Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
      



।।৬৯।।


মনসিজের ঘুম ভাঙতে চোখে পড়ল দেওয়ালে ঝোলানো ঈশ্বরচন্দ্রের ছবির দিকে।মনে পড়তে থাকে ল্যাম্প পোস্টের নীচে পড়া ভাইয়েদের জন্য রান্না করা বাবার কাধে চেপে কলকাতায় আসার পথে রাস্তায় মাইল স্টোন দেখে ইংরেজি সংখ্যা চেনা--কত কথা।তুলনায় নিজের দুঃখ কষ্ট দারিদ্র্য তুচ্ছ মনে হয়।উঠে বসে হাতজোড় করে প্রতিটি ছবিকে প্রণাম করে।বেলি ঠিকই বলে এরা কেউ আজ নেই কিন্তু মানুষের প্রেরণা হয়ে বেচে আছেন মানুষের হৃদয়ে।
হিমানীদেবী চা নিয়ে ঢুকলেন।
চায়ে চুমুক দিয়ে মনে পড়ল আশিসদার কথা।কেমন ভাবে বিয়েটা হয়ে গেল।বঙ্কিম বলছিল কৃষ্ণা মুখার্জি পরিবারে দিব্যি মানিয়ে নিয়েছে।রকে আসে না,কিন্তু রোজ নাকি অফিসে যায় আশিসদা।বঙ্কিমকে এসব বলেছে কল্পনা।ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ঘর থেকে বের হয় কম কিন্তু তারা খবর রাখে অনেক বেশি।এরকম জীবন হবে ভেবেছিল কি আশিসদা?কার যে কি পরিনতি হবে কে বলতে পারে।দিলীপ পাস করে বিএতে ভর্তি হয়েছে।শৈবাল বাদে সবাই কিছু না কিছু করছে।তাপসকাকুর সঙ্গে দেখা করলে সেও আজ হয়তো অফিসে যেতো।বেলির জন্য হল না।
মা জিজ্ঞেস করল,বেরোবি নাকি?
কেউ নেই পাড়ায় বেরিয়ে কি করবে মনসিজ বলল,না এবেলা বেরবো না।
মণিকুন্তলা কলেজ যায় না মেটারনিটি লিভ নিয়েছে।ডাক্তার বাবু বলেছেন এ মাসেই কিছু হতে পারে।দীপাকে কলেজে পৌছে দিতে গেছে মালা।নৃপেন বেরোবার তোড়জোড় করছে।
--আচ্ছা মণি তুমি যে মেয়েটাকে বোন-বোন বলে খ্যাপাচ্ছো,ছেলে হলে কি করবে?
নেপুর যা তাকত ছেলের আশা করে না।মণি বলল,হলে হবে।
--দীপা তো বোন-বোন করে পাগল।
--আচ্ছা নেপু একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
--দেখো মণি ছেলে না মেয়ে আমার ওসব কিছু নেই।ছেলে মেয়ে যাই হোক আমাদেরই তো সন্তান।
--সেকথা নয়।বলছিলাম কি এই যে বিজ্ঞাপনে দেয় ছোটোকে বড় করার কথা,সত্যি কি বড় করা যায়?
নৃপেন কিছুক্ষন মনির দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর জিজ্ঞেস করল,তুমি কি সুখ পাওনা?
--আমার সুখের কথা বলছি না,এক্টু বড় হলে ভালো লাগে।
নৃপেন হেসে বলল,দেখি কি করা যায়।আমি আসি,তুমি সাবধানে থেকো।কিছু হলেই আগে আমাকে ফোন করবে।
বাজারে গিয়ে শেফালীর সঙ্গে দেখা।শেফালী জিজ্ঞেস করল,কি কমলাদি বাজার হল?
--বাজার তো করতি হবে।
--হ্যা খুকি চলে যাবার পর তোমাকেই সব করতে হয়।
--খুকী থাকতেও রান্না আমিই করতাম।তোর হাতে ওটা কি?
--ইদুর মারা বিষ।সেদিন ঘর মুছতে গিয়ে দেখি চৌকির নীচে এইটুক একটা ইন্দুর বসে বসে গোফ নাচাচ্ছে।তাড়া দিলিই চোখের নিমেষে উধাও হল।
বলল ভাতের সঙ্গে মেখে ছড়িয়ে দিতে ইন্দুর আরশোলা যেখানে খাবে সেখানেই মরে পড়ে থাকবে।ঐ যে ফুটপাথে বসে বিক্রী করছে।
কমলার রান্না ঘরে  আরশোলার খুব উপদ্রব।বলল,চল তো আমিও এক প্যাকেট কিনে নিই।
ইদুর মারা ওষুধ কিনে ওরা বাড়ীর পথ ধরে।শেফালী জিজ্ঞেস করল,কমলাদি তোমার বাড়ি কয়েকদিন আগে পুলিশ এসেছিল কেন?কেস মিটে যায়নি?
কমলার বুক কেপে ওঠে। এই আশঙ্কাই করছিল।শেফালীকে আড়চোখে এক পলক দেখে নিয়ে বলল,মিটে গেছে।জিজ্ঞেস করছিল কৃষ্ণা কেমন আছে?
--এখানে মরতে এসিছিল কেন,শ্বশুরবাড়ী গেলিই হয়।
কমলার বাড়ীর কাছে এসে থামে কয়েকটা বাড়ীর পর শেফালীদের বাড়ী।এদিক-ওদিক দেখে কিছুটা ঘেষে ফিসফিস করে শেফালী বলল,নমিতার কথা শুনিছো?
--কে নমিতা?
--মাস দুই আগে যার সোয়ামী মারা গেল,বাজারে মাছ বিক্রী করতো--।
--শিবনাথ?
--হ্যা ঐ শিবের সঙ্গে থাকতো পাচু?
--শিবের কর্মচারী--।
--তা হলি আর বলছি কি মাগীর এত খাই!
কমলা সতর্ক হয় কি বলতে চায় শেফালী।
--বেধবা তো আমাদের কমলাদিদি তোর মতো ঘরে নোক নেয়?বেধবা হয়েছে মাস দুই এরই মধ্যি পাচুরে ওর ঘর থিকে বেরোতি দেখা গেছে--।
--আমার রান্না করতি হবে আমি আসিরে শেফালী।
--এসব কথা শুনলিও পাপ--হ্যা তুমি যাও।শেফালী বাড়ীর দিকে হাটতে শুরু করে। 
আয়নায় মুখ দেখে মনসিজ।গাল ভরা খোচা খোচা দাড়ি।রেজারে ব্লেড লাগিয়ে গালে সাবান ঘষতে ঘষতে ভাবে আজকাল অনেকে দাড়ি রাখছে,দাড়ি রাখলে কেমন হয়?পর মুহূর্তে মনে হল দাড়ি রাখলে আরও বেশি ঝামেলা,অবাঞ্ছিত রোম নিয়মিত কাটতে হবে।এই ভাল একেবারে সাফ করে দাও।রেজার দিয়ে কামাতে থাকে।
বাইরে মায়ের গলা পাওয়া গেল,বারোটা বাজে আর কত দেরী করবি?
--এই হয়ে গেল।
অনেকদিন পর গায়ে মাথায় সাবান দিয়ে শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে।খাওয়া দাওয়ার পর একটা ঘুম দিয়ে সন্ধ্যেবেলা বেরনো যাবে ভেবে একটা চাদর টেনে সবে শুয়েছে মোবাইল বেজে উঠল।কানে লাগিয়ে বলল,হ্যা বলো।
--মামনি কেম আছে?
--ভাল মাকে দেব?
--না তুই শোন।একটার সময় রাজাবাজারে চলে আয় জরুরী কাজ আছে।
কাজ আছে তা আমি কি করব?মনসিজ বলল,রাজাবাজার আমি চিনি না--।
--মাণিকতলার পর--কণ্ডাক্টরকে বলবি সায়েন্স কলেজের কাছে--আমি অপেক্ষা করব।
--শোনো বেলি আমার শরীর ভাল না--বেলি--বেলি--।ফোন কেটে দিয়েছে।নিজে বলে অন্যের কথা শোনে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করুক।
হিমানী দেবী জিজ্ঞেস করেন,কে বেলি?
--কি বলি বলতো,এখন যেতে বলছে।
--নিশ্চয়ই কিছু দরকার আছে--যা।
ঢাকের কাসি নিশ্চয়ই কিছু দরকার আছে।নিজের ছেলের থেকে বেলির দরকার বেশি হয়ে গেল।বলল অপেক্ষা করবে,একটা মেয়ের পক্ষে একা-একা দাঁড়িয়ে থাকা ভেবে মনসিজ জামা কাপড় পরতে থাকে।কাজ-কাম নেই, সারা দুপুর টো-টো ঘুরে বেড়ায়।কি বলল একবার ভেবে নেয় মাণিকতলার পরে সায়েন্স কলেজের কাছে। 
কণ্ডাক্টর শ্যামবাজারে নামিয়ে দিয়ে বলল,এখান থেকে অন্য বাসে যেতে হবে।আবার অন্যবাস রাজাবাজারে কি দরকার পড়ল।বেলিটা একা একা দাঁড়িয়ে থাকবে তাই নাহলে এখান থেকেই বাড়ি ফিরে যেত।
একটা বাসে কন্ডাকটর হাকছে শিয়ালদা-রাজাবাজার।মনসিজ ছুটে বাসে উঠে পড়ল।বসার জায়গা পেলেও দাঁড়িয়ে বাইরে দেখতে থাকে।কিছুক্ষন চলার পর একসময় কণ্ডাকটর রাজাবাজার বলতেই মনসিজ জিজ্ঞেস করে,সায়েন্স কলেজ আসলে বলবেন।
--পরের স্টপেজ।
বাস থেকেই নজরে পড়ে বেলিকে।ওর মধ্যে আলাদা একটা জেল্লা আছে।নামার জন্য গেটের মুখে দাড়ায়।বাস থামতেই নেমে কাছে যেতে বলল,কটা বাজে দেখেছিস?
--কি করব বাস কি আমার বাপের?
--মেয়েদের সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলবি।
--কতদূর থেকে বাস বদলে আসতে হয়েছে জানো?
--আচ্ছা মাস্তান আমি পরীক্ষা দিয়েছিলাম তুই জানিস না?
--জানব না কেন?
--ফেল করেছি না পাস করেছি তোর জানতে ইচ্ছে হয়নি?
--আমি জানি তো তুমি পাস করবেই।
--বাপিও বলেছিল আমি পাস করবই তাও দিল্লী যাবার আগে বলেছিল পাসের খবর পেলেই আমাকে জানাবি।
--জানিয়েছো?
--একদম প্রথমে বাপিকে জানিয়েছি।
--আমাকে তো জানাও নি?
--উরে ব্যাটা উলটো প্যাচ কষছিস?
বেলিকে মুখের মত জবাব দিতে পেরে মনসিজের ভাল লাগে।প্রজ্ঞা বলল,চল ওপারে চল।
--ওপারে কেন?
--সায়েন্স কলেজে ভর্তি হব।
--ইউনিভার্সিটি ছেড়ে এখানে?
--আমাদের সাব্জেক্ট এই ক্যাম্পাসে পড়ানো হয়।
ভিতরে ঢুকে একটা নোটিশ বোর্ডের কাছে গিয়ে প্রজ্ঞা বলল,দেখতো আমার নাম আছে কিনা?
--তুমি দেখনি?
--দেখেছি,তুই দেখ আমার ভুল হয়নি তো?
মনসিজ এগিয়ে গিয়ে আঙুল দিয়ে দেখতে দেখতে একুশ নম্বরে দেখল,প্রজ্ঞা চৌধুরী।
--তোমার নাম একুশ নম্বরে।
অফিসের সামনে ছোট একটা লাইন,প্রজ্ঞা দাঁড়িয়ে গেল।টাকা পয়সা দিয়ে ভর্তি হয়ে প্রজ্ঞা বেরিয়ে এসে বলল,ঝামেলা মিটল।
--এজন্য আমাকে ডাকার দরকার ছিল?
--তুই আমার গার্ডিয়ান।
মনসিজ আতকে উঠে বলল,না না আমি গার্ডিয়ান হতে পারবো না।ওইসব তুমি অন্য কাউকে করো।
--কেন তোর আপত্তি কিসের?
--দেখো বেলি আমি ঐসব গার্ডিয়ানগিরি করতে পারব না।আমি আমার মত থাকব কারো উপর খবরদারি আমার পোষাবে না।
প্রজ্ঞার বেশ মজা লাগে,গার্ডিয়ান শুনে এমন শিউরে উঠেছি ভেবে হাসি পেয়ে গেছিল।
মনসিজ জিজ্ঞেস করল,তোমার বন্ধু সেই গাড়ীওলা মেয়েটা পাস করেনি?
--মন্দা? ও রবীন্দ্র ভারতীতে ভর্তি হয়েছে।শ্রেয়া কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।এই সপ্তাহে শ্রেয়ার বিয়ে।ওদের পাড়াতেই বিয়ে।প্রেমের বিয়েতে এই সুবিধে।
--সব সময় একই পাড়াতে হয়না।
--হ্যা তা ঠিক।আমাকে সেই তালপুকুর ছেড়ে সিথিতে এসে থাকতে হবে।
মনসিজ লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ঠোট টিপে হাসে।
প্রজ্ঞা বলল,ওদিকে কি দেখছিস?
--এখনো অনেক দেরী এর মধ্যে মন ঘুরে যেতেও পারে।
--তোর মন ঘুরে যাবে?
--আমার কেন আর কেউ নেই?
প্রজ্ঞা আড়চোখে মনসিজকে দেখে ঠোট টিপে হাসল বলল, ঠিকই মানুষের মন বদলাতে কতক্ষন।সায়েন্স কলেজে হয়তো অন্য কোনো ছেলেকে দেখে বদলে যেতেও পারে মন।
মনসিজের বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল।কেন যে একথা বলতে গেল।পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে ভাবে যা হবার হবে। বেলি বলেছিল সব রকম অবস্থার জন্য মনকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 21-11-2021, 04:41 PM



Users browsing this thread: 38 Guest(s)