16-01-2022, 11:43 AM
শুরু হলো এক নতুন জীবন মধুরের । একে একে ছেড়ে গেলো সব কিছু । প্রথমে ফোন । আর তার পর পরনের পোশাক আর ডিওডোরেন্ট । ধুতি সে পড়তে পারে না , কিন্তু যোগ হলো শরীরে লুঙ্গি আর ধুতি । শহুরে মানুষের গা হয়ে গেলো খালি গা । যা কিছু শেখবার শিখিয়ে দেবে কানাই । সে জোএল সদ্দারের দেয়া সব চেয়ে ভালো মজুর । ক্ষেতের কাজ তার নখ দর্পনে । চলে গেলো মধুরের পায়ের জুতো । খালি পায়ে গ্রামের খেতে গাড়ি সামুকে কেটে যাবার ভয় । জোঁক লাগছে পায়ে রোজ ।
শুরু হলো মোটা চাল খাওয়া । সকালে এক গামলা পান্তা , দুপুরে মাছের ঝোল ভাতবা সবজি ভাত । এক হাটু জলে ধান রোয়ানো, বলদ চালানো , আগাছা নিড়োনো, সবই শিখতে হবে তাকে , একটু একটু করে । সময় নেই । শিক্ষিত শহুরে ছেলে ।খবর দিলো ভাবি শশুর কে একটা রেডিও চাই । ফোন যখন নেই , চাষের খবর শুনতে হবে রেডিওতে । সকালে বিকেলে দুবার চা পাওয়া যাবে।
খুব সহজেই মধুর মানিয়ে নিলো গাঁয়ের জীবন শৈলী শহুরে পোশাক ছেড়ে ।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রইলো জোএল সর্দারের তার উপর । একে একে আসতে লাগলো প্রতিকূলতা । প্রথমে শরীর বিদ্রোহ করলো । তার পরে মন । কিন্তু জেদের কাছে হার মানলো দুটোই একে একে । সামনে তাকিয়ে শুধু তার লক্ষ্য চৈতি । আর বাঁধ সাধলো চাষের অভিজ্ঞতা । বলদ ঠেলতে না পারা। ধান রোয়ানোর ঠিক মাপ না বোঝা । সবার ধানের দৈর্ঘ যখন দু বিগৎ , তখন তার ধান এক বিগৎ এই দাঁড়িয়ে ।
কানাই এর কাছে শিখলেও হাতে ধরে করতে হয় এ কাজ । তবুও পন প্রাণ দিয়ে রোজ আগলাতে লাগলো তার দু বিভাগে জমি । জলের মাপ ও মানতে লাগলো রেডিও শুনে শুনে । মধুপুরের কিষান সমবায় বিকাশে গিয়ে গিয়ে লোকের মুখে মুখে শিখে নিতে থাকলো চাষের টুকি টাকি । তবু শশুরের কাছে মাথা নামবে না সে । জমি নিড়িয়ে ঠিক মতো সমান করতে পারে নি । প্রথম বোল্ড ঠেলে ছিল এটা তার জীবনে । হাতের ছাল উঠে কড়া পরে গেছে , তার পা কেটে ফালা ফালা হয়ে গেছে । কিন্তু ধান সে ফলাবেই । বর্ষার জমা জল কমে যাচ্ছে । আরো জল চাই । গাছ সে ভাবে এখনো বাড়ে নি । তাই নিজেই চলে গেলো গাঁয়ের প্রধানের কাছে , যদি সালোও টিউবের আরেকটু জল পাওয়া যায় । প্রধান উপেক্ষা করলেন ।
"শহরের ছেলে ধান চাষ কি তোমাদের মানায় , যাও বাড়ি ফিরে যাও । তোমার ক্ষেতের যা অবস্থা তাতে ধান হলেও ১০ মনের বেশি ধান তুমি তুলতে পারবে না ।"
এর পর মধুর পড়াশুনার জন্য চলে গেলো গ্রামের কলেজের লাইব্রেরি তে । যদি বই পত্তর কিছু পাওয়া যায় । সেখানে আলাপ হলো এক টিচারের সাথে । মাধব রঞ্জন পাল, চাষীর ছেলে কিন্তু ভূগোলের অধ্যাপক তিনি । একদমই বন্ধুর মতো বয়সের হের্ ফের হবে বছর ৮ এক । তার কানেও গিয়েছে মধুরের খামখেয়ালিপনা । জোএল সদ্দার ধানের গোলার মালিক । ওর মতো ধানের গলা এ তল্লাটে কারোর নেই । তার সাথে পাল্লা দেয়া এই ছোড়ার কম্মো নয় ।
মধুর: দাদা ভীষণ বিপদে পরেই যে আসলাম আপনার কাছে !
মাধব : জানি সবই জানি , সময়সা টা কি ?
মধুর: ধানের গোড়া বাড়ছে না জল দিচ্ছি , হেমিপিতেরা পোকা আসতে শুরু করেছে !
মাধব: হাঃ আঃ আহা অরে ওটাকে বলি ধানের ঘুন পোকা , ধান গাছের শাসালো রস ওরা চুষে খেয়ে নেয় ।
মধুর: পেস্টিসাইড দিয়েছি , কি কমছে না তো ? তাই দেখছিলাম যদি চাষ বাসের কিছু বই পাওয়া যায় !
মাধব: অরে বাবা বই দিয়ে কিছু হবে না , যাও বনমালীর দোকানে তুতে পাওয়া যায় কিলো দুই তুতে, দু গামলা জলে চেষ্টাও দেখি ।
মধুর: আচ্ছা আসি তাহলে
মাধব: শোনো হে ছোকরা , কাল আমিও যাবো দেখতে !
মধুর: খুব ভালো হয় , এসে একটু যদি আমায় সাহায্য করেন ।
যত টুকু কানাইয়ের থেকে সাহায্য না নিলে নয় ততটাই সহায় নিয়েছে মধুর । শরীরে তিন মাসেই মাংস পেশী গজিয়ে গেছে তার । কোদাল কোপানো , বলদের নাকে নল পড়ানো, ছিপ দিয়ে মাছ ধরা , চলো তার জালি দিয়ে জাল ফেলা পুকুরে সব শেষ । সব কিছুই একটু একটু করে শিখেছে সে চৈতির দিকে তাকিয়ে ।
শুরু হলো মোটা চাল খাওয়া । সকালে এক গামলা পান্তা , দুপুরে মাছের ঝোল ভাতবা সবজি ভাত । এক হাটু জলে ধান রোয়ানো, বলদ চালানো , আগাছা নিড়োনো, সবই শিখতে হবে তাকে , একটু একটু করে । সময় নেই । শিক্ষিত শহুরে ছেলে ।খবর দিলো ভাবি শশুর কে একটা রেডিও চাই । ফোন যখন নেই , চাষের খবর শুনতে হবে রেডিওতে । সকালে বিকেলে দুবার চা পাওয়া যাবে।
খুব সহজেই মধুর মানিয়ে নিলো গাঁয়ের জীবন শৈলী শহুরে পোশাক ছেড়ে ।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রইলো জোএল সর্দারের তার উপর । একে একে আসতে লাগলো প্রতিকূলতা । প্রথমে শরীর বিদ্রোহ করলো । তার পরে মন । কিন্তু জেদের কাছে হার মানলো দুটোই একে একে । সামনে তাকিয়ে শুধু তার লক্ষ্য চৈতি । আর বাঁধ সাধলো চাষের অভিজ্ঞতা । বলদ ঠেলতে না পারা। ধান রোয়ানোর ঠিক মাপ না বোঝা । সবার ধানের দৈর্ঘ যখন দু বিগৎ , তখন তার ধান এক বিগৎ এই দাঁড়িয়ে ।
কানাই এর কাছে শিখলেও হাতে ধরে করতে হয় এ কাজ । তবুও পন প্রাণ দিয়ে রোজ আগলাতে লাগলো তার দু বিভাগে জমি । জলের মাপ ও মানতে লাগলো রেডিও শুনে শুনে । মধুপুরের কিষান সমবায় বিকাশে গিয়ে গিয়ে লোকের মুখে মুখে শিখে নিতে থাকলো চাষের টুকি টাকি । তবু শশুরের কাছে মাথা নামবে না সে । জমি নিড়িয়ে ঠিক মতো সমান করতে পারে নি । প্রথম বোল্ড ঠেলে ছিল এটা তার জীবনে । হাতের ছাল উঠে কড়া পরে গেছে , তার পা কেটে ফালা ফালা হয়ে গেছে । কিন্তু ধান সে ফলাবেই । বর্ষার জমা জল কমে যাচ্ছে । আরো জল চাই । গাছ সে ভাবে এখনো বাড়ে নি । তাই নিজেই চলে গেলো গাঁয়ের প্রধানের কাছে , যদি সালোও টিউবের আরেকটু জল পাওয়া যায় । প্রধান উপেক্ষা করলেন ।
"শহরের ছেলে ধান চাষ কি তোমাদের মানায় , যাও বাড়ি ফিরে যাও । তোমার ক্ষেতের যা অবস্থা তাতে ধান হলেও ১০ মনের বেশি ধান তুমি তুলতে পারবে না ।"
এর পর মধুর পড়াশুনার জন্য চলে গেলো গ্রামের কলেজের লাইব্রেরি তে । যদি বই পত্তর কিছু পাওয়া যায় । সেখানে আলাপ হলো এক টিচারের সাথে । মাধব রঞ্জন পাল, চাষীর ছেলে কিন্তু ভূগোলের অধ্যাপক তিনি । একদমই বন্ধুর মতো বয়সের হের্ ফের হবে বছর ৮ এক । তার কানেও গিয়েছে মধুরের খামখেয়ালিপনা । জোএল সদ্দার ধানের গোলার মালিক । ওর মতো ধানের গলা এ তল্লাটে কারোর নেই । তার সাথে পাল্লা দেয়া এই ছোড়ার কম্মো নয় ।
মধুর: দাদা ভীষণ বিপদে পরেই যে আসলাম আপনার কাছে !
মাধব : জানি সবই জানি , সময়সা টা কি ?
মধুর: ধানের গোড়া বাড়ছে না জল দিচ্ছি , হেমিপিতেরা পোকা আসতে শুরু করেছে !
মাধব: হাঃ আঃ আহা অরে ওটাকে বলি ধানের ঘুন পোকা , ধান গাছের শাসালো রস ওরা চুষে খেয়ে নেয় ।
মধুর: পেস্টিসাইড দিয়েছি , কি কমছে না তো ? তাই দেখছিলাম যদি চাষ বাসের কিছু বই পাওয়া যায় !
মাধব: অরে বাবা বই দিয়ে কিছু হবে না , যাও বনমালীর দোকানে তুতে পাওয়া যায় কিলো দুই তুতে, দু গামলা জলে চেষ্টাও দেখি ।
মধুর: আচ্ছা আসি তাহলে
মাধব: শোনো হে ছোকরা , কাল আমিও যাবো দেখতে !
মধুর: খুব ভালো হয় , এসে একটু যদি আমায় সাহায্য করেন ।
যত টুকু কানাইয়ের থেকে সাহায্য না নিলে নয় ততটাই সহায় নিয়েছে মধুর । শরীরে তিন মাসেই মাংস পেশী গজিয়ে গেছে তার । কোদাল কোপানো , বলদের নাকে নল পড়ানো, ছিপ দিয়ে মাছ ধরা , চলো তার জালি দিয়ে জাল ফেলা পুকুরে সব শেষ । সব কিছুই একটু একটু করে শিখেছে সে চৈতির দিকে তাকিয়ে ।