Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।৭৩।।


ঘুম থেকে উঠে ডায়েরী নিয়ে বসল মনসিজ।লেখা শুরু করল,সাক্ষাতকারের পর আজ প্রায়....।এই অবধি লিখে আঙুলের করগুণে আবার লেখে পনেরো দিন হয়ে গেল কোনো খবর নেই।কৃতকার্যদের জানাবে অকৃতকার্যদের জানাবার কথা নয়।বেলি কাল খবর নিয়েছে।বেলির ইচ্ছে আমি আবার পরীক্ষায় বসি।আবার সেই শুরু থেকে প্রিলি ফাইন্যাল তারপর ভাইভা।
হিমানীদেবী ঢুকে চা দিয়ে বললেন,বাজার যাবি তো?
মনসিজ চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল ঘড়ির কাটা দশটার দিকে,বিরক্ত হয়ে বলল,দশটা বাজতে চলল।আগে বলবে তো?
--ঠিক আছে কাল যাস।
মনসিজ কি ভেবে বলল,জামা-প্যাণ্টে মাড় দিয়েছো?দাও থলি দাও বাজার যাচ্ছি।
মীনাক্ষীর বিয়ে,দিলীপ রকের সবাইকে নেমন্তন্ন করেছে।কুড়ি টাকা করে ধার্য করা হয়েছে।বাড়ীতে ইস্ত্রী করলে অত ভাল হয় না।বিয়ে বাড়ী যাবার জন্য জামা-প্যাণ্ট দোকান থেকে ইস্ত্রী করার কথা ভেবেছে।কাগজে খবর বেরিয়েছে আশিসদার শাশুড়ী আত্মহত্যা করেছে।পাকস্থলিতে কীটনাশক পাওয়া গেছে।মেয়ের বিয়ে নিয়ে সব বাবা-মারই দুশ্চিন্তা থাকে।মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল তাহলে কেন আত্মহত্যা করল ভেবে পায়না মনসিজ।সব ব্যাপারে মানুষ হিসেব মেলাতে চায়।হিসেবে না মিললে মনের মধ্যে অস্বস্তি যেতে চায় না।মাড় দেওয়া জামা-প্যাণ্ট বাজারের থলি নিয়ে মনসিজ বাজারে বেরিয়ে গেল।
পথে লণ্ড্রিতে জামা-প্যাণ্ট দিয়ে বাজারের পথ ধরল।আশিসদার বিয়েতে কিছু হয়নি মীনাক্ষীর বিয়েতে উশুল করে নেবে রকে এইসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।ইউএসএ-র সেই ছেলেটার সঙ্গেই বিয়ে হচ্ছে।ছেলেটি ভারতে এসেছে।বিয়ে করেই চলে যাবে তারপর মীনাক্ষী পাসপোর্ট ইত্যাদি করে পরে যাবে।মেয়েদের কার যে কোথায় ঠিকানা কে বলতে পারে।মনসিজের সঙ্গে সম্পর্ক ভালই ছিল শেষদিকে কেন এমন বিগড়ে গেল মনসিজের অবাক লাগে।নিজেই রিক্সায় তুলে নিয়ে কত কথা বলেছিল।
--কি ব্যাপার এত বেলায়?
মনসিজ পথ চলার সময় কোনো দিকে তাকায় না,গলা শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখল কল্পনা।বঙ্কিম এখন কলেজে চলে গেছে সম্ভবত।মনসিজ বলল,একটু দেরী হয়ে গেল।
কল্পনা কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,মন খারাপ?
শুকনো হেসে মনসিজ বলে,কেন মন খারাপ হবে কেন?
--দিলীপের দিদির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
--এত ভাল খবর মন খারাপের কি আছে?
--এক সময় আপনার সঙ্গে খুব ভাব ছিল।
মনসিজ অন্য রকম গন্ধ পায়।মনসিজ বলল,দিলীপকে পড়াতে যেতাম তখন কথা হত।সেতো আজকের কথা নয়।
কল্পনাকে একটু অন্য রকম ভাবতো এখন দেখছে সব মেয়েই সমান।কল্পনা বলল,রাগ করলেন?
--না না রাগ করব কেন?আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
--একটা কাজ আছে,আসি?
কল্পনা অন্য পথ ধরল।মনসিজ হাটতে থাকে।বেলির কথা মনে পড়ল।ও এরকম ফালতু কথা বলে না।
বাজার থেকে ফিরতে হিমানী দেবী বললেন,তোর একটা চিঠি এসেছে?
--চিঠি?বাজারের থলি নামিয়ে বলল,কই চিঠি?
--আমাকে দেয়নি বলল,তোকে পোস্ট অফিস থেকে নিয়ে আসতে বলেছে।
--তুমি বলোনি আমি ওর মা?
--বল তোকে সই করে নিতে হবে।এক্টু আগে এলেই দেখা হত, সেই কখন গেছিস এত দেরী করলি কেন?
আচ্ছা ঝামেলা তো।এইমাত্র বাজার করে ফিরল আবার পোস্ট অফিস যেতে হবে?হেটে পনেরো মিনিটের পথ।মাথার মধ্যে ঝিলিক করে উঠল, সরকারী চিঠি নয়তো?মাকে জিজ্ঞেস করে,কেমন চিঠি দেখেছো?
--কেমন আবার খামে ভরা যেমন হয়।চিঠিটা আনলে দেখতে পাবি।
স্নান খাওয়া-দাওয়া সেরে মনসিজ আবার বেরিয়ে পড়ল।কল্পনার সঙ্গে বকবক না করলে এত দেরী হত না।কোনো কাজের কথা নয় অবান্তর কথা। মীনাক্ষীর বিয়ে হচ্ছে,বয়স হচ্ছে বিয়ে হবে না।বঙ্কা চাকরি পেলে তোমারও বিয়ে হবে।
পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখল সবাই ব্যস্ত কাকে জিজ্ঞেস করবে ভেবে একটা ফাকা কাউণ্টারে মুখ নামিয়ে চিঠির কথা বলতে বলল,বড়বাবুর সঙ্গে কথা বলুন।
বড়বাবু মানে পোস্ট মাস্টার মশাই।ভিতরে এক কোনায় বসে বড়বাবু কি সব ফাইল দেখছেন।মনসিজ পাস কাটিয়ে কাছে যেতে উনিই বললেন,কি ব্যাপার?
--স্যার আমার নামে একটা রেজিস্ট্রি চিঠি এসেছে।আমি বাসায় ছিলাম না--।
বড়বাবু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,আপনি চারটের পর আসুন।
--স্যার অনেক দূর থেকে আসছি--।
--কিন্তু কি চিঠি পিয়ন না ফিরলে কি করে বলব।দেখুন রাস্তায় যদি ওকে চোখে পড়ে।
মনসিজ ব্যাপারটা বুঝতে পারে,পিয়ন ভদ্রলোক তার চিঠি নিয়ে বাড়ি-বাড়ি চিঠি বিলি করে বেড়াচ্ছেন।তার কাজ শেষ করে ফিরতে ফিরতে চারটে বেজে যাবে।তখন তাকে পোস্ট অফিসে এসে চিঠি নিতে হবে।কি করবে বাড়ী যাবে নাকি এদিক-ওদিক ঘুরে সময় কাটাবে।দোলনা পার্কের দিকে হাটতে থাকে।দিলীপের বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা।আলো দিয়ে সাজিয়েছে বাড়ীটা।সামনে রোশন চৌকি,কাল ওখানে সানাই বাজবে।মীনাক্ষী বিয়ে হয়ে এ পাড়া ছেড়ে চিরদিনের মত চলে যাবে।অদ্ভুত মেয়েদের জীবন।সামাজিক প্রথা মেয়েদের স্বামী অনুগামী হতে হয়।অবশ্য তার মধ্যে ব্যতিক্রম আছে ঘর জামাই।পত্নীর আশ্রয়ে থাকে স্বামী।দিলীপ বেরিয়ে এসে ডাকল।মনসিজ দাঁড়িয়ে পড়ল।দিলীপ বলল চল তোকে একটা জিনিস দেখাবো।
--কলেজ যাস নি?
--কাল বিয়ে কলেজ যাব কি?আয় বাড়ীতে আয়।
--না না এখন ব্যস্ততার মধ্যে যাব না।
--কিসের ব্যস্ততা?একী আগের মত নাকি ভিয়েন বসবে এখন সব ক্যাটারার মাল ফেল সব হয়ে যাবে।
অনিচ্ছা সত্বেও মনসিজ গেল দিলীপের বাড়িতে।বসার ঘরে ঢুকে দেখল মীনাক্ষি একটি মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে।কাল বিয়ে হবে চোখে মুখে তার কোনো চিহ্ন নেই।আজকাল মেয়েরা আগের মত নেই।দিলীপ বলল,বোস।
অপরিচিত মেয়েটীকে বলল,রুসা এই আমার বন্ধু মনসিজ,আমার গুরু বলতে পারো।এই হচ্ছে রুক্সানা চ্যাটার্জী।তুই আগে একে দেখিস নি।
রুক্সানা করজোড়ে বলল,নমস্কার।আপনার কথা অনেক শুনেছি,দিদিও বলছিল আপনার কথা।
মনসিজ প্রতি নমস্কার করল।
--তোর জন্য রুসাকে আবার ফিরে পেয়েছি।দিলীপ বলল।
--কে যেন বলেছিল খালি পেটে ধর্ম হয়না--।
--ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের কথা।মনসিজ বলল।
--হ্যা তেমনি প্রেমও একটা আশ্রয় চায়।পরপর ফেল করে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাউণ্ডেলের মত ঘুরে বেড়ায়।বলুন কোন ভরসায় আমি থাকব?
--ঠিকই।লোকে বলে প্রেম নাকি অন্ধ।আমার মনে হয় প্রেম অনেক হিসেবী।
--আপনি ঠাট্টা করছেন?
--ঠাট্টা নয় আমার ধারণার কথা বললাম।
--দেখুন মেয়েরা প্রেমের জন্য যা করতে পারে আপনার কোনো ধারণা নেই।কিন্তু তার জন্য কিছু একটা লক্ষ্য একটা অবলম্বন দরকার, দিশাহীন হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো নয়।
--কাকে কি বলছিস?মীনাক্ষী ফুট কাটলো।
--ঠিকই ভস্মে ঘি ঢালা।মনসিজ বলল।
এলোমেলো অনেক কথা হয়। মনসিজ বুঝল রুক্সানা দিলীপের এক সময় প্রেমিকা ছিল।রুক্সানা ওকে ত্যাগ করার পরই দিলীপের ছন্ন ছাড়া জীবন যাপন।রুক্সানা এখন পোস্ট গ্রাজুয়েশন করছে।বাড়ীর অবস্থা ভাল দেখতেও মন্দ না।যাক আবার ফিরে এসেছে,বদলে যাবে দিলীপের জীবন ধারা ভাল লাগল।
--দেখুন আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ--।
--আমার কাছে?
--আপনি পাশে না দাড়ালে ও হয়তো ভেসে যেতো।
--আপনি দিলীপের কৃতিত্বটা অস্বীকার করতে চাইছেন?
--মোটেই না।আধারের ভূমিকা অস্বীকার করছি না।এ কেবল দিনে রাত্রে জল ঢেলে ফুটা পাত্রে বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে।আধারের ধারণ ক্ষমতা থাকতে হবে না হলে জল ঢেলে কোনো লাভ নেই।ওর মেধা আছে, দিলুকে অনেক বুঝিয়েছি--।
--বোঝো আবার আমাকে নিয়ে কেন?দিলীপ বলল।
মোবাইল বাজতে হিমানীদেবী কানে লাগিয়ে বললেন,বল...কি একটা চিঠি এসেছে ও বাসায় ছিল না,পোস্ট অফিসে গেছে আনতে...হ্যা ফিরলে তোকে বলব কিসের চিঠি,কেন খারাপ কিছু...তুই এমনভাবে বলছিস...বাজারে গেছিল...আমাকে দিল না...ঠিক আছে কিসের চিঠি তোকে বলব..হ্যা মা ভাল থাকিস।
রুক্সানা বলল,আপনার সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগল।কাল তো দেখা হচ্ছে।অনেক বেলা হল আজ আসি।
মনসিজের মনে পড়ল পোস্ট অফিসে যাবার কথা।ঘড়ি দেখল সাড়ে পাচটা বাজে।
দিলীপ বলল,কি হল?
চিঠির কথা বলতে দিলীপ বলল,পোস্ট অফিসে যাবার দরকার নেই,কাল সকালে আবার তোর বাড়ীতে আসবে।আর এতক্ষনে পোস্ট অফিসে কাউকে পাবিনা।
মনসিজ উঠে দাঁড়িয়ে মীনাক্ষীকে বলল,আসি ঈশ্বরের কাছে সুখী সমৃদ্ধ জীবনের কামনা রইল।
--বেশ আছো,সব দায়িত্ব ঈশ্বরের নিজে কোনো দায়িত্ব নেবেনা?
দিলীপ বলল,কাল সময় মত আসবি।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 30-11-2021, 11:45 AM



Users browsing this thread: 45 Guest(s)