24-10-2021, 11:28 PM
(This post was last modified: 21-01-2022, 03:10 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৪৯।।
মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী প্রজ্ঞা চৌধুরী ট্যাক্সিতে শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে মস্তানের কথাগুলো মনে মনে বিশ্লেষণ করতে থাকে।জানলাদিয়ে ফুরফুর হাওয়া চোখে মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মেয়েদের মধ্যে মায়ের স্নেহ খোজে।মস্তানের রুঢ় ব্যবহার তকে অবজ্ঞা করার ভাব আসলে বেলির উপর নিজের দুর্বলতা আড়াল করার চেষ্টা।মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ডিফেন্স মেকানিজম।পরীক্ষায় খারাপ করে বাসায় ফিরে ক্লাসের ফার্স্ট বয় কত খারাপ করেছে তাই নিয়ে দুঃখ প্রকাশ।প্রজ্ঞা নিজের মনে হাসে।আজ পর্যন্ত মনে পড়েনা মস্তান তার একটা কথারও অবাধ্য হয়েছে।বইয়ের মধ্যে একটা ডায়েরী রেখে এসেছে।ডায়েরি লিখলে মন হাল্কা হয়।
মোটা মত মহিলা নিজে গাড়ী ড্রাইভ করছিল কি নাম যেন।ওখানে পড়ানো ছেড়ে দিতে বলেছে।দেখা যাক কি করে,এটা একটা পরীক্ষা।মহিলার নজর ভাল লাগেনি।এই সপ্তাহে রেজাল্ট বেরোবে জানিনা পরীক্ষায় কি করবে।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
ট্যাক্সি নজরের বাইরে চলে গেলে মনসিজ বাড়ির দিকে চলতে শুরু করে।দিলীপদের বাড়ী পেরোতে নজরে পড়ল বারান্দায় মীনাক্ষী দাঁড়িয়ে তাকে লক্ষ্য করছে।মনে হয় বেলিকেও দেখেছে।দেখল তো বয়ে গেল মনসিজ সোজা তাকিয়ে চলতে থাকে।তোমার সঙ্গে কথা বলি তখন কিছু হয়না বেলির সঙ্গে কথা বললেই দোষ।বেলির সঙ্গে সেই কলেজে পড়তে পরিচয়।
বাড়ি থেকে দিলীপ বেরিয়ে এসে পথ আগলায়।মনসিজ বলল,কিরে কলেজ যাসনি?
-- কটা বাজে দেখেছিস?
--ওহো আজ তো শনিবার।
--তুই এলিনা তো?
--কিছু মনে করিস না রেজাল্ট না বেরনো অবধি কিছু ভাল লাগছে না।
--মীনার ব্যবহারে কিছু মনে করিস না।ও কিন্তু এরকম ছিল না।
--না না মনে করব কেন?ও তো ভুল বলেনি,অনেকেই বই নিয়ে ফেরৎ দেবার নাম করেনা।আমার বই জোগাড় হয়ে গেছে।
--তুই হঠাৎ ইতিহাস নিয়ে পড়লি?
--নিজের দেশকে জানতে ইচ্ছে হয়না?
--আর নিজের দেশ! দিলীপের গলায় আক্ষেপের সুর।দিলীপ এখন আগের মত নেই।মনসিজ বলল,এ কথা বললি কেন?
--এক সময় এই দেশ স্বাধীন করার জন্য মানুষ কত আত্মবলিদান দিয়েছে।আর এখন সুযোগ পেলেই বিদেশ পাড়ি দেবার জন্য পা বাড়িয়ে আছে।
মনসিজ অবাক হয়ে আড়চোখে দেখে।সত্যি মানুষ কত বদলাতে পারে।প্রথম সাক্ষাতে যেদিন তাকে তড়পাচ্ছিল সেই দিলীপের সঙ্গে আজকের দিলীপকে মেলানো যায় না।
দিলীপ জিজ্ঞেস করল,কোথায় যাবি এখন?
--রকে কেউ এত তাড়াতাড়ি আসবে না।
--রকে আড্ডা দিয়ে সময়ের অপচয়।অর্থহীন গ্যাজালি ভাল লাগেনা।
বেলিও পছন্দ করেনা মনসিজ ভাবে।মোবাইল বাজতে মনসিজ এক মিনিট বলে একটু দূরে গিয়ে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যা বলো।
--আমি পৌছে গেছি।মামণিকে বলে দিবি।
--আচ্ছা।
--আর শোন একটা ডায়েরী রেখে এসেছি।
--কি করব?
--নিয়মিত লিখবি।
--কেন...হ্যালো হ্যালো...।
কেটে দিয়েছে অন্যের কথা শোনে না।খুটোয় বেধে না রাখলে গরু বেড়া ভেঙ্গে অন্যের ফসলে মুখ দেয়।বেলি বেশ সুন্দর কথা বলে।
--কে ফোন করেছে,আমাদের কেউ?
--সেই মেয়েটা একটু আগে ট্যাক্সিতে তুলে দিলাম জানাল পৌছে গেছে।
--দারুন দেখতে মেয়েটাকে।
বেল পাকলে কাকের কি?মনসিজ ভাবে,মুখে বলল,বড়লোকের মেয়ে খেয়ালি।
প্রতি শনিবার ট্রেন থেকে নেমে কিছুক্ষন এদিক-ওদিক দেখে মনসিজকে দেখতে না পেয়ে নেসলসের দিকে হাটতে শুরু করে মণিকুন্তলা।নৃপেনবাবু এসেছিল আজ কলেজে বলল একদিন শান্তিপুরে গিয়ে রমনের সঙ্গে কথা বলেছে।রমন তিন লাখ টাকা চায়।নৃপেনবাবু একলাখের কথা বলেছে।ফোন নম্বর দিয়ে এসেছে।
--এক লাখ কে দেবে? মণিকুন্তলা জিজ্ঞেস করল।
--কি করব,আমাকেই দিতে হবে।কন্যাপণ বলতে পারেন।
মণিকুন্তলা মনে মনে মজা পায়।নৃপেনবাবু বিয়ে করার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে।আচ্ছা নৃপেনবাবু আপনি কোথায় থাকেন?
--আমাকে আবার বাবু কেন?নৃপেনবাবু হেসে বলল।
--আপনিও তো ম্যাডাম-ম্যাডাম করছেন।
--অভয় দিলে করব না।আমি নোনা চন্দন পুকুরে থাকি।
--আপনার মেয়ে কি করে?
--এবার ফাইবে উঠেছে।মেয়েটার জন্য কষ্ট হয়।
মণিকুন্তলার খারাপ লাগে।মেয়েটিকে নিজের মেয়ের মত পালন করতে হবে।কি ভেবে বলল,শোনো তুমি একলাখের এক পয়সাও বেশি দেবে না।
--তুমি যা বলবে তা লঙ্ঘন করার সাধ্য আমার নেই।
মণিকুন্তলা নেসলসের কাছে চলে এসেছে।গেটের সামনে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে ওর চোখ কাউকে খোজে।ছেলেটা এরকম করবে ভাবেনি।
ঘরের দরজা খোলা দেখে অবাক,কি ব্যাপার সবিতা দেশে যায়নি?ভিতরে ঢুকে দেখল সবিতা তার চৌকিতে শুয়ে আছে।
--কি ব্যাপার আপনি যান নি?
--ও ছেলেকে নিয়ে মায়ের কাছে গেছে।আচ্ছা মিস নন্দি একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
--অবশ্যই করবেন।
--না থাক।কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কৌতূহল ঠিক নয়।
মণিকুন্তলা বাথরুমে গিয়ে পোশাক বদলে ফিরে এসে বলল,আপনি কি জিজ্ঞেস করবেন আমি জানি।
--আপনাকে দেখি আর অবাক হই।সবিতা বলল।
মনের মধ্যে কোন কৌতূহল ভেবে মজা পায় মণিকুন্তলা।মানুষ বড় অদ্ভুত নৃপেন বলছিল মেয়ের জন্য বিয়ে করতে চায়।ওর নিজের কোনো চাহিদা নেই?একলাখ টাকা দিতে রাজি হয়ে গেল!মেয়ের জন্য একটা কাজের লোক রাখতে পারতো।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবে এক বিছানায় তারা দুজন শুয়েছিল।খুব ভাল লেগেছিল।আসবে বলেও কেন এলনা কেজানে।
মনসিজ বই নিয়ে বসেছে।ডায়েরীটা পাশে সরিয়ে রাখল।ভাষা নিয়ে নটা পেপারের পরীক্ষা হবে।দশ বছরের প্রশ্ন প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে।
মোবাইল বাজতে ঘড়ি দেখল এগারোটা বেজে গেছে।এতরাতে জেগে আছে।কানে লাগিয়ে বলল,কি বলো?
--হাগু হবার পর নিজেকে বেশ তাজা লাগে না।
--খালি অসভ্য কথা।
--শরীরের ময়লা বেরিয়ে গেলে শরীর ঝরঝরে লাগে।
--আমি এখন পড়ছি।এসব ভাল লাগছে না।
--শোন মনেও তেমনি অনেক চিন্তা আশে সেসব শেয়ার করতে না পারলে অস্বস্তি হয়।
মনসিজ মন দিয়ে শোনে বেলি কি বলতে চায়।
--কিন্তু যাকে তাকে শেয়ার করায় বিপদ আছে।
--আমি কেন শেয়ার করতে যাব?
--সেজন্য বলেছি সারাদিনের কাজ ডায়েরীতে লিখবি তাহলে মন পরিস্কার হয়ে যাবে।
কথাটা মন্দ বলেনি।বেলিটা বেশ কথা বলে,ওর কথা শুনতে ভাল লাগে।মনসিজ বলল,ঠিক আছে লিখব।আর কিছু বলবে?
--এবার তুই পড়।পরীক্ষার জন্য নয় জানার জন্য পড়বি।
--মানে--হ্যালো--হ্যালো।
ফোন কেটে দিয়েছে।পরীক্ষার জন্য নয় জানার জন্য।দারুন বলেছে কথাটা।কোথায় শিখলো এত কথা।ডায়েরীটা খুলে চোখ বোলায়।তারপর পাশে সরিয়ে রেখে ডুবে যায় বইতে।বই পড়লে কতকিছু জানা যায়।