Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।৭৭।।


ছেলে নিয়ে এলিনা তাতাই পাশাপাশি শুয়েছে।বিয়ে বাড়ীতে গেলে অনেকের সঙ্গে দেখা হত।ছেলেকে রেখে এলিনা বিয়ে বাড়ি যায়নি।এলিনা জিজ্ঞেস করল,কেমন খাওয়ালো?
--ভালই দ্বিজেনবাবুর একমাত্র মেয়ে ওয়েস্টার্ণ টাইপ মেনু।
--ছেলে তো এ্যামেরিকা থাকে কেমন দেখলে?
--মোটামুটী।শুনলাম বউভাতের পর একাই চলে যাবে।ভিসা ইত্যাদির সমস্যা মিটলে বউ যাবে।
--অনেক লোক বলেছিল?
--হ্যা পাড়ার প্রায় সবাই--ও হ্যা ঐ যে ছেলেটা তোমার কাছে আসতো--।
--কে মনসিজ?
--হ্যা, জানো ও সিভিল সার্ভিস পাস করেছে।
এলিনা কিছুক্ষন নীরব থেকে বলল,তোমাকে কে বলল, তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছে?
--ও আসেনি।সবাই বলাবলি করছিল।
--যাক ছেলেটার একটা গতি হল।পাশে ঘুমন্ত ছেলেটার দিকে এক নজর দেখল।
রাত গভীর হতে হতে এক সময় পাতলা হতে থাকে।ভোরের আলো এসে পড়ে জানলা টপকে।প্রজ্ঞার ঘুম ভেঙ্গে যায়।তাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে মাস্তান।হাতটা আলোগছে ছাড়িয়ে উঠে বসল।খাট থেকে নেমে চাদর দিয়ে মাস্তানকে ঢেকে দিল।বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে শাড়ী পরে মামণির ঘরে গিয়ে দেখল হিমানীদেবী বিছানায় উঠে বসে আছেন।প্রজ্ঞা বলল,মামণি তুমি তৈরী হয়ে নেও।
রান্নাঘরের দিকে যেতে গিয়ে দেখল মাসীর ঘর থেকে পিসি বের হচ্ছে।প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করল,চা  হয়ে গেছে?
--হ্যা এইতো সাহবরে বেডটি দিয়ে আসলাম।
--আমাকে একটা ট্রেতে তিন কাপ চা দাও।
হিমানী দেবী উঠে শাড়ি পরতে থাকেন।বাড়ী ফেরার জন্য মনটা ছটফট করে।চা নিয়ে ঢূকলো প্রজ্ঞা।হিমানীদেবী চা নিয়ে বললেন,মা ও কবে যাবে?
--ভাবছি আজই রওনা করিয়ে দেব।টিকিটটা কনফার্ম হলেই দেরী করব না।
প্রজ্ঞা চা নিয়ে মনসিজকে ডেকে তুলে চা দিল।আলমারি খুলে ওর জামা প্যাণ্ট এগিয়ে বলল,চা খেয়ে তৈরী হয়ে নে,বেরোবার সময় হয়ে গেল।
প্রজ্ঞা চা খেতে খেতে চারুলতার ঘরে গেল।
--আয় মা।তোরা কি এখনই চলে যাবি?
--হ্যা মাসীমণি টিকিট কনফার্ম হলে সন্ধ্যেবেলা ওকে রওনা করিয়ে দেবো।বেশি দেরী করা ঠিক হবেনা।
--শোন বেলি তোকে একটা কথা বলি,মনসিজ এখন জামাই ওকে তুই-তোকারি করা কি ভাল?
প্রজ্ঞা হাসল বলল,দেখো মাসীমণি ওকে চেনো না,লাই দিলেই মাথায় উঠবে।শাসনে রাখতে হবে।লক্ষৌ হতে ফিরলে দেখা যাবে।
বোনঝির কথা শুনে চারুলতা হাসেন।পর মুহূর্তে বডদির কথা মনে হতেই মুখ শুকিয়ে যায়।অশোক সেন বললেন,বেলি তোমরা আমার গাড়ীটা নিয়ে যেতে পারো।
--মেশো তোমার অফিস নেই?
--এইতো কাছেই সিথি এগারোটার মধ্যে গাড়ী ফিরে এলেই হবে। 
বিয়ের পর মেয়েরা শ্বশুরবাড়ী যাবে স্বাভাবিক।দীর্ঘকাল বাবা মা ভাই বোনের সঙ্গে থেকে তাদের ছেড়ে চলে হলে একটা শিকড় ছেড়ার বেদনা অনুভুত হবে।কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন নয়।চারুলতার সঙ্গে কয়েক বছর থেকেছে।তবু প্রজ্ঞার মন খারাপ হয়।মেশো মাসীকে প্রণাম করে ওরা সবাই নীচে নেমে এল।গাড়ীতে ওঠার সময় চারুলতা বোনঝিকে জড়িয়ে ধরে বুকে জমা কান্না আর বুঝি ধরে রাখতে পারলেন না।
--মাসীমণি আমি তো দুদিন পরেই ফিরে আসছি।প্রজ্ঞা সান্ত্বনা দিল।
--সাবধানে থাকিস মা।তোর তো আবার কলেজ আছে।চোখ মুছে চারুলতা বললেন।
হিমানী দেবী বললেন,আসি ভাই।
ড্রাইভার দুটো ট্রলিব্যাগ পিছনে ডিকিতে তুলে দিয়ে নিজের জায়গায় এসে বসে গাড়ী স্টার্ট করতে জানলা দিয়ে হাত নাড়তে থাকে প্রজ্ঞা।
দিলীপের বাড়ীর সামনে ছোটখাটো জটলা।ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।মীনাক্ষী শ্বশুরবাড়ী যাচ্ছে।সন্দীপ এ্যামেরিকা গেলে ফিরে এসে কটাদিন বাপের বাড়ী থাকবে।আশপাশের জানলা দিয়ে সবাই দেখছে।সন্দীপ আগে পিছনে মীনাক্ষী ভীড়ের মধ্যে প্রত্যাশা নিয়ে তাকায়।ভাই ভাইয়ের দু-একজন বন্ধুকে দেখল।শাখ বাজছে হচ্ছে উলু ধ্বনি।পেট্রোলের ধোয়া ছেড়ে চলে গেল গাড়ী।
ড্রাইভারের পাশে চুপচাপ বসে আছে মনসিজ।পিছন থেকে প্রজ্ঞা তাকে দেখতে দেখতে অনুভব করল তার মন খারাপের কারণ।মাস্তান চলে যাবে প্রায় ছমাস তার সঙ্গে দেখা হবে না।মামণিও একা থাকবে।ফ্লাটের কাছাকাছি তে-রাস্তার মোড়ে গাড়ী দাড় করাতে বললেন হিমানীদেবী।ছেলেকে বললেন,মনু তুই নেমে বাজার থেকে ভাল মাছ নিয়ে আয়।বাড়ীতে কিসসু নেই।প্রজ্ঞা টাকা দিতে গেলে হিমানীদেবী বাধা দিয়ে নিজে টাকা দিলেন।মনসিজ নামতে গাড়ী স্টার্ট করে আবার।প্রজ্ঞা গলা বাড়িয়ে বলল,আড্ডায় জমে যাসনে আবার।
মনসিজ স্বাস্তির শ্বাস ফেলে।আড্ডায় জমে যাসনে,খালি খবরদারি।বাজারের দিকে হাটতে থাকে।এখন সবাই হয়তো কলেজে চলে গেছে।কারো সঙ্গে দেখা হবার সম্ভাবনা নেই।বাজারে ঢোকার মুখে বা-দিকে পর পর কটা দোকান-স্টেশনারী মাটির জিনিস পত্র পুজোর উপকরণের দোকান ডানদিকে বাজার।বাজারে ঢুকে মনসিজ ভেবে পায়না কি মাছ কিনবে,আগে অবশ্য এত চিন্তা করতে হয়নি।পার্শে ট্যাংরা ভেটকি চোখের সামনে যা পেতো পয়সায় কুলোলে কিনে নিত।বেলির কি পছন্দ কে জানে।ওর মাসীর বাড়ীতে খেয়েছে হোটেল থেকে আনা খাবার তাও মাছ নয়।বাজারের একদিকে হাকছে বাংলাদেশ-বাংলাদেশ।মানে ইলিশের কথা বলছে।ইলিশ পছন্দ হতে পারে কিন্তু দামের কথা ভেবে চিন্তাটা ঝেড়ে ফেলে দিল।মনসিজের নজরে পড়ল দোকানের সামনে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে।দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল।মেয়েটীকে কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছে।মনে পড়ল এইতো সেই রুক্সানা,দিলীপের গার্লফ্রেণ্ড।মুখ তুলে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,ভাল আছেন?
রুক্সানা এগিয়ে এসে বলল,চিনতে পেরেছেন?
--কেন চিনব না,একাবার দেখলে আমি ভুলিনা।বাজার করতে এসেছেন?
--না একটা শ্যাম্পু কিনতে এসেছি।দিলু ঠিকই বলেছিল,আপনি অন্য রকম।
--অন্য রকম মানে?ভাল না খারাপ?
--ভেবেছিলাম বড় অফিসার হয়ে গেছেন আর বুঝি চিনতে পারবেন না।
মনসিজের খুব মজা লাগে,হেসে বলল,এখনো হইনি হব-হব অবস্থা।
--ঐ হল।বাজার করতে এসেছেন?
--হ্যা বাড়ীতে গেস্ট এসেছে কি মাছ নেব ভাবছি,আবার পকেটের অবস্থাও ভাবতে হচ্ছে।
রুক্সানা অবাক হয় কোনো রাখঢাক নেই খোলামেলা।ওখানে জ্যান্ত কই মাছ বিক্রি হচ্ছে নিতে পারেন।
মেয়েদের পছন্দের মূল্য আছে মনসিজ স্থির করল কই মাছই নেবে।রুক্সানা বলল,আসি?
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 07-12-2021, 02:35 PM



Users browsing this thread: 47 Guest(s)