Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
      

 
।।৩৬।।



মণিকুন্তলা চোখ মেলে তাকায়।ঘুমিয়ে পড়েছিল নাকি?ইস কত রাত হয়ে গেছে।উঠে বসতে গিয়ে দেখল মনসিজ গলা জড়িয়ে শুয়ে আছে।আলগোছে গলা থেকে হাতটা সরিয়ে দিল।চোখ ঝাপসা হয়ে এল।মণিকুন্তলার মাতৃসত্তা জেগে ওঠে।এজীবনে তার আর মা হওয়া হবেনা।চৌকি হতে নেমে অন্ধকারে হাতড়ে সুইচ টিপে আলো জ্বালায়।ঘড়িতে দেখল নটা বেজে গেছে।বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল ঘুমিয়ে আছে মনসিজ।সময় মতো বিয়ে হলে তারও আজ এরকম একটা ছেলে থাকতো।হাউস কোট খুলে শাড়ী পরতে থাকে।সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টের পায়নি।একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে আজ সারা রাত মনকে নিয়ে জেগে কাটাবে।যত ওকে দেখছে কেমন একটা মায়া পড়ে গেছে।ওকে বাসায় এনেছিল তখন সাতপাচ ভাবেনি।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে।ঘুরে দাড়াতে দেখল ড্যাব ড্যাব করে তাকে দেখছে মন।
--মণি তুমি কোথায় যাচ্ছো?
--রাতে খেতে হবে না?
--তুমি রান্না করবে না?
--আজ নয় সোনা।আজ ইচ্ছে করছে না।কাল সকালে তোমার জন্য বাজার করব রান্না করব।
--মণি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
কথাটা কানে যেতে মণিকুন্তলা সন্দিহান চোখে মনসিজকে দেখে।তারপর বলল,তুমি বিশ্রাম করো আমি বাইরে থেকে তালা দিয়ে যাচ্ছি।
মনসিজ তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বলল,তুমি ভাবছো আমি পালিয়ে যাব কিনা?
মণিকুন্তলা দরজার কাছ থেকে ফিরে এসে বলল,তোমার ভাল না লাগলে তুমি চলে যেতে পারো।জোর করে কাউকে ধরে রাখতে চাইনে।
--ভাল না লাগলে এখানে আসতাম না।তুমি তালা দিয়ে যাচ্ছো তাই বললাম।
--তোমাকে এখানে কেউ দেখলে এই হোস্টেল হতে আমাকে পাততাড়ি গোটাতে হবে।বাড়ীওয়ালী খুব কড়া ধাতের মানুষ।তালা দিলে ভাববে ভিতরে কেউ নেই।বাবা কাকা ভাই--কোনো পুরুষ মানুষ হোস্টেলে এ্যালাউড নয়।
--স্যরি মণি আমি বুঝতে পারিনি--।
তুমি আমার বুদ্ধু সোনা বলে দু-গাল ধরে চুমু খেলো।কেমন ভাল লেগেছে রাতে দেখবো।ও হ্যা চিকেন না মাটন তোমার কি পছন্দ?
--ও সব কতকাল খাইনি।তোমার যা ইচ্ছে।
মণিকুন্তলার খারাপ লাগে।মনসিজের কথা কিছু শোনা হয়নি।দরজায় বাইরে থেকে তালা দিয়ে মণিকুন্তলা বেরিয়ে গেল।
এবার একটু ফিরে দেখা যাক।ভুপতি নন্দি অর্থাৎ নন্দীস্যারকে দিগনগরে চেনে না কেউ নেই।শিক্ষকতা করেন অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি,তার আকস্মিক মৃত্যুতে সারা অঞ্চল শোকস্তব্ধ।স্বামীর মৃত্যুতে মঞ্জুষার ঘরে আধার নেমে আসে।একটি মাত্র মেয়ে তখন ক্লাস সেভেন-এ পড়ে।তিনিও বেশিদূর পড়াশুনা করেন নি। অঞ্চলের কর্তা ব্যক্তিদের সহায়তায় মঞ্জুষা দিগনগর গার্লস কলেজে পিয়নের চাকরি পেলেন।    অতি কষ্টে বিধবা মেয়েকে মানুষ করতে থাকে।একটার পর একটা পাস করে মেয়ে একদিন কল্যাণীতে পোস্ট গ্রাজুয়েটে ভর্তি হল। তারপর থেকে বিধবা মেয়ের বিয়ের চেষ্টা করতে থাকেন।বিয়েই মেয়েদের শেষ পরিণতি।বিয়েটা হয়ে গেলে শান্তিতে মরতে পারবেন। প্রায় প্রতি মাসে কেউ না কেউ দেখতে আসে।পরে খবর দেব বলে যায় কিন্তু কোনো খবর আসেনা।
মেয়ের গায়ের রঙ কালো আজকাল সবাই ফর্সা মেয়ে চায়।মেয়েটি এম এ পাস করে চাকরির চেষ্টা করতে থাকে।এক সময় এসএসসি তে বসে চাকরি পায় বারাকপুরে।মেয়ে পছন্দ হয় কিন্তু ছেলে চাকরি বাকরি কিছু করে না।আবার ছেলে পছন্দ হয় কিন্তু গায়ের রঙ কালো চাকরি স্থল দূরে।একদিন বিধবা অসহায় মেয়েকে রেখে অশান্তি নিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন।এদিকে বয়স থেমে থাকে না। গড়িয়ে গড়িয়ে সাইত্রিশে এসে পড়েছে।কে করবে তার বিয়ের চেষ্টা?তাকে অক্ষত যোনী থাকতে হবে ধীরে ধীরে এই বিশ্বাস মনে দৃঢ় হতে থাকে।
 বিয়ের রঙীন স্বপ্ন আর তাকে উত্যক্ত করেনা।কলেজে যায় আর আসে বেশ কাটছিল দিনগুলো।একদিন পালপাড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেনের অপেক্ষায় এমন সময় একটি লোক ধুতি পাঞ্জাবী পরণে গুটি গুটি কাছে এসে বলল,ম্যাডাম আপনার সঙ্গে কিছু কথা আছে।আপনার বাসায় যেতে পারি?
অবাক হয় চেনে না জানে না তার সঙ্গে কি কথা থাকতে পারে?মেয়েদের অভিভাবক এখানে কোথা থেকে আসবে।মেয়েটি বলল, আপনাকে আগে কোথাও দেখেছি মনে হয় না।
--আমি একজন ম্যাচ মেকার।
মেয়েটির মনে আশার দীপ জ্বলে ওঠে জিজ্ঞেস করে,আপনি আমার বাসা চেনেন?
লোকটি দাত বের করে বলল,আপনি চিন্তা করবেন না।অভয় দিলে আমি পৌছে যাব।
ট্রেন এসে পড়তে মেয়েটি "আচ্ছা" বলে ট্রেনে উঠে পড়ল। 
একটার পর একটা ক্লাস নেয়,সকালের ঘটনাটা মাছি মত নাকের সামনে ভন ভন করতে থাকে।নারী-পুরুষের মিলন নিয়ে এক সময় কত কল্পনার প্রাসাদ রচিত হয়েছে মনে মনে আবার সেসব ভীড় করে আসে।কলেজ ছুটি হতে মুহূর্ত বিলম্ব না করে ছুটলো ট্রেন ধরতে। 
বাসায় ফিরে শাড়ী বদলে একটা ভাল শাড়ী পরল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখে।দিন দিন মুটিয়ে যাচ্ছে,পাছাটা ঠেলে উঠেছে।মুখে পাউডার দিতে গিয়েও থেমে যায়।কালো মুখ দেখে পছন্দ করলে করবে।পাত্র আজ আসবে সে কথা তো বলেনি। নিজের বোকামীতে নিজেই হেসে ফেলল।
ভেবেছিল ভদ্রলোক এলে চা করবে।সাতটা বাজে আর কখন আসবে।রান্না ঘরে গিয়ে চা করতে ঢুকলো।আসার পথে মিষ্টি নিয়ে এসেছিল।বাক্সটা সরিয়ে রাখল।ভদ্রলোক এসে ফিরে যায়নি তো?নিজেকে ধমক দেয় এত ভাবার কি আছে।ভদ্রলোক এলেই বিয়ে হয়ে যাবে এমন তো নয়।তাকে দেখে কালো বলে পিছিয়ে যাবে না তাতো নয়।এক সময় ভাবে বয়স তো কম হলনা,বিয়ের দরকার কি?এরপর সোজা ভাগিয়ে দেবে আর এসব ভাল লাগে না।
চা নিয়ে ঘরে এসে চায়ে সবে চুমুক দিয়েছে দরজায় কড়া নড়ে ওঠে।চায়ের কাপ পাশে রেখে উঠে দরজা খুলে দেখল সেই ভদ্রলোক।
ভদ্রলোককে ভিতরে নিয়ে বসিয়ে চা মিষ্টি দিল।ভদ্রলোক বলল,আবার এসব কেন?
আয়েশ করে খেতে থাকে ভদ্রলোক। কালো মেয়েটি বলল,আপনাকে সোজাসুজি বলি,আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমার কেউ নেই।আমিই আমার অভিভাবক।
--হ্যা জানি ভেরি স্যাড।
--মেয়ে দেখতে হলে রোববার ছাড়া হবে না।
--মেয়ে পছন্দ হয়েছে।
--মানে?
--পাত্র আপনাকে দেখেছে তার আপত্তি নেই।
--তার আপত্তি নেই কিন্তু আমার তো জানতে হবে পাত্র কি করে কোথায় থাকে?বাসায় কে কে আছে--।
ভদ্রলোক পকেট হতে একটা ছবি বের করে দিয়ে বলল,এ মাসেই তোলা।পাত্র শান্তি পুরে থাকে বিরাট কাপড়ের ব্যবসা।কলকাতায় বেনারসী প্যালেস মোহিনী মোহন সিল্ক হাউস বিভিন্ন দোকানে তার মাল যায়।আপনার বয়সী।
মেয়েটি ছবিটা নেড়ে চেড়ে দেখতে থাকে,নাকের নীচে গোফ।গোফ তার পছন্দ নয়,সব কিছু মনের মত হবে তা নয়।
ভদ্রলোক বলল,আপনি যদি তার ব্যবসা দেখতে চান একদিন সময় করে চলুন।
--কোথায়?
--শান্তিপুরে।পাত্রের নাম রমেন গুপ্ত।
গুপ্ত মানে বদ্যি কালোমেয়েটি বলল,অসবর্ণে আপত্তি নেই তো?
--না না ম্যাডাম উনি আপনার ব্যাপারে সব জানেন।ব্লুন কবে যাবেন ব্যবসা দেখতে?
--শান্তিপুর অনেক দূর--আপনি যখন বলছেন বড় ব্যবসা মানে আপনি তো মিথ্যে বলবেন না।তবে আমি তো কলেজ ছাড়তে পারবো না।শান্তিপুর থেকে কলেজ করা---।
--আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।বিয়ের পর কলকাতার কাছাকাছি বাসা নেবে।ব্যবসার জন্য দরকার।
অতি আগ্রহের জন্য কালোমেয়েটি বেশি না ভেবেই রাজী হয়ে গেল।রেজিস্ট্রি বিয়ে হবে।
রেজিস্ট্রির দিন সকাল বেলা দরজার সামনে একটা স্কর্পিও  এসে দাড়ালো।গাড়ি থেকে সেই লোকটি নেমে বলল,রমেনবাবু গাড়ী পাঠিয়েছে।
কালো মেয়েটি লাজুক হাসে।মনে হচ্ছে এতদিনের লালিত ইচ্ছে পূর্ণ হতে চলেছে।
রেজিস্ট্রি অফিসে দেখা হল আড় চোখে দেখল ছবিতে যেমন দেখেছিল তবে বয়স মনে হল একটু বেশী,তাতে কিছু যায় আসেনা।
সই করার সময় লক্ষ্য করল,রমেনের  লেখা এত জড়ানো কি নাম ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।কালোমেয়েটিও বেশি না ভেবে সই করে দিল।      
 
  
[+] 10 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 28-09-2021, 03:52 PM



Users browsing this thread: 44 Guest(s)