Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।৩০।।


পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে বঙ্কার সঙ্গে বাসে দেখা।কটা দিন কিভাবে কেটেছে তার কোনো হিসেব ছিলনা।পরীক্ষাটা মিটতে স্বস্তি।মনোসিজকে দেখে বঙ্কা তার কাছে এসে দাড়ায়।কণ্ডাক্টর টিকিট চাইয়ে বঙ্কা জিজ্ঞেস করে,তোর টিকিট হয়ে গেছে?
মনসিজ ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।বঙ্কা নিজের টিকিট কাটল।মনোসিজের মাথায় হাজারো দুশ্চিন্তা।বাবা মারা যাবার পর সংসারটা আলুথালু অবস্থা।কি ভাবে মা সামলাচ্ছে কে জানে।কোনো আয় নেই শুধু ব্যয়।পরীক্ষার জন্য দেখার সময় হয়নি।একটা ট্যুইশন তাও পরীক্ষার জন্য বন্ধ। আবার উশ্রীকে পড়াতে শুরু করবে।পাশের ভদ্রলোক উঠে যেতে বঙ্কা বসে পড়ে।
--এ কদিনে তোর চুল বেশ বেড়ে গেছে।
নেড়া হবার পড় আবার মাথা ঢেকে গেছে চুলে।
--কেমন হল পরীক্ষা।মনোসিজ জিজ্ঞেস করল।
বঙ্কা ঠোট উলটে হাসল।কিছুক্ষন চুপচাপ থাকার পর বঙ্কা মৃদুস্বরে বলল,কিছু উল্টোপালটা হয়ে গেলে কোনিকে মুখ দেখাতে পারব না।
তোর ঐসব ঝামেলা নেই ভাল আছিস।
মনসিজ বুঝতে পারে বঙ্কা প্রেমিকার কথা বলছে।মজা করে বলল,নেই কি করে বুঝলি?
--তোকে চিনি না।তোর দ্বারা কিসসু হবে না।তুমি কিছু করবে না আর মেয়েরা তোমাকে ধরাধরি করবে ওভাবে প্রেম হয়না।
--কিভাবে হয়?
--সিগন্যাল দেখে বুঝতে হয়।বিজ্ঞের মত বলল বঙ্কা।
কল্পনার সঙ্গে প্রেম হবার পর বঙ্কা অনেক স্মার্ট হয়েছে।প্রেম হলে ব্যক্তিত্বে একটা পরিবর্তন আসে মনসিজের মনে হল।আড়চোখে বঙ্কাকে দেখে।ওদের স্টপেজ আসতে ওরা নেমে পড়ল।বাস থেকে নেমে পাড়ার দিকে হাটতে হাটতে বঙ্কা বলল,কতদিন আড্ডা দেওয়া হয়না।চল লালুদার দোকানে এক কাপ চা খাওয়া যাক।
কথাটা মন্দ লাগে না মনোসিজ আপত্তি করল না।লালুর দোকানে খদ্দেরের ভীড় শুরু হয়নি।ওরা ঢূকে চায়ের ফরমাশ করল। 
একটা বেঞ্চে দুজনে পাশাপাশি বসে মনসিজ জিজ্ঞেস করল,কল্পনার সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ তোর?কল্পনা সিগন্যাল দিয়েছিল? 
আড়চোখে মনোসিজকে দেখে বঙ্কা হাসল।তারপর বলতে শুরু করে,সেই ঘটনার পর থেকে আমি ওর দিকে তাকাতাম না।কিন্তু বুঝতে পারতাম ও আমাকে লক্ষ্য করে।একদিন বাসায় ফিরছি ও বেরোচ্ছে।আমি দেওয়াল ঘেষে দাড়াই যাতে ও যেতে পারে।কিন্তু ও না গিয়ে বলল,রাগ এখনো পড়েনি?
--রাগের কি আছে অন্যায় করেছি তার শাস্তি পেয়েছি।
--সে জন্য অভিমান?
তাকিয়ে দেখলাম ঠোটে চাপা হাসি।বিরক্ত হয়ে বললাম,আপনার সঙ্গে কি আমার মান-অভিমানের সম্পর্ক?
--সম্পর্ক থাকে না তৈরী করে নিতে হয়।শালা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।ঠিক শুনেছি তো?
--একদিন সময় হবে?অনেক কথা আপনাকে বলার আছে।
মনসিজ সোজা হয়ে বসল।বঙ্কার প্রেম কাহিনী বেশ জমে গেছে।জিজ্ঞেস করল,তারপর?তুই রাজী হয়ে গেলি?
বঙ্কা দেওয়ালে হেলান দিয়ে পা দোলাতে থাকে।এক সময় বলল,কোনী আমার জীবনে আসতে আমার সব বদলে গেছে মাইরি।
--জীবনে কিভাবে এল সেটা বল।
--টালাপার্কে একদিন দেখা করতে বলল।
--আর ঐ সোমু না কি নাম--?
--ও জানতো না ভজুয়ার দলের ছেলে।ছেলেটা দেখতে সুন্দর ওকে বলেছিল গ্রাজুয়েট।শালা কলেজ পাসই করেনি।
--কি করে ওদের আলাপ হয়েছিল বলেছে কিছু?
--যখন কলেজে পড়তো তখন ওদের কলেজের গেটে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো।সেখান থেকেই আলাপ।
--কল্পনা এখন কি করে?
--হায়ার সেকেণ্ডারী পড়ে।সামনের বছর পরীক্ষা দেবে।
--ও তোকে গাইড করে?
বঙ্কিম হেসে ফেলল বলল,তুই হয়তো বিশ্বাস করবি না।ওর হেভি পড়াশুনা।অনেক বিষয় জানে, তোর কথা বলছিল।
--আমার কথা?
--হ্যা বলছিল তুই আমার রিয়েল বন্ধু।সে প্রমাণ আমি পেয়েছি।
--তুইও প্রমাণ পেয়ে গেছিস?
--ইয়ারকি না সেদিন সব শালা চুপচাপ বসেছিল তুইই একমাত্র এগিয়ে এসেছিলি না হলে বোকাচোদা--।
--শোন বঙ্কা ভজন আমার বড়ভাইয়ের মত।ওর সম্পর্কে অন্তত আমার সামনে এভাবে কথা বলিস না।
--স্যরি।তোকে খুব অবাক লাগে।অবশ্য ও মেশোমশায়ের মৃত্যুতে খুব করেছে।
মা কি করছে এখন কে জানে।কিভাবে সংসার চলবে ভেবে অন্ধকার দেখে।বাবার অফিসের তাপসবাবু আর যোগাযোগ করেন নি।বলেছিলেন পাস করলে বাবার অফিসে চেষ্টা করবেন। এলোমেলো ভাবতে ভাবতে মনসিজ বাসায় ফিরে এল।দরজায় বেল টেপার আগেই খুলে গেল দরজা।মা তাহলে দেখেছে সে আসছে।সব মায়েরা কি এমন হয়।
ঘরে ঢূকে পোশাক বদলাচ্ছে হিমানী দেবী একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বললেন,মুখ হাত ধুয়ে নে চা করছি।
পোশাক বদলে খাম খুলে অবাক।ব্যাঙ্ক এ্যাকাউণ্ট খুলে এ্যাকাউণ্ট নম্বর জানাতে বলেছে।ছবি সেটে ফর্ম টা পূর্ণ করে পাঠাতে হবে।
মা চা নিয়ে আসতে জিজ্ঞেস করল,কবে এসেছে?
--তিন চারদিন আগে।তোর পরীক্ষা চলছিল বলে দিইনি।
--মা পেনশন স্যাংশন হয়ে গেছে।
--কত টাকা?
--সেসব লেখেনি।কাল তোমাকে নিয়ে ব্যাঙ্কে যাব একটা এ্যাকাঊণ্ট খুলতে হবে। 
হিমানী দেবী উদাসীন চোখে জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন।মনোসিজ জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছো মা?
ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,কি আর ভাববো?শোন মনু তোর বাবার ছবিটা বড় করে বাধিয়ে আনিস।
--হ্যা আমিও ভেবেছি।যাক পেনশন নিয়ে খুব চিন্তা ছিল।
--আচ্ছা মনু সেদিন দাদা তোকে কিছু বলেছিল?
--কে হারুমামা?না আমার সঙ্গে তেমন কথা হয়নি।গোবেদা বলছিল,একদিন আয়। কেন?
--শুনলাম ওর বউটা খুব অসুস্থ।যে যাই বলুক আমাদের কর্তব্য আমাদের করতে হবে।
--একদিন দেখে আসতে যেতে হবে?
হিমানী দেবী হাসলেন বললেন,হ্যা এখন তো তোর কলেজ যাবার ব্যাপার নেই।পরীক্ষা কেমন হল?
--হয়েছে মোটামুটী। 
মনোসিজকে জামা গায়ে দিতে দেখে হিমানীদেবী বললেন,এখন বেরোবি নাকি?
--হ্যা একটু খোজ-খবর নিয়ে আসি কিভাবে ব্যাঙ্ক এ্যাকাউণ্ট খুলতে হয়।
মনসিজ সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে দেখল ল্যাণ্ডিং-এ দুটো পেট মোটা থলি নামিয়ে হাপাচ্ছেন মিসেস বসু।তিন তলায় থাকেন।দুই মেয়ে ছিল মেশোমশায় বেচে থাকতেই বিয়ে হয়ে গেছে।মনোসিজ ভদ্রতার খাতিরে বলল,বাজার করে আনলেন?
--ও যাবার পর তো আমাকেই সব করতে হয়।
--রোজ বাজার করেন?
--পাগল।সপ্তা খানেকের বাজার করে ফ্রিজে ভরে রাখি,সকালে ভীড় হয় তাই সন্ধ্যে বেলায় বাজারে যাই।
মনসিজের মনে হল উনি বোধ হয় হাপিয়ে গেছেন বলল,চলুন আমি এগিয়ে দিয়ে আসি।দুটো থলে ধরে তুললো।বেশ ভারী ছ-সাত কেজি হতে পারে।থলে নিয়ে উঠতে থাকে মিসেস বোস পিছনে মনোসিজের কাধ ধরে পিছনে পিছনে উঠতে থাকেন।
তিন তলায় উঠে মিসেস বোস চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে বললেন,আয় ভিতরে আয়।
--না মাসীমা আজ আসি,একটু কাজ আছে।
--প্রথম দিন আমার ফ্লাটে এলি একটু বসবি না?
--আরেকদিন আসবো।এক্টু আবেগ প্রবণ হয়ে বলল,মেশোমশায় নেই তো কি হয়েছে কোনো দরকার পড়লে বলবেন।
অদ্ভুত চোখে মনোসিজকে দেখেন মিসেস বোস।মনোসিজের শরীর শির শির করে উঠোলো বলল,আসি।
--একদিন সময় করে আয় একা থাকি তোরা তো খোজ খবর নিস না।
মনসিজ সেদিনের পর আর যায় নি।মিসেস বোসের চাউনি ভাল লাগে নি।   
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 15-09-2021, 08:25 PM



Users browsing this thread: 37 Guest(s)