Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 3.28 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চাওয়া-পাওয়া by Kamonamona (সমাপ্ত)
#75
বাজারে ঢুকার মুখে এগারোটা দোকান নিয়ে নতুন একটা মার্কেট। এখনো আস্তর লাগানো হয় নি, ইটগুলো লাল টকটকে হয়ে চেয়ে আছে। সবগুলোর সাটার বন্ধ, এটাই বাবা তৈরি করেছে আট কাঠা জমি কিনে। যতো সমস্যার মুল এই মার্কেট, চাচারা এটার লোভেই যা তা করেছে, বলে বেড়িয়েছে।
বাজারে যেতেই সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো, কিভাবে জানি সবাই খবর পেয়ে গেছে। মাতুব্বর সাহেব সবাইকে ঠেলে আমার সামনে এসে দাড়ালো
-কেমন আছো বাজান?
-ভালো আছি চাচা, আপনি কেমন আছেন?
-আছি ভালো বাবা। ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম, সে তো ফোন করে বললো তোমার কোম্পানিতে চাকরি হয়ে গেছে, এখন নিশ্চিন্ত।
মনে মনে ভাবলাম ওহ মিলন তাহলে গ্রামে কল করেছিলো আর মাতুব্বর সব শুনে বাজারে এসে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করেছে।
ঘন্টাখানিক বাজারে ঘুরলাম, পুরনো বন্ধু বান্ধবদের সাথে দেখা হলো।
সবার একই কথা কিভাবে পারলাম ভুলে থাকতে? কিভাবে এতো পয়সার মালিক হলাম?
আমি জবাব না দিয়ে শুধু মুচকি মুচকি হাসলাম৷
ভালো দেখে দুটো মাছ একটা মুরগী কিনে বাড়ীর দিকে হাটা দিলাম।
রাস্তায় বাবার বন্ধু, প্রাইমারী কলেজের হেড মাস্টার, আমারও স্যার তার সাথে দেখা হয়ে গেলো। পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম।
-বেঁচে থাকো বাবা বেঁচে থাকো। বাবা মা’র ওপর অভিমান করে কেউ এতো দুরে চলে যায়? বাবা মা কি শাসন করতে পারে না?
-জ্বী স্যার, পারে।
-তাহলে লেখা পড়া ভালো ভাবে না করার জন্য বাবা মারলো বলে বাড়ী ছেড়ে চলে গেলে? (ওহ, তারমানে বাবা আমার মান সন্মান বজায় রেখেছে)
-ভুল হয়ে গেছে স্যার।
-হ্যাঁ, অনেক বড় ভুল করেছো
আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
-তুমি এসেছো খবর পেয়ে তোমাদের বাড়ী গেছিলাম। তোমার মা বললো বাজারে গেছো, তাই হাটতে হাটতে সেদিকেই যাচ্ছিলাম।
-স্যার, একটা কথা বলবো?
-বলো।
-সন্ধ্যার পর একটু আমাদের বাসায় আসবেন?
-কেন?
-না মানে একটু সবাই মিলে বসে কি কি সমস্যা আছে সমাধানের চেষ্টা করতান।
-হ্যাঁ, ঠিকই বলেছো। তোমার চাচারা যে এতোটা অমানুষ চিন্তার বাইরে।
-স্যার, পারলে মেম্বার সাহেবকেও একটু সাথে করে নিয়ে আসবেন।
-সে না হয় আসবো, তোমার চাচাদের বলেছো?
-আপনি বাবার বন্ধু, এটাও আপনার করা লাগবে। আর আমি চাই আমাদের সয় সম্পত্তি সব আপনার হাতে তুলে দিয়ে চলে যাবো। (স্যারের ছেলে পুলে নেই। নিঃসন্তান, তাই সমাজসেবা মুলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সেখানে বৃদ্ধ, বিধবা, এতিম ছেলে-মেয়েদের লালন পালন করা হয়। অবশ্য এতে বাবাসহ অনেকে জড়িত ছিলো)
-একেবারে আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে যাবে?
-না স্যার, আসবো মাঝে মাঝে। আসলে স্যার আমি কয়েকটা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি, সময়ের খুব অভাব।
- হ্যাঁ, শুনলাম মাতুব্বরের মুখে। খুব ভালো করেছো। ঠিক আছে তুমি বাসায় যাও, আমি মেম্বারের সাথে দেখা করে তোমার চাচাদের খবর দিচ্ছি। তা বিয়ে শাদি করেছো?
-না স্যার। (মিথ্যে বললাম, সত্যিটা বললে হাজারো প্রশ্ন করবে)
-এখনও করোনি! বয়স তো কম হলো না, তোমার সাথেরগুলো তো দু’চার ছেলে-মেয়ের বাপ।
আমি চুপ করে রইলাম।
-যাও বাসায়।
-ঠিক আছে স্যার।
 
বাসায় এসে মা’র হাতে মাছ, মুরগী দিয়ে ঘরে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে রুটি আলুভাজি নিয়ে মা আসলো। চুপ করে খেতে বসলাম। মা হাত পাখা দিয়ে বাতাস দিচ্ছে।
-আরে করো কি, বাতাস দেওয়া লাগবে না।
-খাও তো চুপচাপ (মা’র কন্ঠ ভেজা ভেজা। হয়তো অদম্য কান্না চেপে আছে)। খেতে খেতে বললাম
-আমি তোমাদের আমার সাথে নিয়ে চলে যেতে চাই, যাবে?
-যাবো, তুমি ছাড়া আর আমাদের আছেই বা কে। তোমার আশায় তো এতোদিন পথ চেয়ে বসে আছি। আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আসবেই।
আমি অবাক হয়ে মা’র মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। কোথায় পেলো এতো বিশ্বাস? সে কি ভুলে গেছে পুরনো কথা?
-চেয়ে রইলে যে, খাও।
-হ্যাঁ, খাই।
-সন্ধ্যায় সবাই আসবে। কার কি পাওনা আছে মিটিয়ে সকালে রওনা দিবো। আর হ্যাঁ, আমাদের এখানের যা সম্পত্তি আছে সব “আশা কল্যাণ” এ দান করে দিবো। তোমার আপত্তি আছে?
-না, তুমি যা করবে তাই হবে। শুধু এ বাড়ীটা দিও না, এতে অনেক স্মৃতি ছড়িয়ে আছে।
-কি করবে এ বাড়ী রেখে?
-থাকনা এটুকু।
-ঠিক আছে।
খেয়ে দেয়ে ঘুম দিলাম, সারারাত গাড়ী চালিয়ে এসেছি। ঘুম ভাংলো একেবারে বিকেলে। ওঠে গোসল করে ভাত খেলাম। ছোট ভাই-বোনের সাথে খেলা করে সময় পার করলাম। চার বছরের পিচ্চি রনি গাড়ীতে চড়ার বাইনা ধরলো। হেলেনা ও রনিকে গাড়ীতে করে গ্রামের রাস্তায় কিছুক্ষণ ঘুরিয়ে আনলাম।
দোকান থেকে অনেক মজা কিনে দিলাম। গ্রামের বাচ্চারা জড়ো হতে তাদেরও দিলাম।
সবাই খুশি হলো, কিন্তু আমার চাচা চাচীরা কেউ দেখা করতে আসলো না। এমন কি ছোট বড় চাচাতো ভাই বোনগুলোকেও আমার সামনে আসতে দিলো না।
আমিও নিজে থেকে যায় নি। রুখো বাছাধন। এমন অবস্থা করবো তোমাদের, কেঁদে কুল পাবে না, আমার নামও রায়হান রেজা।
 
সন্ধ্যা হতে পিলপিল করে মানুষ জন আসতে লাগলো। শেষে এমন অবস্থা দাঁড়াল যে তিল পরিমাণ জায়গা খালি রইলো না। সবার কৌতূহল, কি হয়। রেজা কি বলে তা শুনবে।
মনটাকে শক্ত করে মজলিসে এসে দাড়ালাম। স্যার তার পাশে বসতে বললো।
-না স্যার, ঠিক আছি আমি।
ওদিকে দেখি চেয়ারম্যান সাহেবও চলে এসেছে। আমি তো অবাক, এতো মানুষকে স্যার খবর দিয়েছে কি মনে করে কে জানে।
চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে ডেকে বুকে জড়িয়ে ধরলো
-তুমি আমাদের গ্রামের গর্ব রেজা, তোমার মতো ছেলে একা একা শহরে গিয়ে নষ্ট না হয়ে এতো উন্নতি করেছো যে আমাদের সবার বুক ফুলে গেছে।
-সবই আপনাদের দোয়া চাচা।
-এবার আমাদের গ্রামের বেকার ছেলেদের জন্য কিছু করো বাবা।
আমি মানিব্যাগ থেকে কয়েকটা ভিজিটিং কার্ড বের করে তার হাতে দিলাম।
-আপনি যাকে যাকে পাঠাবেন, সবার চাকরি হবে আমার কোম্পানিতে যোগ্যতা অনুযায়ী।
সব মানুষ এক দৃষ্টিতে আমার কার্যকলাপ দেখছে। এবার আমি জোর গলায় বললাম,
-আপনারা সবাই এসেছেন দেখে আমি খুশি হয়েছি। সবাই কে আমি সালাম জানাচ্ছি, আসসালামু আলাইকুম, সকলে একযোগে উত্তর দিলো,
-কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ছোট বড় সকলকে। যে জন্য ডেকেছি তা হলো- আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। জানি না কার কাছে কি রেখে গেছেন। মানুষ সমাজে চলতে গেলে লেন-দেন থাকে, আমার বাবা যদি কাওরির কাছে কিছু পেয়ে থাকে তা দেওয়ার দরকার নেই। তবে তার কাছে কেউ যদি কিছু পেয়ে থাকেন তা যাই হোক না কেন আমার কাছে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। সবার সামনে বলতে না চাইলে একা একাও বলতে পারেন। আমি তার বড় ছেলে হিসেবে সমস্ত কিছু পরিশোধ করবো। আর হ্যাঁ, আজকের মধ্যে না ব’লে যদি পরে মানুষের সামনে কঁউ ওল্টা পাল্টা বলে বেড়ায় আর তা যদি আমার কানে যায়। তাহলে আমি রায়হান রেজা কসম খেয়ে বলছি সে ব্যাক্তির বংশ নির্বংশ করে দিবো।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চাওয়া-পাওয়া by Kamonamona (সংগৃহীত) - by MNHabib - 20-03-2022, 08:09 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)