09-10-2021, 12:40 PM
(This post was last modified: 13-01-2022, 07:20 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৪১।।
বাসায় ফিরে পোশাক বদলে মনসিজ শুয়ে পড়ল।উশ্রীকে পড়ানো হলনা। কল্পনা খুব কনফিডেণ্টলি বলছিল কথাগুলো।অবশ্য মনসিজ ওর সব কথা ধরেনা।অনেকে সুযোগ নেয় কথাটা মেনে নিতে পারেনা।দিদিমণি বলেছিলেন,কাউকে জোর ধরে রাখতে চাইনা ইচ্ছে হলে তুমি চলে যেতে পারো।এর মধ্যে সুযোগ নেওয়ার কি আছে।আজকেই প্রথম সরাসরি কথা বলল কতটুকু চেনে তাকে।বঙ্কিম বলছিল মেয়েদের তিনটে চোখ থাকে। ভালো লাগছিল কল্পনার কথা শুনতে। সব তালগোল পাকিয়ে যায়।আরেকটু কথা বলার ইচ্ছে ছিল।
হিমানীদেবী ঢুকে বললেন,ক্তে।এসেই শুয়ে পড়লি?শরীর খারাপ?
মনসিজ উঠে বসে বলল,মা আজ কিছু খাবো না।
--কেন?হিমানীদেবী কপালে হাত দিলেন।
--না না দিলীপের বাড়ীতে অনেক খেয়েছি আর খেতে ইচ্ছে করছে না।
--দিলীপের খোজে ওর দিদি এসেছিল কোথায় ছিল দিলীপ?
--পাড়াতেই ছিল।দিলীপ সেকেণ্ড ডিভিশনে পাস করেছে।কয়েকমাস ওকে পড়িয়েছিলাম সেজন্য দ্বিজেনবাবু মানে ওর বাবা আমাকে ধন্যবাদ জানালেন।জানো মা দ্বিজেনবাবু বাবাকে চিনতেন।
--ঠিক আছে না খেলে শুয়ে পড়।ঠাকুর-পোর সঙ্গে দেখা করবি তো?
--হ্যা কাল যাবো।
হিমানীদেবী চলে গেলেন।মনসিজ ভাবে রেজাল্ট বেরোলে খবর দিতে বলেছিলেন তাপসকাকু।রেজাল্ট এখনো বের হয়নি তাহলে দেখা করতে বললেন কেন?অন্যকোনো চাকরির সন্ধান পেয়েছেন নাকি?চাকরিটা পেলে অফিস আর বাড়ী আর কোনো ব্যাপারে জড়াতে চায় না।আরও তো কতজন আছে তবে তার সঙ্গেই কেন এমন হবে।এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে মনসিজ।
কাল আবার কলেজ আছে তাড়াতাড়ি ঘুমোবার চেষ্টা করে মণিকুন্তলা।নিঃসাড়ে পড়ে আছে বিছানায় ঘুম আসেনা।কাল রাতে মোন ছিল পাশে,আজ একেবারে একা।সবিতা কাল সন্ধ্যবেলা অফিস করে ফিরবে।ওর যদি ফোন থাকতো তাহলে এখন একটু কথা বলা যেতো।মাস্টার মশায়ের স্ত্রী মারা গেছেন ক্যান্সারে ভুগছিল।কথায় কথায় উনিই আভাস দিলেন,মণিকুন্তলা বলেছিল তার কথা মোটামুটি খুলে বলেছিল।শুনে উনি দুঃখ করলেন।রমনের ঠিকানা নিয়ে নিজেই বললেন ডিভোর্সের জন্য কথা বলবেন।কতদূর কি করলেন জানা হয়নি।আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করা সম্ভব নয়।
পরদিন খাওয়া দাওয়া সেরে মনসিজ বেরিয়ে পড়ল।ঠিকানা খুজে বের করতে কত সময় লাগবে কে বলতে পারে।রাস্তায় বেরিয়ে দেখল শুভ সেজেগুজে কোথায় চলেছে।কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,লাটুবাবু লেন কোথায় বলতে পারবি?
--এভাবে কেউ বলতে পারে,কলকাতা কত?
--কলকাতা সাত।
শুভ মনে মনে কি যেন ভাবে তারপর বলল,মনে হচ্ছে মানিক তলা বিডন স্ট্রীট কোথাও হবে।
--হেদুয়ার কাছে।
--আগে বলবি তো।হেদুয়া মানে আজাদ হিন্দ বাগ।বেথুন কলেজের কাছাকাছি--তুই হেদুয়া নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করবি।
--তুই কোথায় যাচ্ছিস?
--অনেকদিন সিনেমা দেখা হয়না দেখি কোথাও--।
বলতে বলতে বাস স্ট্যাণ্ডের কাছে পৌছে দেখল শিউলি দাড়িয়ে।মনসিজ বুঝতে পারে শুভর এত কেন সাজগোজ।বাস আসতে ওরা উঠে পড়ল।শিউলি বসার জায়গা পেয়ে যায়।শুভ শিউলির সামনে রড ধরে দাঁড়িয়ে মনসিজ ইচ্ছে করেই একটু দূরে দাড়ায়।বঙ্কিম বলছিল শুভ ভয়ে ভয়ে আছে গাড্ডু হলেই প্রেম কেচে যেতে পারে,কথাটা মনে পড়তে মনসিজের হাসি পেল।গল্প কবিতায় পড়েছে প্রেম অন্ধ জাত ধর্ম বয়স মানে না।এখন দেখছে প্রেম খুব হিসেবি।হাতি বাগান আসতে শুভ বলল,আসিরে।আর কয়েক স্টপেজ পরেই বিডন স্ট্রীট।
বাস থেকে নামতে দেখল প্রায় চারটে বাজে।এক্টু তাড়াতাড়ি এসে পড়েছে।দু-একজনকে জিজ্ঞেস করতে লাটবাবুর হদিশ পেতে অসুবিধে হল না।ঠিকানা মিলিয়ে দরজার কড়া নাড়তে কিছুক্ষন পর ভিতর থেকে মহিলা কণ্ঠে সাড়া এল,কে-এ-এ?
--তাপসবাবু আছেন?
--বাড়ীতে নেই।পাঁচটার পরে আসুন।
দরজা খুললে কথা বলা যেতো তাপসবাবু তাকে আসতে বলেছিলেন।মনসিজ হিসেব করে প্রায় ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করতে হবে।একটা ঘণ্টা সে কি করবে ভাবতে ভাবতে রাস্তার পাশে বিশাল পার্ক দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল,এটাই বুঝি আজাদ হিন্দ বাগ।গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকলো ভিতরে বিশাল জলাশয়,চারদিক বাধানো রেলিং দিয়ে ঘেরা।চার পাশ দিয়ে পিচের রাস্তা।রাস্তার ধারে বড় বড় গাছ গাছের নীচে কাঠের বেঞ্চ।ছায়া দেখে একটা বেঞ্চে বসল।পার্কে লোকজন বেশী নেই। পুকুরের একদিকে সুইমিং পুল।এক কোনায় কতকগুলো বাচ্চাকে সাতার শেখাচ্ছে এক ভদ্রলোক।এইসব দেখতে দেখতে সময় বেশ কেটে যাচ্ছে।সময় যত পেরোচ্ছে লোক বাড়তে থাকে।তিনজন মহিলা হাটতে হাটতে আসছে।কাছাকাছি আসতে চমকে ওঠে মনসিজ।তার সামনে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে একজন দাঁড়িয়ে পড়ে।মনসিজ অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল।মনে মনে ভাবে ও এখানে কোথা থেকে এল।আবার ভাবে ভুল দেখছে নাতো?দুটি মেয়ে এগিয়ে গিয়ে পিছন ফিরে ডাকল,কিরে প্রজ্ঞা?
--তোরা যা আমি আসছি।
মনসিজ বুঝতে পারে ভুল দেখেনি,উঠে চলে যাবে কি না ভাবে।মেয়েটি কাছে এসে বলে,কিরে মস্তান তুই এখানে?
কথাটা তাকে বলছে যেন বুঝতে পারেনি এমন ভাব করে মনসিজ।গায়ে গতরে বাড়লেও আচার আচরণ সেই আগের মত আছে।একা একা এতদূর চলে এসেছে কি দস্যি মেয়েরে বাবা।
--কিরে কথা কানে যাচ্ছে না?
মনসিজ অবাক হয়ে তাকায়।মেয়েটি বলল,কেলো মারা গেছে শুনেছিস?
কথাটা কানে যেতেই মনসিজের মুখ থেকে বেরিয়ে এল,কেলো মারা গেছে!কবে কিভাবে মরল?
--তুই চলে আসার বছর খানেক পরে।এরা যেভাবে মরে।ওয়াগান ভাংতে গেছিল বিশে কোনোমতে বেচে যায় গুলি কেলোর পিঠে লেগে এফোড় ওফোড় হয়ে গেছিল।রেল লাইনের ধারে পড়েছিল সারারাত।সকালে পুলিশ এসে বডি নিয়ে গেল।
মনসিজের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
--কিরে চিনতে পেরেছিস?
মনসিজ চোখ মুছে বলল,তোমরা ওখানেই আছো?
--যাবো কোথায়?
--প্রদোষদাও ওখানে থাকে?
--দাদা বিয়ে করেছে।বউ রেখে বিলেত গেছে এফ আরসিএস পড়তে।তোরা কোথায় থাকিস?
--আমরা সিথিতে থাকি।এখানে একটা দরকারে এসেছিলাম।আমার সময় হয়ে গেছে আমাকে যেতে হবে।
মনসিজ উঠে পার্কের বাইরে চলে আসে।মনসিজ জিজ্ঞেস করল,তুমি এখানে কেন বললে নাতো?
রাস্তার ধারে কলেজ দেখিয়ে বলল,আমি এখানে পড়ি।
--চাকদা থেকে তুমি বেথুনে পড়তে আসো?
--কেনো তোকে হাদা বলি বুঝেছিস?আমি সিমলায় মাসীর বাসায় থাকি।হোস্টেলে ব্যবস্থা করেছিলাম মাসী জোর করল তাই--ওহো আসল কথাই জিজ্ঞেস করিনি মাসীমা মেশোমশাই কেমন আছে?
মনসিজ চুপ করে থাকে।
--কিরে কি জিজ্ঞেস করছি?
--বাবা মারা গেছে।
--কি বললি মেসোমশাই---প্রজ্ঞা স্তম্ভিত তারপর নিজের মনে বলে,মাসীমা একা আর আমি জানিনা!
একটা চলন্ত ট্যাক্সি দেখে হাত তুলে দাড় করিয়ে বলল,ওঠ।
--কোথায় যাবো?
--মাসীমার সঙ্গে দেখা করতে হবে--ওঠ।
--আমার জরুরী কাজ আছে--।
--তোকে বলেছি উঠতে।
দস্যিটাকে বিশ্বাস নেই রাস্তার মধ্যে আবার কি করে ভেবে তাপসকাকুর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে গিলে ট্যাক্সিতে উঠে বসল।মনসিজ আড় চোখে দেখল এতক্ষন চোটপাট করছিল মেয়েটা এখন কেমন নিস্তেজ শান্ত হয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।বেলি মায়ের কাছে প্রায়ই আসতো।ট্যাক্সি ছুটে চলেছে শ্যামবাজার পাচ মাথার মোড় ছাড়িয়ে বিটি রোড ধরল।
মোবাইল বাজতে কানে লাগিয়ে বলল,এক বন্ধুর বাসায়...ফিরতে একটু দেরী হবে....চিন্তা কোরোনা রাখছি।