Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
  
  
 ।।২৫।।


দেখতে দেখতে সময় কাটতে থাকে।সামনে পরীক্ষার প্রস্তুতি রোববার উশ্রীকে পড়ানো।দিলীপের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে,আড্ডায় আসেনা।দিলীপ পিসির বাড়ি গেছে দিন দশেকের জন্য সবাই এরকম জানে।মানুষ দেখে চোখের দৃষ্টি যতদূর যায়,দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা থাকে।একদিন মীনাক্ষীর সঙ্গে দেখা হতে মনোসিজ জিজ্ঞেস করে,তুমি আমার খোজ করছিলে?
--হ্যা পরে একদিন ওর পরীক্ষা হয়ে যাক বলব।
--আমার চিন্তা থাকবে।
মীনাক্ষী হাসল বলল,খুব চিন্তা করো তুমি?
--তুমি চিন্তা করোনা?
--দিলুকে নিয়ে আমার চিন্তা।
--কি করেছে দিলীপ?
মীনাক্ষী চুপ হয়ে কি ভাবে তারপর তাকিয়ে বলে,পরীক্ষায় দু-বার ফেল করার পর বাবা ওর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেছে।দিলু কথা বলতে গেলে বলেছে তুমি আমাকে বাবা ডাকবে না।আগে বাবা বলার যোগ্য হও।সেজন্য মাও কথা বলে না লুকিয়ে কাদে।বাড়ীতে শুধু আমার সঙ্গেই ওর সম্পর্ক।
এত কথা মনোসিজ জানতো না।মনটা খারাপ হয়ে গেল।বাইরে থেকে দেখে সবাইকে বিচার করতে যাওয়া ঠিক নয়।কেন এত উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতি দিলীপ এখন কিছুটা বুঝতে পারে।
--আমার ভাই বলে বলছি না।বাইরে ও যতই হম্বি তম্বি করুক ওর মনটা খুব সরল।মীনাক্ষী বলল,তুমি এসব কাউকে বলতে যেওনা।
--ও পরীক্ষা দিচ্ছে মেশোমশায় জানেন না?
--তুমি আমি বঙ্কা ছাড়া কেউ জানে না।যেদিন শুনলাম তুমি ওকে পড়াবে সেদিন তোমাকে মনে হয়েছিল ঈশ্বরের আশির্বাদ।এখন আসি ওর পরীক্ষা শেষ হবার সময় হয়ে এল।
--তুমি রোজ যাও?
--রোজ পৌছে দিয়ে আসি একা-একাই ফেরে।আজ শেষ দিন তাই যাচ্ছি।
--আমি কি তোমার সঙ্গে আসতে পারি?
--ও খুব খুশী হবে।
দিলীপের পরীক্ষার সিট পড়েছে গোপাল বিদ্যা মন্দিরে।দুজনে সেদিকে যাবার জন্য রিক্সা নিল।বাপুজী কলোনী পেরিয়ে যেতে হয়ে।রিক্সা চলতে থাকে হঠাৎ মীনাক্ষী রিক্সাওয়ালাকে দাড়াতে বলে একটু দূরে একটি ছেলেকে দেখিয়ে বলল,ওই যে ছেলেটাকে দেখছো অতি বাদর কলেজ যাবার পথে বিরক্ত করে।
ছেলেটিকে কেমন চেনা চেনা মনে হয় মনোসিজ মনে করার চেষ্টা করে।ভজুয়ার সঙ্গে এসেছিল কল্পনার প্রেমিক মনে পড়েছে।মনোসিজ হাত নেড়ে ছেলেটাকে ডাকে।ছেলেটি কাছে আসতে মনোসিজ বলল,তোমার নাম--?
--সোমনাথ।আচমকা ছেলেটি মনোসিজের পা চেপে ধরে বলল,আমাকে মাপ করে দিন আমি আর কখনো এরকম করব না।
মীনাক্ষী বিস্মিত ছেলেটি এত ভয় পেয়ে গেল কেন।রাস্তার লোকজনকে তোয়াক্কা করত না সবার সামনেই তার নাম ধরে ডাকত।
--ঠিক আছে পা ছাড়ো-- পা ছাড়ো।
--আপনি গুরুকে কিছু বলবেন না আমার ভুল হয়ে গেছে।
মনোসিজ বলল,এই রিক্সা চল।
সব কেমন ম্যাজিকের মত মনে হয়।ভাগ্যিস মনোসিজ সঙ্গে এসেছিল।মীনাক্ষী বলল,তোমাকে এই কথাটা বলব ভেবেছিলাম।
--দিলীপকে বলতে পারতে।
--ও গোয়ার কি করতে কি করে সেজন্য ওকে বলিনি।তুমি ওকে চিনতে?
--মুখ চিনি ভজুয়ার দলের ছেলে।আমাদের পাড়ার একটি মেয়ে কল্পনা ও তার প্রেমিক।মীনাক্ষীকে হাসতে দেখে জিজ্ঞেস করল,তুমি হাসছো?
--ব্রেক আপ হয়ে গেছে।কল্পনা এখন ওকে পাত্তা দেয়না।
--তুমি কল্পনাকে চেনো?
--পাড়ার মেয়ে চিনবো না কেন?
মনোসিজ মুখ ঘুরিয়ে মীনাক্ষী দেখে বলে,ঘরে বসে তোমরা এত খবর পাও কি করে?
--চোখ কান থাকলে খবরের পিছনে ছুটতে হয়না খবর এসে ধরা দেয়।
কথাটা হেয়ালীর মত মনে হয়।মীনাক্ষীকে বেশ ম্যাচিওর মনে হয়।উশ্রী তাকে বলছিল ইমম্যাচিওর।তবু মেয়েটাকে খারাপ লাগে না।কাউকে ভাল লাগলে বারবার তাকে দেখতে ইচ্ছে করে।সেজন্য অধীর আগ্রহে রবিবারের জন্য অপেক্ষা করে।শুনেছে প্রেমে পড়লে মনে এমন আকুলতা জন্মে।উশ্রীর কথা ভেবে মজা লাগে।মানুষ কিভাবে প্রেমে পড়ে আবার কেনই বা প্রেম ভেঙ্গে যায় এই নিয়ে তার কৌতূহলের সীমা নেই।কল্পনার ব্যাপারটা এমনভাবে বলল,তাতে মনে হল প্রেম যেন একটা মজার ব্যাপার।এলিনা বৌদি বলছিল প্রেম অনেক সময় বোঝা যায়না সবুজ পাতায় ঢাকা কুড়ির মত।যখন ফুল হয়ে ফোটে সৌরভে আমোদিত করে চরাচর তখন স্পষ্ট হয়।এলিনা বোউদি সুন্দর কথা বলে।গত শনিবার এমন ব্যবহার করল যেন অবাঞ্ছিত কেউ।চোখে জল চলে এসেছিল।
--কি হল কথা বলছো না।
--না এমনি।ভাবছি দুটো মানুষ একরকম দেখতে হয়না তেমনি প্রতিটি মানুষের মনও আলাদা।
--বুঝলাম  না।
--কেউ প্রেমে পড়তে পাগল আবার তোমার প্রেম সম্পর্কে অনীহা।
--সেকথা আমি কখন বললাম?
--বলোনি।কলেজ পেরিয়ে গেল কয়েকমাস পরে কলেজ পেরিয়ে হয়তো ইউনিভার্সিটীতে ঢুকবে তাহলে এতদিনে তোমার প্রেম হলনা কেন?
--ক্ষিধে পেলেই অখাদ্য কু-খাদ্য খেতে হবে?এই রিক্সা থামো--থামো।ঐতো দিলীপ বেরিয়ে পড়েছে।মুখটা কেমন প্যাচার মত, কি ব্যাপার পরীক্ষা কি ভাল হয়নি?
রিক্সা থামতে দুজনে নেমে পড়ল।দিলীপ ওদের দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে।  
--তুই আসবি ভাবিনি।
--পরীক্ষা কেমন হল?
--শালা কেলো হয়ে গেছে।আশিসদা এসেছিল সঙ্গে মাগীটাও ছিল--।
--দিলীপ ভদ্রভাষায় কথা বলতে পারিস না?মনোসিজ বিরক্ত হয়।মীনাক্ষী মুখ ঘুরিয়ে মুখ টিপে হাসে।
--স্যরি মাইরি। এই মিনু তুই এসেছিস কেন?
--আজ শেষ দিন তাই এলাম।
দিলীপ সন্দেহের চোখে দিদিকে দেখে।এই রিক্সায় মনার সঙ্গে এসেছে,সব কি আগে থেকে প্লান করা ছিল?তার দিদিটা কি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে।
--কেলো হবার কথা কি বলছিলি?
--আশিসদা জানা মানে দুনিয়া শুদ্ধু জেনে যাবে।
--জানল তো কি হয়েছে?তুই কি চুরি করছিস?
--গাড্ডু খেলে সবাই বলবে দিলীপ হ্যাট্রিক করেছে।একেবারে বেইজ্জৎ কাণ্ড হবে।
দিলিপের মনে অকৃতকার্যতার ভীতি চেপে বসে আছে।মনোসিজ সান্ত্বনা দেবার জন্য বলল,উল্টোটাও তো হতে পারে।তুই কেন ভাবছিস ফেল করবি?তোর পরীক্ষা কি ভাল হয়নি?
--সেটা বুঝলে তো হয়েই যেতো।যা পেরেছি লিখেছি।
--ঠিক আছে বাসায় চল আমি পরীক্ষা নিয়ে দেখব--। 
এমন সময় বাইক নিয়ে একটি ছেলে পাশে এসে বলল,দাদা ভাল আছেন?
মনোসিজ বলল,হ্যা ভাই ভালো।
--তুই তো শালা হেভি পপুলার হয়ে যাচ্ছিস।দিলীপ চেনে ছেলেটাকে,ভজার দলের ছেলে।বলল,রবি আমাকে একটু এগিয়ে দিবি?
--পিছনে ওঠ।
দিলীপ বাইকের পিছনে উঠে বলল,তোরা রিক্সায় চলে যা।
রিক্সা চলতে শুরু করে।মনোসিজ ভাবে আশিসদা তার প্রেমিকাকে নিয়ে এদিকে এসেছিল।মীনাক্ষী বলল,দিলু মনে হয় সন্দেহ করে।
--কি সন্দেহ করে?
মীনাক্ষী বলল,না কিছু না।মনে মনে ভাবে বোঝেনা নাকি বুঝেও না-বোঝার ভান করে।কিছুক্ষন চলার পর মীনাক্ষী জিজ্ঞেস করল,তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
--অবশ্যই করবে।
--তোমার কোনো মেয়েকে ভালো লাগেনি?
--মেয়েরা খুব নরম হৃদয়ের মানুষ।তারা যত করে মুখে বলে কম।জানো মেয়েরা ঈশ্বরের এক অপূর্ব সৃষ্টি।যত মিশেছি তত জেনেছি।
--তুমি কাদের কথা বলছো?
--তুমি উশ্রী মিসেস পাকড়াশী এলিনা বৌদি--।এক মুহূর্ত থামে তারপর বলে,ভাল মন্দ মিশিয়ে মানুষ।কেউ একেবারে নিঁখুত হয়না।
--আগে যেখানে থাকতে সেখানে?
মনোসিজের পুরনো পাড়ার কথা মনে পড়ল।কেমন আছে কেলো বিশে?হঠাৎ বলল,জানো একজন ছিল খালি আমাকে শাসন করত।
--তোমার চেয়ে বয়স্ক?
--ধুস আমার চেয়ে এক-দু-বছরের হলেও ছোটো হবে।ওর বাবা নাম করা উকিল সেজন্য কেউ ওকে কিছু বলতো না।
--তোমার ওকে খুব পছন্দ?
--পাগল।আমি ওকে দেখলে এড়িয়ে যেতাম ঐ বরং গায়ে পড়ে আমাকে শাসন করতে আসতো।
--কেমন দেখতে?
মনোসিজ মনে করার চেষ্টা করে।তারপর হেসে বলল,দেখলে মনে হবে সকালের এক ঝলক রোদ্দুর।
--তারমানে খুব সুন্দরী?
--সুন্দরী না ছাই।সাজগোজ করে না চুল বাধে না সারাদিন টো-টো ঘুরে বেড়ায়।বলো মেয়েদের এসব মানায়?
যা শুনছে তাতে ওকে বোঝা দূর মীনাক্ষীর মনে একরাশ ধোয়াশা সৃষ্টি হয়।এতে আকর্ষণ আরো বাড়তে থাকে।দিলীপ আগেই পৌছে গেছে।রিক্সা থেকে নেমে দেখল দরজায় দাঁড়িয়ে দিলীপ।ওরা ভেতরে যেতে দিলীপ বলল,মিনু একটু চা কর।
মনোসিজের মুখোমুখী বসে বলল,এবার বল কি পরীক্ষা নিবি?
--সব প্রশ্নগুলো নিয়ে আয়।
দিলীপ প্রশ্ন গুলো এগিয়ে দিতে মনোসিজ মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।দিলীপ কোনরকমে তার উত্তর দেয়।মীনাক্ষী চা নিয়ে ঢোকে।দিলীপ বলল,রবি তোর খুব সুখ্যাতি করছিল।
চোখ না তুলে মনোসিজ বলল,পরীক্ষক যত কড়াই হোক অঙ্কে তোকে পাস মার্ক দিতে বাধ্য।
--তাহলে গুরু দেখতে হবেনা দিলীপ ব্যানার্জী এবার পাস করবেই।
মিনাক্ষী মজা করে বলে,গুরু মশাই বল।গুরু বললে কেমন মস্তান-মস্তান মনে হয়।
মনসিজ মুখ ঘুরিয়ে মীনাক্ষীর দিকে তাকায় বলে,বেলিও আমার নাম ধরে ডাকতো না,বলতো মস্তান।
--তোমার খারাপ লাগতো না?
--কি জানি।সেসব কি মনে আছে।    
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 04-09-2021, 05:15 PM



Users browsing this thread: 34 Guest(s)