23-09-2021, 12:12 AM
গম্ভীর মুখে সিরাজ আলি বসে পুলিশ কমিশনারের পাশে। অবিনাশ বর্মা আর দিল্লির এক খুব উঁচু অফিসার সামনে। অবিনাশ জঘন্য ভাবে অপমান করছে
……মিস্টার কমিশনার, বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনি এক অযোগ্য লোকের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে বসে আছেন। দুটো লোককে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হোল আর আজ ৮ দিন আপনারা একজনকেও ধরতে পারলেন না। কি লাভ রেখে এই সব ওয়ারথলেস লোক । যদি কেউ বলে লোকাল পুলিশ ইনভল্ভড , কি উত্তর দেবেন?......রীতিমত উত্তেজিত অবিনাশ
……এই শহরেই লুকিয়ে আছে খুনি , আপনাকে নাম বলেছি কিন্তু আপনি ধরেন নি
………না স্যার আমরা চেষ্টা করছি। যার নাম করেছেন আমরা তল্লাশি চালিয়ে তাকে পাইনি, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে একটা পক্সের রুগি কি করে একা ওই কাজ করতে পারে আমাদের ধারনা নেই। একটা খবর আমরা পেয়েছি, এক বাইক ওয়ালা দেখেছে এক মাঝারি হাইটের রোগা লোককে স্যালুট করতে। আমরা খোঁজ জারি রেখেছি স্যার।……আরও যা খুশি বলে অবিনাশ ধমক দিয়ে গেল ৪-৫ দিনের ভিতর ধরতে না পারলে সে সরবচ্চ যায়গায় অভিষোগ জানাবে। বেরিয়ে যাওয়ার মুখে দিল্লির অফিসার ঘুরে চোখ মেরে দিল কমিশনারের দিকে ।
…… সিরাজ কি ব্যাপার কোন সুত্র নেই?
………না স্যার কিছুটি নেই। পায়ের ছাপ হাতের ছাপ কিচ্ছু না। এমনকি সে কিভাবে পৌছাল অকুস্থলে তারও কোন চিনহ নেই। যে এই কাজ করেছে সে অত্যন্ত বুদ্ধিমান, শক্তিশালি এবং চটপটে ।
………অবিনাশ কোন ফাগুর কথা বলছে?
………এক জন আছে কিন্তু সে তো পক্স এ শুয়ে, তার পক্ষে এই কাজ করা কি করে সম্ভব?
………মিস্টার মণ্ডল, আপনি আপনার মতো করে চালিয়ে ষান, সেই রকম ইঙ্গিত আমি পেয়েছি দিল্লী থেকে । যতো সমাজের কিট তাদের জন্য মাথাব্যাথা।
বেরিয়ে এসে নিজের ঘরে , সিরাজ ডেকে নিল সূর্য কে
………সূর্য, অবিনাশ, রোহিত আর ওদের গ্যাং এর ওপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাও। এই গ্রুপের সবাইকে বলে দাও আজ থেকে সব রকম ছুটি ক্যান্সেল । পরে কম্পেন্সেট করে দেব, ১৫ দিনের ভিতর শেষ হবে চূড়ান্ত খেলা।আমি নিশ্চিত। অবিনাশ বর্মা তার দুই হাত খুইয়েছে ৩ ভাই খুন হওয়াতে। রোহিত আর অবিনাশ ভয় পেয়েছে, বুঝতে পারছে যে মেরেছে সে ওদের থেকে বেশি চালাক, সর্বদা এগিয়ে থাকে কম করে দু পা। বর্মারা তাই গুটিয়ে আনবে লাটাই, কিন্তু সুতো তো ধরা সূর্য চ্যাটারজির হাতে………হা হা হা হা
২২-২৩ দিন পর ফাগু চান করেছে হলুদ আর নিমপাতা দেওয়া দু বালতি উষ্ণ জলে। নিজের এই কদিনের সব জামা, পাজামা চাদর এক কথায় ব্যাবহারের সব কিছু অনেকটা সাবান গুলে গরম জলে ভিজিয়ে রেখেছে। দিদা এক অভাগা ‘মা’ কে দিয়ে কাচিয়ে দেবেন, ১০০ টাকার বিনিময়ে। এই ‘মা’ সনকা, যথারীতি স্বামী নামক দুপেয়ে জানোয়ারের হাতে লাঞ্ছিত এবং অত্যাচারিত হয়ে শেষে পালিয়েছে তার সুন্দরবনের বাড়ি থেকে ৫ মাসের ছেলে কোলে। সেই ছেলে এখন ইকলেজে যায় আর মা লোকের বাড়ি কাজ করে। নেকড়েরা দিদার বাড়ির আশেপাশেও বিরাজমান। যুবতীর বাঁশের মতো শুখনো শরীর গত চার বছর দুবেলা পেটে কিছু পরার পর, এখন বাদল দিনের কদম্ব গাছ। ফুলের গন্ধে প্রচুর নেকড়ে, সাথে অনেক মুখোশে ঢাকা ভদ্রলোক, ঘ্রান নিতে ব্যাকুল। ফাগু আর গলির খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর জন্য নখ গুটিয়ে রেখেছে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই ফুসফুস করে, সনকা এখনও পিছলায়নি পা। দিদার বুদ্ধি নেয়, ওই বাড়ির গলির শেষে , পাঁচিলের ধারে ঝুপড়ি বানিয়ে থাকে ছেলে বিশু কে নিয়ে। বিশু এই গলির এক প্রানবন্ত বালক। বর্ষায় দিদা সিঁড়ির তলায় থাকতে দেয়।
আজ ভালো মাছ মাংস দুটোই খেয়েছে ফাগু। সন্ধ্যার মুখে ফোন
………হ্যালো রোম বলুন। আজ চান করেছি
………এক্ষুনি এসো ভালো খবর আছে, এক্ষুনি , জলদি………উত্তেজিত রোম
লেভিসের জিন্স আর সাদা সার্ট পায়ে জুতো, হালকা মেজাজে বেরিয়ে ফাগুর মনে হোল কিছু একটা দিলে হতো গায়ে। পক্সের পর আজ প্রথম দিন, ঠাণ্ডা না লাগে। রোমের দরজার বেল টিপতেই, রোম দরজা খুলে টেনে নিয়ে চুমু। হকচকিয়ে ফাগু
………কি হোল হঠাৎ?.........রোম দু হাত তুলে নাচছেন ঘর জুড়ে সাথে গান “ ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে”…রীতিমত হাতের মুদ্রায় ফুটে উঠছে ভাব, মহিলা কি নাচতেন এক সময়? ছন্দ আছে নাচে, গলার সুর মাঝে মাঝে কেটে গেলেও নাচ নিখুত।ফাগু রোমের সাথেই ঘুরে ঘুরে দেখছে
………রোম আজ ১ তারিখ, ফাগুন আসতে এখনও ১৫ দিন বাকি, কি ব্যাপার
………ফাগুন এসেছে , রাজু……।।চুপ করো…… কথা বলেছে………আজ বলেছে কথা রা………জু………… চিৎকার দিয়ে থামলেন রোম, হাপিয়ে গেছে ফাগুর কাছে এসে এক গাল হাসিমেখে
………আজ কথা বলেছে
………কে পিউ?......মাথা নাড়িয়ে রোম ‘হ্যাঁ’ বলছেন,
……রোম, কি হয়েছে?.........কান্না ভেজা মুখে হাসির ঝলক
………তোমার জন্য রাজু, তোমার জন্য, তোমার বুদ্ধিতে পেলাম পিউ কে……জড়িয়ে কাঁদছেন। ফাগু বিছানায় বসিয়ে
……বলুন কি হয়েছে……পড়নের ঝোলা সোয়েটারে মুখ মুছে
………তুমি বলেছিলে রাজু রোজ ওর কলেজে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। তাই করতাম বোম্বে থেকে ফিরে। দেখতাম একই গেট দিয়ে ঢোকে আর বেরোয়। আমাকে দেখেও গেট পালটায়নি, মনে একটু আশা, সব দীপ নেভেনি কিছু আছে বাকি এখনও। আজ ছুটির দিন, কিন্তু আমি লক্ষ করেছি, ছুটির দিনেও ওরা আসে আড্ডা মারার জন্য্য, তাই দুপুরে ভাবলাম গিয়েই দেখি, কি আর হবে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে। দুপুরে দেখতে পেলাম না। ওর সাথে দেখেছি, এই রকম একজনকে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম “ ভাই পিউ এসেছে, থার্ড ইয়ারের ছাত্রী?”
……না বড় খুকি এখনও আসেনি”……কি ছিঁড়ি উত্তরের
……দাড়ান তিনি আসবেন……। দাঁড়িয়ে আছি ১ ঘণ্টার ওপর তিনি এসে আমাকে দেখে যথারীতি মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। বন্ধুরা বলেছে যে আমি খোঁজ করেছি, জ্বলন্ত চোখ নিয়ে সামনে এসে আঙুল তুলে “ আপনাকে কে অধিকার দিয়েছে আমার সম্বন্ধে খোঁজ নিতে? আর কোনোদিন যদি আমার বন্ধুদের কিছু জিজ্ঞাসা করেন খুব খারাপ হবে”।আরও অনেক কথা শুনিয়ে আঙুল তুলে শাসিয়ে গেল। সবাই দেখতে পেল আর শুনল। ভীষণ অপমান, রুমালে চোখ ঢেকে দাঁড়িয়ে গেটের গায়ে হ্যালান দিয়ে। দেখলাম বন্ধুরা হাত নেরে কিছু বলছে। মিনিট ৫ পর মনে মনে ভেবে নিয়েছি ‘আর না, এ হবে না, আজ শেষ’। দেখি তিনি রাস্তা পার হয়ে আসছেন, বন্ধুরা হাত নেরে কিছু বলছে। আমার কাছে এসে গম্ভীর হয়ে
………এই ধুলো আর বাসের ধোঁয়ার মধ্যে কেন রোজ দাঁড়িয়ে থাক, অসুখ করবে, এসো……… ধমক দিয়ে হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে নিয়ে এলো পুলিশ ফাঁড়ি অবধি। পিউ শুনল আমার মনের অবস্থা, আর কি শুন্যতা জীবনে,
………ফোন করো, রাতে১০ টার পর, আর জিন্স পর না কেন? তোমার ফিগার খুব সুন্দর, মানাবে তোমায়। এইবার একটু হাস। পিছনে দেখ আমার বন্ধুরা আসছে। তুমি কষ্ট করেও যদি না হাস ওরা কি ভাববে………হাসির বদলে কেঁদে দিলাম রাজু ওই ভরা রাস্তায়। কিন্তু সে খুব হাসছিল আমার হাত ধরে। এই যদি না বসন্ত হয়, তাহলে বসন্ত কি রাজু, শুধু পলাশ আর কৃষ্ণচূড়া ?......... জড়িয়ে ধরে ফাগুকে কান্নাদিয়ে হাসি মুখে।
………আমি না রোম আমি না। ওই পোঁদপাকা ছেলে মেয়ে গুলো হাতে করে মনে ধরে উপহার দিয়েছে বসন্ত।………চুপ করে দুজনে বসে
……কুন্তির কি খবর, যাও নি তুমি?
………কুন্তি যেতে না করেছে, বলেছে ১ মাস না যেতে, গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে……মুখে হাসির ছায়া……চোখ সরু করে তাকিয়ে রোম” ক্ষতি হয়ে যাবে, মানে”………আবার ফাগু হাসি মুখে। গভীর ভাবে তাকিয়ে
………রাজু সত্যি, সত্যি?
………হ্যাঁ রোম, মেঘ আসছে, মেঘ………
……রাজু
………হ্যাঁ রোম, সত্যি। কিন্তু ও বড় একা
……কুন্তিকে এখানে নিয়ে এসো। আমার ভালো লাগবে রাজু ওর একা থাকা উচিৎ নয়
………রোম আপনাকে বলেছিলাম চক্রব্যূহ থেকে বেরতে চাইলে সাহায্য করতে, মনে আছে?
……বল কি করতে হবে, তোমার অতীত বল………ফাগু তার আর রোহিতের সম্পর্ক , কি করেছে তার কিছু আভাষ, দিল রোমকে
……রাজু আমি পুনে শহরে একটা কস্মেটিক্স এর দোকান দেব। বিদেশি কস্মেটিক্স শুধু হাই এন্ড কাস্টমারের জন্য। ঘর আছে আমার ওখানে, বিকাশ কিনেছিল আমার নামে। তুমি আর কুন্তি চালাবে, লাভ তোমাদের ৪০ আর আমার বাকি।
……… আর কিছু চাই না রোম। শুধু একটি ঘর যেখানে বড় হবে আমার সন্তান আর দিনের শেষে ঘরে ফেরা তার জন্য “ আঙিনা তে যে আছে অপেক্ষা করে, তার পরনে ঢাকাই শাড়ি আর কপালে সিঁদুর” , শেষের কথায় রোমও গলা মেলাল
অনেক অনেক কথা হোল তাদের ‘বসন্তের’ প্রথম দিনে। রাত ১২ টার সময় বেরল ফাগু। বেশ ঠাণ্ডা। রোম জোর করে একটা শাল গছিয়ে
………আজ পক্স থেকে উঠেছ, নাও। দুর্বল শরীরে ঠাণ্ডা লেগে যায় চট করে
গলির মুখে এসে দেখে বাড়ির সবাই নতুন বছরে গলিতে মেতে উঠেছে নিজেদের মতো নাচে গানে আগুন জ্বালিয়ে। শুধু সনকা শাড়ির আচলে গা মুড়ে আগুনের পাশে ঠাণ্ডার ভয়ে। দিদাকে ডেকে শাল দিয়ে সনকাকে দেখিয়ে দিল ফাগু। সারা শরীর শালে জড়িয়ে বিশুকে কোলে নিতে
……মিস্টার কমিশনার, বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনি এক অযোগ্য লোকের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে বসে আছেন। দুটো লোককে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হোল আর আজ ৮ দিন আপনারা একজনকেও ধরতে পারলেন না। কি লাভ রেখে এই সব ওয়ারথলেস লোক । যদি কেউ বলে লোকাল পুলিশ ইনভল্ভড , কি উত্তর দেবেন?......রীতিমত উত্তেজিত অবিনাশ
……এই শহরেই লুকিয়ে আছে খুনি , আপনাকে নাম বলেছি কিন্তু আপনি ধরেন নি
………না স্যার আমরা চেষ্টা করছি। যার নাম করেছেন আমরা তল্লাশি চালিয়ে তাকে পাইনি, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে একটা পক্সের রুগি কি করে একা ওই কাজ করতে পারে আমাদের ধারনা নেই। একটা খবর আমরা পেয়েছি, এক বাইক ওয়ালা দেখেছে এক মাঝারি হাইটের রোগা লোককে স্যালুট করতে। আমরা খোঁজ জারি রেখেছি স্যার।……আরও যা খুশি বলে অবিনাশ ধমক দিয়ে গেল ৪-৫ দিনের ভিতর ধরতে না পারলে সে সরবচ্চ যায়গায় অভিষোগ জানাবে। বেরিয়ে যাওয়ার মুখে দিল্লির অফিসার ঘুরে চোখ মেরে দিল কমিশনারের দিকে ।
…… সিরাজ কি ব্যাপার কোন সুত্র নেই?
………না স্যার কিছুটি নেই। পায়ের ছাপ হাতের ছাপ কিচ্ছু না। এমনকি সে কিভাবে পৌছাল অকুস্থলে তারও কোন চিনহ নেই। যে এই কাজ করেছে সে অত্যন্ত বুদ্ধিমান, শক্তিশালি এবং চটপটে ।
………অবিনাশ কোন ফাগুর কথা বলছে?
………এক জন আছে কিন্তু সে তো পক্স এ শুয়ে, তার পক্ষে এই কাজ করা কি করে সম্ভব?
………মিস্টার মণ্ডল, আপনি আপনার মতো করে চালিয়ে ষান, সেই রকম ইঙ্গিত আমি পেয়েছি দিল্লী থেকে । যতো সমাজের কিট তাদের জন্য মাথাব্যাথা।
বেরিয়ে এসে নিজের ঘরে , সিরাজ ডেকে নিল সূর্য কে
………সূর্য, অবিনাশ, রোহিত আর ওদের গ্যাং এর ওপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাও। এই গ্রুপের সবাইকে বলে দাও আজ থেকে সব রকম ছুটি ক্যান্সেল । পরে কম্পেন্সেট করে দেব, ১৫ দিনের ভিতর শেষ হবে চূড়ান্ত খেলা।আমি নিশ্চিত। অবিনাশ বর্মা তার দুই হাত খুইয়েছে ৩ ভাই খুন হওয়াতে। রোহিত আর অবিনাশ ভয় পেয়েছে, বুঝতে পারছে যে মেরেছে সে ওদের থেকে বেশি চালাক, সর্বদা এগিয়ে থাকে কম করে দু পা। বর্মারা তাই গুটিয়ে আনবে লাটাই, কিন্তু সুতো তো ধরা সূর্য চ্যাটারজির হাতে………হা হা হা হা
২২-২৩ দিন পর ফাগু চান করেছে হলুদ আর নিমপাতা দেওয়া দু বালতি উষ্ণ জলে। নিজের এই কদিনের সব জামা, পাজামা চাদর এক কথায় ব্যাবহারের সব কিছু অনেকটা সাবান গুলে গরম জলে ভিজিয়ে রেখেছে। দিদা এক অভাগা ‘মা’ কে দিয়ে কাচিয়ে দেবেন, ১০০ টাকার বিনিময়ে। এই ‘মা’ সনকা, যথারীতি স্বামী নামক দুপেয়ে জানোয়ারের হাতে লাঞ্ছিত এবং অত্যাচারিত হয়ে শেষে পালিয়েছে তার সুন্দরবনের বাড়ি থেকে ৫ মাসের ছেলে কোলে। সেই ছেলে এখন ইকলেজে যায় আর মা লোকের বাড়ি কাজ করে। নেকড়েরা দিদার বাড়ির আশেপাশেও বিরাজমান। যুবতীর বাঁশের মতো শুখনো শরীর গত চার বছর দুবেলা পেটে কিছু পরার পর, এখন বাদল দিনের কদম্ব গাছ। ফুলের গন্ধে প্রচুর নেকড়ে, সাথে অনেক মুখোশে ঢাকা ভদ্রলোক, ঘ্রান নিতে ব্যাকুল। ফাগু আর গলির খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর জন্য নখ গুটিয়ে রেখেছে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই ফুসফুস করে, সনকা এখনও পিছলায়নি পা। দিদার বুদ্ধি নেয়, ওই বাড়ির গলির শেষে , পাঁচিলের ধারে ঝুপড়ি বানিয়ে থাকে ছেলে বিশু কে নিয়ে। বিশু এই গলির এক প্রানবন্ত বালক। বর্ষায় দিদা সিঁড়ির তলায় থাকতে দেয়।
আজ ভালো মাছ মাংস দুটোই খেয়েছে ফাগু। সন্ধ্যার মুখে ফোন
………হ্যালো রোম বলুন। আজ চান করেছি
………এক্ষুনি এসো ভালো খবর আছে, এক্ষুনি , জলদি………উত্তেজিত রোম
লেভিসের জিন্স আর সাদা সার্ট পায়ে জুতো, হালকা মেজাজে বেরিয়ে ফাগুর মনে হোল কিছু একটা দিলে হতো গায়ে। পক্সের পর আজ প্রথম দিন, ঠাণ্ডা না লাগে। রোমের দরজার বেল টিপতেই, রোম দরজা খুলে টেনে নিয়ে চুমু। হকচকিয়ে ফাগু
………কি হোল হঠাৎ?.........রোম দু হাত তুলে নাচছেন ঘর জুড়ে সাথে গান “ ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে”…রীতিমত হাতের মুদ্রায় ফুটে উঠছে ভাব, মহিলা কি নাচতেন এক সময়? ছন্দ আছে নাচে, গলার সুর মাঝে মাঝে কেটে গেলেও নাচ নিখুত।ফাগু রোমের সাথেই ঘুরে ঘুরে দেখছে
………রোম আজ ১ তারিখ, ফাগুন আসতে এখনও ১৫ দিন বাকি, কি ব্যাপার
………ফাগুন এসেছে , রাজু……।।চুপ করো…… কথা বলেছে………আজ বলেছে কথা রা………জু………… চিৎকার দিয়ে থামলেন রোম, হাপিয়ে গেছে ফাগুর কাছে এসে এক গাল হাসিমেখে
………আজ কথা বলেছে
………কে পিউ?......মাথা নাড়িয়ে রোম ‘হ্যাঁ’ বলছেন,
……রোম, কি হয়েছে?.........কান্না ভেজা মুখে হাসির ঝলক
………তোমার জন্য রাজু, তোমার জন্য, তোমার বুদ্ধিতে পেলাম পিউ কে……জড়িয়ে কাঁদছেন। ফাগু বিছানায় বসিয়ে
……বলুন কি হয়েছে……পড়নের ঝোলা সোয়েটারে মুখ মুছে
………তুমি বলেছিলে রাজু রোজ ওর কলেজে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। তাই করতাম বোম্বে থেকে ফিরে। দেখতাম একই গেট দিয়ে ঢোকে আর বেরোয়। আমাকে দেখেও গেট পালটায়নি, মনে একটু আশা, সব দীপ নেভেনি কিছু আছে বাকি এখনও। আজ ছুটির দিন, কিন্তু আমি লক্ষ করেছি, ছুটির দিনেও ওরা আসে আড্ডা মারার জন্য্য, তাই দুপুরে ভাবলাম গিয়েই দেখি, কি আর হবে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে। দুপুরে দেখতে পেলাম না। ওর সাথে দেখেছি, এই রকম একজনকে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম “ ভাই পিউ এসেছে, থার্ড ইয়ারের ছাত্রী?”
……না বড় খুকি এখনও আসেনি”……কি ছিঁড়ি উত্তরের
……দাড়ান তিনি আসবেন……। দাঁড়িয়ে আছি ১ ঘণ্টার ওপর তিনি এসে আমাকে দেখে যথারীতি মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। বন্ধুরা বলেছে যে আমি খোঁজ করেছি, জ্বলন্ত চোখ নিয়ে সামনে এসে আঙুল তুলে “ আপনাকে কে অধিকার দিয়েছে আমার সম্বন্ধে খোঁজ নিতে? আর কোনোদিন যদি আমার বন্ধুদের কিছু জিজ্ঞাসা করেন খুব খারাপ হবে”।আরও অনেক কথা শুনিয়ে আঙুল তুলে শাসিয়ে গেল। সবাই দেখতে পেল আর শুনল। ভীষণ অপমান, রুমালে চোখ ঢেকে দাঁড়িয়ে গেটের গায়ে হ্যালান দিয়ে। দেখলাম বন্ধুরা হাত নেরে কিছু বলছে। মিনিট ৫ পর মনে মনে ভেবে নিয়েছি ‘আর না, এ হবে না, আজ শেষ’। দেখি তিনি রাস্তা পার হয়ে আসছেন, বন্ধুরা হাত নেরে কিছু বলছে। আমার কাছে এসে গম্ভীর হয়ে
………এই ধুলো আর বাসের ধোঁয়ার মধ্যে কেন রোজ দাঁড়িয়ে থাক, অসুখ করবে, এসো……… ধমক দিয়ে হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে নিয়ে এলো পুলিশ ফাঁড়ি অবধি। পিউ শুনল আমার মনের অবস্থা, আর কি শুন্যতা জীবনে,
………ফোন করো, রাতে১০ টার পর, আর জিন্স পর না কেন? তোমার ফিগার খুব সুন্দর, মানাবে তোমায়। এইবার একটু হাস। পিছনে দেখ আমার বন্ধুরা আসছে। তুমি কষ্ট করেও যদি না হাস ওরা কি ভাববে………হাসির বদলে কেঁদে দিলাম রাজু ওই ভরা রাস্তায়। কিন্তু সে খুব হাসছিল আমার হাত ধরে। এই যদি না বসন্ত হয়, তাহলে বসন্ত কি রাজু, শুধু পলাশ আর কৃষ্ণচূড়া ?......... জড়িয়ে ধরে ফাগুকে কান্নাদিয়ে হাসি মুখে।
………আমি না রোম আমি না। ওই পোঁদপাকা ছেলে মেয়ে গুলো হাতে করে মনে ধরে উপহার দিয়েছে বসন্ত।………চুপ করে দুজনে বসে
……কুন্তির কি খবর, যাও নি তুমি?
………কুন্তি যেতে না করেছে, বলেছে ১ মাস না যেতে, গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে……মুখে হাসির ছায়া……চোখ সরু করে তাকিয়ে রোম” ক্ষতি হয়ে যাবে, মানে”………আবার ফাগু হাসি মুখে। গভীর ভাবে তাকিয়ে
………রাজু সত্যি, সত্যি?
………হ্যাঁ রোম, মেঘ আসছে, মেঘ………
……রাজু
………হ্যাঁ রোম, সত্যি। কিন্তু ও বড় একা
……কুন্তিকে এখানে নিয়ে এসো। আমার ভালো লাগবে রাজু ওর একা থাকা উচিৎ নয়
………রোম আপনাকে বলেছিলাম চক্রব্যূহ থেকে বেরতে চাইলে সাহায্য করতে, মনে আছে?
……বল কি করতে হবে, তোমার অতীত বল………ফাগু তার আর রোহিতের সম্পর্ক , কি করেছে তার কিছু আভাষ, দিল রোমকে
……রাজু আমি পুনে শহরে একটা কস্মেটিক্স এর দোকান দেব। বিদেশি কস্মেটিক্স শুধু হাই এন্ড কাস্টমারের জন্য। ঘর আছে আমার ওখানে, বিকাশ কিনেছিল আমার নামে। তুমি আর কুন্তি চালাবে, লাভ তোমাদের ৪০ আর আমার বাকি।
……… আর কিছু চাই না রোম। শুধু একটি ঘর যেখানে বড় হবে আমার সন্তান আর দিনের শেষে ঘরে ফেরা তার জন্য “ আঙিনা তে যে আছে অপেক্ষা করে, তার পরনে ঢাকাই শাড়ি আর কপালে সিঁদুর” , শেষের কথায় রোমও গলা মেলাল
অনেক অনেক কথা হোল তাদের ‘বসন্তের’ প্রথম দিনে। রাত ১২ টার সময় বেরল ফাগু। বেশ ঠাণ্ডা। রোম জোর করে একটা শাল গছিয়ে
………আজ পক্স থেকে উঠেছ, নাও। দুর্বল শরীরে ঠাণ্ডা লেগে যায় চট করে
গলির মুখে এসে দেখে বাড়ির সবাই নতুন বছরে গলিতে মেতে উঠেছে নিজেদের মতো নাচে গানে আগুন জ্বালিয়ে। শুধু সনকা শাড়ির আচলে গা মুড়ে আগুনের পাশে ঠাণ্ডার ভয়ে। দিদাকে ডেকে শাল দিয়ে সনকাকে দেখিয়ে দিল ফাগু। সারা শরীর শালে জড়িয়ে বিশুকে কোলে নিতে
অবাক বিশু মায়ের দিকে একবার বিস্ময়ে তাকিয়ে, নীরব চোখে দেখছে দিদা আর ফাগু মামাকে। ছোট্ট বিশুর চাউনিতে ফাগুর মনে হোল “উ আর রাইট রোম। শুধু পলাশের রঙে আর কৃষ্ণচূড়ার বন্যায় না, পৌষের হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডাতেও আসে বসন্ত ”
খুব সকালে ট্রেন, কুন্তি চলে আসবে ষ্টেশনে। ফাগু গুছিয়ে নিচ্ছে প্রয়োজনীয় সব কিছু সুটকেসে আর কাঁধে ঝোলান ব্যাগে। ফোন বেজে উঠলো, অজানা নম্বর
………হ্যালো, কে বলছেন
………ফাগু আপনি এক্ষুনি রোহিতের নতুন টাউনের ডেরায় যান। তিতলিকে নিয়ে আজ রাতে পালাবে অবিনাশ বর্মার নিজস্ব প্লেনে প্রথমে দিল্লী সেখান থেকে মধ্য এশিয়ার একটি দেশে। ফলস পাসপোর্ট বানিয়েছে তিতলির। ওকে ড্রাগে আচ্ছন্ন করে নেবে, এক বিদেশির সাথে ২ কোটিতে সওদা হয়েছে, বেচবে তিতলিকে আরব দেশের এক তেলের খনির বুড়ো মালিকের কাছে।
………কে বলছেন আপনি, কে আপনি, কি পরিচয়?
………আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। আপনি ‘জান কবুল’ করেছিলেন ফাগু, প্রমান করুন আপনি পুরুষ………… ফোন কেটে দিল।
কে ফোন করেছে, “জান কবুল” ধনু ছাড়া আর কেউ তো জানে না? কে ফোন করেছিল, মেয়েলি স্বর কিন্তু নাক চিপে কথা বললে যে রকম হয় সেইরকম স্বর, কে? ঢপ দিচ্ছে? ‘জান কবুল’ কি করে জানল, তাহলে কি ধনু? না এ অসম্ভব, ধনু বেইমানি করবে না, তাহলে, রোহিত কি ধনুকে ধরে ফেলেছে, মেরে ফেলবে?......... চুপ করে কোমরে হাত দিয়ে ভাবছে ফাগু, বুক ওঠা নামা করছে দ্রুত, মানে রাগ বাড়ছে ফাগুর। হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেছে, চোখে ধিকি ধিকি জ্বলছে আগুন। প্রচণ্ড জোরে এক লাথি মারল নিজের সুটকেসে “ বেরবই, এই চক্রব্যূহ থেকে হয় বেরবো, নয় মরব। আমার মেঘ সমাজবিরোধীর সন্তান হয়ে আসবে না এই পৃথিবীতে”।
ঠিক একই সময় ফোন পেল সিরাজ
………হ্যালো জোনাকি, কি খবর পাত্তা দিচ্ছ না, বল?......কান্না ভেসে এলো ওপার থেকে
………সিরাজ, তিতলির ফোন ডেড প্রায় ২ ঘণ্টা, সিরাজ আমার মন কাঁদছে সিরাজ
………৭ টা বাজে মাত্র, আর একটু দেখ
……না সিরাজ, না। আমি মা, বুঝতে পারছি ও বিপদে পড়েছে, রোহিত কিছু করেছে সিরা………জ
………দেখছি, ফোন নম্বর দাও………নম্বর টুকেছে আবার বেজে উঠল ফোন………উত্তেজিত কণ্ঠে
………পার্থ বলছি। রোহিত তিতলিকে নিয়ে আজ রাতে নিজের প্লেনে দিল্লী যাবে সেখান থেকে মধ্য এশিয়ায়। ওর গোটান শেষ, বাবা সঙ্গে আছে ওর নতুন টাউনের ডেরায়। এক্ষুনি রেড করুন
মূখের চেহারা পালটে গেলো সিরাজের। কঠিন চোয়াল। দ্রুত বেরিয়ে সূর্যর টেবিলে……দাঁড়িয়ে উঠেছে সূর্য
……… “ লেটস গো সূর্য।এক্ষুনি, এই মুহূর্তে, সঙ্গে এ্যাম্বুলেন্স নাও, গুলি গোলা চলতে পারে।প্রত্যেকে পিস্তল, বা যা কিছু আছে চেক করে নাও। ১ মিনিট সময় দিলাম। ইউনিট এর সবাই, এক্ষুনি”
তারিফ না করে পারল না সূর্য মনে মনে। হয়ত এক সাঙ্ঘাতিক অভিযান, কিন্তু স্বর এক বিন্দু ওঠেনি। সূর্য বুঝতে পারছে ভিতরে ভিতরে সিরাজ প্রচণ্ড উত্তেজিত। ১ মিনিট মানে সত্যি ১ মিনিট, ৩ টি এসউভি স্টার্ট দিল ১৫ জন বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত অফিসার আর কন্সটেবল নিয়ে।
নতুন টাউনের কমপ্লেক্সে ৬ টি বাড়ির প্রথমটির একতলায় রোহিতের অফিস কাম ডেরা। এটি কমপ্লেক্সের পাঁচিলের ধার ঘেঁষে পুব দিকে। একটি গেট পিছনের দিকে।
ফাগু ট্যাক্সি ছেড়েছে একটু আগে। হেটে এসেছে খানিকটা পথ। গেটে অল্প ধাক্কা দিতে বুঝল বন্ধ । পাচিল প্রায় ৭ ফুট। পিছিয়ে গেল ফাগু ৭-৮ পা, একটু দৌড়ে এসে লাফ গিয়ে শরীর এক ঝটকায় পাঁচিলের ওপর।তীক্ষ্ণ চোখে জরিপ করে নিজেকে নিঃশব্দে পাঁচিলের এ পাশে এনে বসে পড়ল হাটুতে ভর দিয়ে। পৌষ শেষ, কিন্তু বাতাসে লেগে আছে তার বিদায় বেলার শীতের ভাব। অফিস ঘরের বাইরে যে দাঁড়িয়ে ফাগু জানে তার নাম কেলো, রাজারহাটের মাস্তান।এক চপের খদ্দের। বেড়ালের মতো কাছে এসে আচমকা উঠে দাঁড়াতে, কেলো মুখ ঘুরিয়েছে কিন্তু অন্য দিকে ঘুরলো না আর মুখ, ঘারের আঘাত একটু জোর হয়ে গেছে, বেশ কিছুক্ষণ উঠবে না। ‘গেট দিয়ে ঢোকা মানে মারপিট, এদিকে দেখি’। জানালার ধারের পর্দা ১ ইঞ্চি মতো ফাক চোখে পড়ল ধনু। কাঁচের স্লাইডিং জানালা, খোলার চেষ্টা করে বুঝল সব কটি ভিতর থেকে বন্ধ। এ পাশ ওপাশ দেখছে হঠাৎ এক জানালা অল্প খুলে রোহিতের খাস বডিগার্ড, সামা গুটকার পিক ফেলে আবার বন্ধ করেছে।ফাগু কাছে গিয়ে হাতের তালু কাঁচের ওপর রেখে পাশে চাপ দিতে অল্প সরে গেল জানালা।আর একটু চাপ, আরও একটু পাশে জানালা। বেড়ালের মতো চুপ করে জানালার ৪-৫ ইঞ্চির মতো যায়গায় ফাগু উঠে লক্ষ করলো ভিতরে ধনু বাদে রোহিত, তার বাবা আর এক বিদেশি তিতলির চুল ধরে বসে মাটিতে। রোহিতের হাতে পিস্তল। ধনু কিছু বোঝাচ্ছে দু হাত নেরে। ফাগুর ডান দিকে ৩ ফুটের ভিতর সামা। দম নিয়ে নিল ফাগু, পর্দা দিয়ে সামাকে জড়িয়ে এক লাফে ঘরের ভিতরে দু পাক খেয়ে সামার পিস্তল তুলে সোজা দাঁড়িয়ে। সমস্ত ঘটনা ২-৩ সেকেন্ড। দাড়িয়েই ফাগু সরে গিয়ে দেয়ালে পিঠ দিয়ে পিস্তল তুলে ধরল রোহিতের দিকে। ফাগুর বা পাশে ধনু খালি হাতে, রোহিতের ডান পাশে অবিনাশ আর ঘরের মাঝামাঝি তিতলি মুখ বাঁধা মেঝেতে, এক সাহেব বসে আছে চুল ধরে। জামা অবিনস্ত, ফাগুর মগজে বোম ফাটবে। ক্যারাটের শিক্ষা মেনে এক বড় শ্বাস নিয়ে হাড় হিম স্বরে
………রোহিত, মেয়েটাকে ছেড়ে দে, না হলে শেষ দিন তোর আর তোর বাবার, ধনু জীবনে একবার পুরুষ হ বোকাচোদা, একবার
………ফাগু গুলি চালাস না বন্ধু। আর খুন না, তোর টিপ জানি, এক গুলিতে তুই শেষ করতে পারিস তোর যাকে ইচ্ছা, কিন্তু আর খুন না
………ফাগু, শুয়ারের বাচ্চা, তুই আমার দুই হাত কেটে নিয়েছিস,।এই ঘরে ঢুকেছিস, কি করে বেরবি তুই। চারিদিকে আমার লোক ঘিরে আছে, পারবি না, আজ তোর শেষ দিন। আমি অবিনাশ বর্মা তোর ধারনা নেই আমার ক্ষমতার, বন্দুক ফেলে দে
………তুই অনেক খুন করেছিস, এখনও সময় আছে, বন্দুক ফেলে আমাদের সাথে চল। কথা দিচ্ছি কিছু হবে না তোর। কথা শোন ফাগু, রোহিত বর্মা কথার খেলাপ করে না। বন্দুক ফেল………ফাগু বন্দুক তুলে সমানে তাক করে যাচ্ছে একবার রোহিতকে আর একবার তার বাবাকে ঘুরে ফিরে। ফাগুর পরনে ফুল সার্ট, কিন্তু হাতের বোতাম লাগান নেই। বাঁ হাত কিছু ধরে আছে বাঁ কাধের কাছে।
…………অবিনাশ বর্মা, আজ তুই এখান থেকে জ্যান্ত বেরবি না। মেয়েটাকে ছেড়ে দে, ভালো ভাবে বলছি, যেতে দে মেয়েটাকে
বাইরে হঠাৎ গাড়ির হর্ন সাথে চেঁচামিচি , হুইসিল, হুটার, আলোর ঝলকানি। কেউ আদেশ করছে “ সবাই ঘরে ঢুকে যান, কেউ বেরবেন না। পুলিশ এসেছে, ঘরে ঢুকে যান”। ৩ টি গাড়ির হেড লাইট এসে পড়ছে ওই অফিস ঘরে। আবার আদেশ “ জানালা ভেঙে ফেল, জলদি”…জানালার কাচ ভেঙে ঝন ঝন শব্দে ঘরের মেঝেতে
উত্তেজিত অবিনাশ আর রোহিত।জানালার দিকে তাকাচ্ছে আঢ়চোখে। ফাগু বুঝতে পারছে ভয় পেয়েছে দুজনে, এখুনি কিছু ঘটবে
অবিনাশের মুখ খুলে গেছে। চিৎকার করে
………এই রেনডির বাচ্চা ফাগু পুলিশ নিয়ে এসছে। রোহিত মেরে দে মেয়েটাকে মার, বাকি আমি দেখে নেব ……… পিস্তল বার করার চেষ্টা। ফাগু জ্বলন্ত চোখে তাকাতে একটু থমকেছে কিন্তু ফাগু জানে ১ সেকেন্ড সময় পেলে অবিনাশ পিস্তল বার করে চালিয়ে দেবে
……… ফাক। হোয়াট দা হেল ইস গোয়িং অন, কাম অন………তিতলির মাথায় ঝাঁকানি দিয়ে বলে উঠল সেই সাহেব ……বিদেশির দিকে না তাকিয়ে
………লেট হার গো, ডু ইট ইমিডিএটলি………ফাগু লক্ষ করলো সামা উঠে পিছনে হাত দিয়েছে, মানে কিছু বার করছে………”সামা সামলে যা, চালিয়ে দেব” ……সেই হাড় হিম করা ফাগু। তিতলি ব্যাকুল চোখে চেয়ে, জল ঝরছে। সমানে মাথা নারিয়ে না বলছে, ব্যাচারি
………উ ওয়ান্ত মি টু লেট দিস চিক অফ .ফাক…জাস্ট সি হার বুবস, সি……… এক টানে তিতলির টপের সামনেটা ছিঁড়ে সামনে ঠেলে দিল……লুক অ্যাট হার বু……… কথা শেষ হোলনা। ফাগুর বাঁ হাতে ঝলসে উঠলো এক ৬-৭ ইঞ্চি লম্বা স্টিলেটো। বিদ্যুৎ এর গতি নিয়ে স্টিলেটো ৫-৬ ইঞ্চি ঢুকে গেছে বিদেশির বাঁ দিকে নিপিলে। শুধু চোখ তুলে দেখতে পেরেছিল ফাগুকে, তারপরেই শুয়ে পড়ল পিছনে। ফাগু ৩ টে কাজ করলো একসাথে, স্টিলেটো ছোরার সাথে সাথে বাঁ দিকে ঝাপ দিয়ে নিজের শরীর দিয়ে তিতলিকে আড়াল করতে করতে ট্রিগারে চাপ রোহিত আর অবিনাশ কে লক্ষ করে। রোহিত আর অবিনাশ ও গুলি চালিয়ে দিয়েছে কিন্তু ফাগু ট্রিগার টিপেছে আগে। প্রথম গুলি রোহিতের কপাল ফুটো করে ব্রেনে আর অবিনাশের গলায় গুলি ঘাড় ভেদ করে গেছে । সামাও গুলি চালিয়েছে কিন্তু ভগ্নাংশ সেকেন্ড আগে জানালার বাইরে থেকে কেউ গুলি করলো সোজা সামার রগে। সামার হাত কেঁপে গুলি লাগলো ফাগুর পেটে। ‘ঠং’ শব্দ, ছিটকে পড়ল ফাগু “ ধনু” চিৎকার মুখে। অবিনাশ আর রোহিতের গুলি লেগেছে ফাগুর ডান কাঁধের নীচে আর বাঁ দিকের বগলের পিছনে।
বাইরে গুলির শব্দ বেশ জোরে, দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে কেউ, পেট চিপে উঠেছে ফাগু। যন্ত্রণায় চোখ বুজে আসছে, “ধনু, কুন্তি, ম ম কুন্তি কু কু ……।। সিরাজ খোলা পিস্তল নিয়ে ঘরে ঢুকেই “শিট ” শরীরের সব শক্তি দিয়ে
,………এ্যাম্বুলেন্স, সূর্য এ্যাম্বুলেন্স…………
ঘরে ঢুকেই এক অফিসার প্রথমে নিজের জামা খুলে ঢেকে দিল অজ্ঞান তিতলিকে। রক্তাক্ত ফাগু ব্যাথায় কুঁকড়ে কোনভাবে ধনুকে ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, সিরাজ দৌড়ে এসে ধরতে “ কু কু কু কু কু মিন মম ………লুটিয়ে পড়ল সিরাজের দুই হাতে। দুঁদে পুলিশ সিরাজ, চিৎকার করে “ না না না এ মরতে পারে না, তাহলে কিচ্ছু যানা যাবে না ……… সূর্য জলদি”……হুটারের শব্দে সচকিত সমস্ত কমপ্লেক্স। বাইরে লোকে লোকারণ্য পুলিশের আদেশ উপেক্ষা করে । এম্বুলেন্সে সিরাজ ফাগুর মোবাইল নিয়ে শুরু করলো ফোন রোম কে দিয়ে।
মোট ৭ জন মারা গেছে এই অপারেশনে। ৩ জন ফাগুর গুলি আর স্টিলেটোতে, ৩ জন পুলিশের গুলিতে। কিন্তু সামার রগে কে চালালো গুলি?