29-09-2021, 10:35 PM
(This post was last modified: 30-09-2021, 12:24 PM by dimpuch. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
ঘরের সবাই এই কথোপকথন উপভোগ করছে। ভিতরে ভিতরে সবাই বুঝছে যে ওজু আজ প্রচণ্ড খুশি নিজের পরিচয় সবার কাছে উন্মুক্ত করে আর মিথ্যা ফাল্গুনির ছদ্মবেশের দরকার নেই
…… শোন ওজু, যদি জানতাম তুইই ওজু আমি কিছুতেই সূর্য কে পারমিশন দিতাম না তোকে ব্যাবহার করার, বুঝেছিস………ব্যাজার মুখে চেয়ে ওজু। কুন্তি সব দেখছে আর মুখ টিপে হাসছে। কুন্তি বুঝতে পারছে তার ফাগু ভিতরে ভিতরে আনন্দে ফেটে পড়ছে।
…………শোন ওজু সবাই যা কিছু করেছে সব তোমার জন্য। রোহিতরা বেঁচে থাকলে তোমাকে মারতই। তাই যা হয়েছে ভালো হয়েছে। হ্যাঁ তুমি বলতে পার আমরা মৃত্যুর পুজারিকে বাধা দিই নি কেন? কারন আমরা চেয়েছিলাম ৩ ভাই শাস্তি পাক। তোমাকে না জানিয়ে আমি প্লান সাজিয়েছি। ওজু ওই মৃত্যুর পুজারি, ৩ ভাইকে শাস্তি দেবার সময় যদি জানত যে তার প্রানপ্রিয়া তাকে কভার করছে তার কি পুজোয় ব্যাঘাত ঘটার চান্স থেকে যেত না?
“ কোথায় সে লুকিয়ে, সাপে না কাটে, বাজে পোকা থাকতে পারে। ওর আসা ঠিক হয়নি” এই ধরনের চিন্তা মাথায় আসা কি স্বাবাভিক নয়? ঠিক এই কারনেই কোন সার্জন তার আপনজনের অপারেশন করে না। ব্যাক অফ দা মাইন্ড এ এই ধরনের ভাবনা থেকে যায় তা সে যতই সাবধান হোক। তোমাকে আমি ব্যাবহার করেছি কারন তোমার থেকে ভালো আর কেউ আমার জানার মধ্যে নেই। তোমারও হিসাব মিটানোর ছিল ওদের সাথে ,তুমি কি দুঃখিত? তা তো না, তাই তো ?ওজু তুমি বলতে পার যে কেন তোমাকে সব খুলে বলছি, কেননা এখন তো সব শেষ আর এই সব প্লান আমি ছাড়া আর দুজন মাত্র জানে। তাহলে তোমায় কেন বলছি, এই প্রশ্ন মনে হতে পারে। কারন অবিনাশ বর্মার নিকেশে আমরা অভিনন্দন পেয়েছি অনেক। কিন্তু আমরা জানি তুমি না থাকলে এই কাজ সম্ভব হতো না। তাই মণ্ডল সাহেব আর আমি তোমায় আমাদের তরফে শুভেচ্ছা জানাই ……………লঘু স্বরে আবারও সূর্য
নিজের বা গালে হাত বুলিয়ে ওজু
………আমি কোনোদিন ভুলবো না যে গব্বর সিং আমায় চড় মেরেছিল………সূর্য আর সিরাজ হেঁসে ফেলল
……নতুন টাউনে সেই দিন সামার গুলি আমার পেটে লেগেছিল, কেউ নিশ্চয়ই সামা কে গুলি করেছিল। না হলে সামার গুলি মিস হয় না। সে কে?.........কুন্তি এগিয়ে এসে কানে কানে
………” মেঘের ওপর মেঘ করেছে রঙের ওপর রঙ ” কি করে একা একা তোমাকে ওখানে ছেড়ে দিতে পারি? তাই জানালা থেকে…এবার একটু হাস
………তোরা মিনিট ৫ নিজেদের ভিতর কথা বলে নে………সিরাজ আর সূর্য বেরিয়ে গেল
………ওজু ক্ষমা করবি না……… পার্থ এগিয়ে এসে হাত ধরে। ওজু তাকিয়ে থেকে ঝট করে মাথা টেনে মুখের কাছে এনে কঠিন চোখে
……শালা। তুই একটা একদম শালা, বোকাচোদা।
………কুন্তির সামনে গালাগাল দিচ্ছিস, ও ছোট বোন, আমি সম্পর্কে তোর থেকে বড় গুরু
………কুন্তি এখন আমার বৌ কিন্তু বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে “ ইসকা সাজা মিলেগি জরুর মিলেগি” , এই বোন গুলোই যতো টেনে ধরে, তাই না ধনু
………পার্থ বল, পার্থ
……ছাড় তো, ষতসব। কুন্তি কে দেখিস।সম্ভব হলে কুন্তি আর রোম কে নিয়ে ফুল আর হাসনুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিস। সম্ভব হলে বাড়ি নিয়ে যাস লুকিয়ে। কুন্তি, রোমের ওখানে যদি অসোয়াস্তি হয় ফুলের কাছে থেক। মায়ের যত্ন পাবে। বল ফুলকে গব্বর সিং আমায় চড় মেরেছে………এই প্রথম হাসল ৩ জন পরস্পরকে জড়িয়ে
কমিশনারের ঘরে সিরাজ আর সূর্য দাঁড়িয়ে, হাতের কাজ শেষ করে,
……… সূর্য, ছেলেটি কি বলল বল তো। কিছুই তো বুঝলাম না। ও কি করত আগে
………স্যার আমারও ঠিক মনে আসছে না , কি কি বলল হরবড়িয়ে, স্যার আপনি বলতে পারেন
……আমার ঘুম পাচ্ছিল তাই কিছু শুনিনি………সিরাজের উত্তর
………শোন সূর্য মণ্ডল সাহেবের ঘরে নাতি আসছে, ছেলেটিকে ধরে রেখনা। ওই স্টিলেটোতে কোন ছাপ পাওয়া যায় নি, তাই তো? আর ছুরেছিল তো সামা ওজু কে লক্ষ করে, ওজু সরে গেছে তাই সাহেব মরেছে। বাপ বেটা মরেছে পার্থর গুলিতে আর সামা আমাদের মেয়েটার গুলিতে। সোজা কেস। ষতসব, সমাজের উচ্ছিষ্ট তাদের জন্য সময় আর পয়সা নষ্ট।………অনেকদিন পর ঘর ফাটিয়ে হাসলেন সিরাজ বাকি দুজনের সাথে।
……… বলতে ভুলে গেছি, দিল্লী থেকে স্পেশাল অভিনন্দন মেসেজ এসেছে অবিনাশ শেষ হয়েছে বলে।
রাত ১১ টা বেজে গেছে। সিরাজের ঘরে বসে জোনাকি এখনও কেঁদে চলেছে। শঙ্কর একটু আগে উঠে গেছে। সিরাজ দু বার চা দিয়েছে
………একবার সিরাজ, একবার তুমি ওর মুখোমুখি বসতে দাও প্লিস। ওজু একবার মা বলে ডাকল না , তাকাল না। সবার সামনে শুনতে হোল ওজুর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী, শুধু বলতে চাই ভুল বুঝিস না ওজু, ভুল বুঝিস না।গত ১৪ বছর তোকে খুজছি। তোর মিনিকে জিজ্ঞাসা কর। সব যায়গায় তোকে খুজি। একবার দেখা করিয়ে দাও সিরাজ , হাত জোর করে অনুরোধ করছি
………কি করছ জোনাকি। হাত জোর ফোর ছার।হাই প্রোফাইল কেস, খবর বাইরে গেলে প্রেস ছিঁড়ে খাবে, আর একটু বস দেখি কি করা যায়।
অন্ধকার আঁকড়ে ধরেছে সমস্ত লাল বাড়ি। দূরে কোথাও কুকুর দু একটা ঘেউ ঘেউ করে উঠছে মাঝে মাঝে। ঘর ঘর করে শব্দ তুলে চলে গেছে শেষ ট্রাম সাথে সাথে চার্চের ঘড়ি জানিয়ে দিয়েছে মধ্য রাত পার, বেজেছে ঘণ্টা ১২ বার। আকাশের দিকে তাকালে বুক জোড়া অগুন্তি তারা দেখতে পাওয়া যায় এই সময়। কিছু মাতাল এই নিঃশব্দের শব্দ খান খান করে ভাংছে মাঝ রাতে ফুটপাথ অদল বদল করে। লাল বাড়ি তে জেগে অতন্দ্র পুলিশ। খুব আস্তে আস্তে ওজুর সেলের সামনে সিরাজ নিয়ে এলো জোনাকিকে। সেলে অল্প আলোর বাতি। লোহার গেটের দিকে পিঠ করে ‘দ’ হয়ে শুয়ে ওজু, ফুলে ফুলে উঠছে। কাঁদছে ওজু বুকের কাছে হাঁটু মুড়ে নিঃশব্দে। নোংরা মেঝেতে বসে জোনাকি গরাদের ভিতর হাত ঢুকিয়ে ওজু কে ডাকবে, ঠিক তখনই ছিটকে এলো ওজুর কান্না---মা