25-12-2021, 11:38 PM
(This post was last modified: 02-03-2022, 03:57 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
।।৮৪।।
ক্লাসে নজরে পড়লেও শুভেন্দু কিছু বলে না।কোনোভাবে অসতর্ক মুহূর্তে লেগে থাকবে প্রজ্ঞা হয়তো খেয়াল করেনি।ক্লাসটা শেষ হলে ব্যাপারটা নিয়ে মজা করা যাবে।প্রজ্ঞা স্যারের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। স্যারের লেকচার শুনতে শুনতে অজান্তে শুভেন্দুর নজর প্রজ্ঞার মাথার দিকে চলে যাচ্ছে।একসময় ঘণ্টা পড়ে।স্যার বেরিয়ে যেতে সবাই বাইরে বেরিয়ে পড়ে।প্রজ্ঞাকে আলাদা করে সরিয়ে নিয়ে শুভেন্দু মজা করে বলে,কিরে তোর সিথিতে সিদুর দিল কে?
প্রজ্ঞা হাসল বলল,আমি অবশ্য এসব বিশ্বাস করিনা ট্রেডিশন মেনে সিদুর দিয়েছি।
শুভেন্দুর মুখটা মুহূর্তে কেমন বদলে গেল দেখে প্রজ্ঞা বলল,সিদুর দিলে স্বামীর কল্যাণ হয়--তুই এসব বিশ্বাস করিস?
ব্যাজার মুখে শুভেন্দু বলল,সিদুর স্বামী তুই এসব কি বলছিস?
--কেন আমার কি বিয়ে হতে পারে না?
--তুই তো আগে একথা বলিস নি।
--বোকার মত কথা বলিস নাতো।আমি কি জনে জনে বলব আমি বিবাহিত?চল চা খেয়ে আসি।
--তুই যা আমার অফিসে একটু কাজ আছে।শুভেন্দু চলে গেল।
প্রজ্ঞার মজা লাগে।কার্যকারণ ছাড়াই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে,মাস্তানটা আলাদা।মাস্তানের কথা মনে পড়তে মনটা উদাস হয়ে যায়।এতদিন অপেক্ষা করেছে কবে ছটা মাস শেষ হবে।এখন অন্য চিন্তা কোথায় ওকে দেবে।টাকা পাঠিয়েছে ছুটির পর মামণিকে দিতে যাবে টাকাটা।চাকরি ছেড়ে দিতে বললে ছেড়ে দেবে এ বিশ্বাস আছে।স্যারকে আসতে দেখে দ্রুত ক্লাসে ঢুকে পড়ে।এইটা শেষ ক্লাস।হঠাৎ খেয়াল হয় পাশে শুভেন্দু নেই।ওকী এই ক্লাসটা করবে না।আশপাশে দেখতে নজরে পড়ল পিছনে বসেছে।প্রজ্ঞার খুব খারাপ লাগে।বেচারী খুব কষ্ট পেয়েছে।সেতো বানিয়ে কিছু বলেনি যা সত্যি তাই বলেছে।মানিয়ে নিতে ওকে একটু সময় দিতে হবে।
বোসবাড়ীর রকে একে একে সব জমতে থাকে।
মেয়েটার নাম মন্দাকিনী পাকপাড়া নর্দান এভেনিউতে থাকে।বেথুনে পড়তো,মনার সঙ্গে একদিন আলাপ হয়েছিল।মনা এসব কিছু কখনো বলেনি।এতসব জানার পরেও নির্মলের মনে ধন্দ্ব কাটেনি।দিলীপ আসতে নির্মল উঠে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,দিলু তুই এসব কিকরে জানলি?
--ছাড়তো তুই ওই মাগীর কথা।মুখ ঝামটা দেয় দিলীপ।
--প্লীজ দিলু তুই ওর সম্পর্কে ওভাবে বলিস না।
দিলীপ অবাক হয় যে মেয়ে এমন ব্যবহার করেছে তার প্রতি এখনো এত টান।দিলীপ বলল,রুক্সার কাছে সব শুনেছি,আমাকে এ ব্যাপারে আর কিছু জিজ্ঞেস করবি না।
দিলীপ রকে গিয়ে বসে পড়ল।তারও এরকম মনে হয়েছিল।এসব তাকে স্পষ্ট বলতে পারতো।নির্মলের খুব অভিমান হয়।এতে যদি সুখী হয় হোক।
শুভ জিজ্ঞেস করে,কিরে তোর হাতে কি,আবার কিছু ছাপা হল নাকি?
--এটা মুশাফির।মফঃস্বল হতে বেরোয়।দিলীপ একটা বই দেখিয়ে বলল।
--তোর গল্প ছেপেছে?বঙ্কিম জিজ্ঞেস করে।
--হ্যা আজকের ডাকে এল।
--আমাদের একজন আই এ এস একজন লেখক হয়ে গেল।চাদু হেসে বলল।
--দুটো গল্প ছাপা হলেই লেখক হয় না।শুভ বলল।
নির্মলের খারাপ লাগে শুভর কথায় জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা শুভ তুই বলতো কিভাবে লেখক হয়?
--শুধু গল্প লিখে লেখক হয়েছে--একটা নাম বলতো?এমন কোনো লেখক নেই যার উপন্যাস নেই--।
কি দেখে সবাই চুপ হয়ে যায়।কাধে ঝোলা ব্যাগ দীপ্ত ভঙ্গীতে প্রজ্ঞা রক অতিক্রম করে যায়,একাবার রকের দিকে ফিরেও তাকালো না।
দৃষ্টির সীমানা ছাড়াতে শুভ জিজ্ঞেস করল,মহিলা কে বলতো?
বঙ্কিম বলল,আরে এইতো মনার বউ,বাজারে দেখা হয়েছিল।
--সুন্দরী বলব না তবে চেহারায় একটা চমক আছে।শুভ বলল।
--বোকাচোদা তোর মতামত কেউ জানতে চেয়েছে।
--মুখ খারাপ করবি না দিলু।
--আরে নিজেদের মধ্যে কি আরম্ভ করলি।সবাই উভয়কে বিরত করার চেষ্টা করে।
দরজা খুলেই হিমানীদেবীর মন ভরে যায় বলেন,আয় মা ভিতরে আয়।কলেজ থেকে আসছিস?তুই বোস আমি খাবার করছি।
--এদিকে শোনো।ব্যাগ থেকে এক গোছা টাকা বের করে হাতে দিয়ে বলল,আর তোমাকে অত হিসেব করে খরচ করতে হবে না।
--এত টাকা?
--তোমার ছেলে পাঠিয়েছে।
--তুই তো সব করছিস মা,টাকা তোর কাছেই রাখ।হিমানীদেবী টাকা ফেরৎ দিয়ে দিলেন।
প্রজ্ঞা জানতো মামণি টাকা হাতে রাখবে না।মাস্তানের ঘরে গিয়ে বসল।এই ঘরে মাস্তানের স্পর্শ পায়।মোবাইল বেজে উঠতে বাটন টিপে কানে লাগায়।
--পৈসা ব্যাঙ্ক মে জমা কর দিয়া গ্যা হৈ?
--ফাজলামো হচ্ছে?
--বেলি আমি হিন্দি শিখছি।টাকা জমা পড়েছে?
--হ্যা আজই পড়েছে।
--জানো বেলি একটা কেরালিয়ান মেয়ে লক্ষী মেনন আমার কাছে বাংলা শিখছে।
--তুই ম্যারেড বলিস নি?
--জিজ্ঞেস না করলে আমি বলব আমি ম্যারেড?
--হ্যা বলবি--আজই বলবি।
--আজ তো দেখা হবে না।
--ঠিক আছে কালই বলবি।
--আচ্ছা বলব।
হিমানীদেবী প্লেটে লুচি তরকারী নিয়ে ঢুকলেন।প্রজ্ঞা বলল,মামণির সঙ্গে কথা বলবি?মামণি মস্তান--।প্রজ্ঞা ফোনটা এগিয়ে দিল।
হিমানীদেবী ফোন হাতে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হ্যা বাবা বল...ভাল আছি আমি ভাল আছি...বেলি আমাকে খারাপ থাকতে দিলে তো...ও বলেছে ফোন কিনে দেবে...টাকা পয়সা আমি রাখতে পারব না, বেলি সামলাবে...ভগবান পাঠিয়েছে...সাবধানে থাকিস বাবা...আচ্ছা দিচ্ছি।ফোন প্রজ্ঞার হাতে এগিয়ে দিলেন।প্রজ্ঞা কানে লাগিয়ে বলল,তুই মেনন না কি ওকে বলে আমাকে জানাবি...হ্যা-হ্যা জানি আলাউন্স...গুড নাইট,বাই।
--তুই খেয়ে নে ঠাণ্ডা হয়ে ভাল লাগবে না।হিমানীদেবী বললেন।
--মামণি আমার কাছে একটু বোসো।
--বসছি,চা-টা নিয়ে আসি।হিমানীদেবী চলে গেলেন।
প্রজ্ঞা লুচির প্লেট টেনে নিল।সকালে খেয়ে বেরিয়েছে।মেয়ে দেখলে ঢলে পড়ার ছেলে নয় মাস্তান।তবু শঙ্কা হয় মেয়েরা মায়া বিদ্যায় পারদর্শী, কখন যে কাকে কিভাবে ফাসাবে বিশ্বাস নেই।
হিমানী দেবী চা নিয়ে ঢুকলেন।প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করল,মামণি রাতে কি রান্না হবে?
হিমানদেবী লজ্জিত গলায় বললেন,তুই আসবি আমি তো জানতাম না--।
--বুঝেছি মাছ নেই?তুমি কি মনে করো আমাকে?
--তোর কথা বলছি না,আমার তো ইচ্ছে করে একটু ভাল মন্দ খাওয়াতে।
--আর চিন্তা নেই।এবার ফ্রিজ ভরে দিয়ে যাব।
বেলিকে পেয়ে খুব খুশি হিমানীদেবী,খুজে পেতে বের করতে হয়নি আপনি এসে ধরা দিয়েছে।মনুটা কপাল করে এসেছে।মনুর বাবার কথা মনে পড়ল।ছেলেকে নিয়ে কত চিন্তা ছিল কিন্তু দেখে যেতে পারল না।
--আচ্ছা মামণি, ধরো মাস্তানের যদি বিহারে চাকরি হয়--।
--বিহারে কেন হবে।
--দেশের যেকোন রাজ্যে ওকে দিতে পারে।
কালো ছায়া পড়ে হিমানীদেবীর মুখে বলেন,আমি মা আমাকে তো যেতে হবে।তুই যাবিনা?
--বারে আমার স্বামী আমি যাবো না?
হিমানীদেবীর মুখে হাসি ফোটে বললেন,তুই থাকলে আমার চিন্তা নেই।