Thread Rating:
  • 101 Vote(s) - 3.32 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
।।২৪।। 


উশ্রীর বাংলার প্রতি অনুরাগ ক্রমশ বাড়ছে।মনোসিজের মনে হল ওকে সুকুমার রায়ের "আবোল তাবোল" বইটা প্রেজেণ্ট করবে।মেয়েটার মাথা খুব শার্প।ম্যাম মেয়েটাকে নিজের মত করে মানুষ করতে গিয়েই বিপত্তি।আমাদের অভিভাবকরা প্রায়ই এই ভুলটা করে থাকেন।এদিক দিয়ে তার বাবা কখনো নিজের অভিপ্রায়কে চাপিয়ে দেন নি।বরং যেদিকে তার ঝোক সেদিকেই উসকে দিয়েছেন।উশ্রীদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামে মনোসিজ।সে জানতেই পারল না উপরে বারান্দা থেকে একজন তাকে নির্নিমেষ নয়নে দেখছেন।
একমাথা ঝাকড়া চুল।ছফুটের কাছাকাছি লম্বা পুরুষালী চেহারা তার উপর ঐটা--।কেমন উদাস নিস্পৃহভঙ্গীতে হেটে চলেছে।পিছন দিকে একবার ফিরেও তাকাচ্ছে না। উশতীর বুকের মধ্যে টনটন করে ওঠে। 
উশ্রী এসে পাসে দাড়াতে মিসেস পাকড়াশি জিজ্ঞেস করেন,হাউ ইজ দা স্টাডি গোইং?
--ওহ মম হি ইজ গ্রেট।ইট ফ্লোটেড ইন ফ্রন্ট অফ মাই আইজ লাইক আ পিকচার হি টট।
--দোন্ট বি সো এক্সাইটেড ডার্লিং।
--আই থিঙ্ক আই উইল স্টাডি লিটেরেচার ইন ফিউচার।
--দিস ইজ ব্যাড আইডিয়া উইল নেভার ইনডালজ ফারদার।
উশ্রী কিছুটা দমে গিয়ে কথা বাড়ায় না।
আকাশের দিকে তাকায় মনোসিজ নিঃসীম আকাশ।বেশ ধকল গেল সারাদিন।মিসেস পাকড়াশী পাঙ্কচুয়ালিটি নিয়ে বলছিলেন।ছাড়িয়ে দিলে দেবে।মনোসিজ মানসিকভাবে তৈরী শুধু উশ্রীর জন্য একটু খারাপ লাগবে।রকের আড্ডা জমে উঠেছে এতক্ষনে।বড়দের ক্লাব সান্ধ্য বৈঠক পেরিয়ে যেতে লক্ষ্য করে তাতাইদা বাইরে বেঞ্চে বসে আছে।
উশ্রী কলেজের পড়া নিয়ে ব্যস্ত।মিসেস পাকড়াশী পাশের ঘরে সোফায় গা এলিয়ে বসে আছেন।করতলে ধরা ডিক--দৃশ্যটা ঘুরে ফিরে মনে পড়ছে--রিয়ালি স্প্লেণ্ডিড।সোয়াইন্টার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি প্রায় একযুগের  উপর হবে।কখনো এমন হয়নি ডিকটা দেখার পর থেকেই শরীরে অস্বস্তির ভাব মাথা চাড়া দিয়েছে।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।মহী চেষ্টা করেছিল মিটমাটের উশতীই রাজী হয়নি।তার জীবন যাপনে কেউ খবরদারী করুক সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।মহি অর্থাৎ মহীতোষ তার মামাতো ভাই।মধ্য কলকাতায় থাকে।একটা বছর অফিস যাবার পথে উশ্রীকে ওখানে রেখে যেতো আবার অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসতো। মহীর সঙ্গেই একটু যা যোগাযোগ আছে এখনো।উশ্রীকে খুব ভালবাসে।
বেরোবার সময় দেখে এসেছে বাবা শুয়ে আছে।বাবার জন্য উদবিগ্ন মা।কি হয়েছে মনোসিজ বুঝতে পারে না।মাই বা কেন এত উদবিগ্ন--?
পিছন থেকে দিলীপ এসে বলল,কি রে কি ভাবছিলি?আমাকে দেখিস নি?
--খেয়াল করিনি তুই এখন যাচ্ছিস?
--মাথাটা ধরে গেছে ভাবলাম এক চক্কর দিয়ে আসি।শালা কি যে হবে কে জানে।
--কি যে হবে মানে?যা হবার তোকেই করতে হবে।
--তোর সঙ্গে কথা বললে মনে একটু জোর পাই।তুই এত দেরী করলি?
--রোববার-রোববার একজনকে পড়াই।সবাইকে বলার দরকার নেই।
--ছেলে না মেয়ে?
--মেয়ে হলে কি হবে?মনোসিজ হেসে জিজ্ঞেস করল।
--কোন ক্লাস?
--নাইন।
--অবশ্য তোর দ্বারা কিছু হবে না।কোন বাড়ি বলতো?
--মিসেস পাকড়াশীর মেয়ে লরেটোতে পড়ে।
--গাড় মারিয়েছে।দিলীপ চোখ বড় বড় করে তাকায়।
--গাড় মারানোর কি হল?
--এইয়া চেহারা তো?দিলীপ দু-হাত প্রসারিত করে দেখায়।
দিলীপের ভঙ্গী দেখে মনোসিজের হাসি পায় বলে,ভদ্রমহিলা একটু মোটা।
--ভদ্র মহিলা না বলে ওকে ভদ্রলোক বলাই ভালো।দ্যাখ কদিন টেকে।কে যোগাযোগ করে দিল বঙ্কা?ও মনা-।দিলীপ ধরে দাড় করিয়ে বলল,আসল কথাটাই বলা হয়নি।মীনু তোকে দেখা করতে বলেছে।যখন সময় পাবি।
--কি ব্যাপারে?
--সেটাই তো আমাকে বলছে না।তুই মাইরি একবার দেখা করিস।
ওরা আবার হাটতে শুরু করে।মনোসিজ বলল,তুই ওদের কিছু বলতে যাসনে।
আড্ডা বেশ জমে উঠেছিল।ভজুয়ার দলবল এসে সবাইকে গভীরভাবে লক্ষ্য করে,তারপর রাস্তার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে নিজেরা কথা বলতে শুরু করে।
--মনে হয় মনাকে খুজছিল।শুভ বলল।
মনা এখন পাকড়াশীর বাড়ীতে পড়াচ্ছে গিয়ে খবর দিয়ে আসবে কিনা ভাবে বঙ্কা।
--সেদিনের বদলা নিতে এসেছে।শৈবাল বলল।
--সব জায়গায় ওস্তাদী করা যায় না।আমার কথাটা ফলল তো?আশিস বলল।
--তুমি আবার কখন বললে?নিমু জিজ্ঞেস করে।
--সব কথা বলতে হয়না।
একটা বিশ্রী পরিস্থিতির জন্য ওরা অপেক্ষা করছে।ওদের মধ্যে একটা ছেলে এগিয়ে গেল।কি ব্যাপার?আরে ঐতো মনা আর দিলীপ আসছে।ছেলেটি গিয়ে কি যেন বলে তারপর মনাকে নিয়ে জটলার কাছে নিয়ে গেল।দিলীপ এসে বলল,মনাকে নিয়ে গেল তোরা দেখিস নি?
--আগে ব্যাপারটা জানতে হবে।না জেনে কিছু করা ঠিক হবে না।আশিস বলল।
ভজার কাছে নিয়ে যেতে আপাদ মস্তক চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,ওই বুড়িয়া তোমার কোন লাগে?
মনোসিজ কিছুটা অবাক জিজ্ঞেস করে,কোন বুড়িয়া?
--সকালে যাকে বেলাড দিলে--।
--উনি তোমার মা না?
--আমার মা তুমি কেন বেলাড দিলে?
অদ্ভুত প্রশ্ন মনোসিজ বলল,তোমার মা আমার মায়েরই মতো।
--শুনলি কি বলল?জানা নাই পহেচানা নাই বেলাড দিয়ে দিল।এদের কি বলে জানিস,নাদান।নাদান কি মতলব কিরে মদনা?
--বুদ্ধু গুরু।
সারা রক রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে কি কথা হচ্ছে ওদের মধ্যে।তবে উত্তেজনা নেই তাতে আশ্বস্থ হয়।মনা মনে হচ্ছে সারেণ্ডার করেছে।
ভজুয়া দার্শনিকের মত বলে,এরকম নাদান এখন পাওয়া যায় না।দুনিয়াটা সেয়ানায় ভরে গেছে।দেখো দোস্ত ঐ বুড়ি আমার জান।তুমি উমরে আমার চেয়ে অনেক ছোটো তাই পায়ে হাত দিয়ে সেলাম করলাম না।কোনো বেয়াদপী করে থাকলে মাপ করে দিও।
--তোমার মা এখন কেমন আছে?
--খুদ গিয়ে দেখে এসো।মা তুমাকে দেখতে চায়।
--আজ রাত হয়ে গেছে,পরে এক সময় যাব।
ওরা পরপর বাইক নিয়ে চলে গেল।মনোসিজ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে,এ কেমন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের রীতি।
আশিস বলল,বললাম না কিছুই হবে না।
--কখন বললে?
বঙ্কা বলল,হ্যা বলেছে আমি শুনেছি।
--বঙ্কা তোকে সাবধান করে দিচ্ছি আমার পিছনে লাগলে ফল ভাল হবে না।আশিস বঙ্কাকে শাসায়।
--যা বাব্বা আমি আবার কখন পিছনে লাগলাম?অবাক হবার ভান করে বঙ্কা।
--বুঝিনা কিছু,সবাই ঘাসে মুখ দিয়ে চলে?
মনোসিজ আসতে দিলীপ জিজ্ঞেস করল,কি বলছিল রে ওরা?
--তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।
এই উত্তর সবাইকে সন্তুষ্ট না করলেও মনোসিজের গম্ভীর মুখ দেখে কেউ আর প্রশ্ন করে না।  
ক্লাবের সামনে তাতাইদাকে বসে থাকতে দেখে মনে হল বাড়িতে কিছু হয়নি তো।এলিনা বৌদির ব্যবহার খারাপ লাগলেও এখন মনে হচ্ছে মন্দের ভাল।এটা ভাল নেশা নয় কেটে যাওয়াই ভাল।বৌদি তার উপকারই করেছে। 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 31-08-2021, 03:26 PM



Users browsing this thread: Pb276, 4 Guest(s)