবে জড়িয়ে ধরেছিলো। মনীষার শরীর অবশ্য বালিশের থেকেও কোমল এবং আরামদায়ক , তাই রবি সেই মানুষরূপী কোলবালিশ-টি কে আরো শক্ত করে জাপটে ধরেছিলো। মনীষা এখন রবির হস্তবন্ধনে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু আজকে মনীষা রবিকে আর ভুল বোঝেনি। সে বুঝেছে যে রবি ঘুমের ঘোরে তাকে কোলবালিশ ভেবে জড়িয়ে ধরেছে।

দয়ালু মনীষা রবিকে জাগিয়ে দিয়ে ওর ঘুম নষ্ট করতে চাইছিলো না। তাই সে রবির বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলো না। উল্টে নিজের কমফোর্টের জন্য মনীষা নিজের হাতটা রবির পিঠে আলতো করে রেখে দিলো। দেখে মনে হচ্ছিলো স্বামী স্ত্রী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি মনীষারও ঘুম পেয়ে গেলো। সেও ঘুমিয়ে পড়লো রবির হস্তযুগলের ঘেরাটোপে। রবির শরীরের তাপের সান্নিধ্যেই হয়তো মনীষার ঘুম তাড়াতাড়ি চলে এলো। মনীষা যে বহুদিন অরুণের আদরের স্পর্শ পায়নি। আর অরুণ ছাড়া ওর জীবনে অন্য কোনো পুরুষ ছিলোনা যে ওর শরীরে ভালোবাসাময় উত্তাপের সঞ্চার ঘটাবে, ওকে আরাম দেওয়ার জন্য।

পাশের ঘরে অরুণেরও চোখ লেগে এসছিল। সে বইটা পাশের টেবিলে রেখে দিয়ে মাথাটা বালিশে দিলো। ভাবলো কালকে সে মনীষার সাথে কথা বলবে। তাকে আবার ফিরিয়ে আনবে নিজের কাছে। কিন্তু এখন যে অরুণের অজান্তেই তার মনীষা পাশের ঘরে রবিকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিল। সে কি আর ফিরে আসবে ?

পরের দিন সকাল হলো। রবি ও মনীষার একসাথে ঘুম ভাঙলো। ঘুম ভেঙে তারা একে অপরকে নিজেদের অতিব নিকটবস্থায় পেলো। কিছুক্ষণ তারা ওইভাবেই রইলো , হয়তো ঘোর কাটেনি ততক্ষণে। তারপর তারা একে অপরের আঁটোসাঁটো বন্ধন থেকে নিজেদের মুক্ত করলো। রাতে ঘুমের মধ্যে তারা একে অপরকে এমনভাবে জাপটে ধরেছিলো যেন একে অপরকে ছাড়া বাঁচা দায় হয়ে পড়েছে। রবির জীবনেও কেউ নেই , আর মনীষাও জানে খুব শীঘ্রই সে নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা-কে হারাতে চলেছে। সে এখন মানসিকভাবে প্রস্তুত এই ভবিতব্য কে মেনে নিতে।

আজকে অরুণ বরং কিছুটা আগে উঠে পড়েছিল , বা বলা ভালো যে আজ রবি ও মনীষার উঠতে দেরী হয়েছিল। অনেকদিন পর ওদের আজ ভালো ঘুম হয়েছিল একে অপরের সংস্পর্শে এসে। অরুণ ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখে মনীষার ঘরের দরজা এখনো বন্ধ। সে খানিকটা অবাকই হয়। মনীষার তো উঠতে কখনো এতো দেরী হয়না। রবিও বা কি করছে এতোক্ষণ ধরে ? ওরও কি এখনো ঘুম ভাঙেনি ? ব্যাপারটা ভারী অদ্ভুত তো ! অরুণ মনে মনে ভাবলো। সে তখন কি করবে ভেবে না পেয়ে ডাইনিং রুমের সোফায় বসে সকাল সকাল টিভি চালিয়ে দেখতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর মনীষা নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। দেখলো অরুণ উঠে গ্যাছে , এবং টিভি দেখছে।

- "ওহঃ , তুমি উঠে গ্যাছো। সরি আজকে একটু দেরী হয়েগেলো উঠতে। দাঁড়াও তোমার খাবার করে আনছি।"

- "নাঃ নাঃ মনীষা, ঠিক আছে। তোমাকে অতো তাড়াহুড়ো করতে হবে না। তুমি নিশ্চিন্তে আগে ফ্রেশ হয়ে নাও , তারপর ধীরে সুস্থে খাবার বানিও। আচ্ছা রবি কোথায় ? ও এখনো ওঠেনি ?"

- "উঠেছে , ঘরেই আছে। "

অরুণের কথা না শুনে মনীষা আগে রান্নাঘরে ঢুকলো খাবার তৈরী করতে। তার এখন ফ্রেশ হওয়ার সময় নেই। অরুণ যাই বলুক না কেন , সে জানে সে আজকে দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছে। তাই তাকে আগে রান্নাঘরে ব্রেকফাস্ট বানানোর কাজটা সেড়ে ফেলতে হবে। তাই নিজের দিকে নজর দেওয়ার টাইম নেই।

মনীষা কেন তার কথা না শুনে ওয়াশরুমে না গিয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো সেটা নিয়ে অরুণ একদমই বিচলিত ছিলোনা। এরকম ছোটখাটো অবাধ্যতা সংসারের প্রয়োজনে আকছার মনীষা করে থাকে। সংসারটা তার , সে অরুণের চেয়ে ভালো বোঝে পরিস্থিতি অনুযায়ী সংসারে কোন কাজটা আগে প্রাধান্য দিয়ে করতে হবে আর কোনটা পরে।

অরুণের মনে তখন হাজার প্রশ্ন ভীড় করছিলো রবি ও মনীষাকে নিয়ে। নাহঃ , সে সন্দেহ করছিলোনা ওদের। সে তার স্ত্রী ও বন্ধুর উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখে। তবুও মনের ঈশান কোণে কিছু প্রশ্নের উদয় হচ্ছিলো। দুজনেরই আজকে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হলো ? যদি তা না হয় , রবি যদি আগেই উঠে থাকে তাহলে ওই বা এতোক্ষণ বেড়োচ্ছিলোনা কেন ঘর থেকে ? 

ভাবতে ভাবতে অরুণ দেখলো রবিও ঘর থেকে বেড়িয়ে এসছে। অরুণকে দেখা মাত্রই রবি ওকে "গুড মর্নিং" বললো। অরুণও প্রত্যুত্তরে একই শুভেচ্ছা জানালো। তারপর রবি অরুণের সামনে দিয়েই রান্নাঘরে প্রবেশ করলো যেখানে মনীষা বাড়ির সকলের জন্য খাবার তৈরী করছিলো। সে মনীষাকে রান্নাঘরে হেল্প করতে লাগলো। মাঝে মাঝে দুজনের মধ্যে স্বাভাবিক দু-চারটে কথা হচ্ছিলো।

কিন্তু এই স্বাভাবিক জিনিসটা অরুণের দেখতে ভালো লাগছিলো না। অরুণের হালকা হালকা জেলাস ফীল হতে শুরু করছিলো রবি কে নিয়ে। আসলে সুস্থ থাকতেও সে কখনোই মনীষাকে সংসারের কাজে হেল্প করেনি , যা আজকাল-কার দিনে যেকোনো কোঅপারেটিভ হাসব্যান্ড করে থাকে। মনীষা যে ছোট ছোট সাহায্য গুলো অরুণের কাছ থেকে কোনোদিন পায়নি , যেটা নিয়ে মনীষা কখনো অভিযোগ করেনি কিন্তু এক্সপেক্ট করতো , সে সব আজ রবি ওকে প্রোভাইড করছিলো। যেটা রবির প্রতি অরুণের মনে জেলাসি এবং মনীষার মনে সম্মান বাড়িয়ে দিচ্ছিলো।

অরুণের এসব দেখে নিজেকে খুব হেল্পলেস মনে হচ্ছিলো। এরকম নিরামিষ সহযোগিতা দেখে সে কিছু বলতেও পারছিলোনা , আবার এসব দেখে হজমও করতে পাচ্ছিলো না। রবির মনে মনীষা কে নিয়ে তখন কোনো পাপ বা দুরভিসন্ধি ছিলোনা , তাই অরুণের সামনেই সে খুব সহজভাবে মনীষার সাথে মেশার চেষ্টা করছিলো। মনীষাও তালে তাল দিয়ে রবির সাথে ভালোমতো আচরণ করছিলো। তাই মাঝে মাঝে হাসি খুনসুটি হচ্ছিলো ওদের মধ্যে , যেটা অরুণের চোখে অসহ্য হয়ে উঠছিলো।

কিন্তু এই তো কয়েকদিন আগে সে নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে দুজনের চার হাত এক করেছিল। সে তো এটাই দেখতে চেয়েছিলো যে মনীষা রবির সাথে স্বাভাবিক হয়ে মেলা মেশা করুক , কারণ তার মৃত্যুর পর মনীষাকে তো রবির সাথেই থাকতে হবে। তাহলে আজ কেন তার এতো কষ্ট হচ্ছে ? এর উত্তর হলো , এক্সপেকটেশন। যখন রবির মুখ থেকে অরুণ শুনলো মনীষা রবিকে দৃপ্ত ও আপোষহীন ভাবে বহিস্কার করেছে শুধু মাত্র তার প্রথম স্বামী অরুণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার জন্য , তখন যেন অরুণ নতুন করে আবার মনীষার প্রেমে পড়ে গেলো। সে মনীষাকে নিয়ে নতুন করে আশা বাঁধতে শুরু করলো।

যে অরুণ জীবনের সব মায়া ত্যাগ করে উঠেছিল , সেই অরুণই তখন "আনন্দ সিনেমার রাজেশ খান্নার" মতো নিজের জীবনের শেষ কয়েকটা মুহূর্ত প্রাণবন্তভাবে বাঁচতে চাইলো তার মনীষার সাথে। বলতে চাইলো "জিন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে বাবুমশাই , লাম্বি নেহি " যার বঙ্গার্থ জীবন আকাশের মতো সীমাহীন বড়ো হওয়া উচিত, সমুদ্রের মতো দীর্ঘ ও গভীর নাহলেও চলবে।

সে নিজের উপর গর্ববোধ করতে শুরু করলো , মনীষার মতো সুন্দরী মেয়ের মনের একাধিপত্য স্থাপনের। রবি তার চেয়ে দেখতে তুলনামূলকভাবে সুন্দর হতে পারে , ধনী হতে পারে , হয়তো সবদিক দিয়ে অরুণের চেয়ে হাজার গুন সেরা ও সফল মানুষ হতে পারে , কিন্তু অরুণের ভালোবাসার সামনে সবকিছু ফেল।

অরুণের এই গর্বই যে কখন অহংকারের রূপ নিয়েছিল সেটা সে ধরতে পারেনি। সে ধরেই নিয়েছিল যে, যাই হয়ে যাক , সে যাই করুক না কেন মনীষা তার ব্যাতিত অন্য কোনো পুরুষকে মন দেওয়া তো দূরের কথা , চোখ তুলে পর্যন্ত তাকাবে না। কিন্তু এখন অনেক দেরী হয়ে যাইনি তো ?  ঘরের বাইরে থেকে অরুণ ও রবির মধ্যেকার সব কথা মনীষার শুনে নেওয়া , রবি ও মনীষার মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝি শেষ হয়ে যাওয়া , মনীষার মনে রবির জন্য সম্মান হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া, এক নতুন সম্পর্ক বা সমীকরণের জন্ম দিলো না তো ??

উত্তর খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাবো পরের পর্বে। ......
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর স্ত্রীয়ের পরকীয়া - by Manali Basu - 21-12-2022, 02:13 AM



Users browsing this thread: 87 Guest(s)