Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।৫৫।।


মণিকুন্তলা স্টেশনে পৌছাতে শুনতে পেল শান্তিপুর লোকাল দু-নম্বরে আসছে।ওভার ব্রিজ হতে নামতে দেখল ট্রেন ঢূকছে।প্লাট ফরমে নেমে নৃপেন বলল,আমার তো টিকিট কাটা হয়নি।
--ঠিক আছে ধরলে ফাইন দিয়ে দেবো।তুমি ওঠো।
ওরা ভিতরে গেলনা ফুটবোর্ডে দাঁড়িয়ে থাকে।মণিকুন্তলা মোবাইল বের করে বাটন টিপে কানে লাগায়।আপনার সঙ্গে কথা হয়েছিল দিদিমণি...বুঝতে পেরেছেন...আপনি গাড়ি পাঠিয়ে দিন...আধঘণ্টা পর...বারাকপুর স্টেশনের কাছেই...।মাল তুলতে হবে...একটা আলমারি আর টুকটাক কিছু... হ্যা-হ্যা..আচ্ছা রাখছি।
ডাক্তারবাবু বলেছেন একটু হাটাহাটি করতে এলিনা ঘরের মধ্যে পায়চারী করে।কাজের মেয়েটা টিভিতে এটে আছে।কি যে চাইপাশ দেখে বোকা-বোকা সিরিয়াল সব।মনসিজ ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে শুনে ভালো লাগে।বাবা মারা গেল তারপর এত অভাব তার মধ্যেও ছেলেটার এই সাফল্য প্রশংসার যোগ্য।অনেক চেষ্টা করেছে ওকে একটু সাহায্য করার নানা অজুহাতে ঠেলে দিয়েছে।প্রথমে মনে হয়েছিল অহঙ্কার পরে বুঝেছে অহঙ্কার নয় আত্মমর্যাদাবোধ।খারাপ লাগে শেষ দিকে ওর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা হয়নি।কিন্তু তার কোনো উপায় ছিল না।সমাজে মেয়েদের অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে।
দরজা খুললো প্রজ্ঞা।মনসিজ হা-করে তাকিয়ে থাকে।
--কিরে ভুত দেখলি নাকি?
মনসিজ মনে মনে ভবে ভুত নয় পেত্নী।বলার সাহস হয়না বলল,ভুত পুং লিঙ্গ।
--তাহলে পেত্নী।খিল খিল হেসে উঠল প্রজ্ঞা।
হাসলে কি সুন্দর লাগে বিশেষ করে ওর গজ দাত।কেন যে এমন গম্ভীরভাবে থাকে।

মনসিজ ভিতরে ঢুকে বুঝতে পারে মা রান্না ঘরে।সোজা নিজের ঘরে চলে গেল।প্রজ্ঞা পিছন পিছন গিয়ে বলল,তোর খুব অহঙ্কার।
--অহঙ্কারের কি হল।
--পাস করলি খবরটা দিলি না।
--তুমি ফোন করলে বলতাম।
--তোর ফোন করতে কি হয়েছিল?আমার সঙ্গে কথা বলতে তোর ইচ্ছে হয়না?
--ইচ্ছে হবে না কেন?তুমি কি বলবে ভেবে করিনা।

প্রজ্ঞা ব্যাগ থেকে একটা ফরম বের করে দিয়ে বলল,এটা ভাল করে ফিল আপ কর।ফরমটা নিয়ে মনসিজ বলল,কিছু মনে কোরনা।আমার ভুল হয়ে গেছে।তুমি ফোন করে খালি বলো মামণিকে দে।আমার সঙ্গে তুমি কথা বলেছো?  
--ঠিক আছে ভাল করে পড়ে ফিল আপ কর।কাটাকুটি যেন নাহয়।
মনসিজ সামনে রাখা ডায়েরীটা দ্রুত বালিশের নীচে চালান করে দিল।আবার লজ্জা আছে, প্রজ্ঞার নজর এড়ায় না মনে মনে হাসে।
কলম নিয়ে মনসিজ ফর্ম টা পূরণ করতে থাকে।প্রজ্ঞা দেখে আর ভাবে যা বলি তাই করে।কথার অবাধ্য হয় না কখনো।কেলো বিশুর মতো নটোরিয়াস ছেলেদের সঙ্গে মিশতো।তার দিকে কখনো অন্য নজর তুলে দেখেনি।ডায়েরীতে লিখেছে অনেক কথা কিন্তু চোখে মুখে তার কোনো আভাস দেখেনি।প্রজ্ঞা নিশ্চিত বেলিকে ভালবাসে অনেকটা ফল্গুধারার মতো।ভিতরে ভিতরে ক্ষতবিক্ষত হবে কিন্তু মুখ ফুটে কোনোদিন বলবে না। 
মণিকুন্তলা নেসলসে পৌছে দেখল একটা ম্যাটাডোর দাঁড়িয়ে আছে।ড্রাইভারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,দে ট্রাভেল?
--হ্যা আপনি দিদিমণি?
--মাল তুলতে হবে আসুন।
মণিকুন্তলা ভিতরে গিয়ে দেখল দরজায় তালা ঝুলছে।সবিতা বেরিয়ে গেছে,দেখা হলনা।তালা খুলে ভিতরে ঢুকে বলল, আলমারির জিনিসপত্র বের করতে হবে?
--সেটা আপনি দেখুন।
--ঠিক আছে সাবধানে বের করুন।
দুজন খালাসি মালপত্তর বের করতে থাকে।মণিকুন্তলা দোতলায় উঠে গেল।
ল্যাণ্ডলেডির সঙ্গে কথা বলে নীচে এসে দেখল মালপত্তর সব তোলা হয়ে গেছে,চৌকিটা পড়ে আছে।
--দিদিমণি এটা আপনার?
--হ্যা আমার।এটা নিতে হবে না।
একজন খালাসি বলল,আমি নেবো?
--নেও।আমার দরকার নেই।
খালাসিটা চৌকিটা তুলে নিল ম্যাটাডোরে।
নৃপেনকে বলল,তুমি সামনে বোসো।
--তুমি?
--আমি ট্রেনে চলে যাব।
--তুমি বোসো আমি বরং উপরে গিয়ে বসছি।
--না খালাসিদের সঙ্গে বসতে হবে না,ড্রাইভারের পাশে বোসো।
ম্যাটাডোর চলে যেতে মণিকুন্তলা দরজা বন্ধ করে দোতলায় চাবি দিতে গেল।
ফর্ম ফিলআপ হয়ে গেলে প্রজ্ঞা নিয়ে একটা ব্রাউন রঙের খামে ভরে নিজের ব্যাগে ভরে রেখে বলল,আমার কাজ শেষ এবার মন দিয়ে পড়াশুনা কর।
হিমানী দেবী চা নিয়ে আসতে প্রজ্ঞা বলল,মামণি চা খেয়ে আমি উঠবো।দরকার হলে আমাকে ফোন করবে।
হিমানীদেবী বললেন,মনু ওকে পৌছে দিয়ে আয়।
নীচে নেমে মনসিজ বলল,অটোয় যাবে তো?
--তুই রিক্সা বল,ঘেষাঘেষি করে ভাল লাগে না।
একটা রিক্সায় উঠে প্রজ্ঞা বলল,ওঠ।
মনসিজ সন্তর্পনে রিক্সায় উঠে যতদূর সম্ভব গা বাচিয়ে বসল।রিক্সা চলতে শুরু করে।প্রজ্ঞা বলল,অমন কুকড়ে বিসেছিস কেন,সরে আয়।
--কোথায় সরবো জায়গা আছে?
প্রজ্ঞা দেখল সেই প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা নিয়ে বসেছে।হেসে বলল,আরাম করে বোস।
বেলির সঙ্গে গায়ে গা লেগে আছে।আজ ফর্ম ফিল আপ করল বেলি তার জন্য অনেক করেছে।জানি না কি হবে মনসিজের মাথায় চিন্তাটা চেপে বসে আছে।
--কি ভাবছিস বলতো?
--না কিছু না।
--দেখছি ভাবছিস,না কিছু না।
--ভাবছি তুমি এত করলে আমি পারব তো?
--আবার নেগেটিভ কথা।শোন তোকে একটা কথা বলি,যারা পাস করে তারা যারা ফেল করে তদের সবার থেকে বেটার আমি মনে করিনা।এ আবার কি কথা,মনসিজ কিছু বলে না।
--নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন আসে।কিন্তু জ্ঞান ভাণ্ডার বিশাল তার সীমা পরিসীমা নেই।একজন অনেক জানে কিন্তু যে কটি প্রশ্ন এসেছে সেগুলো হয়তো তার আয়ত্ত্বে নেই।আর একজন তার চেয়ে কম জানলেও প্রশ্নগুলো তার কমন পড়ে যায় এবং পাস করে গেল।কি বুঝলি?
মনসিজ এভাবে আগে ভাবেনি।
প্রজ্ঞা বলতে থাকে,আরও সহজভাবে বলছি।রাম পৃথিবীর বহু দেশ সম্পর্কে জানে আয়ার ল্যাণ্ড পোল্যাণ্ড হল্যাণ্ড সম্পর্কে ভাল জানা নেই।আর শ্যাম অত জানে না প্রশ্নগুলো এলো আয়ারল্যাণ্ড নেদার ল্যাণ্ড থেকে শ্যামের এগুলো জানা ছিল।
--বেলি তুমি শিক্ষকতা পেশায় অনেক উন্নতি করবে।
--বেলির কথা থাক এখন নিজের কথা ভাব।আচ্ছা মস্তান তোর তালপুকুরের কথা আর মনে পড়েনা?
--তাল্পুকুরে সূর্যের আলোর সঙ্গে আমার পরিচয় তাল্পুকুরকে ভোলা যায়।তবে মনে করতে চাই না মন খারাপ হয়ে যায়।
--বেশ মেয়ে পটানো কথা শিখেছিস।
ধীরে ধীরে সহজ হচ্ছিল আবার আড়ষ্ট বোধ করে মনসিজ।যা মুখে আসে বলে বেলি।
দমদম পৌছে প্রজ্ঞা টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়ায় মনসিজ বলল,তুমি আমাকে দাও আমি টিকিট কাটছি।প্রজ্ঞার ভাল লাগে টাকা দিয়ে লাইন হতে সরে দাড়ালো।টিকিট কেটে সিড়ি বেয়ে ওরা প্লাটফর্মে উঠে এল।
ট্রেন এক নম্বরে কিম্বা তিন নম্বরে দিতে পারে সেজন্য মণিকুন্তলা ওভার ব্রিজে উঠে দেখছিল ট্রেন কত নম্বরে দেয়।প্লাট ফর্মে ভীড় বাড়তে থাকে।কি দেখে মণিকুন্তলার ভ্রু কুচকে যায়,ঠিক দেখছে তো?মনসিজ না?হ্যা মনসিজই তো।শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। মাইকে ঘোষণা হল বারাকপুর লোকাল তিন নম্বরে আসছে।মণিকুন্তলা কি করবে দ্বিধায় পড়ে যায়।ওর সঙ্গে একটা মেয়েকে দেখে মণিকুন্তলা তিন নম্বর প্লাটফর্মের দিকে নামতে থাকে।মেয়েটি বেশ সুন্দরী মনসিজের গার্লফ্রেণ্ড নয়তো? 
ট্রেন তিন নম্বরে ঢুকছে মণিকুন্তলা পিছন ফিরে এক নম্বরে দাঁড়ানো মনসিজকে দেখতে থাকে। চেহারা আরো সুন্দর হয়েছে।প্রেমে পড়লে চেহারা খোলতাই হয়।ট্রেনে উঠে পড়ল মণিকুন্তলা।    

     
[+] 17 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 31-10-2021, 08:45 PM



Users browsing this thread: 41 Guest(s)