26-04-2022, 11:01 PM
এতোক্ষণ মা’র কথা শুনে তার প্রতি সব রাগ ধুয়ে মুছে ভালোবাসা হাজার গুণ বেড়ে গেলো৷
-আমি তো তোমার পেটের ছেলে না মা, তারপরও এতো ভালো চাও আমার?
-পেটের না ঠিকই কিন্তু কমও তো না, আর তুমি আমি সমবয়সী হওয়ার কারণে টানটা বেশি ছিলো। জানো তুমি চলে যাওয়াতে পুরো গ্রামের মানুষ আমাকে দোষারোপ করেছে। আমি মুখ বুজে সহ্য করেছি আর আশায় থেকেছি তোমার ফিরে আসার।
-ওকে ওকে বুঝেছি, যাও ঘুমিয়ে পড়োগে। কথা বলার অনেক সময় পরে আছে সামনে।
-কেন, আমি একটু পাশে বসেছি দেখে সহ্য হচ্ছে না?
-আহ তা হবে কেন?
-তাহলে কি? আমার প্রতি আর টান নেই, না কি অন্য কিছু?
আমি উঠে সোজা হয়ে তার কপালে চুমু দিলাম
-বুঝেছো এখন কতোটা টান আছে?
-কচু আছে, এটাতো আমি জোরাজোরি করাতে দিলে।
আমি হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছি না
-আচ্ছা সরি বাবা তোমার মন যেমন চাই তেমন থাকো।
-না বাবা আর থাকার দরকার নেই। বুঝেছি শহুরে বউমার সাথে মোবাইলে কথা বলবে তো তাই ও রকম করছো।
আমি হা হা করে হেসে দিলাম
-বউ নেই আর তুমি বউমা পেয়ে গেলে।
-করো নি কেন এতোদিন, বয়স তো কম হয়নি, কয়দিন পর তো বউ পাবে না।
-তাই? না পেলে না-ই, লাগবে না।
-কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো নিজেকে রেজা?
-কি কষ্ট আবার আমার?
-বুঝোনা? নিজেকে প্রশ্ন করো,
-নিজেকে প্রশ্ন করে অনেক দেখেছি, আর না।
-ভুলো নি এখনো?
-কি?
-আমার দেওয়া অপমান।
-সে সব কিছুই মনে নেই আমার।
-আমার তো মনে হচ্ছে সব তাজা ক্ষত হয়ে তোমার বুকে গেঁথে আছে।
-না মা, সত্যি কিছু মনে নেই।
-আমি মেয়ে মানুষ রেজা, মেয়েরা ছেলেদের সব কিছু দেখতে পাই। ততোটা ছেলেরা দেখতে পাই না।
-বাদ দাও না মা।
মা বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো,
-তোমার সাথে যদি আমার মা ছেলের সম্পর্ক না হয়ে অন্য কিছু হতো তাহলে তোমাকে আমি এভাবে তিলে তিলে ধ্বংস হতে দিতাম না, এখন থেকে সামনের দিনে যাতে ভালো হয় তাই করবো আমি। এই বলে চলে গেলো নিজের ঘরে।
এমন কথা মা কি জন্য বললো? আমি তার সৎ ছেলে না হলে কি সে আমার সাথে গোপন সম্পর্ক তৈরি করতো, তাই বললো? না কি অন্য কিছু বললো যা আমি বুঝতে পারলাম না? সামনের দিনে কি করবে সে?)
আমি অনেক ভেবেও সঠিক জবাব বের না করতে পেরে ধীরে ধীরে মা’র ঘরের দরজার সামনে এলাম, ডাকবো কি না? অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
না থাক ডাকার দরকার নেই, ঘুরে চলে আসছি এমন সময় দরজা খুলে দিলো মা।
-এসো ভিতরে।
আমি ভিতরে ঢুকলাম, মা দরজা ভিড়িয়ে দিলো।
-কিভাবে বুঝলে আমি এসেছি?
মা মুচকি হেসে বললো,
-আমি তো তোমাকে ভালো করেই চিনি। জানতাম জবাব খুঁজে না পেয়ে আসবেই। বসো দাঁড়িয়ে রইলে যে?
-না ঠিক আছে।
-আরে বসো, এই বলে হাত ধরে নিয়ে বিছানায় বসালো।
আমি তার মুখের দিকে চেয়ে আছি।
-কি দেখছো অমন করে?
-কিছু না।
-তাই? তুমি চাইলে এখানেই শুয়ে পড়তে পারো। বিছানা বড় আছে, আমি না হয় হেলেনার ওপাশে শুয়ে যাবো।
-আরে না না। এমনিতেই এসেছি (মনে মনে ভাবলাম, মাগী তুমি আজ তোমার বিছানায় শুতে বলছো, এমনও দিন গেছে যখন আমি তোমার আশেপাশে থাকার জন্য কতো কি করেছি।)
-বলো কি জানতে চাও?
-কিছু না, আমি যায় তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
-গিয়ে ঘুমাতে পারবে তো?
মা’র একথা শুনে আমিও মুচকি মুচকি শয়তানি হাসি হাসতে থাকলাম।
-হাসছো যে?
-তুমি আজ কাল দেখি মানুষের মন পড়া শুরু করেছো।
-মানুষের নয় রেজা, শুধু তোমার। তুমি চলে যাওয়াতে সব সময় তোমার কথা ভেবেছি, নিজেকে তোমার জায়গাই দাঁড় করে চিন্তা করেছি, তাতে দেখলাম ভুল আমারই।
-এক কথা আর কতো বার বলবে?
-যতোক্ষণ তুমি সহজ না হচ্ছো।
-আমি তো সহজ আছি।
-না নেই।
-ওকে তুমি ভাবতে থাকো আমি গেলাম।
-জবাব চাও না?
-না, সেটা না হয় নিজেই খুজে ফিরি। দেখি কি উত্তর পাই।
-শুধু একটা জিনিস ভীষণ মিস করছি?
-কি?
-তোমার মুখের সেই খলখলানি হাসি, গজ দাঁতের ঝিলিক।
-অনেক ঝড় গেছে রেজা তাকে হারানোর পর, তাই হাসি হারিয়ে গেছে।
-আমি আবার তা ফিরিয়ে আনবো, প্রমিস।
সকালে রওনা দেওয়ার কথা, এটা ওটা করতে করতে দুপুর হয়ে গেলো। হেড স্যার জোর করে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাওয়ালো।
এবার বিদায় নিলাম।
-সামনের মাসে তোমার বাবার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী, আসবে তো?
-হ্যা স্যার, অবশ্যই আসবো।
হেলেনা সামনে বসলো, মা আর রনি পিছনে। গাড়ি ছাড়তেই মা বললো
-প্লিজ একটু বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করে চলো।
-ঠিক আছে চলো। হেলেনার মুখে শুনেছি বড় মামা না থাকলে তোমাদের আরো কষ্ট বেশি হতো, সে হিসাবে আমার উচিৎ তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানানো। একটা কথা বললে রাখবে মা?
-কি?
-আমি যদি কিছু টাকা দিই, তা তুমি বড়ো মামার হাতে তুলে দিবে প্লিজ?
-তুমি নিজ হাতে দাও।
-না, তাতে মামা নিজেকে ছোট মনে করবে, তুমি আপন বোন, তুমি দিলে না করতে পারবে না।
-ঠিক আছে আমিই দিবো।
-পিছনের ব্যাগটা খুলো, ওতেই আছে।
-এতো টাকা ব্যাগে করে কেন নিয়ে এসেছো রেজা?
-কখন কি কাজে লাগে, তাই আর কি। তুমি দু বান্ডিল বের করে নাও।
-দু বান্ডিলে কতো?
-এক লক্ষ।
-তুমি কি পাগল হয়েছো? এতো টাকা কেন দিবে?
-এটা তো কিছুই না, আমার গায়ের চামড়া দিয়ে যদি তার পায়ের জুতো বানিয়ে দিই তাও তার ঋণ শোধ হবে না। কারণ আমি বড়ো ছেলে হিসেবে তোমাদের প্রতি দ্বায়িত্ব পালন না করে দূরে ছিলাম, আমার হয়ে কাজটা সে করেছে।
মা আমার এমন জবাবে চুপ হয়ে গেলো।
বসুন্ধরা আসতে আসতে রাত দশটা বেজে গেলো। রনি আর হেলেনা বড় বড় বিল্ডিং দেখলেই অবাক হয়।
সারা রাস্তা মা, হেলেনা-রনির হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি পাগল হয়ে গেছি।
-এটা কার বাড়ি রেজা?
-তোমার।
-কি যা তা বলছো, আমি প্রথম এলাম এ শহরে, তাহলে আমার বাড়ী হয় কি করে?
-ভিতরে ঢুকার সময় নাম দেখো নি?
-না তো, খেয়াল করিনি।
-দেখে এসো।
মা দেখে এসে আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো।
-তাকিয়েই থাকবে না কি উপরে যাবে?
-এতো ভালোবাসো রেজা?
-হয়তো।
-শয়তান একটা তুমি।
-ঠিক বলেছো, এখন উপরে চলো।
হেলেনা বললো, মা কি দেখে এলে গো?
-বাড়ির নাম।
-বাড়িরও নাম হয়? কি নাম মা?
-হ্যাঁ, বাড়িরও নাম হয় (স্বপ্নহেনা )
-ভাইয়া তোমার নামে নাম রেখেছে।
-হ্যাঁ
ভিতরে ঢুকে তো ওদের চোখ কপালে। এতো সুন্দর ছিম ছাম সাজানো গোছানো বাসা ওরা তো এর আগে দেখে নি।
-এতো সুন্দর, এতো বড়ো বাড়িতে তুমি একাই থাকতে রেজা?
-না, এটা নতুন বানিয়েছি। গতমাসে কাজ শেষ হয়েছে, এতোদিন বন্ধই ছিলো৷
-তাহলে তুমি কোথায় থাকতে?
-দশ পনেরো কিলোমিটার দূরে মালিবাগ বলে একটা জায়গাতে। এই নাও মা চাবি, আজ থেকে সব কিছু তোমার হাতে তুলে দিলাম।
-আমাকে দিচ্ছো কেন? বউমাকে দিবে।
-সেটা তুমি বুঝবে, আমার কাম আমি করলাম ব্যাস।
সবাই সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলো।
-এতো গুলো ঘর, এতো বড় বাড়ীতে আমরা মানুষ মাত্র চার জন?
-তাহলে রাস্তা থেকে মানুষ ধরে আনি।
-আমি কি তাই বলেছি? বলছি গা টা কেমন ছমছম করছে তাই।
-নতুন তো তাই, দুএক দিনে ঠিক হয়ে যাবে।
-তোমার ঘর কোন টা?
-এখনো ঠিক করিনি।
-এটাতে তুমি, পাশের টাতে আমরা।
আমি শয়তানি করে বললাম, তুমি চাইলে মাঝের দেওয়াল ভেঙে ফেলে বড়ো একটা ঘর বানিয়ে সবাই একসাথে থাকতে পারি।
-তাহলে তো ভালোই হতো, আমরা নতুন জায়গাতে ভয় পেতাম না। কিন্তু জানি এটা তুমি আমাদের মন বুঝার জন্য বললে।
-বাপরে বাপ, তুমি তো দেখছি সত্যি আমাকে নিয়ে স্টাডি করেছো। তোমার থেকে দূরে থাকতে হবে দেখছি।
-দূরেই যদি থাকবে তাহলে কাছে আনলে কেনো?
-সরি বাবা সরি। ভুল হয়ে গেছে বলা, এখন বলো তো কি কি আনবো, কি খাবে রাতে?.
-রাস্তায় এতো কিছু খেলাম, আর খাওয়া লাগবে না, তুমি সকালে বাজার করে এনো।
-আরে না না, হালকা করে তো খেতেই হবে, আচ্ছা রুটি আর গ্রিল আনি।