03-11-2021, 03:26 PM
(This post was last modified: 30-01-2022, 02:34 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
।।৫৭।।
পেনশনের টাকা জমা পড়েছে মেসেজ এল।বেলির ফোনে বেশ কাজ হচ্ছে।আগের মত ব্যাঙ্কে গিয়ে খবর নিতে হয়না।মাকে নিয়ে ব্যাঙ্কে যেতে হবে।বেলিটা খুব মুডি কখন যে কার প্রতি দয়া হয় ভগবানেরও সাধ্য নেই বলে।মজা করতে ভালবাসে।মনসিজ ডায়েরী রেখে প্রস্তুত হতে থাকে। হিমানী দেবী স্নান সেরে প্রস্তুত দশটা বাজলে বেরোবেন।
ব্যাঙ্কে লাইন পড়ে গেছে।মাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে মনসিজ লাইনে দাড়ায়।ধীর গতিতে এগোতে থাকে লাইন।কাউণ্টারের লোকটার ভাব দেখে মনে হয় ওর বাপের টাকা দিচ্ছে।এই কাজ করে মাসান্তে তুই মাইনে পাস কে বোঝাবে ওকে।হিমানী মজুমদারের ডাক পড়তে মাকে ডেকে নিল।টাকা গুণে পঞ্চাশ টাকা নিজের কাছে রেখে বাকী টাকা মায়ের হাতে দিয়ে ওরা ব্যাঙ্ক হতে বেরিয়ে পড়ল।বাড়ীর কাছাকাছি গিয়ে মনসিজ বলল,তুমি যাও আমি বাজার করে আসছি।
--মাছ আনিস।হিমানীদেবী বললেন।
মনসিজ বাজারের দিকে হাটতে থাকে।বেলি এখন মনে হয় কলকাতায়।তাকে নিয়ে মজা করে মনদিজের সেজন্য রাগ করেনা।মা ঠিকই বলে মেয়েটা তোর কোনো ক্ষতি করবে না।বেলির সঙ্গে আবার যোগাযোগ হবার পর তার জীবনে একটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।
--কোথায় চললেন বাজারে যাচ্ছেন মনে হচ্ছে?
মনসিজ তাকিয়ে দেখল কল্পনা হেসে বলল, আপনার লনুমান যথার্থ্য বাজারে যাচ্ছি,আপনি?
--আমিও।আপনার খবর শুনেছি কংগ্রাচুলেশন।
--ধন্যবাদ।
--আপনার গার্লফ্রেণ্ড খুব খুশি হয়েছে নিশ্চয়ই?
বেলিকে গার্লফ্রেণ্ড ভেবেছে মনসিজ হেসে বলল,এবারের অনুমান মেলেনি।
--কেন খুশি হয়নি?
--এই ব্যাপারে আমি অকৃতকার্য আমার কোনো গার্লফ্রেণ্ড নেই।
--বেশ কথা বলেন আপনি।এবার কি এমএসসি?
কি বলবে মনসিজ ভেবে বলল,এখনো স্থির করিনি।
--বঙ্কিমও এরকম ইন্ডিসিশনে ভোগে।কি করবেন একটা ফার্ম ডিসিশন নিয়ে নিন।
তার সিদ্ধান্ত নেবার লোক আছে সে মোটেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে না মনসিজের মনে পড়ল বেলির কথা।বাবার জায়গায় চাকরি না করা কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় বসা সবই বেলির সিদ্ধান্তে হচ্ছে কল্পনাকে এসব কথা বলা যায় না।বাজারের কাছে এসে গেছে।
বাজারে কে যেন আড়ালে সরে গেল মনে হল বঙ্কা।কাবাব মে হাড্ডি হতে চায় না মনসিজ বলল,আমি মাছের বাজারের দিকে যাচ্ছি।
একটা ছেলের সঙ্গে একটা মেয়েকে দেখলেই গভীরে না গিয়ে সকলেই ধরে নেয় একটা সম্পর্ক।বেশ কৌতুককর মনে হয়।চিংড়ি আর পার্শে দুরকমের মাছ কিনলো। যে মাছ খায় না কেবল তার জন্য মাছ রান্না করবে ভেবে মনটা বিষণ্ণ হয়।বাজারে আসার সময় মা-ই বলল,মাছ নিয়ে আসিস।তালুর পিছন দিয়ে চোখ মুছলো।ভগবান মেয়েদের কোন ধাতু দিয়ে গড়েছে এ এক বিস্ময়।আচার বিধি-নিয়ম অবশ্য সমাজের গড়া।পুরুষরা চাপিয়ে দিয়েছে বললে হবে সরলীকরণ।কারো যদি গ্রহন ক্ষমতা না থাকে চাপিয়ে দিলেই হবে।
বঙ্কিমের কাছে গিয়ে হাসতে হাসতে কল্পনা বলল,তুমি নিজেকে বেশী চালাক মনে করো?
--কেন চালাকির কি করলাম?
--মনসিজ তোমাকে দেখেছে।
--দেখল তো কি হয়েছে?মনা কিছু মনে করবে না।তোমার সঙ্গে কি কথা হচ্ছিল?
--জিজ্ঞেস করলাম এমএসসি পড়বে কি না,বলল কিছু ঠিক করেনি।
--মেশোমশায় মারা যাবার পর ওর উপর খুব চাপ।জানো কোনা আশিসদার ব্যাপারটা নিয়ে কিছু একটা কেলো হবে।
--হোক কেলো তুমি ওসব ব্যাপারে জড়াতে যাবে না।
বাড়ি ফিরে মাকে বাজারের থলে দিয়ে মনসিজ বলল,মা তোমাকে একটা কথা বলব?
--এখন আমার সময় নেই অনেক কাজ পড়ে আছে।কটা বাজে দেখেছিস?
বাজারের থলে নিয়ে হিমানী দেবী চলে গেলেন।মনসিজ নিজের ঘরে এসে জামা খুলে পাখা চালিয়ে দিল।বেলি মনে কলকাতায় ফিরে এসেছে।ফোন করতে বলেছিল বেলির মুখটা মনে পড়ল।
এখন ক্লাস নেই প্রজ্ঞা বেরিয়ে বাথরুমে গেল।মন্দাটা ঝামেলায় পড়েছে।ছেলেটাকে দেখে তারও ভালো লাগেনি।এইসব অভিনয় করা ছেলেদের প্রজ্ঞার ভাল লাগে না।
মোবাইল বাজতে স্ক্রিনে নাম দেখে অবাক কানে লাগিয়ে বলল,বল কি ব্যাপার?
--এমনি।
--এমনি-এমনি কেউ ফোন করেনা।সচেতনে অথবা অবচেতনে কোনো না কোনো কারণ থাকতেই হবে।
--তা হলে রেখে দিচ্ছি।
--না না রাখবি না।বল।
--বললাম না আমার কিছু বলার নেই।
--সারাদিন কি কি করলি?
--ঘুম থেকে উঠে চা খেলাম ডায়েরী লিখলাম তারপর বাজার গেলাম জানো বেলি একটা মজার কথা--।
--কি মজার কথা?
--না কিছু না।
--এই জন্য তো রাগ হয়।
--তুমি রাগ করবে--।
--না বললে রাগ করবো।
-- না মানে অনেকে উল্টোপাল্টা ভাবে।
--কি ভাবে?
--সেই তাল্পুকুর থেকে তোমার সঙ্গে আমাদের চেনা না?
প্রজ্ঞা বুঝতে পারে আসল কথা এড়িয়ে যাচ্ছে বলল,তা কি হয়েছে?
--তোমাকে আমাকে এক সঙ্গে দেখছে তাই।
--তাতে কি হয়েছে?
--আজ অনেক্ষন কথা বললাম রাখি?
--না রাখবি না।লোকে কি ভাবে বল।
--কি আবার ভাবে তুমি আমার গার্লফ্রেণ্ড।
প্রজ্ঞা খিল খিল করে হেসে উঠল,মনসিজ স্বস্তি বোধ করে বেলি রাগ করেনি।প্রজ্ঞা ভাবে এই ছেলেটা মারপিট করে বেড়াতো তাল্পুকুরে।ভয়ডর ছিল না।বলল,তুই বলবি হ্যা আমার গার্ল ফ্রেণ্ড।
--শোনো বেলি তুমি আমাকে যত বোকা ভাবো আমি তত বোকা নই।
--তুই বোকা কেন হবি তুই একটা গাধা।
মনসিজের মনে হল ফোন করেই ভুল করেছে।সাড়া না পেয়ে প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করল,কিরে রাগ করেছিস?
--রাগ করব কেন তুমি তো এরকম কতই বল।
--মামণি তোকে এরকম বলে না?
--জানি না রাখছি।ফোন কেটে দিল।
ফুরফুরে মেজাজটাই নষ্ট করে দিল।তার দোষও কম নয় ও কথা কেন বলতে গেল।আসলে কথাটা ফস করে বেরিয়ে গেছে।মা খেতে ডাকছে মনসিজ হাত মুখ ধুয়ে খেতে গেল।আসনে বসতে হিমানীদেবী বললেন,তোর কি একটু বুদ্ধি হবে না?
--না আমি গাধা।মনসিজ রাগ করে বলল।
--আলু পেপে বেগুণ এনেছিস বুদ্ধি করে লাউ কিম্বা কুমড়ো আনবি তো চিংড়ি মাছ এনেছিস যখন।
মনসিজ বুঝতে পারে মা কি বলতে চাইছে।সামঞ্জস্য রেখে বাজার করতে হবে। সর্ষে দিয়ে পার্শে মাছের ঝাল করেছে মা। মনসিজ চুপচাপ খেতে থাকে।হিমানী দেবী বললেন,তুই কি বলবি বলছিলিস?
মনসিজ চিন্তা করতে মনে পড়ে গেল।একবার ভাবে এখন বলা ঠিক হবে কিনা।স্থির করল পরে বলবে।