24-12-2021, 08:21 PM
(This post was last modified: 01-03-2022, 02:50 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৮৩।।
ছেলেটির ইউপি কিম্বা তামিলনাডুতে পোস্টিং হলে মেয়েটা অনেক দূর চলে যাবে।খোকার থেকে বেলি অনেক মেধাবী,সেই সঙ্গে খেয়ালী।ছোটো থেকে যত আবদার বাপির কাছে।সে আজ কত বড় হয়ে গেছে।এমন একটা দিনের সম্মুখীন হতে হবে কখনো মনে হয়নি।সিভিল সার্ভিস পাস করেছে খারাপ নয় ঠিক আছে কিন্তু একেবারে বিয়ে!বেলিটা বরাবরই জেদী, আশা বলে যেমন বাপ তার তেমনি মেয়ে।যেন মেয়ে তার একলার।বিজন চৌধুরীর ঠোটে হাসি ফোটে। বিজন চৌধুরী কারো কৃপা অনুগ্রহের ধার ধারেন নি।বরং অনেকে তার শরণাপন্ন হয়েছে।অবশ্য সবই আইনগত।অনিচ্ছে সত্বেও দিল্লীতে কয়েক জায়গায় ফোন করেন।বেলি বলছিল ছেলেটিকে ঐ পাস করিয়ে নিজের মত করে গড়ে তুলেছে।মনে মনে হাসেন বিজনবাবু।ছেলেটিকে অস্পষ্ট মনে পড়ছে ডানপিটে প্রকৃতি। আজেবাজে ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করতো। অবশ্য উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করেছিল।
মুখার্জী বাড়ীতে ঢোকার জন্য একদিন ধরণা দিতে হয়েছিল।স্ট্যাটাসের ব্যবধান মেনে নিতে পারছিল না।বাড়ি সহ চার কাঠা জমির মালিক কৃষ্ণার স্ট্যাটাস রাতারাতি বদলে গেল।অবনীশবাবু এখন বউমাকে সমীহ করে চলেন।আশিসের চাকরির ভবিষ্যত নেই কৃষ্ণার পছন্দ নয়।এক সঙ্গে থাকতে থাকতে আশিস অনুভব করে কৃষ্ণা তার কত আপন।কৃষ্ণার মত করে কেউ তাকে নিয়ে ভাবে না সংসারে।
দেখা করার সময় নেই,ফোন করলেও সব সময় ধরছে না।কি চায় রীমা বুঝতে পারেনা নির্মল।অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব পেরিয়ে নির্মল ফোন করে বলেছিল একটিবার অন্তত দেখা করুক।কাজের অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে গেছে।একসময় রেগে গিয়ে বলেছিল,তুমি কি ব্রেক আপ করতে চাও?
--তাই ভাবলে তাই।
বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে উঠ্ল, কি বলছে কি পাঁচ বছরের উপর সম্পর্ক। নির্মল বলল,আমি তোমাকে ভালবাসি রীম--বিশ্বাস করো--।
--ছোটোবেলা থেকে বাবা-মা আমাকে মানুষ করেছে তাদের অবাধ্য হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
নিরুত্তাপ কথায় কোনো আবেগ নেই একেবারে স্পষ্ট উচ্চারণ নির্মলের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।রাতে ভাল করে ঘুমোতে পারেনি।সকালে উঠে ভার্সিটিতে যাবার জন্য অভ্যাস বশত তৈরী হতে থাকে।
মন্দাকিনী বেরোবার জন্য তৈরী হয়।নির্মলবাবুর কথা শুনে অবাক হয়েছে।তার ধারণা ছিল মস্তান টাইপের ছেলে।সেই ছেলে সিভিল সার্ভিস! ট্রেনিং-এ গেছে প্রায় মাস খানেক হতে চলল।প্রজ্ঞার চেনা ও নিশ্চয়ই জানবে।সায়েন্স কলেজে ভর্তি হয়েছে জানে।অনেকদিন দেখা হয়না।পার্কের ঘটনাটা মনে পড়তে মজা লাগে।হাত মুচড়ে ধরা মারমুখি চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে স্পষ্ট। তারপর থেকে সন্ময় তার পিছু ছেড়েছে। আচ্ছা কোনো ভুল হচ্ছে নাতো? মনসিজ ভেবে অন্য কারো কথা বলেনি তো।নির্মলবাবু বলছিল ওর বন্ধু,মন্দাকিনীর মনের ধন্দ কাটতে চায়না।নীচে নেমে গাড়ীতে উঠে বসল।
রীমার সেই 'তাই ভাবলে তাই' কথাটা ভুলতে পারছে না নির্মল। রাতে ঘুমোতে পারেনি,অভ্যাসের কারণে ভার্সিটিতে এসেছে।ক্লাস করতে ইচ্ছে হল না।মদ খেলে নাকি সব ভুলে থাকা যায়।আগে কখনো মদ খায়নি।ক্যাম্পাস হতে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাড়ায়।আগোচালো পদক্ষেপে উত্তর দিকে এগোতে থাকে। এপাশ থেকে ওপাশ ছুটে চলেছে গাড়ী অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মত।কেউ অনুমান করতেও পারবে না তার মনের মধ্যে কি হচ্ছে।ধীর গতিতে একটা গাড়ী উত্তর দিক হতে আসছে আচমকা তার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে পড়ে।চমকে দু-পা পিছিয়ে আশে নির্মল।গাড়ীটা পেরিয়ে নির্মল হাটতে থাকে।
--নির্মলবাবু---নির্মলবাবু--।
পিছন থেকে ডাক শুনে নির্মল ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখল সেই মেয়েটা,এবার ভর্তি হয়েছে।মনার কথা জিজ্ঞেস করছিল।মেয়েটি কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,ক্লাস নেই কোথায় যাচ্ছেন?
--আপনি এখানে নামলেন?
--আপনাকে দেখে নেমে পড়লাম।
আমাকে দেখে নেমে পড়ল।নির্মল ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে।এক বছরের জুনিয়র ভাল করে চেনে না।তার সঙ্গে কি এমন দরকার।
--আচ্ছা নির্মলবাবু একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
--তার আগে বলুন আমাকে কি আপনার বাবু-বাবু মনে হচ্ছে?
খিল খিল হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে মেয়েটি।মেয়েরা হাসলে ভাল লাগে নির্মল নিজেকে সংযত করে।হাসি থামিয়ে বলল,আপনি সিনিয়ার অবশ্য অনুমতি দিলে বাবু বাদ দিয়েই বলতে পারি।
--অবশ্যই পারেন?
--তুমি বলতে পারি?
--এ্যাজ ইউ উইশ।
--ওকে থ্যাঙ্ক ইউ।
--আপনি কি জিজ্ঞেস করবেন বলছিলেন?
--থাক দরকার নেই।
--কেন কি হল?
--এখনো আপনি?তার মানে আমাকে আপন ভাবতে পারছো না?
নির্মল বুঝতে পেরে বলল,আমার মুডটা আজ ভাল নেই।তোমার সঙ্গে আলাপ সবে চার-পাঁচ দিন--।
--দেখো যে আপন নয় যে পাঁচদিন কেন পাঁচ বছরেও আপন হয়না।
পাঁচ বছর শুনে নির্মলের মনে হল ঠিকই পাঁচ বছরের সম্পর্ক নিমেষে ছিন্ন করে দিল রীমা।
--কি ভাবছো?
--না কিছু না।তুমি কি জিজ্ঞেস করবে বলছিলে?
--চলো ক্যাণ্টিনে বসে বলব।
--তুমি ক্লাস করবে না?
--না আজ তোমার সঙ্গে কাটাবো।
দুজনে হাটতে হাটতে কলেজের দিকে চলল।মেয়েটা তাকে কি বলতে চায়।এত অল্প আলাপে "তোমার সঙ্গে কাটাব" কথাটা কানে বাজে।
একবার শিক্ষা হয়েছে আর নয়।
--আচ্ছা তুমি যে মনসিজের কথা বলেছিলে সেকি মস্তান ছিল?
--না না একটু ডেয়ার ডেভিল টাইপ ভদ্র,লেখাপাড়ায় বরাবর খুব ভাল।তুমি ওকে কিভাবে চিনলে?
--সে অনেক মজার ব্যাপার।চলো ক্যাণ্টিনে গিয়ে বলব।
দুজনে ক্যাণ্টিনে ঢুকল,তখন ক্লাস চলছে ক্যাণ্টিনে ভীড় তেমন নেই।ওরা দুজন এক কোনে একটা টেবিলে বসল।দু-কাপ চায়ের ফরমাস করে নির্মল জিজ্ঞেস করল,ও কী তোমার সঙ্গে কিছু করেছে?
--না না তুমি যা ভাবছো তা নয়।তোমাকে ব্যাপারটা বলছি।
মেয়েটি একে একে তার বয় ফ্রেণ্ডের কথা পার্কে কি হয়েছিল সব ঘটনা বলতে থাকে।এক সময় জিজ্ঞেস করল,তুমি সিরিয়াল দেখো?
--খুব একটা দেখা হয়না, কেন?
--সন্ময় এখন সিরিয়াল করে ছোটখাটো রোল।টিভিতে নাম সুমন।
--তোমার সঙ্গে এখন আর সম্পর্ক নেই?
--পাগল।ভগবান আমাকে বাচিয়ে দিয়েছে।
হাটতে হাটতে পাড়ায় ফিরে বাড়ী যেতে ইচ্ছে করল না।একবার ইচ্ছে হয়েছিল ওকে সব কথা বলবে।কি ভাববে ভেবে আর বলেনি।এই সময় মনা থাকলে ভাল হত।দিলীপের বাড়ীর কাছে এসে ভাবে ওকে সব বলবে কিনা।
মনা ছাড়া তার বাসায় আগে কেউ আসেনি নির্মলকে দেখে অবাক হল দিলীপ।ভিতরে নিয়ে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে,কলেজ যাস নি।
--গেছিলাম,ক্লাস করতে ইচ্ছে হল না।
--রীমার খবর কি?
--সে অনেক ব্যাপার--।
--দাড়া চা আনছি চা খেতে খেতে শুনবো।
দিলীপ চলে গেল।গোপন করে কি লাভ,যা সত্যি একদিন না একদিন সবাই জানবে।নির্মল ঠিক করল দিলীপকে ঘটনাটা বলবে।দিলীপ এখন অনেক বদলে গেছে।দিলীপ দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকলো,নির্মল জিজ্ঞেস করে,তোর দিদির খবর কি?
--মিনুতো এখনো এখানেই আছে।তারপর বল কি বলছিলি?
--রীমার সঙ্গে আমার ব্রেক আপ হয়ে গেছে।
--ব্রেক আপ মানে?
নির্মল কদিনে যা যা ঘটেছে বিশদে দিলীপকে বলতে লাগল।দিলীপ গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে।এক সময় নির্মল থামে।দিলীপ বলল,চল এতক্ষনে সবাই এসে গেছে।
রাস্তায় বেরিয়ে দিলীপ বলল,নিমু কিছু মনে করিস না, বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে ওসব বাহানা।
--কেন বাহানা বলছিস?
--আমার কাছে খবর আছে ওর অফিসে একটা ছেলের সঙ্গে ও জড়িয়ে পড়েছে।ছেলেটি খারাপ নয় যাদবপুর থেকে বিটেক করেছে।
নির্মলের এরকম কখনো মনে হয়নি,রীমার অদ্ভুত আচরণের একটা ব্যাখ্যা পাওয়া গেল।দিলীপকে বলল,তুই রকে এসব বলতে যাস না।