Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।২৯।।


লক্ষী জুয়েলারীর উলটো দিকে একটা বাইক এসে থামল।সাতসকালে বাইক আরোহী রবিকে দেখে যারা তাকে চেনে তাদের কপালে ভাজ পড়ে।উল্টো দিকে দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা জ্বল জ্বল করছে লক্ষী জুয়েলারী।রবি ফোন করে বলল,গুরু পৌছে গেছি দোকান এখনো খোলেনি...হ্যা-হ্যা নজর রাখছি।ফোন রেখে রবির মনে হল একেবারে দোকানের সামনে না দাঁড়িয়ে একটু দূর থেকে নজর রাখা ভাল।কিছুটা দূরে মুখার্জীস চেম্বারের উলটো   দিকে লালুর চায়ের দোকানের সামনে বাইক দাড় করায়।মুখার্জীস চেম্বারে রোগীদের ভীড়।চায়ের দোকানে গুলতানি চলছিল রবিকে দেখে একটা শীতল বাতাস যেন ছুয়ে গেল। এদিক ওদিক দেখে রবি একটা চায়ের ফরমাশ করল।
ভুড়ি উচিয়ে হেলতে দুলতে এসে লক্ষী জুয়েলারীর মালিক দোকান খুলল। রবি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে লক্ষ্য রাখছে।শালা ধুপ ধুনো দিয়ে গণপতিকে প্রণাম করছে। পাক্কা ইনফরমেশন না থাকলে গুরু নজরদারীর কথা বলতো না।
ঘুম ভাঙ্গতে খেয়াল হল মা তো তাকে হরলিক্স দিতে আসেনি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে আটটার দিকে কাটা।
--ওরে মনু দেখ তোর বাবা কথা বলছে না।হিমানীদেবী আর্তনাদ করে উঠলেন।
মায়ের চীৎকারে তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে মনোসিজ।জামাটা গলিয়ে বাবার ঘরে উকি দিতে মা বলল,তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে খবর দে।
মনোসিজ দ্রুত সিড়ি দিয়ে নীচে নামতে থাকে।কাল বাবা কি কি বলছিল,মনে করার চেষ্টা করে।কথার মধ্যে কি কোনো ইঙ্গিত ছিল।জামার খুটে চোখ মোছে।সূর্য উঠেছে তবু যেন অন্ধকার কাটতে চায়না।
চা শেষ করে ভাড় ফেলে দিয়ে রবি একটা সিগারেট ধরাতে যাবে দেখল গুরুর দোস্ত আলুথালু চুল ছুটতে ছুটতে আসছে।কি ব্যাপার কোনো বিপদ হল নাকি?ডাক্তারের চেম্বারে ঢূকলো।সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দিয়ে গলগল ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে দেখল গুরুর দোস্ত ডাক্তারখানা থেকে বেরিয়ে উলটো দিকে ছুটলো।বাইক থেকে নেমে এগিয়ে গেল।চেম্বার হতে একজনকে বেরোতে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করল,ওই ছেলেটার কি ব্যাপার?
--ওর বাবা অসুস্থ।ডাক্তারকে কল দিতে এসেছিল।এত রোগী ফেলে উনি যেতে চাইলেন না।
ও এই ব্যাপার।রবির মনে হল খবরটা গুরুকে জানানো দরকার।বাটন টিপে ফোন করল।
ভজনলাল দলবল নিয়ে বসে।ফোন বাজতে স্ক্রিনে দেখল,রবি।হ্যা বল কোনো খবর আছে....শালা আগে বলবি তো...ডাক্তারের বাপ যাবে...রফিক যাচ্ছে...।
গুরু খুব ক্ষেপে গেছে ভাগ্যিস ফোন করেছিল।রফিক আসছে মানে কেস খুব খারাপ।কিছুক্ষনের মধ্যেই বাইক এসে ডাক্তারের চেম্বারে সামনে বাইক দাড়ালো।রবি দেখল রফিকের সঙ্গে মদনাও এসেছে।আজ ডাক্তারের হবে।ওরা চেম্বারে ঢুকতে কম্পাউণ্ডার বাধা দিতে এক চড়ে কম্পাঊণ্ডার ছিটকে পড়ল।গোলমাল শুনে ড মুখার্জী বাইরে বেরিয়ে ওদের দেখে জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার?
--চলুন আমাদের সঙ্গে।
--তোমরা ভজনবাবুর লোক?
ডাক্তারের এ্যাটাচি মদনার হাতে রবির বাইকের পিছনে ড মুখার্জী বসতে বাইক ছুটে চলে।
মনোময় চিত হয়ে পড়ে আছেন হিমানীদেবী স্বামীর বুকে মাথা রাখে পাশে বসে।মদন বলল,মাজী ডাক্তারবাবু এসেছেন।
হিমানীদেবী সোজা হয়ে বসলেন।মদন একটা চেয়ার এগিয়ে দিতে ডাক্তার মুখার্জী বসে রোগীর হাতটা তুলে নিয়ে ঠোট বাকালেন।হাতের উলটো পিঠ বুকে রেখে কিছু বোঝার চেষ্টা করলেন।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,বাইরে চলুন।
ওরা বেরিয়ে যেতে হিমানীদেবী আগের মত স্বামীর বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলেন।
নীচে নেমে দেখল ভজন আরো লোকজন নিয়ে হাজির।ডাক্তারকে বলল,আপনি আগে এলে এমন হত না।
--বিশ্বাস করো ঘণ্টা তিনেকের বেশী হবে উনি মারা গেছেন।ডাক্তার সাফাই দিলেন।
--দিনটা বহুৎ খারাপ।ভজন কথাটা বলে তাকিয়ে দেখল বিধ্বস্ত চেহারা আলুথালু বেশ মনসিজ আসছে।রবি ডাক্তার বাবুকে চেম্বারে পৌছে দিয়ে আয়।যান ডাক্তার সাব।
মনোসিজকে জড়িয়ে ধরে বলল,দ্যাখো বাপ-মা চিরকাল থাকে না।আমার বাপটা গুজর গেল কত উমর হবে তখন?যাও তুমি উপরে যাও মাজীকে দেখো।আমি এদিকে বন্দোবস্ত করছি।
দু-সংবাদ বাতাসের আগে ছোটে।দেখতে দেখতে দিলীপ বঙ্কা শুভ নির্মল শৈবাল শঙ্কর সবাই উপস্থিত হয়।নিষ্প্রাণ দৃষ্টি কারো মুখে কোনো কথা নেই।সামনে মনার পরীক্ষা কি হবে কে জানে।ফুল দিয়ে সাজানো ম্যাটাডোর এসে পড়ল।মনোসিজ নীচে এসে সব দেখে ভজনকে বলল,এসব তুমি করছো?
ভজন হেসে বলল,তোমার বেলাড আমার মার শরীরে।দোস্ত সব লিখে রাখছি পরে তুমি দিয়ে দিও।
বঙ্কার সঙ্গে চোখাচুখি হতে মনসিজ বলল,বঙ্কা আমার বাবা নেই।
বঙ্কিম রুমাল দিয়ে চোখ মোছে।আশিস ছাড়া সবাই এসেছে।শুভ বলল,আশিসদা মনে হয় খবর পায়নি।
স্ট্রেচারে করে মনোময় মজুমদারকে নামানো হচ্ছে হিমানীদেবী বললেন,মনু সাবধানে নামাস।
এত সাবধানতা সত্বেও যে চলে গেল আর কত সাবধান হবে।মায়ের জন্য কষ্ট হয়।মা কাদছে না,এক্টু কাদলে হয়তো হাল্কা হতো,মনোময় ভাবে।মদনের বাইকে ভজন ছাড়া আর কেউ শ্মশানে গেল না।রকের দল সবাই গেছিল।লম্বা লাইন।মনা বাবার পা ছুয়ে বসে।একটূ দূরে ভজন গালে হাত দিয়ে ভাবছে।
গোরক্ষপুর হতে কাজের ধান্দায় বনোয়ারী লাল যাদব কলকাতায় এসেছিল।তারপর কলকাতা থেকে উত্তর প্রদেশের বরেলি হতে সিদ্ধেশ্বরী দেবীকে বিয়ে করে কলকাতায় পাকাপাকি থেকে যায়।দুই ছেলে ভজন লাল মগন লাল।লেখাপড়ায় খুব একটা ভাল ছিল না ভজন।ছোট থেকেই ডানপিটে,ক্লাসে মারপিট করতো শিক্ষকদের মার জুটতো।বনোয়ারী যখন মারা গেল ভজনের বয়স তখন পনেরো/ষোলো মত হবে।সংসারের দায় এসে পড়ল ভজনের উপর।ভজন তখন উঠতি মস্তান।ভাইয়ের লেখা পড়া সংসারের খরচ খরচা সেই চালাতো।মগন পাস করল চাকরি পেল বিয়ে হল।এণ্টিসোশাল ভাইয়ের সঙ্গে থাকতে ইজ্জতে লাগছিল বলে আলাদা বাসা নিল।সেই থেকে মাকে নিয়ে একা থাকে ভজন।দোস্ত লিখা পড়া জানা শিক্ষিত হলেও এণ্টীসোশাল বলে নফরত করেনা।জান পয়চান নেই তবু খুন দিয়ে দিল।আজিব কিসিম কে মানুষ।
ধীরে ধীরে শ্রাদ্ধ শান্তি মিটলো।শ্মশান বন্ধু ছাড়া বিশেষ কাউকে বলা হয়নি।হালিশহর থেকে মামা এসেছিল সঙ্গে গোবিন্দ।হাতে যা ছিল সব শেষ কিভাবে এত সব হল কে জানে।ভজনকে জিজ্ঞেস করতে এড়িয়ে যায় বলে,সব লিখা আছে।কে জানে ভজন কতটাকা দিয়েছে।কিভাবে কি হচ্ছে মামাতো একবার খোজও নিল না।এসেই মামীর বাতের ব্যথার গল্প কেন মামী আসতে পারেনি সেই সব।
   হারাধনবাবু বোনকে সান্ত্বনা দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ী ফিরে গেলেন।অফিস থেকে কয়েকজন এসেছিলেন।তাদের মধ্যে কম বয়সী একজন তাপসবাবু খুব দুঃখ করছিলেন।মনোময়দা সহজ সরল খুব জিদ্দি মানুষ সেজন্য খুব জনপ্রিয় ছিল না।কিন্তু সবাই তাকে সমীহ করে।তাপসবাবু কদিন পর আবার এসে হিমানীদেবীকে দিয়ে কাগজ পত্র সই সাবুদ করিয়ে নিতে এসেছিলেন যাতে ফ্যামিলি পেনশনের ব্যবস্থা হয়।মনোসিজকে বলল,পাস করো চেষ্টা করব বাবার জায়গায় যাতে ঢোকানো যায়। 
সব মিটে যাবার পর একদিন হিমানীদেবী ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,কিরে মনু এবার কলেজে গিয়ে দেখ।
--তিনমাসের মাইনে বাকী পরীক্ষার ফিজ--অনেক ঝামেলা ভাবছি এবার পরীক্ষা দেব না।  
--আয় আমার কাছে আয়।
মনসিজ মায়ের কাছে যেতে হিমানীদেবী কানের একটা গহনা খুলে দিয়ে বললেন,এটা বেচে যদি না হয় বলবি।
মায়ের গলার স্বর শুনে দ্বিরুক্তি করার ভরসা পায়না হাত বাড়িয়ে গহনাটা নিয়ে চোখের জল সামলাবার জন্য দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।এলিনা কথাটা শুনল তাতাইয়ের মুখে।শোনার পর কয়েক মুহূর্ত হারিয়ে যায় অতীতে।ওর বাবাই ছিলেন একমাত্র রোজগেরে,কি ভাবে চলবে এখন?এলিনা জানে ওকে কোনো সাহায্য করা যাবে না। 
--কি ভাবছো?তাতাই জিজ্ঞেস করল।
--শুনে খুব খারাপ লাগল।ছেলেটার এখনো গ্রাজুয়েশন করা হয়নি।কিভাবে কি করবে কে জানে।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
তাতাইয়ের মনটাও খারাপ হল।সে এতসব ভাবেনি বলল,লীনা একটা কথা বলবো?
--কি কথা?
--যদি আমরা কিছু---।
--খবরদার ওসব করতে যেও না।ভীষণ আত্মমর্যাদাবোধ কিছুতেই রাজী হবে না।
রকের আড্ডা বলতে গেলে বন্ধ সবাই ব্যস্ত পরীক্ষা নিয়ে।আশিস দিলীপকে মাঝে মধ্যে দেখা যায়। 
     
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 13-09-2021, 03:54 PM



Users browsing this thread: 45 Guest(s)