23-09-2021, 06:28 PM
(This post was last modified: 06-01-2022, 07:33 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৩৪।।
স্নান খাওয়া সেরে বেরোবার উদ্যোগ করে মনসিজ।গোবেদা ছাড়া মামা বা মামী কেউ থাকার কথা বলল না।গোবেদা স্টেশন অবধি পৌছে দিল।কিছুক্ষন পর ঘোষণা হল কৃষ্ণনগর লোকাল ঢূকছে।গোবেদা বলল,মনু একদিন সময় করে আসিস চাদুর সঙ্গে তোর আলাপ করিয়ে দেব।
ট্রেন আসছে দু-পাশে উপচে পড়ছে লোক।দুপুর বেলা এত ভীড়?আজ শনিবার মনে হয় যারা অফিস কাছারিতে গেছিল তারা ফিরছে।ট্রেন থামতে ভীড় ঠেলে উঠে পড়ল।মেয়েরাও কম যায়না তারাও সমানে পাল্লা দিয়ে ভীড় ঠেলে উঠছে।ভিতরে ঢূকল না ফুটবোর্ডে দাঁড়িয়ে ভিতরে উকি দিয়ে দেখল হাতল ধরে দাঁড়িয়ে অনেক লোক।পার্টিশনে পিঠ লাগিয়ে কয়েক জন দাড়িয়ে।প্রতিটা স্টেশনে লোক নামছে শূণ্যস্থান পূরণ করতে উঠছেও কম না।তার মধ্যে গুতোতে গুতোতে উঠছে ফেরিওলা।পার্টিশনে হেলান দিয়ে দাড়াতে পারলে সুবিধে হত,গুতোগুতি খেতে হতোনা।
ইচ্ছাপুর আসতে পার্টিশনে হেলান দেওয়া একজন নামতেই সেই ফাকে মনসিজ সুরুৎ করে ঢূকে গেল।উফস স্বস্তি পিছন থেকে ধাক্কাধাক্কির ব্যাপার নেই।চাদমণি সম্ভবত আদিবাসী।গোবেদা কি ওকে বিয়ে করবে?অসবর্ণ বিয়ে শুনেছে কিন্তু আদিবাসীকে বিয়ে এমন শোনেনি।অনেক মেয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে সাধারণ সমাজে বিয়ে করতে পারে কিন্তু চাদমণি মনে হয়না লেখা পড়া জানে।মামা-মামী কি মানবে? গোবেদার কথাটা মনে পড়ল,শরীর ঠূনকো নয়।হোটেলে মানুষ খেতে যায় যে থালায় খেতে দেয় সেই থালায় আগের কোনো খদ্দের খেয়ে গেছে ধুয়ে পরিষ্কার করে আবার অন্য খদ্দেরকে খেতে দিচ্ছে।অবলীলায় সেই থালায় তৃপ্তি করে চেটে পুটে খাচ্ছে অথচ শরীর অসুচি হয়ে যায়। ট্রেন বারাকপুরে ঢুকছে যারা নামবে ভীড় ঠেলে ফুটবোর্ডে জড়ো হচ্ছে সব।মনোসিজ পিছনে চেপে দাঁড়ায়।বারাকপুরে ট্রেন থামতে হুড়মুড়িয়ে লোক নামে ফুটবোর্ড প্রায় ফাকা তারপর ঠেলাঠুলি করে উঠতে থাকে লোক।মনোসিজের সামনে তিন জন মহিলা দাঁড়িয়ে গেল,একজন বলল,এখনি নামবো ভিতরে যাবো না।মনসিজের দিকে পিছন ফিরে মহিলা ওদের মধ্যে বয়স্কা অনুমান পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স শ্যমলা গায়ের রঙ চওড়া কাধ ভারী পাছা।চেহারা কাধে চামড়ার ভারী ব্যাগ কথাবার্তা শুনে মনে হল ওরা সম্ভবত কোনো কলেজের শিক্ষিকা।
--মণিদি গতবারের তুলনায় এবার কিন্তু পাসের হার অনেক বেশী।
--স্বপ্নাটার জন্য খারাপ লাগছে,ভেবেছিলাম ফার্স্ট ডিভিশন হবে।
মনসিজ নিশ্চিত হয় এরা শিক্ষিকা।পর মুহূর্তে মনে পড়ল দিলীপের কথা।আজ তাহলে রেজাল্ট বেরিয়েছে।শ্যামলা দিদিমণির পাছা তার তলপেটে এসে লাগছে।ভীড়ের চাপ দোষ দেওয়া যায়না।মুষ্কিল হচ্ছে পাছার ঘষায় পায়জামার নীচে অস্থিরতা অনুভব করে।কত পিছনে সরবে পিছনে পার্টিশনের সঙ্গে একেবারে সেটে গেছে। এত ভীড়ের মধ্যেও ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলায় ব্যস্ত।তিনজনের দুজন বিবাহিত একজন মনে হয় অবিবাহিত।শ্যামলা দিদিমণি চাপা গলায় বললেও মনোসিজের কানে আসেব উনি বলছেন,বিজ্ঞাপনে চাকরির কথা উল্লেখ করবি না।
কম বয়সী দিদিমণি নাকি সুরে বলল,আমি কি বিজ্ঞাপন দেব নাকি?
--চাকরি করে জানলে সব হামলে পড়বে।
সোদপুর আসতে কম বয়সী দিদিমণি বলল,মণিদি আসি?
একজন নামল তাহলে এরা কোথায় নামবে।ভীড়ের চাপ বাড়তে থাকে দিদিমণির পাছা সেটে আছে মনোসিজের তলপেটে।এদিক ওদিক দেখল কেউ দেখছে নাতো?দিদিমণি মনে হয় বুঝতে পারছে না।বুঝতে পারলে ঘুরে দাঁড়িয়ে সপাটে চড় মারতো।সবাই তাকেই দোষী মনে করতো।পাছার ঘষায় আগরপাড়া আসতে বাছাধন একেবারে খাড়া।মনসিজের কোনো উপায় নেই,দিদিমণি যে ইচ্ছে করে চাপছে তা নয়।ভীড়ের চাপে ঐ মোটা শরীর নিয়ে টাল সামলাতে পারছে না।ছায়ালু পরিবেশ বৃষ্টি হতে পারে।দমদম আসলে বাচা যায়।দিদিমণি বুঝতে পারলে কেলেঙ্কারী পাবলিক রসের গন্ধ পেয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়বে।মনে পড়ল আজ শনিবার।বড় অশুভ দিন। বেলঘরিয়ায় আরেকজন দিদিমণি নেমে গেল।শ্যামলা দিদিমণি কোথায় নামবেন? বেলঘরিয়া ছেড়ে ট্রেন কিছুটা যেতে দিদিমণি তার দিকে ঘুরে দেখল।বুঝতে পেরেছে নাকি?পিছন দিকে হাত দিয়ে তার বাড়াটা প্যাজামার উপর দিয়ে চেপে ধরল।মনসিজ চারদিকে দেখে কেউ দেখচে নাতো?দিদিমণি ইচ্ছে করেই পাছা দিয়ে বাড়ার উপর চাপ দিচ্ছিল মনসিজের আর কোনো সন্দেহ নেই।ট্রেন চার নম্বর প্লাটফরমে ঢূকছে।টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে।মনসিজকে এক নম্বর প্লাটফর্মে যেতে হবে।এক গুচ্ছ লোক নামলো দমদমে।দিদিমণিও নামল।মনসিজ নেমে একটা শেডের নীচে দাড়াল।বৃষ্টির বেগ একটু বেড়েছে।পায়জামায় হাত দিয়ে দেখল এতক্ষনে সিগন্যাল ডাউন হয়েছে।খুব বাচা বেচে গেছে।মনে হয় দিলীপ এতক্ষন জেনে গেছে ওর রেজাল্ট।মনে হয় টেনেটুনে পাস করে যাবে।দিদিমণিরা বলছিল এ বছর পাসের হার গত বছরের চেয়ে ভাল।হঠাৎ নজরে পড়ল হাত চার-পাচ দূরে সামনের শেডে দাঁড়িয়ে দিদিমণি।বৃষ্টির ছাট থেকে বাচাবার জন্য কাপড় ঈষৎ তুলে রেখেছে।চোখাচুখি হতে মৃদু হাসল।ভদ্রতার খাতিরে মনসিজও হাসল।দিদিমণি তাকে লক্ষ্য করছে না তাকিয়েও বুঝতে পারে।দিদিমণি কি দমদমে থাকে,আগে দেখেছে বলে মনে হয়না।তাকে দেখে নামেনি তো?না না দিদিমণি তো তার আগে নেমেছে।দিদিমণি বড় বড় পা ফেলে তার পাশে এসে দাড়ালো।মনসিজ এপাশ ওপাশ দেখল সবাই বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় যে যার নিজের মত দাঁড়িয়ে তাদের কেউ দেখছে না।দিদিমণি জিজ্ঞেস করল,তুমি এখানে থাকো?
--হ্যা ওপারে বিধান পার্কের কাছে।
--গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।আমি কাছেই থাকি চলো আমার বাসায় এক কাপ চা খেয়ে যাবে।
মনসিজ মুখের উপর না বলতে পারেনা বলল,বৃষ্টি পড়ছে।
--এসো আমার কাছে ছাতা আছে।
দিদিমণি ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে খুলে বলল,এসো।
মনসিজ সঙ্গে সঙ্গে হাটতে থাকে।নীচে এম সি গার্ডেন লেন।দিদিমণি কোমর ধরে টান দিয়ে বলল,ছাতার নীচে এসো।
রাস্তায় লোকজন নেই।দুজনে হাটতে থাকে।দিদিমণি জিজ্ঞেস করল,কোথায় গেছিলে?
--আমার এক আত্মীয়ের বাড়ী হালি শহর।
--আজ ফেরার কথা?
--না সে রকম কিছু না।ওরা যদি বেশি পীড়াপিড়ি করতো তাহলে হয়তো থাকতে হতো।দিদিমণি একটা কথা জিজ্ঞেস করব।
দিদিমণি মনসিজকে নিজের দিকে টেনে বলল,কি কথা?
--আজ কি রেজাল্ট বেরিয়েছে।
--হ্যা কেন?
--আমার এক বন্ধু পরীক্ষা দিয়েছিল।
দিদিমণি অবাক হয়ে বলল,তোমার বন্ধু?তুমি কি পড়ো?
--এবার ফিজিক্স নিয়ে বিএসসি দিলাম।
--ফিজিক্স ভেরি গুড।আজ ফিজিক্যালি হবে।
দিদিমণি আচমকা মনসিজে গলা জড়িয়ে গুন গুন গান ধরলেন,
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘন ঘোর বরিষায়
এমন দিনে সব খোলা যায়
মুখোমুখি তুমি আমি
জড়াজড়ি চুমাচুমি
যা ইচ্ছে হয় তা করা যায়...
মনসিজ হাসে দিদিমণির গানের গলা বেশ সুন্দর।বাদলা দিনে নারী দেহের উষ্ণতা ভাল লাগে। রবীন্দ্রনাথের গানে নিজের মত শব্দ ঢূকিয়েছে।গান শেষ হতে মনসিজ বলল,দিদিমণি আপনার গানের গলা খুব সুন্দর।
--আর দিদি নয় শুধু মণি বলবে।আমার নাম মণিকুন্তলা।
--আপনার বাড়ীর লোকেরা কি ভাববে।
--তোমাকে তাদের কথা ভাবতে হবে না।