12-10-2021, 06:22 PM
(This post was last modified: 18-01-2022, 12:29 AM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
।।৪৩।।
ভোর বেলা ঘুম থেকে হিমানী দেবী রান্না ঘরে ঢুকলেন।রান্না ঘরে টুলের দিকে নজর পড়তে বেলির কথা মনে পড়ল।মেয়েটি বেশ কতবড় বাপের মেয়ে আচার আচরণে মনেই হয় না।একটা সঙ্গীতের আওয়াজ কানে আসতে জাগ হন হিমানীদেবী।তার ঘর থেকেই আসছে শব্দটা।দ্রুত ঘরে এসে শব্দ অনুসরণ করে দেখলেন,টেবিলের উপর আগোছালো কাগজ পত্রের মধ্যে থেকে আওয়াজটা আসছে।এতো মোবাইল মনে হচ্ছে।তুলে নিয়ে ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে হাতে দিল।মনসিজ বুঝতে পারে কাল রাতে বেলি নিশ্চয়ই ভুলে ফেলে গেছে।
কানে লাগিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শোনা গেল,গুড মর্নিং।
এতো বেলির গলা মনসিজ বলল,তুমি কাল ভুলে মোবাইল ফেলে গেছো।
--ভুলে নয় ইচ্ছে করেই রেখে এসেছি।
--মোবাইল আমার দরকার নেই।
--তোর জন্য নয় নিজের দরকারে রেখে এসেছি।
--মানে?
--মাসীমণির খবর নেবো।
--তুমি মোবাইল নিয়ে যাবে নাহলে ছুড়ে ফেলে দেবো।
--ফেলে দ্যাখ একবার।তুই মাসীমণিকে দে।
--মা রান্নাঘরে।
--মাসিমণিকে বলবি কাল বেলি ভালভাবে পৌছে গেছে।ফোন কেটে দিল।
ফোনটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে মনসিজ।বেশ দামী ফোন মনে হয়।বেলি যা জিদ্দি কিছুতেই ওকে ফেরৎ দেওয়া যাবে না। আর মাকে বলেও লাভ নেই।বেলির পক্ষেই কথা বলবে।হঠাৎ খেয়াল হয়,নম্বরটা ব্যাঙ্কে দিয়ে আসতে হবে তাহলে পেনশন জমা পড়ার কথা জানা যাবে।কারো নম্বর জানা থাকলে একবার ফোন করে দেখতো।আবার ফোন বেজে ওঠে,কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?
--কে মস্তান?শোন কল লিস্ট সব ডিলিট করে দিবি,শুধু আমার নাম সেভ করে রাখবি, আর আমার নাম বেলি নয় প্রজ্ঞা--বুঝেছিস বুদ্ধু।
কিছু বলার আগেই কেটে দিল।মনসিজ মনে মনে হাসে,মস্তান গাধা বুদ্ধু যা না তাই বলে বেলি।কত বছর এরকম শোনা হয়নি।
হিমানী দেবী চা নিয়ে ঢুকে জিজ্ঞেস করল,কে ফোন করেছিল?
--বেলি ফোনটা তোমার খবর জানার জন্য রেখে গেছে।
আপ্লুত হন হিমানী দেবী কতদিন পর মেয়েটার সঙ্গে দেখা।বললেন,এতকাল হয়ে গেল মেয়েটা আমাদের ভোলেনি,ঠিক মনে রেখেছে।
--শোনো মা এসব বড়লোকী মেয়েদের খাম খেয়ালী বেশী পাত্তা দিওনা।
--ওর মধ্যে বড়লোকীর কি দেখলি?আমি দেখেছি তুই ওর নামে একগ্রাস ভাত বেশী খাস।কেনরে তোর কি ক্ষতি করেছে?
--আমার নামে লাগানি-ভাঙ্গানি করতো আমি জানিনা ভেবেছো?
--করতো তোর ভালর জন্য।সারাদিন কোথায় কি করে বেড়াতিস ও না বললে জানতে পারতাম?
কিছুক্ষনের জন্য মনটা সেই তালপুকুরের দিনগুলোতে হারিয়ে যায়।কেলো আজ নেই অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে।কেলো বিশে দুজনেই ওকে ভালোবাসতো।বাবার কড়া শাসন ছিল ঠিকই অফিস থেকে ফিরলে দেখা হতো।বেলিটা সারাক্ষন তাকে নজরে নজরে রাখতো।এতদিন পর দেখল স্বভাব একদম বদলায়নি।
কৃষ্ণা বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য কদিন ধরে খুব পীড়াপিড়ি করছে।বাড়ী যেতে আপত্তি নেই কিন্তু বলছে,মা তার জামাইকে দেখতে চায়।আশিসের কান দিয়ে আগুণের হলকা বেরোয়।ও বলছে বেধে গেছে এতদিন হয়ে গেল দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই।একদিন এ্যাবর্শনের কথা বলতে এমন করে উঠলো যেন তার বিয়ে করা বউ।
--ছিঃ তুমি একথা বলতে পারলে?
পাপ করলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় কিন্তু সেই প্রায়শ্চিত্ত যে এতটা গুরুতর হবে কে জানতো।নজরে পড়ল, এক গোছা ফাইল নিয়ে কৃষ্ণা আসছে।কাছে এসে বলল,আসছি কথা আছে।
কৃষ্ণা ড.ঘোষের চেম্বারে ঢুকে গেল।একসময় যার দেখা পাওয়ার জন্য আকুল অপেক্ষা করতো এখন তাকে এড়াতে পারলেই যেন বাচে।এক এক সময় মনে হয় কাজকর্ম ফেলে বাড়ী ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
মন্দাকিনী তার সহপাঠী।গাড়ী করে কলেজে যাতায়াত করে।অনেক সময় তাকে বাড়ি পৌছে দেবে বললেও প্রজ্ঞা নানা কথা বলে এড়িয়ে যায়।মন্দাকিনী পাকপাড়ায় থাকে সিমলা তার উল্টোদিকে।কলেজ ছুটির পর মন্দাকিনী বলল,চল অনেকদিন বই পাড়ায় যাওয়া হয়না।
প্রস্তাবটা খারাপ লাগেনা।প্রজ্ঞা মাঝে মাঝেই ফুটপাথের ধারে স্টলগুলোতে পুরানো বই দেখতে ভালবাসে।যেসব এখন বাজারে পাওয়া যায় না সেরকম বই পেলে দরাদরি করে কিনে ফেলে।শ্রেয়াও তাদের সঙ্গে গাড়ীতে উঠলো।
তিনবন্ধু গাড়িতে উঠে বসতে ড্রাইভার ছুটে এসে স্টিয়ারং-এ বসে।আশে পাশে কোথাও ছিল হয়তো।মন্দাকিনী বলল,দীনুদা একটু কলেজস্ট্রীটে যাবো।
উত্তর মুখো গাড়ী দক্ষিণদিকে ঘোরাতে থাকে।শ্রেয়া বলল,প্রজ্ঞা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিছু মনে করবি নাতো?
--আমি জানি কি জিজ্ঞেস করবি।আচ্ছা তোদের ঐসব ছাড়া আর কোনো কথা নেই?
--রাগ করলি তা হলে থাক।শ্রেয়া চুপ করে যায়।
মন্দাকিনী ইশারায় ড্রাইভারকে দেখায়।প্রজ্ঞা বলল,আচ্ছা বল কি জানতে চাইছিস?
মন্দাকিনী বলল,পাড়ায় থাকতো আর কিছু না?কিরে শ্রেয়া তাইতো?
--প্রিয়াংশু বলছিল--।
অবাক হয়ে বলল প্রজ্ঞা,এসব তোর বয়ফ্রেণ্ডকেও বলা হয়ে গেছে?
--দ্যাখ আমাদের মধ্যে কোনোকথা গোপন রাখিনা।ও-ও আমাকে সব কথা বলে।কিরে মন্দা তুই সন্ময়কে সব কথা বলিস না?
--শোন ছেলেটি আমাদের পাড়ায় থাকতো এবার বিএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ওর ভিতরে অনেক পোটেশিয়ালিটি আছে কিন্তু ভীষণ কুড়ে।
--ভিতরেও দেখা হয়ে গেছে?
দুজনে খিল খিল হেসে উঠল।প্রজ্ঞার কান লাল হয়।
কলেজ স্ট্রিটে পৌছাতে ওরা গাড়ী থেকে নেমে পড়ল।মন্দাকিনী বলল,দীনুদা আপনি কোথাও পার্ক করুন ফোন করে আপনাকে ডেকে নেবো।
ফুটপাথে সারি সারি পুরানো বইয়ের দোকান।ওরা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে।
--তুই কি বই খুজছিস?শ্রেয়া জিজ্ঞেস করল।
-- History Of Literature নজরে পড়লে বলিস।
একটা বইয়ে নজর আটকে যায়।UPSC Previous Question Papers.মস্তানের জন্য অনেকদিন ধরে ভাবছে ওকে নিয়ে কি করবে।এখন মনে ইউপিএসসি-র পরীক্ষায় বসালে কেমন হয়।দোকানদারকে বলল,ঐ বইটা দিন তো।
বইটা নিয়ে পাতা ওল্টাতে থাকে।মন্দাকিনী বলল,কিরে ইউপিএসসিতে বসবি নাকি?
--বসলেই হয়।প্রজ্ঞা বলল।
খান তিনেক বই দরাদরি করে কিনে ব্যাগে ভরে রাখে।কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে কিছু বই-টই কিনে ওরা ফেরার জন্য গাড়ীতে চাপে।গাড়ি বিবেকানন্দ রোডের মোড়ে থামে।কেউ নামছে না দেখে মন্দাকিনী বলল,কিরে প্রজ্ঞা নামবি না।
--ভাবছি তোর বাড়ী অবধি যাবো।
মন্দাকিনী আর শ্রেয়া ইঙ্গিতবহ দৃষ্টি বিনিময় করে।গাড়ী চলতে শুরু করল।আরজিকরের মোড়ে গাড়ী থামতে শ্রেয়া নেমে গেল।গাড়ী আবার চলতে শুরু করে।মন্দাকিনী জিজ্ঞেস করল,তুই কোথায় যাবি বললে পৌছে দিতে পারি।
--পাকপাড়ায় নামিয়ে দিলেই হবে।
প্রজ্ঞা হয়তো বলতে চায়না,মন্দাকিনী পীড়াপিড়ি করেনা।নর্দান এভিনিউতে বাড়ীর সামনে গাড়ী থামলে মন্দস্কিনী নেমে বলল,দীনুদা ও যেখানে যেতে চায় পৌছে দিয়ে গাড়ী গ্যারাজ করে দিও।
সেভেন্ট্যাঙ্কস-র মোড়ে এসে প্রজ্ঞা বলল,এখানে থামান।এখান থেকে আমি চলে যেতে পারবো।
ছুটির পর কৃষ্ণা এসে ধরল,এ্যাই শিস এখন কোনো কাজ নেইতো?
--আজ একটা জরুরী কাজ আছে।
--কাজ আর খালি কাজ ফেমিলির চেয়ে বড় তোমার কাজ?
ফ্যামিলি শুনে আশিসের বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে ওঠে।কৃষ্ণা বলল,মা কবে থাকে বসে আছে জামাইকে দেখবে--।
--ঠিক আছে আমি তো পালিয়ে যাচ্ছিনা।
--শোনো কাল কিন্তু কোনো কথা শুনবো না,তুমি কোনো কাজ রাখবে না।
ভোর বেলা ঘুম থেকে হিমানী দেবী রান্না ঘরে ঢুকলেন।রান্না ঘরে টুলের দিকে নজর পড়তে বেলির কথা মনে পড়ল।মেয়েটি বেশ কতবড় বাপের মেয়ে আচার আচরণে মনেই হয় না।একটা সঙ্গীতের আওয়াজ কানে আসতে জাগ হন হিমানীদেবী।তার ঘর থেকেই আসছে শব্দটা।দ্রুত ঘরে এসে শব্দ অনুসরণ করে দেখলেন,টেবিলের উপর আগোছালো কাগজ পত্রের মধ্যে থেকে আওয়াজটা আসছে।এতো মোবাইল মনে হচ্ছে।তুলে নিয়ে ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে হাতে দিল।মনসিজ বুঝতে পারে কাল রাতে বেলি নিশ্চয়ই ভুলে ফেলে গেছে।
কানে লাগিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শোনা গেল,গুড মর্নিং।
এতো বেলির গলা মনসিজ বলল,তুমি কাল ভুলে মোবাইল ফেলে গেছো।
--ভুলে নয় ইচ্ছে করেই রেখে এসেছি।
--মোবাইল আমার দরকার নেই।
--তোর জন্য নয় নিজের দরকারে রেখে এসেছি।
--মানে?
--মাসীমণির খবর নেবো।
--তুমি মোবাইল নিয়ে যাবে নাহলে ছুড়ে ফেলে দেবো।
--ফেলে দ্যাখ একবার।তুই মাসীমণিকে দে।
--মা রান্নাঘরে।
--মাসিমণিকে বলবি কাল বেলি ভালভাবে পৌছে গেছে।ফোন কেটে দিল।
ফোনটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে মনসিজ।বেশ দামী ফোন মনে হয়।বেলি যা জিদ্দি কিছুতেই ওকে ফেরৎ দেওয়া যাবে না। আর মাকে বলেও লাভ নেই।বেলির পক্ষেই কথা বলবে।হঠাৎ খেয়াল হয়,নম্বরটা ব্যাঙ্কে দিয়ে আসতে হবে তাহলে পেনশন জমা পড়ার কথা জানা যাবে।কারো নম্বর জানা থাকলে একবার ফোন করে দেখতো।আবার ফোন বেজে ওঠে,কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?
--কে মস্তান?শোন কল লিস্ট সব ডিলিট করে দিবি,শুধু আমার নাম সেভ করে রাখবি, আর আমার নাম বেলি নয় প্রজ্ঞা--বুঝেছিস বুদ্ধু।
কিছু বলার আগেই কেটে দিল।মনসিজ মনে মনে হাসে,মস্তান গাধা বুদ্ধু যা না তাই বলে বেলি।কত বছর এরকম শোনা হয়নি।
হিমানী দেবী চা নিয়ে ঢুকে জিজ্ঞেস করল,কে ফোন করেছিল?
--বেলি ফোনটা তোমার খবর জানার জন্য রেখে গেছে।
আপ্লুত হন হিমানী দেবী কতদিন পর মেয়েটার সঙ্গে দেখা।বললেন,এতকাল হয়ে গেল মেয়েটা আমাদের ভোলেনি,ঠিক মনে রেখেছে।
--শোনো মা এসব বড়লোকী মেয়েদের খাম খেয়ালী বেশী পাত্তা দিওনা।
--ওর মধ্যে বড়লোকীর কি দেখলি?আমি দেখেছি তুই ওর নামে একগ্রাস ভাত বেশী খাস।কেনরে তোর কি ক্ষতি করেছে?
--আমার নামে লাগানি-ভাঙ্গানি করতো আমি জানিনা ভেবেছো?
--করতো তোর ভালর জন্য।সারাদিন কোথায় কি করে বেড়াতিস ও না বললে জানতে পারতাম?
কিছুক্ষনের জন্য মনটা সেই তালপুকুরের দিনগুলোতে হারিয়ে যায়।কেলো আজ নেই অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে।কেলো বিশে দুজনেই ওকে ভালোবাসতো।বাবার কড়া শাসন ছিল ঠিকই অফিস থেকে ফিরলে দেখা হতো।বেলিটা সারাক্ষন তাকে নজরে নজরে রাখতো।এতদিন পর দেখল স্বভাব একদম বদলায়নি।
কৃষ্ণা বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য কদিন ধরে খুব পীড়াপিড়ি করছে।বাড়ী যেতে আপত্তি নেই কিন্তু বলছে,মা তার জামাইকে দেখতে চায়।আশিসের কান দিয়ে আগুণের হলকা বেরোয়।ও বলছে বেধে গেছে এতদিন হয়ে গেল দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই।একদিন এ্যাবর্শনের কথা বলতে এমন করে উঠলো যেন তার বিয়ে করা বউ।
--ছিঃ তুমি একথা বলতে পারলে?
পাপ করলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় কিন্তু সেই প্রায়শ্চিত্ত যে এতটা গুরুতর হবে কে জানতো।নজরে পড়ল, এক গোছা ফাইল নিয়ে কৃষ্ণা আসছে।কাছে এসে বলল,আসছি কথা আছে।
কৃষ্ণা ড.ঘোষের চেম্বারে ঢুকে গেল।একসময় যার দেখা পাওয়ার জন্য আকুল অপেক্ষা করতো এখন তাকে এড়াতে পারলেই যেন বাচে।এক এক সময় মনে হয় কাজকর্ম ফেলে বাড়ী ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
মন্দাকিনী তার সহপাঠী।গাড়ী করে কলেজে যাতায়াত করে।অনেক সময় তাকে বাড়ি পৌছে দেবে বললেও প্রজ্ঞা নানা কথা বলে এড়িয়ে যায়।মন্দাকিনী পাকপাড়ায় থাকে সিমলা তার উল্টোদিকে।কলেজ ছুটির পর মন্দাকিনী বলল,চল অনেকদিন বই পাড়ায় যাওয়া হয়না।
প্রস্তাবটা খারাপ লাগেনা।প্রজ্ঞা মাঝে মাঝেই ফুটপাথের ধারে স্টলগুলোতে পুরানো বই দেখতে ভালবাসে।যেসব এখন বাজারে পাওয়া যায় না সেরকম বই পেলে দরাদরি করে কিনে ফেলে।শ্রেয়াও তাদের সঙ্গে গাড়ীতে উঠলো।
তিনবন্ধু গাড়িতে উঠে বসতে ড্রাইভার ছুটে এসে স্টিয়ারং-এ বসে।আশে পাশে কোথাও ছিল হয়তো।মন্দাকিনী বলল,দীনুদা একটু কলেজস্ট্রীটে যাবো।
উত্তর মুখো গাড়ী দক্ষিণদিকে ঘোরাতে থাকে।শ্রেয়া বলল,প্রজ্ঞা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিছু মনে করবি নাতো?
--আমি জানি কি জিজ্ঞেস করবি।আচ্ছা তোদের ঐসব ছাড়া আর কোনো কথা নেই?
--রাগ করলি তা হলে থাক।শ্রেয়া চুপ করে যায়।
মন্দাকিনী ইশারায় ড্রাইভারকে দেখায়।প্রজ্ঞা বলল,আচ্ছা বল কি জানতে চাইছিস?
মন্দাকিনী বলল,পাড়ায় থাকতো আর কিছু না?কিরে শ্রেয়া তাইতো?
--প্রিয়াংশু বলছিল--।
অবাক হয়ে বলল প্রজ্ঞা,এসব তোর বয়ফ্রেণ্ডকেও বলা হয়ে গেছে?
--দ্যাখ আমাদের মধ্যে কোনোকথা গোপন রাখিনা।ও-ও আমাকে সব কথা বলে।কিরে মন্দা তুই সন্ময়কে সব কথা বলিস না?
--শোন ছেলেটি আমাদের পাড়ায় থাকতো এবার বিএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ওর ভিতরে অনেক পোটেশিয়ালিটি আছে কিন্তু ভীষণ কুড়ে।
--ভিতরেও দেখা হয়ে গেছে?
দুজনে খিল খিল হেসে উঠল।প্রজ্ঞার কান লাল হয়।
কলেজ স্ট্রিটে পৌছাতে ওরা গাড়ী থেকে নেমে পড়ল।মন্দাকিনী বলল,দীনুদা আপনি কোথাও পার্ক করুন ফোন করে আপনাকে ডেকে নেবো।
ফুটপাথে সারি সারি পুরানো বইয়ের দোকান।ওরা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে।
--তুই কি বই খুজছিস?শ্রেয়া জিজ্ঞেস করল।
-- History Of Literature নজরে পড়লে বলিস।
একটা বইয়ে নজর আটকে যায়।UPSC Previous Question Papers.মস্তানের জন্য অনেকদিন ধরে ভাবছে ওকে নিয়ে কি করবে।এখন মনে ইউপিএসসি-র পরীক্ষায় বসালে কেমন হয়।দোকানদারকে বলল,ঐ বইটা দিন তো।
বইটা নিয়ে পাতা ওল্টাতে থাকে।মন্দাকিনী বলল,কিরে ইউপিএসসিতে বসবি নাকি?
--বসলেই হয়।প্রজ্ঞা বলল।
খান তিনেক বই দরাদরি করে কিনে ব্যাগে ভরে রাখে।কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে কিছু বই-টই কিনে ওরা ফেরার জন্য গাড়ীতে চাপে।গাড়ি বিবেকানন্দ রোডের মোড়ে থামে।কেউ নামছে না দেখে মন্দাকিনী বলল,কিরে প্রজ্ঞা নামবি না।
--ভাবছি তোর বাড়ী অবধি যাবো।
মন্দাকিনী আর শ্রেয়া ইঙ্গিতবহ দৃষ্টি বিনিময় করে।গাড়ী চলতে শুরু করল।আরজিকরের মোড়ে গাড়ী থামতে শ্রেয়া নেমে গেল।গাড়ী আবার চলতে শুরু করে।মন্দাকিনী জিজ্ঞেস করল,তুই কোথায় যাবি বললে পৌছে দিতে পারি।
--পাকপাড়ায় নামিয়ে দিলেই হবে।
প্রজ্ঞা হয়তো বলতে চায়না,মন্দাকিনী পীড়াপিড়ি করেনা।নর্দান এভিনিউতে বাড়ীর সামনে গাড়ী থামলে মন্দস্কিনী নেমে বলল,দীনুদা ও যেখানে যেতে চায় পৌছে দিয়ে গাড়ী গ্যারাজ করে দিও।
সেভেন্ট্যাঙ্কস-র মোড়ে এসে প্রজ্ঞা বলল,এখানে থামান।এখান থেকে আমি চলে যেতে পারবো।
ছুটির পর কৃষ্ণা এসে ধরল,এ্যাই শিস এখন কোনো কাজ নেইতো?
--আজ একটা জরুরী কাজ আছে।
--কাজ আর খালি কাজ ফেমিলির চেয়ে বড় তোমার কাজ?
ফ্যামিলি শুনে আশিসের বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে ওঠে।কৃষ্ণা বলল,মা কবে থাকে বসে আছে জামাইকে দেখবে--।
--ঠিক আছে আমি তো পালিয়ে যাচ্ছিনা।
--শোনো কাল কিন্তু কোনো কথা শুনবো না,তুমি কোনো কাজ রাখবে না।