06-10-2021, 04:42 PM
(This post was last modified: 12-01-2022, 07:37 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৪০।।
ঘড়িতে দুটো বাজে।মনসিজ নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়ল।এখন সবাই ব্যস্ত একটু বেলা হোক তারপর বেরোবে।আগে কখনো রাতে থাকেনি।কেমন আসক্ত হয়ে পড়ছ দিন দিন।এলিনাবৌদির কথা মনে পড়ল।এটা অনৈতিক অনুচিত।দিদিমণিকে দেখে এমন মায়া হল তখন এইসব উচিত অনুচিত মনে হয়নি।আসলে ওনার সঙ্গে যাওয়াই উচিত হয়নি।বুঝবে কি করে এমন কাণ্ড ঘটবে।পরক্ষনে মনে হল অবচেতনে তার মনেও আগ্রহ ছিল না তো।এক সময় সেই বলেছিল সঙ্গদোষে খারাপ হয়না ব্যক্তির মধ্যে প্রবণতা না থাকলে কেউ কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়না।মনসিজ মনে মনে স্থির করে কোনো মহিলা ডাকলেও একা যাবে না।আজ উশ্রীকে পড়াবার কথা সেখানে তো সঙ্গে লোক নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।এইসব আবোল তাবোল ভাবতে কখন চোখ লেগে গেছিল।
আবার কে কড়া নাড়ে।মণিকুন্তলা বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দেখল সুপর্ণা চৌধুরী।চোখে কাজল ঠোটে লিপস্টিক খুব সাজগোজ করেছে।সাজগোজ দেখাতে এল নাকি?মণি কুন্তলা বলে, বেরোচ্ছেন?
--হ্যা বেরবো।এক্টু তাড়াতাড়ি হয়ে গেল ভাবলাম আপনার সঙ্গে গল্প করি।
--হ্যা আসুন।
ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করে,চা খাবেন?
--না না আমার জন্য আবার--।
--আমি তো চা করতামই।
--তাহলে করুন।
খালি খালি এল, নিশ্চয়ই কিছু মতলব আছে।কোনোদিন তো তার ঘরে আসেনি,বরং শিক্ষিকা বলে তাকে এড়িয়ে চলে, চা করতে করতে মণিকুন্তলা ভাবে।দু-কাপ চা নিয়ে মণিকুন্তলা ফিরে এসে দেখল মিসেস চৌধুরী সন্ধিৎসু চোখে সারা ঘরে দৃষ্টি বোলাচ্ছে।চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,নিন চা নিন।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল,বাঃ সুন্দর হয়েছে।মনে হচ্ছে খুব দামী চা।
মনসিজের কথা মনে পড়ল,বলছিল তোমার রান্নার হাত খুব ভাল।
--কাল গোঙ্গানীটা শুনে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল।
আবার সেই প্রসঙ্গ।মণিকুন্তলা হেসে বলল,কিসের গোঙ্গানী?
--ও আপনি বুঝবেন না।বিয়ে-থা তো করলেন না।অবশ্য পরিণত বয়স্ক আপনি তাহলেও কি বলব--।
--অসুবিধে থাকলে কি দরকার।
--না অসুবিধের কি আছে মানে বিয়ে করলে বুঝতেন ঐ সময় মেয়েরা ওরকম শব্দ করে।
মণিকুন্তলা মজা করার ইচ্ছে হল জিজ্ঞেস করে কোন সময় বলুন তো?
সুপর্ণার মোবাইল বেজে উঠতে ফোন ধরে বলল,তুমি এসে গেছো...হ্যা-হ্যা আমি বেরিয়ে পড়েছি। ফোন রেখে বলল,আসি মিস নন্দী উনি দমদম এসে গেছেন।
মণিকুন্তলা ভাবে মিসেস চৌধুরী কি তাকে সন্দেহ করছে?বয়ে গেছে নিজে এত বয়স হল শনিবার এলেই চোদাতে ছোটো তোমার খাই তো কম না।ভাবছে এই মেস ছেড়ে দিয়ে আলাদা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকবে।
মায়ের ডাকে উঠে বসে দেখল,চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মা।পরীক্ষার পর আর হরলিকস দেয় না।
হিমানী দেবীর একটা গুণ তিনি কখনো বলেন না এটা নেই ওটা নেই।এই আনতে হবে ঐ আনতে হবে।যা আছে তাই দিয়ে তিনি চালিয়ে নেন।মনসিজের হঠাৎ কি হল মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারেনা।কেমন এক আত্মগ্লানিতে মায়ের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হয়।হিমানীদেবী জিজ্ঞেস করেন,ঠাকুর-পোর সঙ্গে দেখা করবি কখন?মানুষটা বাড়ি বয়ে এসেছিল কিছু দরকার ছিল হয়তো।
--কাকু বলেছিল রেজাল্ট বেরোলে খবর দিতে।
--তা হোক তবু তুই একবার দেখা করে আসিস।
--ভাবছি কাল যাবো।
চা শেষ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় চিরুণী বুলিয়ে বেরিয়ে পড়ল মনসিজ।রকের কাছাকাছি হতে বুঝল একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়েছে।রকে কেউ আসেনি।ছুটির দিন বেলা করে খাওয়া দাওয়া হয়েছে।ভাবল বঙ্কার বাসায় যাবে কিনা।ভাবতে ভাবতে হাটতে থাকে।দূরে মনে হচ্ছে বঙ্কিম হ্যা তাকে দেখে হাত নাড়ছে।বঙ্কিম কাছে এসে বলল,তুমি শালা কামাল করেছো।
--দিলীপের খবর কি?
--ঐ কথাই তো বলছি শালা সেকেণ্ড ডিভিশনে পাস করেছে।ওর দিদি তোর কথা খুব বলছিল।দাড়া এক মিনিট--।বঙ্কিম কাকে ফোন করে,হ্যা এসো দোলনা পার্কে আছি।ফোন রেখে বলল,চল দোলনা পার্কে।
--কাকে ফোন করলি?
--কনিকে।ও আসছে।
--তাহলে আমি আসি কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না।
--আবে তোর সঙ্গে কথা বলার জন্য আসছে।অনেকদিন ধরে বলছিল--।
কল্পনা তার সঙ্গে কি কথা বলবে?সেদিন দেখা হয়েছিল কিছু বলেনি।মনসিজ ভেবে পায় না কল্পনা কি বলতে পারে।দিলীপের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে।বঙ্কিম বলল,যাব দিলীপের বাসায় যাব।
দুজনে দোলনা পার্কে ঢুকে গাছের নীচে একটা বেঞ্চে বসল।বঙ্কিম বসে বলল,তুই বলছিলিস না কাবাব মে হাড্ডি।আমাদের সম্পর্ক এখন খুব খোলামেলা।শুভ নিমুর মনে ভয় শালা যদি পরীক্ষায় গাড্ডু মারে পেরেমের দফারফা।কল্পনা বলেছে তুমি পাস করলে খুশি হব ফেল করলে কষ্ট হবে তবু তুমি আমারই।
মনসিজ ভাবে কল্পনার সঙ্গে সম্পর্কের পর বঙ্কিম অনেক বদলেছে।জিজ্ঞেস করল,পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
--মনে হয় পাস করে যাব।জানিস মনা মাদুর্গার যেমন ত্রিনয়ন মেয়েদেরও তেমনি আরেকটা চোখ আছে।ওরা অনেকটা দেখতে পায়।
--তোর এরকম মনে হল কেন?
--আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ওর আলাপ নেই,এমনি মুখ চেনে।কিন্তু সবার সম্পর্কে ওর স্পষ্ট ধারণা আছে।তোর সম্পর্কে অন্যরকম ধারণা।
--অন্য রকম ধারণা মানে?আমি মারপিট করি--।
--আরে না না তোর খুব প্রশংসা করছিল।দিলীপের ব্যাপারে আশিসদা কি বলেছে ও না শুনেই বলে দিয়েছে।
--আশিসদা কি বলেছে?
--বলছিল দিলীপ খুব ঝেড়েছে মানে টুকলি ফাই করেছে।ঐ তো কোনি এসে গেছে।
মনসিজ লক্ষ্য করে কল্পনা আসছে চেহারায় একটা অভিভাবক সুল্ভ ছাপ।কাছে এসে বলল,কেমন আছেন?মনসিজের পাশে বসতে বসতে বলল,বাড়ীতে গিয়ে পাওয়া যায়না কোথায় গেছিলেন?
বঙ্কিমের পাশে না বসে তার পাশে বসল মনসিজ একবার বঙ্কিমকে দেখে, একেবারে নির্বিকার।বলল,হালিশহরে মামার ওখানে গেছিলাম।
আপনি কেমন আছেন?
--তুই ওকে আপনি আজ্ঞে করছিস কেন?বঙ্কিম বলল।
--হ্যা আপনি আমাকে তুমি বলতে পারেন।কল্পনা বলল।
--সবাই তুমি-তুমি করলে লোকে ভুল বুঝবে।মজা করে বলল মনসিজ।
কল্পনা খিল খিল করে হেসে বলল,কথা শুনে লোকে বোঝে না যাদের বোঝার তারা ঠিক বুঝতে পারে কার সঙ্গে কি সম্পর্ক।আপনাকে বাইরে থেকে দেখলে কড়া মনে হলেও ভিতরে ভিতরে আপনি খুব নরম।
মনসিজ অবাক হয়।বঙ্কিমের দিকে তাকিয়ে দেখল ওর মুখে আত্মতৃপ্তির ছাপ।বঙ্কিম বলছিল মেয়েদের আরেকটা চোখ আছে।মনসিজ জিজ্ঞেস করে,আমার সম্পর্কে আপনার আর কি ধারণা?
--দেখুন মনসিজ ধারণা ব্যক্তিগত সবার সঙ্গে নাও মিলতে পারে।আপনার মধ্যে সব সময় একটা দ্বিধারভাব,যেকথা বলতে চান তার উল্টোটা বলে ফেলেন।অন্যের জন্য ফিল করেন, আপনার নরম স্বভাবের সুযোগ নেয় অনেকে।
মনসিজের বিস্ময়ের ঘোর কাটে না।কল্পনা এসব কি বলছে।আগে তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।
কল্পনা বলল,আপনাকে একটা অনুরোধ করব ওকে একটু দেখবেন।ওর ভিতরে বাইরে এক লোকে হয়তো ওকে বোকা ভাবতে পারে কিন্তু আমি যতটা জেনেছি ও মোটেই বোকা নয়।
বঙ্কিম লজ্জা পায় অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে এমন ভাব করে যেন ওর কথা বলছে না।বঙ্কিমের দিকে ফিরে বলল,তোমরা দিলীপের বাসায় যাবে বলছিলে--আমি আসি।আপনার সঙ্গে কথা বলে খুব ভাল লাগল।
--কথা আর হল কোথায়?
--হবে হবে সময় তো ফুরিয়ে যাচ্ছে না।কল্পনা হেসে বলল।
কল্পনা চলে যেতে মনসিজ কল্পনার বলা কথাগুলো নিয়ে মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকে।বকিম জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছিস?যাবি তো?
মনসিজ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,বঙ্কিম তোকে একটা কথা বলছি।লোকে অনেক কিছু পায় আবার অনেক কিছু পায় না।তুই যা পেয়েছিস কোনোদিন হারাস না।
--তুই কোনির কথা বলছিস?সত্যি সেদিন আমি ওর সঙ্গে যা করেছিলাম ভেবে খুব খারাপ লাগে।
দুজনে দিলীপের বাড়ির দিকে হাটতে থাকে।সন্ধ্যা নামছে গাছের পাতায়।রাস্তার ধারে বাতি স্তম্ভে আল জ্বলে উঠেছে।মনসিজ বলল,তুই লাটুবাবু লেনের নাম শুনেছিস?
--লাটুবাবু--ছাতুবাবু নামগুলো শোনা-শোনা লাগছে--।
--হেদুয়ার কাছে।
--ও হ্যা বিডন স্ট্রীট ঐখানেই তো দেব বাড়ী।হেদুয়ার মোড়ে নেমে জিজ্ঞেস করলে সবাই বলে দেবে।
দোতলার বারান্দায় দাড়িয়েছিল মীনাক্ষী।ওদের দেখে নীচে নেমে আসে।কথাটা মনের মধ্যে ঘুরছিল একসময় মনসিজ বলেই ফেলল,হ্যারে কল্পনা কি জ্যোতিষের বই-টই পড়ে?
--ধুস কোনি ঐসব বিশ্বাস করে না।ও বলে জ্যোতিষ যদি ভাগ্য ফেরাতে পারে তাহলে জ্যোতিষীরা নিজেদের ভাগ্য ফেরায় না কেন?
দিলীপের বাড়ীর কাছে যেতেই দেখল দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে মীনাক্ষী।
মীনাক্ষী ওদের বৈঠকখানায় বসিয়ে বলল,বসুন আমি বাবাকে বলছি।
--বাবা কেন দিলীপ নেই?
--দিলু বাবার সঙ্গে কথা বলছে।বাবা আপনাকে একবার দেখতে চায়।
বাবার সঙ্গে কথা বলছে,শুনেছিল ওর বাবা ওর সঙ্গে কথা বলতেন না।তাহলে সম্ভবত পাস করার পর বাবা-ছেলের সম্পর্কে বদল হয়েছে।ব্যাপারটা মনসিজের ভাল লাগে।
একটু পরেই বাবাকে নিয়ে দিলীপ ঢুকে বলল,কিরে তুই গেছিস তো গেছিস।
ওরা উঠে দাড়াতে দ্বিজেনবাবু বললেন,বোসো বাবা বোসো।তারপর নিজে বসে বললেন,তুমি মনোময়বাবুর ছেলে?
--আজ্ঞে হ্যা উনি মারা গেছেন।
--হ্যা আমি জানি আমার সঙ্গে অনেক কথা হতো।
--আপনি বাবাকে চিনতেন?
--হ্যা আমরা প্রায়ই একই বাসে অফিস যেতাম।উনি বেশি কথা বলতেন না।শান্ত প্রকৃতির মানুষ।ব্যাঙ্ক হতে লোন নিয়ে ফ্লাট কিনেছেন খুব সমস্যার মধ্যে ছিলেন।অথচ উনি যা চাকরি করতেন ইচ্ছে করলেই লোন শোধ করা ওর কাছে কঠিণ ব্যাপার ছিল না।সবাই সব পারেনা।
মীনাক্ষী দু-প্লেট মিষ্টি নিয়ে ঢুকলো।
--নেও মিষ্টিমুখ করো।
ওরা খেতে থাকে।দ্বিজেনবাবু বললেন,ছেলেকে আবার ফিরে পাবো কখনো ভাবিনি।