01-11-2021, 09:34 PM
(This post was last modified: 29-01-2022, 08:49 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৫৬।।
মনসিজ বাসায় ফিরে ডায়েরী নিয়ে বসল।ভাগ্যিস বেলি দেখেনি ডায়েরী খুলে মনে মনে ভাবে।
আজ ফর্ম ফিলআপ করে দিলাম জানি না কি হবে।বেলি খুব সুন্দর কথা বলে।যারা পাস করে তারা ফেল করাদের চেয়ে বেশি যোগ্য তা সব সময় বলা যায় না।পরীক্ষা কিছুটা ভাগ্য পরীক্ষার মত।বেলির এমনি সব ভাল কিন্তু এমন খবরদারি করে ভাল লাগে না।যাবার সময় বারবার বলছিল ফোন করিস।তালপুকুরের কথা মনে পড়ল।অনেক পুরানো আমলের বারী বেলিদের।শুনেছি ওর পূর্বপুরুষোরা অঞ্চলের জমিদার ছিল।ওদের দুটো গাড়ী একটা ওর বাবা ব্যবহার করে আরেকটা বাড়ির কাজে ব্যবহৃত হতো।পালপাড়া জেআর এস কলেজে পড়তো,গাড়ীতে করে কলেজে যেতো আসতো।পরে ঐ গাড়ীটা প্রদোষদা ব্যবহার করতো। এত বড় লোক কিন্তু কোনো অহঙ্কার নেই।উকিলবাবুর মেয়ে সবাই ওদের সমীহ করে চলতো কিন্তু ওর মধ্যে সেরকম কোনো ভাব নেই।আমাদের বাসায় যেতো মায়ের সঙ্গে খুব ভাব।আমার সঙ্গে কোনো কথা হতোনা।কোথায় মারামারি করলাম সব খবর মাকে গিয়ে লাগাতো।
তখন নাইন কি টেনে পড়ে একদিন রাস্তায় মুখোমুখি হতে পাস কাটিয়ে চলে যাচ্ছে ও বলল,কিরে দেখতে পাসনি মনে হচ্ছে?
এত বড়লোক আবার সুন্দরী তুই-তোকারি করতে সংকোচ হল বললাম, তুমি কিছু বলবে?
--সারাদিন মস্তানি করে বেড়াস বাপ-মার সম্মানের কথা ভাববি না?
--মস্তানি করি তুমি দেখেছো?
--তুই বাসুদেবকে মারিস নি?
--তোমাকে কে বলল?
--যেই ব্লুক তুই মেরেছিস কিনা বল?
--বাসু কি করেছে তুমি জানো?তুমি রঞ্জনাকে জিজ্ঞেস কোরো।
--তুই কে?তুই কি রঞ্জনার গার্ডিয়ান?
--তুমি কি আমার গার্ডিয়ান?
বেলি খিল খিল করে হাসতে থাকে।এই আমাদের প্রথম কথা বলা।আগ বাড়িয়ে আমি কোনোদিন কথা বলতে যাইনি।মগডালের ফুল দূর থেকে দেখতে ভালো লাগে ধরতে গেলে ডাল ভেঙ্গে প্রপাত ধরণীতল। এসব চিন্তাকে কখনো প্রশ্রয় দিইনি।
মোবাইল বাজতে স্ক্রিনে প্রজ্ঞার নাম দেখে মনসিজ ডায়েরী বন্ধ করে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?
বেলিটা সেই আগের মতই রয়ে গেছে।
--মামণিকে বলবি আমি ভাল্ভাবে পৌছে গেছি।
--এইমাত্র তোমার কথা ভাবছিলাম।
--তুই ভেবেই যা,ফোন করে খবর নিতে পারিস তো।হ্যা শোন সরকারী কোনো চিঠি আসলে আমাকে খবর দিবি।
--তুমি কবে আসবে?
--কেন দেখতে ইচ্ছে করছে?
--ধ্যেৎ আমি কি আমাদের বাড়ীতে আসতে বলেছি?
খিল খিল হাসি শুনতে পেলাম,হাসি থামলে বলল,ড্রাইভার হর্ণ বাজাচ্ছে পরে কথা বলব।
ফোন কেটে দিল।ওকে নিতে স্টেশনে গাড়ী এসেছে বুঝলাম।অনেক বেলা হল মা উঠে পড়েছে।রান্না ঘরে শব্দ পাচ্ছি।মাকে গিয়ে বললাম,বেলি ফোন করেছিল ভালভাবে পৌছে গিয়েছে।
--মেয়েটা আর জন্মে আমার মেয়ে ছিল।
মেয়ে ছিল তবু ভাল স্বপ্নের ঘোর কেটেছে।মনসিজ মায়ের ঘরে গিয়ে জানলার ধারে গিয়ে দাড়ায়।পাস করে কে কি করবে আজ রকে গেলে জানা যাবে।আশিসদার ব্যাপারটা কতদূর কি হল কে জানে।বঙ্কিমকে কল্পনা বলেছে খালি খালি কোনো মেয়ে কাউকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে পারেনা।শৈবালের সঙ্গে তারপর আর দেখা হয়নি।
হিমানীদেবী চা নিয়ে ঢুকে বললেন,ঠাকুর-পোকে খবরটা দেওয়া উচিত ছিল।
-- কি করে দেব আমি কি ফোন নম্বর জানি?
--ঠকুর-পো না থাকলে এত তাড়াতাড়ি পেনশন হতো না।
--আমি তো গেছিলাম।তোমার বেলির জন্যই তো দেখা হলনা।
--একদিন গিয়ে গেখা করে আয়।
বাড়ীর কাছে এসে অবাক হল মণিকুন্তলা এখনো এসে পৌছায়নি। বেল বাজাতে দরজা খুললো নৃপেন।
--একী তুমি এসে গেছো?
--তুমি নাকি চৌকিটা ওদের দিয়ে দিয়েছো?এত করে বললাম কিছুতেই চৌকিটা নামালো না।
--কেন চৌকি তোমার কোন কামে লাগবে?চৌকি কোথায় রাখবো?
--তুমি আমাকে বলবে তো।এসো ভিতরে এসো।তোমার এত দেরী হল?
ট্রেন দেরী করেছে আমি কি করবো।
পাখা চালিয়ে দিয়ে খাটে উঠে বসলো।ইচ্ছে হয়েছিল বারাকপুর লোকাল ছেড়ে দিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলবে।সঙ্গে মেয়েটাকে দেখে বারাকপুর লোকালে উঠে পড়েছে।ওর হাতে মোবাইল ছিল এখন মনে হচ্ছে নম্বরটা নিয়ে আসলে ভাল হতো।নৃপেনকে আলমারির চাবি এগিয়ে দিয়ে বলল,এই আলমারিটা খোলো তো।জিনিস পত্তর সব উল্টেপাল্টে গেছে কিনা দেখি।
নৃপেন আলমারি খুলতে এক রাশ জিনিসপত্র বাইরে ঝপঝপিয়ে পড়ল।
মণিকুন্তলা খাট থেকে নেমে বলল,কি ভাবে খোলো?
মাটতে বসে শাড়ীগুলো গোছাতে থাকে।বাঘ রক্তের স্বাদ পেলে ঘুরে ফিরে আসে।কাছেই থাকে একবার এলোনা।এ কেমন পুরুষমানুষ।
প্লাটফর্মে কি করছিল,ট্রেনে তো উঠল না।বারাকপুর তিন নম্বরে আসবে ওরা কি শোনেনি?
কমলার ঘুম ভেঙ্গে গেলেও শুয়ে শুয়ে মেয়ের কথা ভাবে।কিযে করছে মেয়েটা জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলে না।মনে হচ্ছে খুকি এল।
কমলা জিজ্ঞেস করে,কিরে খুকী তুই বলেছিলি?
--কি বলবো?খালি ধানাই-পানাই।ভাবছি ওর বাড়ী গিয়ে সব কথা খুলে বলব।তাতে কাজ না হলে থানায় যাবো।
--তোকে আগেই বলেছিলাম এসব ধারে বাকীতে হয়না।
--তুমি থামো তো।যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বলতে এসো না।ধার বাকীর কথা আসছে কেন?আমি কি পয়সা নিয়ে করাতে গেছি?