13-11-2021, 04:04 PM
(This post was last modified: 07-02-2022, 03:50 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৬৪।।
চায়ের কাপ নিয়ে ব্যালকনিতে এসে বসল মন্দাকিনী।রাস্তায় লোক চলাচল সবে শুরু হয়েছে। পরীক্ষার পর একা একা সময় কাটতে চায়না। মাঝে দু-একবার মনসিজকে ফোন করেছিল সুইচ অফ।প্রজ্ঞার সঙ্গে ওর রিলেশান নেই তো।মনসিজের কথা শুনে তা মনে হল না।অবশ্য কথা আর হল কোথায়। ফোন ধরলে কথা বলে বোঝা যেতো।পার্কের দৃশ্যটা মনে পড়তে হাসি পেল।তারপর সনুর সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি।ছেলেটা বেশ সহজ সরল,বেশ সাহসী।প্রজ্ঞা এখন ওর বাড়ীতে চলে গেছে। সনুটা যে এত ধুর্ত বুঝতে পারেনি।ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে ছবি দেখেছে।একটাও সিরিয়াল করেনি ফেসবুকে নিজেকে সেলিব্রিটি বলে পরিচয় দেয়।প্রিয়াংশু ছেলেটা ভাল, শুনেছে রেজাল্ট বেরোলে শ্রেয়া বিয়ে করবে।ভালই মানাবে প্রিয়াংশুর সঙ্গে।মনসিজকে একবার ফোন করবে?এত সকালে মনে হয় ঘুমোচ্ছে।
মনসিজ ঘুম থেকে উঠেই ভাবল,আজকের দিনটা গেলে বাচা যায়।দেওয়ালের ছবিগুলোর দিকে নির্নিমেষ চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ।ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে বাথরুমে চলে গেল।রান্না ঘরে হিমানীদেবী ভাবছেন,ছেলেটা এত পরিশ্রম কোনো পরীক্ষার সময় করেনি।বেলি ওকে কি বুঝিয়েছে ভগবান জানে।
পূর্ণেন্দু বাজার থেকে ফিরছে।দোকান বাজার সব তাকেই করতে হয় এখন।এলিনার পেটটা এত বেশি স্ফীত হয়েছে লজ্জায় বাইরে বের হয়না।ধরে ধরে শোওয়াতে হয়,শুয়ে থাকলে ধরে তুলতে হয়। যমজ বাচ্চা হবে নাতো?
স্নান করে খেতে বসেছে মনসিজ।হিমানীদেবী পাশে বসে ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলেন,পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?
মনসিজ মায়ের কৌতূহলে হাসলো।মুখের গরাস গিলে বলল,এতো কলেজ কলেজের পরীক্ষা নয়।এখানে পাস মার্ক-টার্ক থাকে না।উপরের দিক থেকে প্রয়োজন মত কয়েকজনকে কোয়ালিফাই করা হয়।যা পারছি লিখছি দেখা যাক কি হয়।
হিমানীদেবী পুরোপুরি না বুঝলেও আর প্রশ্ন করেন না।খাওয়া হয়ে গেলে হাত মুখ ধুয়ে বাবার ছবির সামনে চোখ বুজে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে।কলম ইত্যাদি যা যা নেবার নিয়ে মেঝেতে বসে মায়ের পা ছুয়ে কিছুক্ষন মনে মনে কি আওড়াতে থাকে।হিমানীদেবীর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে,মনে মনে বলেন ভগবান ছেলেটাকে দেখো।মনসিজ বেরিয়ে পড়ল।টেবিলের উপর মোবাইল দেখে এগিয়ে গিয়ে হাতে নিয়ে সুইচ অন করতেই মোবাইল বেজে উঠল,কানে লাগিয়ে বললেন, হ্যালো?
--মামণি?মাস্তান কোথায়?
--এইতো বেরিয়ে গেল।
--মোবাইল বন্ধ ছিল?
--হ্যা বন্ধুরা ফোন করে সেজন্য বন্ধ করে রেখেছিল,সঙ্গে নিয়েও যায় না।
--তুমি ভাল আছো?
--আর ভাল থাকা পরীক্ষার কটাদিন কিভাবে যে কাটছে--।
--আজই তো শেষ?
--হ্যা মা তুই ভাল আছিস?
--হ্যা ভাল আছি রাখছি?
প্রজ্ঞা ফোন রেখে বুঝতে পারে কেন সুইচ অফ রেখেছিল।
যতদিন যাচ্ছে বোনের জন্য তাগাদা বাড়ছে দীপার।কাল রাতেও শুয়ে শুয়ে জিজ্ঞেস করছিল,কবে বোন আনবে?
মনিকুন্তলা কি করে বোঝাবে মেয়েকে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
নৃপেন শুনে বলল,বোন-বোন করছে শেষে যদি ছেলে হয়?
--বোঝাও তোমার মেয়েকে।
নৃপেন লক্ষ্য করে রেজিস্ট্রি হবার পর মণির মধ্যে কনফিডেণ্ট ফিরে এসেছে।স্বাভাবিক আগের বার একটা ধাক্কা খেয়েছে শঙ্কা তো হবেই।দিগনগরের বাড়ীটা বিক্রীর কথা বলছিল।নৃপেনের ইচ্ছেও তাই তবু যেচে সেকথা বলেনি পাছে ভুল বোঝে।মণি নিজেই বলছে যখন ভাবছে কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দেবার কথা।
--আমি আসছি।মনি বেরিয়ে গেল।
নৃপেনকেও বেরোতে হবে,মালার জন্য অপেক্ষা করছে।দীপাকে দিয়ে মালা ফিরলে বেরবে।দীপাকে মণির কলেজে ভর্তি করার কথা ভাবে।কলেজটা একটু দূর হবে তাহলেও একই রিক্সায় মায়ের সঙ্গে কলেজে যেতে পারবে।মনিরও মেয়ের দিকে নজর রাখার সুবিধে।মণিকে দেখে আর অবাক হয়।মেয়েরা কত সহজে সব কিছু মানিয়ে নিতে পারে।মনে হল মালা ফিরল নৃপেন বেরিয়ে বলল,আমি আসছি দরজা বন্ধ করে দে।
কলেজ যাবার তাড়া নেই খেতে খেতে অনেক বেলা হয়ে এল।খাওয়া দাওয়ার পর ছাদে উঠে এল।দুপুরে ঘুমায় না মোটা হয়ে যাবার ভয়ে।ছাদ হতে টালা পার্ক পরিস্কার দেখা যায়।পুকুরে ছেলেগুলো ঝাপাঝাপি করছে।বস্তিতে থাকে ছেলেগুলো।মোবাইল বাজতে স্ক্রিনে নম্বরটা দেখে অবাক হয়।সন্ময়ের নম্বর ডিলিট করে দিলেও নম্বরটা চেনা।এতদিন পরে কি মনে করে?ধরবে কি ধরবে না কয়েক মুহূর্ত ভাবে।বাটন টিপে যেন চেনে না এমনভাবে বলল,হ্যালো?
--চিনতে পারছো?
--কে বলছেন?
সত্যিই চিনতে পারছে না নাকি নক্সা করছে সন্ময় বলল,সনুকে ভুলে গেলে?
--এতদিন পর কি মনে করে?
--একটা গুড নিউজ দেব বলে তোমাকে ফোন করলাম।
--যা বলার তাড়াতাড়ি বলো আমার কাজ আছে।
--আমাদের স্যুটিং শুরু হয়েছে--একটি বখাটে ছেলের কাহিনী।
--বখাটে ছেলে কে? তুমি?
--প্রথম সিরিয়াল।আমি বখাটে ছেলেদের মধ্যে একজন,মেন রোল অঞ্জন।
--ভাল লেগে থাকো।
--শোন যে জন্য তোমাকে ফোন করেছি--তুমি স্যুটিং দেখবে? অঞ্জনের বিপরীতে আছে সৃজনী--।
--কোথায় হচ্ছে স্যুটিং?
--টালি পাড়ায়,তুমি বললে গেস্ট কার্ড পাঠিয়ে দিতে পারি।
এক মুহুর্ত ভাবে মন্দাকিনী।একটু মজা করলে কেমন হয়?মন্দাকিনী বলল,যেতে পারি যদি দুটো কার্ড পাঠাও।
--দুটো মানে আর কে তোমার বন্ধু প্রজ্ঞা?
প্রজ্ঞা মনে গেথে আছে,ভুলতে পারছে না।মন্দাকিনী বলল,না আমার বন্ধু মনসিজ।
মনসিজ?এর মধ্যে একটাকে জুটিয়ে ফেলল নাকি?বড়লোকের মেয়ে এদের জুটতে সময় লাগে না,সন্ময় নিজেকে সংযত করে বলল,এ মালটা কে?
--একে চিনতে পারলে না?
--আমি কি করে চিনবো?এমনভাবে বলছো যেন কোনো সেলিব্রিটী!
--এত শিঘ্রি ভুলে গেলে দু-মাসও হয়নি।
--মানে?
--মানে সেই পার্কের কথা মনে আছে তোমার হাত মুচড়ে চিঠিগুলো কেড়ে নিয়েছিল--হ্যালো--হ্যালো মনে পড়েছে?--হ্যালো--হ্যালো?
ফোন কেটে দিয়েছে মন্দাকিনী খিল-খিল করে হাসতে থাকে।
--মণি-ই মণি-ই নীচে আয় তোর বন্ধু এসেছে।
মায়ের গলা পেয়ে সাড়া দিল,আসছি।
নাম করতে না করতেই হাজির।প্রজ্ঞা কি তাহলে কলকাতায় এসেছে?
নীচে নেমে নিজের ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে বলল,শ্রেয়া তুই?
--তুই কি ভেবেছিলি?
--না মানে তুই আসবি ভাবিনি।
--সময় কাটতে চায়না, সবাই বেরিয়ে গেলে বাড়ীটা একেবারে খা-খা।ভাবলাম যাই পাকপাড়া থেকে ঘুরে আসি।রেজাল্ট বেরোবার সময় হয়ে এল।
--প্রিয়াংশুর খবর কি?
--সেই সকালে বের হয় ফেরে সেই রাত করে,ফোনেই যা কথা হয়।বেকার ছিল ভাল ছিল এক ফোনেই হাজির।তোর খবর বল।
--আমার আর কি খবর সেই গয়ং গচ্ছ।
--হুউম ছেলেটা এত বদ দেখে মনে হয়নি।
--ছাড়তো ওর কথা।এই জানিস একটা মজা হয়েছে।
মন্দাকিনীর চোখ মুখ দেখে শ্রেয়া মজার ব্যাপারটা আন্দাজ করার চেষ্টা করে।
মন্দকিনী বলল,তুই তো জানিস সেই পার্কের ঘটনাটা।
--কোন ঘটনা?ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল শ্রেয়া।
--সেই যে চিঠি নিয়ে ব্লাক মেইল করতে এসেছিল?
--ও-হো-হো-হো বাব্বা সেকী আজকের কথা।তুই আমি প্রজ্ঞা--আমাদের সাবজেক্ট এক নাহলেও আমাদের বন্ধুত্বের কথা সবার মনে আছে।কারো সঙ্গে দেখা হলেই তোর কথা প্রজ্ঞার কথা জিজ্ঞেস করে।মজার ঘটনা কি বলছিলি?
--সনু ফোন করেছিল একটু আগে।
--এতদিন পরে?ঝালাতে চাইছে?শোন মন্দা তোর ব্যাপারে আমার বলা ঠিক নয় তবু বলছি টোটাল ব্যাপারটা থেকে ওর চেহারা পরিস্কার--।
--তুই কি বলবি আমি বুঝিনা?দাড়া চা নিয়ে আসছি।মন্দাকিনী ভিতরে গিয়ে দেখল কাজের পিসি রান্না ঘরে চা করছে।ফিরে এসে বলল,আজকের ঘটনা শুনলে তুই মজা পাবি।ও একটা সিরিয়াল বখাটে ছেলে না কি,তাতে চান্স পেয়েছে।আমাকে বলল স্যুটীং দেখতে যাবার কথা সৃজনী নাকি আছে ঐ সিরিয়ালে।আমি বললাম যাবো তবে মনসিজকে সঙ্গে নিয়ে--শুনেই ব্যাস আর কথা নয়--।
--তোর সঙ্গে ওর যোগাযোগ হয়েছে?
--নারে--ফোন করছি সুইচ অফ।আচ্ছা শ্রেয়া ছেলেটার সঙ্গে প্রজ্ঞার কোনো রিলেশন নেইতো?
পিসী চা নিয়ে ঢুকলেন।মন্দাকিনী জিজ্ঞেস করে,পিসী মা উঠেছে?
--এইমাত্র চা দিয়ে এলাম।
শ্রেয়া বলল,প্রজ্ঞা তো বলে ওর কোনো বয় ফ্রেণ্ড নেই।তাছাড়া ওই ছেলেকে প্রজ্ঞা--আমার বিশ্বাস হয়না।প্রজ্ঞাকে একবার ফোন কর না।
অনেকদিন কথা হয়না।
--দাড়া চা খেয়ে করছি।
চায়ের কাপ নিয়ে ব্যালকনিতে এসে বসল মন্দাকিনী।রাস্তায় লোক চলাচল সবে শুরু হয়েছে। পরীক্ষার পর একা একা সময় কাটতে চায়না। মাঝে দু-একবার মনসিজকে ফোন করেছিল সুইচ অফ।প্রজ্ঞার সঙ্গে ওর রিলেশান নেই তো।মনসিজের কথা শুনে তা মনে হল না।অবশ্য কথা আর হল কোথায়। ফোন ধরলে কথা বলে বোঝা যেতো।পার্কের দৃশ্যটা মনে পড়তে হাসি পেল।তারপর সনুর সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি।ছেলেটা বেশ সহজ সরল,বেশ সাহসী।প্রজ্ঞা এখন ওর বাড়ীতে চলে গেছে। সনুটা যে এত ধুর্ত বুঝতে পারেনি।ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে ছবি দেখেছে।একটাও সিরিয়াল করেনি ফেসবুকে নিজেকে সেলিব্রিটি বলে পরিচয় দেয়।প্রিয়াংশু ছেলেটা ভাল, শুনেছে রেজাল্ট বেরোলে শ্রেয়া বিয়ে করবে।ভালই মানাবে প্রিয়াংশুর সঙ্গে।মনসিজকে একবার ফোন করবে?এত সকালে মনে হয় ঘুমোচ্ছে।
মনসিজ ঘুম থেকে উঠেই ভাবল,আজকের দিনটা গেলে বাচা যায়।দেওয়ালের ছবিগুলোর দিকে নির্নিমেষ চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ।ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে বাথরুমে চলে গেল।রান্না ঘরে হিমানীদেবী ভাবছেন,ছেলেটা এত পরিশ্রম কোনো পরীক্ষার সময় করেনি।বেলি ওকে কি বুঝিয়েছে ভগবান জানে।
পূর্ণেন্দু বাজার থেকে ফিরছে।দোকান বাজার সব তাকেই করতে হয় এখন।এলিনার পেটটা এত বেশি স্ফীত হয়েছে লজ্জায় বাইরে বের হয়না।ধরে ধরে শোওয়াতে হয়,শুয়ে থাকলে ধরে তুলতে হয়। যমজ বাচ্চা হবে নাতো?
স্নান করে খেতে বসেছে মনসিজ।হিমানীদেবী পাশে বসে ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলেন,পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?
মনসিজ মায়ের কৌতূহলে হাসলো।মুখের গরাস গিলে বলল,এতো কলেজ কলেজের পরীক্ষা নয়।এখানে পাস মার্ক-টার্ক থাকে না।উপরের দিক থেকে প্রয়োজন মত কয়েকজনকে কোয়ালিফাই করা হয়।যা পারছি লিখছি দেখা যাক কি হয়।
হিমানীদেবী পুরোপুরি না বুঝলেও আর প্রশ্ন করেন না।খাওয়া হয়ে গেলে হাত মুখ ধুয়ে বাবার ছবির সামনে চোখ বুজে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে।কলম ইত্যাদি যা যা নেবার নিয়ে মেঝেতে বসে মায়ের পা ছুয়ে কিছুক্ষন মনে মনে কি আওড়াতে থাকে।হিমানীদেবীর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে,মনে মনে বলেন ভগবান ছেলেটাকে দেখো।মনসিজ বেরিয়ে পড়ল।টেবিলের উপর মোবাইল দেখে এগিয়ে গিয়ে হাতে নিয়ে সুইচ অন করতেই মোবাইল বেজে উঠল,কানে লাগিয়ে বললেন, হ্যালো?
--মামণি?মাস্তান কোথায়?
--এইতো বেরিয়ে গেল।
--মোবাইল বন্ধ ছিল?
--হ্যা বন্ধুরা ফোন করে সেজন্য বন্ধ করে রেখেছিল,সঙ্গে নিয়েও যায় না।
--তুমি ভাল আছো?
--আর ভাল থাকা পরীক্ষার কটাদিন কিভাবে যে কাটছে--।
--আজই তো শেষ?
--হ্যা মা তুই ভাল আছিস?
--হ্যা ভাল আছি রাখছি?
প্রজ্ঞা ফোন রেখে বুঝতে পারে কেন সুইচ অফ রেখেছিল।
যতদিন যাচ্ছে বোনের জন্য তাগাদা বাড়ছে দীপার।কাল রাতেও শুয়ে শুয়ে জিজ্ঞেস করছিল,কবে বোন আনবে?
মনিকুন্তলা কি করে বোঝাবে মেয়েকে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
নৃপেন শুনে বলল,বোন-বোন করছে শেষে যদি ছেলে হয়?
--বোঝাও তোমার মেয়েকে।
নৃপেন লক্ষ্য করে রেজিস্ট্রি হবার পর মণির মধ্যে কনফিডেণ্ট ফিরে এসেছে।স্বাভাবিক আগের বার একটা ধাক্কা খেয়েছে শঙ্কা তো হবেই।দিগনগরের বাড়ীটা বিক্রীর কথা বলছিল।নৃপেনের ইচ্ছেও তাই তবু যেচে সেকথা বলেনি পাছে ভুল বোঝে।মণি নিজেই বলছে যখন ভাবছে কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দেবার কথা।
--আমি আসছি।মনি বেরিয়ে গেল।
নৃপেনকেও বেরোতে হবে,মালার জন্য অপেক্ষা করছে।দীপাকে দিয়ে মালা ফিরলে বেরবে।দীপাকে মণির কলেজে ভর্তি করার কথা ভাবে।কলেজটা একটু দূর হবে তাহলেও একই রিক্সায় মায়ের সঙ্গে কলেজে যেতে পারবে।মনিরও মেয়ের দিকে নজর রাখার সুবিধে।মণিকে দেখে আর অবাক হয়।মেয়েরা কত সহজে সব কিছু মানিয়ে নিতে পারে।মনে হল মালা ফিরল নৃপেন বেরিয়ে বলল,আমি আসছি দরজা বন্ধ করে দে।
কলেজ যাবার তাড়া নেই খেতে খেতে অনেক বেলা হয়ে এল।খাওয়া দাওয়ার পর ছাদে উঠে এল।দুপুরে ঘুমায় না মোটা হয়ে যাবার ভয়ে।ছাদ হতে টালা পার্ক পরিস্কার দেখা যায়।পুকুরে ছেলেগুলো ঝাপাঝাপি করছে।বস্তিতে থাকে ছেলেগুলো।মোবাইল বাজতে স্ক্রিনে নম্বরটা দেখে অবাক হয়।সন্ময়ের নম্বর ডিলিট করে দিলেও নম্বরটা চেনা।এতদিন পরে কি মনে করে?ধরবে কি ধরবে না কয়েক মুহূর্ত ভাবে।বাটন টিপে যেন চেনে না এমনভাবে বলল,হ্যালো?
--চিনতে পারছো?
--কে বলছেন?
সত্যিই চিনতে পারছে না নাকি নক্সা করছে সন্ময় বলল,সনুকে ভুলে গেলে?
--এতদিন পর কি মনে করে?
--একটা গুড নিউজ দেব বলে তোমাকে ফোন করলাম।
--যা বলার তাড়াতাড়ি বলো আমার কাজ আছে।
--আমাদের স্যুটিং শুরু হয়েছে--একটি বখাটে ছেলের কাহিনী।
--বখাটে ছেলে কে? তুমি?
--প্রথম সিরিয়াল।আমি বখাটে ছেলেদের মধ্যে একজন,মেন রোল অঞ্জন।
--ভাল লেগে থাকো।
--শোন যে জন্য তোমাকে ফোন করেছি--তুমি স্যুটিং দেখবে? অঞ্জনের বিপরীতে আছে সৃজনী--।
--কোথায় হচ্ছে স্যুটিং?
--টালি পাড়ায়,তুমি বললে গেস্ট কার্ড পাঠিয়ে দিতে পারি।
এক মুহুর্ত ভাবে মন্দাকিনী।একটু মজা করলে কেমন হয়?মন্দাকিনী বলল,যেতে পারি যদি দুটো কার্ড পাঠাও।
--দুটো মানে আর কে তোমার বন্ধু প্রজ্ঞা?
প্রজ্ঞা মনে গেথে আছে,ভুলতে পারছে না।মন্দাকিনী বলল,না আমার বন্ধু মনসিজ।
মনসিজ?এর মধ্যে একটাকে জুটিয়ে ফেলল নাকি?বড়লোকের মেয়ে এদের জুটতে সময় লাগে না,সন্ময় নিজেকে সংযত করে বলল,এ মালটা কে?
--একে চিনতে পারলে না?
--আমি কি করে চিনবো?এমনভাবে বলছো যেন কোনো সেলিব্রিটী!
--এত শিঘ্রি ভুলে গেলে দু-মাসও হয়নি।
--মানে?
--মানে সেই পার্কের কথা মনে আছে তোমার হাত মুচড়ে চিঠিগুলো কেড়ে নিয়েছিল--হ্যালো--হ্যালো মনে পড়েছে?--হ্যালো--হ্যালো?
ফোন কেটে দিয়েছে মন্দাকিনী খিল-খিল করে হাসতে থাকে।
--মণি-ই মণি-ই নীচে আয় তোর বন্ধু এসেছে।
মায়ের গলা পেয়ে সাড়া দিল,আসছি।
নাম করতে না করতেই হাজির।প্রজ্ঞা কি তাহলে কলকাতায় এসেছে?
নীচে নেমে নিজের ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে বলল,শ্রেয়া তুই?
--তুই কি ভেবেছিলি?
--না মানে তুই আসবি ভাবিনি।
--সময় কাটতে চায়না, সবাই বেরিয়ে গেলে বাড়ীটা একেবারে খা-খা।ভাবলাম যাই পাকপাড়া থেকে ঘুরে আসি।রেজাল্ট বেরোবার সময় হয়ে এল।
--প্রিয়াংশুর খবর কি?
--সেই সকালে বের হয় ফেরে সেই রাত করে,ফোনেই যা কথা হয়।বেকার ছিল ভাল ছিল এক ফোনেই হাজির।তোর খবর বল।
--আমার আর কি খবর সেই গয়ং গচ্ছ।
--হুউম ছেলেটা এত বদ দেখে মনে হয়নি।
--ছাড়তো ওর কথা।এই জানিস একটা মজা হয়েছে।
মন্দাকিনীর চোখ মুখ দেখে শ্রেয়া মজার ব্যাপারটা আন্দাজ করার চেষ্টা করে।
মন্দকিনী বলল,তুই তো জানিস সেই পার্কের ঘটনাটা।
--কোন ঘটনা?ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল শ্রেয়া।
--সেই যে চিঠি নিয়ে ব্লাক মেইল করতে এসেছিল?
--ও-হো-হো-হো বাব্বা সেকী আজকের কথা।তুই আমি প্রজ্ঞা--আমাদের সাবজেক্ট এক নাহলেও আমাদের বন্ধুত্বের কথা সবার মনে আছে।কারো সঙ্গে দেখা হলেই তোর কথা প্রজ্ঞার কথা জিজ্ঞেস করে।মজার ঘটনা কি বলছিলি?
--সনু ফোন করেছিল একটু আগে।
--এতদিন পরে?ঝালাতে চাইছে?শোন মন্দা তোর ব্যাপারে আমার বলা ঠিক নয় তবু বলছি টোটাল ব্যাপারটা থেকে ওর চেহারা পরিস্কার--।
--তুই কি বলবি আমি বুঝিনা?দাড়া চা নিয়ে আসছি।মন্দাকিনী ভিতরে গিয়ে দেখল কাজের পিসি রান্না ঘরে চা করছে।ফিরে এসে বলল,আজকের ঘটনা শুনলে তুই মজা পাবি।ও একটা সিরিয়াল বখাটে ছেলে না কি,তাতে চান্স পেয়েছে।আমাকে বলল স্যুটীং দেখতে যাবার কথা সৃজনী নাকি আছে ঐ সিরিয়ালে।আমি বললাম যাবো তবে মনসিজকে সঙ্গে নিয়ে--শুনেই ব্যাস আর কথা নয়--।
--তোর সঙ্গে ওর যোগাযোগ হয়েছে?
--নারে--ফোন করছি সুইচ অফ।আচ্ছা শ্রেয়া ছেলেটার সঙ্গে প্রজ্ঞার কোনো রিলেশন নেইতো?
পিসী চা নিয়ে ঢুকলেন।মন্দাকিনী জিজ্ঞেস করে,পিসী মা উঠেছে?
--এইমাত্র চা দিয়ে এলাম।
শ্রেয়া বলল,প্রজ্ঞা তো বলে ওর কোনো বয় ফ্রেণ্ড নেই।তাছাড়া ওই ছেলেকে প্রজ্ঞা--আমার বিশ্বাস হয়না।প্রজ্ঞাকে একবার ফোন কর না।
অনেকদিন কথা হয়না।
--দাড়া চা খেয়ে করছি।