17-01-2022, 08:39 AM
তার পর খেত নিড়িয়ে পরের চাষের জন্য তুলে দিতে হবে জোএল সদ্দার কে এমনি কথা দেয়া আছে তার । গাঁয়ের লোকে আপন করে নিয়েছে মধুর কে । যে ছেলে এক মাসে ফিরে যায় নি শহরে, সে ফিরে যাবার ছেলেই নয় । গাঁয়ের অনুষ্ঠানেও খেটে দিয়েছে মধুর । আসলে শহরের গর্ব অহংকার গুলো গ্রামে দম বন্ধ হয়ে মরে যায় । কারণ সোনা দানা , পয়সা দিয়ে গ্রামে বেঁচে থাকা যায় না । তুমি বড়ো গাড়িতে না শক্ত গাড়িতে সে সব এখন কার মানুষ দেখে না । এখান কার মানুষ দেখে ৪ মাইল হেঁটে হাট থেকে দু বস্তা বাজার মাথায় নিয়ে ৪০ মিনিটে তুমি সন্ধ্যের আগে গ্রামে ফিরতে পারলে কিনা । বা গ্রামের মানুষ দেখে আড়াই তিন কিলো পাঁঠার মাংস ভাত দিয়ে একা সাবাড় দিতে পারলে কিনা । এখানে মানুষ দেখা না তুমি ১০০০০ টাকার ব্র্যান্ডের পারফিউম লাগিয়েছো না ৫০০ টাকার ।
বরেন বাঁড়ুজ্জেও আসেন নি । তিনিও ছেলে কে ছেড়ে দিয়েছেন । শিখে নিক , বুঝে নিক জীবনের মূল্য । শহরের শিশুর রং চঙে ইলেকট্রনিক নক্শা করা লাট্টুর থেকে একটা কদম ফুলের আনন্দ অনেক গুন্ বেশি । মধুর হেরে যায় নি । মধুর চৈতির হাত ধরে প্রতিবাদ করেছে মাত্র সভ্য সমাজের , যারা ভাতের এক থালা নর্দমায় অনায়াসে ছুড়ে ফেলে দিয়ে থালা ধুয়ে রেখে দিতে পারে তাদের জন্য ।
এখানে হয়তো ফিনাইলের কোনো জায়গায় দেয় নি অসভ্য গ্রাম সমাজ । কিন্তু সময় ঘুরে চললো নিজের নিভৃত গতিতে । রাত থেকে দিন আর দিন থেকে রাত । সময় এসে গেলো ধান কাটাই এর কাজ । জোএল সর্দার কিপ্টে । গাছ ভিজে থাকলে ধান পচে যাবে । তাই খুব তাড়াতাড়ি কেটে নিতে হবে শুয়ে পড়া ধান । চার জন লোক কে দিলো ধান নিরোনোর কাজে । আর নিজে মাঠে নামলো মধুর । কাস্তে চালাতে শেখে নি সে । হেসো দিয়ে দা মারলে গাছ কাটা যায় ধান কাটা যায় না । কিছুতেই থাকতে পারছিলো না চৈতি , মধুরের অসহায়তার দিকে তাকিয়ে ।
থাক বাবা যা বলে বলুক , তাকে যেতেই হবে । সারা দিন কেটে গেছে , সে ভাবে ধান কাটাই হয় নি । নিজেই কাস্তে নিয়ে ছুটে গেলো মাঠে । দেখিয়ে দিলো কি করে ঘষতে হয়ে ধারালো কাস্তে ধানের গোড়ায় । আর একটু ঘষলেই কেমন করে কেটে যায় খড় । মুখে এক রাশ আনন্দ নিয়ে কেটে চলে মধুর আঁটির পর আঁটি ক্লান্তি হীন । আরো একটু পরিশ্রম করা যায় , আরো একটু । দু জন আটি বইছে গোলায় নিয়ে যাবার জন্য । দুজন কাটছে ধান । না রাতে আর কাজ করা যাবে না , সন্ধ্যে নেমে আসছে । শীতের সন্ধ্যে বলে তারির আসর বসে মাঠেই । বিচালি জ্বেলে আলু ফেলে দিয়ে পুড়িয়ে খায় গ্রামের লোক । সে আলুর স্বাদ এরা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না । বুঝবে না মাস কলাইয়ের শাকের কলাই ভেঙে খাবার আনন্দ । এই ৬ টা মাস সে নতুন করে একটা পৃথিবীর সন্ধান পেয়েছে । এখানে ক্যাপিটালিস্ট দের কোনো জায়গা নেই । মেয়ের বিয়েতে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয় না ।
সন্ধ্যে বেলা পুকুর ঘাটে পা ধুয়ে , মন্দিরে দাবায় বসে মধুর । এখানে অনেক বুড়োরা বসে হুঁকো টানে । গ্রামের পুরুষেরা সন্ধ্যে বেলা এক জায়গায় জড়ো হয়ে দুনিয়ার খবরের চর্চা করে । হয় তো লোকের মুখেই শোনা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন রাজা । অথবা ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে অনেক মানুষ । পরের দিনের ভোর হবার জন্য অপেক্ষা করবে এই মানুষ গুলো । নেশার মতো ছুটে যাবে মাঠে । গায়ে কাদা মেখে এমনি মাটির বুকে ছিড়ে বের করে আনবে সোনার ফসল । এদের কেন লোভ হয় না ? সব ফসল বেচে দেয় নূন্যতম দামে । আর শহরের মানুষ কে বাসমতি চাল কিনতে হয় ১২০ টাকা কিলোতে । এদের মধ্যেই বসে থাকে মধুর । অনেকে চিত্রহার এর গান শুনছে বিবিধ ভারতীতে । কাল হয়তো ধান নিড়োনো শেষ হয়ে যাবে । দু চার দিনে শেষ হবে ঝাড়াই মাড়াইয়ের কাজ । আর তার পর মাথা নিচু করে ঘরের কোন থেকে সরে যেতে হবে মধুরকে, চৈতি কে বিয়ে করে । পরাজয়ের ম্লান আলোতে তার মনে খুশি আসে । হেরে গেছে সে মাটির কাছে , জোএল সর্দারের কাছে হার সে মানে নি । কিন্তু যদি আরেকটা সুযোগ পেত প্রথম থেকে ? যদি আগে থেকে জানতো চাষ করতে গেলে কত টা ঘাম ঝরাতে হয় ? তাহলে মাথা উঁচু করে চৈতি কে বিয়ে করতে পারতো । কদম ফুল তার যে কত প্রিয় ।
বরেন বাঁড়ুজ্জেও আসেন নি । তিনিও ছেলে কে ছেড়ে দিয়েছেন । শিখে নিক , বুঝে নিক জীবনের মূল্য । শহরের শিশুর রং চঙে ইলেকট্রনিক নক্শা করা লাট্টুর থেকে একটা কদম ফুলের আনন্দ অনেক গুন্ বেশি । মধুর হেরে যায় নি । মধুর চৈতির হাত ধরে প্রতিবাদ করেছে মাত্র সভ্য সমাজের , যারা ভাতের এক থালা নর্দমায় অনায়াসে ছুড়ে ফেলে দিয়ে থালা ধুয়ে রেখে দিতে পারে তাদের জন্য ।
এখানে হয়তো ফিনাইলের কোনো জায়গায় দেয় নি অসভ্য গ্রাম সমাজ । কিন্তু সময় ঘুরে চললো নিজের নিভৃত গতিতে । রাত থেকে দিন আর দিন থেকে রাত । সময় এসে গেলো ধান কাটাই এর কাজ । জোএল সর্দার কিপ্টে । গাছ ভিজে থাকলে ধান পচে যাবে । তাই খুব তাড়াতাড়ি কেটে নিতে হবে শুয়ে পড়া ধান । চার জন লোক কে দিলো ধান নিরোনোর কাজে । আর নিজে মাঠে নামলো মধুর । কাস্তে চালাতে শেখে নি সে । হেসো দিয়ে দা মারলে গাছ কাটা যায় ধান কাটা যায় না । কিছুতেই থাকতে পারছিলো না চৈতি , মধুরের অসহায়তার দিকে তাকিয়ে ।
থাক বাবা যা বলে বলুক , তাকে যেতেই হবে । সারা দিন কেটে গেছে , সে ভাবে ধান কাটাই হয় নি । নিজেই কাস্তে নিয়ে ছুটে গেলো মাঠে । দেখিয়ে দিলো কি করে ঘষতে হয়ে ধারালো কাস্তে ধানের গোড়ায় । আর একটু ঘষলেই কেমন করে কেটে যায় খড় । মুখে এক রাশ আনন্দ নিয়ে কেটে চলে মধুর আঁটির পর আঁটি ক্লান্তি হীন । আরো একটু পরিশ্রম করা যায় , আরো একটু । দু জন আটি বইছে গোলায় নিয়ে যাবার জন্য । দুজন কাটছে ধান । না রাতে আর কাজ করা যাবে না , সন্ধ্যে নেমে আসছে । শীতের সন্ধ্যে বলে তারির আসর বসে মাঠেই । বিচালি জ্বেলে আলু ফেলে দিয়ে পুড়িয়ে খায় গ্রামের লোক । সে আলুর স্বাদ এরা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না । বুঝবে না মাস কলাইয়ের শাকের কলাই ভেঙে খাবার আনন্দ । এই ৬ টা মাস সে নতুন করে একটা পৃথিবীর সন্ধান পেয়েছে । এখানে ক্যাপিটালিস্ট দের কোনো জায়গা নেই । মেয়ের বিয়েতে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয় না ।
সন্ধ্যে বেলা পুকুর ঘাটে পা ধুয়ে , মন্দিরে দাবায় বসে মধুর । এখানে অনেক বুড়োরা বসে হুঁকো টানে । গ্রামের পুরুষেরা সন্ধ্যে বেলা এক জায়গায় জড়ো হয়ে দুনিয়ার খবরের চর্চা করে । হয় তো লোকের মুখেই শোনা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন রাজা । অথবা ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে অনেক মানুষ । পরের দিনের ভোর হবার জন্য অপেক্ষা করবে এই মানুষ গুলো । নেশার মতো ছুটে যাবে মাঠে । গায়ে কাদা মেখে এমনি মাটির বুকে ছিড়ে বের করে আনবে সোনার ফসল । এদের কেন লোভ হয় না ? সব ফসল বেচে দেয় নূন্যতম দামে । আর শহরের মানুষ কে বাসমতি চাল কিনতে হয় ১২০ টাকা কিলোতে । এদের মধ্যেই বসে থাকে মধুর । অনেকে চিত্রহার এর গান শুনছে বিবিধ ভারতীতে । কাল হয়তো ধান নিড়োনো শেষ হয়ে যাবে । দু চার দিনে শেষ হবে ঝাড়াই মাড়াইয়ের কাজ । আর তার পর মাথা নিচু করে ঘরের কোন থেকে সরে যেতে হবে মধুরকে, চৈতি কে বিয়ে করে । পরাজয়ের ম্লান আলোতে তার মনে খুশি আসে । হেরে গেছে সে মাটির কাছে , জোএল সর্দারের কাছে হার সে মানে নি । কিন্তু যদি আরেকটা সুযোগ পেত প্রথম থেকে ? যদি আগে থেকে জানতো চাষ করতে গেলে কত টা ঘাম ঝরাতে হয় ? তাহলে মাথা উঁচু করে চৈতি কে বিয়ে করতে পারতো । কদম ফুল তার যে কত প্রিয় ।