Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 3.28 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চাওয়া-পাওয়া by Kamonamona (সমাপ্ত)
#76
আমার এমন কঠিন ধমকিতে গুঞ্জন ওঠলো ভ্রমরের মতো। চেয়ারম্যান সাহেব সবাইকে শান্ত করলো।
-আমিও অনেক কথা শুনেছি। কিছু কিছু কথা আমিও জানি, তাই আমি শুরু করছি। মাস্টারের বড় ভাই কোথায়?
-এই যে আমি চেয়ারম্যান সাহেব (ভিড়ের ভিতর থেকে বড় চাচা কথা বলে উঠলো)
-এদিকে আসুন।
চাচা চেয়ারম্যানের সামনে এলো।
-বলো হাবিব ভাই কতো টাকা পাও মাস্টারের কাছে?
-তা এমন কিছু না, সেটা আমাদের পরিবারের বিষয়। রেজা যেহেতু চলে এসেছে আমরা নিজেরাই বসে মিটমাট করে নিবো। আমি কথা বলে উঠলাম
-আমাদের পরিবার? কিসের পরিবার? আমরা তো আপনাদের কেউ না। কে বলেছে আমরা আপনাদের কেউ হই? যদি তাই হতো তাহলে কার নামে বদনাম করে বেড়িয়েছেন? কাদের না খাইয়ে রেখেছেন? কার জমি দখল করে নিয়েছেন? ঐ ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে-মেয়ে দুটোর কি অপরাধ? দিনের পর দিন তাদের তিনজনের উপর অত্যাচার করেছেন সবাই মিলে। তারা কারা? তারা যদি আপনার পরিবার হতো তাহলে তাদেরকে আগলে রাখতেন। ছোট ভাইয়ের ছেলে মেয়ে কি আপনার ছেলে মেয়ে নয়? কোথায় ছিলো এতোদিন আপনার পরিবারগিরি?
-মুখ সামলে কথা বল, রেজা। টাকা পয়সার মালিক হয়েছিস দেখে কি বড়দের সামনে কিভাবে কথা বলতে হয় তা ভুলে গেছিস?
-আমি যোগ্য ব্যাক্তিকে যোগ্য সম্মান দিয়েই কথা বলি।
-তার মানে কি আমরা সম্মান পাওয়ার যোগ্য নই?
-নিজের বিবেক কে জিজ্ঞেস করেন?
-কি? যতো বড় মুখ নয় ততো বড় কথা, বেয়াদব। ধুম করে মেজাজ টা গরম হয়ে গেলো
-আমার মুখ কতো বড়ো আর আমি যে কতো বড় তা আপনার আন্দাজ নেই, বুঝেছেন। আমি যদি এ মুহূর্তে থানায় ফোন দিয়ে নিজের পরিচয় দিই, বলি ইন্ড্রাষ্টিয়াল সিআইপি রায়হান রেজা বলছি তাহলে ছুটতে ছুটতে এসপি পর্যন্ত চলে আসবে। এসে আমি যা বলবো তা করবে, কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যেতে বললে তাই করবে। এমন কেস লাগাবে সারাজীবন জেলে বসে চাক্কি পিষবেন। দেখতে চান নাকি?
আমার কথা শুনে সবাই নিশ্চুপ, একটা টু শব্দ পর্যন্ত পাওয়া গেলো না। এমন সময় বড় চাচী হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো
-ওরে রেজা রে, তোর মা মারা যাওয়ার পর আমিই তো তোকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। আর সেই তুই কি না আমার এতো বড় সর্বনাশ করবি?
চেয়ারম্যান সাহেব কথা বলে উঠলো
-আরে না রেজা কাউরির সর্বনাশ করবে না, ওটা তো কথার কথা বলেছে রাগের মাথায়। আলতু ফালতু কথা বাদ দিয়ে তোমরা দুভাই বলো কে কি পাও। পরে দেখছি আর কাওরির সাথে লেনদেন আছে কি না৷
এবার সাপ গর্তে ঢুকলো, সুরসুর করে বড় চাচা ছোট কাকা সব বলে গেলো৷ তাদের মিথ্যে ফিরিস্তি শুনে সবার চোখ কপালে, হাজার হলেও মাস্টার মশাই কেমন মানুষ তা তো সকলেই জানে। সব শুনে আমি মুচকি মুচকি হাসছি। হেড স্যার এতক্ষণ চুপ ছিলো, এতক্ষণে কথা বলে উঠলো
-হাসছো কেন, রেজা?
-আচ্ছা স্যার, আমার বাবা তো আপনার কলিগ ছিলো। তার থেকে বড় কথা সে আপনার বন্ধু, আপনি তার সব কথায় জানেন?
-হ্যা, জানি।
আমার বাবার কি কোন সঞ্চয় ছিলো না?
-হ্যাঁ, ছিলো লাখ পাঁচেক।
-সে কি নেশা টেশা করতো?
-কি যা তা বলছো? মাথা ঠিক আছে তোমার?
-আমার মাথা ঠিকই আছে স্যার। আমার বাবার লাখ পাঁচেক সঞ্চয় ছিলো, সে নেশা করতো না, তার কোন বাজে অভ্যেস ছিলো না, তাহলে ঘরের চালের ভাত খেয়ে প্রতি মাসে সরকারি বেতন পেয়েও ভাইদের কাছ থেকে টাকা ধার করতো?
সামান্য আট, দশ কাঠা জমি কিনে দশ বারোটা দোকান বানিয়েছে তার জন্য ভাইদের কাছ থেকে ছয় সাত লাখ টাকা ধার নিয়েছে? তাহলে বাবার কি কিছুই ছিলো না? সব আছে শুধু উনার ভাইদের, ভাইদের বলে মার্কেট বানাতে গেছে? আর সে ভাইদের টাকা শোধ না করে মরে যেতেই তার লক্ষ্মী ভাইগণ খেতের জমি, বাগান, মার্কেট সব জোর করে দখল করে নিলো? এটা কি সমাজ না অন্য কিছু, তাই হাসছি স্যার।
আমার এমন কথা শুনে স্যারসহ সবাই মাথা নিচু করে নিলো
-বলেন স্যার আমি কি ভুল করে হেসে ফেলেছি?
-না রেজা না। সমাজ এখন বড়ই অন্ধকারে, তোমাদের মতো যুবকেরাই আলো ফুটাতে পারো।
-যা হোক, আপনাদের দাবি দাওয়া আমি মেনে নিলাম। এই বলে পকেট থেকে চেক বই বের করে দশ লক্ষ টাকা লিখে তা চেয়ারম্যান সাহেবের হাতে দিলাম।
-এই নেন চাচা, তাদের দাবি আট লক্ষ, দিলাম দশ লক্ষ আশা করি পরে আবার বলবে না যে আমাদের টাকা কি বন্ধ্যা, বাচ্চা দেই না।
আমার কথায় সবাই হেসে উঠলো, হা হা হা
-আরেকটা কথা, আমার বাবার সব সম্পত্তি আমি “আশা কল্যাণে” দান করে দিলাম। সব মানে সব কিছু। কাল সকালেই সব দলিলপত্র স্যারকে বুঝিয়ে দিবো। আর এই বাড়ির দাম যা বাজার মুল্যে আসে তা নগদ দিয়ে দিবো, এই বাড়িতে আমার বাবার অনেক স্মৃতি ছড়িয়ে আছে তাই এটা আমি কিনে নিতে চাই।
কাল সকালেই আমরা সবাই শহরে চলে যাবো। আবার কখন আসি না আসি তাই এখনি বলে রাখি। আমার কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমার যদি ভুল হয়ে থাকে সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
মজলিস ভেংগে গেছে অনেকক্ষন, তারপরও কিছু কিছু মানুষ এখনো আছে। হেড স্যার মেম্বার ও চেয়ারম্যান সাহেব অনেকক্ষণ ধরে আমার সাথে গল্প করলো। বার বার করে বললো, মাঝে মাঝে যেন আসি।
মা চা দিয়ে গেলো, তা খেয়ে তারা বিদায় নিলো। বাইরে বেরিয়ে চুপিচুপি পুরনো বন্ধুরা মিলে সিগারেট খেলাম,তাদের বললাম,ব্যবসা-বাণিজ্য কর, টাকা পয়সা লাগলে আমার সাথে যোগাযোগ করিস।
কয়েকজন তো বললো চাকরি দে, গ্রামে কি বালের ব্যবসা করবো।
-ঠিক আছে চলে আয় ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
-বিয়ে করেছিস, ভাবিকে সাথে আনলি না?
-না রে, করিনি, ব্যবসা-বাণিজ্যতে সময় দিতে গিয়ে বিয়ে করার সময় পেলাম কোথায়।
মা’র ডাক শুনে তাদের বিদায় দিয়ে ভিতরে এলাম।
-ভাত বাড়ি?
-বাড়ো।
সবাই এক সাথে খেলাম, দারুণ রেঁধেছে মা। কষা কষা করে দেশি মুরগী, ঝোল করে রুই মাছ, ডালের চড়চড়ি । রনি তো আমার কোলে বসেই খেলো। বার বার মা নামিয়ে দিতে বললো।
-থাক না,আমার অসুবিধে হচ্ছে না।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চাওয়া-পাওয়া by Kamonamona (সংগৃহীত) - by MNHabib - 25-03-2022, 03:47 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)