Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।৬৫।।


যা লেখার লিখেছে ঘন্টা পড়েনি তাই বসে খাতা নাড়াচাড়া করছে।ঘাড় ঘুরিয়ে চারদিক দেখে সবাই মাথা নীচু করে লিখে চলেছে।কি করবে খাতা জমা দিয়ে চলে যাবে?কব্জি ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখল মনসিজ।
চারুলতা অবাক হয়ে বললেন,এইতো এলি আবার কোথায় যাচ্ছিস?
--একটা ছোট কাজ আছে যাব আর আসব।
মোবাইল বাজতে মুচকি হেসে বাটন টিপে কানে লাগিয়ে বলল,বল।
--তুই কবে আসবি?
--আজ এসেছি মাসীমণির এখানে।তারপর কেমন আছিস?
--তুই এসে গেছিস?
--কালই চল যাবো।একটা কাজে এসেছি।
--আচ্ছা তোর ঐ ছেলেটার সঙ্গে দেখা হয়?
--কে মাস্তান?কি করে হবে,আমি তো এখানে আজ এসেছি।
--মাস্তান বলিস কেন?
প্রজ্ঞা হাসল বলল,মাস্তানকে মাস্তান বলব নাতো কি বলব?
--আমার তো খারাপ লাগেনি।পাশ থেকে শ্রেয়া বলল,ওর কথা বাদ দেতো।
--তাহলে ফোন কর তোর কাছে তো নম্বর আছে।
শ্রেয়া বলল,জিজ্ঞেস কর কোন নম্বরে করবি।
--করেছিলাম সুইচ অফ।
প্রজ্ঞা ভাবে সুইচ অফ ঠিকই বলেছে মামণিও বলছিল ফোন সুইচ অফ রাখে।মজা করার জন্য বলল,শোন মন্দা বাইরে থেকে দেখে লোক চিনতে যাস না একবার ঠোকেও তোর শিক্ষা হল না।ওর দলের একটা ছেলে রেলের মাল সরাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে।প্রজ্ঞা মনে মনে হাসে।
--কি বলছিস তুই!
--তোর সঙ্গে কেউ আছে?
--হ্যা  শ্রেয়া।কথা বলবি?
শ্রেয়ার দিকে ফোন এগিয়ে দিল।
--কিরে পরীক্ষা কেমন হল?শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে।
--আর তো কদিন রেজাল্ট বেরোলে জানতে পারব।
--আহা কেমন দিয়েছিস জানিস না?
--তুই জানিস?
--আমি পাস করে যাব।কেমন হবে বলতে পারছি না।শ্রেয়া বলল।
--শুনলাম পাস করে বিয়ে করবি?
--হ্যা রে ও ভীষণ তাগাদা দিচ্ছে।
--তাহলে পড়াশুনা?
--ও বলেছে পড়াবে।
--ভেরি গুড।উইশ ইউ অল দা বেস্ট।
--মানে তুই আসবি না?
--তুই বললে না এসে পারি?আচ্ছা পরে ফোন করবো এখন একটু বেরোতে হচ্ছে।
--ওকে বাই।
শ্রেয়া ফোন রাখতে মন্দাকিনী চোখ বড় বড় করে বলল,চিটিংবাজের খপ্পর থেকে শেষে গুণ্ডা?
--ধুস তুইও যেমন। প্রজ্ঞাকে চিনিস না তুই?ও ঐ রকম বলে।প্রিয়কে নিয়ে আমার সঙ্গে কম মজা করেছে।
ঘণ্টা বাজতে খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে পড়ল।কটা দিন কি ধকল গেল। মাও ভেবে ভেবে অস্থির। রকে যাওয়া হয়না অনেক দিন কি জানি কি ভাবছে ওরা।পরীক্ষার কথা বলা যাবে না,কিছু একটা বানিয়ে বলতে হবে।আশিসদার খবর নেওয়া হয়নি।বেচারী মেয়েটা কি করছে কে জানে।হঠাৎ কি দেখে চমকে ওঠে মনসিজ।
ঠিক দেখছে তো,বাড়ী গেছিল না?ঠিকই দেখেছে ওর চেহারায় একটা স্বাতন্ত্র আছে, ভীড়ের মধ্যেও ওকে আলাদা করে চিনতে অসুবিধে হয়না।মনসিজ মাথা নীচু করে এগোতে থাকে যেন কিছু দেখেনি।
প্রজ্ঞা মিট মিট করে হাসে।কেমন মাথা নীচু করে সিড়ি দিয়ে নামছে ভাবখানা ওকে খেয়াল করেনি।ইচ্ছে করছে ঠাস করে একটা দিই।
প্রজ্ঞার কাছাকাছি এসে অবাক হবার ভান করে বলল,আরে বেলি তুমি এখানে?
--মার খাবার ইচ্ছে হয়েছে তুই আমাকে আগে দেখিস নি?
মনসিজ আশপাশ দেখে কেউ শুনলো কিনা বলল,দেখব না কেন উপর থেকেই দেখেছি, তুমি বাড়ী গেছিলে তাই বললাম।
একটু ফাকায় গিয়ে প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করল,কেমন হল পরীক্ষা?
--যা পেরেছি লিখেছি।
--আমি সবগুলোর কথা জিজ্ঞেস করছি।
--লিখেছি।
--কোনো প্রশ্ন আটকে যায়নি তো?
--সেরকম নয় তবে অনেকভাবে লেখা যায়।আমি আমার মত লিখেছি।
প্রজ্ঞা ভাবে ঠিকই কিভাবে শুরু করবো পরীক্ষা হলে বসে একটা সিদ্ধান্ত করতে সময় নষ্ট হয়।অব্জেক্টিভ টাইপ হলে আলাদা।অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্তের জন্য শুরু করে আর শেষ করতে পারিনা।বাস স্টপেজের কাছে এসে প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করল,বাসে যাবে তো?
--তুমি বাসে যাবে?
--বাসেই তো এসেছি।
--না মানে এখন অফিস থেকে সবাই বাড়ী ফিরবে--আচ্ছা চলো।
বাস এসে থামতে সবাই গেটের মুখে জড়ো হয়।লোক নামা শেষ হলে বেলিকে ঠেলে এগিয়ে দিয়ে পিছন থেকে হাত দিয়ে ভীড় সামলায়।লোকজন বিরক্ত হয়ে বলে,আরে মশায় হাত সরান না,উঠতে দেবেন তো।
প্রজ্ঞা উঠতে পিছন পিছন উঠল মনসিজ।প্রজ্ঞা লেডিস সিটের সামনে দাড়ায়।ভীড়ে ঠাষা বাস চলতে শুরু করে।প্রজ্ঞার বা-দিকে মনসিজ ডানদিকে আরেকটা ছেলে।একের পর এক স্টপেজে থামতে থামতে চলেছে বাস।বাস থামলে টাল সামলাতে ছেলেটী প্রজ্ঞার দিকে হেলে পড়ছে।বিষয়টি মনসিজের দৃষ্টি এড়ায় না।রাগে ফুসতে থাকে।একসময় প্রজ্ঞাকে সরিয়ে দিয়ে ছেলেটি আর প্রজ্ঞার মাঝে গিয়ে মনসিজ বলল,কি ভাই সোজা হয়ে দাড়াতে পারেন না।
--আপনিই তো মাঝখানে এসে দাড়ালেন।
--দেখবেন কিভাবে সোজা হয়ে দাড়াতে হয়।
প্রজ্ঞা বিরক্ত হয়,ভীড় বাসে এরকম একটু-আধটু হয়।ছেলেটী বলল,আপনি তো আজব লোক,আপনার কাছে দাঁড়ানো শিখতে হবে না।
--মহিলা দেখলে আর টাল সামলাতে পারেন না?
--উনি কি আপনার গার্ল ফ্রেণ্ড?
--তাতে আপনার দরকার কি?
--এতই যদি দরদ ট্যাক্সিতে যেতে পারেন--।
--অনেক্ষন ভদ্রভাবে বলেছি,ট্যাক্সিতে যাব নাকি প্লেনে যাব তুই বলার কে?
ছেলেটি ঘাবড়ে গিয়ে বলল,আচ্ছা মশাই ঘাট হয়েছে--।ভীড়ের মধ্যে কে যেন বলল,এবার দুটোকেই নামিয়ে দেবো।
--কেরে আয় নামিয়ে দিবি আয়--।
প্রজ্ঞা বিরক্ত হয়ে বাস থামতে নেমে হন হন করে সিমলার দিকে হাটতে থাকে।মনসিজও নেমে পিছন থেকে ডাকতে থাকে,বেলি--বেলি শোনো--।
প্রজ্ঞা দাঁড়ায় না হাটতে থাকে।মনসিজ হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে,বুঝতে পারেনা হঠাৎ কি এমন হল মাঝ রাস্তায় নেমে পড়তে হবে।মনসিজ দেখল কিছুটা গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে তাকে ইশারা করে ডাকছে।মনসিজ দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বলল,কি হল নেমে পড়লে?
--বাসের মধ্যে সিন ক্রিয়েট না করলে চলছিল না?
--সিন ক্রিয়েট ব্যাটাকে দু-ঘা দিইনি ওর ভাগ্যি।
--সব জায়গায় গা-জোয়ারী?
--আমি গা-জোয়ারী করলাম আর ছেলেটা যে তোমার উপর কেদরে কেদরে পড়ছিল?
--তাতে কি বেলি ক্ষয়ে গেছে, ভীড় বাসে ওরকম হয়--।
--তুমি দেখোনি ছেলেটা তোমাকে কেমন ড্যাবডেবিয়ে দেখছিল--।
--দেখছিল তো কি হয়েছে,তুই দেখিস না?বেলি কি তোর একার?
--হ্যা আমার একার--একার--একার--হলতো?ক্ষেপে গিয়ে বলল মনসিজ।
প্রজ্ঞা অবাক হয়ে দেখে কোন পাগলের পাল্লায় পড়ল।আশপাশ দিয়ে লোক চলে যাচ্ছে।নিজেকে সামলে প্রজ্ঞা বলল,সারা জীবন আমাকে তোর কাছে রাখতে পারবি?
--আমি জানি না।মাথা নীচু করে বলল মনসিজ।
--তুই আমাকে ভালবাসিস না?
--আমি কি সেকথা বলেছি?
--তা হলে সেকথা মুখ ফুটে বলিস নি কেন?
মনসিজ পায়ের বুড়ো আঙুল চটীতে ঘষতে থাকে কিছু বলে না।
প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করে,কিরে কথার উত্তর দে।
--ভয়ে বলিনি।
প্রজ্ঞা খিল খিল করে হেসে উঠে বলল,তুই আবার ভয় পাস?কাকে ভয় পাস--বিজন চৌধুরী?
একেবারে ছেলে মানুষ মাস্তান যদি পাস করে সরকারী আমলা হবে জিজ্ঞেস করল,কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?বিজন চৌধুরীকে ভয় পাস?
--না তোমাকে।
আমাকে?প্রজ্ঞার বিস্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে যায় বলে,আমাকে তোর কিসের ভয়?
--তুমি যদি মুখের উপর না বলে দেও।
--তাহলে প্রেস্টিজে লাগতো?তোর কিসের এত অহঙ্কার?
--আমার কি আছে যে অহঙ্কার করব।
--তোর যাকে ভাল লাগবে তারও তোকে ভাল লাগতে হবে?
--আমি তা বলিনি। তাহলে আমার পক্ষে তালপুকুরে থাকা সম্ভব হত না।
তাল্পুকুরের দিনগুলো মনে পড়ে।প্রজ্ঞার চোখ ঝাপসা হয়ে যায়,মাস্তান এসব কি বলছে।প্র্যাখ্যানের ভয়ে মনের কথা চেপে রেখেছে বুকে।প্রত্যাখ্যাত হলে তাল্পুকুর ছেড়ে পালিয়ে যেত?প্রজ্ঞা বলল,চল ঐ পার্কে গিয়ে বসি।
বাটন টিপে প্রজ্ঞা কাকে ফোন করে,রিং হতে এগিয়ে দিয়ে বলল,মামণি চিন্তা করবে কথা বল।
মনসিজ ফোন কানে লাগিয়ে বলল,হ্যা পরীক্ষা হয়ে গেছে... বেলির সঙ্গে কথা বলছি...না মাসীর বাড়ি এসেছে...ঠিক আছে তুমি চিন্তা কোরোনা...রাখছি?
পার্কে ঢুকে একটা ফাকা বেঞ্চে দুজনে পাশাপাশি বসল।কিছুক্ষন নীরবতার পর প্রজ্ঞা বলতে থাকে,শোন মাস্তান সত্যের মুখোমুখি হতে শেখ।কবিগুরুর ভাষায়, মনরে তাই কহ যে ভাল মন্দ যাহাই আসুক সত্যরে লও সহজে।আমরা অনেক কিছু চাই কিন্তু সব কি পাওয়া যায়?তাই বলে হতাশ হতে হবে?
--বেলি একটা কথা বলব?
প্রজ্ঞা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
--তোমার হাতটা একটু ধরবো?
সুযোগ পেলে জানোয়ারগুলো ছিড়েখুড়ে খায় হাত ধরার জন্য অনুমতি।প্রজ্ঞা হাতটা মনসিজের কোলে তুলে দিয়ে বলল,শোন মাস্তান পরিস্থিতির সামনে বোল্ডলি দাড়াবি।পা রাখবি বাস্তবের শক্ত মাটিতে আর দৃষ্টি দূর আকাশের দিকে।ঘটনাকে বিশ্লেষণ করবি ঘটনার থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে।তোকে একটা গল্প বলি,একটা লোক তার বউকে নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছিল।একদিন লোকটি দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হল।বউটা চোখে অন্ধকার দেখে তার যা অলঙ্কার বিক্রী করে স্বামীর চিকিৎসা করতে লাগল।গয়না শেষ হলে শুরু করল দেহ বিক্রী।দেহ বিক্রীর একটা পয়সাও নিজের জন্য খরচ করেনি সব স্বামীর চিকিৎসায় ব্যয় করেছে।একদিন লোকটি আরোগ্য লাভ করল।
বেশ্যা কুলটা বলে বউকে ত্যাগ করল।যে তার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছে হতভাগা তাকে চিনতে পারেনি।
মনসিজ হাতটা নিয়ে গালে বোলায়।প্রজ্ঞা বলল,অনেক্ষন হল এবার হাত ছাড়।ধরবি বললি গালে বোলাচ্ছিলি কেন?
--বেলি যখন গালে বোলাচ্ছিলাম মায়ের কথা মনে পড়ল।মা আমার গায়ে মাথায় এভাবে হাত বুলিয়ে দেয়।
প্রজ্ঞা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখের জল আড়াল করে।তারপর বলল,সন্ধ্যে হয়ে এল আজ আর বাড়ী যাব না।চল তোকে বাসে তুলে দিই।
  
 
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 14-11-2021, 06:31 PM



Users browsing this thread: 26 Guest(s)