04-01-2022, 08:01 PM
(This post was last modified: 04-03-2022, 01:59 PM by kumdev. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
।।৮৬।।
দিলীপের কথা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না আবার বিশ্বাস করতেও চাইছে না মন।নির্মলের মনে এখনো রীমা।ওর অফিসের কথা দিলীপ জানল কি করে?এখন ক্লাস নেই নির্মল বেরিয়ে ভাবছে এক কাপ চা খেলে কেমন হয়।ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েটার আগ্রহ নির্মলকে ধন্দ্বে ফেলেছে।মেয়েটার আগ্রহের লক্ষ্য কি সে নাকি মনার খবর জানা উদ্দেশ্য।মনার ব্যাপারে ওরই বা এত আগ্রহ কেন?ক্যাণ্টিনে ঢুকে বেয়ারাকে চায়ের ফরমাশ করতে যাবে শুনতে পেল,আমিও আছি, দুটো বলো।
নির্মল দুটো চায়ের কথা বলে জিজ্ঞেস করল,তোমার ক্লাস নেই?
মেয়েটি বসে বলল,আমার যে ক্লাস ভাল লাগে সেটা করি।
ওর সঙ্গে মেলা মেশা অনেকের চোখে পড়েছে।সুদিপ্ত তার সহপাঠি বলছিল,তোর সঙ্গে আগে আলাপ ছিল?
যত বলে এখানে এসে পরিচয় হয়েছে দুষ্টু হেসে বলে বুঝেছি বুঝেছি।মেয়েটি বেশ ধনী পরিবারের মনে হয়।একবার দাগা খেয়েছে আর নয়।
--নিম বলো আর কি আপডেট আছে?মেয়েটি বলল।
--কোন ব্যাপারে?
--তোমার বন্ধু কবে ফিরবে?
মনার কথা জিজ্ঞেস করছে মনে হল।নির্মল বলল,কিছু মনে কোরো না একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
--ও সিয়োর! আমার জীবন খোলা খাতা--আর তোমার কথা আলাদা--।
--না মানে বলছিলাম কি মানে ওর সঙ্গে তোমার--।
--ধুস মন্দাকিনীকে তুমি এই চিনলে?সনুকে আমি সত্যি ভাল বেসেছিলাম।কিন্তু পরে বুঝেছি ও ভালবাসার যোগ্য নয়।একটা ছেলেকে দিয়ে সবাইকে বিচার করতে চাই না।আমার সঙ্গে পড়তো প্রজ্ঞা ওর প্রতি ইণ্টারেস্টেড ছিল।প্রজ্ঞার সঙ্গে দেখা হয়না তাহলে ডিটেলসে জানতে পারতাম।
--তোমার বন্ধু প্রজ্ঞা এখন কি করে?
--ও এখন সায়েন্স কলেজে আছে।ভাবছি প্রজ্ঞা সব জানে কি না?বাদ দাও তোমার কথা বলো।
ভবিষ্যতের কথা ভেবে নির্মল বলতে থাকে,আমাদের পরিবার অরডিনারী পরিবার।দুই বোন এক ভাই।বড়দির বিয়ে হয়ে গেছে।
মন্দাকিনী বুঝতে পারে নিম কেন তাকে এসব কথা শোনাচ্ছে।নিজের কথা বলে বুঝতে চাইছে এসব শোনার পরও ওকে আমি পছন্দ করব কিনা।মন্দাকিনি বলল,দ্যাখো নিম বিত্ত সম্পত্তির প্রতি আমার কোনো মোহ নেই,আমি চাই একটা ভাল মানুষ।
নির্মল বোঝার চেষ্টা করে এসব কথা কি তার কথা ভেবে বলছে?ঘড়ি দেখে বলল,চলো ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।
রীমা কম্পিউটাররে বসে কাজ করছে।টি এল ঘুরে ঘুরে নজর রাখছে কারো কোনো দরকার লাগে কিনা।বেয়ারা এসে রীমার টেবিলে একটা স্লিপ রেখে গেল।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মুচকি হাসল।অনি ছুটির পর দেখা করতে বলছে।অনির্বান এ্যাসিস্টাণ্ট ম্যানেজের। রুমাল বের করে চোখ মুছল।একটানা কাজ করতে করতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।রীমা উঠে অনির্বানের ঘরে গিয়ে বলল,ডেকেছো কেন?
--মনটা ভাল নেই ছুটির পর এসো।
--গাড়ী কি আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে?
--গাড়ীতে যেতে হবে না আমি পৌছে দেবো।
রীমা নিজের জায়গায় ফিরে আসে।কি হল অনির মন খারাপ কেন?বেশি রাত করা যাবে না।
আজকের মত ক্লাস শেষ।ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল নির্মল।ভিতর দিয়ে হেটেই বাড়ী ফেরে নির্মল।আলো কমে এসেছে আকাশে।আগ বাড়িয়ে নিজের বাড়ীর কথা বলে ফেলল,কি ভাবল কে জানে।মন্দাকে নিয়ে একটু বেশি ভাবছে।একটা ছেলের সঙ্গে একটা মেয়ের বন্ধুত্ব হতেই পারে।পাড়ায় ঢোকার মুখে নজরে পড়ে দিলীপ রকের দিকে চলেছে।দাড়িয়ে পড়ল।মনে হয় তাকে দেখেছে।নির্মল চলার গতি বাড়িয়ে দিল।রীমার ব্যাপারটা ও জানল কি করে?কাছে যেতে দিলীপ বলল,এই ফিরছিস?
--হ্যা আড্ডায় যাচ্ছিস?
--আড্ডায় যেতে আর ভাল লাগেনা।ইউজলেস টক।
মনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হবার পর থেকেই দিলীপের মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে।ওর কিছু গল্প পত্র পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
নির্মল কিছু বলে না দুজনে হাটতে থাকে।নির্মল ভাবে রকে সবার সামনে বলা যাবে না জিজ্ঞেস করল,আচ্চা দিলীপ তুই যে রীমার কথা বলেছিলি তা কি সত্যি ?
রীমাকে ভুলতে পারেনি ব্যাটা,বিরক্ত হয়ে বলল,মিথ্যে বলে আমার কি লাভ?
--তা না এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
--তোকে একটা কথা বলি শোন,যা গেছে তা যাক।যা আছে তাই নিয়ে ভাব।তোর সেই মেয়েটার খবর কি?
ওরা রকের কাছে পৌছেও একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে।নির্মল বলল,আজ একটা নতুন খবর শুনলাম।প্রজ্ঞা নামের একটা মেয়ে নাকি মনার দিকে ঝোক ছিল।দেখে কিছুই বুঝতে পারিনি।
দিলীপের মনে পড়ল মীনুর কথা।মনা যখন পড়াতে যেতো নানা অছিলায় কথা বলতে আসতো।দিলীপ হেসে বলল,শালার চেহারার মধ্যে এমন একটা ব্যাপার আছে যা মেয়েদের খুব পছন্দ।
--কিন্তু মেয়েদের ও খুব সমীহ করতো।
--সেটা ঠিক।ওর তো ফেরার সময় হয়ে এল।
--আর আমাদের কি পাত্তা দেবে?
দিলীপ বলল,তুই ওকে চিনিস নি।অতীতকে ভোলার ছেলে ও নয়।আগে যাদের সঙ্গে মিশতো, তাদের কাউকে ভোলেনি।
শুভ বলল,তোরা কি ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাত কাবার করবি?
প্রজ্ঞা তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে ফিরে এসেছে।বই পত্তর রেখে ওয়াশ বেসিনে হাত মুখ ধুতে থাকে।চারুলতা জিজ্ঞেস করল,ফ্লাইট কটায় পৌছাবে?
--নটা কত যেন।আজে ফিরব না।ওখান থেকে বাড়ী চলে যাব।
চারুলতার যাবার ইচ্ছে ছিল।বেলি ফিরবে না তাকে একা একা ফিরতে হবে।তাছাড়া বড়দি থাকবে নিশ্চয়ই।ঐ ঘটনার কথা বড়দি এখনো জানে না।
কাজের পিসি চা নিয়ে আসে।চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে চায়ে চুমুক দিতে থাকে প্রজ্ঞা।মাস্তানের কথা মনে পড়ে,কোন রাজ্যে পোস্টিং হবে সে জন্য ওর মন খারাপ।মাকে ছেড়ে কতদিন বাইরে রয়েছে।চারুমাসী বললেন,কি ভাবছিস?
--কিছু না।হেসে বলল প্রজ্ঞা।
রাত বাড়তে থাকে নির্মল উঠে দাড়ায়।দিলীপ বলল,উঠছিস?
--হ্যা রে আসি।
মন্দার ব্যাপারটা বুঝতে পারেনা।মনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না বলল।তাহলে ওর সম্পর্কে জানার এত আগ্রহ কেন।এমনও হতে পারে তার সঙ্গেই কথা বলতে চায় মনা আসলে একটা ছল।নজরে পড়ল রীমাদের বাড়ীর গলির মুখে একটা ট্যাক্সি দাড়িয়ে।ভাল করে লক্ষ্য করে,ট্যাক্সি থেকে রীমা নামছে।এত রাতে কোথা থেকে?ট্যাক্সিটা চলে যেতে নির্মল দ্রুত এগিয়ে যায়।কাছে গিয়ে পিছন থেকে ডেকে বলল,রীমা দুমিনিট সময় হবে?
--ও-ও ত-তুমি এত রাআতে কি ব্ব্যসাপার?
ভক করে একটা গন্ধ নির্মলের নাকে লাগে বলল,তুমি নেশা করেছো?
রীমার জোর করে চোখের পাতা তুলে হেসে উঠে বলল, সো হোয়াট?
নির্মল ভাবে এই অবস্থায় কথা বলে লাভ নেই।বুঝতে রীমা এখন তার কাছে থেকে শুধু নয় তার জগত থেকে বহুদূর চলে গেছে।
প্রজ্ঞা পৌছে দেখল সবাই এসে গেছে।আশালতা জিজ্ঞেস করেন,বৌমা আসেনি?
--আমি কি করে বলব?
ওরা টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকে বসতে গিয়ে নজরে পড়ে বাবাকে নিয়ে এক কোনে বসে আছে রমিতা।তাদের দেখে এগিয়ে এল।আশালতা জিজ্ঞেস করেন,তুমি কতক্ষন বৌমা?
--বেশিক্ষন না মিনিট কুড়ি হবে।মা ওকে কি বাড়ীতে নিয়ে যাবেন?
--এতদিন পরে আসছে তবে যাবে কোথায়?
এত পরিশ্রম করে সল্টলেকের বাড়ীটার কাজ শেষ করালো রমিতার মন খারাপ হয়ে যায়।আমি আসছি বলে প্রজ্ঞা দ্রুত বাইরে বেরিয়ে গেল।এত রাতে ফোন করল কেণ?বুকের মধ্যে ধড়াস করে ওঠে।বাইরে এসে কানে লাগিয়ে বলল,এত রাতে কি ব্যাপার...কি জরুরী কথা...তাড়াতাড়ি বল...।কথাটা শুনে প্রজ্ঞার কথা বন্ধ হয়ে যায়,তারপর কানে লাগিয়ে বলল,ঠিক বলছিস ওয়েস্ট বেঙ্গল...দুন এক্সপ্রেস...হ্যা-হ্যা আছা ঠিক আছে গুড নাইট।
প্রজ্ঞা ধীরে ধীরে ভিতরে গিয়ে বাপির বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে পাশে বসল।আশালতা বৌমার বাবার সঙ্গে কথা বলছেন।বিজন চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে থাকেন।ফোন বাজতে উঠে বাইরে গেল আবার ফিরে নিশ্চিন্তে বাপিকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ।বিজন চৌধুরী অনুমান করার চেষ্টা করেন হঠাৎ কি হল। থাকতে না পেরে একসময় জিজ্ঞেস করেন,মনিময় বাবুর ছেলে ফোন করেছিল?
মাথা না তুলে ঘাড় নাড়ে প্রজ্ঞা।
--ওর এ রাজ্যে পোস্টিং হয়েছে?
তড়াক করে মাথা তুলে বড় চোখ করে বাপিকে দেখে।বিজন চৌধুরীর ঠোটে মৃদু হাসি।প্রজ্ঞা বলল,তুমি কি করে বুঝলে?
--আমার মাকে আমি চিনবো না।
--এবার বুঝেছি তুমি নিশ্চয়ই কিছু করেছো।
--আমার মা আমাকে ছেড়ে দূর দেশে চলে যাবে আমি চুপচাপ দেখবো।
--তোমরা বাপ মেয়ে বসে গল্প করো।যার জন্য এসেছি তার কথা না ভাবলেও চলবে।আশালতা উষ্মা প্রকাশ করলেন।
--ডাক্তার এসে গেছে?
--তোমার সামনে দিয়ে গেল,তুমি এ জগতে থাকলে তো।
--কোথায়?
--শ্বশুরের সঙ্গে কথা বলছে।
--চলো গাড়ীতে ওঠো।