Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।৭০।।


হিমানীদেবী পা মেলে দিয়ে বসে কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে মনসিজ।হিমানীদেবীর চোখে মুখে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ।ছেলের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে অতীতে পায়চারী করতে থাকে মন।সেদিন ফিরে আসার পর থেকে মনু কেমন বদলে গেছে।একসময় বলেন,এত কি ভাবছিস বলতো বাবা?
--ভাবছি তাপসকাকুর সঙ্গে একবার দেখা করে আসব কিনা?
--তুই যে কি পরীক্ষা দিলি তার কি হল?
--কিছু হলে জানাবে মনে হয়।
--একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
মনসিজ চোখ উলটে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,তুমি ভাবছো বেলির সঙ্গে কিছু হয়েছে কিনা?বেলি খুব ভাল মেয়ে ওর সঙ্গে কি হবে?ও ভর্তি হল তারপর রেষ্টোরেণ্টে নিয়ে গিয়ে খাওয়াল।হাটতে হাটতে শিয়ালদা গিয়ে ট্রেনে উঠলাম।আমি দমদম নামলাম ও চাকদহ চলে গেল ব্যাস।
--ফিরে এসে মোবাইল আমাকে দিয়ে দিলি।
--মোবাইল দিয়ে আমার কি কাজ।বেলি তোমার খবর নেবার জন্য মোবাইল দিয়েছে তুমি রাখো।
হিমানীদেবী বুঝতে পারেন মনু সব কথা খুলে বলছে না।বললেন,এবার ওঠ অনেক কাজ পড়ে আছে।
কমলা রান্না ঘরে গিয়ে দেখল কয়রকটা আরশোলা চিত হয়ে হাত-পা ছুড়ছে।কাল রাতে ইদুর মারা বিষ ভাতে মিশিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছিল মনে হয় তাই এই অবস্থা।আরশোলাগুলোকে মারতে কষ্ট হল।কাগজে তুলে জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল।ভাতের হাড়ি চাপিয়ে দিয়ে
তরকারি কুটতে বসল।হারামীটার আবদার দিন দিন বাড়ছে।কদিন আগে নাইট ডিউটি ছিল তার সঙ্গে ঘণ্টা খানেক শুয়েছিল,চোদেনি।হারামীটা রাত দুপুরে বলে কিনা একটু চা খাওয়াও,যেন বিয়ে করা ভাতার।ঐ রাতে স্টোভ জ্বেলে চা করতে হল।ইচ্ছে হয়েছিল চায়ে ইদুর মারা বিষ মিশিয়ে দেয়।পরক্ষনে মনে হল তাহলে খুনের দায়ে পড়ে যাবে,জানাজানি হলে কেলেঙ্কারির এক শেষ।তার এখন ছুচো গেলার অবস্থা গিলতেও পারে না উগরাতেও পারেনা।শেফালির কথা শুনে চমকে উঠেছিল।তাকে নিয়ে পাড়ায় আলোচনা শুরু হয়নি তো?কমল সিকদারের বাচ্চা সহজে ছাড়বে মনে হয়না।বোকাচোদা আমি কি তোর বিয়ে করা মাগ।একবার মনে হল বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যাবে।কিন্তু যাবে কোথায়?মরন ছাড়া আমার গতি নেই।মাথার মধ্যে কমলার এইসব চিন্তা বিজ বিজ করতে থাকে।
ধুমধাম করে শ্রেয়ার বিয়ে হয়ে গেল।মন্দা এসেছিল অনেকদিন পর দুই বন্ধুর দেখা হল।কনে বেশে বেশ লাগছিল শ্রেয়াকে।রাতে থাকতে বললেও প্রজ্ঞা অসুবিধের কথা বলে এড়িয়ে গেছে।ওইদিন রাতে মাসীর বাসায় ছিল।বউভাতে যেতে পারবে না বলে এসেছিল।অবশ্য পরে কথা হয়েছে ফোনে।শ্রেয়া নিজেই বলল প্রিয়াংশু কেমন অসভ্য।ফুলশয্যার দিন ঘুমোতে দেয়নি।শ্রেয়া খুটিয়ে খুটিয়ে বলছিল প্রজ্ঞার লজ্জা করছিল।বিয়ের পর মেয়েদের লজ্জা কমে যায়।শ্রেয়া-প্রিয়াংশুর মিলন দৃশ্য কল্পনা করে রক্তিম হয় প্রজ্ঞা।মাস্তানটার কোনো তাপ উত্তাপ নেই।সায়েন্স কলেজে প্রেমের কথা বলতে মুখটা কেমন প্যাচার মত হয়ে গেছিল ভেবে মজা লাগে।কদিন পর কলেজ শুরু হবে,বাড়ীতে কম্পিউটার নিয়ে সময় কাটে।সামনের মাসে দাদা আসার সম্ভাবনা বৌদির মুখে শুনল।বৌদির ইচ্ছে দাদাকে নিয়ে কলকাতায় চলে যাবার।মাও অনেকবার বাপিকে বলেছে।বাপি এবাড়ীর অতীত ঐতিহ্যের কথা বলে এড়িয়ে গেছে। একটু বেলায় মাস্তানকে ফোন করবে ভাবে।নারী পুরুষের ওই ব্যাপার নিয়ে কখনো ভাবেনি,শ্রেয়ার কাছে শোনার পর থেকে মনে করে রক্তিম হয়।
চাকরি পেয়ে খবরটা এলিনা বৌদিকে দিতে গেছিল রীমা।বৌদির মধ্যে একটা মা-মা ভাব।বেশ দেখতে হয়েছে বাচ্চাটা।এলিনাবৌদি খুব খুশি হল চাকরির খবর শুনে,জিজ্ঞেস করল,চাকরি তো হল এবার কি করবি?
ইঙ্গিতটা বুঝতে অসুবিধে হয়না লাজুক হেসে রীমা বলল,ওতো এম এ-তে ভর্তি হল।ও কিছু না করা অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
--কোথায় ভর্তি হল নিমু?
--রবীন্দ্র ভারতীতে।ওরা এখানে আসেনা?
--সবাই ব্যস্ত আর আমিও সময় পাইনা।আচ্ছা তুই মনসিজকে চিনিস?
--হ্যা দেখেছি তবে আলাপ নেই,কেন?
--শুনলাম ও পড়া ছেড়ে দিয়েছে।বাবাটা মারা গেল কিভাবে চলছে কে জানে?যোগাযোগ রাখলে কিছু করতে পারতাম।
--ঠিক আছে আমি নিমুকে বলব।
খাওয়া দাওয়ার পর হিমানীদেবী বাসন পত্তর গুছিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।ছেলেটার কথা ভেবে শঙ্কিত মায়ের মন।পরীক্ষা দিল কি হবে কে জানে।বেলির কথায় ঠাকুর-পোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।পেনশনটা নিয়মিত পাচ্ছে এই যা।প্রতি মাসে দুশো টাকা দিতে হয় ফ্লাটের রক্ষনা বেক্ষন ট্যাক্স ইত্যাদির জন্য। এলোমেলো ভাবতে ভাবতে এক সময় চোখ লেগে যায়।ঘড়ির কাটা টিক টিক এগিয়ে চলে।সূর্য ঢলে পড়ে পশ্চিমে।মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে হাতড়ে মোবাইল নিয়ে সুইচ টিপে কানে লাগিয়ে বললেন,বেলি?
--মামণি ঘুমোচ্ছিলে?
--ঘুম আর কি এমনি শুয়েছিলাম।
--ভালো আছো?
--হ্যা মা তুই কেমন আছিস?
--ভাল,পরশু কলকাতা যাবো।ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।
--বাড়ীর সবাই ভাল তো?
--হ্যা সব ভাল।মাস্তান কি বাড়ীতে?
--হ্যা ঐ ঘরে আছে--দেবো?
--হ্যা দাও তো।
হিমানীদেবী খাট থেকে নেমে ছেলের ঘরের দিকে যান।বেলির কথায় মনে হল না ওর সঙ্গে কিছু হয়েছে।ঘরে ঢুকে বললেন,বেলির ফোন।
--বলো ঘুমোচ্ছে।
হিমানীদেবী কানে লাগিয়ে বললেন,বেলি ও বলল ও ঘুমোচ্ছে।
মনসিজ বিরক্ত হয়ে বলল,ও বলল মানে?
--আমি কি তোমার জন্য মিথ্যে বলব?
--দাও ফোন দাও।মনসিজ হাত বাড়িয়ে দিল।
হিমানীদেবী ফোনটা দিয়ে আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন কি কথা হয়।
--কিরে ঘুম ভাঙ্গল?
--ঘুমোচ্ছি না।
প্রজ্ঞা খিল খিল হেসে বলল,এক্টু আগে তুই বললি ঘুমোচ্ছিস।
--কি বলবে বলো।
হিমানীদেবী আশ্বস্থ হয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
--আমাকে তোর দেখতে ইচ্ছে হয়না?
--আমার পক্ষে তাল্পুকুর যাওয়া সম্ভব নয়।
কিছুক্ষন নীরবতা তারপর শোনা গেল,বিশের কথা মনে পড়ে না?
--পড়বে না কেন এখন কি আমাকে পাত্তা দেবে?
--একদিন রাস্তায় দেখা হতে তোর কথা বললাম।খোজ করছিল গুরু কেমন আছে কোথায় আছে?
--তাই?ছেলেটা খুব ভাল।
--খারাপ কে?আমি?
--আমি কি তাই বলেছি?তোমার ঝগড়ুটে স্বভাবটা বদলাও এটা তোমার সঙ্গে মানায় না।
হিমানীদেবী চা নিয়ে ঢুকে বললেন,এই নে চা।
--চা খাচ্ছিস?আচ্ছা রাখি।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 25-11-2021, 04:42 PM



Users browsing this thread: 35 Guest(s)