Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
 ।।৪৭।।


ঘুম ভাঙ্গলেও মনসিজ চোখ বুজে শুয়ে থাকে।কাল রাতে বেলির কথাগুলো মনে পড়ল।ঐটুকু মেয়ে যখন অভিভাবকের মত চোটপাট করে ভাল লাগে।মাকে খুব ভালবাসে প্রতিদিন ফোন করে মায়ের খবর নেয়।কাল সকালে একটা লোক নিয়ে তার ঘর পরিষ্কার করে গেছে।মনসিজ বাসায় ছিলনা,ওর সঙ্গে দেখা হয়নি।মোবাইল বাজছে,এখন আবার কে?ঘড়ির দিকে দেখল প্রায় আটটা বাজতে চলল।হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিয়ে দেখল দিলীপ।মীনাক্ষীর কথা মনে হতে ভাবল কেটে দেবে কিনা।দিলীপ তো তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি ভেবে ফোন ধরে বলল,হ্যা বল...আজ কখন....হ্যা বলেছিলি....দুপুরে...আচ্ছা ঠিক আছে...রাখছি।
দিলীপ গল্প লিখেছে তাকে শোনাতে চায়।যেভাবে চিনেছে দিলীপকে তাতে গল্প লেখা ব্যাপারটা মেলাতে পারেনা।দেখা যাক কি লিখেছে।আমি আবার বানিয়ে প্রশংসা করতে পারিনা।মনসিজের নজরে পড়ে টেবিলের উপর চায়ের কাপ।হাত দিয়ে দেখল ঠাণ্ডা জল।মা চা দিয়ে গেছে খেয়ালই নেই।বিছানা থেকে নেমে চায়ের কাপ নিয়ে রান্না ঘরে গেল।
হিমানীদেবী বললেন,মুখের গোড়ায় চা নিয়ে দেব তাও খাওয়ার সময় হয়না।একটা পাত্রে চা ঢেলে গরম করতে থাকেন।
--বেলি কাল কখন এসেছিল?
--তুই যাবার পর একটা লোক নিয়ে হাজির।এসেই লোকটাকে দিয়ে ঘর পরিষ্কার করা দেওয়ালে ছবি টাঙ্গানো বসেছে নাকি।
--সকালে তো আসেনা।
--বাড়ীর থেকে আসছে এখান থেকে আবার কলেজ যাবে।তোর কথা বলল বললাম মিনাক্ষি নাকে তার কাছে বই আনতে গেছে।নে চা ধর।
--অত কথা বলার কি দরকার।
হিমানীদেবী ভাবতে থাকেন ওর মুখে মামণি ডাকটা শুনলে বেশ লাগে।পর মুহূর্তে বিজন চৌধুরীর কথা মনে হতে শিউরে ওঠেন কি যে করতে চায় মেয়েটা।ভাগ্যে যা আছে ভেবে মনকে আশ্বস্থ করেন।
প্রজ্ঞা হেটেই কলেজে যায়।দেখতে দেখতে পরীক্ষার সময় এগিয়ে আসে।ইতিহাস আর ভারতের সংবিধানের উপর কয়েকটা বই যোগাড় করেছে মস্তানকে পৌছে দিতে হবে।আজ হবে না কাল ছুটির পর একবার সিথি যাবে।কাল রাতের কথা ভেবে মজা লাগে বেলির মরার কথা শুনে ওর খারাপ লেগেছে।প্রজ্ঞা ভেবে নিয়েছে দু-বার পরীক্ষায় বসাবে।প্রথমবার না পারলে আরেকবার।তাও যদি না পারে অন্য পরীক্ষা ভাবতে হবে।নিয়মিত পড়ছে শুনেছে।ছেলেটা মেধাবী কিন্তু অত্যন্ত চঞ্চল।পার্কে একটা গাছের নীচে শ্রেয়া তার বন্ধু প্রিয়াংশুর সঙ্গে কথা বলছিল।প্রিয়াংশুর নজরে পড়ে প্রজ্ঞা ফুটপাথ ধরে এগিয়ে আসছে পাছার বলদুটো চলার তালে তালে ওঠা নামা করছে।শ্রেয়াকে বলল,তোমার বন্ধু আসছে।ওর পাছাজোড়া খুব সেক্সি।
--এই অসভ্য খালি ঐদিকে নজর।শ্রেয়া হেসে বলল।
শ্রেয়া লক্ষ্য করে প্রিয়াংশু ভুল বলেনি,বলল আমি আসি সময় হয়ে গেছে।পরে ফোনে কথা হবে। 
কলেজের কাছাকাছি এসে প্রজ্ঞা পার্কের দিক থেকে কলেজের দিকে যাবার জন্য রাস্তা পেরোতে যাবে পিছন থেকে কে যেন ডাকল,প্রজ্ঞা।
ওর নাম প্রজ্ঞা দুনিয়ার লোককে জানাতে হবে?বিরক্তি নিয়ে পিছন ফিরে তাকাতে দেখল শ্রেয়া,সঙ্গে ওর বয় ফ্রেণ্ড প্রিয়াংশুও আছে।সম্ভবত ওরা পার্ক থেকে বের হল।কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,প্রজ্ঞা তুই পায়রাডাঙ্গা চিনিস?
--হঠাৎ পায়রাডাঙ্গা।
--ও ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছে,পায়রাডাঙ্গা ব্রাঞ্চ।
প্রিয়াংশুর সঙ্গে চোখাচুখি হতে মৃদু হাসল।
--পায়রা ডাঙ্গা নৈহাটির পর।
--ডেলি প্যাসেঞ্জারি করা যাবে না?
--শিয়ালদা থেকে ঘণ্টাখানেকের পথ হবে।প্রিয়াংশুর দিকে তাকিয়ে বলল,কংগ্রাচুলেশন।তুই কলেজ যাবিনা?
--হ্যা প্রিয় তুমি যাও তাহলে।শ্রেয়া বলল।
দুই বন্ধু কলেজে ঢুকে গেল।চাকরি পেয়েছে প্রিয়াংশু ভাব করছে যেন ঐ চাকরি পেয়েছে।কথাটা ভেবে প্রজ্ঞা বেশ মজা পায়।পিছন থেকে এসে মন্দাকিনি যোগ দেয়।শ্রেয়া বলল,মন্দা গুড নিউজ দেব তোকে একটা।
--নিউজটা কি বল।
--প্রিয় ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছে।উচ্ছ্বসিত গলায় বলল শ্রেয়া।
--তুই এমন করছিস যেন তুই চাকরি পেয়েছিস।
--ও আর আমি কি আলাদা?
মন্দাকিনির মুখটা ম্লান হয়ে যায়।প্রজ্ঞার কোনো বয় ফ্রেণ্ড নেই ঐ ভাল আছে।সন্ময় সম্পর্কে যা শুনছে ওর সঙ্গে ব্রেক আপ করে দেওয়াই ভাল।এখনও একটা সিরিয়ালে চান্স পায়নি ভাব ভঙ্গী সেলিব্রিটির মত।ফিল্ম লাইনের ছেলে মেয়েরা সুবিধের হয়না।ওরা ক্লাসে ঢুকে গেল।
সকাল হলেই কমলার ব্যস্ততা শুরু হয়।খাইয়ে দাইয়ে মেয়েকে বের করে দেবার পর স্বস্তি।মেয়েটাই বিধবার একমাত্র চিন্তা।বিয়েটা নাহওয়া অবধি মরেও শান্তি নেই।কৃষ্ণা চায়ের কাপ ধুয়ে রান্না ঘরে রাখতে এলে কমলা বলল,দ্যাখ খুকি সব ব্যাপারে ধার বাকী চলে না।অন্তত রেজিস্ট্রিটা করে রাখ।
--উফ মা তোমার সেই সেকেলে চিন্তা।ধার-বাকীর কি হল?আজকাল বিয়ের আগে এসব কিছু ব্যাপার না।
--না হলেই ভাল।আসলে মেয়ে মানুষের মন যতক্ষন হাতে না পায় বিশ্বাস করতে পারেনা।
--আমি স্নানে যাচ্ছি।
বাথরুমে ঢুকে নিজেকে নিরাবরণ করে নিজেই মুগ্ধ হয়ে নিজেকে দেখে।চোদার পর সিসের নেশা লেগে যাবে ভেবেছিল।এতো উলটো তাকে কেবল এড়িয়ে এড়িয়ে যায়।খোলসা করে কিছু বলেও না।এবার বেধে গেছে নিশ্চিত,মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে।মাকে সব কথা বলেনি তাহলে ভয় পেয়ে যাবে।পেটের উপর হাত বোলায়,মাস খানেক গেলে বোঝা যাবে।কৃষ্ণা স্থির করে একটু দেখার মত হলে সরাসরি সিসের বাড়ী যাবে।কি করে তাকে ফিরিয়ে দেয় দেখব।
মনসিজ যাবো ভেবেও মন্দাকিনির কথা ভেবে দিলীপের বাড়ি গেল না।দেখা হলে বলবে বাইরে পার্কে-টার্কে কোথাও বসে গল্প পড়া যেতে পারে।একটু খারাপ লাগে ছেলেটা তার উপর ভরসা করে অথচ তাকে সাহায্য করতে পারছে না।দিলীপের দিদিটা বেলিকে নিয়ে কেমন বিচ্ছিরি-বিচ্ছিরি কথা বলছিল বেলি তার উপর একটু চোটপাট করে বটে কখনো ওর মুখে পরনিন্দা শোনে নি।চোটপাট করলেও তাতে বিষের ঝাজ নেই। কাগজে খবর বেরিয়েছে এই সপ্তাহে রেজাল্ট বেরোতে পারে।বেলি নিশ্চয়ই খবর পেয়েছে।কারো কাছে বইয়ের জন্য যেতে নিষেধ করেছে।অনেক খরচা করছে তাকে পাস করতেই হবে।ফেলের কথা বলতে খুব রেগে গেছিল বেলি।নেগেটিভ চিন্তা করতে মানা করেছে।ওদিক থেকে বঙ্কিমকে আসতে দেখে দাড়ালো।কাছে এসে বঙ্কিম বলল,শুনেছিস?
--কি শুনবো?
--এ সপ্তাহে রেজাল্ট বের হবে।
--হ্যা দেখেছি কাগজে দিয়েছে।
--শালা না বেরনো অবধি হেবভি টেনশন হচ্ছে।
--কল্পনা বলছিল।
--কনা বলছে তুমি যেমন পেরেছো লিখেছো যা হবার তাই হবে।এত টেনশনের কি আছে।
--ঠিকই তো টেনশন করলে রেজাল্ট অদল বদল হবে?
স্যাকরা পাড়া থেকে শিউলি বেরিয়ে ওদের সঙ্গে চোখাচুখি হতে মৃদু হেসে বলল,কি বঙ্কিমদা সময় তো হয়ে এলো।
--সে কথাই আমরা আলোচনা করছিলাম।তোমাদের আর কি?
--আমাদের কিছু না?সারাক্ষন চিন্তা হচ্ছে যদি উল্টোপাল্টা কিছু হয়ে যায় লোককে মুখ দেখাবো কি করে।
--অত চিন্তা কোরনা শুভ পাস করে যাবে।
--ভগবানকে সারাক্ষন ডাকছি তাই যেন হয়।
মনসিজ মনে মনে বেলির কথা ভাবছিল বেলি এদের থেকে একেবারে আলাদা। 
--যা হবার হবে ফালতু ভেবে সময় নষ্ট।বঙ্কিম বলল,আচ্ছা মনা তুই লক্ষ্য করেছিস ইদানীং আশিসদা কেম চুপচাপ বসে থাকে কোনো হম্বিতম্বি নয়।হাসপাতালে কোনো গোলমাল হয়নি তো?
মনসিজ ভাবে কিছু বলা ঠিক হবে কিনা।বঙ্কিম বলল আজকালকার বাজারে চাকরি পাওয়া খুব মুষ্কিল।
--চাকরি নয় অন্য ব্যাপার।মনসিজের মুখ থেকে বেরিয়ে গেল।
--ও হ্যা সেদিন তোকে ডেকে কি বলছিল?
মনসিজ এক মুহূর্ত ভাবে তারপর বলল,ঐ আশিসদার সঙ্গে কাজ করে মহিলা--।
--কৃষ্ণা।কি বলছিল?
--কৃষ্ণা বিয়ের জন্য খুব পীড়াপিড়ি করছে।
--কোনিও এই কথা বলছিল।
--কল্পনা এসব কিকরে জানলো?
--তা বলতে পারব না।তবে ওর সব কথা ধরিনা।মেয়েরা একটু বাড়িয়ে বলে।
--কি বলছিল?
--বিয়ের পর মানে যা করে সেরকম কিছু করেছে আশিসদা।আসলে আশিসদাকে পছন্দ করে না কোনি।
মনসিজের মনে হল কল্পনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায়না খামোখা কেউ বিয়ের জন্য পীড়াপিড়ি করে।মোবাইল বাজতে দেখল স্ক্রিনে প্রজ্ঞা।এক্টু সরে গিয়ে বলল,বলো।
--মাসীমণি কেমন আছে?
--ভাল।
--তুই রাস্তায় কি করছিস?
চমকে ওঠে মনসিজ রাস্তায় কি করে বুঝলো।আশ পাশ দেখল এখানে আসেনিতো।জিজ্ঞেস করল,রাস্তায় নয় আমি এখন--।
--এইবার এক চাটি দেব রাস্তায় নয়?
--তুমি কি করে জানলে?
--শোন মস্তান আমি সব সময় তোকে নজরে নজরে রাখি।শোন একটু ঘোরাঘুরি করলে মন সতেজ হয়।
--হ্যা সেই জন্য বেরিয়েছি।
--কাল বেরোবি না।আমি গিয়ে যেন না শুনি বেরিয়েছিস।
--তুমি আসবে?
ফোন কেটে দিল। মনসিজ বিরক্ত হয়।বঙ্কিমকে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা বঙ্কিম কেউ ফোন করলে বুঝতে পারবি রাস্তা থেকে করছে নাকি অন্য কোথা থেকে?
--গাড়ীর শব্দ শুনে ধরে নেওয়া যায় রাস্তায়--সব সময় বোঝা সম্ভব নয়।
ঠিক কথা।মনসিজ ভাবে তার মাথাটা গেছে।আসলে বেলির সঙ্গে কথা বলতে গেলে তার কেমন নার্ভাস বোধ হয়।     

      
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 20-10-2021, 04:44 PM



Users browsing this thread: 34 Guest(s)