Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।৮৫।।




সল্ট লেকের বিডি ব্লকে পাচিলে ঘেরা দোতলা বাড়ী।নীচে গ্যারাজ উপর নীচ মিলিয়ে সাতটি ঘর। বহুকাল পড়ে আছে অযত্নে।আশপাশ বুনো জঙ্গলে ভরে গেছে।সেই সব পরিষ্কার করে রঙ মেরামত করা হচ্ছে।পাচিলে পাথরের উপর লেখা ডা প্রদোষ চৌধুরী এমবি বি এস, এফ আর সি এস তার নীচে রমিতা চৌধুরী।মিস্ত্রীরা কাজ করছে দাঁড়িয়ে দেখছে রমিতা।রমিতা এখন মির্জাপুরে বাপের বাড়ীতে থাকে। 
কলেজে শুভেন্দুর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেও আগের মত উষ্ণতা নেই।প্রজ্ঞারই ক্লাসের শ্রাবন্তীর সঙ্গে খুব ভাব হয়েছে এখন।প্রজ্ঞা মনে মনে হাসে,একই সঙ্গে ডিগ্রী এবং জীবনসঙ্গী কলেজ থেকে সংগ্রহ করে নেবে।অধ্যাপক না আসায় তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষ হয়ে গেল।প্রজ্ঞা আজ মামণির কাছে যাবে।এত তাড়াতাড়ি কি করবে রাস্তায় এসে ভাবে।বাপি সল্টলেকে বাড়ী কিনেছে শুনলেও দেখা হয়নি।এক্টু ঘুরে গেলে কেমন হয়।রমিতার সঙ্গেও দেখা হয়ে যেতে পারে।
হিমানীদেবী মনে মনে হিসেব করেন প্রায় পাঁচ মাস হয়ে গেল।সময় যেন কাটতে চায়না।গত সপ্তাহে বেলি এসেছিল।চোটপাট করলেও মনুকে খুব ভালবাসে।উকিলবাবু বলেছেন,ওদের আবার বিয়ে দেবেন।বেলির কাছে শুনে যেন বুক থেকে পাথর নেমে গেল।বেলি বলেছে এখনই পাঁচ কান করার দরকার নেই।হারাধন একদিন এসেছিল তাকেও বলেন নি।দেওয়ালে ঘড়ির দিকে তাকালেন,পাঁচটা বাজলে উঠবেন।
খুজতে খুজতে প্রজ্ঞার নজরে পড়ল রাস্তার ধারে একটা চেয়ারে বসে আছে রমিতা।দাদা এমাসে আসবে খুব উৎসাহ।রমিতার পিছনে এসে দাড়াল।নজরে পড়ে পাচিলের গায়ে পাথরে নাম ফলকের দিকে।বাড়ীটা তো বাপি কিনেছে।বেশ করিৎকর্মা মেয়ে। ঠোটের কোলে হাসি ফুটলো।  
ঘাড় ঘুরিয়ে প্রজ্ঞাকে দেখে রমিতা অবাক হয়ে বলল,তুমি কখন এলে?
--কাজ তো প্রায় শেষ হয়ে এল।
--দাঁড়াও তোমায় ভিতরে নিয়ে দেখাচ্ছি।রমিতা একজন মজুরকে ডেকে চা আনার ফরমাস করল,সবার জন্য আনবে।
--তুমি রোজ আসো?
--রোজ না এলে এতসব হত? কয়েক জায়গায় প্লাস্টার খসে গেছিল।আগে তো দেখোনি বাড়ীর সামনে জঙ্গলে ভরে গেছিল।একজন মালীর সঙ্গে কথা হয়েছে,কাজ শেষ হলে সামনে কয়েকটা ফুলগাছ লাগিয়ে দেবে।
--বেলফুল গাছও লাগিও।প্রজ্ঞার মন শৈশবে হারিয়ে যায়।তাদের বাড়ীর সামনে ছিল বেলফুল গাছের ঝাড়।সাদা ফুলে ছেয়ে থাকতো। গাড়ী করে কলেজে যেতো রাস্তার ধারে একটা ছেলে ড্যাবড্যাব চেয়ে চেয়ে দেখতো।সেই বয়সে প্রেম ভালবাসার বোধ না থাকলেও ছেলেটাকে তার খুব ভাল লাগতো।লুকিয়ে দেখে কাছাকাছি হলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতো।এই ব্যাপারটা তার মজা লাগত। ছেলেটা ভীরুপ্রকৃতি নয় বরং উলটো।
তারপর হাই কলেজ।লক্ষ্য করেছে পরিচয় না হলেও সব সময় তাকে পাহারা দিত।ওদের বাসায় গেলে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যেতো।মেশোমশায় মানে ওর বাবার মনে ছেলেকে নিয়ে খুব অশান্তি।আজেবাজে ছেলেদের সঙ্গে মেশে,এখানে সেখানে মারপিট করে। 
--নেও চা খাও।
রমিতার কথায় সম্বিত ফেরে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিল।
--চলো ভিতরে চলো।
রমিতার পিছন পিছন বাড়ীর ভেতর ঢুকল।গ্যারাজের পাশে ডাইনিং তার একদিক হতে সিড়ি উঠে গেছে।দোতলায় বাড়ীর সামনে বড় ঝুল বারান্দা।একটা লোক এসে বলল,মেমসাব কাল প্লাম্বার আসার কথা একটু সকাল সকাল আসবেন। 
রমিতার কাছে বিদায় নিয়ে প্রজ্ঞা হাটতে হাটতে খালের ধারে এল।খেয়া পেরিয়ে ওপারে গিয়ে বাস ধরল।মাস্তান আসার আগেই দাদা চলে আসবে।বাসে বেশ ভীড় লেডিস সিটের কাছে রড ধরে দাড়ায়।একটা বয়স্ক লোক তার কাছ ঘেষে দাড়ালো।এই হয়েছে মুষ্কীল একটু গন্ধ শোকা একটু ছোয়ার জন্য এমন করে।মাস্তান থাকলে তোমার কি যে হাল হত ভেবে মজা পায়।পর মুহূর্তে মনটা খারাপ হয়ে যায়।বিহারটা কাছে আছে যদি তামিল কিম্বা অন্ধ্র প্রদেশে পোস্টিং হয়। মাস্টার্স শেষ না করে কলকাতা ছাড়া সম্ভব নয়।লোকটা তো ভারী অসভ্য সোজা হয়ে দাড়াতে পারছে না।এদের জন্য মেয়েদের বাসে ট্রামে যাতায়াত মুষ্কিল হয়ে পড়ছে।বয়স হয়েছে বাড়ীতে নিশ্চয়ই বউ আছে।প্রজ্ঞা নাগের বাজার নামবে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
নাগের বাজার নেমে আবার বাস ধরল।ভীড় ছিল না তেমন লেডিস সিটের কাছে আসতে একটি ছেলে উঠে দাড়ালো।এক্টু ইতস্তত করে বসে পড়ল প্রজ্ঞা।একজনকে উঠিয়ে বসতে খারাপ লাগে।ছেলেটি না উঠলে তাকে উঠতে বলতো না।দমদম স্টেশন পেরোতে বাড়ির কথা মনে পড়ল।মা এখন একা রমিতা বাপের বাড়ীতে থাকে।সেভেন ট্যাঙ্কসের মোড়ে নেমে পড়ল।এই রাস্তাটা মন্দাদের বাড়ির দিকে চলে গেছে।ওর সঙ্গে কথা হয়না অনেক দিন।সন্ময়ের সঙ্গে আর সম্পর্ক নেই।মাস্তানের মাস্তানী মন্দার খুব পছন্দ হয়েছিল। নতুন কাউকে জোটালো কি না কে জানে।হাটতে ইচ্ছে করল না একটা রিক্সায় উঠে বসে।বিয়ের কথা মন্দাকে বলা হয়নি।বাপি বলেছে নতুন করে বিয়ে দেবে।তখন ওকে নেমন্তন্ন করা যাবে।রকের পেরোবার সময় সোজা সামনের দিকে তাকায়।ওদিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারে ওরা ওকে লক্ষ্য করছে একরাশ কৌতূহল নিয়ে।মাস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এতদিনে ওরা জেনে গেছে,সেই বলেছে।
হিমানীদেবী উঠে রান্না ঘরে গেলেন।চায়ের তেমন নেশা নেই একটা অভ্যেস।কিছু করার নেই চা খাও।চায়ের জল চাপিয়ে চা পাতা চিনির কৌটো তাক থেকে নীচে নামালেন।কলিং বেলের শব্দ শুনে বেলির কথা মনে পড়ল।দরজা খুলে অবাক,আরে বেলিই তো।
একরাশ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেলি।হিমানীদেবী পাশ দিয়ে বললেন,আয়মা তোর কথাই ভাবছিলাম।
প্রজ্ঞা সোজা মাস্তানের ঘরে গিয়ে কাধের ঝোলা নামিয়ে পোশাক বদলাতে থাকে।
রান্না ঘরে এসে আরেক কাপ জল ঢেলে দিলেন হিমানীদেবী।       
খাটো ঝুলের নীল পায়জামার উপর বাটিক প্রিণ্টের কুর্তা গায় দিয়ে জানলার কাছে গিয়ে দাড়ালো।মাস্তানের ঘরে ঢূকলে অনুভব করে শরীরের মধ্যে কেমন এক অনুভুতি।হিমানীদেবী চা এগিয়ে দিয়ে বললেন,মনু একটু আগে ফোন করেছিল,জিজ্ঞেস করল তোর কথা।আবার পরে করবে।
--আর তো কদিন--।প্রজ্ঞা ম্লান হাসল।
প্রজ্ঞাকে দেখে আলোচনায় সাময়িক বিরতি পড়েছিল।তারপর পরস্পর চোখাচুখি হতে মৃদু হাসে।শুভ জিজ্ঞেস করল,কোথায় থাকে জানিস?
--কলকাতায় কোথাও হয়তো।শঙ্কর বলল।
--কলকাতায় নাতো কি দিল্লীতে?আমরাও তো কলকাতায় থাকি।
--আমি কিকরে জানবো?
--তোকে জিজ্ঞেস করেছি?
নির্মল মনে মনে হিসেব করে বলল,ফেরার সময় হয়ে এল প্রায়।
--মনা এখন মোটা বেতনের পুরো দস্তুর সরকারী আমলা।হেসে বলল বঙ্কিম।
প্রজ্ঞা কিছুতেই চিন্তাটা ঝেড়ে ফেলতে পারেনা,নাছোড় মাছির মতো সারাক্ষন কানের কাছে গুনগুন করছে।এলমেলো ভাবতে ভাবতে এলিয়ে পড়েছিল বিছানায়।মোবাইল বাজতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে,হ্যা বল...কি হল...মন খারাপ কেন কদিন পর তো দেখা হবে...কেন ...দিল্লী হরিয়াণা...তোকে বলেছে...।প্রজ্ঞার ভ্রু কুচকে যায় ওদের মধ্যে এইসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।প্রজ্ঞা কানে লাগিয়ে জিজ্ঞেস করল,সবার কথা বাদ দে,অফিস থেকে কিছু জানায় নি...যখনই জানবি আমাকে বলবি...ভাল থাকিস...বাই।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 28-12-2021, 09:45 PM



Users browsing this thread: 38 Guest(s)