Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।৫২।।



কানে মোবাইল লাগিয়ে হনহন করে হাটতে হাটতে আসছে নৃপেন।মণিকুন্তলার ঠোট বেকে যায় বিরক্তিতে।নৃপেনের গায়ের রঙ পরিস্কার দেখতে শুনতে খারাপ নয় ঐটা কেমন হবে কে জানে।কাছে আসতে মণিকুন্তলা বলল,কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি কার সঙ্গে এত বকবক করছো?
নৃপেন হাত দিয়ে ফোন চেপে বলল,রমন।
--রাজি হয়েছে?
নৃপেন ইশারায় চুপ করতে বলল।ফোন শেষ হতে রিক্সা ডেকে মণিকুন্তলাকে উঠতে বলল।
--তোমার বাড়ি অনেক দূর?
--না না আমি তো হেটেই এলাম।তোমার জন্য রিক্সা বললাম।
রকে সবাই আছে কিন্তু চুপচাপ।মনসিজ বলল,কি ব্যাপার?
বঙ্কিম বলল,শৈবালের এক সাব্জেক্টে ব্যাক।তুই ফার্স্ট ক্লাস পাবি জানতাম।
--সায়েন্সে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া কঠিণ নয়।শুভ বলল।
মনসিজ কোনো কথা বলে না।রকের একপাশে চুপচাপ বসে শৈবাল।মনসিজ উঠে ওর পাশে গিয়ে বসল।শৈবাল ওর দিকে তাকিয়ে শুষ্ক হাসে।মনসিজ বলল,একটা তো সাবজেক্ট।তুই ভাবিস না আমি তোকে সান্ত্বনা দিচ্ছি।
--তোকে আমি জানি মনা।এক সাবজেক্টের জন্য নয়।শালা আবার সেই একবছর পরে পরীক্ষা।
--ঠিকই একটা বছর পিছিয়ে যাওয়া।
রিক্সা চলেছে,পাশাপাশি বসে নৃপেনবাবু আর মণিকুন্তলা।মণিকুন্তলা জিজ্ঞেস করে,কি বলছিল?
--অনেক ধানাও-পানাই।দরকষাকষি।আমি বললাম অনেক কষ্টে একলাখ জোগাড় করতে পারব...ও বলল আপনার বোনকে বলুন।
--বোন আবার কে?
নৃপেন হেসে বলল,আমি বলেছি তুমি আমার সম্পর্কে বোন।বলেছি ও এক পয়সা দেবে না,আমি লুকিয়ে টাকাটা দেব।
--রাজি হয়েছে?
--হয়নি তবে হয়ে যাবে মনে হল।
--আচ্ছা নেপু আমি কালো সেজন্য তোমার মনে খুতখুতানি নেই তো?
নৃপেন কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,কালো জগতের আলো।
জগতের আলো।মনে মনে হাসে মণিকুন্তলা।ছেলেরা নিজেদের খুব চালাক মনে করে।মেয়েগুলোও তেমনি একটু তোয়াজ তোষামোদ করেছে কি মেলে দিল। ওইসব পেরেম পীরিতে মণিকুন্তলার বিশ্বাস নেই।নিজে চাকরি করে কারো উপর নির্ভরশীল নয়।তুমি সার্ভিস দেবে বিনিময়ে আমিও সার্ভিস দেব।কোমরে আঙুলের চাপ অনুভব করে। নৃপেনের সাইজ কেমন হবে দেখার জন্য একটু অস্থির বোধ করে।
একতলা বাড়ীর কাছে রিক্সা থামে।নৃপেন এগিয়ে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়তে এক মহিলা দরজা খুলে দিল।মণিকুন্তলার কপালে ভাজ এর কথা তো বলেনি নেপু।বয়স বেশি না।মণিকুন্তলা নৃপেনের পিছন পিছন ঢুকলো।নৃপেন জিজ্ঞেস করল,দীপা কই?
--টিভি দেখতিছে।খালি এদিক ওদিক ঘুরায় নিজিও দেখবে না আমারেও দেখতি দেবে না।
--শোন লীলা তুই বাড়ী চলে যা।
--রান্না হয়নি তো।
--রান্না করতে হবে না।বাইরে থেকে খাবার আনবো।
লীলা চলে যেতে বলল,চলো মণি তোমার মেয়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। 
--আমার মেয়ের সঙ্গে তোমাকে আলাপ করাতে হবে না।
মণির এই কথাটা নৃপেনের ভাল লাগে।ঘরে ঢূকে দেখল একটি বাচ্চা রিমোট চালিয়ে টিভি দেখছে।ওদের দেখে মেয়েটি অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালো।
--তোমাকে বলেছিলাম মা এনে দেবো,এই তোমার মা।
বিহবল চোখে মেয়েটী মণিকুন্তলার আপাদ মস্তক দেখতে থাকে।মণিকুন্তলা জিজ্ঞেস করল,তোমার নাম কি?
মেয়েটি বাবার দিকে তাকাতে নৃপেন বলল,বলো মা তোমার নাম বলো।
--সুদীপা চক্রবর্তী।
--কোন ক্লাসে পড়ো?পাশে বসে জিজ্ঞেস করল মনিকুন্তলা।
--ফোর।
দীপাকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু খেলো মণিকুন্তলা।নৃপেনকে বলল,তুমি কোথায় যাবে বলছিলে যাও।
--দাদা-বৌদির বিরিয়ানি আনি?
--যা ইচ্ছে।এখন যাও সোনামণির সঙ্গে গল্প করি।
নৃপেন বেরিয়ে গেল।ব্যাপারটা এত সহজে মিটবে আশা করেনি,এখন তাকে কতটা সহজভাবে নেবে দেখা যাক।ফেরার সময় একটা অন্তত কণ্ডোম কিনে আনবে।বলা যায় না কি হয়।
প্রতিটি মেয়ের মধ্যে সুপ্ত ভাবে থাকে মা হবার আকাঙ্খ্যা।দীপার স্পর্শে সেই আকাঙ্খ্যা অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ল।
--তুমি কাদছো কেন?
--তোমাকে কতদিন দেখিনি সোনা।চোখ মুছে বলল মণিকুন্তলা।
--কোথায় থাকো তুমি?
--এখানেই থাকবো তোমার কাছে।
মনসিজের মনে হল শৈবালের সঙ্গে একান্তে কিছু কথা বলা দরকার।শৈবালকে নিয়ে রক থেকে উঠে গেল।বঙ্কিম বলল আমি আসবো?
শৈবাল বলল,আয় না অত ঢং করিস না।
বঙ্কিমও ওদের সঙ্গে গেল।কিছুটা গিয়ে বঙ্কিমকে জিজ্ঞেস করল মনসিজ,এবার কি করবি ভেবেছিস?
--কি করব?পাস কোর্সে পাস করেছি কে আমায় ভর্তি নেবে। চাকরি-বাকরির চেষ্টা করতে হবে।
--আমিও আর পড়ব না।অন্য কিছু করার কথা ভাবছি। দ্যাখ শৈবাল আমরা কেউ তোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিনা।
--এইটা দারুন বলেছিস।বঙ্কিম বলল।
--একটা বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে।
--নির্মল পড়বে না?
--হ্যা নির্মল হয়তো ইচ্ছে করলে মাস্টারসে ভর্তি হতে পারবে।জানিনা ওকী করবে।
আশিস ভাবে শালা নতুন এসে মনাটা লিডার হয়ে গেছে।পাঁকে পড়েছি  তাই কিছু বলছি না।শুভকে বলল,ওরা উঠে গেল কেন রে?
--ছাড়ো তো আশিসদা ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে ভাবছে কিনা করেছে।
শঙ্কর বলল,মনা তো বলেনি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি।শৈবাল আপসেট তাই হয়তো ওকে বোঝাচ্ছে।
--এখানে বসে বোঝাতে পারতো।আশিস বলল।
--সবার মধ্যে বলা আর প্রাইভেটলি বলার মধ্যে ফ্যারাক আছে।
--কি ব্যাপার বলতো শঙ্কর তুই দেখছি মনার ফ্যান হয়ে উঠেছিস।
--যা সত্যি তাই বললাম এর মধ্যে ফ্যান বা হাতপাখার কি হল?
অন্যরা হো-হো করে হেসে উঠতে কথা আর এগোতে পারে না।
এলিনা আধ শোয়া হয়ে পেটে হাত বোলায়।তাতাই বাইরে আড্ডা দেয়না সোজা বাসায় ফিরে আসে।আজ একটু দেরী হচ্ছে ভাবতে না ভাবতে কলিং বেল বেজে উঠল।এলিনা বলল,দরজা খুলে দেও।
পূর্ণেন্দু ঢুকতে এলিনা বলল,আজ দেরী করলে,অফিসে কাজ ছিল?
--না ফিরেছি আগেই।আজ রেজাল্ট বেরিয়েছে খবর নিচ্ছিলাম।
--হ্যা আজ তো বিএ বিএসসির রেজাল্ট বেরোবার কথা।ঘরে বসে বসে কোনো খবরই পাইনা।
--তোমার ইয়াং বন্ধুরা সব পাস করেছে খালি--।
--খালি?
--শৈবাল আছেনা ওর এক সাবজেক্টে ব্যাক হয়ে গেছে।
--আবার নেক্সট ইয়ার।
--শান্তনীড়ের ছেলেটা যার বাবা মারা গেল ও ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে।
এলিনা নিজের পেটে হাত বোলাতে বোলাতে ভাবে এটাও তাহলে লেখা পড়ায় ভাল হবে।পূর্ণেন্দু জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছো?
--মনসিজের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা যায় ছেলেটা বেশ মেধাবী।একটু শাই টাইপ বলে বোকা-বোকা মনে হতে পারে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 28-10-2021, 12:16 PM



Users browsing this thread: 39 Guest(s)