14-09-2021, 04:36 PM
(This post was last modified: 14-09-2021, 04:40 PM by dimpuch. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কিছু স্বাভাবিক সুবিধা আছে ফাগুর ডেরার । দিদার বাড়ি একটি পুরান দেড় তলা বাড়ি।দোতলায় দুটো ঘর, বাথরুম আর এক চিলতে রান্নাঘর দিদার। ফাগু রান্না করলে নিজের ঘরেই করে। একতলায় ছোট ছোট ৫ টি ঘর সব ভর্তি সল্পবিত্বের ভাড়াটেতে। বাড়িতে ঢুকতে ৪ ফুট চওড়া আর ৪০ফুট লম্বা গলি আর ৭-৮ টি বাচ্চা দিনের শুরু থেকে রাত অবধি দাপিয়ে বেড়ায় তাদের মাঠে অর্থাৎ ওই গলিতে। ক্রিকেট ফুটবল এক্কাদোক্কা সব । কিছু না হলে দু দলে মারপিট বা শীতকালে মহিলাদের আসর, সব ওই গলিতে। অপরিচিত কেউ এলে স্বাভাবিক ভাবে নেমে আসে নিস্তব্দতা আর সেটাই ওই গলির সবার অ্যালার্ম, বৌ ঝিরা উঁকি মারে , কি হোল, চুপ কেন হঠাৎ? ফাগু এই আড্ডার মধ্যমণি। মহিলারা রাতের বেলায় দেখতে পেলেই “ এই বস। গান শোনাও। আমাদের তো জলসায় যাবার উপায় নেই, তুমি শোনাও।“ ফাগুও মন খুলে প্রান ভরে গেয়ে যায় গান। কম বয়েসি দু এক বউয়ের আবার ফাগুর ব্যাপারে বেশি উৎসাহ। বুঝেও না বোঝার ভান করে , তবে হোলির দিন মাটিতে ফেলে ওই বউএরা রঙে ভুত করে ফাগুকে।তখন কিছু করার থাকেনা, কেননা তাদের স্বামী বা মরদের সাথে ভাং খেয়ে ফাগু উদ্দাম। এর ভিতরেও খেয়াল রাখে লক্ষ্মণ রেখার, জানে এই গলি তার স্বাভাবিক নিরাপত্তার বেড়া।
ফাগু প্রথম থেকেই জানে এই বিশেষত্ব সেই জন্য খুব একটা চিন্তিত নয় শ্যাম আর কালিয়াকে নিয়ে, ঠিক অ্যালার্ম বেজে উঠবে। তবুও সাবধানের মার নেই। তাই ফাগু তার ৭ ফুট বাই ১৮ ফুট লম্বা ঘরে এখন প্রাকটিস চালিয়ে যাচ্ছে জোর কদমে লক্ষভেদ। ঘরের দেয়ালে টাঙ্গিয়েছে এক চাঁদমারি আর ১২-১৪ ফুট দূর থেকে চেষ্টা করছে বিভিন্ন মাপের ছুরি ছুঁড়ে চাঁদমারির ঠিক মধ্য বিন্দুতে লাগাতে পালা করে ডান আর বাঁ হাতে সকাল থেকে রাত অবধি। শতকরা ৯৫ ভাগ সময়ে মধ্য বিন্দুর ১-২ ইঞ্চির ভিতর লাগে।
পক্স ধরা পরার পর দিদা দু বার চিরতার জল খাইয়েছে “ খা খা, বেশি করে সব বেরিয়ে যাক। সব বিষ বেরিয়ে যাক”। তার জন্য কিনা ফাগু জানেনা, ২৪-৩৬ ঘণ্টার ভিতর সারা শরীরের প্রতিটি লোম কুপে ফোস্কা। জ্বলে পুরে গেছে ফাগু। দিদা, কোন রক্তের সম্পর্ক নেই তবুও পাউডার ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা শরীরে। নিম গাছের ডাল এনে দিয়েছেন তার পাতা দিয়ে ঘষলে জ্বলুনি কমে। তার পরেও জ্বলুনি ৪ দিন মতো ফাগুকে ঘুমাতে দেয়নি।৭-৮ দিন যাবার পর জ্বলুনি কমেছে , ফোস্কা শুকিয়ে আসতে শুরু করেছে দিন ১২ পর,আর এই সময় ফাগু শুরু করলো তার প্রাকটিস। দিদা রোজ একটা সিদ্ধ ডিম দেয় লুকিয়ে। বিধবা মানুষ তবুও আনে আর ফাগুর ঘরে সিদ্ধ করে দেয় সাথে পনীর। কিন্তু ফাগুর মন খিঁচরে আছে কুন্তির জন্য। যতবার ফোন করেছে কুন্তি পিছনে লেগেছে। বাবার মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠেছে। “ শান্তিতে গেছেন , এটাই ভালো। খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন”। কিন্তু ফাগু বুঝতে পারছে না কুন্তি ফাগুর পিছনে কেন লেগেছে।কিছু একটা হয়েছে যে জন্য কুন্তি এতো প্রগলভ। একদিন রাতে ফোন করেছে
………কুন্তি তোমাকে খুব মনে পড়ছে। জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে কি শান্তি
………ফাগু, লজ্জা থাকা উচিৎ তোমার
………মানে? লজ্জা কেন, যা কিছু করেছি সব তোমার মত নিয়ে?
………আরে পাগল, লেখা পড়া কিছু শেখনি নাকি? কুন্তি কে? মহাভারতে কুন্তি ফাল্গুনির মা।এইবার চুমু খেলে প্রথমে পায়ে প্রনাম করবে, বুঝেছ…………হি হি হি হি হি……ফোনের এ পারে ফাগু র মুখেও খেলে গেল হাসি। আরে এইটা তো কখনও ভেবে দেখিনি, ‘ইনসেস্ট’? বোকার মতো হেঁসে চলেছে ফাগু একা নির্জন ঘরে।
এক রাতে খাওয়ার পর সীমা কে লাগাল ফোন
………সীমা , কেমন আছ বোন, ফোন করো না। কি খবর?
………খারাপ ফাগু , খুব খারাপ। কি জন্য যে এই জানোয়ার রোহিতের ডাকে এসেছিলাম। এখন লাশ হয়ে বেরবো এখান থেকে
………কি হয়েছে খুলে বল
………অবিনাশ বর্মা ৩ ভাইকে এনেছে ধানবাদ থেকে। আমি এদের নাম আগেই শুনেছি। পয়সা নিয়ে খুন করে। এর ভিতর এক ভাই নিখোঁজ। আমাকে ধনু বলল কেউ ওকে খুন করেছে কিন্তু রোহিতরা কিছু করতে পারছে না কেননা পুলিশ লাশের পাশে পিস্তল পেয়েছে। রোহিতের সন্দেহ তুমি করেছ, ফাগু ভাইয়া , সাবধান হয়ে যাও। এরা আমাকেও সন্দেহ করে কেননা তোমার সাথে ফোনে কথা বলি তাই।আমার পর নজর রাখে এই ভাইয়েরা। কার সাথে কথা বলি কোথায় যাই সব নজর রাখে।
………সীমা বোন আমার, তুমি ওই ডেরা থেকে বেরিয়ে কোনভাবে এসো। তারপরের দায়িত্ব আমার।পালাও ওখান থেকে।
………এখন রাখছি……দ্রুত কেটে দিল ফোন
একটু আগে দিদা বলে গেছেন যে কাল ১লা জানুয়ারী চান করিয়ে দেবেন ফাগুকে গরম জলে নিমপাতা দিয়ে। ফাগু নানান ছবি আকছে কুন্তির
………কুন্তি কাল চান করবো সকালে আর বিকালে আসছি তোমার ওখানে
……না। এখন এক মাস তুমি কাছে ঘেষবে না
………কেন? কুন্তি তুমি এইরকম কেন করছ, কি হয়েছে তোমার, এইরকম ব্যাবহার কেন তোমার?......শেষের দিকে ঝাঁজ গলায়
……তা তুমি যাই বল আর ভাব আগামি ১ মাস কম করে তুমি আমার কাছে আসবে না, খুব ক্ষতি হয়ে যাবে
………আমি আসলে তোমার ক্ষতি হবে? কুন্তি তুমি কি বলছ
………ও আমার বুদ্ধু যোগী ভিখারি, তুমি বাবা হলে যে কি হবে, উফফ
………বাবা হলে, তার মানে……চুপ ফাগু একটু সময়……কুন্তি ………আনন্দ ঝরে পড়ছে ফাগুর গলায়………সত্যি
………হ্যাঁ। জুলাই মাসে সে আসবে
………জুলাই? মানে শ্রাবণ মাস…মেয়ে আসছে কুন্তি, মেয়ে। মেঘ, মেঘ আসছে কুন্তি। তোমার আমার জীবনে ’মেঘ’ আসবে। ১ মাস কেন ২ মাস ৩ মাস যাবনা যতদিন না ডাক্তার বলে কোন ভয় নেই. আগে কেন জানাও নি কুন্তি?
………আমি বুঝতে পারছিলাম কিন্তু আজ নার্সিং হোমের ডাক্তার কনফার্ম করলেন। আমার যে কি ভালো লেগেছিল ফাগু তোমায় বলে বোঝাতে পারব না। সকাল থেকে সুধু মনে হচ্ছিল তুমি কখন ফোন করবে আর আমি সারপ্রাইস দেব। ফাগু আমি ভীষণ ভীষণ খুশি, গায়ে মাঝে মাঝে কাঁটা দিয়ে উঠছে। আচ্ছা তোমার মেঘ নাম ভাললাগে , আর ছেলে হলে কি নাম হবে?
……… তুমি বল কুন্তি। সমুদ্র। বিরাট সমুদ্র হবে সে। পাহাড় ভালো নাম। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে ভিতরে ভিতরে, তোমার কুন্তি?
………আমার, শুনবে? পাহাড় আর মেঘ নিয়ে একটা কবিতা, যদিও প্রেমের তবুও শোন, কেননা যে আসছে সে আমাদের ভালবাসার নিদর্শন। শোন মন দিয়ে……স্পষ্ট উচ্চারন, সুন্দর কোমল স্বরে কুন্তি
আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।
শোনো।
পাহাড়টা, আগেই বলেছি
ভালোবেসেছিল মেঘকে
আর মেঘ কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে
বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা
সে তো আগেই শুনেছো।
সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন।
পাহাড় মেঘেকে বললে
আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে।
মেঘ পাহাড়কে বললে
আজ তোমাকে স্মান করিয়ে দেবো চন্দন জলে।
ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী
পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।
সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে
পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ-জলে।
হঠাৎ,
আকাশ জুড়ে বেজে উঠল ঝড়ের জগঝম্প
ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাইয়ের ভঙ্গিতে ছুটে এল
এক ঝাঁক হাওয়া
মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে
ওঠ্ ছুড়ি! তোর বিয়ে।
এখনো শেষ হয়নি গল্পটা।
বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেল ঠিকই
কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিনই ভুলতে পারল না।
বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতে পারো
পাহাড়টার হাড় পাঁজর,
ভিতরে থৈ থৈ করছে
শত ঝর্ণার জল।
…………কুন্তি এতো সুন্দর কবিতা কার লেখা? তুমি জানলে কি করে?
………ফাগু আমি প্রথম ডিভিশনে ১২ ক্লাস পাশ করেছিলাম। বাংলায় পেয়েছিলাম ১৪৩। কোন প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়ে। কপাল আমার এগোতে পারলাম না। কলেজের ম্যাগাজিনে আমার লেখা ছাপা হতো প্রতি সংখ্যায়। লাইব্রেরীতে আমার না পড়া একটি গল্প বা কবিতার বই ছিলনা আর এইটি পূর্ণেন্দু পত্রীর লেখা। আমার খুব প্রিয়।
………… তোমার বুকের ভিতর থৈ থৈ করছে এক সমুদ্র আদর তার জন্য।
আপন মনে হাসছে ফাগু একা ঘরে। হঠাৎ বেজে উঠলো ফোন……ধনু
…………হ্যাঁ বল, কি খবর………চিৎকার করে ধনু
………পালা ফাগু পালা এখুনি পালা। সীমা কে খুন করেছে দুই ভাই। আমাকে রোহিত ফাঁসাতে চেয়েছিল। সন্ধ্যাবেলা বলল যে সীমার সাথে কন্টাক্ট করতে পারছি না, দেখ তো গিয়ে। দুই ভাই তখন রোহিতের কাছেই বসে। আমি ওর বাড়ি গিয়ে ধরজা ধাক্কা দিতে খুলে গেল। ঢুকে দেখি সীমা বিছানায় পড়ে মাথা এলিয়ে খাটের পাশে। নাক, ভেঙে গেছে। আমি তক্ষুনি ওখান থেকে পালিয়েছি। ওই দুই ভাই করেছে। বন্ধু পালা, এরপর তোকে মারবে
………কি বলছিস তুই, কোথায় পালাবি?
………জানিনা আপাতত গা ঢাকা দি। তুই পালা ফাগু পালা
………পালাব?
ফাগু প্রথম থেকেই জানে এই বিশেষত্ব সেই জন্য খুব একটা চিন্তিত নয় শ্যাম আর কালিয়াকে নিয়ে, ঠিক অ্যালার্ম বেজে উঠবে। তবুও সাবধানের মার নেই। তাই ফাগু তার ৭ ফুট বাই ১৮ ফুট লম্বা ঘরে এখন প্রাকটিস চালিয়ে যাচ্ছে জোর কদমে লক্ষভেদ। ঘরের দেয়ালে টাঙ্গিয়েছে এক চাঁদমারি আর ১২-১৪ ফুট দূর থেকে চেষ্টা করছে বিভিন্ন মাপের ছুরি ছুঁড়ে চাঁদমারির ঠিক মধ্য বিন্দুতে লাগাতে পালা করে ডান আর বাঁ হাতে সকাল থেকে রাত অবধি। শতকরা ৯৫ ভাগ সময়ে মধ্য বিন্দুর ১-২ ইঞ্চির ভিতর লাগে।
পক্স ধরা পরার পর দিদা দু বার চিরতার জল খাইয়েছে “ খা খা, বেশি করে সব বেরিয়ে যাক। সব বিষ বেরিয়ে যাক”। তার জন্য কিনা ফাগু জানেনা, ২৪-৩৬ ঘণ্টার ভিতর সারা শরীরের প্রতিটি লোম কুপে ফোস্কা। জ্বলে পুরে গেছে ফাগু। দিদা, কোন রক্তের সম্পর্ক নেই তবুও পাউডার ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা শরীরে। নিম গাছের ডাল এনে দিয়েছেন তার পাতা দিয়ে ঘষলে জ্বলুনি কমে। তার পরেও জ্বলুনি ৪ দিন মতো ফাগুকে ঘুমাতে দেয়নি।৭-৮ দিন যাবার পর জ্বলুনি কমেছে , ফোস্কা শুকিয়ে আসতে শুরু করেছে দিন ১২ পর,আর এই সময় ফাগু শুরু করলো তার প্রাকটিস। দিদা রোজ একটা সিদ্ধ ডিম দেয় লুকিয়ে। বিধবা মানুষ তবুও আনে আর ফাগুর ঘরে সিদ্ধ করে দেয় সাথে পনীর। কিন্তু ফাগুর মন খিঁচরে আছে কুন্তির জন্য। যতবার ফোন করেছে কুন্তি পিছনে লেগেছে। বাবার মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠেছে। “ শান্তিতে গেছেন , এটাই ভালো। খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন”। কিন্তু ফাগু বুঝতে পারছে না কুন্তি ফাগুর পিছনে কেন লেগেছে।কিছু একটা হয়েছে যে জন্য কুন্তি এতো প্রগলভ। একদিন রাতে ফোন করেছে
………কুন্তি তোমাকে খুব মনে পড়ছে। জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে কি শান্তি
………ফাগু, লজ্জা থাকা উচিৎ তোমার
………মানে? লজ্জা কেন, যা কিছু করেছি সব তোমার মত নিয়ে?
………আরে পাগল, লেখা পড়া কিছু শেখনি নাকি? কুন্তি কে? মহাভারতে কুন্তি ফাল্গুনির মা।এইবার চুমু খেলে প্রথমে পায়ে প্রনাম করবে, বুঝেছ…………হি হি হি হি হি……ফোনের এ পারে ফাগু র মুখেও খেলে গেল হাসি। আরে এইটা তো কখনও ভেবে দেখিনি, ‘ইনসেস্ট’? বোকার মতো হেঁসে চলেছে ফাগু একা নির্জন ঘরে।
এক রাতে খাওয়ার পর সীমা কে লাগাল ফোন
………সীমা , কেমন আছ বোন, ফোন করো না। কি খবর?
………খারাপ ফাগু , খুব খারাপ। কি জন্য যে এই জানোয়ার রোহিতের ডাকে এসেছিলাম। এখন লাশ হয়ে বেরবো এখান থেকে
………কি হয়েছে খুলে বল
………অবিনাশ বর্মা ৩ ভাইকে এনেছে ধানবাদ থেকে। আমি এদের নাম আগেই শুনেছি। পয়সা নিয়ে খুন করে। এর ভিতর এক ভাই নিখোঁজ। আমাকে ধনু বলল কেউ ওকে খুন করেছে কিন্তু রোহিতরা কিছু করতে পারছে না কেননা পুলিশ লাশের পাশে পিস্তল পেয়েছে। রোহিতের সন্দেহ তুমি করেছ, ফাগু ভাইয়া , সাবধান হয়ে যাও। এরা আমাকেও সন্দেহ করে কেননা তোমার সাথে ফোনে কথা বলি তাই।আমার পর নজর রাখে এই ভাইয়েরা। কার সাথে কথা বলি কোথায় যাই সব নজর রাখে।
………সীমা বোন আমার, তুমি ওই ডেরা থেকে বেরিয়ে কোনভাবে এসো। তারপরের দায়িত্ব আমার।পালাও ওখান থেকে।
………এখন রাখছি……দ্রুত কেটে দিল ফোন
একটু আগে দিদা বলে গেছেন যে কাল ১লা জানুয়ারী চান করিয়ে দেবেন ফাগুকে গরম জলে নিমপাতা দিয়ে। ফাগু নানান ছবি আকছে কুন্তির
………কুন্তি কাল চান করবো সকালে আর বিকালে আসছি তোমার ওখানে
……না। এখন এক মাস তুমি কাছে ঘেষবে না
………কেন? কুন্তি তুমি এইরকম কেন করছ, কি হয়েছে তোমার, এইরকম ব্যাবহার কেন তোমার?......শেষের দিকে ঝাঁজ গলায়
……তা তুমি যাই বল আর ভাব আগামি ১ মাস কম করে তুমি আমার কাছে আসবে না, খুব ক্ষতি হয়ে যাবে
………আমি আসলে তোমার ক্ষতি হবে? কুন্তি তুমি কি বলছ
………ও আমার বুদ্ধু যোগী ভিখারি, তুমি বাবা হলে যে কি হবে, উফফ
………বাবা হলে, তার মানে……চুপ ফাগু একটু সময়……কুন্তি ………আনন্দ ঝরে পড়ছে ফাগুর গলায়………সত্যি
………হ্যাঁ। জুলাই মাসে সে আসবে
………জুলাই? মানে শ্রাবণ মাস…মেয়ে আসছে কুন্তি, মেয়ে। মেঘ, মেঘ আসছে কুন্তি। তোমার আমার জীবনে ’মেঘ’ আসবে। ১ মাস কেন ২ মাস ৩ মাস যাবনা যতদিন না ডাক্তার বলে কোন ভয় নেই. আগে কেন জানাও নি কুন্তি?
………আমি বুঝতে পারছিলাম কিন্তু আজ নার্সিং হোমের ডাক্তার কনফার্ম করলেন। আমার যে কি ভালো লেগেছিল ফাগু তোমায় বলে বোঝাতে পারব না। সকাল থেকে সুধু মনে হচ্ছিল তুমি কখন ফোন করবে আর আমি সারপ্রাইস দেব। ফাগু আমি ভীষণ ভীষণ খুশি, গায়ে মাঝে মাঝে কাঁটা দিয়ে উঠছে। আচ্ছা তোমার মেঘ নাম ভাললাগে , আর ছেলে হলে কি নাম হবে?
……… তুমি বল কুন্তি। সমুদ্র। বিরাট সমুদ্র হবে সে। পাহাড় ভালো নাম। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে ভিতরে ভিতরে, তোমার কুন্তি?
………আমার, শুনবে? পাহাড় আর মেঘ নিয়ে একটা কবিতা, যদিও প্রেমের তবুও শোন, কেননা যে আসছে সে আমাদের ভালবাসার নিদর্শন। শোন মন দিয়ে……স্পষ্ট উচ্চারন, সুন্দর কোমল স্বরে কুন্তি
আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।
শোনো।
পাহাড়টা, আগেই বলেছি
ভালোবেসেছিল মেঘকে
আর মেঘ কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে
বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা
সে তো আগেই শুনেছো।
সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন।
পাহাড় মেঘেকে বললে
আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে।
মেঘ পাহাড়কে বললে
আজ তোমাকে স্মান করিয়ে দেবো চন্দন জলে।
ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী
পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।
সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে
পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ-জলে।
হঠাৎ,
আকাশ জুড়ে বেজে উঠল ঝড়ের জগঝম্প
ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাইয়ের ভঙ্গিতে ছুটে এল
এক ঝাঁক হাওয়া
মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে
ওঠ্ ছুড়ি! তোর বিয়ে।
এখনো শেষ হয়নি গল্পটা।
বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেল ঠিকই
কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিনই ভুলতে পারল না।
বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতে পারো
পাহাড়টার হাড় পাঁজর,
ভিতরে থৈ থৈ করছে
শত ঝর্ণার জল।
…………কুন্তি এতো সুন্দর কবিতা কার লেখা? তুমি জানলে কি করে?
………ফাগু আমি প্রথম ডিভিশনে ১২ ক্লাস পাশ করেছিলাম। বাংলায় পেয়েছিলাম ১৪৩। কোন প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়ে। কপাল আমার এগোতে পারলাম না। কলেজের ম্যাগাজিনে আমার লেখা ছাপা হতো প্রতি সংখ্যায়। লাইব্রেরীতে আমার না পড়া একটি গল্প বা কবিতার বই ছিলনা আর এইটি পূর্ণেন্দু পত্রীর লেখা। আমার খুব প্রিয়।
………… তোমার বুকের ভিতর থৈ থৈ করছে এক সমুদ্র আদর তার জন্য।
আপন মনে হাসছে ফাগু একা ঘরে। হঠাৎ বেজে উঠলো ফোন……ধনু
…………হ্যাঁ বল, কি খবর………চিৎকার করে ধনু
………পালা ফাগু পালা এখুনি পালা। সীমা কে খুন করেছে দুই ভাই। আমাকে রোহিত ফাঁসাতে চেয়েছিল। সন্ধ্যাবেলা বলল যে সীমার সাথে কন্টাক্ট করতে পারছি না, দেখ তো গিয়ে। দুই ভাই তখন রোহিতের কাছেই বসে। আমি ওর বাড়ি গিয়ে ধরজা ধাক্কা দিতে খুলে গেল। ঢুকে দেখি সীমা বিছানায় পড়ে মাথা এলিয়ে খাটের পাশে। নাক, ভেঙে গেছে। আমি তক্ষুনি ওখান থেকে পালিয়েছি। ওই দুই ভাই করেছে। বন্ধু পালা, এরপর তোকে মারবে
………কি বলছিস তুই, কোথায় পালাবি?
………জানিনা আপাতত গা ঢাকা দি। তুই পালা ফাগু পালা
………পালাব?