16-03-2022, 07:30 PM
(This post was last modified: 01-04-2022, 08:09 PM by kumdev. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
।।১০৯।।
জানলা টপকে ভোরের আলো এসে পড়েছে বিছানায়।ঘুম ভাঙ্গলেও মনসিজের জড়তা কাটেনি।এলিনা বৌদির ব্যবহার তাকে অবাক করেছে।উপযাচক হয়ে এভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে প্রত্যাশা করেনি।এখানে আসার সময় কিভাবে কি করবে যে মানসিক চাপ এখন অনেকটা হালকা বোধ হচ্ছে।ভাল মন্দয় মিশিয়ে মানুষ।আজ আবার হারুমামার আসার কথা।মায়ের ঠেলাঠেলিতে চোখ মেলে তাকালো মনসিজ।
--তরি তরকারি কিছুই নেই।পবন বলছে বাজারে যাবে,কি করবি?
পবনের বাজার করায় খুব উৎসাহ,মনসিজ হেসে বলল,ওকে ডাকো।
--সাহেব আমি এইচি।
--তুমি বাজার চেনো?
--চিনে লিব।
--শোনো আমরা এখানে বেশিদিন থাকবো না।দিন তিনেকের মত বাজার করে আনবে।মা ওকে শ-পাচেক টাকা দিয়ে দাও।
অফিস যাবার জন্য বেরিয়েছে এলিনা।কাল তাতাইকে সব বলতে যাবার ব্যাপারে গড়িমসি করলেও রাজী হয়েছে।কমলা বিল্ডার্সের কাছে আসতে গাড়ী থামায়।দোকানে কয়েকজন বসে আড্ডা দিচ্ছিল।তাকে দেখে চাদু উঠে এসে বলল,বৌদি কিছু বলবে?
--শোন সবাইকে বলবি বোসবাবুর রকে সন্ধ্যে সাতটায় হাজির থাকতে জরুরী কথা আছে।
চাদু ফিরে আসতে আশিস জিজ্ঞেস করল, কি বলছিল বৌদি?
চাদু ব্যাপারটা বলতে আশিস বঙ্কার দিকে তাকালো।বঙ্কা ঠোট উলটে দিল।
--নিজের বাড়ী না বলে রকের কথা বলল কেন?চাদু বলল।
--সেকথা তখন জিজ্ঞেস করবি তো।বঙ্কা বলল।
--বৌদি যখন বলেছে নিশ্চয়ই কিছু জরুরী দরকার আছে।খবরটা সবাই দিয়ে দিস।আমার সঙ্গে কারো দেখা হলে আমি বলে দেবো।
খাওয়া দাওয়ার পর দুপুরে একটু গড়িয়ে নেওয়া আশালতার অভ্যাস।বাড়ীতে কাজ কদিন পর লোকে ভরে যাবে।দেওয়ালে ঘড়ির দিকে তাকালেন,টিক টিক করে চারটের ঘর ছাড়িয়ে যাচ্ছে কাটা।পুটিকে ফোন করতে ইচ্ছে হল।বারান্দায় গিয়ে মোবাইল বাটনে চাপ দিল।
কিরে তোদের তো সাড়া শব্দ ণেই...হ্যা বিয়ে শুক্রবার তুই কি নেমন্তন্ন খেতে আসবি....অশোককে বল...শোন পুটি ব্রেস্পতিবার সকালে তুই এখানে আসবি...হ্যা-হ্যা অশোককে বলবি আমার কথা...কে বেলি...দেখে তো বোঝা যায়না তুই তো জানিস ও কেমন চাপা...শোন আমার মেয়েকে আমি চিনব না...মনে আছে তো ব্রেস্পতিবার...আচ্ছা রাখছি।
ঝুকে দেখলেন একটা নীচে একটি মেয়ে সম্ভবত বেলর বন্ধু।মেয়েটি উপর দিকে তাকিয়ে বলল,মাসীমা প্রজ্ঞা আছে?
--হ্যা আছে ভেতরে যাও নীচেই আছে।
ওরা ভিতরে ঢুকে দেখল আধশোয়া হয়ে বই পড়ছে প্রজ্ঞা।ওদের সাড়া পেয়ে তাকিয়ে উচ্ছ্বসিত ভাবে বলল,আরে দীক্ষা আয় ভিতরে আয়।
দীক্ষা বলল,দ্যাখ কাকে এনেছি।
প্রজ্ঞা পাশের মহিলাকে ভাল করে লক্ষ্য করে।পারুল রায় গত বছর বিয়ে হয়েছে পায়রা ডাঙ্গা না কোথায় শ্বশুরবাড়ি।ওর বিয়েতে প্রজ্ঞা গেছিল।প্রজ্ঞা বলল,পারু না?ভাল সময় এসেছিস।
একটা কার্ড বের করে লিখল পারুল রায়।তারপর এগিয়ে দিয়ে বলল,শুনেছিস তো--আসবি কিন্তু।
--আমি না এলে মিস করতাম?
--বোকার মত কথা বলিস নাতো।তোকে কোথায় পাবো।ব্রততীর বিয়ে হল আমি ছিলাম না নেমন্তন্ন করতে পারেনি।না এলে খুব রাগ করব।
--দীক্ষার কাছে শুনে আমিই তো বললাম চল দেখা করে আসি।
--খুব ভাল করেছিস।
--ওকে কেন নিয়ে এসেছি বলতো?পারুর এক্সপিরিয়েনস থেকে শিখে নে।দীক্ষা মজা করে বলল।
--পাখির বাচ্চাকে ওড়া শেখাতে হয় নাকি?তোর সেই সুদীপের খবর কি?
হারামীর বাচ্চা।দীক্ষা মনে মনে বলে।
--তুই কোনো খবরই রাখিস না।পারুল বলল।
--কেন কি হয়েছে?
--সুদীপের বিয়ে হয়ে গেছে।দীক্ষা হেসে বলল। বাড়ীর লোককে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছি।এখন বিয়েতে রাজী হয়েছি দেখাশোনা চলছে।ছাড় তোর কথা বল।
--হ্যারে প্রজ্ঞা তোর সেই ছেলেটার খবর কি জানিস?পারুল জিজ্ঞেস করে।
--কোন ছেলে?তোর ছেলে বললে বুঝবো?
--ঐ যে মস্তানী করে বেড়াতো--।
--সে কি আমার প্রেমিক ছিল?
--আহা রাগ করছিস কেন?তুই রাস্তাঘাটে ওকে বকাবকি করতিস না?
--আমি কেন কোনো মেয়ের দিকে তাকাতো?
--এইটা ঠিক বলেছিস।কলেজ ছুটির পর ফেরার পথে দেখতাম গাছতলায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে।আমাদের ক্লাসের অনেকেই ওকে টেরিয়ে টেরিয়ে দেখতো।সত্যি কথা বলতে কি গুণ্ডা হলেও ছেলেটা খুব ভদ্র।
--ভদ্র?অসিতকাকুর ছেলেকে কেমন কেলিয়েছিল জনিস?
--খালি খালি কেলিয়েছে?
--যাই করুক ও কী গার্দিয়ান?
--সুদীপকেও ক্যালাত।আমি হাতে পায়ে ধরে ওকে বাচিয়েছিলাম।তোদের বলিনি কলেজ ছুটির পর সুদীপের জন্য ঘুর পথে হোগলা বনের পাশ দিয়ে বাড়ী ফিরতাম তোরা তো জানিস।হঠাৎ একদিন কি হল হোগলা বনের কাছে এসে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিল। মনা গুণ্ডা এসে না পড়লে কি যে হতো ভাবলে আজও গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। সেদিনই ওর সঙ্গে সম্পর্ক কাট আপ করা উচিত ছিল।ক্ষমা-টমা চেয়ে এমন কান্না কাটি করল,ভাবলাম মানুষমাত্রই ভুল করে।
মস্তানের গুণাবলী শুনতে শুনতে প্রজ্ঞা ভাবে শুক্রবার দেখে চিনতে পারলে কেলেঙ্কারী হবে।পর মুহূর্তে মনে হল মাম্মী তো চিনতে পারেনি।অবশ্য দাদাভাই বলছিল কোথায় যেন দেখেছি।ধুতি পাঞ্জাবী টোপর পরে বর বেশে আসলে মনে হয় চিনতে পারবে না।
পারুল বলল,এক্টু নিরিবিলিতে পেলেই ছেলেরা অন্য রকম হয়ে যায় দেখছি তো।অবশ্য খারাপ লাগে না।
দীক্ষা হেসে বলল,প্রজ্ঞা খুব সাবধান নিরিবিলি পেলেই কিন্তু--হি-হি-হি।
মস্তানের সঙ্গে মিলছে না।দরজা বন্ধ করে পাশাপাশি শুয়েও দেখেছে যেমন তেমন।অন্যরকম হবার কোনো লক্ষণই দেখেনি।
--যাই রে সন্ধ্যে হয়ে এল।
--শুক্রবার যেন ভুল না হয়।প্রজ্ঞা ওদের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল।
আশালতা বারান্দা থেকে মেয়েকে হাসিখুশী দেখে আশ্বস্থ হন।বেলির মন বদলাচ্ছে,নিজে কার্ড নিয়ে বন্ধুদের নেমন্তন্ন করছে মনের সায় না থাকলে করতো।