08-11-2021, 07:35 PM
(08-11-2021, 11:02 AM)kumdev da nice update sathe achi, chaliyeJan. Wrote: ।।৬১।।
মনসিজ ডায়েরী নিয়ে বসেছে।মিথ্যে বললে আত্মপ্রত্যয় নষ্ট হয়।কথাটা বেশ বেলির ব্যবহার বাচ্চাদের মত হলেও কথাগুলো গুরুগম্ভীর।সাইকোলজি অনার্স নিয়ে পড়ছে।একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে মেয়েরা অনেক দূর দেখতে পায়।মাস্তান অর্থ মাতোয়ারা।আমি জানতাম না।আমি নাকি ওর প্রেমে মাতোয়ারা।বেলি যখন শাসন করে আমার ভাল লাগে আর তখনই মন খারাপ হয়ে যায়।সামনেই পরীক্ষা সে আর কটা দিন, পরীক্ষা শেষ হলেই তালপুকুরে চলে যাবে।আর কেউ তাকে ধমকাবে না শাসন করবে না ভেবে খুব খারাপ লাগছে।
হিমানীদেবী চা নিয়ে ঢুকে কাপ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,কোথায় গেছিলি?
ডায়েরী রেখে বলল,বেলি ডেকেছিল।
বেলির কথা শুনলে মা কিছু বলবে জানে।হিমানী দেবী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,মেয়েটা অনেকদিন আসেনা।
--সামনে ওর পরীক্ষা।জানো মা ওর মাসীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল।
--তুই ওর মাসীর বাড়ি গেছিলি?
--ও নিয়ে গেল।ভদ্রমহিলার ব্যবহার বেশ ভাল।
বেলি কোন মতলবে নিয়ে গেছিল অনুমান করার চেষ্টা করেন হিমানীদেবী।চৌধুরীবাবু কিছুতেই মেনে নেবে বলে মনে হয় না।আশা-আশঙ্কায় দুলতে থাকে মন।ঠাকুর-পো বলেছিল ওর বাবার অফিসে ঢুকিয়ে দেবে বেলির কথায় সায় দিয়ে তিনি কি ভুল করলেন।
ভীড়ের মধ্যে চঞ্চলতা দেখা যায়।অবনীশ মুখুজ্জে আশিসের বাবা আসছেন।বয়স্ক বলাই মিত্তির একটু সরে দাড়ালেন। অবনীশবাবু কথাটা আসার পথে শুনেছেন।কৃষ্ণাকে একবার আড়চোখে দেখে গটগট করে ভীড় ঠেলে বাড়ীর ভিতরে ঢুকে গেলেন।সবাই কিছু আশা করেছিল হতাশ হয়ে পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে।
বাড়ীর ভিতর ঢূকেই গর্জে উঠলেন,কোথায় গেল হারামজাদা।
আশিসের মা বিনতা ছুটে এসে ফিস ফিস করে বললেন,কি হচ্ছে কি ছেলেটাকে আজ মেরেই ফেলতো।
--অমন ছেলের মরাই ভাল।
ফুপিয়ে কেদে ফেলে বিনতা মুখুজ্জে।
--তোমার জন্য এই তোমার জন্য আজ এই অবস্থা হয়েছে।
--আহা ছেলে মানুষ একটা ভুল করে ফেলেছে,ওরা মেরে কি করেছে দেখেছো?
--হায় ভগবান শেষে এই দিন দেখতে হবে।লেখাপড়া করল না--কোনো একটা কাজ যদি--
--চেষ্টা করেনি তাতো নয়।ইচ্ছে করে কেউ ফেল করে?তোমায় কতবার বলেছি একটা ভাল মাস্টার রেখে দাও--।
--মাস্টার কি গিলিয়ে দেবে? দ্বিজেনবাবুর ছেলে দিলীপ পাস করে কি সুন্দর লেখাপড়া করছে।বংশের মুখে কালি লেপে দিল।
--কালি পরে তুলো। শোনো মাথা গরম কোরনা।ওরা তোমার ছেলেকে খুন করবে বলে মুখিয়ে আছে।তুমি বাপ হয়ে দেখবে নাতো কি পাড়া পড়শী দেখবে?এই সুলেখা বাপিকে চা দে।যাও হাত-মুখ ধুয়ে এসো।
--তোমার ছেলে কোথায়?
--ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছি,চিলে কোঠায় বসে আছে।
বিনতা নিজের মনে গজ গজ করতে থাকেন,কাল হয়েছে ঐ হাসপাতালের চাকরি। ওইতো ছাতার চাকরি,ঐখানে না গেলে কি রাক্ষুসীটা ওর মাথা এমন চিবিয়ে খেতে পারতো।সামনে মেলে দিলে কোন মানুষের মাথার ঠিক থাকে।
খেতে বসে হিমানীদেবী জিজ্ঞেস করলেন,বেলির মাসী কিছু বলেনি?
--জিজ্ঞেস করলেন দেশ কোথায় বাবা কি করেন নিজেদের বাড়ী কিনা--এই সব।
হিমানীদেবী বুঝলেন তার অনুমান ঠিক।বলার মত তো কিছু নেই,জানি না অদৃষ্টে কি আছে।
--হ্যারে মনু পাড়ায় কিছু হয়েছে লোকজন ছোটাছুটি করছিল?
না বললেও মা পরে সব জানতে পারবে ভেবে মনসিজ সংক্ষেপে মাকে যতটা বলা যায় বলল।
--এ আবার কেমন আব্দার?এভাবে বিয়ে হয় নাকি?
মা সব জানে না,মনসিজও কথা বাড়ায় না।খেয়েদেয়ে উঠে পড়ল।
মনসিজ জিকে নিয়ে বসল,বেলি আজ যেটা দিয়েছে।নিঝুম রাত স্তব্ধ চরাচর।মনসিজ গভীরভাবে ডুবে যায়।
মজা দেখার মানুষরা একে একে বাড়ি ফিরে গেছে।এখন আর কেউ নেই,কৃষ্ণা দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে।মাঝে মাঝে চাপড় দিয়ে মশা মারছে।এক সময় বোচকার উপর ঢলে পড়ল।
রাত শেষ হতে চলল বই গুছিয়ে শুয়ে পড়ল মনসিজ। মনে পড়ে আশিসদার বাড়ীর কথা।কি করছে এখন মেয়েটা।ওখানেই বসে আছে নাকি বাসায় ফিরে গেছে। অবনীশবাবু অফিস থেকে ফিরে সব শুনে কি করলেন?কাল সকালে জানা যাবে।মেয়েটার জন্য কষ্ট হয়।
রাস্তায় কুকুরদের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায়, কৃষ্ণা চোখ মেলে কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করে।সম্বিত ফিরতে লজ্জিত হয়,ইস ঘুমিয়ে পড়েছিল।কুত্তা গুলো ডাকে কেন?চারপাশ চেয়ে দেখল কেউ কোথাও নেই।কৃষ্ণা দেখেছে তার শ্বশুরমশায় অফিস থেকে ফিরে আর বাড়ীর বাইরে আসেনি নি। বেচারি সিস তার জন্য খালি খালি মার খেলো।এখন কেমন আছে কে জানে। পেটের মধ্যে মোচড় অনুভব করে্তে পাশে নর্দমায় গিয়ে কাজ সেরে বোতলের জল দিয়ে শৌচ করে আবার নিজের জায়গায় এসে বসল।
ঠেলাঠেলিতে চোখ মেলে মনসিজ দেখল চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মা।চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিল।হিমানীদেবী ছেলের মাথার চুলে আঙুল বুলিয়ে দেন।আশিসদা কি করেছে মা জানে না।
মনসিজের ইচ্ছে হল একবার আশিসদার বাড়ি যাবে।মেয়েটার কোনো ফয়শলা হয়েছে কিনা, কি করছে মেয়েটা, বাড়ী চলে যায় নিতো?
স্নান করে জামা গায়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়ল।কিছুটা এগোতেই নির্মলের সঙ্গে দেখা জিজ্ঞেস করল,কোথায় যাচ্ছিস?
মনসিজ হেসে বলল,আশিসদার ওখানে।
--চল আমিও যাচ্ছি।আজকের কাগজ দেখেছিস?
--না কেন,কোনো বিশেষ খবর আছে নাকি?
--কৃষ্ণার ছবি দিয়ে খবর বেরিয়েছে।আশিসদা এটা কি করল বলতো?যুই তো খুব রেগে গেছে বলছিল এই তোমার বন্ধু?
ওরা ঘটনাস্থলে পৌছে দেখল যথারীতি ভীড় জমে গেছে।ওদের দেখে বঙ্কিম এগিয়ে এল।ভীড়ের মধ্যে কৃষ্ণা উপুড় হয়ে কাদছে।বঙ্কিম বলল,আশিসদা ভেগেছে।
ভীড় ঠেলে মনসিজ দেখল,হাতে মুখ ঢেকে অঝোরে কাদছে বলাই মিত্তির কৃষ্ণার পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন,কেদে কি করবে তুমি মা থানায় গিয়ে ডায়েরী করো।
বাড়ীর ভিতর থেকে অবনীশবাবু বেরিয়ে আসতে বোঝা গেল মুখজ্জেবাড়ীর দরজা-জানলা বন্ধ থাকলেও বাইরে কি ঘটছে সেদিকে কড়া নজর।অবনীশবাবু বললেন,বাঃ বলাইদা বেশ বললেন?এই না হলে প্রতিবেশি?
--আপনার মেয়ে হলে কি করতেন?
--এমন মেয়ে হলে গলা টিপে মারতাম,বিয়ে হল না তার আগেই--ছিঃ-ছিঃ-ছিঃ।
--ওকে দুষছেন কেন?ওকি একা-একা করেছে?নিজের ছেলের কথা তো বলছেন না?
--তাকে পেলে তো বলবো?
--আরে আপনারা কি আরম্ভ করলেন।
ভীড়ের মধ্যে থেকে কে ফুট কাটলো,রাতের অন্ধকারে ছেলেকে পাচার করে এখন তাকে পেলে তো মারানো হচ্ছে।
জনতা উত্তেজিত হচ্ছে দেখে অবনীশবাবু দ্রুত বাড়ীর মধ্যে সেধিয়ে গেলেন।
নির্মল বলল,আশিসদা এটা ঠিক করেনি।বিয়ে করবি না যখন ঐসব করা কেন?
--আশিসদা নেই কে বলল?
--বাড়ীর থেকেই বলেছে।
নির্মল বলল,ভিতরে লুকিয়ে রেখে গুল মারছে নাতো?
--সবাই বাড়ীর ভিতর গিয়ে খুজে এসেছে কোথাও নেই।
--তাহলে সত্যি পালিয়েছে।
বঙ্কিম বলল,আমার মনে হয় কোনো আত্মীয়ের বাড়ী শেল্টার নিয়েছে।
পুলিশ ভ্যান আসতে দেখে সবাই তটস্থ হয়।পুলিশ কেন?তাহলে অবনীশবাবুর কাজ এরকম ফিস ফাস কথা চলতে থাকে।পুলিশ ভ্যান থেকে একজন অফিসার নেমে বলল,বাড়ীর সামনে অযথা ভীড় করবেন না যান যান।
বলাই মিত্তির এগিয়ে গিয়ে বললেন,স্যার এই মেয়েটী একটা ডায়েরী করতে চায়।
--থানায় আসুন,আমি কি কাগজ পত্তর নিয়ে ঘুরে বেড়াই?
--আপনার ভ্যানে উঠবো?
অফিসার একবার আপাদ মস্তক দেখে বললেন,আপনি কে?
--আমি এই পাড়াতেই থাকি,আমার নাম বলাই মিত্র।অবসর প্রাপ্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার--
--ঠিক আছে ঠিক আছে উঠুন।
বলাই মিত্তির কৃষ্ণাকে নিয়ে ভ্যানে উঠে বসলেন।এক রাশ ধোয়া ছেড়ে ভ্যান চলে গেল।
মনসিজ জিজ্ঞেস করল,ঐ ভদ্রলোক কে রে?
--কানুদার জ্যাঠা।খুব ভাল লোক।বঙ্কিম বলল।
এত ভীড়ের মধ্যে এরকম এক-আধজন আছে বলেই সমাজটা টিকে আছে।মনসিজ আশিসদার বাড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখল উপর নীচ সব জানলা বন্ধ।এইভাবে পালিয়ে পার পাওয়া যাবে?মেয়েটি ঐ অবস্থায় কি করবে এখন?প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে বাড়ীর দিকে পা বাড়ায়।