14-10-2021, 03:26 PM
(This post was last modified: 16-01-2022, 03:46 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
।।৪৪।।
বিকেল হতে বোসবাড়ির রকে একে একে জমা হতে থাকে।শুভ একটূ দেরী করে এল।সবার মুখের দিকে চোখ বুলিয়ে ধুলো ঝেড়ে বসল।
মনসিজকে না দেখতে পেয়ে শুভ জিজ্ঞেস করল,মনা আসেনি?
--এসেছিল,আশিসদা ওকে নিয়ে কোথায় গেল।
মনাকে ডেকে নিয়ে গেছে আশিসদা? অদ্ভুত লাগে, পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে সবাই।
কিছুটা আসার পর কিভাবে শুরু করবে মনে মনে ভাবে আশিস।সব কথা খুলে বলা সম্ভব নয়।একসময় আশিস বলল,তোর সঙ্গে একটা ব্যাপার আলোচনা করতে চাই।তোকে বিশ্বাস করি তাই বলছি।তুই আর কাউকে বলতে যাবিনা।
মনসিজ বুঝতে পারেনা আশিসদা এত ভণিতা করছে কেন?কি এমন ব্যাপার তার সঙ্গেই আলোচনা করতে চাইছে।
--না মানে তুই তো কৃষ্ণাকে চিনিস?
--হ্যা কয়েকবার দেখেছি।কলোনীর দিকে থাকে।
আশিস ধীরে ধীরে বলতে থাকে কিভাবে আলাপ কোথায় কোথায় ঘুরেছে।যতটা বলা যায় বলল।একটু দম নিয়ে বলল,হঠাৎ বিয়ের জন্য খুব জোরাজুরি করছে।
--কেন বিয়ের কথা আসছে কেন?
--সেকথাই তোকে বলছি।কি করা যায় বলতো?
--তোমার কি ওকে পছন্দ নয়?
--তা নয় কিন্তু ওর সঙ্গে বিয়ে--বাড়ীর লোক কিছুতেই মেনে নেবে না।তাছাড়া ওরা ', নয়--।
--দ্যাখো আশিসদা তুমি আমার চেয়ে বড় তবু বলছি এইসব বামন কায়েত জাত-পাত নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।তোমার আপত্তি থাকলে স্পষ্ট বলে দাও তুমি বিয়ে করতে পারবে না।ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে মিশলেই বিয়ে করতে হবে তার কি মানে আছে?
প্রজ্ঞা হাটতে শুরু করল।কেরানীর চাকরি করতে হবে না,হাই এ্যাম্বিশন--বড় মুখ করে অনেক কথা বলার পোড় থেকেই একটা অস্বস্তির ভাব তাকে চেপে বসেছিল।মস্তানতাকে নিয়ে কি করবে কয়েক সপ্তা কেবল ঘুরে ফিরে মাছির মত মনের মধ্যে ভন ভন করছিল।পুরানো বই ঘাটাঘাটি করতে করতে যেন একটা দিশা খুজে পেল।ইউপিএসসির পরীক্ষায় বসাতে হবে মস্তানকে।মন দিয়ে পড়লে প্রজ্ঞার বিশ্বাস ও পারবে।যতজন পাস করে তার কয়েকগুণ ফেল করে।এসব ভাবলে কেউ পরীক্ষা দিতনা। পারুক না-পারুক একবার চেষ্টা করতে দোষ কি?মস্তানকে কে নিয়ে সে এত ভাবছে কেন কথাটা মনে হতে মনে হাসে প্রজ্ঞা।
ওর উপর চোটপাট করতে ভাল লাগে।বাড়িতে সেই সব চেয়ে ছোটো শাসন করার মত কেউ নেই।এই মস্তানটাকে পেয়ে সেই সাধ ষোলোআনা মিটিয়ে নিচ্ছে।ওর সামনে এমন কুকড়ে থাকে ভেবে মজা পায়।শ্রেয়ারা বিষয়টা নিয়ে উল্টোপাল্টা ভাবছে।আজ তো সরাসরি বলেই ফেলল।একটা ছেলে আর একটা মেয়ের কি একটাই সম্পর্ক হয়।ওদের সকলের বয়ফ্রেণ্ড আছে তাই অন্যদের সম্পর্কেও এইসব চিন্তা।মন্দার বয়ফ্রেণ্ড সন্ময়কে দেখেছে আহামরি কিছু নয় তবে মাথাভর্তি চুল।ছেলেটার টিভি সিরিয়াল করার ঝোক,নানা জায়গায় ঘোরাঘুরি করছে।মন্দার কেন যে ওকে এত পছন্দ কে জানে।বড়লোকের মেয়ে লেখাপড়ায় খারাপ নয়। তার ভাল লাগেনি।রকের কাছে আসতে গতি বাড়িয়ে দিল।রক পেরোতে গিয়ে আড়চোখে দেখে মস্তানকে নজরে পড়ল না তাহলে বোধহয় বাড়ীতেই আছে। যাক ধমক দেবার পর উন্নতি হয়েছে।
স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে বসে আছেন হিমানীদেবী।মনুটা বেরিয়েছে।কখন ফিরবে কে জানে।বাপ বেচে থাকতে সন্ধ্যের আগেই ফিরে আসতো এখন আর পায় কে।ছেলেটাকে নিয়ে তার চিন্তা।বেলি বলছিল সে এবার শাসন করবে।মনে মনে হাসেন হিমানীদেবী।ঐটুকু মেয়ে বেশ কথা বলে।চৌধুরীবাবুর মেয়েটা হয়েছে অন্যরকম।টেবিলের উপর গাদা দেওয়া কাগজপত্তর।একটু গুছিয়ে রাখতে কি হয়েছে।মার বয়স হচ্ছে না। কলিং বেল বাজতে হিমানীদেবী আশ্বস্ত হন।যাক আজ তাড়াতাড়ি ফিরল।আবার বেল বাজতে বললেন,খুলছিরে বাবা খুলছি।আসবো তো নাকি?
খাট থেকে নেমে দরজা খুলে অবাক,ওমা বেলি তুই?
কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা মনসিজের ঘরে গিয়ে প্রজ্ঞা বইগুলো নামিয়ে জিজ্ঞেস করল,মাসীমণি মস্তান নেই?
--এই সময় ঘরে থাকার ছেলে।তুই তো একেবারে ঘেমে গেছিস।এঘরে আয় পাখার নীচে বোস।
প্রজ্ঞা এ ঘরে এসে টেবিলের পাশে একটা চেয়ারে বসে।হিমানীদেবী পাখার গতি বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,কলেজ থেকে আসছিস?দাড়া আমি খাবার করি।
--শোনো কটা বই রেখে গেলাম।মস্তানকে বলবে বইগুলো দেখতে।
--ফোন পেয়ে সারাদিন ফটর-ফটর একে তাকে ফোন করে চলেছে।তুই একটু বোস মা আমি এক্ষুনি আসছি।
হিমানীদেবী রান্নাঘরে চলে গেলেন।প্রজ্ঞা আচল দিয়ে ঘাম মোছে।টেবিলের উপর এলোমেলো কাগজগুলো গোছাতে গোছাতে নজরে পড়ল চকচক করছে কি একটা।হাতে নিয়ে দেখল মেয়েদের কানের পাশা।সোনার নাকি?
হিমানীদেবী কয়েকটা পাউরুটি টোষ্ট আর চা নিয়ে ঢূকতে প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করল,মাসীমণি এটা সোনার নাকি?টেবিলের উপর ছিল--।
--হ্যা আমার কানের।
--আরেকটা কোথায়?
--আছে কোথাও।
--আছে কোথাও মানে?আমার দিকে তাকাও।
হিমানীদেবী ইতস্তত করেন।প্রজ্ঞা বলল,তুমি বলো আমি তোমার মেয়ের মত--।
--শোন মা তোর মেশোমসায় মারা যাবার পর একেবারে হাত খালি--ওর কলেজে মাইনে বাকী তারপর পরীক্ষার ফিজ--কি করবো বাধ্য হয়ে--তুই আমার ঘরের মেয়ে তোর কাছে কেন লুকাবো।নে চা খেয়ে নে।
প্রজ্ঞা চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিতে দিতে কি যেন ভাবে তারপর বলল,মাসীমণি আমি তোমার ঘরের মেয়ে তাহলে আমাকে মজুমদার পদবীটা দাও।
--ঘরের মেয়েই তো।কথাটার তাৎপর্য বুঝতে পেরে চমকে উঠে বললেন,তা হয়না মা।অনেক ঝড়-ঝাপটা গেল নতুন করে এই মা-ছেলের সংসারে বিপদ ডেকে আনতে চাই না।চৌধুরীবাবু কিছুতেই মেনে নেবে না।
--শোনো মাসীমণি এই প্রজ্ঞা চৌধুরী যতদিন বেচে থাকবে আমার মাসীমণিকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না।বিজন চৌধুরী আইনের লোক উনি জানেন আমি এখন প্রাপ্ত বয়স্ক আমার নিজস্ব রুচি পছন্দ মত চলার অধিকার আছে।
--কিন্তু মা মনুর মধ্যে তুই কি দেখলি--।
--মস্তানের কথা বাদ দাও তোমার কথা বলো।ওকে আমি নিজের মতো গড়ে নেবো।
--তোকে পাবো সেতো আমার ভাগ্য আপত্তি করি সাধ্য কি?
প্রজ্ঞা আচমকা পা ছুয়ে প্রনাম করে বলল,মামণি আশির্বাদ করো।
হিমানীদেবী চোখের জল মুছে বেলিকে জড়িয়ে ধরেন।প্রজ্ঞা বলল,তুমি এসব এখনই মস্তানকে বলতে যেওনা।তোমার আমার মধ্যে টপ সিক্রেট।
--বেলি আরেকবার ভাল করে ভেবে দেখ মা।তোর মাসীর সঙ্গে কথা বল।
--কলেজ দু-দিন ছুটি আজ আমি বাড়ী যাচ্ছি।মস্তান যেন ঘণাক্ষরে জানতে না পারে।মস্তানকে বইগুলো দেখতে বোলো।আসি মা মণি?
বেলি চলে যাবার পর দরজা বন্ধ করে হিমানীদেবী ভাবেন একটু আগে যা যা শুনলেন সব কি ঠিক শুনেছেন?নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারেন না।একী পাগলামী শুরু করল বেলি।টেবিলের উপর বেলির চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকেন নতুন কোনো বিপদ আসছে নাতো?
ট্রেন চাকদা স্টেশনে পৌছাতে প্রজ্ঞা ঘড়ি দেখল প্রায় আটটা বাজতে চলেছে।স্টেশন থেকে বাইরে বেরিয়ে নজরে পড়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।গাড়ীর দিকে এগিয়ে অবাক বাপি এসেছে তাকে নিতে।গাড়ীতে উঠে জিজ্ঞেস করল,বাপি আজ চেম্বারে যাওনি?
--তুই আসবি শুনে আর যেতে ইচ্ছে হলনা।কেমন আছিস মা?
--তুমি এমন করছো যেন কতদিন পর আসছি।
বিজন চৌধুরী হেসে বললেন,বাপ হলে বুঝতিস।
--মা হলে বুঝতাম না?
--তোর মার কথা বাদ দে,পুটির কাছে আছে একেবারে নিশ্চিন্ত।
ছোটোমাসী চারুলতার ডাক নাম পুটি।আশালতা সবার বড় তারপর দুই মামার পর ছোটোমাসী মায়ের খুব আদরের।
হিমানীদেবী দরজা খুলে দিলে মনসিজ ঢুকে দেখল মা যেন কি ভাবছে।মায়ের ঘরে গিয়ে টেবিলের উপর চায়ের কাপ দেখে জিজ্ঞেস করল,কেউ এসেছিল?
--বেলি এসেছিল।তোর ঘরে কি বই রেখে গেছে দেখ।
এই আশঙ্কাই করেছিল একবার যখন বাড়ী চিনে গেছে জ্বালাবে।হিমানীদেবী বললেন,হাত্মুখ ধুয়ে খেতে আয়।
নিজের ঘরে গিয়ে বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখে কপালে ভাজ পড়ে।পরীক্ষার পর ভেবেছিল পড়াশুনায় ইতি এবার একটা চাকরিতে ঢুকে নিয়মিত অফিস যাতায়াত।আবার নতুন করে পড়তে হবে নাকি?
মা ডাকাডাকি করছে বইপত্তর রেখে মনসিজ খেতে গেল।খাওয়া দাওয়ার পর আবার বইগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে থাকে।হিমানীদেবী খেয়ে শুয়ে পড়েছেন।মোবাইল বাজতে কানে লাগিয়ে মনসিজ বলল,বল...হ্যা দেখছি...পড়বো মানে আবার আমাকে পরীক্ষা দিতে হবে....কেরাণীগিরি করব বলেছি....আচ্ছা বসব ফেল করলে আমাকে দোষ দিতে পারবে না....ঠিক আছে যা বলবে করবো....বইগুলো পয়সা দিয়ে কিনতে হয়নি....আচ্ছা লিখে রাখো তোমার পাই পয়সা শোধ করে দেব....কে বলল মা...তোমাকে ফোন করার আগেই তুমি ফোন করো তাই করা হয়না...হ্যা আমি বানিয়ে বানিয়ে কথা বলি তুমি ভাল...শুভ রাত্রি।
বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে রাত বাড়তে থাকে মনসিজের হুশ নেই।প্রশ্নগুলো পড়ে বুঝতে পারে কি কি বই পড়তে হবে।মীনাক্ষীর কাছে বিভিন্ন ধরণের প্রচুর বই আছে।আবার রাত জেগে পড়া শুরু হল।