29-09-2021, 10:33 PM
(This post was last modified: 30-09-2021, 12:16 PM by dimpuch. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
কমিশনারের ইঙ্গিতে চা দিয়ে গেছে সবাই। কে চা খেতে খেতে ওজু মিনির সাথে খুনসুটি করছে, মিনির হাত নিয়ে কুন্তির হাতে দিয়ে “ প্রনাম কর, মাথায় ঠেকা” মিনি কুন্তির হাত নিয়ে নিজের মাথায় ঠেকিয়ে চুমু খেল হাতে। হাসি মুখে কুন্তি দেখছে চুপ করে।
……তারপর ওজু
……আমার ২০ বছর বয়েসে আবার ভাগ্য খেলা খেলল। ভোট এলো। ওখান থেকে দাঁড়াল অবিনাশ বর্মা। জেতার জন্য টাকা লাগাল প্রচুর। সিংজি কে প্রচুর টাকা দিয়ে হুকুম করলো এলাকার সব ভোট চাই। ওই অবিনাশ বর্মার সাথে এসেছিলো ৩ কুখ্যাত গুন্ডা। শ্যাম, কালিয়া আর বাসদেও। ওরা সিংজির ওখানেই থাকত খেত আর ভোটের যা যা করার করত। অঞ্জু দিদি আমাকে বলেছিল “ বাচুয়া, লোকগুলো ভালো না রে, খুব বাজে”। আমি শুনে আলমদের বলেছিলাম। ভোটে অবিনাশ জিতল সিংজির জন্য। অবিনাশ চলে গেল কিন্তু এই ৩ ভাই সিংজির পিছনে পড়ল।“ সিংজি, বর্মা সাহেব তোমায় ২২ লক্ষ দিয়েছে, তুমি হিসাব দাও কি খরচ করেছ”। এই নিয়ে রোজ ঝগড়া। একদিন সন্ধ্যাবেলা সিংজি আমাকে ৩ তে প্যাকেটে দিল ২ লক্ষ করে। “ বাচুয়া তুই একটা প্যাকেট দিবি মঞ্জু কে, একটা দিবি আমার শালা চন্দন কে আর একটা দিবি আমার বোন নয়না কে। বলবি রেখে দিতে এই গুলো, এই ৩ জন চলে গেলে আমি নিয়ে আসবো।“ একজনের জন্য ১০০০ টাকার দুটো প্যাকেট। আমি সামনের দু পকেট আর পিছনের পকেটে পুরে সাইকেল নিয়ে গেলাম প্রথমে শালা চন্দনের বাড়ি। তাকে প্যাকেট দুটো গছিয়ে সাইকেল নিয়ে মজু দিদির বাড়ি যাব, দেখি পাগলের মতো ছুটে আসছে দেবিলাল, সিংজির চাকর। আমাকে দেখে কেঁদে ফেলে “ বাচুয়া পালা। ওই ৩ ভাই লোক নিয়ে এসে বাড়ি ঘিরে মারছে। সিংজিকে মেরে ফেলেছে, টাকার জন্য, পালা”।
পালাবো? না। আমি সাইকেল ঘুরিয়ে সিংজির বাড়িতে এসে দেখি সমস্ত বাড়ি ঘিরে জনা ২০ লোক বন্দুক হাতে । বাড়ি জ্বলছে দাউ দাউ করে। গরুর গলার দড়ি ছিঁড়ে গেছে বা খুলে দিয়েছে, মাঠ ভেঙে পালাচ্ছে।গুলি ছুরছে এদিক ওদিক ভয় দেখাতে। আমি বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখি ৩ ভাই মাইজি আর অঞ্জু দিদির ইজ্জৎ লুটছে । ঝাপিয়ে পড়ব, পিছন থেকে জড়িয়ে তুলে আনল আলম আর মকবুল, আমি কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না । বাসদেও দেখতে পেয়ে গুলি ছুরছে, অঞ্জু দিদি হাত নেড়ে “ ভাগ বাচুয়া ভাগ”। গুলি আমার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, আলম ওই অবস্থায় তুলে নিয়ে ওদের মহল্লায় লুকিয়ে রাখল।
……পাগল হ্যায় কেয়া। ওখানে তুই কি করতে পারবি, এখান থেকে রাত থাকতে পালা না হলে দাঙ্গা ফ্যাসাদ লাগবে।
…সত্যি তাই। পরেরদিন সূর্য ওঠার আগে আমি মঞ্জু দিদির বাড়ি গিয়ে টাকা দিতে সে চমকে উঠে “ বাচুয়া তুই? পালা। ৩ ভাই পুলিশ কে বলেছে যে আলম, মকবুল আর তুই বাবাকে মেরেছিস, অঞ্জু আর মার ইজ্জৎ নিয়েছিস। আমি জানি সব ঝুট। কিন্তু তুই পালা এক্ষুনি। যে কোন সময় পুলিশ এসে পড়বে” আলম আমাকে কাছের ৩ কিমি দুরের ষ্টেশনে পৌছে দিতে সাইকেলে ছোটাল। এক দূর পাল্লার ট্রেন কি কারনে দাঁড়িয়ে পড়েছে ষ্টেশন পেরিয়ে খোলা মাঠে। আমি উঠে পড়লাম। দরজা খুলবে না, শেষে ধাক্কা ধাক্কি করে ঢুকে মেঝেতে বসে পড়তে বুঝলাম রিসারভড কামরা। আমার ভাগ্য আবার খেলল।
ওই কামরায় ছিল অসীম নামে একটি ছেলে কলকাতার বউবাজার এলাকায় থাকে। একেবারে অল্প পুঁজি নিয়ে জীবনের প্রথম টুর করছে কেদার বদ্রি। সকাল হতে আমার সঙ্গে আলাপ হোল। সিগারেট খাবে লুকিয়ে তাই আমাকে গার্ড দিতে হবে, এই ভাবে আলাপ। অসীমের সাথে কথা বলতে বলতে প্যান্টের পিছনে হাত দিয়ে মনে পড়ল ২ লক্ষ টাকা আছে। মনে ভাবলাম ভগবানের দান। অসীমের সাথে ভিড়ে গেলাম।অসীমের সাথে হাত লাগালাম ষাত্রিদের খাওয়া, এটা ওটা কিনে দেওয়া এইসব । অসীম খুশি হোল একা ছিল একজন সাথি পেল। কিন্তু হরিদ্বার ষ্টেশনে কি করে পড়ে গিয়ে বাঁ পায়ের গোড়ালি ভাংল অসীমের। কেঁদে দিয়েছে অসীম, আমি ওকে বললাম, তুমি আমায় বিশ্বাস করো আর বল কি কি করতে হবে। সব ডিটেলস এ লিখে নিয়ে প্রায় ৫০ জন পার্টি নিয়ে শুরু করলাম আমার অজানা কাজ। প্রথমে অসীমকে ওখানকার সব থেকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে এক্স রে করে পায়ে প্লাস্টার করিয়ে হোটেলে গচ্ছিত করলাম। তারপর পার্টি নিয়ে কেদার বদ্রি দেখিয়ে দেখে, খাইয়ে হরিদ্বার নিয়ে এসে আর দেরি করিনি। সকালে এসে বিকালে গাড়ী ভাড়া করে দিল্লী। তখন আমি কনফিডেন্স পেয়ে গেছি। দিল্লী, আগ্রা মথুরা বৃন্দাবন সব দেখিয়ে আবার দিল্লী ফিরে কালকা মেলে হাওড়া। কিন্তু অসীম আমাকে ছাড়ল না।ওকে আর ওর ওই মালপত্র, সাথে দুজন লোক ছিল তাদের সাহায্যে অসীমের বাড়িতে নিয়ে এলাম । অসীমের মা আর বৌ আমার যা যত্ন করেছিলেন ভুলবো না। ওর বাড়িতে প্রায় ৭-৮ মাস ছিলাম। এই ক মাসে অসীমের ওই রকম অনেক টুর করেছি । খারাপ টাকা আসতো না, নিজের টা চলে যাবে এইরকম। অসীম সুস্থ হবার পর ওর জানা এক ডাক্তারের পরামর্শে আলিপুর চিড়িয়াখানার কাছে এক হাসপাতালে প্রথমে নাকের আবের প্লাস্টিক সার্জারি। ১৫ দিন পর ওই ডাক্তারের পরামর্শে এক নাম করা দাঁতের ডাক্তার কে দিয়ে সামনের দাঁত তুলে নতুন দাঁত ইমপ্ল্যান্ট করিয়ে অর্জুন কে ভাগিয়ে ফাগুর পৃথিবীতে আগমন। খরচ হোল সেই ভগবানের দান ২ লক্ষ টাকা থেকে। তবে দাঁত খুব ভুগিয়েছিল। ব্যাথায় কয়েকদিন নাম ভুলে গেছিলাম আর ততদিনে সত্যি অর্জুনকে একেবারে ভুলে গেছি।
এর কিছুদিন পর অসীমের ক্যাটারিং ব্যাবসার সুত্রে রোহিতের সাথে পরিচয় আর পুরোপুরি সমাজ বিরোধী হয়ে ওঠা।
একটা কথা মা বাবা গব্বর সিং এদের খারাপ লাগবে কিন্তু সত্যি, মিনি ছাড়া কাউকে মিস করতাম না আর গান গাইবার সময় হাসনুকে মনে পড়ত।হাসনু আর আমি একই পণ্ডিতের কাছে গান শিখেছি, তবে আমি হাসনুর থেকে ভালো গাইতাম। বললে রেগে মারত আমায়, ভালবাসার মার। আর কোন অল্প বয়েসের মেয়ে দেখলেই এই মেয়েটিকে মনে পড়ত……হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মিনিকে
………বাড়ি ছাড়ার পর একটা কথা বুঝেছি ভয় পেয়ে বা কেঁদে কোন লাভ নেই। কেউ পাশে দাঁড়াবে না। অসীমের মা স্ত্রী বাদে আর একজন মহিলার কথা না বললে বেইমানি হবে। রঙ্গনা ম্যাডাম। সম্পূর্ণ অপরিচিত এক যুবকের জন্য উনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সত্যিকারের উপকারি বন্ধু আমার। কুন্তি অবধি আমাকে বার বার বলেছে যে ওনার সাথে যেন বেইমানি না করি উনি আমাদের এক মাত্র শুভাকাঙ্ক্ষী। কুন্তির সাথে পরিচয় ঠিক ‘নর্মাল না এই রকমের ঘটনার’ কারনে। আর সেইদিনই ঠিক করি এই মেয়েকে ছাড়া বাঁচব না। কুন্তি চায় নি। অনেক দৌড় করিয়েছে মুখ ঝামটা দিয়েছে অপমান করেছে শেষমেশ আর কি করবে ভেবে না পেয়ে রাজি হোল।………হেঁসে উঠলো ঘরের সবাই, কুন্তি চিমটি কেটে দিল।
………জীবনে কুন্তি আসার পর ঠিক করি আমার সন্তান এই পৃথিবীতে আসবে কোন সমাজবিরোধীর সন্তান হয়ে না। একজন মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায় এইরকমের পুরুষের সন্তান হয়ে।
……আমি আজ এখানে বন্ধি , তার জন্য যদি কেউ দায়ী হয় তাহলে তিনি আমার মা। আমি প্রানপন জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম মাকে, ঠাম্মা চলে যাওয়ার পর । মা হাত ছাড়ায়নি, কিন্তু আমি যে তাকে ভীষণ ভাবে চাইছি তিনি বোঝার চেষ্টা করেন নি। আর বাবা জীবনে মদ ছাড়া কিছু ভালবাসেন বলে মনে হয়নি।
কাপড়ে মুখ ঢেকে ফুলে ফুলে উঠছেন কান্নায় জোনাকি। শঙ্কর মাথা ঝুকিয়ে বসে
……… কলকাতায় ১০ বছর আছি। রোহিতের সঙ্গ ছেড়েছি অনেক বছর হোল। একটি জিনিষ ছাড়ি নি কোনোদিন। এমনকি এই লকআপে পর্যন্ত গান গাই। ছেলেবেলা থেকে আমার মন বিক্ষিপ্ত, সবসময় রাগ, পুড়িয়ে দেয় ভিতরের সূক্ষ্ম মানবিক অনুভুতি তখন আমাকে সব থেকে শান্তি দেয় সঙ্গীত।সুর আমাকে ভুলিয়ে দেয় সব অনাঙ্খিত অনুভুতি, বাঁচিয়ে রাখে, আশ্রয় দেয় অপার শান্তির কুঞ্জে । রঙ্গনা ম্যডামের সাথে পরিচয় এই গানের সুত্রে। বন্ধু বলতে অসীম আর ধনু রোহিতের সাথে থাকত। সেইদিনের ঘটনার সময় ধনু আমায় বার বার সাবধান করছিলো। গুলি লাগার পর ধনুই আমায় প্রথম তুলে ধরে। স্যার ধনু কোথায়, ও কি বেঁচে নেই, নাকি পালিয়ে গেছে?
……কে ধনু, ধনু বলে কেউ ওখানে ছিল না তো
………সেকি, ধনু বা ধনঞ্জয়, ডান হাতে গুলি লেগেছিল, ধনু নেই?
………হ্যাঁ স্যার উনি রোহিত কে বার বার বলছিলেন আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য। ওদের ভিতর একটু অন্যরকম……তিতলি অবাক
…… না না তোমরা ভুল করছ ওখানে আর কেউ ছিল না………কথা শেষ করে সিরাজ কমিশনারের কানে কানে কিছু কথা বলল। কমিশনার উঠে দাঁড়িয়ে
………আপাতত এই খানে শেষ। আপনারা কোর্টে যাবেন নিশ্চয়ই, সেখানে দেখা হবে
ওজু অবাক হয়ে চেয়ে মিনির হাত ধরে শক্ত করে। মিনিও হতবাক। সিরাজ
……ওজু আর কুন্তি তোমরা আমার সাথে পাশের ঘরে এসো। একজনকে আইডেনটিফাই করবে………কথা শেষ করে বাকিদের কোন সময় দিলনা। কুন্তি আর অজুকে নিয়ে পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে অন্য ঘরে সূর্য নিয়ে এলো। সিরাজ পিছনে ঢুকল।
ঘরে ঢুকে ওজু জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কা খেল। একেবারে চকচকে প্যান্ট সার্ট জুতো পড়ে ধনু হাত বাড়িয়ে
……… গুড আফটারনুন। আমি পার্থ সৎপতি, সাব ইনস্পেক্টর, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ……ওজু পড়ে যাবে। চেয়ার ধরে সামলে নিল। কুন্তি জিভ ভেঙ্গিয়ে এগিয়ে গিয়ে পার্থ বা ধনুকে জড়িয়ে গালে চুমু দিয়ে
………আমার দাদা। আমার দাদা, তোমার শালা………অবাক হয়ে ওজু তাকিয়ে গভীর চোখে।
সূর্য এসে কাঁধে হাত দিল। সিরাজ কাছে এসে সজোরে এক চড় গালে।অজু গালে হাত দিয়ে বিস্ফোরিত চোখে সিরাজকে
………হতচ্ছাড়া আর কত জ্বালাবি তুই সবাইকে। তোকে ভালোবাসা কি অন্যায়। কলকাতায় থাকিস, একবারও মনে হয়নি ফুল আছে হাসনু আছে দেখা করি। গব্বর সিং কে না হয় বাদ দিলি……তুই কি রে ওজু, একবারও তোর আমাদের কথা মনে হয়নি। তোর ফুল রোজ একবার তোর কথা জিজ্ঞাসা করে, হাসনু আজ ধরল যে “ বাবা ওই ওজু। নাম ভাঁড়িয়ে অপারেশন করিয়ে ফাগু সেজেছে। পেটাও ওকে”। পিটাই এবার…………কুন্তি খুব খুশি কেন কে জানে
………সবাই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে আমার সাথে। কোনোদিন ভাবতে পারিনি যে গব্বর সিং চড় মারবে । কুন্তি আজ বলছে ধনু ওর দাদা। রোম ঠিক বলেছে আমি একটা বুদ্ধু
……তুই কেন আমার কাছে এলি না ।তাহলে আজ তুই কত ওপরে উঠতে পারতিস। এখানে এই কথা বলছি তার কারন সূর্য এই সম্পূর্ণ প্লান করেছে। শোন সূর্যর কাছে।
………না আমি কিছু শুনতে চাই না। চড় খেলাম, কুন্তি এইরকম করলো, আমার কিছু শোনার দরকার নেই
………বন্ধু বস। ক্ষমা চাইছি তোর কাছে, তুই যা করেছিস একা আর কেউ পারত না। সেইদিন আমি তোকে বার বার বলেছি “ ফাগু তুই এক টিপে শেষ করতে পারিস আমি জানি” এইটি সঙ্কেত । ‘চালা গুলি এক টিপে একজনকে শেষ করবি’ সঙ্কেত ছিল এইটি। বুঝিস নি তুই। শোন ইনস্পেক্টর সাহেব কি বলেন………সিরাজ এসে জড়িয়ে ধরে “ কেন এলি না ওজু। আমরা সবাই তোকে মিস করতাম”,………অতঃপর ওজু একটু নরম হোল
………তাই বলে চড় মাড়বে গব্বর সিং? হাসনু কোথায়, ফুল? আনলে না কেন আজ?
………তুই শঙ্কর বা জোনাকির সাথে কথা বললি না কেন? জোনাকি গত ১৩-১৪ বছর প্রতি সপ্তাহে আমাকে ফোন করেছে, নিজে এসেছে তোর খোঁজে। শঙ্কর দেখা হলেই জিজ্ঞাসা করে “ সিরাজ কিছু বেরল সুরাহা” আর তুই কথা বললি না
………কলকাতায় কি মদ বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে……হেঁসে দিল সিরাজ
………শোন ওজু, স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক খুব জটিল। কি কারনে ভীষণ মিল হয় আর কি কারনে হয় না কেউ বলতে পারবে না। তুই বোম্বে চলে যাওয়ার পর শঙ্কর যে কতদিন আমার কাছে কেঁদেছে তা গুনি নি। তোর দুর্ভাগ্য শঙ্কর আর জোনাকির সমঝোতা হয়নি। সামাজিক ভাবে দুই বাড়ি থেকে যোগাযোগ করে বিয়ে হয়, কিন্তু মিল হয়নি। এর কোন ব্যাখ্যা নেই। ইনডিভিজুআলি দুজনেই খুব ভালো কিন্তু নিজেরা এডজাস্ট করতে পারে নি। যদি আমার ওপর তোর কোন টান কোনোদিন থেকে থাকে তাহলে বিশ্বাস কর না হলে , তুই সাবালক যা ভালো বুঝবি করবি।
……বাবাও মেরেছিল আর আজ গব্বর সিং মারল।আমি ফুল আর হাসনু কে বলবই……বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে ওজু।
হেঁসে দিল সিরাজ। বুকে জড়িয়ে “ একবার আগে যদি বলতিস মুখ ফুটে গব্বর”।
সূর্য এসে বসিয়ে
……শোন ওজু। ঠাণ্ডা হও। এই ঘরে যা হতে চলেছে, সারা জীবন তা বাইরের কেউ কোনোদিন যেন না জানে, প্রনিস?.... মাথা নেড়ে ‘ প্রমিস’ বলে ওজু তাকিয়ে সূর্য র দিকে
………সম্পূর্ণটা শুনলে তুমি বুঝবে এর গুরুত্ব। সিরাজ স্যার আমাকে অনেকবার বলেছেন “ চাকরি শেষ হওয়ার আগে ওজু কে খুঁজে বার করতেই হবে” এখন শোন
আজ থেকে ৮ বছর আগে পশ্চিম বাংলার কয়লা খনি অঞ্চলের এক পরিবারের মা, ছেলে আর মেয়ে ধানবাদের একটু দূরে এক মন্দিরে যায় পুজো দিতে। মেয়েটি ১২ ক্লাসে প্রথম ডিভিশনে পাশ করেছে বাংলায় ১৪৩ পেয়ে। মেয়েটি গল্প কবিতা লিখত। কলেজের ম্যাগাজিনে ছাপা হতো। তার চোখে অনেক স্বপ্ন কিন্তু সেইদিন সব শেষ হয়ে যায়। তারা ধানবাদে এক গাড়ি ভাড়া করে। দুর্ভাগ্য গাড়িটি শ্যামের। ফেরার সময় রাত হয়ে যায়। শ্যাম গাড়ি ঘুরিয়ে রাস্তা থেকে বাসদেও কে তুলে নিয়ে ফাঁকা সরু রাস্তায় মেয়েটির দাদাকে প্রচণ্ড মারে। মরে গেছে ভেবে রাস্তায় ফেলে মা আর বোন কে ওদের ডেরায় নিয়ে তিন ভাই ইজ্জৎ লোটে। ওই সময় এক বরযাত্রীর বাস ছেলেটিকে দেখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরায়। তারপর ছেলেটির কথামতো খুঁজে ৩ ভাইয়ের ডেরায় হানা দেয়। গুলি ছুড়তে ছুড়তে ৩ ভাই পালিয়ে যায়। মা আর ভাই বোন কে হাসপাতালে ভর্তি করে ওই লোকেরা। ৩ দিন পর মা লজ্জায় অপমানে হাসপাতালের ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। ছেলেটি বোন কে নিয়ে বাড়ি ফিরে প্রতিজ্ঞা করে ৩ ভাইকে শাস্তি না দেওয়া অবধি ভাইফোঁটা নেবে না। কিছুদিন পর আমাদের বাহিনিতে যোগ দিয়ে মণ্ডল সাহেব কে একান্ত অনুরোধ করে ওকে যেন কাজে লাগান হয়। ওর বোন ট্রমা কাটিয়ে ওঠে অনেকদিন পর। দিল্লী থেকে তখন আমাদের কাছে নির্দেশ আসে অবিনাশ বর্মার দল কে ধরার। কিন্তু এমন ভাবে যাতে কিছুতেই আর না বেরতে পারে।আমার ওপর ভার পড়ে তার রূপরেখা তৈরি করা আর প্রয়োগের।তাই ছেলেটি অবিনাশ বর্মার দলে যোগ দেয় ৭ বছর আগে আমাদের সোর্স হয়ে । কিন্তু দুর্ভাগ্য ছেলেটির প্রতিজ্ঞা শেষ হয়ে যায় পাখি দলুই এর গুলিতে। তার বন্ধু ছেলেটির প্রান বাঁচায়।
তার ২ বছর আগে ছেলেটির বোন আমাদের বাহিনিতে যোগ দেয় নিজের হাতে প্রতিশোধ নেবে বলে কনস্টেবল হয়ে। মেয়েটির হাতের টিপ অব্যর্থ। বাহিনিতে সব থেকে ভালো। আমি ঠিক করি ও প্রতিদিনের কাজে থাকবে না। রোহিতের নার্সিং হোমে কাজ করবে ৪ ঘণ্টা অর্ধেক বেতনে। অজুহাত দেবে বাবার অসুখ। আমাদের লোক এক ডাক্তারের সুত্রে রোহিতকে বলে লাগায়। মেয়েটি আমাদের খবর দিত রোহিতের আর কোন ক্রিমিনাল ভর্তি হলে আর ছাড়া পেলেই আমরা টুক করে তাকে তুলে নিতাম। দাদা গুলি খেয়ে ওই নার্সিং হোমে এসে প্রথমেই বোন কে বলে “ বোন আমি আর পারলাম না ও পারবে। তুই ওকে চোখে চোখে রাখিস। “। মেয়েটি ভীষণ হতাশ হয়ে পরে। কিন্তু সেই দিনের যে হিরো, সত্যি সে হিরোর মতন দেখতে, সুন্দর গান গায়, দারুন স্বাস্থ্য, মেয়েটির প্রেমে পরে যায় আর মেয়েটির মুখ ঝামটা, উপেক্ষা, অপমান সব কিছু সরিয়ে মেয়েটিকে প্রেম নিবেদন করে। মেয়েটি অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে সেই আহ্বান থেকে ফেরাতে পারেনি, হিরোর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাদের বিয়ে হয়। ভাই বোনের বাবা সেই ধানবাদের ঘটনার পর ভেঙে পরেন, আর ওঠেন নি। প্রত্যন্ত গ্রামে লুকিয়ে থাকতে চান , মেয়েটি সেইভাবে জীবন চালায়। এরপর সেই ৩ ভাইএর একে একে মৃত্যু হয়।
সেই ৩ ভাইয়ের মৃত্যুর পুজারি কে মেয়েটি কালো প্যান্ট সার্ট জুতো আর টুপি পরে কভার করত প্রতি ক্ষেত্রে আমাদের নির্দেশে। অকুস্থলে তাকে নিয়ে আসতো আবার ছেড়ে আসতো তার দাদা, বাহিনীর বুলেটে। এমনকি সেই পুজারি ক্লাব হোটেলে গান গাইতে গেলে পাছে রোহিতের লোকেরা কিছু করতে পারে মেয়েটি কভার করত। দাদা বুলেট নিয়ে অপেক্ষা করত সব সময়। তিতলিকে বাঁচানোর জন্য তোমাকে ফোন করেছিল মেয়েটি আমাদের নির্দেশে,কেননা এনকাউনটারে অবিনাশ বা রোহিত মরলে আমরা সবাই শেষ হয়ে যেতাম। ওই কাজ আর কেউ পারতনা ওজু। কেউ না। তুমি ড্রাগনের ডেরায় ঢুকে তাকে নিকেশ করেছ একা। অকল্পনীয় এচিভমেনট।
অবিনাশ বর্মা অসাধারণ ক্রিমিনাল। জীবনে শুধু একবার ভুল করেছে তিতলি কে সওদা করতে গেছিল। জানত না তিতলি তোমার বোন। আমরা কেউ জানতাম না। আমরা অনেক চেষ্টা করেও অবিনাশের বিপক্ষে এমন প্রমান বা সাক্ষী জোগাড় করতে পারিনি যাতে ওকে ধরলে আর বেরতে না পারে। অবিনাশের মতো লোকেরা সভ্যতার শত্রু। ওদের মৃত্যু সমাজের মঙ্গল তাই আমরা বাধা দিই নি।
………চুপ করে সূর্য ওজু কে “ তোমাকে আমি শুভেচ্ছা জানাই ওই কাজের জন্য। আর ভাই বোন কারা, তুমি বুঝে গেছ”
হেঁসে কাঁধে হাত রেখে
……… স্যার আপনি কিছু বলবেন………গম্ভীর গলায় ওজু
………নো চড় গব্বর সিং, আর আমার তাবিজ কোথায়? ওতে ঠাম্মা আছে……ওজু এখন অনেক সহজ
……১০০ বার মারবো, রোজ মারবো। তুই সবাইকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিস। হাসনু আজ সকালে যখন শুনল যে তুই “ সাগারি মে গায়ে” গাইছিস। ও তৎক্ষণাৎ আমাকে বলল “ চাকরি ছেড়ে দাও বাবা, তুমি বুড়ো হয়ে গেছ। ক্লাসিক্যাল গান গাইছে, তৃতীয় পাণ্ডবের নামে নাম, কোমরে রুপোর তাবিজ, তাতেও তুমি বুঝলে না ও ওজু। তোমার মনে নেই মাকে ডেকে দেখাত “ ফুল, দেক দেক থাম্মা লাগিয়েছে , দেক্তে বালো লাগছে” । ওজু তুই কি পাথরের? তোর হৃদয় বলে কিছু নেই?
……… ‘তোর হৃদয় বলে কিছু নেই’ সিরাজের ভঙ্গিতে ওজু বলে উঠলো…
“ ভুল ভাল বলবে আবার চড় মারবে। ওটা “সাগারি রাইনা কে জাগে”…ভীমসেন যোশির বিখ্যাত গান, রামকেলি রাগ। হাসনু ভুল বলবে না। হাসনুর সাথে দেখা হলে আমি বলব গব্বর সিং চড় মেরেছে। আমার তাবিজ ঠাম্মার দেওয়া, পাই নি, আর কুন্তি আমার স্ত্রী, ধনু প্রিয় বন্ধু প্রান দিতে পারতাম ওর জন্য, সবাই বিশ্বাস ভঙ্গের কাজ করেছে আমার সাথে। গব্বর সিং আমাকে ব্যাবহার করেছে অবিনাশের গ্যাং কে শেষ করার জন্য। আর চড় মারছে”
……তারপর ওজু
……আমার ২০ বছর বয়েসে আবার ভাগ্য খেলা খেলল। ভোট এলো। ওখান থেকে দাঁড়াল অবিনাশ বর্মা। জেতার জন্য টাকা লাগাল প্রচুর। সিংজি কে প্রচুর টাকা দিয়ে হুকুম করলো এলাকার সব ভোট চাই। ওই অবিনাশ বর্মার সাথে এসেছিলো ৩ কুখ্যাত গুন্ডা। শ্যাম, কালিয়া আর বাসদেও। ওরা সিংজির ওখানেই থাকত খেত আর ভোটের যা যা করার করত। অঞ্জু দিদি আমাকে বলেছিল “ বাচুয়া, লোকগুলো ভালো না রে, খুব বাজে”। আমি শুনে আলমদের বলেছিলাম। ভোটে অবিনাশ জিতল সিংজির জন্য। অবিনাশ চলে গেল কিন্তু এই ৩ ভাই সিংজির পিছনে পড়ল।“ সিংজি, বর্মা সাহেব তোমায় ২২ লক্ষ দিয়েছে, তুমি হিসাব দাও কি খরচ করেছ”। এই নিয়ে রোজ ঝগড়া। একদিন সন্ধ্যাবেলা সিংজি আমাকে ৩ তে প্যাকেটে দিল ২ লক্ষ করে। “ বাচুয়া তুই একটা প্যাকেট দিবি মঞ্জু কে, একটা দিবি আমার শালা চন্দন কে আর একটা দিবি আমার বোন নয়না কে। বলবি রেখে দিতে এই গুলো, এই ৩ জন চলে গেলে আমি নিয়ে আসবো।“ একজনের জন্য ১০০০ টাকার দুটো প্যাকেট। আমি সামনের দু পকেট আর পিছনের পকেটে পুরে সাইকেল নিয়ে গেলাম প্রথমে শালা চন্দনের বাড়ি। তাকে প্যাকেট দুটো গছিয়ে সাইকেল নিয়ে মজু দিদির বাড়ি যাব, দেখি পাগলের মতো ছুটে আসছে দেবিলাল, সিংজির চাকর। আমাকে দেখে কেঁদে ফেলে “ বাচুয়া পালা। ওই ৩ ভাই লোক নিয়ে এসে বাড়ি ঘিরে মারছে। সিংজিকে মেরে ফেলেছে, টাকার জন্য, পালা”।
পালাবো? না। আমি সাইকেল ঘুরিয়ে সিংজির বাড়িতে এসে দেখি সমস্ত বাড়ি ঘিরে জনা ২০ লোক বন্দুক হাতে । বাড়ি জ্বলছে দাউ দাউ করে। গরুর গলার দড়ি ছিঁড়ে গেছে বা খুলে দিয়েছে, মাঠ ভেঙে পালাচ্ছে।গুলি ছুরছে এদিক ওদিক ভয় দেখাতে। আমি বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখি ৩ ভাই মাইজি আর অঞ্জু দিদির ইজ্জৎ লুটছে । ঝাপিয়ে পড়ব, পিছন থেকে জড়িয়ে তুলে আনল আলম আর মকবুল, আমি কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না । বাসদেও দেখতে পেয়ে গুলি ছুরছে, অঞ্জু দিদি হাত নেড়ে “ ভাগ বাচুয়া ভাগ”। গুলি আমার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, আলম ওই অবস্থায় তুলে নিয়ে ওদের মহল্লায় লুকিয়ে রাখল।
……পাগল হ্যায় কেয়া। ওখানে তুই কি করতে পারবি, এখান থেকে রাত থাকতে পালা না হলে দাঙ্গা ফ্যাসাদ লাগবে।
…সত্যি তাই। পরেরদিন সূর্য ওঠার আগে আমি মঞ্জু দিদির বাড়ি গিয়ে টাকা দিতে সে চমকে উঠে “ বাচুয়া তুই? পালা। ৩ ভাই পুলিশ কে বলেছে যে আলম, মকবুল আর তুই বাবাকে মেরেছিস, অঞ্জু আর মার ইজ্জৎ নিয়েছিস। আমি জানি সব ঝুট। কিন্তু তুই পালা এক্ষুনি। যে কোন সময় পুলিশ এসে পড়বে” আলম আমাকে কাছের ৩ কিমি দুরের ষ্টেশনে পৌছে দিতে সাইকেলে ছোটাল। এক দূর পাল্লার ট্রেন কি কারনে দাঁড়িয়ে পড়েছে ষ্টেশন পেরিয়ে খোলা মাঠে। আমি উঠে পড়লাম। দরজা খুলবে না, শেষে ধাক্কা ধাক্কি করে ঢুকে মেঝেতে বসে পড়তে বুঝলাম রিসারভড কামরা। আমার ভাগ্য আবার খেলল।
ওই কামরায় ছিল অসীম নামে একটি ছেলে কলকাতার বউবাজার এলাকায় থাকে। একেবারে অল্প পুঁজি নিয়ে জীবনের প্রথম টুর করছে কেদার বদ্রি। সকাল হতে আমার সঙ্গে আলাপ হোল। সিগারেট খাবে লুকিয়ে তাই আমাকে গার্ড দিতে হবে, এই ভাবে আলাপ। অসীমের সাথে কথা বলতে বলতে প্যান্টের পিছনে হাত দিয়ে মনে পড়ল ২ লক্ষ টাকা আছে। মনে ভাবলাম ভগবানের দান। অসীমের সাথে ভিড়ে গেলাম।অসীমের সাথে হাত লাগালাম ষাত্রিদের খাওয়া, এটা ওটা কিনে দেওয়া এইসব । অসীম খুশি হোল একা ছিল একজন সাথি পেল। কিন্তু হরিদ্বার ষ্টেশনে কি করে পড়ে গিয়ে বাঁ পায়ের গোড়ালি ভাংল অসীমের। কেঁদে দিয়েছে অসীম, আমি ওকে বললাম, তুমি আমায় বিশ্বাস করো আর বল কি কি করতে হবে। সব ডিটেলস এ লিখে নিয়ে প্রায় ৫০ জন পার্টি নিয়ে শুরু করলাম আমার অজানা কাজ। প্রথমে অসীমকে ওখানকার সব থেকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে এক্স রে করে পায়ে প্লাস্টার করিয়ে হোটেলে গচ্ছিত করলাম। তারপর পার্টি নিয়ে কেদার বদ্রি দেখিয়ে দেখে, খাইয়ে হরিদ্বার নিয়ে এসে আর দেরি করিনি। সকালে এসে বিকালে গাড়ী ভাড়া করে দিল্লী। তখন আমি কনফিডেন্স পেয়ে গেছি। দিল্লী, আগ্রা মথুরা বৃন্দাবন সব দেখিয়ে আবার দিল্লী ফিরে কালকা মেলে হাওড়া। কিন্তু অসীম আমাকে ছাড়ল না।ওকে আর ওর ওই মালপত্র, সাথে দুজন লোক ছিল তাদের সাহায্যে অসীমের বাড়িতে নিয়ে এলাম । অসীমের মা আর বৌ আমার যা যত্ন করেছিলেন ভুলবো না। ওর বাড়িতে প্রায় ৭-৮ মাস ছিলাম। এই ক মাসে অসীমের ওই রকম অনেক টুর করেছি । খারাপ টাকা আসতো না, নিজের টা চলে যাবে এইরকম। অসীম সুস্থ হবার পর ওর জানা এক ডাক্তারের পরামর্শে আলিপুর চিড়িয়াখানার কাছে এক হাসপাতালে প্রথমে নাকের আবের প্লাস্টিক সার্জারি। ১৫ দিন পর ওই ডাক্তারের পরামর্শে এক নাম করা দাঁতের ডাক্তার কে দিয়ে সামনের দাঁত তুলে নতুন দাঁত ইমপ্ল্যান্ট করিয়ে অর্জুন কে ভাগিয়ে ফাগুর পৃথিবীতে আগমন। খরচ হোল সেই ভগবানের দান ২ লক্ষ টাকা থেকে। তবে দাঁত খুব ভুগিয়েছিল। ব্যাথায় কয়েকদিন নাম ভুলে গেছিলাম আর ততদিনে সত্যি অর্জুনকে একেবারে ভুলে গেছি।
এর কিছুদিন পর অসীমের ক্যাটারিং ব্যাবসার সুত্রে রোহিতের সাথে পরিচয় আর পুরোপুরি সমাজ বিরোধী হয়ে ওঠা।
একটা কথা মা বাবা গব্বর সিং এদের খারাপ লাগবে কিন্তু সত্যি, মিনি ছাড়া কাউকে মিস করতাম না আর গান গাইবার সময় হাসনুকে মনে পড়ত।হাসনু আর আমি একই পণ্ডিতের কাছে গান শিখেছি, তবে আমি হাসনুর থেকে ভালো গাইতাম। বললে রেগে মারত আমায়, ভালবাসার মার। আর কোন অল্প বয়েসের মেয়ে দেখলেই এই মেয়েটিকে মনে পড়ত……হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মিনিকে
………বাড়ি ছাড়ার পর একটা কথা বুঝেছি ভয় পেয়ে বা কেঁদে কোন লাভ নেই। কেউ পাশে দাঁড়াবে না। অসীমের মা স্ত্রী বাদে আর একজন মহিলার কথা না বললে বেইমানি হবে। রঙ্গনা ম্যাডাম। সম্পূর্ণ অপরিচিত এক যুবকের জন্য উনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সত্যিকারের উপকারি বন্ধু আমার। কুন্তি অবধি আমাকে বার বার বলেছে যে ওনার সাথে যেন বেইমানি না করি উনি আমাদের এক মাত্র শুভাকাঙ্ক্ষী। কুন্তির সাথে পরিচয় ঠিক ‘নর্মাল না এই রকমের ঘটনার’ কারনে। আর সেইদিনই ঠিক করি এই মেয়েকে ছাড়া বাঁচব না। কুন্তি চায় নি। অনেক দৌড় করিয়েছে মুখ ঝামটা দিয়েছে অপমান করেছে শেষমেশ আর কি করবে ভেবে না পেয়ে রাজি হোল।………হেঁসে উঠলো ঘরের সবাই, কুন্তি চিমটি কেটে দিল।
………জীবনে কুন্তি আসার পর ঠিক করি আমার সন্তান এই পৃথিবীতে আসবে কোন সমাজবিরোধীর সন্তান হয়ে না। একজন মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায় এইরকমের পুরুষের সন্তান হয়ে।
……আমি আজ এখানে বন্ধি , তার জন্য যদি কেউ দায়ী হয় তাহলে তিনি আমার মা। আমি প্রানপন জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম মাকে, ঠাম্মা চলে যাওয়ার পর । মা হাত ছাড়ায়নি, কিন্তু আমি যে তাকে ভীষণ ভাবে চাইছি তিনি বোঝার চেষ্টা করেন নি। আর বাবা জীবনে মদ ছাড়া কিছু ভালবাসেন বলে মনে হয়নি।
কাপড়ে মুখ ঢেকে ফুলে ফুলে উঠছেন কান্নায় জোনাকি। শঙ্কর মাথা ঝুকিয়ে বসে
……… কলকাতায় ১০ বছর আছি। রোহিতের সঙ্গ ছেড়েছি অনেক বছর হোল। একটি জিনিষ ছাড়ি নি কোনোদিন। এমনকি এই লকআপে পর্যন্ত গান গাই। ছেলেবেলা থেকে আমার মন বিক্ষিপ্ত, সবসময় রাগ, পুড়িয়ে দেয় ভিতরের সূক্ষ্ম মানবিক অনুভুতি তখন আমাকে সব থেকে শান্তি দেয় সঙ্গীত।সুর আমাকে ভুলিয়ে দেয় সব অনাঙ্খিত অনুভুতি, বাঁচিয়ে রাখে, আশ্রয় দেয় অপার শান্তির কুঞ্জে । রঙ্গনা ম্যডামের সাথে পরিচয় এই গানের সুত্রে। বন্ধু বলতে অসীম আর ধনু রোহিতের সাথে থাকত। সেইদিনের ঘটনার সময় ধনু আমায় বার বার সাবধান করছিলো। গুলি লাগার পর ধনুই আমায় প্রথম তুলে ধরে। স্যার ধনু কোথায়, ও কি বেঁচে নেই, নাকি পালিয়ে গেছে?
……কে ধনু, ধনু বলে কেউ ওখানে ছিল না তো
………সেকি, ধনু বা ধনঞ্জয়, ডান হাতে গুলি লেগেছিল, ধনু নেই?
………হ্যাঁ স্যার উনি রোহিত কে বার বার বলছিলেন আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য। ওদের ভিতর একটু অন্যরকম……তিতলি অবাক
…… না না তোমরা ভুল করছ ওখানে আর কেউ ছিল না………কথা শেষ করে সিরাজ কমিশনারের কানে কানে কিছু কথা বলল। কমিশনার উঠে দাঁড়িয়ে
………আপাতত এই খানে শেষ। আপনারা কোর্টে যাবেন নিশ্চয়ই, সেখানে দেখা হবে
ওজু অবাক হয়ে চেয়ে মিনির হাত ধরে শক্ত করে। মিনিও হতবাক। সিরাজ
……ওজু আর কুন্তি তোমরা আমার সাথে পাশের ঘরে এসো। একজনকে আইডেনটিফাই করবে………কথা শেষ করে বাকিদের কোন সময় দিলনা। কুন্তি আর অজুকে নিয়ে পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে অন্য ঘরে সূর্য নিয়ে এলো। সিরাজ পিছনে ঢুকল।
ঘরে ঢুকে ওজু জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কা খেল। একেবারে চকচকে প্যান্ট সার্ট জুতো পড়ে ধনু হাত বাড়িয়ে
……… গুড আফটারনুন। আমি পার্থ সৎপতি, সাব ইনস্পেক্টর, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ……ওজু পড়ে যাবে। চেয়ার ধরে সামলে নিল। কুন্তি জিভ ভেঙ্গিয়ে এগিয়ে গিয়ে পার্থ বা ধনুকে জড়িয়ে গালে চুমু দিয়ে
………আমার দাদা। আমার দাদা, তোমার শালা………অবাক হয়ে ওজু তাকিয়ে গভীর চোখে।
সূর্য এসে কাঁধে হাত দিল। সিরাজ কাছে এসে সজোরে এক চড় গালে।অজু গালে হাত দিয়ে বিস্ফোরিত চোখে সিরাজকে
………হতচ্ছাড়া আর কত জ্বালাবি তুই সবাইকে। তোকে ভালোবাসা কি অন্যায়। কলকাতায় থাকিস, একবারও মনে হয়নি ফুল আছে হাসনু আছে দেখা করি। গব্বর সিং কে না হয় বাদ দিলি……তুই কি রে ওজু, একবারও তোর আমাদের কথা মনে হয়নি। তোর ফুল রোজ একবার তোর কথা জিজ্ঞাসা করে, হাসনু আজ ধরল যে “ বাবা ওই ওজু। নাম ভাঁড়িয়ে অপারেশন করিয়ে ফাগু সেজেছে। পেটাও ওকে”। পিটাই এবার…………কুন্তি খুব খুশি কেন কে জানে
………সবাই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে আমার সাথে। কোনোদিন ভাবতে পারিনি যে গব্বর সিং চড় মারবে । কুন্তি আজ বলছে ধনু ওর দাদা। রোম ঠিক বলেছে আমি একটা বুদ্ধু
……তুই কেন আমার কাছে এলি না ।তাহলে আজ তুই কত ওপরে উঠতে পারতিস। এখানে এই কথা বলছি তার কারন সূর্য এই সম্পূর্ণ প্লান করেছে। শোন সূর্যর কাছে।
………না আমি কিছু শুনতে চাই না। চড় খেলাম, কুন্তি এইরকম করলো, আমার কিছু শোনার দরকার নেই
………বন্ধু বস। ক্ষমা চাইছি তোর কাছে, তুই যা করেছিস একা আর কেউ পারত না। সেইদিন আমি তোকে বার বার বলেছি “ ফাগু তুই এক টিপে শেষ করতে পারিস আমি জানি” এইটি সঙ্কেত । ‘চালা গুলি এক টিপে একজনকে শেষ করবি’ সঙ্কেত ছিল এইটি। বুঝিস নি তুই। শোন ইনস্পেক্টর সাহেব কি বলেন………সিরাজ এসে জড়িয়ে ধরে “ কেন এলি না ওজু। আমরা সবাই তোকে মিস করতাম”,………অতঃপর ওজু একটু নরম হোল
………তাই বলে চড় মাড়বে গব্বর সিং? হাসনু কোথায়, ফুল? আনলে না কেন আজ?
………তুই শঙ্কর বা জোনাকির সাথে কথা বললি না কেন? জোনাকি গত ১৩-১৪ বছর প্রতি সপ্তাহে আমাকে ফোন করেছে, নিজে এসেছে তোর খোঁজে। শঙ্কর দেখা হলেই জিজ্ঞাসা করে “ সিরাজ কিছু বেরল সুরাহা” আর তুই কথা বললি না
………কলকাতায় কি মদ বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে……হেঁসে দিল সিরাজ
………শোন ওজু, স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক খুব জটিল। কি কারনে ভীষণ মিল হয় আর কি কারনে হয় না কেউ বলতে পারবে না। তুই বোম্বে চলে যাওয়ার পর শঙ্কর যে কতদিন আমার কাছে কেঁদেছে তা গুনি নি। তোর দুর্ভাগ্য শঙ্কর আর জোনাকির সমঝোতা হয়নি। সামাজিক ভাবে দুই বাড়ি থেকে যোগাযোগ করে বিয়ে হয়, কিন্তু মিল হয়নি। এর কোন ব্যাখ্যা নেই। ইনডিভিজুআলি দুজনেই খুব ভালো কিন্তু নিজেরা এডজাস্ট করতে পারে নি। যদি আমার ওপর তোর কোন টান কোনোদিন থেকে থাকে তাহলে বিশ্বাস কর না হলে , তুই সাবালক যা ভালো বুঝবি করবি।
……বাবাও মেরেছিল আর আজ গব্বর সিং মারল।আমি ফুল আর হাসনু কে বলবই……বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে ওজু।
হেঁসে দিল সিরাজ। বুকে জড়িয়ে “ একবার আগে যদি বলতিস মুখ ফুটে গব্বর”।
সূর্য এসে বসিয়ে
……শোন ওজু। ঠাণ্ডা হও। এই ঘরে যা হতে চলেছে, সারা জীবন তা বাইরের কেউ কোনোদিন যেন না জানে, প্রনিস?.... মাথা নেড়ে ‘ প্রমিস’ বলে ওজু তাকিয়ে সূর্য র দিকে
………সম্পূর্ণটা শুনলে তুমি বুঝবে এর গুরুত্ব। সিরাজ স্যার আমাকে অনেকবার বলেছেন “ চাকরি শেষ হওয়ার আগে ওজু কে খুঁজে বার করতেই হবে” এখন শোন
আজ থেকে ৮ বছর আগে পশ্চিম বাংলার কয়লা খনি অঞ্চলের এক পরিবারের মা, ছেলে আর মেয়ে ধানবাদের একটু দূরে এক মন্দিরে যায় পুজো দিতে। মেয়েটি ১২ ক্লাসে প্রথম ডিভিশনে পাশ করেছে বাংলায় ১৪৩ পেয়ে। মেয়েটি গল্প কবিতা লিখত। কলেজের ম্যাগাজিনে ছাপা হতো। তার চোখে অনেক স্বপ্ন কিন্তু সেইদিন সব শেষ হয়ে যায়। তারা ধানবাদে এক গাড়ি ভাড়া করে। দুর্ভাগ্য গাড়িটি শ্যামের। ফেরার সময় রাত হয়ে যায়। শ্যাম গাড়ি ঘুরিয়ে রাস্তা থেকে বাসদেও কে তুলে নিয়ে ফাঁকা সরু রাস্তায় মেয়েটির দাদাকে প্রচণ্ড মারে। মরে গেছে ভেবে রাস্তায় ফেলে মা আর বোন কে ওদের ডেরায় নিয়ে তিন ভাই ইজ্জৎ লোটে। ওই সময় এক বরযাত্রীর বাস ছেলেটিকে দেখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরায়। তারপর ছেলেটির কথামতো খুঁজে ৩ ভাইয়ের ডেরায় হানা দেয়। গুলি ছুড়তে ছুড়তে ৩ ভাই পালিয়ে যায়। মা আর ভাই বোন কে হাসপাতালে ভর্তি করে ওই লোকেরা। ৩ দিন পর মা লজ্জায় অপমানে হাসপাতালের ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। ছেলেটি বোন কে নিয়ে বাড়ি ফিরে প্রতিজ্ঞা করে ৩ ভাইকে শাস্তি না দেওয়া অবধি ভাইফোঁটা নেবে না। কিছুদিন পর আমাদের বাহিনিতে যোগ দিয়ে মণ্ডল সাহেব কে একান্ত অনুরোধ করে ওকে যেন কাজে লাগান হয়। ওর বোন ট্রমা কাটিয়ে ওঠে অনেকদিন পর। দিল্লী থেকে তখন আমাদের কাছে নির্দেশ আসে অবিনাশ বর্মার দল কে ধরার। কিন্তু এমন ভাবে যাতে কিছুতেই আর না বেরতে পারে।আমার ওপর ভার পড়ে তার রূপরেখা তৈরি করা আর প্রয়োগের।তাই ছেলেটি অবিনাশ বর্মার দলে যোগ দেয় ৭ বছর আগে আমাদের সোর্স হয়ে । কিন্তু দুর্ভাগ্য ছেলেটির প্রতিজ্ঞা শেষ হয়ে যায় পাখি দলুই এর গুলিতে। তার বন্ধু ছেলেটির প্রান বাঁচায়।
তার ২ বছর আগে ছেলেটির বোন আমাদের বাহিনিতে যোগ দেয় নিজের হাতে প্রতিশোধ নেবে বলে কনস্টেবল হয়ে। মেয়েটির হাতের টিপ অব্যর্থ। বাহিনিতে সব থেকে ভালো। আমি ঠিক করি ও প্রতিদিনের কাজে থাকবে না। রোহিতের নার্সিং হোমে কাজ করবে ৪ ঘণ্টা অর্ধেক বেতনে। অজুহাত দেবে বাবার অসুখ। আমাদের লোক এক ডাক্তারের সুত্রে রোহিতকে বলে লাগায়। মেয়েটি আমাদের খবর দিত রোহিতের আর কোন ক্রিমিনাল ভর্তি হলে আর ছাড়া পেলেই আমরা টুক করে তাকে তুলে নিতাম। দাদা গুলি খেয়ে ওই নার্সিং হোমে এসে প্রথমেই বোন কে বলে “ বোন আমি আর পারলাম না ও পারবে। তুই ওকে চোখে চোখে রাখিস। “। মেয়েটি ভীষণ হতাশ হয়ে পরে। কিন্তু সেই দিনের যে হিরো, সত্যি সে হিরোর মতন দেখতে, সুন্দর গান গায়, দারুন স্বাস্থ্য, মেয়েটির প্রেমে পরে যায় আর মেয়েটির মুখ ঝামটা, উপেক্ষা, অপমান সব কিছু সরিয়ে মেয়েটিকে প্রেম নিবেদন করে। মেয়েটি অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে সেই আহ্বান থেকে ফেরাতে পারেনি, হিরোর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাদের বিয়ে হয়। ভাই বোনের বাবা সেই ধানবাদের ঘটনার পর ভেঙে পরেন, আর ওঠেন নি। প্রত্যন্ত গ্রামে লুকিয়ে থাকতে চান , মেয়েটি সেইভাবে জীবন চালায়। এরপর সেই ৩ ভাইএর একে একে মৃত্যু হয়।
সেই ৩ ভাইয়ের মৃত্যুর পুজারি কে মেয়েটি কালো প্যান্ট সার্ট জুতো আর টুপি পরে কভার করত প্রতি ক্ষেত্রে আমাদের নির্দেশে। অকুস্থলে তাকে নিয়ে আসতো আবার ছেড়ে আসতো তার দাদা, বাহিনীর বুলেটে। এমনকি সেই পুজারি ক্লাব হোটেলে গান গাইতে গেলে পাছে রোহিতের লোকেরা কিছু করতে পারে মেয়েটি কভার করত। দাদা বুলেট নিয়ে অপেক্ষা করত সব সময়। তিতলিকে বাঁচানোর জন্য তোমাকে ফোন করেছিল মেয়েটি আমাদের নির্দেশে,কেননা এনকাউনটারে অবিনাশ বা রোহিত মরলে আমরা সবাই শেষ হয়ে যেতাম। ওই কাজ আর কেউ পারতনা ওজু। কেউ না। তুমি ড্রাগনের ডেরায় ঢুকে তাকে নিকেশ করেছ একা। অকল্পনীয় এচিভমেনট।
অবিনাশ বর্মা অসাধারণ ক্রিমিনাল। জীবনে শুধু একবার ভুল করেছে তিতলি কে সওদা করতে গেছিল। জানত না তিতলি তোমার বোন। আমরা কেউ জানতাম না। আমরা অনেক চেষ্টা করেও অবিনাশের বিপক্ষে এমন প্রমান বা সাক্ষী জোগাড় করতে পারিনি যাতে ওকে ধরলে আর বেরতে না পারে। অবিনাশের মতো লোকেরা সভ্যতার শত্রু। ওদের মৃত্যু সমাজের মঙ্গল তাই আমরা বাধা দিই নি।
………চুপ করে সূর্য ওজু কে “ তোমাকে আমি শুভেচ্ছা জানাই ওই কাজের জন্য। আর ভাই বোন কারা, তুমি বুঝে গেছ”
হেঁসে কাঁধে হাত রেখে
……… স্যার আপনি কিছু বলবেন………গম্ভীর গলায় ওজু
………নো চড় গব্বর সিং, আর আমার তাবিজ কোথায়? ওতে ঠাম্মা আছে……ওজু এখন অনেক সহজ
……১০০ বার মারবো, রোজ মারবো। তুই সবাইকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিস। হাসনু আজ সকালে যখন শুনল যে তুই “ সাগারি মে গায়ে” গাইছিস। ও তৎক্ষণাৎ আমাকে বলল “ চাকরি ছেড়ে দাও বাবা, তুমি বুড়ো হয়ে গেছ। ক্লাসিক্যাল গান গাইছে, তৃতীয় পাণ্ডবের নামে নাম, কোমরে রুপোর তাবিজ, তাতেও তুমি বুঝলে না ও ওজু। তোমার মনে নেই মাকে ডেকে দেখাত “ ফুল, দেক দেক থাম্মা লাগিয়েছে , দেক্তে বালো লাগছে” । ওজু তুই কি পাথরের? তোর হৃদয় বলে কিছু নেই?
……… ‘তোর হৃদয় বলে কিছু নেই’ সিরাজের ভঙ্গিতে ওজু বলে উঠলো…
“ ভুল ভাল বলবে আবার চড় মারবে। ওটা “সাগারি রাইনা কে জাগে”…ভীমসেন যোশির বিখ্যাত গান, রামকেলি রাগ। হাসনু ভুল বলবে না। হাসনুর সাথে দেখা হলে আমি বলব গব্বর সিং চড় মেরেছে। আমার তাবিজ ঠাম্মার দেওয়া, পাই নি, আর কুন্তি আমার স্ত্রী, ধনু প্রিয় বন্ধু প্রান দিতে পারতাম ওর জন্য, সবাই বিশ্বাস ভঙ্গের কাজ করেছে আমার সাথে। গব্বর সিং আমাকে ব্যাবহার করেছে অবিনাশের গ্যাং কে শেষ করার জন্য। আর চড় মারছে”