Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।৮০।।


কাল রাতে বাছানায় শুয়ে মাস্তানের অভাব খুব অনুভব করছিল প্রজ্ঞা।আগে এমন হত না।ফোন করেনি,এখন কোথায় আছে কে জানে। বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে যেতে গিয়ে দেখল মামণি বেরোবার জন্য তৈরী।অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,কোথায় যাচ্ছো এই সাত সকালে?
হিমানীদেবী ভেবেছিলেন বেলি ঘুম থেকে ওঠার আগেই বাজার থেকে একটু মাছ কিনে আনবেন,ধরা পড়ে লজ্জিত হন।আমতা আমতা করে বললেন,ভাবলাম একটু মাছ কিনে আনি।
--তুমি তো মাছ খাওনা তাহলে?শোনো মামণি আগে যা করেছো করেছো এখন থেকে আমাকে না জিজ্ঞেস করে কিছু করতে যাবে না।দাও থলি আমাকে দাও।
--তুই বাজারে যাবি?
--কেন বউ বাজারে গেলে সম্মানহানি হবে?তুমি বরং একটু চা করো চা খেয়ে বাজারে যাবো।
প্রজ্ঞা বাথরুমে ঢুকে গেল।হিমানীদেবী আর কথা বাড়ানো সমীচীন মনে করলে না।রান্না ঘরে ঢূকে চায়ের জল চাপিয়ে দিলেন।
বঙ্কিম বাজারে যাবার জন্য বেরিয়ে রাস্তায় গিয়ে ইতস্তত পায়চারী করে।কল্পনা দেখা করতে বলেছে।বেরোবার সময় কল্পনা দেখেছে।
নির্মলকে কাল কেমন অন্য মনস্ক মনে হচ্ছিল।রীমার বাড়ীতে বিয়ের জন্য খুব তাগাদা দিচ্ছে।মেয়ে চাকরি পেয়েছে বিয়ের জন্য তাগাদা দেওয়া স্বাভাবিক।কিন্তু নির্মলের পক্ষে এখন বিয়ে করা অসম্ভব।পোস্ট গ্রাজুয়েশনের ফাইন্যাল ইয়ার চলছে।শেষ পর্যন্ত ওদের ব্রেক আপ না হয়ে যায়।কল্পনাকে বেরোতে দেখে ধীর গতিতে এগোতে থাকে।কিছুটা যাবার পর দুজনে একসঙ্গে হাটতে থাকে।বঙ্কিম একসময় বলল,আচ্ছা কোনি একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
কল্পনা বিরক্ত হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।
--ধরো তোমার বাড়ীতে তোমাকে বিয়ের জন্য চাপাচাপি করছে--।
--ধরবো কেন?আমাকে তো বিয়ের জন্য বলেছিল।আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি আমার বিয়ের জন্য কাউকে ভাবতে হবে না।আমার পাত্র ঠিক আছে সে চাকরি পেলেই আমরা বিয়ে করব।
--সবাই মেনে নিল?অবাক চোখে জিজ্ঞেস করল বঙ্কিম।
--বলছিল পাত্র কে?বললাম,সময় হলেই দেখতে পাবে।আচ্ছা তুমি হঠাৎ একথা জিজ্ঞেস করলে কেন?
--তুমি নির্মলের গার্লফ্রেণ্ডকে চেনো তো?
--চিনবো না কেন?চাকরি পেয়ে রীমার ব্যবহার বদলে গেছে।এইতো গত সপ্তাহে অফিস যবার পথে দেখা হয়েছিল এমন ব্যস্ত ভাব দেখাচ্ছিল যেন ও না গেলে অফিসের সব কাজ আটকে যাবে।কেন কি হয়েছে?
--ঠিক জানি না শুনেছি নিমুকে বিয়ের জন্য খুব তাগাদা দিচ্ছে।নিমু বিয়ে করবে না তাতো বলছে না।কিন্তু তাকে একটু সময় দিতে হবে তো।
কল্পনা ঠোট উলটে হাসল।
--হাসছো কেন?
--অবস্থা সময়ের সঙ্গে মানুষের মনও বদলে যায়।আমি সিয়োর নই তবু মনে হচ্ছে রীমার অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে হবে।
কোনির কথাটা ভাল লাগে।তারও এররকম মনে হয়েছে।নিমুর জন্য খারাপ লাগে।মনার কথা মনে পড়ল মনাটা শীত গ্রীষ্ম একই রকম।
কল্পনা জিজ্ঞেস করল,তোমার সেই বন্ধু মনসিজ নাকি আইএএস পাস করেছে?
--ঠিকই শুনেছো।নিজেই আমাকে বলেছে।কদিন ধরে দেখা হচ্ছে না,কি যে হল?তুমি দেখা করতে বলেছিলে কেন কোনো দরকারে?
--দরকার ছাড়া দেখা করতে ইচ্ছে হয়না?
কথাটা শুনে বঙ্কিম লাল হয়।এইজন্য কোনিকে তার খুব ভাল লাগে। 
হাটতে হাটতে বাজারে চলে এসেছে।তরি তরকারী কিনতে থাকে মাঝে মধ্যে এদিক-ওদিক দেখে চেনা জানা কেউ আছে কিনা।সে বাজার করতে এসেছে কোনিও বাজার করতে এসেছে এমন হতেই পারে।কেউ দেখলো তো বয়েই গেল।ছিটের পায়জামা কুর্তা গায়ে এক মহিলাকে দেখে নজর আটকে যায়।ঠিক দেখছে তো।কল্পনাকে ডেকে দেখাতে ভাল করে দেখাতে বলল,এই মহিলা মনসিজের গার্ল ফ্রেণ্ড না?বাজারে কি করছে?
বঙ্কিম ভাবে কাছে গিয়ে মনার খোজ নেবে কিনা,উনি নিশ্চয়ই কিছু বলতে পারবেন।
--কি দেখছো?কল্পনা জিজ্ঞেস করল।
--মনা দিলীপের দিদির বিয়েতে আসেনি ভাবছি উনি হয়তো বলতে পারবেন মনার কিছু হয়েছে কিনা।
আজই চলে যাবে তাল্পুকুর।প্রজ্ঞা তরিতরকারী বাজার করে অল্প করে মাছ নেবার কথা ভাবছে।পরে সিদ্ধান্ত বদলে ভাবল একদিন মাছ না খেলে কিছু যায় আসেনা।বাজার থেকে বেরোতে যাবে একটি ছেলে এসে জিজ্ঞেস করল,ম্যাম আপনি মনার বাড়িতে এসেছেন?
--আমি মনসিজের ওয়াইফ,আপনি?
বঙ্কিমের মাথা ঘুরে যাবার অবস্থা কোনোমতে সামলে নিয়ে বলল,আমি বঙ্কিম ওর বন্ধু।ওকী বাসায় নেই?
প্রজ্ঞা বুঝতে পারে কিছু শোনে নি বলল,তাড়াতাড়িতে আপনাদের জানাতে পারেনি।মাস্তান মানে ও সিভিল সার্ভিস পাস করে ট্রেনিং-র জন্য লক্ষ্ণৌ গেছে গতকাল।আর কিছু?
--না না ধন্যবাদ।
প্রজ্ঞা চলে যেতে কল্পনা কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,কি বলল?
--উনি মনার বউ।মনা ট্রেনিং-র জন্য লক্ষ্ণৌ গেছে।যন্ত্রের মত জবাব দিল বঙ্কিম।
কল্পনা তাকিয়ে দেখে গুরু নিতম্ব দীর্ঘদেহী লম্বা লম্বা পা ফেলে চলেছে।চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ,মনসিজের সঙ্গে মানাবে। দোলনা পার্কে দেখেই সন্দেহ হয়েছিল।
এখনো ফোন এলনা অস্থির মন।বাজারের থলি দেখে হিমানীদেবী বললেন,কিরে মা মাছ কোথায়?
--রোজ মাছ ভাল লাগে না।মামণি আজ খেয়েদেয়ে তাল্পুকুর যাব।মোবাইল বাজতে কানে লাগিয়ে বলল,তুই কোথায় এখন?
--এইমাত্র নামলাম।
--কোনো অসুবিধে হয়নি তো?
--না ঠিক আছে।তুমি কেমন আছো?
প্রজ্ঞা একবার মামণির দিকে তাকিয়ে একটু দূরে সরে গিয়ে বলল,একা একা কেমন করে ভাল থাকি?
মনসিজের চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।প্রজ্ঞা বলল,কিরে কথা বলছিস না কেন?
--বেলি এসব কথা আগে বলোনি কেন?
--সব মুখে বলতে হয় গাধা দেখে বুঝিস নি?একটু মামণির সঙ্গে কথা বল,কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে আছেন।
প্রজ্ঞা ফোনটা হিমানীদেবীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,তোমার ছেলে।
--বল বাবা...ও খারাপ থাকতে দিলে তো...আজ চলে যাবে..কোনো চিন্তা করিস না...আচ্ছা। 
--মামণি মন খারাপ কোরোনা।ছটা মাস দেখতে দেখতে চলে যাবে।প্রজ্ঞা সান্ত্বনা দেয়,কদিন পর আমি তো আসছি। 
বাজার থেকে বেরিয়ে ওরা হাটতে থাকে।কল্পনার মুখে কোনো কথা নেই।হঠাৎ কি হল একদম চুপচাপ।বঙ্কিম জিজ্ঞেস করল,কি হল কত কথা আছে বললে?
কল্পনা চোখ তুলে হাসল বলল,প্রথমে আশিসদা তারপর মনসিজ তোমার বন্ধুদের একে একে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
বঙ্কিম ভাবে এরপর রীমারও হয়তো কারো না কারো সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাবে।কোনির মনেও কি বিয়ের ইচ্ছে জেগেছে?
বাড়ীর কাছাকাছি আসতে কল্পনা চলার গতি বাড়িয়ে দেয় বঙ্কিম একটু পিছিয়ে পড়ে।বলেছিল অনেক কথা আছে কোনো কথাই তো হল না।অবশ্য বলছিল দেখতে ইচ্ছে হয়েছিল।নির্মলের ব্যাপারটা জানার পর থেকেই তার মনেও একটা শঙ্কার পোকা গুটি গুটি চলতে শুরু করেছে।
  
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 14-12-2021, 08:11 PM



Users browsing this thread: 43 Guest(s)